02-02-2022, 08:20 AM
বড়মা ছোটমা মিত্রার চোখ ছানাবড়া, ওরা এই সাত সকালে আমার কথা শুনে অবাক।
-কি বলছিস তুই।
-এখুনি আমি অনাদিকে ফোন করেছিলাম, বলতে চেয়েছিলাম আধঘন্টার মধ্যে রওনা দিচ্ছি। ও এই কথা শোনালো। দিবাকরের সঙ্গে সুনীতদার ভালো রিলেসন, যে মিত্রাকে নিয়ে রিউমার রটিয়ে একটা বিচ্ছিরি অবস্থা তৈরি করেছিলো আমাদের হাউসে, দেখেছো কি ভাবে আমি তা সামাল দিয়েছি (দাদার দিকে তাকিয়ে) তোমার কথায় আমি তাকে সেই সময় ছেড়ে দিয়েছিলাম। দিবাকর এখন ফেরার, অনাদি থানায় যেহেতু দিবাকর আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমি সন্দেহ করছি, অতীশবাবু আমাদের হেড মেশিনম্যান কাল আসেন নি, আমি সন্দেহ করছি, সুনীতদা কাল খুব তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বেরিয়ে গেছে। সুনীতদার ব্যাপারটা তুমি বলতে পারবে। আমি ঠিক কথা বলছি কিনা।
-হ্যাঁ, সুনীত কাল একটু তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেছে। মুখটা একটু শুকনো শুকনো ছিলো।
-আমি এক্সপেক্ট করছি, ওরা দেবাকে মলের কাছে শেল্টার দিয়েছে। ওরা নিশ্চই দেবাকে এ পৃথিবীতে রাখবে না, ওরা শেষ করে দেবে, দেবা ওদের অনেক কিছু জানে।
-তুই কি করে জানলি।
-আমার থার্ড সেন্স বলছে। বলো তাড়াতাড়ি কি ডিসিশন। তোমাদের আমি অপেক্ষা করতে পারবো না, আমার খেলা এই মুহূর্তে শুরু করতে হবে।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, ব্যবসা করছিস, আমার টেনসন ভাগ করে নিবি বলেছিলি বল কি করবি।
আমি জানি না। আমার কোনো ডিসিশন নেই।
-মল্লিকদা তোমার।
-জানি না দাদা যা বলবে তাই হবে।
দাদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। আমি কি বলবো বল তোর কথা হজম করতে পারছি না।
-তোমাদের দ্বারা কিছু হবে না। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম
-সকাল বেলা তুই সিন ক্রিয়েট করলি কেনো, আজ শেষবারের জন্য বললাম, আমার কাজে তোমরা কেউ বাধা দেবে না, আমি তোমাদের ছেড়ে চলে যাবো। এবার চুপচাপ আমার খেলা দেখে যাও। কোনো কথা বলবে না।
দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম, তোমার ঘরের চাবি কার কাছে।
-একটা আমার কাছে আছে, আর একটা সন্দীপের কাছে।
সন্দীপকে ফোন লাগালাম। ভয়েস অন, রেকর্ডিং অন। সবাই শুনুক।
-গুডমর্নিং স্যার।
-তুই কোথায়।
-তোর গলাটা এরকম কঠিন কঠিন কেনো।
-ফালতু কথা রাখ। যা বলছি তার উত্তর দে।
-জাস্ট বেরোবো অফিস থেকে, গোছাচ্ছি।
-আমার সঙ্গে সেই ছেলেগুলো সেদিন আড্ডা মারছিলো ওরা আছে।
-আছে।
-কজন আছে।
-দুজন আছে। আর সব বেরিয়ে গেছে।
-ওদের থাকতে বল, আমি এখুনি আবার ফোন করবো এখন অফিস থেকে বেরোবি না।
-আচ্ছা।
-আর্ট ডিপার্টমেন্টে কে আছে।
-দ্বীপায়ন আছে। ও এখন আমাদের কাছে, সব এক সঙ্গে বেরোবো।
-দ্বীপায়নকে থাকতে বল।
-আচ্ছা।
-দেখতো সুনীতদা কাল কখন বেরিয়েছে, আর অতীশবাবু কাল এসেছিলো কিনা। আমি তোকে একটু বাদে ফোন করছি।
-গুরু গুরুত্বপূর্ণ কিছু।
-কথা বলতে বারণ করেছি।
-আচ্ছা আচ্ছা।
ওরা সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, কারুর মুখে কোনো শব্দ নেই, মিত্রা আমার পাশে এসে আমার হাতটা চেপে ধরেছে, ওর হাতটা বরফের মতো ঠান্ডা। আমার মুখের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
আমি ফোন ডায়াল করলাম। ভয়েজ অন, রেকর্ডিং অন।
-ইসলাম ভাই।
-আমি জানি তুই ফোন করবি।
-কি করে বুঝলে।
-তুই খবরের গন্ধ পেয়েছিস।
-মালটাকে কোথায় রেখেছো।
-তুই বিশ্বাস কর আমার হাতে এখনো আসে নি। মল আমাকে ফোন করে শেল্টার দেবার কথা বলেছে।
-তুমি দেবে।
-আমি তোকে আর একটু পর ফোন করতাম। মার্ডার কেস। তুই বল।
-আমার কাছে খবর আছে। ও কোথায় আছে।
-তুই আমার গুরু, আজ থেকে সত্যি তোকে আমি গুরু বলে মানছি অনি, আল্লাহ কসম, আমি তোকে গত দেড়মাস ফলো করলাম, তুই আমার থেকে অনেক দূরে এগিয়ে গেছিস, একদিন আমি তোর গুরু ছিলাম, আজ তুই আমার গুরু।
-তুমি তোমার আল্লাহর নামে দিব্যি কাটছো। আমি এই সুযোগ হাত ছাড়া করবো না।
-তুই বল আমি কি করবো, তুই যা বলবি, আমি তাই করবো।
-মল তোমার অনেক ক্ষতি করেছে, এই সুযোগে ওকে ……
-তুই বললে আজই সাঁটিয়ে দেবো। তোকে আগেও বলেছি, তোর কেউ ক্ষতি করবে আমি মেনে নেবো না। তোর দাদা তোকে বারণ করেছে তুই বলেছিস, তাই ছেড়ে দিয়েছি।
-ঠিক আছে, ফোন বন্ধ করবে না, আমি একটু বাদে তোমায় ফোন করবো।
-আচ্ছা।
ছোটমা আমার পায়ের কাছে এসে বললো, অনি তুই আমার মাথায় হাত দিয়ে শপথ কর তুই কোনো অন্যায় কাজ করছিস না।
-আমি তোমাদের সামনে আমার কাজ করছি, কোনো লুকিয়ে চুরিয়ে নয়। কি করি শেষ পযর্ন্ত দেখো, তারপর বলো আমি কোনো অন্যায় করছি কিনা।
-ওই মেয়েটার মুখের দিকে তাকা।
-ওর দিকে তাকাবার সময় নেই, ওর জন্যই তোমাদের সামনে ফেস করছি। ও শক্ত না হলে ওকে শেয়ালে কুকুরে খাবে। তোমরা এটা চাও।
-আমরা সবাই সব জানি, তুই একটু ঠান্ডা হ।
-ঠান্ডা হওয়ার সময় নেই, লোহা গরম হ্যায় মার দো হাতোরা।
-আমি তোর পায়ে ধরছি।
-এ কি করছো বড়মা, তুমি আমার মা।
আমি ছোটমার হাত ধরে গলা জড়িয়ে ধরলাম, তোমরা আমার প্রতি বিশ্বাস হারিও না।
-তোর বড়মার দিকে তাকা।
-সবাইকে দেখা হয়ে গেছে, আমাকে জিততে হবে, আমি হারবো না।
ছোটমা আমার কোলোর ওপর মাথা রেখে ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফললো।
আমি আবার ফোন ধরলাম।
-কি খবর।
-তোর প্রেডিকসন ঠিক, দাদা কাল তাড়াতারি বেরিয়ে গেছে, তার আগেই সুনীতদা ভাগলবা।
-কখন।
-সাতটা নাগাদ এক্যুরেট বলতে পারছি না।
-গুড। অতীশবাবু।
-না কাল অতীশবাবু আসে নি।
-ঠিক আছে।
-তুই এক কাজ কর, দ্বীপায়ন, ওই ছেলেগুলো তোর পাশে আছে।
-হ্যাঁ।
-দাদার ঘরের চাবি তোর কাছে।
-হ্যাঁ।
-দাদার ঘর খোল, দাদার ডানদিকের নীচের ড্রয়ারের একেবারে পেছন দিকে তিনটে খাম আছে, ওটা বার কর, দেখবি ওপরে লেখা আছে, অনি কনফিডেনসিয়াল এক, দুই, তিন। তিনটে খাম একটা কালো গার্ডারে আটকানো আছে। শোন কেউ যেন তোর সঙ্গে না যায়। তুই দাদার ঘরে গিয়ে খোঁজ, আমি তোকে ফোন করছি।
-আচ্ছা।
-তুই আমার ঘরে কবে ঢুকেছিলি!
-আজ থেকে দেড়মাস আগে ওটা বোমা রাখা আছে। তোমায় সব বলে দেবো, কালকের কাগজটা আমার মতো করে বের করবে, এটা আমার রিকোয়েস্ট তোমার কাছে, রাখবে।
-তুই বলছিস যখন রাখবো, তোর ওপর বাজি ধরে আমি কোনো দিন হারিনি।
বড়মা রেগে টং, মরণ ছেলেটা কি করছে দেখতে পাচ্ছ না, তুমি হলে তো হার্টফেল করতে।
সবাই হেসে ফেললো। এমনকি ছোটমা চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে কেঁদে, সেও হেসে ফেললো।
-আমি তো অস্বীকার করছি না বড়। কালকে তুমি সব নিজের কানে শুনে এসেছো, আমি এই সময় ওকে বাধা দিলে ও শুনবে। ওর যে এতো সোর্স কি করে জানবো, আমি তো লোক লাগাই নি ওর পেছনে।
-দেখো দেখো কি করে চালাতে হয়, এই পাঁচ কড়ি ছেলের কাছে।
-সত্যি আমি শিখছি বড়।
বড়মা আমার কাছে এসে মাথায় হাত রাখলেন, তুই ঠান্ডা মাথায় কাজ কর। আমি তোকে বলছি, তুই জিতবি।
মিত্রা লজ্জার মাথা খেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। ওর মাথা আমার কাঁধে। বড়মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
আমি সনাতনবাবুকে ফোনে ধরলাম।
-কোথায় আছেন।
-ছোটোবাবু বাড়িতে, সবে ঘুম থেকে উঠলাম।
-এখুনি গাড়ি নিয়ে দাদার বাড়িতে চলে আসুন, প্রশ্ন করবেন না কেনো। ঠিক আছে। আধাঘন্টা সময় দিলাম।
-না মানে।
-এই মুহূর্তে আমার সময় কম, মনে রাখবেন এটা আমার হুইপ।
-আচ্ছা।
ফোনটা কেটে দিলাম। সন্দীপকে ফোন করলাম।
-হ্যাঁ বস পেয়েছি।
-যা যা বলেছিলাম, ঠিক সেই রকম।
-হ্যাঁ।
-তোর ল্যাপটপ তোর কাছে।
-হ্যাঁ।
-সবাইকে নিয়ে দাদার বাড়িতে চলে আয়। আধা ঘন্টার মধ্যে। শোন অফিসের গাড়ি নিয়ে নয়। একটা ট্যাক্সি করে।
-আচ্ছা।
কখন যে ভজু এসে ঘরের এক কোনে, বসে আছে, জানিনা। ও আমার দিকে জুল জুল করে তাকিয়ে হাঁটুর মধ্যে মুখ গুঁজে বসে আছে। ভজুর দিকে তাকিয়ে হাসলাম। ভজুও হাসলো। ভজু আমাকে এ অবস্থায় বহুবার দেখেছে।
আমি আবার ফোন ডায়াল করলাম।
-মিঃ মুখার্জী।
-আরে অনিবাবু এত সকালে। গুড মর্নিং।
-আপনার খাবার রেডি করলাম।
-তাই নাকি।
-কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি, দশটার মধ্যে কজ করে ফেলতে হবে। না হলে পাখি ওড়াং হয়ে যাবে।
-বলেন কি।
-আপনি অনেক দিন আমায় কোন কেস দেন নি। দিলেন দিলেন, এতো শর্ট টাইমে।
-হ্যাঁ। কেসটা আপনি ট্যাকেল করতে পারবেন। আর ঠিক মতো করতে পারলে আপনার ডবল প্রমোশন হয়ে যেতে পারে।
-আপনি যখন বলছেন আমি রিস্ক নেবো।
-তাহলে আপনারা ঘুঁটিগুলো একটু নাড়াচাড়া করে, এখুনি একবার এখানে চলে আসুন, বাড়ির ঠিকানা লিখে নিন।
-বলুন। বললাম।
-একলা আসবেন। কেউ যেনো সঙ্গে না আসে।
-সে আর বলতে। আমি আধাঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছি। দুদশ মিনিট এদিক ওদিক হলে ক্ষমা ঘেন্না করে নেবেন। ফোনটা কেটে দিলাম।
-এটা কে রে, চিন্তে পারলাম না। দাদা বললেন।
-ইনি সিবিআই-এর ইষ্টার্ন জোনের চিফ।
-ছোটো চা নিয়ে এসো, আমি আর পারছি না। দাদা বললেন।
-বাথরুম কাছে আছে চলে যাও, তোমারতো টেনশন হলে পায়খানা পায়। বড়মা বললেন।
সবাই আবার হাসলো। মল্লিকদা কোনো কথা বলছেন না, গাঁট হয়ে বসে আছে, ছোটোমা এতক্ষণে আমার কোল থেকে মাথা তুলে উঠলেন। নিচে গেলেন চা আনতে। দাদা সত্যি সত্যি বাথরুমে গেলো।
মিত্রা ঠায় কাঁধে মাথা দিয়ে বসে আছে।