Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
রনিতার যে এরকম ভয়ংকর রকমের কাতুকুতু-বাই আছে সেটা বিয়ের আগে বেমালুম চেপে গিয়েছিল আমি নিজেও জানতে পারি আমাদের ফুলশয্যার রাতেসে এক বিচিত্র ঘটনা বৌভাতের সারাদিন ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে কেটে গেছে রাতে বাড়ির লোকজনদের ঠাট্টা তামাশা সলজ্জে উড়িয়ে দিয়ে বাসরঘরে দরজা বন্ধ করে বিছানায় এসে বসেছি দেখলাম রনিতা চুপচাপ বসে আছে মুখ নামিয়ে রনিতার সাথে আমার আলাপ অনেক আগেই হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মেসেজ চালাচালি করতে গিয়ে কখন যে মন চালাচালি করে বসেছি খেয়াল নেই ওর সাথে কথা বলে আমার ভালো লাগতো, আমাদের পছন্দ-অপছন্দের মধ্যেও অনেক সাদৃশ্য আছেমোটের উপর রনিতাকে আমার পছন্দ হয়েছিল ওদিকে যেদিন থেকে আমি চাকরি পেয়েছি সেদিন থেকেই মায়ের মুখে মাঝেমাঝেই এক পৈশাচিক হাসি দেখতে পেতাম যার ভাবখানা অনেকটা এরকম ছিল,"এতদিনে পাঁঠাটাকে রেডি করা গেছে এবার বলি দেওয়া যাবে" মায়ের সেই হাসি দেখে আমি শিউরে শিউরে উঠতাম পালানোর অনেক চেষ্টা করে বুঝলাম উপায় নেই আমার যুক্তি-অযুক্তি, ইচ্ছে-অনিচ্ছে মায়ের বাংলা সিরিয়ালের ডায়লগের কাছে ধরাশায়ী হল অবশেষে যখন বুঝলাম মুক্তির পথ নেই বলি আমাকে যেতেই হবে তখন ভেবে দেখলাম অচেনা হাঁড়িকাঠে মাথা রাখার থেকে চেনা হাঁড়িকাঠে মাথা রাখাই শ্রেয় রনিতাকে প্রস্তাব দিলাম তারপর বাবা-মার সাথে ওদের বাড়িতে গেলামবিয়ের কথা ঠিক হল এমনকি বিয়েটাও নির্বিঘ্নে মিটে গেলো এতদূর তো গল্পটা সুখী বাংলা সিনেমার মতোই গড়গড়িয়ে চলল কিন্তু আমার সামনে যে কি কি বিপদ আসন্ন, তা আমি মাইলখানেক দূর থেকেও টের পাইনি তখন যাই হোক আমি তো বিছানার উপর থেবড়ে বসলাম চোখের সামনে বাঘ সিংহ হাতি মশা অনেকবার দেখেছি কিন্তু বউ দেখিনিতাই হাঁ করে তাকিয়ে কিছুক্ষণ দেখলাম মনে মনে যে কি ফূর্তি হচ্ছিলনা তা আর বলব না রনিতাকে দেখলাম চুপচাপ বসে আছে আমি ভাবলাম লজ্জা পেয়েছেআমি ভাবলাম মেয়েদের হয়ত এরকম একটু হয়,নিজের বাড়ি ছেড়ে এসে সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে,সম্পূর্ণ নতুন মানুষদের মাঝে একটু অস্বস্তি না হওয়াটাই অস্বাভাবিকযতই পরিচিত হই,কারোর সাথে কথা বলা এক ব্যাপার আর তার পাশে শুয়ে রাত কাটানো আলাদা ব্যাপার আমার মনে একটু সহানুভূতি এলো যাক তাও ভালো আমার বউটা তাও একটু লজ্জা পায় আমার বোনটা যা তৈরি হয়েছে, শালা বাসরঘরেই বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে বরকে দিয়ে পা টেপাবে আমি গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম,"তুমি একটু সহজ ভাবে বসতে পারো অত চাপ নিতে হবেনা আমিই তো আছি" রনিতা মাথা নেড়ে বলল,"আরে না না চাপ নিচ্ছিনা তুমি শুয়ে পড়ো"

কিন্তু দেখলাম তাও জবুথবু হয়ে বসে আছে আমার কেন জানিনা খুব মিষ্টি লাগল ব্যাপারটা ভাবলাম ওর গালটা টিপে বলি, "চাপ না নিলে ওভাবে বসে আছো কেন? শুয়ে পড়ো"
কিন্তু আমি হাতটা নিয়ে যেই ওর গালের দিকে এগিয়েছে ওমনি তটস্থ হয়ে কিছুটা সরে গিয়ে ভয় ভয় মুখে বলল,"তুমি কিন্তু আমাকে টাচ করতে পারবেনা" আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলামশালা বউ না সুচিত্রা সেন! আমার পেটের ভিতর থেকে কেমন যেন উত্তমকুমার উত্তমকুমার ফিলিং এলো তারপর বুঝলাম গ্যাস ফর্ম করেছে মনে মনে ভাবলাম টাচ না করলে কি সারাজীবন ফ্লাইং কিস দিয়েই কাটাতে হবে আমি হয়ত দূর থেকে দাঁড়িয়ে চুমুর শব্দ করে বলবো,"এই নাও সোনা গালে মেখে নিও... এটা ঠোঁটে... এটা ফ্রি দিলাম,ঘুম না এলে কপালে বুলিয়ে নিও" শালা বিয়ের পরও কি ভালোবাসা হোয়াটস্যাপে চ্যাটের মতো হবে নাকি! মাথা ঝাঁকালাম, হতে দেওয়া যাবেনা তারপর মনে হল রনিতা হয়ত ইয়ার্কি মারছে, আমার সাথে আগে যখন কথা হতো, তখন তো অনেক মারতো ইয়ে মানে ইয়ার্কি এবারও হয়ত তাই হবে মনকে বোঝাতেই মন আবার জোর ফিরে এলো, আমিও "ধুর কি হয়েছে" বলে হাতটা ওর গালের কাছে নিয়ে গেলাম আর ওমনি ঘটে গেলো বিপত্তি রনিতার গালে হাত রাখতেই পূতনা রাক্ষসীর মতো 'হ্যা হ্যা হ্যা হ্যা' করে হেসে তিন চারটে ভল্ট খেয়ে বিছানা থেকে ধড়াম করে নীচে পড়ে গেলো আর তার সাথে সাথেই "বাবাগো" বলে গগনভেদী চিৎকার করে গোটা পাড়া জাগিয়ে দিলআমি তো নির্বাক ওদিকে আমার মা ছুটে এসে আমাদের ঘরের দরজায় ধাক্কা মারছে বাড়ির বাদবাকি সদস্যরাও এসে হাজিররনিতা বিছানায় উঠে বসতেই আমি গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম এক এক করে সবাই ঢুকল মা, বাবা,জ্যাঠা,জেঠি,পিসি,বোনমা তো ঢোকার সময় আমার দিকে এমন ঘৃণার চোখে তাকালো আমার শুকিয়ে গেলো ইয়ে মানে,গলা আমি বুঝতে পারলাম অতজন লোক সঙ্গে না এলে মা তো আমার দিকে তিনবার ঘাড় ঘুরিয়ে ছিঃ ছিঃ ছিঃ বলতোব্যাকগ্রাউন্ডে ধুম তানা না না ধুম তানা না মিউজিক বাজতো আর ঘরের লাইটটা জ্বলতো আর নিভতো বা হয়ত এসব কিছুই হত না,আমিই ওভার এস্টিমেট করছি সবাই তো রনিতাকে জিজ্ঞেস করতে ব্যস্ত, "কি হয়েছে মা! কি হয়েছে মাবলো! বলো!" বোনটা মাঝখান থেকে মিচকে শয়তানের মতো হাসি নিয়ে আমার কানে কানে এসে বলল,"তোকে তো শালা আমি ভদ্র ভাবতাম তুই একদিনও ওয়েট করতে পারলিনা! তা অন্ধকারে কি দেখতে পাসনি!”  
আমার কান গরম হয়ে গেলো আমি খিস্তি মেরে ওকে ভাগিয়ে দিলাম রনিতা ওদিকে সমস্ত দোষ নিজের কাঁধে নিয়ে সবাইকে আস্বস্ত করে নিজেদের ঘরে পাঠানোর ব্যবস্থা করলো মা তাও কিছুক্ষণ বসে রইলবারবার করে বলো,"বল, ভয় পাসনা মা,আমি তো আজ থেকে তোরও মা", এসব বলতে লাগলো আর আমার দিকে শ্যেনদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আমার মুন্ডুপাত করতে লাগলোমায়ের চোখেমুখে তখন "আমি তো জানিপাপীটাকে তো আমিই জন্ম দিয়েছি", লেখা রনিতা অনেকবার বলার পরে মা ঘর ছাড়লো আমিও দরজা লাগিয়ে দিয়ে এসে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার রনিতার পাশে বসলাম একটু শান্ত হয়ে বসে থাকলাম কিছুক্ষণ রনিতা মুখ নামিয়ে বসে আছেআমার ভ্রু দুটো কুঁচকেআমার মন বারবার জানান দিতে লাগলো," কুছ তো গারবার হ্যায় দয়া,পাতা লাগাও" আমি সরাসরিই জিজ্ঞেস করলাম ওকে,"কি ব্যাপার বলোতো! তুমি ওরকম ছিটকে ছবি হয়ে গেলে কেন!" রনিতা প্রথমে মাথা নামিয়েই বলল,"কিছু না তুমি ঘুমোওআমিও নাছোড়বান্দা, "তুমি যদি না বলো কি হয়েছে, আমি ঘুমোবোনা" রনিতা একবার আমার দিকে তাকালো, তারপর মুখ ঘুরিয়ে বলল,"বলতে পারি,তবে তুমি হাসবেনা কথা দাও"
আমি ভুরু কুঁচকে জবাব দিলাম,"না হাসবোনা তুমি বলো"
রনিতা আমতা আমতা করে বলল, "আমার না হেব্বি কাতুকুতু লাগে কেউ ধরলেইসারা শরীরেই কেউ ছুঁলেই মনে হয় কারেন্ট লাগে" আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলাম ব্যাপারটা প্রসেস করতে আমার কিছুটা সময় লাগলো কিন্তু বোঝার পরে আমি খ্যালখেলিয়ে হেসে উঠলাম রনিতা গালদুটো ফুলিয়ে প্রতিবাদ করল,"এই জন্যই তোমাকে বলতে চাইনি
আমি "আচ্ছা! আচ্ছা! ঘুমোও" বলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম ব্যাপারটাকে আমি উড়িয়ে দিয়েছিলাম সেই রাতে আর তার মাশুল গুণতে হয় ভবিষ্যতে
 
কদিন পরেরই ঘটনাআমি সবে ঘুম থেকে উঠে  সবে সবে ব্রাশ করছি রনিতা চা করে এনেছে সবার জন্য মাকে আর বোনকে চা দেওয়ার পর বাবাকে চা দেওয়ার জন্য কাপটা নিয়ে এগোচ্ছে আমি ক্যাজুয়্যালি হেঁটে হেঁটে ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছি এবার আমি কি করে জানবো আমার কনুইয়ের হালকা ছোঁওয়ায় ওরকম ডিস্কো নেচে গরম চায়ের কাপটা পুরো আমার বাবার মাথায় উপুড় করে দেবে! বেচারা লেজে আগুন ধরা হনুমানের মতো পাঁচ মিনিট গোটা বাড়ি লাফিয়ে দাপিয়ে বেড়ালো মা বোন রনিতা সবাই যে যেখান থেকে পারলো গামলায়,বালতিতে,চামচে করে বাবার মাথায় জল ঢাললো তবে গিয়ে বাবা শান্ত হলো ঘটনার আকস্মিকতায় আমি এতটাই অভিভূত হয়ে পড়েছিলাম যে আমি ভুলেই গেছিলাম আমারও কিছু একটা করা উচিৎচুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুজরা দেখছিলাম রনিতা তো ওদিকে ক্ষমা চেয়ে অস্থির বাবা এমনিতে খুব শান্ত প্রকৃতির খুব একটা কাউকে কিছু বলেনা সেই বাবাও শান্ত হওয়ার পরে রনিতাকে এসে বলে গেলো,"মা এবার থেকে চা দিলে হাতে দিও, টাঁকে না
 
আমি বুঝলাম, জিনিস ফেলে রাখলে চলবেনাতাহলে কিছুদিনের মধ্যেই বাড়িতে আগুন লেগে যাবেআমি দেরি না করেই শহরের এক সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট করিয়ে রনিতাকে নিয়ে দেখাতে গেলাম
 
সেই সাইক্রিয়াটিস্ট সব শুনে বেশ রাবীন্দ্রিক স্টাইলে বললেন,"দেখো এই কাতুকুতু ব্যাপারটা অনেকটাই মনের ব্যাপার তুমি কাতুকুতু মনে করলেই কাতুকুতু, না করলেই নয়" ওনার কথা শুনে আমার কেন জানিনা আমার মায়ের কথা মনে পড়ে গেলোছোটবেলায় আমার যখন পাতলা পায়খানা হতো আর আমি দশবারো বার ধূপধুনো দিয়ে আসার পরও বাথরুমের দরজা ধাক্কাতাম,মাও আমাকে বলতো,পায়খানার কথা ভাববিনা পায়খানার কথা ভাবলেই পায়খানা পাবেনা ভাবলেই আর পাবেনাএবার বুঝলাম ব্যাপারটা তাহলে সায়েন্টিফিক যাইহোক ওই সাইক্রিয়াটিস্ট অনেক গল্প শোনালেন রনিতাকে কিভাবে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট বগলে চরম দুর্গন্ধ থাকা সত্ত্বেও সেটাকে অগ্রাহ্য করে যুদ্ধ করতে যেতেন কিভাবে আইনস্টাইন মাথায় উকুন থাকা সত্ত্বেও একবারো না চুলকে একের পর এক জটিল ইকুয়েশন সলভড করতেনআমার বেশ সম্ভ্রম জাগলো ওনার প্রতি এসব তথ্য আমি তো কোনোদিন ইতিহাসের বই- পড়িনি উনি নিশ্চয় বিদেশি বই থেকে পড়েছেনআমার মনে হল আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়ত এটাও জানতে পারবো, পিকাসো খৈনি নিতেন, আর্কিমিডিসের হাজা ছিল, গ্যালিলিও ডেনড্রাইটের নেশা করতেনযাই হোক উনি এগুলো বললেন না তবে ওনার কথা শুনে এটা বুঝলাম সবকিছুই মনের ব্যাপার তাই ইয়েটাকে শক্ত করতে হবে মানে মনটাকে আরকি তারপর উনি প্রেসক্রিপশন লিখে দিলেন উপরে বড়ো বড়ো করে লিখলেন টাচ থেরাপি বিষয়বস্তু আমি যা বুঝলাম রনিতাকে এরপর একমাস সকালে ঘুম থেকে উঠে,দুপুরে খাওয়ার দু ঘন্টা পরে আর রাতে শোওয়ার আগে এই থেরাপি নিতে হবে বিশেষ কঠিন কিছুনা,আমি রনিতাকে এখানে ওখানে টাচ করবো আর রনিতার কাজ হবে না হেসে সহ্য করা একমাসের মধ্যেই নাকি অনেকটা কেটে যাবে
 
পরেরদিন থেকেই আমরা টাচ থেরাপি শুরু করে দিয়েছিপ্রথমদিকে যতবারই টাচ থেরাপি দিতে গেছি রনিতাকে রনিতা 'আঃ ছাড়ো!',' উঃ লাগছে!' বলে লোটে মাছের মতো কিলবিল করে উঠতোতারপর খাটের এধার থেকে ওধারে গড়িয়ে সে কি হাসি!আমার চোখেও জল চলে আসতো যাইহোক তিন সপ্তাহ যেতে যেতেই রনিতা অনেকটা কাটিয়ে উঠেছেতবে এখনও মাঝেমাঝেই থেরাপি দেওয়ার সময় অমানবিক আওয়াজ করে ওঠে এসবের মধ্যে বাড়িতে একটা পরিবর্তন আমি দেখতে পেয়েছি মা রনিতাকে আর চা করতে দেয়না বাবা আমাদের ঘরের দিকে পা-  রাখেনা আর বোনটা কেন জানিনা আমাকে দেখলেই মুচকি হাসি হাসে Sleepy
 
<সমাপ্ত>
 
লেখা ~ অর্ক ব্যানার্জী
 
[ সময়টা ভালোনা ঘরে থাকুন  সাবধানে থাকুন হাসুন হাসি ছড়িয়ে দিন Smile ]

[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 29-01-2022, 05:08 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)