23-01-2022, 03:50 PM
একটা হাতি মরার পর যমালয়ে গেছে..._*?
????????????
*_যমরাজ তাকে শুধোচ্ছেন , " হ্যা রে !_*
*_তোকে এত বড় একটা প্ৰকাণ্ড শরীর দিয়ে পাঠানো হল , আর তুই মানুষের বশ হলি কী করে ? তোর একটা পায়ের সমান মানুষ , সেই ছোট্ট মানুষটা তোকে বশ করে নিল ? ”_*
_হাতি বলল , “ ধর্মরাজ ! মানুষ এমনই এক জাত__যে আমার চেয়েও বড় বড় প্ৰাণীকে সে বশ করে নেয়।_
_ধৰ্মরাজ বললেন , “ আমার এখানে তো কতই না মানুষ আসে। কই , তাদের দেখে তো এমন মনে হয় না। ”_
_হাতি বলল , “ ধর্মরাজ! আপনার এখানে তো তারা আসে মরার পরে। যদি জীবন্ত মানুষ আসত তো বুঝতে পারতেন। ”_
_ধৰ্মরাজ দূতকে বললেন , “ যা তো , একজন জীবন্ত মানুষ এখানে নিয়ে আয়।_
_যমদূত বলল , “ জী হুজুর এখনি যাচ্ছি। ”_
_দূত পৃথিবীতে বিচরণ করতে করতে এক জায়গায় দেখল গরমে ছাদের উপরে খাটে একটা লোক ঘুমাচ্ছে সে তখন খাট সমেত লোকটাকে কঁধে তুলে নিয়ে যমালয়ের দিকে রওনা হল।_
_মাঝপথে লোকটাের ঘুম ভেঙে গেল। দেখল ,“ অদ্ভুত ব্যাপার_ কেউ তাকে শূন্যে তুলে নিয়ে
যাচ্ছে !_
_লোকটা ছিল এক কায়স্থ , বইটই লিখত। বইতে যমদূতের যে সকল লক্ষণ লেখা আছে , সেইরকম দেখে সে বুঝল , এ নির্ঘাৎ যমদূত। আমাকে তাহলে যমালয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সে তখন পকেট থেকে তাড়াতাড়ি কাগজ - কলম বার করে খচখচ করে কী সব লিখেই কাগজটা পকেটে পুরে নিল। তারপর চুপচাপ খাটের উপর মটকা মেরে পড়ে রইল। ভাবল চিৎকার - চেঁচামেচি করলে পড়ে গিয়ে হাড়গোড় ভাঙবে। দেখা যাক কী হয়।_ _সকাল হতে না হতেই দূত যমালয়ে পৌছে গেল।_
_ধৰ্মরাজের সভা সবে মাত্ৰ আরম্ভ হয়েছে। দূত গিয়ে সেখানে খাট নামাল। কায়স্থ চট করে উঠেই পকেট থেকে একটা কাগজ বার করে দূতের হাতে দিল ধৰ্মরাজকে দেবার জন্য।_ _সেই চিরকুট ভগবান বিষ্ণুর নামে লেখা হয়েছিল। দূত কাগজটি ধৰ্মরাজের হাতে দিলে ধৰ্মরাজ সেটি মন দিয়ে পড়লেন। তাতে লেখাছিল ----------_
_“ প্রিয় ধৰ্মরাজ! আপনাকে জানানো হচ্ছে যে , এই পত্ৰবাহক আমার একান্ত - সচিব। একে আপনার কাছে পাঠালাম। একে দিয়ে আপনি যাবতীয় কাজ করাবেন।_
_ইতি -----_
_নারায়ণ , বৈকুণ্ঠপুরী। ”_
_লেখা পড়েই ধৰ্মরাজ তড়াক করে গদি থেকে উঠে এসে কায়স্থকে বললেন , “ আসুন মহারাজ! সিংহাসনে বসুন। ”_
_কালবিলম্ব না করে কায়স্থ ধৰ্মরাজের সিংহাসনে গিয়ে বসল। ততক্ষণে দূত একটা লোককে নিয়ে এসে সভায় হাজির করল।_
_কায়স্থ বলল , “ এ কে ? ”_
_দূত জানায় , “ হুজুর ! এ একটা ডাকাত। বহু লোকের সর্বনাশ করেছে , বহু লোককে হত্যা করেছে। এর কী দণ্ড হবে ? ”_
_কায়স্থ বলল , “ একে স্বৰ্গে পাঠিয়ে দাও। ”_
_তারপর আর একজনকে উপস্থিত করা হল।_
_কায়স্থ জিজ্ঞাসা করল , “ এ কে ? "_
_দূত বলল , “ এ একজন দুধওয়ালা, দুধে ভেজাল মিশিয়ে বিক্রি করত। সেই ভেজাল দুধ খেয়ে বহু ছোট ছোট শিশু পেট ফুলে মারা গেছে। এর কী শাস্তিবিধান হবে ? ”_
_কায়স্থ বলল , “ একেও স্বৰ্গে পাঠিয়ে দাও। ”_
_ততক্ষণে আরেকজন উপস্থিত হল ।_
_কায়স্থ জিজ্ঞাসা করল , “ এ কে ? "_
_দূত , “ হুজুর এ মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে বহু বেচারিকে ফাঁসিয়েছে। একে কী করব ? ”_
_কায়স্থ বলল , “ জিজ্ঞাসা করছ কী! সব স্বৰ্গেই পাঠিয়ে দাও। ”_
_এরপরও ব্যভিচারী , পাপী , হিংসুটে যত রকমের দুষ্ট থাকতে পারে সব একে একে এল , আর সবাইকার জন্য ওই একই হুকুম হল ‘স্বৰ্গেই পাঠিয়ে দাও। ”_
_ধৰ্মরাজ আর কী করবেন! সিংহাসনে বসে বিষ্ণুর একান্ত সচিব যা বলছেন তাই মেনে নিতে হবে।_
_ওদিকে স্বৰ্গে তো লাইন পড়ে গেছে।_
_দেখে ভগবান ভাবছেন , একি কাণ্ড ! এত লোক কোথা থেকে আসছে ? পৃথিবীতে কী তবে কোনো মহাত্মার আবিৰ্ভাব হল নাকি ? লোকে দল বেঁধে স্বৰ্গে হাজির হচ্ছে।_
_ভগবান দেখলেন , সব যমালয় থেকে উঠে আসছে। নারায়ণ তখন নিজেই যমালয়ে গেলেন। নারায়ণকে দেখে সবাই উঠে দাঁড়াল।_
_যমরাজ উঠে দাঁড়ালেন , আর ওই কায়স্থও উঠে দাঁড়াল।_
_নারায়ণ জিজ্ঞাসা করলেন ,_ _ধৰ্মরাজ! আপনি সবাইকে স্বৰ্গে_ পাঠিয়ে দিচ্ছেন , _ব্যাপার কী ?_
_এত লোক ভক্ত হয়ে গেল নাকি ?_
_ধৰ্মরাজ বললেন , ‘' প্ৰভু ! এ কাজ আমি করিনি। আপনি যে লোক পাঠিয়েছেন , এ তারই কাজ।”_
_ভগবান নায়ায়ণ বললেন , “ আমি আবার কবে লোক পাঠালাম ? ”_
_তিনি কায়স্থকে জিজ্ঞাসা করলেন , “ তোমাকে কে পাঠিয়েছে ? ”_
_কায়স্থ বলল , “ প্ৰভু ! আপনি পাঠিয়েছেন। ”_
_ভগবান নারায়ণ অবাক হয়ে বললেন , “ আমি কবে পাঠালাম হে..! ”_
_কায়স্থ বলল , “ প্ৰভু ! এখানে আসা আমার বাপের সাধ্য কী যে আসব। আপনিই তো আমাকে পাঠিয়েছেন। আপনার ইচ্ছা ছাড়া কি কোনো কাজ হতে পারে ? এ কি আমার শক্তিতে হয়েছে ? ”_
_নারায়ণ বললেন , “ তা ঠিক আছে ! কিন্তু তুমি এ কী করছ ? "_
_কায়স্থ বলল , “ কী করেছি প্ৰভু ? ”_
_নারায়ণ বললেন , “ তুমি যে সবাইকে স্বৰ্গে পাঠিয়ে দিয়েছ ? "_
_কায়স্থ বলল , “ যদি স্বৰ্গে পাঠানো অন্যায় হয়ে থাকে তবে যত সাধু , সন্ত , মহাত্মা আছে সবাইকেই দণ্ড দিতে হয়। আর যদি আমি ঠিক করে থাকি , তবে আর কৈফিয়ৎ কিসের ? এতে যদি আপনার মত না থাকে তো সবাইকে ফেরত পাঠিয়ে দিন। "_
_তবে শ্ৰীমদ্ভগবদগীতায় আপনার যে বাণী লেখা আছে তা কেটে ফেলতে হবে —_
_“ যদ গত্বা ন নিবৰ্তন্তে তদধাম পরমং মম ”।। (গীতা ১৫ । ৬)_
_অর্থাৎ আমার ধামে পৌছে কেউ ফিরে আসে না।_
_নারায়ণ বললেন , ‘' কথা তো ঠিক ! যত বড়ই পাপী হোক না কেন যদি স্বৰ্গে অর্থাৎ বৈকুণ্ঠধাম যায় তবে ফিরে আসেন না। তার সমস্ত পাপক্ষয় হয়ে যায়। কিন্তু এ কাজ তুমি কেন করলে ? ”_
_কায়স্থ বলল , “ আমি তো ঠিক কাজই করেছি প্ৰভু! আমার কাছে যে আসবে আমি তাকেই স্বৰ্গে পাঠিয়ে দেব। আমি কাউকে দণ্ড দেব না। আমি জানি , অল্প সময়ের জন্য সিংহাসন পেয়েছি , তো ভালো কাজ কেন করব না? মানুষকে উদ্ধার করা কি খারাপ কাজ ?_
_নারায়ণ যমরাজকে বললেন , ‘' ধৰ্মরাজ! আমি বুঝতে পারছিনা , একে আপনি সিংহাসনে বসালেন কী কারণে? ’'_
_ধৰ্মরাজ বললেন , ‘' প্ৰভু ! আপনার লেখা চিরকুট আমার কাছে রয়েছে। ওতে আপনি স্পষ্ট করে এই নিৰ্দেশ দিয়ে তাকে পাঠিয়েছেন। ”_
_ভগবান কায়স্থকে জিজ্ঞাসা করলেন , “ ওহে , তোমাকে আবার চিরকুট দিয়ে কখন পাঠালাম আমি ? ”_
_কায়স্থ বলল , “ আপনি শ্ৰীমদ্ভগবদগীতায় বলেছেন -----_
_"সর্বস্য চাহং হৃদিসন্নিবিষ্টং "।। ( গীতা ১৫/৭ )_
_অর্থাৎ , আমি সকলের হৃদয়ে বাস করি ।_
_অতএব হৃদয় থেকে আদেশ এসেছে কাগজে লিখে দাও , তাই কাগজে লিখে দিয়েছি। আদেশ তো আপনারই। যদি এটা আপনি আমার কথা মনে করেন তো গীতা থেকে ওই কথাগুলো বাদ দিয়ে দিন।_
_নারায়ণ বললেন , “ ঠিক কথা। ”_
_তিনি ধৰ্মরাজকে প্রশ্ন করলেন ,_ _" ওহে ধৰ্মরাজ! ব্যাপার কী ! এই জীবন্ত মানুষ_ _এখানে এল কী__করে ? ”_
_ধৰ্মরাজ দূতকে জিজ্ঞাসা করলেন , " যমালয়ে জীবন্ত মানুষ নিয়ে এলি কেন ? "_
_দূত বলল , " ধৰ্মরাজ! আপনিই তো একদিন বলেছিলেন একটা জীবন্ত মানুষ নিয়ে আসার জন্য। "_
_ধৰ্মরাজ বললেন , “ এই সেই লোক নাকি ! আরে , সবকিছু বলবি তো !_
_দূত বলল , “ আমি কী বলব মহারাজ ! আপনিই তো কাগজটা নিলেন আর একে সিংহাসনে_
_বসিয়ে দিলেন। তাই আমি আর কিছু বলার_সাহস পাইনি। ”_
_হাতিটা কিন্তু ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল।_
_সে যমরাজকে বলল , “ হুজুর , আপনি বলেছিলেন আমি কী করে মানুষের বশ হলাম ; এখন দেখছি আপনি এবং ভগবান নারায়ণও স্বয়ং মানুষের বশ হয়ে গেছেন। এই কালো চুলওয়ালা মানুষ খুব সাংঘাতিক মহারাজ !_ _এ যদি মনে করে সব ওলোট-পালট করে দিতে পারে। কিন্তু এতো নিজেই সংসারে ফেঁসে আছে। ”_
_ভগবান বললেন , “ এখন যা হবার হয়ে গেছে , কী আর করা যাবে! হে মানব, তুমি এবারে ফিরে যাও।”_
_কায়স্থ বলল , “ প্ৰভু গীতায় আপনি বলেছেন ,_
_" মামুপেত্য তু কৌন্তেয় পুনৰ্জন্ম ন বিদ্যতে ”।। (গীতা ৮ । ১৬)_
_অর্থাৎ , আমাকে পাবার পর পুনরায় আর জন্ম নিতে হয় না।_
_তাহলে এখন বলুন আপনাকে কী আমি পাইনি !_
_ভগবান বললেন , “ আচ্ছা আচ্ছা ! তুমি চলো আমার সঙ্গে। ”_
_কায়স্থ বলল , “ প্ৰভু! কেবল আমিই যাব ? ওই হাতি বেচারা এখানেই থাকবে ? এর কৃপাতেই তো আমি এখানে এসেছি। একেও তাহলে সঙ্গে নিই প্ৰভু !_
_হাতি বলল , “ প্ৰভু ! আমার অনেক স্বজাতি_
_এখানে নরক ভোগ করছে , তাদেরও তবে সঙ্গে নিয়ে নিন।"_
_ভগবান নারায়ণ বললেন , “ চল তবে ! সবাইকেই নিয়ে চল। ”_
_যমালয়ে ভগবানের আসার ফলে হাতির মঙ্গল হল , কায়স্থেরও মঙ্গল হল অন্য সকলেরও মঙ্গল হল।_
*_এটি কল্পিত গল্প। কিন্তু এর তাৎপৰ্য খুব গভীর অৰ্থবহ। কোনো অধিকার যদি পাও তবে তা দিয়ে সকলের মঙ্গল করো, যতটা পার ভালো করো। নিজের দিক থেকে কারো কোনো মন্দ করো না , কাউকে দুঃখ দিও না।_*
*_#_গীতার_বাণী_*
_" সৰ্বভূতহিতে রতাঃ ''।। (গীতা ৫ । ২৫ , ১২ । ৪)_
*_“ অর্থাৎ জীব মাত্রেরই মঙ্গল চিন্তা করো।_*
*_অধীকার , পদ ইত্যাদি কিছু দিনের জন্য পাওয়া গেছে, চিরকাল থাকবেì না। সুতরাং সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। "_*
*সংগৃহীত*
????????????
*_যমরাজ তাকে শুধোচ্ছেন , " হ্যা রে !_*
*_তোকে এত বড় একটা প্ৰকাণ্ড শরীর দিয়ে পাঠানো হল , আর তুই মানুষের বশ হলি কী করে ? তোর একটা পায়ের সমান মানুষ , সেই ছোট্ট মানুষটা তোকে বশ করে নিল ? ”_*
_হাতি বলল , “ ধর্মরাজ ! মানুষ এমনই এক জাত__যে আমার চেয়েও বড় বড় প্ৰাণীকে সে বশ করে নেয়।_
_ধৰ্মরাজ বললেন , “ আমার এখানে তো কতই না মানুষ আসে। কই , তাদের দেখে তো এমন মনে হয় না। ”_
_হাতি বলল , “ ধর্মরাজ! আপনার এখানে তো তারা আসে মরার পরে। যদি জীবন্ত মানুষ আসত তো বুঝতে পারতেন। ”_
_ধৰ্মরাজ দূতকে বললেন , “ যা তো , একজন জীবন্ত মানুষ এখানে নিয়ে আয়।_
_যমদূত বলল , “ জী হুজুর এখনি যাচ্ছি। ”_
_দূত পৃথিবীতে বিচরণ করতে করতে এক জায়গায় দেখল গরমে ছাদের উপরে খাটে একটা লোক ঘুমাচ্ছে সে তখন খাট সমেত লোকটাকে কঁধে তুলে নিয়ে যমালয়ের দিকে রওনা হল।_
_মাঝপথে লোকটাের ঘুম ভেঙে গেল। দেখল ,“ অদ্ভুত ব্যাপার_ কেউ তাকে শূন্যে তুলে নিয়ে
যাচ্ছে !_
_লোকটা ছিল এক কায়স্থ , বইটই লিখত। বইতে যমদূতের যে সকল লক্ষণ লেখা আছে , সেইরকম দেখে সে বুঝল , এ নির্ঘাৎ যমদূত। আমাকে তাহলে যমালয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সে তখন পকেট থেকে তাড়াতাড়ি কাগজ - কলম বার করে খচখচ করে কী সব লিখেই কাগজটা পকেটে পুরে নিল। তারপর চুপচাপ খাটের উপর মটকা মেরে পড়ে রইল। ভাবল চিৎকার - চেঁচামেচি করলে পড়ে গিয়ে হাড়গোড় ভাঙবে। দেখা যাক কী হয়।_ _সকাল হতে না হতেই দূত যমালয়ে পৌছে গেল।_
_ধৰ্মরাজের সভা সবে মাত্ৰ আরম্ভ হয়েছে। দূত গিয়ে সেখানে খাট নামাল। কায়স্থ চট করে উঠেই পকেট থেকে একটা কাগজ বার করে দূতের হাতে দিল ধৰ্মরাজকে দেবার জন্য।_ _সেই চিরকুট ভগবান বিষ্ণুর নামে লেখা হয়েছিল। দূত কাগজটি ধৰ্মরাজের হাতে দিলে ধৰ্মরাজ সেটি মন দিয়ে পড়লেন। তাতে লেখাছিল ----------_
_“ প্রিয় ধৰ্মরাজ! আপনাকে জানানো হচ্ছে যে , এই পত্ৰবাহক আমার একান্ত - সচিব। একে আপনার কাছে পাঠালাম। একে দিয়ে আপনি যাবতীয় কাজ করাবেন।_
_ইতি -----_
_নারায়ণ , বৈকুণ্ঠপুরী। ”_
_লেখা পড়েই ধৰ্মরাজ তড়াক করে গদি থেকে উঠে এসে কায়স্থকে বললেন , “ আসুন মহারাজ! সিংহাসনে বসুন। ”_
_কালবিলম্ব না করে কায়স্থ ধৰ্মরাজের সিংহাসনে গিয়ে বসল। ততক্ষণে দূত একটা লোককে নিয়ে এসে সভায় হাজির করল।_
_কায়স্থ বলল , “ এ কে ? ”_
_দূত জানায় , “ হুজুর ! এ একটা ডাকাত। বহু লোকের সর্বনাশ করেছে , বহু লোককে হত্যা করেছে। এর কী দণ্ড হবে ? ”_
_কায়স্থ বলল , “ একে স্বৰ্গে পাঠিয়ে দাও। ”_
_তারপর আর একজনকে উপস্থিত করা হল।_
_কায়স্থ জিজ্ঞাসা করল , “ এ কে ? "_
_দূত বলল , “ এ একজন দুধওয়ালা, দুধে ভেজাল মিশিয়ে বিক্রি করত। সেই ভেজাল দুধ খেয়ে বহু ছোট ছোট শিশু পেট ফুলে মারা গেছে। এর কী শাস্তিবিধান হবে ? ”_
_কায়স্থ বলল , “ একেও স্বৰ্গে পাঠিয়ে দাও। ”_
_ততক্ষণে আরেকজন উপস্থিত হল ।_
_কায়স্থ জিজ্ঞাসা করল , “ এ কে ? "_
_দূত , “ হুজুর এ মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে বহু বেচারিকে ফাঁসিয়েছে। একে কী করব ? ”_
_কায়স্থ বলল , “ জিজ্ঞাসা করছ কী! সব স্বৰ্গেই পাঠিয়ে দাও। ”_
_এরপরও ব্যভিচারী , পাপী , হিংসুটে যত রকমের দুষ্ট থাকতে পারে সব একে একে এল , আর সবাইকার জন্য ওই একই হুকুম হল ‘স্বৰ্গেই পাঠিয়ে দাও। ”_
_ধৰ্মরাজ আর কী করবেন! সিংহাসনে বসে বিষ্ণুর একান্ত সচিব যা বলছেন তাই মেনে নিতে হবে।_
_ওদিকে স্বৰ্গে তো লাইন পড়ে গেছে।_
_দেখে ভগবান ভাবছেন , একি কাণ্ড ! এত লোক কোথা থেকে আসছে ? পৃথিবীতে কী তবে কোনো মহাত্মার আবিৰ্ভাব হল নাকি ? লোকে দল বেঁধে স্বৰ্গে হাজির হচ্ছে।_
_ভগবান দেখলেন , সব যমালয় থেকে উঠে আসছে। নারায়ণ তখন নিজেই যমালয়ে গেলেন। নারায়ণকে দেখে সবাই উঠে দাঁড়াল।_
_যমরাজ উঠে দাঁড়ালেন , আর ওই কায়স্থও উঠে দাঁড়াল।_
_নারায়ণ জিজ্ঞাসা করলেন ,_ _ধৰ্মরাজ! আপনি সবাইকে স্বৰ্গে_ পাঠিয়ে দিচ্ছেন , _ব্যাপার কী ?_
_এত লোক ভক্ত হয়ে গেল নাকি ?_
_ধৰ্মরাজ বললেন , ‘' প্ৰভু ! এ কাজ আমি করিনি। আপনি যে লোক পাঠিয়েছেন , এ তারই কাজ।”_
_ভগবান নায়ায়ণ বললেন , “ আমি আবার কবে লোক পাঠালাম ? ”_
_তিনি কায়স্থকে জিজ্ঞাসা করলেন , “ তোমাকে কে পাঠিয়েছে ? ”_
_কায়স্থ বলল , “ প্ৰভু ! আপনি পাঠিয়েছেন। ”_
_ভগবান নারায়ণ অবাক হয়ে বললেন , “ আমি কবে পাঠালাম হে..! ”_
_কায়স্থ বলল , “ প্ৰভু ! এখানে আসা আমার বাপের সাধ্য কী যে আসব। আপনিই তো আমাকে পাঠিয়েছেন। আপনার ইচ্ছা ছাড়া কি কোনো কাজ হতে পারে ? এ কি আমার শক্তিতে হয়েছে ? ”_
_নারায়ণ বললেন , “ তা ঠিক আছে ! কিন্তু তুমি এ কী করছ ? "_
_কায়স্থ বলল , “ কী করেছি প্ৰভু ? ”_
_নারায়ণ বললেন , “ তুমি যে সবাইকে স্বৰ্গে পাঠিয়ে দিয়েছ ? "_
_কায়স্থ বলল , “ যদি স্বৰ্গে পাঠানো অন্যায় হয়ে থাকে তবে যত সাধু , সন্ত , মহাত্মা আছে সবাইকেই দণ্ড দিতে হয়। আর যদি আমি ঠিক করে থাকি , তবে আর কৈফিয়ৎ কিসের ? এতে যদি আপনার মত না থাকে তো সবাইকে ফেরত পাঠিয়ে দিন। "_
_তবে শ্ৰীমদ্ভগবদগীতায় আপনার যে বাণী লেখা আছে তা কেটে ফেলতে হবে —_
_“ যদ গত্বা ন নিবৰ্তন্তে তদধাম পরমং মম ”।। (গীতা ১৫ । ৬)_
_অর্থাৎ আমার ধামে পৌছে কেউ ফিরে আসে না।_
_নারায়ণ বললেন , ‘' কথা তো ঠিক ! যত বড়ই পাপী হোক না কেন যদি স্বৰ্গে অর্থাৎ বৈকুণ্ঠধাম যায় তবে ফিরে আসেন না। তার সমস্ত পাপক্ষয় হয়ে যায়। কিন্তু এ কাজ তুমি কেন করলে ? ”_
_কায়স্থ বলল , “ আমি তো ঠিক কাজই করেছি প্ৰভু! আমার কাছে যে আসবে আমি তাকেই স্বৰ্গে পাঠিয়ে দেব। আমি কাউকে দণ্ড দেব না। আমি জানি , অল্প সময়ের জন্য সিংহাসন পেয়েছি , তো ভালো কাজ কেন করব না? মানুষকে উদ্ধার করা কি খারাপ কাজ ?_
_নারায়ণ যমরাজকে বললেন , ‘' ধৰ্মরাজ! আমি বুঝতে পারছিনা , একে আপনি সিংহাসনে বসালেন কী কারণে? ’'_
_ধৰ্মরাজ বললেন , ‘' প্ৰভু ! আপনার লেখা চিরকুট আমার কাছে রয়েছে। ওতে আপনি স্পষ্ট করে এই নিৰ্দেশ দিয়ে তাকে পাঠিয়েছেন। ”_
_ভগবান কায়স্থকে জিজ্ঞাসা করলেন , “ ওহে , তোমাকে আবার চিরকুট দিয়ে কখন পাঠালাম আমি ? ”_
_কায়স্থ বলল , “ আপনি শ্ৰীমদ্ভগবদগীতায় বলেছেন -----_
_"সর্বস্য চাহং হৃদিসন্নিবিষ্টং "।। ( গীতা ১৫/৭ )_
_অর্থাৎ , আমি সকলের হৃদয়ে বাস করি ।_
_অতএব হৃদয় থেকে আদেশ এসেছে কাগজে লিখে দাও , তাই কাগজে লিখে দিয়েছি। আদেশ তো আপনারই। যদি এটা আপনি আমার কথা মনে করেন তো গীতা থেকে ওই কথাগুলো বাদ দিয়ে দিন।_
_নারায়ণ বললেন , “ ঠিক কথা। ”_
_তিনি ধৰ্মরাজকে প্রশ্ন করলেন ,_ _" ওহে ধৰ্মরাজ! ব্যাপার কী ! এই জীবন্ত মানুষ_ _এখানে এল কী__করে ? ”_
_ধৰ্মরাজ দূতকে জিজ্ঞাসা করলেন , " যমালয়ে জীবন্ত মানুষ নিয়ে এলি কেন ? "_
_দূত বলল , " ধৰ্মরাজ! আপনিই তো একদিন বলেছিলেন একটা জীবন্ত মানুষ নিয়ে আসার জন্য। "_
_ধৰ্মরাজ বললেন , “ এই সেই লোক নাকি ! আরে , সবকিছু বলবি তো !_
_দূত বলল , “ আমি কী বলব মহারাজ ! আপনিই তো কাগজটা নিলেন আর একে সিংহাসনে_
_বসিয়ে দিলেন। তাই আমি আর কিছু বলার_সাহস পাইনি। ”_
_হাতিটা কিন্তু ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল।_
_সে যমরাজকে বলল , “ হুজুর , আপনি বলেছিলেন আমি কী করে মানুষের বশ হলাম ; এখন দেখছি আপনি এবং ভগবান নারায়ণও স্বয়ং মানুষের বশ হয়ে গেছেন। এই কালো চুলওয়ালা মানুষ খুব সাংঘাতিক মহারাজ !_ _এ যদি মনে করে সব ওলোট-পালট করে দিতে পারে। কিন্তু এতো নিজেই সংসারে ফেঁসে আছে। ”_
_ভগবান বললেন , “ এখন যা হবার হয়ে গেছে , কী আর করা যাবে! হে মানব, তুমি এবারে ফিরে যাও।”_
_কায়স্থ বলল , “ প্ৰভু গীতায় আপনি বলেছেন ,_
_" মামুপেত্য তু কৌন্তেয় পুনৰ্জন্ম ন বিদ্যতে ”।। (গীতা ৮ । ১৬)_
_অর্থাৎ , আমাকে পাবার পর পুনরায় আর জন্ম নিতে হয় না।_
_তাহলে এখন বলুন আপনাকে কী আমি পাইনি !_
_ভগবান বললেন , “ আচ্ছা আচ্ছা ! তুমি চলো আমার সঙ্গে। ”_
_কায়স্থ বলল , “ প্ৰভু! কেবল আমিই যাব ? ওই হাতি বেচারা এখানেই থাকবে ? এর কৃপাতেই তো আমি এখানে এসেছি। একেও তাহলে সঙ্গে নিই প্ৰভু !_
_হাতি বলল , “ প্ৰভু ! আমার অনেক স্বজাতি_
_এখানে নরক ভোগ করছে , তাদেরও তবে সঙ্গে নিয়ে নিন।"_
_ভগবান নারায়ণ বললেন , “ চল তবে ! সবাইকেই নিয়ে চল। ”_
_যমালয়ে ভগবানের আসার ফলে হাতির মঙ্গল হল , কায়স্থেরও মঙ্গল হল অন্য সকলেরও মঙ্গল হল।_
*_এটি কল্পিত গল্প। কিন্তু এর তাৎপৰ্য খুব গভীর অৰ্থবহ। কোনো অধিকার যদি পাও তবে তা দিয়ে সকলের মঙ্গল করো, যতটা পার ভালো করো। নিজের দিক থেকে কারো কোনো মন্দ করো না , কাউকে দুঃখ দিও না।_*
*_#_গীতার_বাণী_*
_" সৰ্বভূতহিতে রতাঃ ''।। (গীতা ৫ । ২৫ , ১২ । ৪)_
*_“ অর্থাৎ জীব মাত্রেরই মঙ্গল চিন্তা করো।_*
*_অধীকার , পদ ইত্যাদি কিছু দিনের জন্য পাওয়া গেছে, চিরকাল থাকবেì না। সুতরাং সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। "_*
*সংগৃহীত*