Thread Rating:
  • 51 Vote(s) - 3.29 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL কিছু কথা ছিল মনে
Heart 
[Image: 20220114-143833.jpg]



গল্প- ও খোকন
লেখক ও ছবি - বাবান



ই.... এই আরেক গাল.. আ করো..আ... ওই দেখো বৃত্তি...বৃত্তি পলে তাপুল টুপুল... টিপ টিপ টাপুর টুপুর দেখো.. এই নাও.. আরেকটা গাল... এইতো গুড বয়।

ছেলেকে খাওয়ানো মমতার কাছে যেন এক যুদ্ধ। সে কিছুতেই খেতে চায়না উফফ... কত কষ্ট করে খাওয়াতে হয়। কিন্তু সেই কষ্টেও কত সুখ। জানলার ধারে বসে খোকন বাইরে বৃষ্টি দেখছে আর মমতা খাইয়ে দিচ্ছে। কত খাবার নিচেও পড়ছে... ও সে পরে তুলে নেবে।

সোনা রোদে হটাৎ মেঘের ঝিলমিল আর তারপরেই রিমঝিম শব্দে নেমে এলো বৃষ্টি। সেই জলের বিন্দু দেখতে দেখতে বড়ো বড়ো চোখে জানলার বাইরে দেখছে খোকন সোনা।

- এই... আরেকবার মুখ খোলো সোনা... ব্যাস.. এটাই শেষবার.. আ কোরো.... ঐদেখো শালিক জোড়া.... ওই দেখো তোমায় দেখছে... না খেলে ওরাও কিন্তু রাগ করবে.. আ করো....আআ.. এইতো ভেরি গুড.... উফফফ বাবা শেষ হলো যুদ্ধ। এই তুই আর তোর বাবা দুটোই এক হয়েছিস। খাওয়া নিয়ে এতো বাহানা। উনি তো আবার এই খাবেন না তো ওই খাবেননা, আবার হটাৎ হটাৎ নানান ফরমায়েশ এইটা দাও, ঐটা কোরো উফফফফ.... তুই পুরো বাপের গুন পেয়েছিস। ইশ দেখেছো... কতটা নষ্ট করেছে ছেলে.... উফফফফ। এই যা... দেখেছিস... তোকে খাওয়াতে খাওয়াতে তোর বাবাকে ফোন করতেই ভুলে গেছি। এই তুই আর তোর বাবাটা দুটোই মিলে আমায় পাগল করে ছাড়বি।

হটাৎ কিছু একটা দেখে ছোট্ট খোকন হেসে অদ্ভুত শব্দে হেসে উঠলো। ছেলের মুখের ওই অসাধারণ হাসি মমতার সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দিলো এক নিমেষে। সেও হেসে ফেললো। বাচ্চাদের এই অদ্ভুত ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় অনুভূতি মায়ের কাছে এক আলাদাই আনন্দের। ছেলে কি দেখছেটা কি? ওহ..... ওই শালিক জোড়া জানলার গ্রিলে এসে বসেছে লক্ষই করেনি মমতা। ওদুটো দেখেই হাসছে ছোট্ট খোকন।

বাড়ির ফোনটা বেজে উঠলো। এগিয়ে গিয়ে ফোনটা তুললো মমতা।

হ্যালো? হ্যা..... আমি এখুনি তোমাকেই ফোন করতে যাচ্ছিলাম..... ওই খোকনকে খাওয়াচ্ছিলাম তো তাই দেরী হলো....তোমার ছেলে যা একটা হয়েছে.. এক্কেবারে তোমার মতন... খেতেই চায়না কিছুতেই..... হ্যা..... আমি এবার খাবো.. তুমি কখন খাবে? ও দেরী হবে আরও? আচ্ছা খেয়ে নিও কিন্তু... কাজের চাপে আবার ভুলে যেওনা কালকের মতো..... হ্যা রে বাবা হ্যা... আমি ভুলিনি ওষুধ খেয়ে নেবো.... তুমি কিন্তু খেতে ভুলে যেওনা আবার... নইলে তোমাকে আবার ব্রাহ্মবি শাক গেলাবো হিহিহিহি..... আচ্ছা রাখছি....... শোনো........ তাড়াতাড়ি ফিরো.... রাখছি।

ফোনটা রেখেই নিজের মনে হেসে ফেললো মমতা। মানুষটা এক মুহুর্ত দেরী হলেই কেমন চিন্তায় পড়ে যায়। চোখে হারায় আজও তাকে। মমতাও তো বেশিক্ষন দূরে থাকতে পারেনা ওর থেকে। ঝগড়া অভিমান যতই হোক..... মানুষটা জড়িয়ে ধরলেই সব রাগ গলে জল হয়ে যায়। আজ এক ছেলের বাবা হয়েও বাচ্চার মতো জড়িয়ে ধরে শোয় মমতাকে। ছেলে আর বাপ দুটোই যেন সন্তান তখন ওর কাছে। ও ওদের দুজনেরই মা তখন। ছেলে আসার আগেও এইভাবেই বুকে মাথা গুঁজে ঘুমোতো আনন্দ। মমতা হাত বুলিয়ে দিতো স্বামীর পিঠে, চুলে বিলি কেটে দিতো। নিজেকে যেন তখন জননী মনে হতো ওই লোকটার। সে আর একটা লম্বা চওড়া পুরুষ নয়, একটা বাচ্চা ছেলে তখন সে । সকালে আবার নবাব পুত্র একদম তাগড়াই মরদ। অবশ্য রাতে ঘুমোনোর আগে পর্যন্ত তাগড়াই পুরুষটি দুস্টুমি করতে ভুলতেন না। ক্লান্ত দেহে আদরের মানুষটাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে যেত মমতা। তখন সে আর প্রেমিকা নয়, নয় শয্যাসঙ্গিনী, নয় অর্ধাঙ্গিনী... শুধুই সে মা। সেদিন ছিল ওই দামড়া ছেলের মা আর আজ সত্যিকারের মা।

দুম দুম হালকা আওয়াজে পেছনে তাকাল মমতা। ছোট্ট হাত দুটো বন্ধ জানলায় হালকা বাড়ি মারছে। মুখে সেই ভুবন ভোলানো হাসি আর বিস্ময় ভরা উজ্জ্বল আঁখি জোড়া।

- খোকন.... না সোনা জানলায় ঐভাবে বাড়ি মারেনা... ওরা ভয় পেয়ে যাবে তো। এসো মুখ মুছিয়ে দি... ইশ.... কিরে তুই? সারা মুখে খাবার লেপ্টে... এ ছেলে কবে যে চুপচাপ খেয়ে নিতে শিখবে । সেদিন আর এতো খাটতে হবেনা মামনিকে .. খোকন সোনা একদিন নিজেই হাটবে... দৌড়াদৌড়ি করবে....কথা বলবে..... বলবে- মা.. মা। ওই ডাকটা শোনার জন্য মমতা অপেক্ষা করে আছে। জমিয়ে রেখেছে অশ্রু নিজের নয়নের অন্দরে। একদিন তা বেরিয়ে আসবে। সুখের অশ্রু।

- কোথায় আমার খোকন সোনা? কোথায় গেলো বাবুটা? এইতো আমার বাবুটা...মাম্মা কোথায় মাম্মা? এইতো এখানেই মাম্মা...কোথায় আমার বাবুটা?........ এইতো আমার বাবুটা। ছেলেকে কোলে নিয়ে ওর চোখ দুটো হাত দিয়ে ঢেকে পরক্ষনেই হাত সরিয়ে নিতেই খিলখিল করে হেসে উঠছে খোকন প্রতিবার। বার বার হাত দুটো ওপরে তুলে হাততালি দেবার চেষ্টা করছে সে। খুব মজা পাচ্ছে পুচকে খোকন মায়ের সাথে খেলা করে। বাবাকে সেইভাবে কাছে পায়না সে। সারাদিন বাইরেই থাকে। মমতার সাথে কিছুদিন ওর মা এসে থেকেছিল। তখন একাকিত্ব অনেকটা কেটেছিল তার। যদিও তার পুরাতন বেস্ট ফ্রেন্ড আর বর্তমানে স্বামী মানুষটা দূরে থেকেও কাছে থাকে সবসময়। দিনে কতবার যে ফোন করে লোকটা উফফফফ। এতো চিন্তা কিসের রে বাবা কে জানে। ওর মাও হটাৎ যেন নার্স হয়ে উঠেছিল। সামান্য একটু ব্যাথাই তো পেয়েছিলো পড়েগিয়ে আর তাতেই এদের পাগলামি শুরু।

তোর বাবাটানা.. একটা পাগল জানিস..... বিয়ের আগেও জ্বালাতো আমায়, আজও জ্বালায়। এই জানিস তোর বাপটা প্রেম করতো একজনের সাথে? আর সেটাও আমিই সেট করে দিয়েছিলাম হিহিহিহি..... অবশ্য সে আজ অতীত। মেয়েটা যে অমন ভাবে ঠকাবে ওকে কে জানতো। আর তখন..... তোর এই মাম্মা সুপার হিরোইনের মতো তোর বাবাকে দুঃখ ডিপ্রেশন থেকে বার করে এনেছিল.... তোর মাম্মি কি যেসে মেয়ে নাকি?

ছোট্ট খোকন মায়ের কথা একমকনে শুনছে দেখে হাসি পেয়ে গেলো মমতার। ও কি বুঝছে কে জানে। তবে ছেলের সামনে তার বাপের অতীত বলে মজা পাচ্ছে মাম্মা। সত্যিই... কি দিন ছিল সেগুল। সেদিনের ওই বন্ধুটা আজ ওর এতো কাছের একজন।  কলেজের সুন্দরী আর অহংকারী সুদীপ্তা মমতার বন্ধু ছিল। আনন্দ বাবুর আবার বুকের বাঁ দিকটা ধুকুপুকু করতো ম্যাডামকে দেখলে।

- এই... প্লিস.... করিয়ে দে না..... তোর এতো কাছের বন্ধু তো.... তোর পায়ে পড়ি।

- উহু... তোর কম্মো নয় ওকে পটানো... ও আলাদা জিনিস বাবু... তোর হাতে আসবেনা.....

- তাই তো বলছি.... তুই চাসনা... তোর এই বেস্টুটার একটা হিল্লে হোক? এতো পাষান হতে পারবি রে... তোর নামের মান রাখবি না তুই?

- ওরে আমার বন্ধু রে... থাক থাক... আর সেন্টু দিতে হবেনা.... আমি দেখছি।

দেখেছিলো মমতা। ওদের আলাপ করিয়ে দিয়েছিলো। এ আলাপ পরবর্তী সময় আরও গভীর হয়েছিল ওদের মধ্যে। নিজের বন্ধুকে তার প্রিয় সুন্দরী নারীর সাথে দেখে নিজেও খুশি হয়েছিল। কিন্তু একসময় সব পাল্টে গেল। যেন অন্য কিছু অপেক্ষা করছিলো আনন্দর জন্য। ঐদুজনের আলাপ প্রেম আর তারপরের ছাড়াছাড়ি সবকিছুর সাক্ষী মমতা। ওই সুন্দরী যে নিজের সৌন্দর্য খাটিয়ে আরও পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গ ও টাকা উপভোগ করতো সেটা জানতে পেরে যায় মমতা। নিজের বন্ধুকে জানায় সব। তারপরে টাটা বাই..... দুস্টু গরু থেকে শুন্য গোয়াল অনেক ভালো। যদিও আনন্দর ফাঁকা গোয়াল ঘর আর ধাক্কা খাওয়া মনটা দেখে মমতাও দুঃখ পেয়েছিলো। সেই সময় প্রায় সবসময় পাশে ছিল সে আনন্দর। তাকে ওই অতীত থেকে ভুলিয়ে আবার সেই আগেকার আনন্দতে পরিণত করতে চলার পথে নিজেই যে হোঁচট খাবে ভাবতেও পারেনি মমতা. শেষে কিনা ওই ইডিয়েটটারই প্রেমে পড়তে হলো তাকে। কিন্তু এসব কি আর ভেবে চিনতে হয় নাকি? ব্যাস...... হয়ে যায়। হয়ে গেলো। বন্ধুর বন্ধুত্ব কখনো যে প্রচন্ড টানে পরিণত হলো জানতেও পারলোনা মমতা। যদিও আনন্দ প্রথমে বুঝতেও পারেনি। ইডিয়েট কি এমনি বলতো মমতা ওকে। তবে একদিন সেও বুঝলো.... আর তারপরে ওই চেনা ইডিয়ট বন্ধুটা যে কবে মমতার চোখে পুরুষ হয়ে উঠেছে আর আনন্দর চোখে বেস্ট ফ্রেন্ডটা একজন প্রেমিকা বুঝতেই পারেনি ওরা । তুই থেকে তুমির এই যাত্রা চিরস্মরণীয় দুজনের কাছেই। সেই সম্পর্কর সুতো এতটাই শক্তিশালী হয়েছে যে কিছু মানুষের চেষ্টাতেও একটুও ছেড়েনি তা। আনন্দর বাবা মা রাজি হয়নি..... হয়তো.... না থাকুক সেসব অতীত। তারাও তো আজ ওকে আপন করে নিয়েছে। কেন যে ইডিয়টটা নিজের বাবা মায়ের ওপর এখনো অভিমান করে আছে কে জানে। 

ফোনটা বেজে উঠলো আবার। এবারে মা ফোন করেছে। উফফফ এই জামাই-শাশুড়ি কি প্ল্যান করে শয়তানি করে নাকি? একবার ও ফোন করে তো একবার মা। বাবা কিন্তু এসবের মধ্যে এতো থাকেনা। সেইবার হস্পিটালে জলভরা চোখে দেখেছিলো শেষবার। তারপরে যতবার দেখেছে হাসিমুখেই। ছেলেকে কোলে নিয়েই রিসিভ করলো ফোনটা সে।

- হ্যা মা...... হ্যা ঠিক আছি.... তুমি ঠিক আছো তো? আর বাবার জ্বরটা কমেছে? যাক ভালো...... হ্যা এমন হুটহাট ঠান্ডা গরম অনেকেরই হচ্ছে। আমি তো ভয় আছি তোমার জামাইকে নিয়ে। তার তো আবার একটুতেই সর্দি কাশি হয়েছে যায়। কি....... কি বললে? হ্যা..... নানা আমি ঠিক আছি.... আমিও ঠিক আছি আর তোমার নাতিও ফাস্ট ক্লাস একদম। এইতো আমার কোলে বসে। কথা বলবে? এইনাও বাবু.... দিদুন... দিদুনকে হাই বলো...... শুনছো তো মা কেমন হাসছে... এ যে কি শয়তান হয়েছে উফফফ.. খেতে চায়না জানো কিছুতেই.... একে খাওয়ানো এক ঝক্কি। হ্যা? হ্যালো? উফফফ হ্যারে বাবা হ্যা ওষুধ খাচ্ছি সময় মতো.... এই তুমি আর তোমার জামাই এই ওষুধ ওষুধ করে জ্বালিয়ে খেলে। এখন আর ব্যাথা আছে নাকি? তাও সে গেলাচ্ছে ওষুধ.....অসহ্য। আচ্ছা রাখো..... তুমি আসছো কবে? আচ্ছা.... আচ্ছা ঠিকাছে... হুমম রাখো।

ফোন রাখতেই মমতা দেখলো ছেলে ওপাশের দেয়ালে দিকে তাকিয়ে হাসছে। যেন খুব মজার কিছু দেখছে সে।

- ওমা..... খোকন... তুই কি দেখছিস বাবু? ওহ ওই ছবিটা..... আচ্ছা ওটা দেখলে তোর হাসি পায় কেনরে? ওকে তোর পছন্দ? ও কে বলতো? কি নাম ওর? ও হলো আমাদের গোপাল.... কৃষ্ণ। বুঝলি আমার গোপাল... উম্মম্মম্ম... আমার সোনা বাবাটা।

মমতা কাছে টেনে নিলো খোকনকে। ওর নরম গালে গাল ঘষতে লাগলো সে। আর ফুলের মতো খোকন হাসিমুখে আবোলতাবোল বলতে লাগলো... যার থেকে মধুর ধ্বনি আর কিছু হতে পারেনা।

- ওরে বাবারে ছাড়ো.... ওটা গাল না ক্যাকটাস? আমার গালের বারোটা বাজিয়ে দিলো পুরো.... কি রে তুই... সরি.. তুমি।

- ইশ... কতদিন পরে তোমার মুখে তুই শুনলাম। খালি খালি তুমি তুই বলা বন্ধ করতে বললে। ভালোই তো ছিল ওটা। এই আবার তুই করে বলা........

- একদম না! আগে আমরা বন্ধু ছিলাম.. তখন তুই চলতো... তা বলে এখনও তুই? আমি বাবা ওতো মডার্ন নই.... আর তুমি কি চাও? আমাদের বাচ্চা যখন হবে সে নিজের বাবা মাকে তুই তুকারি করে কথা বলতে দেখবে... ওটাই শিখবে? কিসব যে বলোনা। শেষে দেখবো সেও বলছে - মা ক্ষিদে পেয়েছে... খেতে দিবি তো। 

-হিহিহিহি... দারুন হবে কিন্তু কি বলো?

- বাপ্ আর বাচ্চা দুটোকেই পিটবো ওসব হলে।

- আহা... সে আসতে এখনো কয়েকমাস বাকি.... ততদিন অন্তত ফ্ল্যাশবাকের তুই তে ফিরে যাই... তাছাড়া ওর সামনে নাহয় তুমি করেই বলবো... একান্তে..... তুই..... মাঝেমাঝে?

- উফফফফফ... আচ্ছা ঠিকাছে...... তোমাকে সামলানো আমার কম্মো নয়.... কে জানে পেটেরটা আবার যেন বাপের মতন না হয়!

- হোগা হোগা.. বাপ্ কা বেটা ইয়া বেটি হোগা... তোর মতো বোরিং মেয়ে হবে নাকি রে?

- তবেরে.. আবার তুই!!!

হেসে ফেললো মমতা....... সেইদিনটা মনে করে। এমন শয়তানি কত করেছে বাঁদরটা. ইচ্ছে করে রাগানো, ইচ্ছে করে এমন কিছু করা যাতে বকা খেতে হয় বৌয়ের। আর বকুনির সময় মাথা নিচু করে হাসা..... গুলিয়ে যেত মমতার. স্বামীকে বকছে নাকি বন্ধুকে..... নাকি নিজের ছেলেকে? হয়তো তিনটেই। ফোলা পেটটায় হাত বোলানো, কান লাগিয়ে কিসব শুনতো সেই জানে। মমতা শুধু দেখতো স্বামীর  কান্ড কারখানা। আজ আর এসব করেনা.... অনেক ম্যাচুর হয়েছে গেছে কিছুদিন ধরে যেন...সিরিয়াস মানুষ। একসময় সেটাই তো চাইতো মমতা স্বামীটা কবে সিরিয়াস হবে... আর যখন সেটাই হয়েগেছে তখন মনে হয় কোথায় গেল ওই দুস্টু বাচ্চাটা? কোথায় ওই বেস্ট ফ্রেন্ডটা?

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই পুরুষে পরিবর্তন আসলেও স্বামীর দায়িত্ব পালনে একটুও অবহেলা করেনি আনন্দ। প্রকৃতির নিয়মে সেই কলেজের বন্ধুকে হয়তো একটু একটু করে হারিয়েছে মমতা কিন্তু পাশে পেয়েছে এতো ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে রাখা স্বামীকে। বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হতে হতে এতটাই গাঢ় হয়েছে গেছে যে বন্ধুত্ব নাম বদলে ভালোবাসা হয়ে গেছে। দুই বন্ধু একে ওপরের কাছে আসতে আসতে এতটাই কাছে চলে এসেছে যে.... এই যে আজ খোকন বাবু মমতার কোলে। একদমই বাপের মতো হয়েছে। এক মুখ... এক স্বভাব।

~~~~~~~~~

- ওষুধ খেয়েছিলে তো?

- উফফফফ মাগো... হ্যা হ্যা... এতটাই ভীতু হয়েছে পড়েছো না তুমি আর আমার মা... ওষুধ ওষুধ করে দুজনে মাথা খেয়ে নিলো.

আনন্দ অফিসের জামা ছেড়ে বিছানায় বসে স্ত্রীয়ের বকুনি শুনে মুচকি হেসে বললো - কি করবো বলো? ডাক্তারের হুকুম যে। কেন বার বার তোমায় জ্বালাই বোঝোনা? তাছাড়া........ সেদিনটা যে আজও ভুলতে পারিনা....আমার ওপর দিয়ে যে কি গেছিলো তা তুমি কি আর জানবে......? আমিই জানি কি গেছে আমার ওপর দিয়ে।

খোকনের বাবার জামা আলনায় রাখতে রাখতে গজগজ করছিলো মমতা। স্বামীর এই কথা শুনে মমতা ঘুরে তাকালো বিছানায় বসে থাকা মানুষটার দিকে। নিচের দিকে মুখ করে চুপচাপ বসে লোকটা। মমতা এগিয়ে গিয়ে পাশে বসলো আনন্দর। স্বামীর হাতে হাত রেখে তার কাঁধে মাথা রেখে বলল - আমি জানি কি গেছে তোমার ওপর দিয়ে...... তোমায় তো চিনি আমি... আমি জানি তুমি কেমন ভয় পেয়ে গেছিলে। কি ভেবেছিলে? আমি আর......

- আহ্হ্হ.... চুপ কোরো! কিসব যে বলোনা।

স্বামী রাগত স্বরে বললো কথাটা। খুব কম সময়ই এসেছে ওদের জীবনে যখন আনন্দ বকেছে মমতাকে। নইলে বিপরীতটাই এতদিন হয়ে এসেছে। মুচকি হাসলো মমতা। মানুষটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আদুরে স্বরে বললো - এখনো কেন ওসব ভাবো?... আমি ঠিক আছি তো... এইতো একদমই ফিট......দু বেলা তোমার পাল্লায় পড়ে ওষুধ খেয়ে ফোন করতে হয়... ব্যাথা ফেতা কিচ্ছু নেই। তুমি তাও কেন আমাকে নিয়ে এতো ভয় পাচ্ছ বলোতো? তোমায় এভাবে দেখতে একদমই পছন্দ করিনা আমি। হাসো তো একটু..... হাসো বলছি..... ওই দেখো খোকন তোমায় দেখছে। বাবু.... তুই বোঝা তো তোর বাবাকে.... পাগল একটা। আর এই তোমার ছেলে.... কিচ্ছু খেতে চায়না জানো.... মুখ থেকে ফেলে দেয় উফফফ এ কি জ্বালায় যে পড়েছি। একদম তোমার বদগুন পেয়েছে..... এ একেবারে তোমার মতোই হবে। আমি এতক্ষন সামলেছি.....এই নাও এবার তুমি সামলাও দেখি একে....... বাবার কর্তব্য পালন করো বৎস.. হিহিহিহি.... আমি যাই তোমার চা বসাই। নাও ধরো....

ছেলেকে তুলে নিয়ে মমতা স্বামীর কাছে  নিয়ে এলো। স্ত্রীর কথা শুনে সে তাকিয়ে রইলো মমতার হাতের দিকে।

- আরে? কি হল ধরো ওকে! আমি যাই চা বসাই। নাও ধরো... আজকে জানো ওই গোপালের ছবিটার দিকে তাকিয়ে ড্যাব ড্যাব করে দেখছিলো... আবার দুটো পাখি দেখে কি  হাসি বাবুর। বুঝতে শিখছে আস্তে আস্তে মনে হয় জানো। যাও বাবু... বাবাকে আদর করে দাওতো....

ছেলেকে স্বামীর কোলে দিয়ে মমতা চলে গেলো চা বানাতে। আনন্দ নিশ্চুপ হয়ে মমতার চলে যাওয়া দেখলো। সে বেরিয়ে যেতেই তাকালো নিজের কোলে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে থাকতে না পেরে ফোনটা তুলে নিলো সে। একটা ফোন করলো একজন চেনা মানুষকে।

- হ্যা বলো আনন্দ.. সব ঠিক আছে তো?

- হ্যা? হ্যা এমনিতে সব ঠিক কিন্তু ডাক্তার কাকু...... এইভাবে.... এইভাবে আর কতদিন?

- হ্যাভ সম পেশেন্স আনন্দ.... তোমায় তো বলেছিলাম... হটাৎ করে ওকে কিচ্ছু জানানো যাবেনা.... নিতে পারবেনা... সহ্য করতে পারবেনা মমতা।

- কিন্তু ডাক্তার কাকু চোখের সামনে দিনের পর দিন এইভাবে মেয়েটাকে আমি দেখতে পারছিনা....... কি ছিল মমতা.. আর আজ ওকে এই ভাবে দেখতে দেখতে আমি...... আমি না একদিন.... উফফফফ 

- আহ্হ্হঃ আনন্দ সামলাও নিজেকে... ভুলে যেওনা.. এখন ওর সবচেয়ে আপন তুমি... তুমিই পারো ওকে আবার আগের মমতায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে.... আই নো..... যে ভয়ানক ধাক্কা তোমরা দুজনেই পেয়েছো তার কোনো সান্তনা হয়না..... তার থেকেও বড়ো দুঃখ এটাই যে আজ তুমি মমতার কথা ভেবে নিজেকে সামলে নিলেও সে পারেনি সামলাতে নিজেকে..... ওই খবরটা শোনার পর... কেমন চুপচাপ হয়ে গেছিলো সে।

- জানি ডাক্তারের কাকু... আমি জানি.... আমিই তো জানবো..... নিজের চোখেই তো সব দেখেছি.... যেন বোবা হয়ে গেছিলো...... কিচ্ছু খেতে চাইতোনা.... ওই ঘরের বালগোপালের ছবিটার দিকে কেমন..... কেমন করে তাকিয়ে থাকতো। আর তারপরে একদিন দেখি....... উফফফফফ আমি আর ভাবতেও চাইনা সে রাতটা .....  উঠে দেখি ছোট্ট কোলবালিশটাকেই কোলে নিয়ে ..... উফফফফফ... সেই শুরু... যা আজও থামেনি.

- আমি জানি..... তুমি তারপরে যে কিভাবে সামলে আসছো মেয়েটাকে এতদিন ধরে... এতো মিথ্যে বলে..... আমি জানি। এখন তো ওই মিথ্যেই সত্যি ওর জন্য। ওই মিথ্যেটাই তো ওকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এক মিথ্যের জগতে আটকে আছে মমতা।

চোখের জলটা মুছে আনন্দ বললো - সারাদিন খোকন খোকন করে পার করে দেয়..... ওর মাও চলে আসে ওর কাছে... কদিন হলো নিজের বাড়ি গেছেন। এমনিতে আর কোনো প্রব্লেম নেই.. একদম নরমাল..... তাছাড়া আপনিও বলেছিলেন খুব বেশি স্পেশাল ট্রিট না করতে..... পুরোটাই আগের মতোই রাখতে.... আগে তাও একা ছাড়তে ভয়ানক ভয় হতো কিন্তু এখন বুঝেছি ও অন্য সব ব্যাপারে আগের মতোই আছে......শুধু ওই একটা ব্যাপারেই....... আর আমিও.....আমিও চেয়ে থাকি মেয়েটার দিকে জানেন.... ওর পাগলামি প্রাণ ভোরে দেখতে থাকি । ওই হাসি মুখটা দেখতে দেখতে বুকে যেন একটা শান্তি আসে জানেন..... কিন্তু আবার এটা ভেবেও মোচড় দিয়ে ওঠে যে খোকন তো...........ইয়ে......কাকু ও আসছে... আমি রাখছি।

- এই নাও তোমার চা.... উফফফফফ কি গো তুমি? তোমার কাছে দিয়ে গেলাম ওকে সামলাবে বলে.. এত তুমি ফোনে ব্যাস্ত... মানে কেয়ারলেস হবার একটা লিমিট আছে.... ছেলেটা কাঁদছে দেখতে পাচ্ছ না? এই নাও গেলো চা.... আয় বাবু... এইতো মায়ের কাছে আয়...... এইতো আমি সোনা.....তোর বাবাটা একটা হাদারাম... কোনো কাজের নয়। আয় আমরা বারান্দায় যাই.... এসো এসো এসো.. এইতো গুড বয়।

ছেলেকে নিয়ে মমতা চলে গেলো বারান্দায়। বাইরে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে মনেহয়। নিজের শুন্য কোলটা দেখছে আনন্দ। বৃষ্টিতে পাতা গুলো ভিজে যাচ্ছে যেমন ঠিক তেমনি ঘরের ভেতরেও একজনের চোখ থেকে টপ করে দু ফোঁটা জল পড়লো মাটিতে। তারপরে সে তাকালো দেয়ালে টাঙানো ছোট্ট গোপাল এর ছবিটার দিকে। খুশির খবরটা পেয়ে মা দিয়েছিলো এটা নিজের বৌমাকে তাই এইঘরের দেয়ালে টাঙিয়ে ছিল ছবিটা আনন্দ। আজ ওটাই যেন খুব কাছের সম্বল। ওটাই যে একজনে প্রানশক্তি..... ওটাই যে কারোর খোকন।

বারান্দা থেকে একটা গান ভেসে আসছে -

ফুলের মতো হাসি তারই
হাসলে লাগে ফুল বাহারি
তাকে ছেড়ে থাকতে দূরে
আমি কি আর কভু পারি?
ইচ্ছে হয়ে ছিল সে বুকে
তারে পেয়ে আছি যে সুখে
হাসি তোর মিষ্টি মিষ্টি মধুর  মধুর
মিষ্টি মধুর মধুর
বৃষ্টি পরে টাপুর টুপুর.... টাপুর টুপুর..

সোনা........ ও খোকন


||সমাপ্ত||

(কেমন লাগলো? জানাবেন বন্ধুরা)

[Image: 20240716-212831.jpg]
[+] 10 users Like Baban's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু কথা ছিল মনে - বাবান - by Baban - 23-01-2022, 01:32 PM



Users browsing this thread: 19 Guest(s)