31-01-2022, 11:30 PM
ইরোটিক হরর নিয়ে তো লিখেছি তিনটে গল্প কিন্তু বাঙালিদের অন্যতম প্রিয় বিষয় ভুত নিয়ে একটা ভৌতিক গল্প লেখার অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল। যেখানে ভয়টা মূল আকর্ষণ... অন্য কিছু নয়। তাই এই ছোট গল্প। এটা কোনো বড়ো গল্প নয় মোটেও। একটা ছোট গল্প যা দুটো বা তিনটে ভাগে শেষ করে দেবো। ছোট ছোট পর্ব দিয়ে। আশা করি ভালো লাগবে আপনাদের।
ফোনটা কাট করতেই আমি বললাম - কি ব্যাপার বলোতো সুভাষ দা? কদিন ধরে দেখছি তুমি একটু কেমন যেন সিরিয়াস মার্কা হয়ে গেছো, তারপরে ঘন ঘন বৌদিকে ফোন করছো? কি ব্যাপারটা কি?
সুভাষ দা কথাগুলো আমার দিকে তাকিয়ে শুনলেও উত্তর দেবার সময় চোখ সরিয়ে নিয়ে চশমাটা মুছতে মুছতে হেসে বা বলা উচিত হাসার নকল অভিনয় করে বললেন - নানা... কিছু না... ওই আরকি
- উহু.... কিছু তো একটা ব্যাপার আছেই... নইলে তোমার মতো একটা মানুষ হটাৎ এতো চুপচাপ..... তারওপর বৌদিকে বার বার ফোন.... বার বার সব ঠিকাছে তো জিজ্ঞেস করছো... ব্যাপারটা কি? দেখো যদি ব্যাক্তিগত বা ফ্যামিলির কোনো ব্যাপার হয় আমি জানতে চাইবোনা কিন্তু কিছু যে হয়েছে সেটা বেশ বুঝতে পারছি........ দেখো তুমি চাইলে আমায় বলতে পারো.. যদি আমি.....
একটানা কথাগুলি বলে থামলাম আমি। দেখি সুভাষ দা আমার দিকে তাকিয়ে। মুখে একটা হালকা হাসি.... ওটা কি আশ্বাস নাকি বিদ্রুপ? ঠিক বুঝলাম না। তিনি চেয়ারে হেলান দিয়ে বললেন - থাঙ্কস রে.... কিন্তু তোর মনে হয় কিছু করার নেই।
- আহা বলোই না.... যদি আপত্তি না থাকে
- না.. আপত্তি... অমন কিছু ব্যাপার নয়
- তাহলে বলো তো.. বলো
সুভাষ দা আমার দিকে তাকিয়ে বললো - শুনবি? তাহলে চল বাইরে যাই... এখানে একটানা বসে বেঁকে গেলাম মাইরি।
ব্রেক টাইম তখন। আমরা দুজন নিজের খাবার হাতে বাইরে এসে ছাদে গেলাম। সুভাষদা আর আমি খেতে খেতেই কথা বলছিলাম। তবে যতই শুনছিলাম আমার খাওয়ার দিকে নজর কমে যাচ্ছিলো আর সুভাষদার গল্পে হারিয়ে যাচ্ছিলাম।
- তুই তো জানিস.... আমাদের বাড়িটা ফ্লাট হচ্ছে। বহু ঝামেলা পেরিয়ে জেঠুরা রাজি হয়েছে। সে যাই হোক..... কাজ শুরুর আগে আমাদের তো শিফটিং এর প্রয়োজন ছিল। জেঠুদের খুব একটা অসুবিধা হয়নি। দিদি মানে জেঠুর মেয়ে স্নেহাদির এক বান্ধবী খুব কাছেই থাকেন। ওদের নিজেদের তলাটার জন্য ওরাও ভাড়াটে খুঁজছে... তাই খুব সহজেই দুইয়ে দুইয়ে চার হয়ে গেলো, ঝামেলায় পড়লাম আমরা। আমরা কোথায় যাবো?
প্রোমোটার নিজেই আমাদের এই ব্যাপারে সাহায্য করেছিলেন। ওনার কেনা একটা বাড়ি যেটার কাজ শুরু হবে আমাদেরটার পরেই সেটায় যদি আমরা চাই থাকতে পারি। আমি আর বাবা গিয়ে সে বাড়ি একদিন দেখেও এসেছিলাম। খুব একটা যে ভক্তি এসেছিলো বলবনা। দোতলা বাড়ি কিন্তু একেবারে শেষ অবস্থা তার... ওতে থাকা কতোটা রিস্কি হতে পারে সেটাই ভাবছিলাম। ওপর থেকে ভেঙে টেঙে না পড়ে কারোর মাথায় সেই ভয় আর ওই বাড়িতে থাকার ইচ্ছা আর হলোনা। কিন্তু একটা বাড়ি তো প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সাহায্য করেছিলেন বাবার এক পরিচিত মানুষ কাল্টু বাবু। উনি আবার এই সব কাজই করে কমিশান পেয়ে থাকেন।
ওনাদের বাড়ির খুব কাছেই একটা দোতলা বাড়ির খোঁজ উনি এনে দিলেন আমাদের। আবার আমি আর বাবা গেলাম একদিন। এই বাড়িটা আমাদের বেশ পছন্দ হলো। তবে বাড়িটা সামনে থেকে বিশাল কিছু না লাগলেও বেশ ভালোই বড়ো। পেছনে একটা বাগানও আছে... যদিও সেটাকে আজ আর বাগান বলা উচিত নয়... ঝোপ ঝাড় আর একটা পুরানো কুয়ো যেটাও আর ব্যবহার হয়না। ওপরে টিন দিয়ে ঢেকে রাখা যাতে বিড়াল কুকুর আবার ভেতরে পড়ে না যায়। বাড়ির মালিক অনিমেষ কাকু নিজেই আমাদের সাথে সব ঘুরিয়ে দেখালেন। মানুষটা বেশ ভদ্র আর শান্ত স্বভাবের. ভালো লাগলো ওনার সাথে কথা বলে। একতলার একটা ভাগ উনি ভাড়া দেবেন। সেটাও আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। বেশ পুরানো বাড়ি এটাও কিন্তু ওই বাড়ির মতো ভগ্নদশা নয় মটেও এর। বেশ ভালো বড়ো দুটো শোবার ঘর। একটাই বাথরুম আর রান্নাঘর ছোট্ট হলেও আমাদের বেশ পছন্দ হলো। বাবা আমি আর অনিমেষ কাকু আলোচনার পর ঠিক করলাম এটাই হবে আমাদের কিছু সময়ের বাসস্থান।
এরপর একদিন তোর বৌদিকেও এসে দেখিয়ে গেলাম বাড়িটা। তারও বেশ পছন্দ হলো। এরপর একজন ইলেকট্রিশান কে ডেকে কয়েকটা কাজ করাতে হলো.... আর ঘরটা বাড়ির মালিক নিজেই নিজের বাড়ির কাজের লোক দিয়ে একেবারে পরিষ্কার করিয়ে নিয়েছিলেন। আগেরবার এসে যে ধুলো মাখা দেখেছিলাম পরে স্ত্রীয়ের সঙ্গে এসে দেখি একেবারে পরিষ্কার। ব্যাস... তোমার বৌদির থেকেও গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে সব গুছানোর কাজ শুরু হলো।
এক বাড়ি থেকে আরেকবাড়িতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা যে কি তার আর বিবরণ দিয়ে লাভ নেই। উফফফফ পাগল পাগল অবস্থা ছিল। বড়ো বড়ো আসবাবপত্র তো লোকেরাই নিয়ে এসেছিলো... ভাগ্গিস... একতলা বাড়ি...... কিন্তু ভাবছি এবারে যখন আবার এখান থেকে নিজেদের ফ্ল্যাটে ৫ তলায় যাবো তখন কি অবস্থা হবে!! যাকগে..... আবার ঘটনায় ফিরি। সব ঝামেলা মিটিয়ে চলে এলাম এই বর্তমানের বাসস্থানে। নিজের এতদিনের বাড়ি ছেড়ে আসার সময় বুকটা যে একটুও কেমন কেমন করেনি বলবোনা কিন্তু আমার থেকেও বেশি করেছিল আমার ছেলেটার। একটু গোমড়া মুখ ছিল এক দুদিন ওর কিন্তু তারপরে সেও মানিয়েনিয়েছিল। আমরাও হয়তো মানিয়ে নিতাম কিন্তু.........
বাবা আর মায়ের বারান্দার দিকের বড়ো ঘরটায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ঘর ভর্তি নানান রকমের পুটলি, ব্যাগ, বাক্স ভর্তি জিনিসপত্র এক এক করে খোলা হচ্ছে... খাট বিছানা সেট করা, আসলে শান্ত কে অশান্ত করে আবার শান্ত করা তো সোজা ব্যাপার নয়.. তাই তার ঝক্কি তো পাওয়াতেই হবে। আমরাও এই নতুন বাড়িতে এক এক করে সব গোছগাছ করতে করতেই দিনটা পার হয়ে গেছিলো। ক্লান্তিতে যে যার মতন বিছানায় পড়তেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
পরের দিন আমি নিজের কাজে বেরিয়ে গেলাম। দুই ছেলের মায়েরা নিজের মতো একরাতেই রান্নাঘর গুছিয়ে নিয়েছিল। আমার ছেলেটাকে নিয়ে ওর দাদুই কলেজ নিয়ে যাওয়া আসা করেন। তারাও আমার মতোই বেরিয়ে গেলেন। নিজের এলাকা পাল্টালে একটা অসুবিধা তো হয়ই কিন্তু যেহেতু আমাদের বাড়ি থেকে এই এলাকা ভয়ানক কিছু দূরে নয় তাই খুব একটা অসুবিধায় পড়তে হয়নি....... অসুবিধা তো অন্য জায়গায় ছিল।
কি অসুবিধার কথা বলছো তুমি? পাড়ার লাফাঙ্গা মানে বাজে ছেলেদের আড্ডা ফাড্ডা আছে নাকি ওদিকে? আমি সিগারেটটা ধরিয়ে সুভাষদা কে একটা অফার করে জিজ্ঞেস করলাম। দাদা সিগারেটটা ধরিয়ে একটা টান দিয়ে মাথা নাড়িয়ে বললেন - নারে ভাই....... ওসব কিছু নয়... এ ঝামেলা অন্যরকম। অন্য লেভেলে।
মানে?
সুভাষদা আরেকটা ধোয়া ছেড়ে আমায় বললেন - ভুত ফুত মানিস?
চলবে.......