Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
আমি আবার ফোন করলাম।
-হ্যাঁ বল, অনি।
-খোঁজ পেলে।
-না।
-তোমায় মল ফোন করেছিলো।
-হ্যাঁ, বললো তাড়াতাড়ি ডিসিসান দিতে।
-কি বললে।
-অনেক টাকার অফার দিচ্ছে।
-কি করবে।
-ভাবছি।
-আমি ঘুঁটি সাজিয়ে নিয়েছি। কাজ শুরু করে দিয়েছি। কোনটা চাও টাকা, না জীবন।
-তুই আমাকে মেরে দিবি!
-অনি কোনোদিন কাউকে মারে না তুমি জানো। আর ইসলাম ভাইকে সে কোনোদিন মারবে না, বরং ইসলাম ভাই সে ভুল করতে পারে।
-ইস অনি আজ শুক্রবার, আমাদের জুম্মাবার, তুই একথা বলতে পারলি।
-তুমি জানো ভালো করে, অনি যেখানে হাত দেবে, তার শেষ দেখে ছাড়বে। এর প্রমাণ মেরিনা বহিনের সময় তুমি পেয়েছো।
-ওই একটা ব্যাপারে আমি সারাজীবন তোর কাছে ঋণী থাকবো।
-বলো কি করতে চাও।
-তুই বল আমায় কি করতে হবে।
-তুমি মলকে ফোন করে বলে দাও, বিকেল পযর্ন্ত ওর কাছে রাখতে, আমি সাসপেক্ট করছি, এই মুহূর্তে অতীশবাবু, দিবাকর সুনীতদার বাড়িতে আছে।
-তুই সত্যি গুরুদেবে, খবরটা তুই পেলি কোথায়।
-আমার পীরসাহেব এখন মাথার ওপর বসে আছে, ও আমাকে বলে দিলো, এও বললো, আমি এই মুহূর্তে কোনো অন্যায় কাজ করবো না।
-তুই বল আমায় কি করতে হবে, আমি তোর গোলাম।
-আমার বাড়ি চলে এসো।
-কোথায়, তোর ফ্ল্যাটে?
-না। দাদার বাড়িতে। আর শোনো ট্যাক্সি নিয়ে আসবে। দূরে ছেড়ে দেবে, রিক্সা করে আসবে, মেসিন সঙ্গে রাখবে।
-আমাকে নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবে না। আমি ঠিক পৌঁছে যাবো।
দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম, এবার তোমায় একটা সাহায্য করতে হবে।
-বল কি করতে হবে।
ছোটমা চা নিয়ে এলো, মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, তোর হাতের ঠান্ডা ভাবটা এবার গরম হয়েছে, টেনসন অনেকটা হজম করেছিস, ওঠনা ছোটমার সঙ্গে একটু কাজ করনা, নির্জীবের মতো ঠায় বসে আছিস কেনো। আমি কি মরে যাচ্ছি, এমন ভাবে বসে আছিস।
মিত্রা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে, নড়ে চরে বসলো।
বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম, কতোক্ষণ দাঁড়াবে, একটু বোসো, এবার বুঝতে পারছো আমি করতে যাচ্ছি।
-একটু একটু বুঝছি।
-বোসো, সব বোঝাবো।
-তোর কি এগুলো মুখস্ত ছিলো।
-কি।
-তুই পড়া মুখস্তর মতো কাজ করছিস।
হেসে ফেললাম।
-জানো বড়মা ঘা খেতে খেতে নিজে ঘেয়োকুত্তা হয়ে গেছি, ওই যে ভজুকে দেখতে পাচ্ছ, ও আমার অনেক কাজের সাক্ষী।
দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি যা যা বলছি তুমি শোনো, তুমি খালি ফোন করে জানতে চাইবে।
-বল।
-ভবানী ভবনে ফোন করো, জানতে চাও আমাদের ওই থানার কথা বলে এই রকম কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা, ঘটলে ওরা কি সাসপেক্ট করছে। তোমার পরিচয় দিয়ে ফোন করবে।
-তাহলে তোদের ওখানকার এসপিকে ফোন করি।
-এই তো তোমার মাথা কাজ করতে শুরু করেছে। বাকিটা তোমায় বলতে হবে না। তারপর তোমার জেলা সভাধিপতিকে বলে দাও, অনাদির গায়ে যেনো হাত না পরে। অমল দায়টা ওর ঘাড়ে চাপিয়ে ওর রাজনৈতিক কেরিয়ার বুমেরাং করতে চাইছে। নিরঞ্জন তোমার কাছের লোক।
-ওটা ও পারবে না, আমি ফোন করবো, ওকে এসপিকে ফোন করতে বল। বড়মা বললেন।
আমি বড়মার দিকে তাকালাম, একটু অবাক হলাম। আমার চোখের কথা বড়মা পরে ফেললো।
-ভাবছিস বড়মার সঙ্গে নিরঞ্জনের পরিচয় কি করে হলো। তুই আমার কাছে কনফেস করেছিস, আমিও তোর কাছে কনফেস করবো। ঠিক সময়ে।
ছোটমা চা নিয়ে এলো। মিত্রা সকলকে এগিয়ে দিলো। ভজু ছোটমার পেছনে। ট্রে ধরে দাঁড়িয়ে।
অমিতাভদা এসপিকে ফোন করলেন। উনি খবরের সত্যতা স্বীকার করলেন। বললেন, সাসাপেক্ট করছি মার্ডার, ছেলেটা বেপাত্তা, ওর বাবা-মাকে থানায় নিয়ে এসেছে।
-আচ্ছা।
-এখন খবর করবেন না, আপনি দুপুরের দিকে ফোন করুন, আমি ডিটেলস দেবো।
-কেনো, কোনো পলিটিক্যাল ইস্যু আছে নাকি।
-সে রকম একটা গন্ধ পাচ্ছি। ছেলেটি ওখানকার পঞ্চায়েতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ওকে ইনটরোগেট করেছি। দিবাকর ছেলেটা নাকি আপনার অফিস নিয়েও কি গন্ডগোল করেছে শুনছি।
-হ্যাঁ সেই জন্যই তো আপনার কাছে বিষয়টা জানতে চাইছি, আমার অফিসের কেউ জড়িত কিনা।
-কি করে বলি বলুনতো দাদা, কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়ায় কিছুই বলতে পারছি না।
-ঠিক আছে।
-আপনার কাছে কোনো খবর থাকলে যদি একটু হেল্প করেন।
-দুপুরে কথা হবে।
 
-অরিজিন্যাল ব্যাপারটা বুঝলে। আমি দাদাকে বললাম
-বুঝলাম, তোর দূরদৃষ্টি অনেক বেশি।
-দাও দেখি নিরঞ্জনকে ধরে মুখপোড়ার পার্টি করা বের করছি।
-থামো থামো তাড়াহুড়ে করছো কেনো। অনি কি বলে শোনো।
-থামো, নাক টিপলে দুধ বেড়োয় ও কি বলবে আমাকে।
আমি মুখ টিপে হেসে ফেললাম, এই স্পিরিটটা আমার দরকার।
দাদা ফোনটা ডায়াল করে দিলেন।
-কেরে নিরঞ্জন।
-হ্যাঁ দিদি আমি, তুমি এত সকালে।
-মুখপোড়া কোনো খবর রাখিস, আমি এখানে বসে তোদের সব খবর রাখি।
-বাবাঃ তুমি তো এই সাত সকালে খুব ফায়ার মনে হচ্ছে, দাদার সঙ্গে কিছু……
-মরণ তোর দাদার সঙ্গে হতে যাবে কেনো।
-তাহলে।
-তোর ওপর রাগ হচ্ছে।
-আমার ওপর বলো কি হুকুম আছে।
-তোর ওখানে কে একটা খুন হয়েছে।
-আমাদের এখানে, না।
-অনিদের গ্রামে।
-হ্যাঁ।
-আমি আজ ওখানে যাবো বলে ঠিক করেছিলাম, যেতে পারছি না। অনাদি না কে তোর অনিদের গ্রামের পঞ্চায়েত তাক নাকি ফাঁসানো হচ্ছে, তোর অমল না কে সে এটা করছে।
-না না তুমি ভুল শুনেছো।
-তোর কাছ থেকে আমি খবর নেবো, আমি তিরিশ বছর সাংবাদিকের ঘর করছি।
-জানিতো, তুমি এসো, আমি এসকর্টের ব্যবস্থা করছি।
-তার আর দরকার পরবে না, শোন অনাদির যদি কিছু হয়, অনিকে বলবো তোকে আচ্ছা করে দিতে, মনে রাখিস।
-না না তোমার পায়ে পরি অনিকে বলোনা, ও আগুন, ওর বায়োডাটা আমার কাছে আছে, ও ভিজে বেড়াল, ওতো আমার বাবা গো, আমার গদি খেয়ে নেবে, তুমি চাও তোমার ভাইয়ের গদি চলে যাক।
-তাহলে কি করবি।
-তোমায় কথা দিচ্ছি অনাদির গায়ে কেউ হাত দিতে পারবে না।
-মনে থাকে যেনো। আর কাল আমার কাছে এসে দেখা করবি।
-ঠিক আছে। আমি কথা দিলাম।
বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
-কিরে তোর মতো কথা বলতে পারলাম।
আমি বড়মাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ রাখলাম। বাইরে গাড়ির আওয়াজ পেলাম। বুঝলাম সন্দীপ এলো। ভজু ওদের সঙ্গে করে ওপরে নিয়ে এলো ওদের মুখ থম থমে, ফুল টেনসনে আছে। ছোটমা ভজু বেরিয়ে গেলো।
মিত্রাকে বললাম ফোনটা দে।
-তোর, না আমার।
-আমার।
-ওটাতো তোর হাতে।
-সরি।
-দ্বীপায়ন।
-হ্যাঁ দাদা।
-আমার ফোন থেকে কয়েকটা জিনিস সন্দীপের ল্যাপটপে ট্রান্সফার করে নাও। আগে তারপর সব বলছি।
আমি ওকে ফাইলগুলো দেখিয়ে দিলাম। দ্বীপায়ন ল্যাপটপটা টেবিলে রেখে কাজ শুরু করলো।
ভজু মিঃ মুখার্জীকে নিয়ে এলেন। সবার সঙ্গে ওনাকে পরিচয় করিয়ে দিলাম।
উনি বললেন আমার কি সৌভাগ্য, আজ কার মুখ দেখে সকালে উঠেছিলাম এরকম বিগ বিগ লোকের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার সৌভাগ্য হলো।
চা এলো।
সন্দীপকে বললাম আমার খাম দে। সন্দীপ ব্যাগ থেকে সব বার করলো।
এক নম্বর খামটা মিঃ মুখার্জীর হাতে দিয়ে বললাম, চা খেতে খেতে লেখাটা আপনি পরুন, সব ডাটা পাবেন। আপনি বুঝে যাবেন আপনার কাজ কি, আর এর সঙ্গে একটা ফাউ দেবো।
মিঃ মুখার্জী চা খেতে খেতে পড়া শেষ করে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।
-কালকের কাগজে এটা বেরোলে ঝড় বয়ে যাবে সরকারে।
-আপনার।
-এ কাজ আমি করতে পারলে, সত্যি বলছি অনিবাবু আমার ডবল প্রমোশন বাগিয়ে ছাড়বো। এতো বড় কেস আপনি হাতে রেখে দিয়েছেন এতদিন।
-আর একটা কথা শুনুন। আমার অফিসের একটা স্টাফের এ্যাড্রেস আপনাকে দিচ্ছি, যেটা ফাউ বললাম। সেইটাও এই মওকায় ঢু মেরে দিন। সেখানে একজন খুনিকে আপনি পেয়ে যাবেন।
-বলছেন কি।
-আমি তার ছবি আপনাকে দেখিয়ে দিচ্ছি। সন্দীপ হয়ে গেছে।
দ্বীপায়ন আমার দিকে তাকিয়ে বললো। দাদা একটু আসবেন।
আমি কাছে গেলাম, মিত্রা বুঝে গেছে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।
আমি গেলাম দ্বীপায়ন আমায় ইশারায় বললো, এটা।
আমি বললাম, এটাই জীবন্ত দলিলরে পাগল
-এই মেয়েটা কাল মারা গেছে, পুলিশ বলছে সুইসাইড আমি প্রমাণ করে দেবো সুইসাইড নয় মার্ডার। আমার ইচ্ছে ছিলো আজ যাবো না, কিন্তু কথা দিয়েছি বড়মাদের যাবো, তাই আমাকে যেতে হবে।
-তুই থাকলে ভালো হতো। সন্দীপ বললো।
-মিত্রা একটা কাপর সিঁদুর কৌটো আর চুড়ি নিয়ে আয়।
মিত্রা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো।
-সরি সরি আর হবে না। আমি করে ফেলতে পারবো।
-মেনা বোতল এনে দেবো।
-দাদা আছে।
-থাকুক।
-মিঃ মুখার্জী এই সেই ছেলে (দিবাকর) আর এই সেই ব্যাক্তি (সুনীত)। এর সঙ্গে আপনি একেও পাবেন (অতীশ)। খালি অপারেশন হয়ে গেলে আমাকে একবার জানাবেন। আর একটা কথা, জীবনে কোনোদিন এরা যেনো ভেতর থেকে বাইরে বেরোতে না পারে।
-আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। আপনাকে কথা দিলাম।
-দেরি করবেন না আপনার কাজে লেগে পরুন।
আমি সন্দীপের কাছে গেলাম, ছবিগুলো সাজিয়ে দিলাম। মনে পড়ে গেলো মিত্রা ফাংশনের ছবি তুলেছিলো। ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, তুই সেই ফাংশনের ছবি তুলেছিলি না।
-হ্যাঁ।
-তোর মনে পরে তুই দেবা আর শেলির ছবি তুলেছিলি কিনা।
-না মনে পরছে না। সেটাতো ওই অবস্থায় আছে এখনো দেখা হয় নি।
-কোথায় তোর ক্যামেরা।
-নিচে ব্যাগের মধ্যে।
-নিয়ে আয়।
খেয়াল পরলো সেই ছেলে দুটোর দিকে। ওরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমি দেখে হেসে ফেললাম। বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম, ভজুকে বলোনা কচুরী জিলিপি আনতে।
-তোর খিদে পায়।
-এখন পাচ্ছে।
-যাচ্ছি।
আমি এগিয়ে গেলাম, সেই রাতের পর তোমাদের সঙ্গে দেখা হলো।
-দাদাকে তোমার কথা প্রতিদিন জিজ্ঞাসা করি।
-তোমাদের কেনো ডেকেছি বলতো।
-তুমি বলো, যা বলবে তাই করবো।
-খুব রিস্কের কাজ।
-পারবো।
-পারবে।
-তুমি বলনা অনিদা।
-ঠিক আছে বলছি।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 03-02-2022, 08:57 AM



Users browsing this thread: