28-01-2022, 09:12 PM
#ভালোবাসার_বিবর্তন
সে অনেকদিন আগেকার কথা। শীতকালে তখন সদ্য সদ্য বিয়ে করেছি। বিয়ের পরেই গায়ে এতো পুলক লাগল যে ক্রিম মাখা ছেড়ে দিলাম। মনে প্রানে হিল্লোলের বাতাস, গ্রীষ্ম কালেও ফ্যান লাগছে না।
রান্নাঘরে তখন একসাথে হাতে হাত লাগিয়ে আমরা দুজনে রান্না করতাম। বউ খুন্তি নাড়ছে তো আমি হাতা নাড়ছি। পরসস্পরের দিকে মাঝে মাঝে চেয়ে দেখছি। বউ লজ্জা পেয়ে মুখ নামিয়ে নিচ্ছে। ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজছে "আঁখো কি গুস্তাখিয়া...." আমি আবার হাতা নাড়াতে কনসেনট্রেট করছি। গরম তেলে বউ পেয়াঁজকুচি দিতে যাচ্ছে, আমি বললাম, সাবধানে দিও, তেল ছিটকে লাগলে ফোস্কা পড়ে যাবে। পেঁয়াজ দেওয়া হলে আমি বউয়ের মুখের দিকে চেয়ে দেখলাম--ঘর্মাক্ত মুখ। তোমার মনে হয় গরম লাগছে। টেবিল ফ্যানটা চালিয়ে দেব। বউ বলল, না থাক, ও সামান্য গরমে কিচ্ছু হবে না। তুমি বরং একটু টিভি দেখো। IPL চলছে তো। আমি বললাম, চলুক। তুমি একা একা রান্নাঘরে পচে মরবে আর আমি ঘরে বসে ফ্যান চালিয়ে tv দেখব! ভাবলে কী করে!
এসব কথা হতে গিয়ে পেয়াঁজ গেল পুড়ে। বউ বলল, ইস, পেয়াঁজ যে পুড়ে গেল। আমি বললাম, আরে হতেই পারে। আমি পেয়াঁজগুলো ফেলে দিয়ে কড়াই ধুয়ে দিচ্ছি।
বউ বলল, কিন্তু আর যে পেয়াঁজ নেই। তুমি আলুসেদ্ধ কী দিয়ে মাখিয়ে খাবে?
আমি বললাম, তুমি পারবে তো?
বউ বলল, আমার কাঁচা তেল নুন দিয়ে মাখিয়ে খেতে কোন অসুবিধা নেই।
আমি বললাম, আমারও অসুবিধা নেই।(যদিও কাঁচা তেল পেয়াঁজ দিয়ে আলুসেদ্ধ আমার অখাদ্য লাগে)
কড়াইটা বেসিনে নামাতে গিয়ে স্ল্যাবে রাখা একটা কাপে ধাক্কা খেয়ে কাপটি গেল মেঝেয় পড়ে।
আমি আঁতকে উঠে বললাম, সরি গো।
বউ বলল, ধুর এতে সরি বলার কী আছে। কাজ করতে গেলে এরকম একটু আধটু জিনিস তো ভাঙবেই। তুমি সরো, আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি। আমি বললাম, না সোনা, তোমার নরম তুলোর মতো আঙ্গুল, তুলতে গিয়ে কেটে যেতে পারে।
বউ বলল, ঠিক আছে, সাবধানে পরিষ্কার কোরো।
বউ ঝাঁটা নিয়ে এলো। আমি ঝাঁট দিয়ে কাপের ভাঙা টুকরোগুলো এক জায়গায় আনালম। এরপর হাত দিয়ে খুব সাবধানে টুকরোগুলো একটা কাগজের উপর রাখতে গিয়ে, একটা টুকরো আঙুলে ফুটে গেল। যেমনি ফুটল, ওমনি ফিনকি দিয়ে রক্ত শুরু হল। বউ রক্ত দেখে আউচ করে উঠল, যেন ওর হৃদয়ে কাপের টুকরো বিঁধল।
পুরোনো দিনের সিনেমার নায়িকাদের মত বউ আমার আঙ্গুল মুখে পুড়ে চুষতে যাবার উপক্রম করলে আমি বাধা দিলাম। বললাম, এসব কী করছ! বেরিয়ে যাওয়া রক্তে কত জার্ম থাকে তুমি জানো?
বউ বলল, কিন্তু রক্ত তো থামছে না।
এই বলেই বউ আমার হাত ধরে বেসিনের সামনে আঙ্গুল রেখে ট্যাপ কল চালিয়ে দিল। জল পড়ছে, আমরা পরস্পর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। জল পড়ছে, ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজছে, "চোখে চোখে কথা বল, মুখে কিছু বলনা। মন নিয়ে খেলা করো, এ কি ছলনা।"
*
তারপর অনেক দিন কেটে গেছে। ভালোবাসা আর আগের মত নেই, তবে ফিকে হয়ে যায়নি, শুধু কালের নিয়মে বিবর্তিত হয়েছে।
এখন আমি রান্নাঘর এড়িয়ে চলি।
একদিন রান্নাঘর থেকে বউয়ের চিল চিৎকার শোনা গেল। উৎসুক হয়ে গিয়ে দেখলাম, গোটা ঘরময় সর্ষের তেল ছড়ানো। আমি চট করে হিসেব করে দেখলাম প্রায় ত্রিশ চল্লিশ টাকার তেল নষ্ট হয়েছে, মানে 600 ml কোল্ড ড্রিংকসের দাম।
আকাশ দিকে তাকিয়ে কাজ করলে এরকমই হবে, ঠোঁটের কোণে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি এনে আমি বললাম।
বউ ততোধিক গলা চড়িয়ে বলল, মুড়িতে তেল নিয়ে ঢাকনা হালকা করে লাগিয়ে রাখাটা তোমার স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
---মানে? কী বলতে চাও?
---তোমার জন্যই তেল পড়েছে। পরিষ্কার করো এবার।
শুনেই তো আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।
ঝগড়া ঝামেলা করে কোন লাভ হল না। বউ প্রমান করেই ছাড়ল যে, আমার দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের জন্যই তার হাত থেকে তেল পড়েছে। অতএব আমাকেই পরিষ্কার করতে হবে। IPL দেখছিলাম। রাসেল ক্যালাচ্ছিল। আমি বললাম, রাসেলের ব্যাটিংটা দেখে পরিষ্কার করে দিচ্ছি।
বউ বলল, বলি রাসেল-ভাজা দিয়ে ভাত খাবে না মাছ-ভাজা দিয়ে ভাত খাবে?
আমি মনে মনে ভাবলাম, এক মাঘে তো আর শীত যায় না। আমারও দিন আসবে। আমার হাত থেকে কিছু জিনিস পড়ে নষ্ট হলে আমিও তোমাকে দায়ী করব।
কিছুদিন পরেই এরকম একটি ঘটনা ঘটে গেল। রান্নাঘরে কী একটা নিতে গিয়ে স্ল্যাবে রাখা পাঁচটি ডিমের মধ্যে একটি ডিম মেঝেতে পড়ে গেল। ব্যাস আর যায় কোথায়। শুরু করে দিলাম চেঁচাতে।
কবে যে বোধ বুদ্ধি হবে কে জানে! বলি কোন জিনিসটি কোথায় রাখতে হয় সেটা আর কবে শিখবে?
বউ সিরিয়াল দেখতে দেখতে রান্নাঘরে এসে জিজ্ঞাসা করল, এমন হাঁড়লের মত চিৎকার করছ কেন?
আমি মেজাজ নিয়ে তারই টেকনিকে বললাম, এটা ডিম রাখার জায়গা?
বউ ভ্রু কুঁচকে বলল,
ওহে নিউটনের নাতি, ভালো করে স্মরণ করে দেখ তো কে রেখেছে?
আমার তো স্পষ্ট মনে পড়ছে এটা শেক্সপিয়ারের নাতনির কাজ।
শেষমেশ অনেক চিৎকার চেঁচামেচি বাগবিতণ্ডার পর আমার একটু একটু মনে পড়তে লাগল, এই বেকুবের মত কাজটা অধমেরই করা। কিন্তু আত্মপক্ষ সমর্থন আদায়ের জন্য বললাম, ঠিক আছে তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম আমিই রেখেছি কিন্তু তোমার তো সরিয়ে রাখা উচিত ছিল। না, তাতে বিশেষ কোন কাজ হল না। বউ কোথা থেকে ছেঁড়া ন্যাকড়া নিয়ে হাজির। আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, পরিষ্কার করে ফেলো।
কী আর বলব আপনাদেরকে, মেয়ের পটি পরিষ্কার করতে এত কষ্ট করতে হয়নি যতটা ভেঙে যাওয়া ডিম পরিষ্কার করতে হল। পরিষ্কার তো হল কিন্তু একটা আঁশটে গন্ধ কিছুতেই যাচ্ছে না। ফিনাইল দিয়ে সেটা দূর করলাম। মিনিট পনের পর উনি রান্নাঘর পরিদর্শনে এলেন। নাক দিয়ে প্রথমে শুঁক শুঁক করে শুঁকলেন। কোন গন্ধ পেলেন না। এরপর ডিম ভাঙার জায়গায় হাঁটু গেড়ে বসে মাটি থেকে ইঞ্চি খানেক তফাতে নাক নিয়ে গিয়ে শুঁকে বললেন, গন্ধ আসছে।
এক বোতল কেরোসিন ঢালবো? আমি অম্লান বদনে জিগ্গেস করলাম।
প্রত্যুত্তরে কোন উত্তর এলো না। কিন্তু চোখের চাহনি ভালো ঠেকলো না। অগত্যা আবার ফিনাইল দিয়ে ন্যাকড়া ঘষতে লাগলাম। ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজছে, "লেগেছে লেগেছে লেগেছে
লেগেছে লেগেছে লেগেছে আগুন
তুম তানা নানা নানা
আয় তোরা দেখে যা না।"
পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে গেল। সেই নতুন নতুন বিয়ে হবার পর কাপ ভাঙার দৃশ্য মনে করে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে এলো। উফ, কী সব দিন ছিল তখন! চোখে চোখে কতই না কথা হত আমাদের। এখন আর চোখে চোখে কোন কথা হয় না, যা হয় মুখে মুখেই হয়।
সে অনেকদিন আগেকার কথা। শীতকালে তখন সদ্য সদ্য বিয়ে করেছি। বিয়ের পরেই গায়ে এতো পুলক লাগল যে ক্রিম মাখা ছেড়ে দিলাম। মনে প্রানে হিল্লোলের বাতাস, গ্রীষ্ম কালেও ফ্যান লাগছে না।
রান্নাঘরে তখন একসাথে হাতে হাত লাগিয়ে আমরা দুজনে রান্না করতাম। বউ খুন্তি নাড়ছে তো আমি হাতা নাড়ছি। পরসস্পরের দিকে মাঝে মাঝে চেয়ে দেখছি। বউ লজ্জা পেয়ে মুখ নামিয়ে নিচ্ছে। ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজছে "আঁখো কি গুস্তাখিয়া...." আমি আবার হাতা নাড়াতে কনসেনট্রেট করছি। গরম তেলে বউ পেয়াঁজকুচি দিতে যাচ্ছে, আমি বললাম, সাবধানে দিও, তেল ছিটকে লাগলে ফোস্কা পড়ে যাবে। পেঁয়াজ দেওয়া হলে আমি বউয়ের মুখের দিকে চেয়ে দেখলাম--ঘর্মাক্ত মুখ। তোমার মনে হয় গরম লাগছে। টেবিল ফ্যানটা চালিয়ে দেব। বউ বলল, না থাক, ও সামান্য গরমে কিচ্ছু হবে না। তুমি বরং একটু টিভি দেখো। IPL চলছে তো। আমি বললাম, চলুক। তুমি একা একা রান্নাঘরে পচে মরবে আর আমি ঘরে বসে ফ্যান চালিয়ে tv দেখব! ভাবলে কী করে!
এসব কথা হতে গিয়ে পেয়াঁজ গেল পুড়ে। বউ বলল, ইস, পেয়াঁজ যে পুড়ে গেল। আমি বললাম, আরে হতেই পারে। আমি পেয়াঁজগুলো ফেলে দিয়ে কড়াই ধুয়ে দিচ্ছি।
বউ বলল, কিন্তু আর যে পেয়াঁজ নেই। তুমি আলুসেদ্ধ কী দিয়ে মাখিয়ে খাবে?
আমি বললাম, তুমি পারবে তো?
বউ বলল, আমার কাঁচা তেল নুন দিয়ে মাখিয়ে খেতে কোন অসুবিধা নেই।
আমি বললাম, আমারও অসুবিধা নেই।(যদিও কাঁচা তেল পেয়াঁজ দিয়ে আলুসেদ্ধ আমার অখাদ্য লাগে)
কড়াইটা বেসিনে নামাতে গিয়ে স্ল্যাবে রাখা একটা কাপে ধাক্কা খেয়ে কাপটি গেল মেঝেয় পড়ে।
আমি আঁতকে উঠে বললাম, সরি গো।
বউ বলল, ধুর এতে সরি বলার কী আছে। কাজ করতে গেলে এরকম একটু আধটু জিনিস তো ভাঙবেই। তুমি সরো, আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি। আমি বললাম, না সোনা, তোমার নরম তুলোর মতো আঙ্গুল, তুলতে গিয়ে কেটে যেতে পারে।
বউ বলল, ঠিক আছে, সাবধানে পরিষ্কার কোরো।
বউ ঝাঁটা নিয়ে এলো। আমি ঝাঁট দিয়ে কাপের ভাঙা টুকরোগুলো এক জায়গায় আনালম। এরপর হাত দিয়ে খুব সাবধানে টুকরোগুলো একটা কাগজের উপর রাখতে গিয়ে, একটা টুকরো আঙুলে ফুটে গেল। যেমনি ফুটল, ওমনি ফিনকি দিয়ে রক্ত শুরু হল। বউ রক্ত দেখে আউচ করে উঠল, যেন ওর হৃদয়ে কাপের টুকরো বিঁধল।
পুরোনো দিনের সিনেমার নায়িকাদের মত বউ আমার আঙ্গুল মুখে পুড়ে চুষতে যাবার উপক্রম করলে আমি বাধা দিলাম। বললাম, এসব কী করছ! বেরিয়ে যাওয়া রক্তে কত জার্ম থাকে তুমি জানো?
বউ বলল, কিন্তু রক্ত তো থামছে না।
এই বলেই বউ আমার হাত ধরে বেসিনের সামনে আঙ্গুল রেখে ট্যাপ কল চালিয়ে দিল। জল পড়ছে, আমরা পরস্পর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। জল পড়ছে, ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজছে, "চোখে চোখে কথা বল, মুখে কিছু বলনা। মন নিয়ে খেলা করো, এ কি ছলনা।"
*
তারপর অনেক দিন কেটে গেছে। ভালোবাসা আর আগের মত নেই, তবে ফিকে হয়ে যায়নি, শুধু কালের নিয়মে বিবর্তিত হয়েছে।
এখন আমি রান্নাঘর এড়িয়ে চলি।
একদিন রান্নাঘর থেকে বউয়ের চিল চিৎকার শোনা গেল। উৎসুক হয়ে গিয়ে দেখলাম, গোটা ঘরময় সর্ষের তেল ছড়ানো। আমি চট করে হিসেব করে দেখলাম প্রায় ত্রিশ চল্লিশ টাকার তেল নষ্ট হয়েছে, মানে 600 ml কোল্ড ড্রিংকসের দাম।
আকাশ দিকে তাকিয়ে কাজ করলে এরকমই হবে, ঠোঁটের কোণে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি এনে আমি বললাম।
বউ ততোধিক গলা চড়িয়ে বলল, মুড়িতে তেল নিয়ে ঢাকনা হালকা করে লাগিয়ে রাখাটা তোমার স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
---মানে? কী বলতে চাও?
---তোমার জন্যই তেল পড়েছে। পরিষ্কার করো এবার।
শুনেই তো আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।
ঝগড়া ঝামেলা করে কোন লাভ হল না। বউ প্রমান করেই ছাড়ল যে, আমার দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের জন্যই তার হাত থেকে তেল পড়েছে। অতএব আমাকেই পরিষ্কার করতে হবে। IPL দেখছিলাম। রাসেল ক্যালাচ্ছিল। আমি বললাম, রাসেলের ব্যাটিংটা দেখে পরিষ্কার করে দিচ্ছি।
বউ বলল, বলি রাসেল-ভাজা দিয়ে ভাত খাবে না মাছ-ভাজা দিয়ে ভাত খাবে?
আমি মনে মনে ভাবলাম, এক মাঘে তো আর শীত যায় না। আমারও দিন আসবে। আমার হাত থেকে কিছু জিনিস পড়ে নষ্ট হলে আমিও তোমাকে দায়ী করব।
কিছুদিন পরেই এরকম একটি ঘটনা ঘটে গেল। রান্নাঘরে কী একটা নিতে গিয়ে স্ল্যাবে রাখা পাঁচটি ডিমের মধ্যে একটি ডিম মেঝেতে পড়ে গেল। ব্যাস আর যায় কোথায়। শুরু করে দিলাম চেঁচাতে।
কবে যে বোধ বুদ্ধি হবে কে জানে! বলি কোন জিনিসটি কোথায় রাখতে হয় সেটা আর কবে শিখবে?
বউ সিরিয়াল দেখতে দেখতে রান্নাঘরে এসে জিজ্ঞাসা করল, এমন হাঁড়লের মত চিৎকার করছ কেন?
আমি মেজাজ নিয়ে তারই টেকনিকে বললাম, এটা ডিম রাখার জায়গা?
বউ ভ্রু কুঁচকে বলল,
ওহে নিউটনের নাতি, ভালো করে স্মরণ করে দেখ তো কে রেখেছে?
আমার তো স্পষ্ট মনে পড়ছে এটা শেক্সপিয়ারের নাতনির কাজ।
শেষমেশ অনেক চিৎকার চেঁচামেচি বাগবিতণ্ডার পর আমার একটু একটু মনে পড়তে লাগল, এই বেকুবের মত কাজটা অধমেরই করা। কিন্তু আত্মপক্ষ সমর্থন আদায়ের জন্য বললাম, ঠিক আছে তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম আমিই রেখেছি কিন্তু তোমার তো সরিয়ে রাখা উচিত ছিল। না, তাতে বিশেষ কোন কাজ হল না। বউ কোথা থেকে ছেঁড়া ন্যাকড়া নিয়ে হাজির। আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, পরিষ্কার করে ফেলো।
কী আর বলব আপনাদেরকে, মেয়ের পটি পরিষ্কার করতে এত কষ্ট করতে হয়নি যতটা ভেঙে যাওয়া ডিম পরিষ্কার করতে হল। পরিষ্কার তো হল কিন্তু একটা আঁশটে গন্ধ কিছুতেই যাচ্ছে না। ফিনাইল দিয়ে সেটা দূর করলাম। মিনিট পনের পর উনি রান্নাঘর পরিদর্শনে এলেন। নাক দিয়ে প্রথমে শুঁক শুঁক করে শুঁকলেন। কোন গন্ধ পেলেন না। এরপর ডিম ভাঙার জায়গায় হাঁটু গেড়ে বসে মাটি থেকে ইঞ্চি খানেক তফাতে নাক নিয়ে গিয়ে শুঁকে বললেন, গন্ধ আসছে।
এক বোতল কেরোসিন ঢালবো? আমি অম্লান বদনে জিগ্গেস করলাম।
প্রত্যুত্তরে কোন উত্তর এলো না। কিন্তু চোখের চাহনি ভালো ঠেকলো না। অগত্যা আবার ফিনাইল দিয়ে ন্যাকড়া ঘষতে লাগলাম। ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজছে, "লেগেছে লেগেছে লেগেছে
লেগেছে লেগেছে লেগেছে আগুন
তুম তানা নানা নানা
আয় তোরা দেখে যা না।"
পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে গেল। সেই নতুন নতুন বিয়ে হবার পর কাপ ভাঙার দৃশ্য মনে করে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে এলো। উফ, কী সব দিন ছিল তখন! চোখে চোখে কতই না কথা হত আমাদের। এখন আর চোখে চোখে কোন কথা হয় না, যা হয় মুখে মুখেই হয়।