30-01-2022, 10:00 AM
মিষ্টি চিঠি
আজও আমার সেই দিনের সকালটা স্পষ্ট মনে আছে । তারিখ ছিল ১৬/৬ । অর্থাৎ জুন মাসের ষোল তারিখ । পনেরো তারিখ রাতের ঘুমটা ভালোই হচ্ছিল । বর্ষাকাল । তাই একটা শীতল আবহাওয়া বিরাজ করছিল ।
ঠিক ভোর পাঁচটায় হুড়মুড় করে বৃষ্টির আওয়াজে ঘুমটা ভেঙে গেল । বৃষ্টি যে মুষলধারে হচ্ছে , সেটা আমার বিছানার পাশের কাঠের জানালায় দমাদম শব্দে বুঝতে পারছিলাম । কাঁথাটা আরো ভালো করে গায়ে জড়িয়ে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলাম । কিছুক্ষণের মধ্যে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম । এক ঘন্টা পরেই আবার ঘুমটা ভেঙে গেল । ঘুম ভেঙে দেখলাম বৃষ্টি তখনো হচ্ছে । এবার আর ঘুমানোর চেষ্টা করলাম না । বাথরুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে ঘরে এলাম । মশারি গুটিয়ে জানালা খুলে দিয়ে আবার কাঁথার ভিতর ঢুকে শুয়ে রইলাম । লকডাউনে এ ছাড়া আর যে কিছুই করার ছিল না ।
কথায় আছে নাকি বসন্ত ঋতু নাকি প্রেমের ঋতু । কিন্তু আমার কাছে বর্ষা ঋতুটা মন দূর্বল করার ঋতু । জানালায় তাকিয়ে বৃষ্টির খেলা দেখতে দেখতে মনটা একটু বেশিই দূর্বল হয়ে গেল । হৃদয় দূর্বল হতেই মাথায় একটা ছোট দুষ্টু প্রেমের প্লট চলে এলো ।
মোবাইলটা অন করে WPS office খুলে লিখে ফেললাম প্রেমটা । কিছুক্ষণ পরেই সেটা এখানে একটা থ্রেড খুলে আপলোড করে দিলাম ।
গল্পটার নাম ‘ অভিশাপ , । আর থ্রেডের নাম “ মিষ্টি মূহুর্ত ( ছোট ছোট কিছু মূহুর্ত ) „ । গল্পটা ছাড়ার পর একটা বাওয়াল সৃষ্টি হলো । আমি বুঝতেই পারিনি যে এরকম কিছু একটা হবে । এই ‘ অভিশাপ , গল্পটা লেখার আগে কয়েকটা ঘটনা ঘটেছিল । প্রথম থেকেই বা গসিপির যাত্রাপথ থেকেই বলা যাক । না হলে আপনারা বুঝতে পারবেন না ।
‘ প্রতিশোধ , উপন্যাসটা লেখার উদ্দেশ্য এবং এখানে আসার উদ্দেশ্য ছিল একটা লোককে খোঁজা । লোকটাকে তো পাইনি কিন্তু তার বদলে দুজনকে পেয়েছিলাম । তাদের নাম হলো বাবান দা আর বুম্বাদা ।
২০২১ এর মার্চ মাস পর্যন্ত আমি প্রায় চার থেকে পাঁচ বার গল্প লেখার চেষ্টা করেছিলাম । কিন্তু কখনো একটাও গল্প শেষ করিনি । করতে পারিনি । সেটার কারন হলো খানিকটা লজ্জা আর একটু নয় অনেকটা কনফিডেন্সের অভাব । ‘ প্রতিশোধ , উপন্যাসটাও সমাপ্ত করতাম না , যদিনা এই দুইজন আমার পাশে দাঁড়াতো ।
সেই সময় আমার একটা কিক দরকার ছিল যেটা এই দুজন লেখক দিয়েছিল । তাই আমি ‘ প্রতিশোধ , উপন্যাসটা শেষ করতে পেরেছিলাম । প্রতিশোধের শেষ আপডেট পড়ে এরা দুইজন আর সাথে সুসি দা এবং একটি মানুষ ( a-man ) এতো ভালো প্রশংসা করে যে আমার মধ্যে তখন লজ্জা বোধ কেটে গেছে আর নতুন উপন্যাস লেখার কনফিডেন্স এসছে । না হলে যে ছেলেটা একটা লাইন লেখার পর সেই কাগজটাকে নৌকা বানিয়ে ড্রেনের জলে ভাসিয়ে দিত সে ২০২২ এ দুটো উপন্যাসের লেখক হতে পারতো না । ‘ প্রতিশোধ , উপন্যাসটা শেষ হয়েছিল ১৭০০০ হাজার ভিউসে । সেটা এখন ৩০০০০ অতিক্রম করেছে । প্রতিশোধ শেষ করার পরেও কিছু ঘটনা ঘটেছিল .....
১ ---- আমার ‘ প্রতিশোধ , শেষ করার সময় ভেবেছিলাম এটা একটা সিরিজ করবো । চারটে উপন্যাসের সিরিজ হবে ।
২ --- ‘ প্রতিশোধ , উপন্যাসটা শেষ করার পরেই ddey333 কে অর্থাৎ দেবু দা কে জিজ্ঞেস করেছিলাম ... আমি যদি কোন প্রেমের উপন্যাস লিখি আপনি পড়বেন ? উত্তর এসেছিল ... অবশ্যই পড়বো
৩ ---- ‘ প্রতিশোধ , শেষ করার পর আমি ছুটি কাটাচ্ছিলাম । তখন একটি মানুষ ওরফে a-man মশাইয়ের অনুরোধে আমি একটা গল্প পড়ি । গল্পটা বিদ্যুৎ দা ছেড়েছিলেন । গল্পটার নাম --- সিনিয়র খালাতো বোন যখন বউ । গল্পটা খুব ভালো লেগেছিল ।
গল্পের নায়িকা ইশিতা একটু পজেসিভ টাইপের । অর্থাৎ তার প্রেমিক ফারাবি যদি অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকায় তাহলে ইশিতা ওকে মারধর করে ।
গল্পটা পড়ার পর একটি মানুষ আমাকে বলেন ইশিতার মত একটা নারী চরিত্র সৃষ্টি করতে । গল্পে এতো প্রেম ছিল যে আমি সেই প্রেমে ডুবে গিয়ে , ওতো ভালো একটা গল্পের খোঁজ দেওয়ার জন্য আমি একটি মানুষ কে বলে বসি , “ যদি আমি এইধরনের কোন মহিলা চরিত্র সৃষ্টি করি তাহলে সেই গল্পে লেখকের জায়গায় আপনারও নাম থাকবে । „
বাবান দা আর বুম্বাদার পাশে থাকা আর সুসি দা , a-man , pervert , সায়রা দি , এদের প্রশংসার জোরেই আমি ‘ অভিশাপ , গল্পটা লেখার সাহস পেয়েছিলাম । গল্পটা দেড় পৃষ্ঠার হলেও ওই টুকু গল্পোও লেখার সাহস কিছুদিন আগে পর্যন্ত আমার ছিল না ।
তো বর্ষার সকালে ‘ অভিশাপ , গল্পটা ছাড়ার পরেই দেবু দা বলেন --- এরকম মিষ্টি মূহুর্ত আরো চাই ।
একে একে বাবান দা , বুম্বাদা , সুসি দা , একটি মানুষ এসে এমন কমেন্ট করলেন যে আমি বাধ্য হয়ে ‘ অভিশাপ , গল্পের দুই চরিত্র অর্থাৎ সুচি-আকাশকে নিয়েই ‘ বিয়ে , নামক গল্পটা লিখি । সেটারও এমন কমেন্ট আসে যে তারপর ওদের নিয়েই ‘ বাসর রাত , বলে গল্পটা লিখি ।
এই ‘ বাসর রাত , গল্পটা লেখার পরেও এমন কমেন্ট আসে যে আমি এই গল্পের চাহিদা দেখে , এই দুটো চরিত্র সুচি-আকাশকে নিয়ে একটা উপন্যাস লিখবো বলে দিই । এবং এটাও বলে দি যে দুই সপ্তাহ পরেই উপন্যাস আসবে ।
তো এই উপন্যাসের পুরোটাই হয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আর হঠাৎ করে । এবার , বলে তো দিলাম যে এই দুটো চরিত্র কে নিয়ে উপন্যাস লিখবো । এবং দুই সপ্তাহ পরেই প্রথম আপডেট দেবো । কিন্তু প্লট কোথায় ? ঘটনা কোথায় ? চরিত্র কোথায় ? রোমেন্টিক বা প্রেমের উপর উপন্যাসটা হবে এটা জানি , বাকি কিছু তো জানা নেই ।
‘ বাসর রাত , গল্পের কমেন্টে বাবান দা বলেন যে তুমি ওদের একান্ত ব্যক্তিগত মূহুর্ত না দিয়ে ভালো করেছো । তাই এই কথার সূত্র ধরে উপন্যাসটাও নন - ইরোটিক ক্যাটাগরিতে লিখবো বলে ভেবে নিই ।
পরের তিন দিন ভাবলাম উপন্যাসেরর প্লটের ব্যাপারে । যে প্লটটা এলো সেটা সেই আদিম কালের “ দুই বন্ধুর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি কিংবা ঝগড়া হবে । পরবর্তী কালে তাদের দুজনের সন্তানদের মধ্যে ভালোবাসা হবে । এবং নায়ক নায়িকার মিলনের জন্য এদের বাবা , যারা অতীত কালে বন্ধু ছিল , তাদের-ও মিলন হবে । „
কিন্তু এতে নতুনত্ব কোথায় ? এটা লোকে পড়বে কেন ? তার উপর এটা তো নন- ইরোটিক রোমান্স । তাহলে তো আরোই পড়বে না । পাক্কা তিন দিন ভেবে এতে নতুনত্ব আনলাম । সেটা হলো --- আকাশের জন্ম থেকে শুরু হবে । ছোট থেকে কিছু কিছু ঘটনা দেখাবো যাতে এদের দুজনের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি হয় । মানে ঘটনার ঘনঘটা তৈরি করতে হবে ।
এইসব ভেবেই উপন্যাস লেখা শুরু করলাম। উপন্যাস শুরুর তারিখ হলো 27/6/2021 , বাংলা ১৩ আষাঢ় ১৪২৮ তারিখে । একটি মানুষ কে দেওয়া কথা মত আমি লেখকের জায়গায় তার নাম ও দিই । এবং ওই ছোট ছোট তিনটে গল্পের থ্রেডের নামানুসারে এই উপন্যাসটারও নাম “ মিষ্টি মূহুর্ত „ রাখি ।
উপন্যাস তো শুরু হলো । কিন্তু প্রথম থেকেই যে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছিলাম এমন নয় । পাঠক হিসাবে বাবান দা , বুম্বাদা , দেবু দা , একটি মানুষ আর সুসি দা এই পাঁচ জন তো ছিল কিন্তু তিন চারটে আপডেটের পর আরো দুজন এই দলে যোগ দিল । যারা প্রত্যেকটা আপডেট পড়ে কমেন্ট করে আমাকে উৎসাহ দিয়েছে । তাদের নাম রাজা দা & সঞ্জয় সেন মহাশয় ।
প্রত্যেকের কমেন্ট করার ধরন আলাদা ছিল । সবার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা ছিল । বাবান দা প্রথমে আকাশের বাবার উপর দৃষ্টি দেন । বুম্বাদার খুঁতখুঁতে স্বভাবের জন্য উপন্যাসটা আরো ভালো হয়ে ওঠে । সঞ্জয় সেন মহাশয় কয়েকটা নতুন দিক তুলে ধরেন । রাজা দা আমার ইমোশন বর্ণনার কথা তুলে ধরেন । একটি মানুষ একটু ফিল্মি টাইপের উপর দৃষ্টি দিতে বলেন । দেবু দা বলেন বেশি পারিবারিক হয়ে যাচ্ছে । সুসি দা এখনই আমাকে বড়ো বড়ো লেখকের সাথে তুলনা করতে বারন করেন । এইসব কিছু আমার উপন্যাস লেখায় সাহায্য করে ।
এই উপন্যাস লেখার সময় বাবান দা , বুম্বাদা রূপি মেন্টর এবং সুসি দা , একটি মানুষ , সঞ্জয় সেন মহাশয় , দেবু দা , রাজা দার মতো পাঠক ছাড়াও কাকের মতো বন্ধু পেয়েছিলাম । সেই বন্ধু এখন কোথায় জানি না ।
এই আট জন বাদে আরো অনেকজন এসছেন , পড়েছেন , লাইক রেপু দিয়েছেন , কিন্তু কমেন্ট করেন নি বলে আমি ক্ষুদ্ধ । আবার কয়েকজন মাঝ রাস্তায় পড়া ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন । যারা নিয়মিত কমেন্ট করেনি তাদের নাম এতো বেশি যে এই উপরের আট জন বাদে ওদের নাম নেওয়া অসম্ভব । কেউ কেউ তো শুধু মাত্র লাইক দিয়েছে । তাই তাদের নাম খুঁজবো কি করে ? তবুও কয়েকজনের নাম উল্লেখ না করলেই নয় । তারা হলো --- সিরাজ দা , টাইগার দা , কল্লোল দা , ভবঘুরে দা ।
এই উপন্যাসটা লিখতে লিখতে আমি আরো কনফিডেন্স পাই এবং সমস্ত লজ্জা কেটে যায় । সাথে আরো কিছু কথা আমার সামনে পরিষ্কার হয়ে যায় ।
১ ) আমি প্রথম পুরুষে লিখতে পারি না ।
২ ) ইমোশন খুব ভালো করে লিখতে পারি ( রাজা দার মতে ) ।
৩ ) এতো গুলো চরিত্র , প্রায় ৩০-৪০ টা চরিত্র একসাথে হ্যান্ডেল করতে পারি ।
৪ ) উপমা বা কাব্য করে লিখতে পারি না ।
৫ ) ব্যাক্তিগত চিন্তা ভাবনা কোন ভাবেই গল্পে যেন না আসে । আর তাতে আমি সফল ।
৬ ) আমি লিখতে পারি ।
এই উপন্যাসের কয়েকটা আপডেট পরেই বাবান দা পর্বের নামকরণের দায়িত্ব নেন । এবং এই উপন্যাস চলাকালীন বাবান দা আমায় সাধারণ লিঙ্ক কে শুধু মাত্র একটা সংখ্যায় পরিবর্তন অর্থাৎ হাইপারলিংক বানাতে শেখান । এটা আমার খুব কাজে লাগে । সাথে দুটো পোস্টার এবং আমার নামের দুটো অবতার বানিয়ে দেওয়ার কথা ভোলা যাবে না ।
দেখতে দেখতে কিভাবে আটমাস কেটে গেল আর এই সুচি-আকাশের প্রেম সফল হয়ে গেল সেটা বুঝতে পারি নি । উপন্যাস শেষ হলো 25/1/2022 তারিখে । বাংলা ১১ মাঘ ১৪২৮ তারিখে ।
এই উপন্যাস এতো সাফল্য পাবে ভাবিনি । কিন্তু পেয়েছে । ১০০ পৃষ্ঠা আর ১,০০,০০০ ভিউস হতে যায় । এই উপন্যাসে অনেক উপর নিচ হয়েছে , অনেক ভুল করেছি সেগুলো আর তুলে ধরছি না । তুলে ধরাটা স্বয়ং লেখকের জন্য ঠিক না । তো দীর্ঘ আটমাস ধরে প্রায় এই ৮০০+ পৃষ্ঠার উপন্যাস লেখাটা শেষ হলো শুধুমাত্র আপনাদের পাশে থাকার জন্য ।
এই চিঠিটা কোন ধন্যবাদ জ্ঞাপন চিঠি নয় । তাই আপনারা যারা লাইক রেপু কমেন্ট করে পাশে থেকেছেন তাদের ধন্যবাদ দেবো না । শুধু এটা বলবো যে আপনাদের জন্য এখন আমার কাছে পরবর্তী উপন্যাস মানে ‘ প্রতিশোধ , সিরিজের তৃতীয় উপন্যাস লেখার কনফিডেন্স এসেছে ।