04-02-2022, 10:58 PM
দাদার দিকে তাকালাম, দাদা একমনে লেখাটা পড়ছে, বিরক্ত করলাম না। মিত্রা ক্যামেরা নিয়ে এলো, আমি সন্দীপকে বললাম, দেখ সেদিন এখানে ফাংসনের কিছু ছবি তোলা আছে, তার মধ্যে এদের দুজনের ছবি পাস কিনা।
ওরা দেখতে আরম্ভ করলো, সত্যি সত্যি পেয়ে গেলো, এমনকি দেবা শেলীর জয়েন্ট ছবিও পেয়ে গেলো। সন্দীপের মুখটা চক চক করে উঠলো। কালকে আমাদের ফ্রন্ট পেজটা এক্সক্লুসিভ হবে।
দাদা আমার লেখা থেকে মুখ তুললেন। বড়মা চায়ের ট্রে হাতে ঢুকলেন। মিত্রা এগিয়ে গেলো।
-ভজু কোথায়।
-নিচে।
-দেখেছো ছেলের কান্ড, একেবারে এ্যাটমবোম।
-ছোটো ছোটো ছেলেগুলো আছে, নাহলে তোমার থোতা মুখ ভোঁতা করে দিতাম। বড়মা বললেন।
ঘর শুদ্ধ সবাই হেসে ফেললো।
-তোমার পড়া হয়েছে।
-হ্যাঁ।
-কোমন বুঝছো।
-না তোর প্ল্যান ঠিক আছে। কিন্তু ডকুমেন্টস, ডকুমেন্টস ছাড়া এ লেখা ছাপবো না।
-দিচ্ছি। বড়মা।
বড়মা আমার দিকে তাকালেন।
-তুমি একটু রান্নাঘরে যাও।
-কেনো।
-তোমার রান্নাঘরের ওপরে যে দেয়াল আলমাড়িটা আছে, পাল্লাটা খুলবে, ডান দিকে হাত দেবে দেখবে দুটো ক্যালেন্ডার আছে, ব্রাউন কাগজে মোড়া।
-আমি ওপরে উঠবো কেমন করে।
-ভজুকে বলো পেরে দেবে।
-তোর ডকুমেন্টস রান্নাঘরে। দাদা বললেন।
-হ্যাঁ, তাহলে কোথায় রাখবো। তোমার আলমাড়িতে।
বড়মা একবার তাকালেন দাদার দিকে। চোখের চাহুনিতেই সব বুঝিয়ে দিলেন। দাদা হাসতে হাসতে চায়ে চুমুক দিলো, মল্লিকদার দিকে তাকিয়ে বললাম, নিস্তব্ধে সব দেখলে এতোক্ষণ বসে বসে কাজটা ঠিকঠাক ভাবে কো-অর্ডিনেট করে বার করবে।
-আমাদের ফটোগ্রাফার পাঠাবি না। মল্লিকদা বললেন।
-এই দুটোর যে কোন একজন ফটো তুলবে। তাও ক্যামেরায় না, মোবাইলে। ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম, কিরে পারবি না তোরা।
ওরা মাথা দোলালো।
সন্দীপকে বললাম, তোদের হয়েছে, দেরি করছিস কেনো, আমার হাতে সময় নেই। এবার একটা ছোট্ট মিটিং করতে হবে।
-হ্যাঁ আমরা রেডি।
ওরা দেখতে আরম্ভ করলো, সত্যি সত্যি পেয়ে গেলো, এমনকি দেবা শেলীর জয়েন্ট ছবিও পেয়ে গেলো। সন্দীপের মুখটা চক চক করে উঠলো। কালকে আমাদের ফ্রন্ট পেজটা এক্সক্লুসিভ হবে।
দাদা আমার লেখা থেকে মুখ তুললেন। বড়মা চায়ের ট্রে হাতে ঢুকলেন। মিত্রা এগিয়ে গেলো।
-ভজু কোথায়।
-নিচে।
-দেখেছো ছেলের কান্ড, একেবারে এ্যাটমবোম।
-ছোটো ছোটো ছেলেগুলো আছে, নাহলে তোমার থোতা মুখ ভোঁতা করে দিতাম। বড়মা বললেন।
ঘর শুদ্ধ সবাই হেসে ফেললো।
-তোমার পড়া হয়েছে।
-হ্যাঁ।
-কোমন বুঝছো।
-না তোর প্ল্যান ঠিক আছে। কিন্তু ডকুমেন্টস, ডকুমেন্টস ছাড়া এ লেখা ছাপবো না।
-দিচ্ছি। বড়মা।
বড়মা আমার দিকে তাকালেন।
-তুমি একটু রান্নাঘরে যাও।
-কেনো।
-তোমার রান্নাঘরের ওপরে যে দেয়াল আলমাড়িটা আছে, পাল্লাটা খুলবে, ডান দিকে হাত দেবে দেখবে দুটো ক্যালেন্ডার আছে, ব্রাউন কাগজে মোড়া।
-আমি ওপরে উঠবো কেমন করে।
-ভজুকে বলো পেরে দেবে।
-তোর ডকুমেন্টস রান্নাঘরে। দাদা বললেন।
-হ্যাঁ, তাহলে কোথায় রাখবো। তোমার আলমাড়িতে।
বড়মা একবার তাকালেন দাদার দিকে। চোখের চাহুনিতেই সব বুঝিয়ে দিলেন। দাদা হাসতে হাসতে চায়ে চুমুক দিলো, মল্লিকদার দিকে তাকিয়ে বললাম, নিস্তব্ধে সব দেখলে এতোক্ষণ বসে বসে কাজটা ঠিকঠাক ভাবে কো-অর্ডিনেট করে বার করবে।
-আমাদের ফটোগ্রাফার পাঠাবি না। মল্লিকদা বললেন।
-এই দুটোর যে কোন একজন ফটো তুলবে। তাও ক্যামেরায় না, মোবাইলে। ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম, কিরে পারবি না তোরা।
ওরা মাথা দোলালো।
সন্দীপকে বললাম, তোদের হয়েছে, দেরি করছিস কেনো, আমার হাতে সময় নেই। এবার একটা ছোট্ট মিটিং করতে হবে।
-হ্যাঁ আমরা রেডি।
ভজু কচুরির ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
-কিরে তুই, বড়মা ছোটমা কোথায়।
-নিচে, তোমায় একবার ডাকছে, ভজুর চোখ ভারি ভারি।
মিত্রাকেও দেখতে পেলাম না। ভজুর চোখ ছল ছলে। বুঝলাম নিচে কিছু একটা হয়েছে। তোরা কাজ কর আমি আসছি, বলে নিচে চলে এলাম।
নিচে যে দৃশ্য দেখলাম তার জন্য আমি কখনই প্রস্তুত ছিলাম না, আমি কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি এরকম দৃশ্য দেখবো।
অমি অনেকক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম, ইসলাম ভাই ছোটমাকে জড়িয়ে ধরে ঝড় ঝড় করে কাঁদছে, ছোটমাও কাঁদছেন ইসলাম ভাইকে জড়িয়ে ধরে, বড়মা ছোটমার মাথায় হাত বোলাচ্ছেন, বড়মার চোখদুটো জবা ফুলের মতো লাল, আমি ব্যাপারটা ঠিক হজম করতে পারছি না, মিত্রা আমার কাছে এগিয়ে এলো, ভজু আমার পেছনে, মনে হচ্ছে এই ব্যাপারটা নিস্তব্ধে ঘটে যাচ্ছে, কেউ জানে না। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ, স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে আছি। মিত্রা আমার হাতটা ধরে কাঁধে মাথা রাখলো, মিত্রাও কাঁদছে। ভজুর দিকে ফিরে তাকালাম, ভজুও চোখ মুছছে।
ইসলাম ভাইকে আমি কোনোদিন কাঁদতে দেখি নি, অনেক কাছ থেকে ওকে দেখেছি, হয়তো ওর টিমের অনেকের ওকে ওইভাবে দেখার সৌভাগ্য হয় নি, এতো ঝড় ঝাপটা ওর ওপর দিয়ে গেছে, তবু ওর চোখে কোনো দিন জল দেখি নি, মেরিনা বিবির মৃত্যুর সময়ও নয়, মেরিনা বিবির কবরে মাটি দেওয়ার পর, আমার হাত ধরে খালি বলেছিলো, এটা তুই নিউজ করিস না, সব গজব হয়ে যাবে, আমি জানি কে মেরেছে, আমি আগে তাকে দেখি তারপর তুই নিউজ করিস, আমি কথা রেখেছিলাম, ইসলাম ভাইকে নিয়ে আমি কাগজে ধারাবাহিক লিখে বাঁচিয়ে দিয়েছিলাম, কোর্টে সাক্ষীও দিয়েছিলাম, আমার উত্তরণ ইসলাম ভাই-এর হাত ধরে, সেই সময় মেরিনা বিবি ফাঁক পেলেই আমার কাছে প্রায়ই আসতো, অনেক কথা বলতো, একদিন কথায় কথায় ইসলাম ভাই-এর সম্বন্ধে অনেক কথা বলেছিলো, ইসলাম ভাইও আমাকে নিজের সম্বন্ধে অনেক গল্প করেছে, ও পাক্কা পাঠান বংশের ছেলে, আমাকে একদিন গল্প করেছিলো খান সৈয়দ মোগল পাঠান এই চার ভাই-এর গল্প। দারুন বলেছিলো, তখনই বুঝেছিলাম ইসলাম ভাই-এর পেছনেও একটা কিছু আছে, বার বার আমায় বলতো, “অনি আমি যখন থাকবো না, আমাকে নিয়ে একটা গল্প লিখিস।”
বড়মা এগিয়ে এলেন, ধরা গলায় বললেন, আয় ভেতরে আয়, তুই তো নিজেই পীরসাহেব, এটা জানিস না।
আমার সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। আমার অঙ্ক কিছুতেই মেলাতে পারছি না। কাছে এসে দেখলাম ছোটমা ইসলাম ভাই দুজনের চোখ বন্ধ। চোখের কোল বয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পরছে।
-ছোটো, চোখ খোল অনি এসেছে। বড়মা বললেন।
ছোটোমা মাথা দোলাচ্ছে।
-দেখ ও তোর থেকে অনেক ছোট, কিন্তু ওর বুকটা ছোট নয় ও সব শোনার পর তোকে মেনে নেবে।
-না না দিদি ও আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না।
-কি বলছিস তুই, তুই ওর ছোটোমা।
-না না ও আমার সব শুনলে আজ থেকে আমাকে আর ছোটোমা বলে ডাকবে না।
-আমি বলছি, তুই শোন।
-না দিদি না।
আমার মাথাটা কেমন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে, আমি ওখানে দাঁড়ালাম না, বড়মাকে বললাম, দাঁড়াও আমি একটু আসছি ওপর থেকে, আমি ছুটে ওপরে চলে এলাম। ওপরে সবাই ঠিক আছে, নিচের গন্ধ ওপরে আসে নি। সন্দীপকে বললাম, কিরে তোদের হলো।
-হ্যাঁ।
দাদাকে বললাম, তুমি এবার বলো স্টোরিটা কি ভাবে সাজাবে।
দাদা দাদার মতো বলে গেলেন, মল্লিকদা মল্লিকদার মতামত দিলেন, সন্দীপকে বললাম তোর কিছু বলার আছে। সন্দীপ চুপচাপ থাকলো। আমি টেবিলের ওপর থেকে কাগজ পেন বার করলাম, ড্রইং করে বুঝিয়ে দিলাম, কোথায় ছবি ইনসার্ট হবে, কোথায় দিবাকরের লেখাটা যাবে, কিভাবে দিবাকরের সঙ্গে মলের লেখাটা টুইস্ট করা হবে। কালকের প্রথম পেজটা সম্বন্ধে আমি কি ছবি দেখতে চাইছি সেটা ওদের ভালো করে বুঝিয়ে দিলাম।
ভজু সনাতনবাবুকে নিয়ে এলো আমার ঘরে।
-এতো দেরি।
-ছোটোবাবু আমার একটা ছোটো সংসার আছে।
-বসুন।
ছেলেদুটোর দিকে তাকিয়ে বললাম, সকালে যিনি এসেছিলেন, তিনি এই দুটো ঠিকানায় যাবেন, তোমরা দুজনে দুটো বাড়ি ফলোআপ করবে, নিউজ আমার সলিড চাই, ডিটেলসে, তোমরাই লিখবে, কালকে ফার্স্ট পেজে তোমাদের নিউজ যাবে এটা মনে রাখবে। দ্বীপায়নের দিকে তাকিয়ে বললাম, বাড়ি গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে এখুনি অফিসে যাও। আজকের ফার্স্টপেজের দায়িত্ব তোমার, তোমায় যদি আর্টডিরেক্টর কিছু বলেন, আমায় ফোন করতে বলবে। দাদা মল্লিকদা টোটাল ব্যাপারটা কোঅর্ডিনেট করবে।
তোমরা এখুনি বেরিয়ে যাও কাজ শুরু করো। আমি মানি পার্টস থেকে সন্দীপের হাতে পাঁচটা এক হাজার টাকার নোট দিয়ে বললাম, এটা রাখ, বাকিটা অফিস থেকে বিল করে নিয়ে নিবি। ছেলে দুটোকে ডাকলাম, এই শোনো আজ সারাদিন অফিসের গাড়ি ব্যাবহার করবে না, সন্দীপ তুইও না, শেষ কথা আমার কাজ চাই এটা মাথায় রাখবি। কেউ আমায় ফোন করবি না, আমি তোদের ফোন করবো। তোমাদের কোনো প্রবলেম হলে সন্দীপকে ফোন করবে দাদা কিংবা মল্লিকদার ফোনে রিং করবে না।
-আচ্ছা। ওরা বেরিয়ে গেলো।
আমি সনাতন বাবুর দিকে তাকালাম, তিনটে শোকজের নোটিস লিখে ফেলুন, একটা সুনীতদার নামে একটা কিংশুকের নামে আর একটা অতীশবাবুর নামে। অফিসে গিয়ে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিন, কি লিখতে হবে বলে দিতে হবে।
-না।
-ডকুমেন্টস আমি দেবো।
-অফিস থেকে কখন ম্যাসেঞ্জার যাবে দাদাকে বলে দেবো। দাদা আপনাকে বলে দেবেন। ওরকম ভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো।
-না মানে আমি কিছু বুঝলাম না।
-বেশি বুঝতে যাবেন না, বিপদে পরে যাবেন, এখন যা বলে যাচ্ছি অন্ধের মতো ফলোআপ করুন।
-ঠিক আছে ঠিক আছে।
-এবার আপনি আসুন, অফিসে গিয়ে আগে কাজগুলো সেরে ফেলুন।
সনাতনবাবু চলে গেলেন।
-দাদাকে বললাম দেখো, আমার ফোন বন্ধ থাকবে, তুমি আমাকে পাবে না, মিত্রাকেও পাবে না, বড়মার ফোনে ফোন করবে, আমি পরশুদিন ফিরে আসবো। তোমার ওপর একটু চাপ আসতে পারে।
-সে তোকে বলতে হবে না, আমি ঠিক সামলে দেবো।
-মল্লিকদা তুমি কিন্তু দাদার পাশে পাশে থাকবে। একটু কিছু হলেই আমাকে জানাবে।
ঠিক আছে।
-তোমরা নিচে যাও, সকাল থেকে তোমাদের অনেক টেনসন দিলাম।
-নারে অনি তুই যে খেলা খেললি, এটা একটা মানুষকে খুন করার থেকেও বেশি।