Thread Rating:
  • 106 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মিষ্টি মূহুর্ত ( উপন্যাস) সমাপ্ত :---
রবিবার দুপুর গড়াতেই , আগের দিনের কথা মত আকাশের বাবা মোঃ শেখের সাথে ধর্মতলায় দেখা করলেন । সেখান থেকে দুজনে গেলেন শালিনীর বাড়িতে । পার্ক স্ট্রিটের একটা বড়ো বিল্ডিংয়ে তিনটে ঘরের একটা ফ্ল্যাটে শালিনীর বসবাস । ডোরবেল বাজানোর পর যে মহিলা দরজা খুললো তার বয়স আন্দাজ পঁয়ত্রিশ তো হবেই । দরজা খুলে প্রথমে আকাশের বাবা কে চিনতে না পারলেও মোঃ শেখকে শালিনী ঠিক চিনতে পারলো , “ আপনি ? „

মোঃ রহমত শেখ মৃদু হেসে বললো , “ হ্যাঁ , আমি । চিনতে পেরেছো দেখে খুশি হলাম । „

শালিনী দরজার একপাশে সরে গিয়ে বললো , “ আসুন । ভিতরে আসুন । „

ঘরের ভিতরে ঢুকে শালিনীর দেখিয়ে দেওয়া সোফায় দুজনে বসতেই শালিনী জিজ্ঞাসা করলো , “ আপনারা কি নেবেন ? চা , কফি .....

মোঃ শেখ বললো , “না আমরা এখন কিছু নেবো না । তুমি একটু বসো । তোমার সাথে কথা আছে । „

শালিনী একটা সিঙ্গেল সোফায় বসে বললো , “ কি কথা সেটা আমি জানি । আর তার উত্তর-ও আপনি জানেন । তাহলে সময় নষ্ট করছেন কেন ? „

মোঃ শেখ একবার উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে , আকাশের বাবাকে দেখিয়ে বললো , “ ইনি কিছু কথা বলতে চান , সেটা অন্তত শোন । „

মোঃ শেখের কথা শেষ হওয়ার আগেই পাশের ঘর থেকে একজন ছত্রিশ সাঁয়ত্রিশ বছরের পুরুষ বেরিয়ে এলো । তার কোলে চার পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে পুতুল নিয়ে খেলা করছে । এই লোকটাই হয়তো শালিনীর স্বামী । সে একবার সোফায় বসে থাকা দুজন কে আড়চোখে দেখে নিয়ে অন্য একটা ঘরে চলে গেল ।

শালিনীর স্বামী চলে গেলে আকাশের বাবা বললেন , “ আমি এনার কাছ থেকে তোমার ব্যাপারে শুনেছি । তোমায় তুমি করেই বলছি কারন তুমি আমার থেকে বয়সে ছোট । আমি জানি না তোমায় কি বলবো কিন্তু তুমি তোমার সাথে হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে কি কিছু করবে না ....

শালিনীর আকাশের বাবাকে থামিয়ে রহমতের দিকে চেয়ে বললো , “ এ কথা বহুবার এই ইনি আমায় বলেছেন । আর বহুবার আমি বলেছি আমার এখন একটা সংসার আছে । স্বামী আছে । একটা মেয়ে আছে । আমি এই ন্যায় অন্যায় খেলতে গিয়ে এদের কোন বিপদে ফেলতে পারবো না । „

আকাশের বাবা উত্তেজিত হয়ে বললেন , “ তুমি কি চাওনা এইসব বন্ধ হোক । ওরা যদি এইভাবে রাস্তায় খোলা ঘুরে বেড়ায় তাহলে না জানি আরও কত মেয়ের সর্বনাশ করবে । তুমি কি এইসব মেয়েদের জন্য এগিয়ে আসতে পারবে না ! „

শালিনী ভুরু কুঁচকে বললো , “ আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনার মেয়ের সাথে ওরা কিছু একটা করেছে । আমি জানতে চাইনা ওরা আপনার মেয়ের সাথে কি করেছে । যদি সত্যিই কিছু করে থাকে আপনার মেয়ের সাথে , তাহলে আপনার মেয়েকে এগিয়ে আসতে বলুন না ! „

এর উত্তরে আকাশের বাবা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন । কিন্তু তখনই তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো সুচির কান্নাভেজা চোখ । আর মুখে এসিডের ক্ষত ..... সঙ্গে সঙ্গে চোখটা বন্ধ করে নিলেন তিনি ।

শালিনী আকাশের বাবার মুখভঙ্গি দেখেই সব বুঝতে পারলো , “ দেখলেন ! আপনিও আপনার মেয়েকে এগিয়ে আসতে দিতে চান না । আপনিও ভয় পাচ্ছেন । যেদিন আপনি আপনার মেয়েকে এগিয়ে আনতে সাহস করবেন সেদিন আসবেন । এখন আসতে পারেন । „

এরপর আর ওখানে বসে থাকা অসভ্যতার লক্ষণ । তাই দুজনেই উঠে ঘরের বাইরে চলে এলেন । ঠিক তখন ভিতর থেকে কিছু আওয়াজ আকাশের বাবা আর মোঃ শেখের কানে এলো । ভিতরে শালিনী তার স্বামীর সাথে কথা বলছে । কথা শুনে মনে হচ্ছে শালিনীর স্বামী চায় যে শালিনী লড়ুক ।

কথাগুলো শুনে একবার একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে তারা দুজন নিচে নেমে এলেন । রাস্তায় আনমনে হাঁটতে হাঁটতে মোঃ শেখ আকাশের বাবার কাঁধে হাত দিয়ে বললো , “ দেখুন আপনি চেষ্টা ভালো করেছেন । আপনি আপনার মেয়েকে সাক্ষী হিসাবেও আনতে রাজি সেটা আমি জানি , কিন্তু আপনার মেয়ে এখন সুখে সংসার করছে । করতে দিন । „

তারপর কিছুক্ষন থেমে বললো , “ আমি . । ধার্মিক না হলেও এটা মানি , নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বিশ্বাস করি যে , একটা মানুষ খারাপ করতে করতে একটা সময় তার সাথেও খারাপ হতে শুরু করে । আমাদের এখন ওটারই অপেক্ষা করতে হবে । „

এবার আকাশের বাবা রাগে ফেটে পড়লেন , “ ওই পশুটা কয়েক বছর পর মুখ্যমন্ত্রী হবে । ভাবতে পারছেন কি করবে তখন ! „

“ আমি জানি মি.মিত্র । কিন্তু তখন ওর হাত বাঁধা হয়ে যাবে । তখন না চাইতেও কিছু করতে পারবে না । আবার লুকিয়ে করতেও পারে । আপনার সাথে দেখা হয়ে সত্যি হয়ে খুব ভালো লাগলো । „ বলে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিল ।

মোঃ শেখের সাথে হ্যান্ডশেক করে আকাশের বাবা বাড়ি ফেরার রাস্তা ধরলেন । মাথায় তার একটাই কথা ঘুরছে । একবার আকাশ কথার ছলে তাকেই উদ্দেশ্য করে বলেছিল , “ যারা অপরাধ করে আর যারা অপরাধ সয় , দুজনেই সমান দোষী । „ কথাটা বারবার আকাশের বাবার মাথায় এসে আঘাত করতে লাগলো । এর জন্য বার দুই তিনি গাড়ি চালানোয় অমনোযোগী হয়ে উঠলেন ।

বাড়ি ফিরে তিনি ছাদে মাদুর পেতে সুচির বাবার সাথে দাবা খেলতে বসলেন । কিন্তু দাবা খেলায়ও তার অমনোযোগ দেখে সুচির বাবা বললেন , “ কি হয়েছে ? মন কোথায় তোর ! „

আকাশের বাবা আনমনে নিজেকে তিরষ্কার করে বললেন , “ সেদিন সই করাটা একদম উচিত হয়নি আমার । „

“ বাজে বকিস না । তুই যা করেছিস তা আমাদের মুখ চেয়ে করেছিস । সেই পরিস্থিতিতে ওটাই আমাদের জন্য মঙ্গল ছিল । „

“ কিন্তু একজন ভিক্টিমের জীবন যাপন করছি আমরা । „

“ আর কি করার আছে বল ! তুই চেষ্টা তো কম করলি না । এখন সুচির মুখ চেয়ে পিছিয়ে এলি । মাঝেমাঝে নিজের মঙ্গলের জন্য পিছিয়ে আসা দোষের নয় শুভো । কৃষ্ণ-ও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালাতো । এইজন্য ওকে রাণছোড় বলা হয় । তুই এই নিয়ে আর ভাবিস না । উপরে ভগবান আছে । সে তোর চেষ্টা দেখেছে । তোর পরাজয়ও দেখেছে । এখন ওকেই সব করতে দে । „

কথায় আছে সময় সব ক্ষতের মহাঔষধ । এখানেও তাই হলো । আকাশ সুচির অফিস , আর সুচির সপ্তাহে দুই বার নিয়মিত সাইকায়াট্রিস্ট এর কাছে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে আরও আড়াই মাস কেটে গেল । সুচিকে তার সাইকায়াট্রিস্ট কিছু যোগব্যায়াম করতে দিয়েছে । সেটাই সে নিয়মিত করে । আর নাচটা কন্টিনিউ করতে বলেছে । এতেই নাকি তার রাগ অনেকটা কন্ট্রোলে ছিল । কোন ওষুধ আপাতত দেয়নি । বলা বাহুল্য এরপর সুচি আর কোন দুঃস্বপ্ন দেখেনি ।

এদিকে সুমির তিন মাস প্রেগন্যান্ট হতেই সুমির মা তাকে জোর করে , পাকাপাকি ভাবে এখানে নিয়ে এলেন , দেখাশোনা করার জন্য । সুমির সাথে এলো তার একমাত্র মেয়ে প্রজ্ঞা ‌। মা শান্ত শিষ্ট হলেও মেয়ে মোটেও শান্ত শিষ্ট নয় । প্রথম রাতেই দিম্মার কাছে ঘুমানোর বায়না জুড়লো । সুমির মাও একমাত্র নাতনির আবদার ফেলতে পারলেন না । দিম্মার কাছে শুয়েই সে সন্তুষ্ট হলো না । তাকে গল্পো শুনিয়ে ঘুম পাড়াতে হলো । মায়ের কাছে শুয়ে মায়ের সব গল্পো নাকি তার শোনা হয়ে গেছে ।

পরের দিন থেকে সে দুই পরিবারকে মাতিয়ে রাখতে শুরু করলো । একবার এই ফ্ল্যাট তো একবার ওই ফ্ল্যাট । দুটো ফ্ল্যাটে সর্বত্র তার যাতায়াত । মাঝে মাঝে সে বায়না করে মাসির সাথে ঘুমাবে । তাই বাধ্য হয়ে বা বলা ভালো খুশি হয়ে সুচি তাকে নিজের কাছে এনে ঘুমায় ।

এবারের পূজাতে প্ল্যান ছিল বাইরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হবে । কিন্তু সুমির দেখভাল করার জন্য সুমির মাকে এখানে থাকতেই হবে । আর সুচেতা দেবী না গেলে স্নেহা দেবীও যেতে চাইলেন না । তাই পূজাটা কলকাতাতেই কাটানোর সিদ্ধান্ত নিল সবাই ।

মহালয়া আসতে সবাই চাইলো সুচি নাচুক । তাই সুচি অষ্টমী নাচলো । বিয়ের পর এই প্রথম সে নাচলো । প্রথম পুরস্কার নেওয়ার পর তার মনটা খুশিতে ভরে উঠলো । এদিকে মাসির নাচ দেখে প্রজ্ঞা বায়না জুড়লো যে সে নাচ শিখবে । সুচি প্রজ্ঞার কথা শুনে প্রজ্ঞার গালে একটা হামি খেয়ে বললো , “ মাঝপথে ভালো লাগছে না বলবি না তো । „

প্রজ্ঞা মিষ্টি গলায় বললো , “ না , আমি বলবো না । আমি তোমার মত নাচ শিখতে চাই । একদম তোমার মত । „

সুচি হেসে আরও একটা হামি খেয়ে বললো , “ ঠিক আছে । তোকে একদম আমার মত নাচ শেখাবো । „

সুমির দেখাশোনা করতে করতে , প্রজ্ঞার সাথে খেলতে খেলতে আর প্রজ্ঞাকে নাচ শেখাতে শেখাতে ডিসেম্বর মাস চলে এলো । একদিন দুপুর বেলা , অফিসে সবে টিফিন ব্রেক শেষ হয়েছে , তখন সুচির ফোনে সুচির বাবা ফোন করলেন । সুচি ওয়াসবেসিনে হাত ধুতে গেছিল । এসে ঘুরিয়ে ফোন করতেই সুচির বাবা বললেন , “ তোর দিদি হসপিটালে আছে । ডিলিভারি হবে ।  যদি পারিস তো আয় । „

আকাশকে আর আকাশের বাবাকে কথাটা বলতেই আকাশের বাবা বললেন , “ অপেক্ষা করছিস কেন ! যা। আর শোন , আবার অফিসে এসে কাজ করার দরকার নেই । ওখান থেকে বাড়ি চলে যাবি। „

আকাশের বাবার কথা মতো সুচি আকাশকে নিয়ে হসপিটালে চলে এলো । হসপিটালে আসতেই প্রজ্ঞা সুচির কোলে উঠে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো , “ মায়ের কি হয়েছে ? „

কৌশিক বললো , “ আমি ওকে মায়ের কাছে রেখে আসতে চেয়েছিলাম । কিন্তু কে শোনে কার কথা ! „

সুচি প্রজ্ঞাকে বললো , “ কিছু হয়নি দিদির । তোর ভাই আসবে । তাই ...

কথাটা বলতে বলতে সুচি থেমে গেল । মনে মনে বললো , ‘ সত্যি ছেলে হবে কি না সেটা তো জানা নেই । কিন্তু যদি মেয়ে হয় ! প্রজ্ঞা তো ভাইয়ের আশায় বসে আছে । হে ঠাকুর ! এই ছোট্ট মেয়েটার প্রার্থনা রেখো । „

প্রজ্ঞা বললো , “ কখন আসবে ? „

“ এইতো আর কিছুক্ষন পর ডাক্তার বেরিয়ে আসবে । „

দেঢ়ঘন্টা পর যখন নার্স বেরিয়ে এসে বললো ছেলে হয়েছে তখন সবার মুখেই হাসি ফুটে উঠলো ।

আরো প্রায় এক ঘন্টা পর সবাই ot তে ঢুকতে পারলো । কৌশিক গিয়ে হাসি মুখে সুমির পাশে বসলো । সুচির বাবা নবজাতককে কোলে তুলে নিলেন । সুমির ছেলের মুখটা দেখে সুচির বুকটা কেমন একটা কেঁপে উঠলো । ঠিক কি কারনে এরকম অনুভুতি হলো সেটা সে বুঝতে পারলো না ।

সুমির ছেলেকে সবাই কোলে নিয়ে আদর করার কিছুক্ষন পর কৌশিক আকাশকে ইয়ার্কি মেরে বললো , “ কি হে , এবার তোমরাও একটা নিয়ে নাও । বেশি দেরি করো না । „

আকাশ লজ্জা পেল কিন্তু কিছু বললো না । বাইকে করে বাড়ি ফেরার সময় আকাশ সুচিকে বললো , “ কৌশক দা ইয়ার্কি ও মারতে পারে । „

সুচি আনমনে বসে ছিল । আকাশের কথা তার কানে গেল না । বাড়ি ফিরেও সে কোন এক জগতে হারিয়ে রইলো । খাওয়া দাওয়া করে ঘুমানোর আগে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে সুচি হঠাৎ বললো , “ আমি তৈরি । „

আকাশ সুচির কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারলো না , “ কি বলছো ? কিসের জন্য তৈরি ? „

সুচি উঠে এসে আকাশের পাশে বসে , আকাশের হাত ধরে বললো , “ আমি মা হতে চাই । „

আকাশ সুচির কথা শুনে সত্যিই আকাশ থেকে পড়লো । মেয়েদের মন না বুঝতে পারলেও সে এটা বুঝতে পারলো যে , সুমির ছেলেকে দেখেই সুচির এই ইচ্ছা জেগেছে । আকাশ কিছুক্ষন সুচির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার পর বললো , “ আমি তৈরি নই । মানে আমি ঠিক এতো দায়িত্ব ! বাবার দায়িত্ব ! ....

সুচি আকাশের হাতটা আরো ভালো করে ধরে বললো , “ আমিও তৈরি নই । কেউ তৈরি থাকে না । কিন্তু আমি পারবো । আমি চাই । আমি জানি তুমিও পারবে । „

সুচির কথায় আকাশের মনোবল শক্ত হলো । ইয়ার্কি করে বললো , “ কিন্তু আমি জানি না সন্তান কিভাবে নিতে হয় ? „

সুচি লাজুক হেসে বললো , “ আচ্ছা জি ! „

আকাশ ইয়ার্কি করেই বললো , “ তুমি বড় , তুমিই শিখিয়ে দাও আমায় , কিভাবে সন্তান নিতে হয় । „

আকাশের কথা শেষ হতেই সুচি আকাশের গলা টিপে ধরে বললো , “  বদমাইশি করার আর জায়গা পাওনি ! „

এর তিন দিন পর রবিবার ছিল । তাই আকাশের ঘুম একটু দেরিতেই ভাঙলো । ঘুম ভেঙে বিছানায় উঠে বসে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে সুচি ঘরে এসে ঢুকলো । সুচিকে দেখে আকাশ একটা হাই তুলে বললো , “ গুড মর্নিং । „

সুচি এর উত্তরে কিছু বললো না । শুধু মুখে লাজুক হাসি নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো । আকাশ সুচির হাবভাব দেখে বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলো , “ কি হয়েছে ? „

সুচি লাজুক হেসে মাথা উপর নিচ করলো । আকাশ সঙ্গে সঙ্গে খাট থেকে নেমে সুচিকে জড়িয়ে ধরে বললো , “  সত্যি ! „

সুচি আবার মাথা উপর নিচ করলো । তারপর ড্রেসিং টেবিল থেকে প্রেগনেন্সি কিটটা নিয়ে আকাশকে দেখিয়ে দিল । আকাশ দেখলো তাতে দুটো দাঁড়ি টানা আছে । আকাশের ইচ্ছা হলো সুচিকে চাগিয়ে তুলে নাচতে । কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো , “ মাকে বলেছো ? „

সুচি আকাশের বুকে মুখ লুকিয়ে বললো , “ লজ্জা করছে । তুমি বলো । „

“ বারে ! আমার লজ্জা করে না বুঝি । তুমি বলো । „

“ আমি পারবো না । তুমি বলো । „

তো এই ‘ তুমি বলো , তুমি বলো ’ করতে করতে কাউকেই কথাটা বলা হলো না । তবুও খবরটা চাপা রইলো না ।

এই তিন দিনে অবশ্য সুমি তার একমাত্র ছেলের নামকরণ করে ফেলেছে । সুমির ছেলের নাম “ প্রত্যয় । „ প্রত্যয় জন্মানোর পরেও সুচেতা দেবী আরও দুই তিন মাস সুমিকে এখানেই রেখে দিতে চাইলেন । কৌশিকের এতে কোন আপত্তি নেই ।

পরের বছর পড়তেই সুচির বাবা রিটায়ার্ড করলেন । এখন তিনি বাড়ি বসেই সময় কাটাতে লাগলেন। জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের একদিন সকালে , সুচি ব্রেকফাস্ট বানানোয় মাকে সাহায্য করছিল । সুচি সবে উপরের তাক থেকে হলুদের কৌটা টা পাড়তে গেছে তখনই সে চোখের সামনে অন্ধকার দেখলো । চারপাশটা যেন তার চক্রাকারে ঘুরতে শুরু করলো । সুচির চোখ মুখের অবস্থা দেখে পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের মা সুচিকে সঙ্গে সঙ্গে ধরে ফেললেন , না হলে সুচি পড়েই যেত ।

যথারীতি আকাশের মা চিল্লিয়ে উঠলেন । মায়ের আওয়াজ শুনে আকাশ দৌড়ে রান্নাঘরে চলে এলো । সুচির অবস্থা দেখে ভয়ে তার হাত পা কেঁপে উঠলো । সঙ্গে সঙ্গে সুচিকে কোলে তুলে , ঘরে এনে খাটে শুইয়ে দিল । আকাশের মা জলের বোতল এনে বারবার সুচির চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিতে লাগলেন । ইতিমধ্যে আকাশ একজন ডাক্তারকে ফোন করে ফেলেছে । পাশের ফ্ল্যাট থেকে সবাই চলে এসেছে । সবার মুখেই দুঃশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট ।

প্রায় দশ পনেরো মিনিট পর সুচির জ্ঞান ফিরলো । জ্ঞান ফিরতেই নানা প্রশ্নবাণে সে জর্জরিত হয়ে পড়লো । সুচি শুধু বললো , “ হঠাৎ চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে গেছিল । „

এর আরও কুড়ি মিনিট পর ডাক্তার এসে পৌঁছালো । সে কিছুক্ষন সুচির নাড়ি দেখে , চোখ দেখে বললো , “ খুব দুর্বল । এটা মোটেও ভালো কথা নয় । ভালো করে খাওয়া দাওয়া করতে হবে । „

ঘরের বাইরে এসে ডাক্তার বললো , “ ও প্রেগন্যান্ট । তাই ওরকম হয়েছে । একটু দেখভাল করুন আর খাওয়ান ভালো করে । „

এরপর বলা বাহুল্য যে ঘরে একটা খুশির হাওয়া বয়ে গেল । সুচি প্রেগন্যান্ট । সে মা হতে চলেছে । আর আকাশ বাবা । সবাই এতে খুব খুশি । খবরটা পাওয়ার পর প্রথম প্রথম তো আকাশের মা  সুচিকে অফিস যেতেই দিচ্ছিলেন না । সুচি একরকম জোর করেই অফিস যেতে শুরু করলো । এখন থেকেই বাড়িতে বসে থাকলে পরে সমস্যা হবে ।

কিছুদিন পর সুচির প্রথম রেগুলার চেকআপের রিপোর্ট আনতে যাওয়ার পর ডাক্তার আকাশ আর সুচিকে বললো , “ আপনারা কি চান ? ছেলে নাকি মেয়ে । „

সুচি আর আকাশ তো রিতিমত অবাক । কোনো ডাক্তার তো সাধারনত এই ধরনের প্রশ্ন করে না । তাহলে ! সুচি একবার আকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো , “ যাই হোক আমরা খুশি । ছেলে হলেও আর মেয়ে হলেও সমান খুশি । „

“ আরো একটা সুখবর আছে । „ বলে ডাক্তার খবরটা দিয়ে দিল ,“ একটা নয় । দুটো । আপনি যমজ সন্তানের মা হতে চলেছেন । এই দেখুন রিপোর্ট । „

আকাশ টেবিল থেকে রিপোর্টের ফাইলটা তুলে নিয়ে প্রথমেই আল্ট্রাসনোগ্রাফির পেজটা দেখলো । সত্যি সেখানে দুটো মাথা দেখা যাচ্ছে । ফটোটা দেখে আকাশ বোবা হয়ে গেল । প্রথমে একটা সন্তানের সুখই সে সামলে উঠতে পারছিল না , আর এখন দুটো । কি বলবে সে ভেবে পেল না । ভাষা হারিয়ে ফেললো । এদিকে সুচিরও একই অবস্থা ।

বাড়ি ফিরেই সে নির্লজ্জের মতো মাকে খবরটা দিয়ে দিল । স্নেহা দেবীর চোখে জল চিকচিক করে উঠলো । সুচির কপালে চুমু খেয়ে একটা টিকা লাগিয়ে দিলেন ।

এতদিন জোর করে সুচি অফিস গেলেও এই খবরটা শোনার পর স্নেহা দেবী আর সুচিকে অফিস যেতে দিলেন না । এরপর হু হু করে দিন কাটতে লাগলো । সময় যে এতো দ্রুত কাটতে পারে সেটা আকাশ আগে জানতোই না । সারাদিন ঘর থেকে লিভিংরুমের টিভি আর লিভিংরুম থেকে বাথরুম , এটাই হলো সুচির জীবন । আর মাঝে মাঝে বাবার সাথে দাবা খেলা তো আছেই প্রথম কয়েক মাস নিচে নেমে পার্কে ঘুরতে পারলেও দুই মাস যেতে যেতেই সেটাও বন্ধ হয়ে গেল । এরপর সে ছাদে উঠে পায়চারি করা শুরু করলো ।  

চতুর্থ মাসে সুচির ডাক্তার তাকে ভালো করে খাওয়া দাওয়া করতে বললো । বেশি করে ফলমূল খেতে বললো । এটা শোনার পরেই বাড়ির তিন পুরুষ এতো এতো ফলমূল আনা শুরু করলো যে সবাই মিলে খেয়েও কুলোতে পারলো না । তাই দুই দিন অন্তর অন্তর একজন করে ফল আনার সিদ্ধান্ত নিল । দেখতে দেখতে আরো কয়েকটা মাস গেল । ডাক্তার সুচিকে চেকআপ করার পর বললো , “ ডেলিভিরি হতে স্বাভাবিকের থেকে একটু বেশি সময় লাগবে । টুইনস তো ! তাই এটাই স্বাভাবিক । „

সুচি মাঝেমাঝে তার বেড়ে ওঠা পেটের উপর হাত বুলোয় । আর বলে ওঠে , “ আর কয়েকমাস পরেই তোরা বাইরের জগত দেখবি । আমায় মা বলে ডাকবি । খবরদার দুষ্টুমি করবি না । আমি কিন্তু খুব রাগী । „ বলে নিজেই হেসে ওঠে ।

অষ্টম মাসের এক সন্ধ্যা বেলায় , ছাদের উপর মাদুর পেতে সুচি আকাশের বুকে পিঠে দিয়ে বসে আছে । আগষ্ট মাসে একটু বৃষ্টি হওয়ায় হাল্কা হাল্কা ঠান্ডা ঠান্ডা আমেজ আছে । তাই আকাশ সুচিকে ভালো করে জড়িয়ে ধরে আছে । গতকাল ঝড়বৃষ্টি হওয়ায় আজ আর বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই । খোলা আকাশে তারা দেখতে দেখতে , একটা উজ্জ্বল তারার দিকে আঙুল দেখিয়ে সুচি বললো , “ দিম্মা বলতো ওই তারাটা হলো দাদু । „

আকাশও সুচির কথাতে বললো , “ আর ওই পাশেরটা কে বলোতো ? „

“ ওটা দিম্মা । আর পাশেরটা বাদশা । জানো , আমি ঠিক করেছি আমাদের সন্তান হওয়ার পর আমরা বাদশার মতো আর একটু কুকুর নেবো । আমরা যেভাবে বাদশার সাথে খেলে বড়ো হয়েছি সেইভাবে আমাদের সন্তানরাও বড়ো হবে ‌। „

“ অবশ্যই । কোন এক সিনেমায় শুনেছিলাম -- আমরা দুই বার মরি । একবার আমাদের মৃত্যু হলে । আর একবার যেদিন আমাদের নাম শেষ বারের মত কেউ বলে । দিম্মা , দাদু আমাদের মাঝে আজীবন বেঁচে থাকবে । আজীবন । „

আরও কিছুক্ষণ পর ঠান্ডা হাওয়া বাড়তেই আকাশ সুচিকে সযত্নে হাত ধরে নিচে নামিয়ে আনলো ।

পরের দিন সকালেই খবরের চ্যানেলে বার হলো --- এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মাননীয় বিধায়ক পঙ্কজ সহায়ের বড়ো ছেলের মৃত্যু । রোজ সকালের মত ময়দানে জগিং করতে যাওয়ার সময় এক পাঞ্জাব লড়ি এসে ধাক্কা মারে । তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয় বলে বিশেষ সূত্রের খবর ‌।

এক্সিডেন্টে মৃত্যু হতেই পারে , এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই । কিন্তু দুই সপ্তাহ পর মোঃ শেখ উতলা হয়ে আকাশের বাবাকে ফোন করলেন । ফোন ধরতেই মোঃ শেখ বলে উঠলো , “ ওটা দূর্ঘটনা ছিল না । „ তার গলায় কিছুটা খুশি আর কিছুটা উত্তেজিত হওয়ার সুর স্পষ্ট ।

আকাশের বাবা কিছুই বুঝতে পারলেন না , “ কোন দূর্ঘটনার কথা বলছেন ? „

“ পলাশের দাদার কথা বলছি । দূর্ঘটনায় একবার মাত্র ধাক্কা লাগে । কিন্তু এখানে তিনবার ধাক্কা লেগেছে । এটা দূর্ঘটনা হতে পারে না । কেউ একজন ওকে খুন করেছে । আল্লাহ এতদিন পর ...  „

“ কিন্তু কে করেছে সেটা ?

“ সেটা এখনো জানতে পারি নি আমি । আপাতত একজন পাঞ্জাবী খুনটা করেছে বলে খবর পেয়েছি । „

আরও কিছুক্ষণ কথা বলে আকাশের বাবা ফোনটা রেখে দিল । মনে মনে তিনি খুশি হলেও পলাশের দাদার থেকে যদি পলাশ মরতো তাহলে তিনি আরো বেশি খুশি হতেন । এই খবরটা তিনি বাড়ির কাউকে দিলেন না ।

এরপর দেখতে দেখত আরো দুই মাস কেটে গেল । অক্টোবর মাসের এক মধ্য রাতে প্রচন্ড ব্যাথায় সুচির ঘুম ভেঙে গেল । সুচির আর্তনাদে আকাশ ধড়মড় করে উঠে বসলো । ঘরের লাইট জ্বালিয়ে আকাশ জিজ্ঞেস করলো , “ কি হয়েছে ? „

“ হবে । ব্যাথা করছে খুব ।  ওয়াটার ব্রেক করেছে ‌। „

আকাশ বিছানায় তাকিয়ে দেখলো সত্যি ওয়াটার ব্রেক করেছে , “ কিন্তু এখনো তো দুই দিন বাকি । „

সুচি রেগে গিয়ে চিল্লিয়ে বললো , “ আমি কি জানি এখন হচ্ছে কেন ? হসপিটালে নিয়ে চলো । „  

আকাশ সঙ্গে সঙ্গে , “ মা দরজা খোল বলে চিল্লিয়ে উঠলো । „ তারপর সুচিকে কোলে করে নিয়ে ঘরের বাইরে এলো । স্নেহা দেবীর ঘুম সুচির চিল্লানোতেই ভেঙে গেছিল । তিনি সঙ্গে সঙ্গে উঠে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দিলেন । আকাশ সুচিকে ফ্ল্যাটের নিচে নামতেই আকাশের বাবা গাড়ির চাবি নিয়ে চলে এলেন । তারপর আকাশ সুচিকে নিয়ে পিছনের সিটে বসলো । আর আকাশের বাবা ড্রাইভ করে নিয়ে গেলেন । কুড়ি মিনিটের মধ্যেই তারা নার্সিংহোমে পৌঁছে গেলে সুচিকে ot তে ভর্তি করে দেওয়া হলো । তারপর অপেক্ষা করা ছাড়া কোন কাজ নেই । তাই আকাশ আর আকাশের বাবা অপেক্ষা করতে লাগলেন । কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সুচির বাবা সুচির মা আর আকাশের মাকে নিয়ে নার্সিংহোমে চলে এলেন ।

তখন প্রায় সকাল হয়ে গেছে । ছটা বেজে গেছে কিছুক্ষন আগে । সিফ্ট চেঞ্জ হয়েছে বলে কয়েকজন নতুন ওয়ার্ডবয় এসে যোগ দিল । একজন এসে ওটির বাইরে টিভি চালিয়ে দিল । তারপর নিজের রোজকার রুটিং মতো ফ্লোর মুছতে শুরু করলো ।

দশ মিনার পর ছেলেটা খবরের চ্যানেল চালিয়ে দিতেই এক মহিলা রিপোর্টার বলে উঠলো , “ আজ মধ্যরাতে পার্টি করে বার হওয়ার পর এক আততায়ীর গুলিতে মৃত্যু হলো প্রখ্যাত বিজনেস ম্যান একমাত্র ছেলে ইন্দ্রজীৎ এর । সে এবং তার বন্ধু পলাশ সহায় পার্টি করে নাইট ক্লাব থেকে বার হচ্ছিল । তখনই এই আততায়ীর আক্রমণ বলে খবর । ঘটনাস্থলেই ইন্দ্রজীৎ এর মৃত্যু হয় এবং পলাশের পায়ে আততায়ী গুলি করে । .....

এতোটা শোনার পর সুচেতা দেবী আর আকাশের মা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন । সুচির বাবা একবার আকাশের বাবার দিকে তাকালেন

এর ঠিক এক ঘন্টা পরেই আকাশের বাবার ফোন বেজে উঠতেই , আকাশের বাবা পকেট থেকে ফোন বারে দেখলেন মোঃ শেখ ফোন করেছে । তিনি একপাশে সরে গিয়ে কথা বলতে লাগলেন ।

বেশ কিছুক্ষন পরও তখন আকাশের বাবা ফিরলো না তখন আকাশ গিয়ে দেখলো যে তার বাবা চুপিচুপি কথা বলছে । সে চলে আসতে যাচ্ছিল কিন্তু বাবার মুখে পলাশ নামটা শুনতে পেয়েই সে চুপিচুপি বাবার কথা শুনতে লাগলো ।

বাবা বলছে --- কেউ তো শাস্তি দিচ্ছে । আইনি ভাবে যে সাজা দেওয়া সম্ভব নয় সেটা তো আমি আপনি চেষ্টা করে দেখলাম ।

অপরপ্রান্ত কি বলছে সেটা আকাশ শুনতে না পেলেও বাবার কথা সে শুনতে পেল । বাবা বলছে --- আইনি ভাবে আর সম্ভব নয় । আপনি চেষ্টা করলে করুন । যদি প্রয়োজন হয় আমি আছি । আপাতত যে নিজের হাতে রাজদন্ড তুলে নিয়েছে তাকে তার মত কাজ করতে দিন । এবার পলাশ মরলেই হয় ।

আকাশ এরপর চলে এলো । আর শুনলো না । খুশিতে চোখে জল চলে এসেছে । তবে এটা সত্যি খুশির জল নাকি বাবার সাথে কয়েক মাস কথা বন্ধ করে দেওয়ায় অনুশোচনার জল সেটা সে বুঝতে পারলো না ।

আরও প্রায় পাঁচ ছয় ঘন্টা পর নার্স এসে বললো , “ আপনারা চিন্তা করবেন না । সময় একটু লাগে । নরমাল ডেলিভারি করা যাবে বলে  ডাক্তার ওটাই করাচ্ছেন । „

আরও দুই ঘন্টা পর ভিতর থেকে একটা কান্নার আওয়াজ সবাই শুনতে পেলো । সাত মিনিট পর আরো একজনের কান্নার আওয়াজ বেরিয়ে এলো । সুচেতা দেবীর চোখের জল বাঁধ মানছে না । একদিকে আবার দাদি হওয়া আর একদিকে পলাশের ওই ঘটনা ।

দেঢ় ঘন্টা পর ডাক্তার বেরিয়ে এসে বললো , “ যমজ হবে সেটাতো আপনারা জানতেন । একজন ছেলে আর একজন মেয়ে হয়েছে । ছেলেটা প্রথম । সাত মিনিট আগে । আর মেয়েটা পরে । আপনারা ভিতরে যান । নার্স সব বলে দেবে । „

হুড়মুড় করে ভিতরে ঢুকেই দুই মা দুজনকে কোলে তুলে নিল । দুজনেই ঘুমাচ্ছে । কিন্তু কিছুক্ষন আগে এদের কান্নার আওয়াজ বাইরে শোনা যাচ্ছিল । আকাশ গিয়ে সুচির পাশে গিয়ে বসলো । সুচি আধবোজা চোখে আকাশের হাত ধরলো । আকাশ চোখের জল মুছে আস্তে আস্তে বাবার কথা , পলাশের পায়ে গুলি লাগার কথা বলে দিল ।

সুচি সব শুনে বললো , “ জানি আমি । যেদিন আমি ছাড়া পাই । যেদিন তুমি সকাল বেলা নার্সিংহোমে এসছিলে সেদিনকেই বাবা আমায় সব বলে দিয়েছিল । „

আকাশ অবাক হয়ে বললো , “ তুমি আমায় জানাও নি কেন ? „

“ জানলে কি করতে ? এমনিতেও বাবা তোমায় বলতে বারন করে দিয়েছিল । „ 

এদিকে আকাশের মা আর সুচির মায়ের মধ্যে কম্পিটিশন লেগেছে যে সন্তান দুটো কার মতো দেখতে হয়েছে । একবার বলেন দিম্মার তো একবার সুচির । কিন্তু গালে টোল নেই । দুজনেই সুচির মত ফর্সা । দুজন আইডেন্টিকাল টুইনস হয়েছে । 

এক দিন পরেই দুই নবজাত শিশুকে নিয়ে সুচি আকাশ বাড়ি চলে এলো । ঠিক যেমন আকাশের বাবা আকাশের মায়ের হাত ধরে পরমযত্নে আকাশকে এই বাড়িতে এনেছিলেন । তেমনি আকাশও সুচির হাত ধরে পরমযত্নে তার দুই সন্তানকে সোসাইটিতে নিয়ে আসলো । নবজাত দুই শিশুর নাম রাখা হলো “ প্রবীর আর প্রমীলা „ ।

এক সপ্তাহ পরে একটা বড়ো পার্টি দেওয়া হলো । সোসাইটির কমিউনিটি হলে একটা রাজসিংহাসনে সুচি আর আকাশ দুজনকে নিয়ে বসে আছে । সবাই এসে আশীর্বাদ করছে । প্রজ্ঞা একসাথে তিন ভাইবোন পেয়ে খুব খুশি । কিছুক্ষন পর ক্যামেরাম্যান বললো “ একটা ফ্যামিলি ফটো প্লিজ । „

শুধু বলার অপেক্ষা । সবাই এসে সুচি আকাশের সোফার পিছনে দাঁড়িয়ে পড়লো । মাঝখানে কৌশিক তার পাশে সুমি । ডান দিকে আকাশের মা বাবা আর বাঁ দিকে সুচির মা বাবা । আর সিংহাসনে মাঝখানে প্রজ্ঞা বসে আছে প্রত্যয় কে নিয়ে । তার দুই পাশে সুচি আর আকাশ তাদের প্রবীর আর প্রমীলা কে নিয়ে বসে আছে । দুজনকে বালগোপালের মত সাজান হয়েছে ।  ক্যামেরাম্যান ক্যামেরার এঙ্গেল ঠিক করে রেডি বলতেই সুচি মিষ্টি গলায় বলে উঠলো , “ say cheese „

Click
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মিষ্টি মূহুর্ত ( উপন্যাস) চলছে :--- - by Bichitro - 25-01-2022, 10:23 AM



Users browsing this thread: 124 Guest(s)