18-01-2022, 11:48 AM
(This post was last modified: 18-01-2022, 11:58 AM by Jaybengsl. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
কাল কাকিমা আসেনি।আজও আসবে না হয়তো।ভোরবেলা শীলাকে একবার হোয়াটসআপে গুড মর্নিং মেসেজ করেছিলো।শীলা দেখেনি।পরে আবার "করোনা" নিয়ে একটা মেসেজ ফরওয়ার্ড করেছিলো,সেটাও শীলা দেখেনি।
সুমন ঠিক করে ফেললো আজ শীলার কাছে যাবেই যাবে।
মা এগারোটার চা দেবার আগেই আজ স্নান করে ফেললো সুমন।শ্যাম্পু করলো,গালের দুপাশের হাল্কা দাড়ি,গোঁফ কামিয়ে ফেললো।
টী শার্টে ডিউডোরেন্ট স্প্রে করে,চা খেয়ে পেন কেনবার নাম করে বেরিয়ে পড়লো।
সকালে স্যার আসবে না।মা শুধু রান্না ঘর থেকে মনে করিয়ে দিলো," মাস্ক পরে বেরোস বাবু,যেখানে সেখানে হাত দিস না।"
সুমনদের বাড়ি থেকে শীলাদের বাড়ি অনেকটা দুর।একদম পাড়ার শেষ মাথায়।শুনেছিলো,সরু খালের উপর একটা বাঁশের সাঁকো আছে,তার ঠিক আগে । শীলাদের বাড়ীর লাগোয়া একটা চপের দোকানও আছে।
অনেকটা হাঁটার পর দুরে বাঁশের সাঁকোটা দেখার পর উত্তেজনায় বুকের ভেতরটা ধড়াস ধড়াস করতে লাগলো সুমনের।
চপের দোকানে সাদা থান পড়া ঘোমটা দেওয়া বুড়ি মতো একজন ফুলুরী ভাজছে।পাশে ধামা ভরা ঘরে ভাজা লালচে মুড়ি।(মেদিনীপুরে চপ মুড়ি খুব চালু খাবার ।সারাদিন চপের দোকান খোলা থাকে।)
দোকানটার পাশেই একটা মস্ত বাগান।একটু দুরেই বাড়ি দেখা যাচ্ছে।
সুমন দুটো মোচার চপ কিনলো।তারপর আর একটু এগিয়ে একটা ফণি মনসা আর আকন্দ গাছের ঝোঁপের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
দেখলো,পেয়ারা গাছের একটা মোটা ডালে ঝোলানো দোলনায় একটা মেয়ে বসে পেয়ারা খাচ্ছে।ওখান থেকে ওকে কেউ দেখতে পাবে না। সুমনের মনে হলো ও নিশ্চয়ই শীলা । আর শীলাও কি ওকে দেখে ফেলেছে?
শীলা দোলনা থেকে নেমে এদিকেই এগিয়ে আসছে।সুমনের পা দুটো কাঁপতে শুরু করেছে।
কাল কাসুন্দে আর আঁশ শেওড়ার ঝোপ মাড়িয়ে পাঁচিলের কাছে এসে একদম সুমনের মুখোমুখি দাঁড়ালো শীলা।ওর হাতে একটা আধখাওয়া পেয়ারা।
" সুমন দা না?ঐ জঙ্গলে কি করছো?মনসার কাঁটা হাতে ফুটলে হাত পেকে যাবে তো। সাপও থাকে ফণি মনসার কাছে।এদিকে চলে এসো ।"
সুমন আরো নার্ভাস হয়ে ঝোপ থেকে বেরিয়ে এলো।
" এখানে কোথায় এসেছো?"
সুমন কিছু বলতে পারলো না। শুধু কাঁপা কাঁপা গলায় "চপ খাবে?"বলে ঠোঙাটা শীলার দিকে এগিয়ে দিলো ।শীলা হাত বাড়িয়ে ঠোঙাটা নিয়ে একছুটে পেয়ারা গাছতলায় ফিরে গেল।কয়েকবার লাফিয়ে নিচু ডাল থেকে একটা পেয়ারা পেড়ে নিয়ে এসে বললো,"তুমি পেয়ারা খাও তা হলে।"
সুমন পেয়ারা একদম ভালো বাসেনা ।ছাগলের মতো শুধু চিবুতে হয়।তবু না বলবে কি করে?হাত বাড়িয়ে পেয়ারাটা শীলার হাত থেকে নিল।
শীলা চপে কামড় দিয়ে সুমনের একদম কাছে এসে দাঁড়ালো।
শীলা যেন বনদুহিতা।
সাদার উপর সবুজ ছোটো ছোটো ফুল ছাপা,হাত কাটা ম্যাক্সি পরনে।দু কাঁধের দু পাশ দিয়ে চুল ছড়িয়ে কোমরের কাছে নেমে এসেছে।কমলা লেবুর মতো নিটোল বুকদুটো চুলেই খানিকটা ঢাকা পড়েছে ।তলপেট আর দুটো থাইযের আভাস পাওয়া যাচ্ছে ম্যাক্সির ওপর থেকেই।মনে হচ্ছে এক প্যান্টি ছাড়া ভেতরে ব্রা বা টেপ কিছুই পড়েনি শীলা।
দুজনের মাঝখানে এখন শুধু বাঁশের নড়বড়ে বেড়া।
সুমনের দুটো পায়ের কাঁপুনি যেন আরো বেড়ে গেল।শীলা কি বুঝতে পারছে ওর পা কাঁপছে ?বুঝতে পারছে সুমন কেন এসেছে?নয়তো ওর দিকে তাকিয়ে অমন মিট মিট করে হাসছে কেন?
"মাস্ক পরে আছো কেন এখনও?ওটা খোলো।আরে বাবা ,আমার করোনা হয়নি।"
"তবু তুমি কেন পরোনি? " সুমন বললো।
"দুর,আমি তো বাড়িতে রয়েছি।বেরোলে পড়বো।আর এখন তো বাড়ি থেকে বারই হইনা।"
সুমন মাস্কটা খুলতেই শীলা সুমনের মুখের দিকে তাকিয়ে ভেংচে উঠলো।
"ওমা,দাড়ি গোঁফ কামিয়েছো কেন? এ ম্যা,কি বিশ্রী পাকা পাকা লাগছে তোমাকে।"
সুমনকে বিব্রত লাগলো,বললো-
"ঠিক আছে আর কামাবো না।"
শীলা আবার মুখ বাঁকালো।
"বাববাহ,আমি বললে কামাবে না? আমি কে?"
"আমি একটা হোয়াটসআপ করেছিলাম তোমাকে।রিপ্লাই দাও নি কেন?"
"হোয়াটসআপ? কিসের ? আমি দেখিনি তো"
"একটা গুড মর্নিং মেসেজ পাঠিয়েছিলাম।সঙ্গে লিখেছিলাম,from Sumam,তুমি বোধহয় তখন আমার নামটা মনে করতে পারো নি।তাই না?"
ডান পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে মাটি তুলছিল শীলা।মাথা নীচু করেই বললো,
"আমি হোয়াটসআপ করিনা,তাই দেখিও না।"
সুমনের হাঁটু কাঁপা বন্ধ হয়েছিলো।আবার কাঁপতে শুরু করলো।এবার কি করে বলবে শীলাকে?
দেখলো শীলা মাথা নীচু করেই মুচকি মুচকি হাসছে।চপের ঠোঙটা এখনো ওর হাতে ধরা।
সুমন অনেক সাহস সঞ্চয় করে এবার বলতে গেল,তবু গলা কেঁপে গেল।
ভাঙা গলায় বললো
"তোমাকে একটা কথা বলতে এসেছি।অনেক দিন ধরে বলতে চাইছি।বলা হচ্ছে না।"
শীলা মাথা তুলে সুমনের চোখে চোখ রেখেছে তখন।ঠিক সেই সময় বাড়ীর ভেতর থেকে কোনো মহিলার গলা," শীলুউউউউ"।
ত্বরীতে পিছু ফিরে শীলা বললো,"যাই মা।"
তারপর বাগানের আম কাঁঠালের শুকনো পাতায় আওয়াজ তুলে একছুটে বাড়ীর ভেতর অদৃশ্য হয়ে গেল।
সুমন আর বলতে পারলো না," শীলা,আমি তোমাকে ভালবাসি।"
মন খারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরলো সুমন।
শীলাকে বলতে গিয়েও বলা হলো না।আর কবে বলবে? ফের শীলাদের বাড়ি গেলে ওর মা যদি দেখে ফেলে?শীলাদের পাড়ার ছেলেরা যদি কিছু সন্দেহ করে?
শীলা হোয়াটসাপ করে না। এখন কলেজ খোলারও চান্স নেই।
আবার ভাবলো,কি জানি শীলাকে বললে শীলা হয়তো ফিরিয়েই দিত ওকে।
শীলাকে দেখে তো একটুও মনে হলো না,ও সুমনকে ভালবাসতে পারে।ওর নিস্চয়ই অন্য কোনো বয় ফ্রেন্ড আছে ।
শীলার দেওয়া পেয়ারাটা এখনো খায় নি সুমন।সেটা মাকে দিয়ে দিলো।
দুপুরে ভাত খেয়ে একটু জিরিয়ে নিয়ে এবার পড়তে বসলো।আর তখনই হোয়াটসআপে একটা মেসেজ এলার্ট এলো।সুমন সেটা খুলতেই দেখলো,অন্য একটা নম্বর থেকে মেসেজ।
"তুমি একটা হাঁদারাম।
সব কথা কি হোয়াটসআপে বলা যায়।
তারপর একটা ঠোঁটের ইমোজী।"
সুমন যে কি করবে বুঝতে পারছে না।ওর শরীরটা তখন যেন হাওয়ায় ভাসছে।
সুমন লিখলো ," so kind of you "
শীলা জবাব দিলো পাঁচ মিনিট পর।
"হাঁদারাম,বন্ধুকে কেউ kind of u বলে নাকি?"
সুমন লিখলো," sorry,কবে দেখা হবে?"
"হি হি,তুমি কি দু বছর ধরেই অপেক্ষা করে আছো?"
"তুমি দু বছর আগে দেখেছিলে? তবে যে বললে
ওয়াটস্যাপ দেখনা?"
"হাঁদারাম,সব তোমাকে বলবো নাকি?"
"তাহলে তখন রিপ্লাই দাও নি কেন?"
"জানিনা যাও।
শোন।আর ওয়াটস্যাপ কোরো না।মা দেখে ফেলবে।কাল এ সময় আসবো।"
একটা ঠোঁটের ইমোজী পাঠালো শীলা।
সুমনও একটা "লাভ " ইমোজী পাঠিয়ে দিলো।
তারপর আর কিছু লিখতে গিয়ে দেখলো,শীলা ওয়াটস্যাপে ওকে ব্লক করে দিয়েছে।
সুমনের খুব রাগ হচ্ছিলো।শীলা ওকে বারবার হাঁদারাম বললো কেন?ওকি সত্যিই হাঁদা নাকি?ও অনেকের চেয়ে চালাক।একবার শীলাকে কাছে পাক।এমন আদর করবে যে শীলা বুঝতে পারবে,ও হাঁদারাম না আইডিয়াল লাভার।
মা দুপুরে আজ কাকিমার বাড়ি গিয়েছিলো।দু দিন আগেও বলেছে যাবে না তবু গেল।কি জানি,সত্যিই কি ওরা লেসবি করে?
বিকেলে চা করতে করতে মা বললো," তোর বাবা ফোন করেছিলো বাবু।তোর খোঁজ করছিলো।"
সুমনের গলা কেঁপে গেল,"কেন?"
"জানি না,তুই ঠিকমতো পড়ছিস কি না জিজ্ঞেস করছিলো।"
"তুমি কি বললে ?"
"বললাম তো পড়ছিস,এবার তুই কি পড়ছিস তুইই জানিস।"
"বাহ,তুমি জানোনা?"
"জানিনা বাবা।বলছিলো বাড়ি আসবে।আমি বললাম এই করোনার মধ্যে একদম আসতে হবে না।রাতে হয়তো তোকে ফোন করবে।"
রাতে প্রায় একঘন্টা ধরে বাবা ফোনেই উত্তম মধ্যম দিলো।স্যার নাকি বলেছেন,সুমনের আর আগের মতো মনোযোগ নেই পড়ায়।
সুমন শুধু চুপ করে হজম করলো।
মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেছিলো সুমনের।স্যারদের উপর রাগ হচ্ছিলো।ইস,এ সময় যদি শীলার ওয়াটসাপ খোলা থাকতো।ওকে শেয়ার করা যেত।
একবার শুধু বাবাকে মিনমিন করে বলতে পেরেছিলো সেদিন খুব মাথা ধরেছিলো।বাবাকে সত্যিই সুমন ভয় পায় এখনো।
সকলের উপর রাগ করে সুমন ঠিক করলো,আজ রাতে আর পড়বেই না।
মা ঘুমিয়ে পড়েছে।সুমনের ঘুম আসছিলো না কিছুতেই।
শেষে দুদিন আগে করা প্রতিজ্ঞা ভেঙে সুমন আবার মার মেসেঞ্জার লগ অন করে ফেললো।
দুদিন আগে বিমান সাহা আর মার চ্যাট যতদূর পড়েছিল,সেখান থেকেই শুরু করলো।
বিমান "-------মেয়ের সাথে একটা কেলেঙ্কারি করে ফেলেছিলাম।"
মা; কি শুনি।
"তখন আমার মেয়ে ক্লাস নাইনে পড়ে।বাঁকুড়ায় মামা শ্বশুরের ছেলের বিয়েতে বরযাত্রী গিয়েছিলাম একটা ডিসেম্বরে।গ্রামে মাটির দোতলা বাড়ি মেয়েদের।রাতে থাকবো সবাই।পাশের একটা বাড়িতে আমার বৌ ছেলে মেয়ে আর আমার শোবার ব্যবস্থা।"
"তারপর?"
ওখানকার এক ভদ্রলোকের সাথে বিকেল বেলা আলাপ হয়েছিলো।ভদ্রলোক বোধহয় মেয়ের কাকার বন্ধু।সন্ধ্যেবেলা এসে বললেন," চলুন এখনকার দেশী সুরা টেষ্ট করে আসবেন।"
"আর তুমি চলে গেলে? তুমি তো মদ ,সিগারেট খেতে না।"
"কৌতূহল হলো আর কি।তখন কি আর বুঝতে পেরেছি।"
"তারপর?"
"তারপর আর কি?নেশা হয়ে গেল।যে বাড়িতে আমাদের রাতে থাকার ব্যবস্থা সেখানে উনি এসে আমায় রেখে গেলেন। কোনোরকমে চুপচাপ শুয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম।ওদিকে তখন বিয়ে হচ্ছে।"
সোনা,আছো? কিছু বোলছো না যে?"
"আছি,শুনছি।বলো।"
"মাঝরাতে আমার ঘুম ভেঙে গেল।অন্ধকারে গায়ে হাত দিয়ে বুঝলাম।একপাশে ছেলে আর একপাশে বৌ ঘুমোচ্ছে।"
"তারপর?"
"আমার তখনো বোধহয় নেশা কাটেনি।বৌ ভেবে যে মেয়ের গায়ে কখন হাত দিয়েছি।"
"আহা,এতোদিন বৌএর সঙ্গে শুয়েছো আর তফাত বোঝনি?"
**********
"তারপর?"
*************
"যাহ,বুঝতে কি আর পারেনি।"
****************
"এ বাবা,ছি ছি"
*****************
"ঠিক আছে,আমি আর শুনতে চাই না।"
***********************
"সত্যি বলছি,তোমাকেই প্রথম বললাম।বৌকেও কখনো বলিনি।"
"বেশ করেছো।মেয়ে তোমায় ক্ষমা করে দিয়েছে।"
মাঝখানে বিমান অনেকটাই ডিলিট করে দিয়েছে।বোধহয় নিজেরই লিখতে খারাপ লেগেছে।সুমন আন্দাজ করতে পারলো কি হয়েছিলো মেয়ের সাথে বিমানের।
"যাক,ছাড়ো সেসব।তোমার সুরজিতের বাড়ির কথা মনে আছে?"
"থাকবে না আবার।"
"তুমি বুঝতে পেরেছিলে ?"
"খানিকটা আনুমান করেছিলাম।"
"যাহ,তার আগে তো তোমায় চুমু খাওয়া ছাড়া আর কিচ্ছু করিনি।"
"বলেছি না,মেয়েরা সব বোঝে।"
"তুমি কি সেদিন সত্যিই আমার উপর রাগ করেছিলে?"
"জানিনা যাও।সেসব কথা এখন বলে কি হবে।বলেছি না,আমি অতীত ভুলে যেতে চাই।"
সুমনের চোখে ঘুম এসে গিয়েছিলো।কখন যে মোবাইলের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো।
সুমন ঠিক করে ফেললো আজ শীলার কাছে যাবেই যাবে।
মা এগারোটার চা দেবার আগেই আজ স্নান করে ফেললো সুমন।শ্যাম্পু করলো,গালের দুপাশের হাল্কা দাড়ি,গোঁফ কামিয়ে ফেললো।
টী শার্টে ডিউডোরেন্ট স্প্রে করে,চা খেয়ে পেন কেনবার নাম করে বেরিয়ে পড়লো।
সকালে স্যার আসবে না।মা শুধু রান্না ঘর থেকে মনে করিয়ে দিলো," মাস্ক পরে বেরোস বাবু,যেখানে সেখানে হাত দিস না।"
সুমনদের বাড়ি থেকে শীলাদের বাড়ি অনেকটা দুর।একদম পাড়ার শেষ মাথায়।শুনেছিলো,সরু খালের উপর একটা বাঁশের সাঁকো আছে,তার ঠিক আগে । শীলাদের বাড়ীর লাগোয়া একটা চপের দোকানও আছে।
অনেকটা হাঁটার পর দুরে বাঁশের সাঁকোটা দেখার পর উত্তেজনায় বুকের ভেতরটা ধড়াস ধড়াস করতে লাগলো সুমনের।
চপের দোকানে সাদা থান পড়া ঘোমটা দেওয়া বুড়ি মতো একজন ফুলুরী ভাজছে।পাশে ধামা ভরা ঘরে ভাজা লালচে মুড়ি।(মেদিনীপুরে চপ মুড়ি খুব চালু খাবার ।সারাদিন চপের দোকান খোলা থাকে।)
দোকানটার পাশেই একটা মস্ত বাগান।একটু দুরেই বাড়ি দেখা যাচ্ছে।
সুমন দুটো মোচার চপ কিনলো।তারপর আর একটু এগিয়ে একটা ফণি মনসা আর আকন্দ গাছের ঝোঁপের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
দেখলো,পেয়ারা গাছের একটা মোটা ডালে ঝোলানো দোলনায় একটা মেয়ে বসে পেয়ারা খাচ্ছে।ওখান থেকে ওকে কেউ দেখতে পাবে না। সুমনের মনে হলো ও নিশ্চয়ই শীলা । আর শীলাও কি ওকে দেখে ফেলেছে?
শীলা দোলনা থেকে নেমে এদিকেই এগিয়ে আসছে।সুমনের পা দুটো কাঁপতে শুরু করেছে।
কাল কাসুন্দে আর আঁশ শেওড়ার ঝোপ মাড়িয়ে পাঁচিলের কাছে এসে একদম সুমনের মুখোমুখি দাঁড়ালো শীলা।ওর হাতে একটা আধখাওয়া পেয়ারা।
" সুমন দা না?ঐ জঙ্গলে কি করছো?মনসার কাঁটা হাতে ফুটলে হাত পেকে যাবে তো। সাপও থাকে ফণি মনসার কাছে।এদিকে চলে এসো ।"
সুমন আরো নার্ভাস হয়ে ঝোপ থেকে বেরিয়ে এলো।
" এখানে কোথায় এসেছো?"
সুমন কিছু বলতে পারলো না। শুধু কাঁপা কাঁপা গলায় "চপ খাবে?"বলে ঠোঙাটা শীলার দিকে এগিয়ে দিলো ।শীলা হাত বাড়িয়ে ঠোঙাটা নিয়ে একছুটে পেয়ারা গাছতলায় ফিরে গেল।কয়েকবার লাফিয়ে নিচু ডাল থেকে একটা পেয়ারা পেড়ে নিয়ে এসে বললো,"তুমি পেয়ারা খাও তা হলে।"
সুমন পেয়ারা একদম ভালো বাসেনা ।ছাগলের মতো শুধু চিবুতে হয়।তবু না বলবে কি করে?হাত বাড়িয়ে পেয়ারাটা শীলার হাত থেকে নিল।
শীলা চপে কামড় দিয়ে সুমনের একদম কাছে এসে দাঁড়ালো।
শীলা যেন বনদুহিতা।
সাদার উপর সবুজ ছোটো ছোটো ফুল ছাপা,হাত কাটা ম্যাক্সি পরনে।দু কাঁধের দু পাশ দিয়ে চুল ছড়িয়ে কোমরের কাছে নেমে এসেছে।কমলা লেবুর মতো নিটোল বুকদুটো চুলেই খানিকটা ঢাকা পড়েছে ।তলপেট আর দুটো থাইযের আভাস পাওয়া যাচ্ছে ম্যাক্সির ওপর থেকেই।মনে হচ্ছে এক প্যান্টি ছাড়া ভেতরে ব্রা বা টেপ কিছুই পড়েনি শীলা।
দুজনের মাঝখানে এখন শুধু বাঁশের নড়বড়ে বেড়া।
সুমনের দুটো পায়ের কাঁপুনি যেন আরো বেড়ে গেল।শীলা কি বুঝতে পারছে ওর পা কাঁপছে ?বুঝতে পারছে সুমন কেন এসেছে?নয়তো ওর দিকে তাকিয়ে অমন মিট মিট করে হাসছে কেন?
"মাস্ক পরে আছো কেন এখনও?ওটা খোলো।আরে বাবা ,আমার করোনা হয়নি।"
"তবু তুমি কেন পরোনি? " সুমন বললো।
"দুর,আমি তো বাড়িতে রয়েছি।বেরোলে পড়বো।আর এখন তো বাড়ি থেকে বারই হইনা।"
সুমন মাস্কটা খুলতেই শীলা সুমনের মুখের দিকে তাকিয়ে ভেংচে উঠলো।
"ওমা,দাড়ি গোঁফ কামিয়েছো কেন? এ ম্যা,কি বিশ্রী পাকা পাকা লাগছে তোমাকে।"
সুমনকে বিব্রত লাগলো,বললো-
"ঠিক আছে আর কামাবো না।"
শীলা আবার মুখ বাঁকালো।
"বাববাহ,আমি বললে কামাবে না? আমি কে?"
"আমি একটা হোয়াটসআপ করেছিলাম তোমাকে।রিপ্লাই দাও নি কেন?"
"হোয়াটসআপ? কিসের ? আমি দেখিনি তো"
"একটা গুড মর্নিং মেসেজ পাঠিয়েছিলাম।সঙ্গে লিখেছিলাম,from Sumam,তুমি বোধহয় তখন আমার নামটা মনে করতে পারো নি।তাই না?"
ডান পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে মাটি তুলছিল শীলা।মাথা নীচু করেই বললো,
"আমি হোয়াটসআপ করিনা,তাই দেখিও না।"
সুমনের হাঁটু কাঁপা বন্ধ হয়েছিলো।আবার কাঁপতে শুরু করলো।এবার কি করে বলবে শীলাকে?
দেখলো শীলা মাথা নীচু করেই মুচকি মুচকি হাসছে।চপের ঠোঙটা এখনো ওর হাতে ধরা।
সুমন অনেক সাহস সঞ্চয় করে এবার বলতে গেল,তবু গলা কেঁপে গেল।
ভাঙা গলায় বললো
"তোমাকে একটা কথা বলতে এসেছি।অনেক দিন ধরে বলতে চাইছি।বলা হচ্ছে না।"
শীলা মাথা তুলে সুমনের চোখে চোখ রেখেছে তখন।ঠিক সেই সময় বাড়ীর ভেতর থেকে কোনো মহিলার গলা," শীলুউউউউ"।
ত্বরীতে পিছু ফিরে শীলা বললো,"যাই মা।"
তারপর বাগানের আম কাঁঠালের শুকনো পাতায় আওয়াজ তুলে একছুটে বাড়ীর ভেতর অদৃশ্য হয়ে গেল।
সুমন আর বলতে পারলো না," শীলা,আমি তোমাকে ভালবাসি।"
মন খারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরলো সুমন।
শীলাকে বলতে গিয়েও বলা হলো না।আর কবে বলবে? ফের শীলাদের বাড়ি গেলে ওর মা যদি দেখে ফেলে?শীলাদের পাড়ার ছেলেরা যদি কিছু সন্দেহ করে?
শীলা হোয়াটসাপ করে না। এখন কলেজ খোলারও চান্স নেই।
আবার ভাবলো,কি জানি শীলাকে বললে শীলা হয়তো ফিরিয়েই দিত ওকে।
শীলাকে দেখে তো একটুও মনে হলো না,ও সুমনকে ভালবাসতে পারে।ওর নিস্চয়ই অন্য কোনো বয় ফ্রেন্ড আছে ।
শীলার দেওয়া পেয়ারাটা এখনো খায় নি সুমন।সেটা মাকে দিয়ে দিলো।
দুপুরে ভাত খেয়ে একটু জিরিয়ে নিয়ে এবার পড়তে বসলো।আর তখনই হোয়াটসআপে একটা মেসেজ এলার্ট এলো।সুমন সেটা খুলতেই দেখলো,অন্য একটা নম্বর থেকে মেসেজ।
"তুমি একটা হাঁদারাম।
সব কথা কি হোয়াটসআপে বলা যায়।
তারপর একটা ঠোঁটের ইমোজী।"
সুমন যে কি করবে বুঝতে পারছে না।ওর শরীরটা তখন যেন হাওয়ায় ভাসছে।
সুমন লিখলো ," so kind of you "
শীলা জবাব দিলো পাঁচ মিনিট পর।
"হাঁদারাম,বন্ধুকে কেউ kind of u বলে নাকি?"
সুমন লিখলো," sorry,কবে দেখা হবে?"
"হি হি,তুমি কি দু বছর ধরেই অপেক্ষা করে আছো?"
"তুমি দু বছর আগে দেখেছিলে? তবে যে বললে
ওয়াটস্যাপ দেখনা?"
"হাঁদারাম,সব তোমাকে বলবো নাকি?"
"তাহলে তখন রিপ্লাই দাও নি কেন?"
"জানিনা যাও।
শোন।আর ওয়াটস্যাপ কোরো না।মা দেখে ফেলবে।কাল এ সময় আসবো।"
একটা ঠোঁটের ইমোজী পাঠালো শীলা।
সুমনও একটা "লাভ " ইমোজী পাঠিয়ে দিলো।
তারপর আর কিছু লিখতে গিয়ে দেখলো,শীলা ওয়াটস্যাপে ওকে ব্লক করে দিয়েছে।
সুমনের খুব রাগ হচ্ছিলো।শীলা ওকে বারবার হাঁদারাম বললো কেন?ওকি সত্যিই হাঁদা নাকি?ও অনেকের চেয়ে চালাক।একবার শীলাকে কাছে পাক।এমন আদর করবে যে শীলা বুঝতে পারবে,ও হাঁদারাম না আইডিয়াল লাভার।
মা দুপুরে আজ কাকিমার বাড়ি গিয়েছিলো।দু দিন আগেও বলেছে যাবে না তবু গেল।কি জানি,সত্যিই কি ওরা লেসবি করে?
বিকেলে চা করতে করতে মা বললো," তোর বাবা ফোন করেছিলো বাবু।তোর খোঁজ করছিলো।"
সুমনের গলা কেঁপে গেল,"কেন?"
"জানি না,তুই ঠিকমতো পড়ছিস কি না জিজ্ঞেস করছিলো।"
"তুমি কি বললে ?"
"বললাম তো পড়ছিস,এবার তুই কি পড়ছিস তুইই জানিস।"
"বাহ,তুমি জানোনা?"
"জানিনা বাবা।বলছিলো বাড়ি আসবে।আমি বললাম এই করোনার মধ্যে একদম আসতে হবে না।রাতে হয়তো তোকে ফোন করবে।"
রাতে প্রায় একঘন্টা ধরে বাবা ফোনেই উত্তম মধ্যম দিলো।স্যার নাকি বলেছেন,সুমনের আর আগের মতো মনোযোগ নেই পড়ায়।
সুমন শুধু চুপ করে হজম করলো।
মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেছিলো সুমনের।স্যারদের উপর রাগ হচ্ছিলো।ইস,এ সময় যদি শীলার ওয়াটসাপ খোলা থাকতো।ওকে শেয়ার করা যেত।
একবার শুধু বাবাকে মিনমিন করে বলতে পেরেছিলো সেদিন খুব মাথা ধরেছিলো।বাবাকে সত্যিই সুমন ভয় পায় এখনো।
সকলের উপর রাগ করে সুমন ঠিক করলো,আজ রাতে আর পড়বেই না।
মা ঘুমিয়ে পড়েছে।সুমনের ঘুম আসছিলো না কিছুতেই।
শেষে দুদিন আগে করা প্রতিজ্ঞা ভেঙে সুমন আবার মার মেসেঞ্জার লগ অন করে ফেললো।
দুদিন আগে বিমান সাহা আর মার চ্যাট যতদূর পড়েছিল,সেখান থেকেই শুরু করলো।
বিমান "-------মেয়ের সাথে একটা কেলেঙ্কারি করে ফেলেছিলাম।"
মা; কি শুনি।
"তখন আমার মেয়ে ক্লাস নাইনে পড়ে।বাঁকুড়ায় মামা শ্বশুরের ছেলের বিয়েতে বরযাত্রী গিয়েছিলাম একটা ডিসেম্বরে।গ্রামে মাটির দোতলা বাড়ি মেয়েদের।রাতে থাকবো সবাই।পাশের একটা বাড়িতে আমার বৌ ছেলে মেয়ে আর আমার শোবার ব্যবস্থা।"
"তারপর?"
ওখানকার এক ভদ্রলোকের সাথে বিকেল বেলা আলাপ হয়েছিলো।ভদ্রলোক বোধহয় মেয়ের কাকার বন্ধু।সন্ধ্যেবেলা এসে বললেন," চলুন এখনকার দেশী সুরা টেষ্ট করে আসবেন।"
"আর তুমি চলে গেলে? তুমি তো মদ ,সিগারেট খেতে না।"
"কৌতূহল হলো আর কি।তখন কি আর বুঝতে পেরেছি।"
"তারপর?"
"তারপর আর কি?নেশা হয়ে গেল।যে বাড়িতে আমাদের রাতে থাকার ব্যবস্থা সেখানে উনি এসে আমায় রেখে গেলেন। কোনোরকমে চুপচাপ শুয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম।ওদিকে তখন বিয়ে হচ্ছে।"
সোনা,আছো? কিছু বোলছো না যে?"
"আছি,শুনছি।বলো।"
"মাঝরাতে আমার ঘুম ভেঙে গেল।অন্ধকারে গায়ে হাত দিয়ে বুঝলাম।একপাশে ছেলে আর একপাশে বৌ ঘুমোচ্ছে।"
"তারপর?"
"আমার তখনো বোধহয় নেশা কাটেনি।বৌ ভেবে যে মেয়ের গায়ে কখন হাত দিয়েছি।"
"আহা,এতোদিন বৌএর সঙ্গে শুয়েছো আর তফাত বোঝনি?"
**********
"তারপর?"
*************
"যাহ,বুঝতে কি আর পারেনি।"
****************
"এ বাবা,ছি ছি"
*****************
"ঠিক আছে,আমি আর শুনতে চাই না।"
***********************
"সত্যি বলছি,তোমাকেই প্রথম বললাম।বৌকেও কখনো বলিনি।"
"বেশ করেছো।মেয়ে তোমায় ক্ষমা করে দিয়েছে।"
মাঝখানে বিমান অনেকটাই ডিলিট করে দিয়েছে।বোধহয় নিজেরই লিখতে খারাপ লেগেছে।সুমন আন্দাজ করতে পারলো কি হয়েছিলো মেয়ের সাথে বিমানের।
"যাক,ছাড়ো সেসব।তোমার সুরজিতের বাড়ির কথা মনে আছে?"
"থাকবে না আবার।"
"তুমি বুঝতে পেরেছিলে ?"
"খানিকটা আনুমান করেছিলাম।"
"যাহ,তার আগে তো তোমায় চুমু খাওয়া ছাড়া আর কিচ্ছু করিনি।"
"বলেছি না,মেয়েরা সব বোঝে।"
"তুমি কি সেদিন সত্যিই আমার উপর রাগ করেছিলে?"
"জানিনা যাও।সেসব কথা এখন বলে কি হবে।বলেছি না,আমি অতীত ভুলে যেতে চাই।"
সুমনের চোখে ঘুম এসে গিয়েছিলো।কখন যে মোবাইলের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো।