27-01-2022, 10:42 PM
অনেক দিন থেকে লক্ষ্য করছি মিত্রা এখন মাথায় আর সিঁদুর দেয় না। মাঝে মাঝে ভাবি ওকে একবার জিজ্ঞাসা করি, তারপর আর জিজ্ঞাসা করা হয় না, এখন ও চুলটা উল্টে আঁচড়ায়, বয়সটা যেন কয়েক বছর কমিয়ে ফেলেছে। মিত্রা আমার দিকে ফিরে শুলো, আমার বুকে ওর মুখটা রাখলো।
-বুবুন।
-উঁ।
-তুই কি ভাবছিস বলতো। অনেকক্ষণ থেকে তোকে লক্ষ্য করছি।
-কি ভাববো, কিছু না।
-তুই লুকাচ্ছিস কেনো। বল না।
-সত্যি আমার ভাবার আর কি আছে, কে আছে কার জন্য ভাববো। তোর কোম্পানীর ভবিষ্যত ভাবছি, যা জটিল পরিস্থিতি, যত ঢুকছি, তত যেন গাড্ডায় পরে যাচ্ছি।
-আজকে কোথায় গেছিলাম জিজ্ঞাসা করলি না।
মিত্রার দিকে তাকালাম, আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। চোখে অনেক প্রশ্ন। আমার কপালে হাত দিলো। চোখের পাতায় হাত দিলো।
-তোকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি। কি করবো বল, আমার কে আছে, তুই ছাড়া, আমাকে সবাই ঠকিয়েছে।
-আবার মন খারাপ করে।
-তুই বিশ্বাস কর, অনেক চেষ্টা করি, পারি না। তোকে না পেলে হয়তো জীবনটা শেষই করে ফেলতাম।
-কেনো। এতটাই দুর্বল তুই, আগেতো এরকম ছিলি না।
-সত্যি চাপ কি জিনিষ জানতাম না, শয়তানগুলোর হাতে খেলার পুতুল হয়ে গেছিলাম, কেউ তখন আমার পাশে এসে দাঁড়ায় নি, যাকেই বিশ্বাস করেছি সেইই সব কিছু নিয়ে ভেগে পরার ধান্দা করেছে, এমন কি শরীরটাকে পযর্ন্ত বাদ দেয় নি।
-কে সে বলতে পারবি।
-তুই তাকে শাস্তি দিবি, কিন্তু আমার ছটা বছর ফিরিয়ে দিতে পারবি?
-অন্ততঃ শাস্তি পেয়ে সে এইটুকু বুঝুক তার অন্যায় হয়েছিলো।
-পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে, জানিষ তারা এই জন্য পৃথিবীর আলো দেখে।
-কে সেই ব্যক্তি বললি না।
-আবার কে ওই অমানুষটা।
-সেদিন তুই ওর কাছে গেছিলি কেনো।
-আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলো।
-কেনো।
-ও ভেবেছিলো তোর গলায় মালিকানার লকেট ঝুলিয়ে দিয়ে ও পেছন থেকে খেলবে। তুই একটা গ্রামের ছেলে, গর্ধভ, ওর কাজ গোছাতে অনেক সুবিধা। আমি তোকে জানতাম, তোর সঙ্গে যে আমার একটা রিলেশন ছিলো, তা ওকে বলি নি, বলেছি ফাইনাল হওয়ার পর। আমি সেই সুযোগটা নিলাম। আমার এ ছাড়া বাঁচার কোনো পথ ছিলো না।
-কাঁদবি না, কান্নাকে আমি ঘৃণা করি। পৃথিবীটা কেঁদে ভাসাবার জায়গা নয়, এখানে তোকে লড়ে অর্জন করতে হবে, সোজা আঙুলে না উঠলে বাঁকা আঙুল দেখাতে হবে।
-কাউকেতো আমার বুকটা দেখাতে পারি না, তাই কাঁদি। তুইও মাঝে মাঝে অবুঝপনা করিস।
-বল সেগুলো আমায়। না বললে আমিই বা বুঝবো কি করে কোনটা আমার ভুল কোনটা ঠিক।
-তুই শুনবি আমার কথা।
-শোনার মতো হলে নিশ্চই শুনবো। আমি কাজ করতে চাই, প্রথমে ঘর গোছাবো তারপর শেষ করবো।
-তুই কেনো মলকে সরাতে গেলি, ও তোর প্রতি রিভেঞ্জ নেবে। আমি ওকে চিনি। এতদিন আমাকে দেখিয়ে ওর ব্যবসা করেছে। ক্লাবে কি আমি ইচ্ছে করে গেছি। তুই দেখেছিস কোনো দিন, সেই লাইফস্টাইল কি আমার ছিলো।
-জানি।
-ওরা আমাকে যেদিন টোডির বিছানায় তোলার চেষ্টা করলো সেদিনই আমি সব বুঝতে পারলাম, নিজেকে বাঁচাতে ওরা যা যা বলেছে, তাতে সই করেছি। ওরে ঘর শত্রু যে বিভীষণ আমি কি করবো।
আমি মিত্রার মুখটা বুক থেক তুললাম
- টোডি কে!
-ও বম্বেতে থাকে প্রচুর ক্ষমতা।
-কি করে বুঝলি
-সেন্ট্রালের অনেক মিনিস্টারের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক।
-বেশ, সেই কারণে তার প্রচুর ক্ষমতা। পাগলী।
-আরো আছে। সিআইআই, ফিকির মেম্বার।
-তোকেও বানিয়ে দেবো। তুই জানিষ না, একটা কাগজের ক্ষমতা কতটা।
-সেটা এখন বুঝছি, আগে বুঝতাম না, তুই সেদিন যেভাবে মন্ত্রীটার সঙ্গে কথা বললি, সেদিন একটু একটু বুঝলাম।
-তোর কি মনে হয় আমি পারবো।
মিত্রা আমার বুকে চুমু খেলো
-তোর জন্য আমার বুকটা মাঝ মাঝে ফুলে ওঠে।
-বেশি ফোলাস না দেখতে বাজে লাগবে।
-দেখেছিস। হাসলাম।
-আজকে তোর জন্যই এক জ্যোতিষির কাছে গেছিলাম সবাই।
-আমার জন্য। জ্যোতিষি, সে আবার কি করবে।
-তোর ভবিষ্যত জানতে।
-কার কালেকসন।
-ছোটমার।
-জ্যোতিষি আমার কি ভবিষ্যত বলবে, ও ওর ভবিষ্যত বলতে পারবে।
-এই কথাই সেও বললো।
-কি বললো, ভেরি ইন্টারেস্টিং।
-বড়মা বারণ করেছে তোকে বলতে।
-তাহলে বলিস না।
-তোকে না বললে আমার পেট ফুলে যাবে।
-তাহলে বল।
-তোকে কেউ আটকাতে পারবে না। তুই যে কাজ করবি সেই কাজে সাকসেস হবি। তুই একগুয়ে গোঁয়াড় কারুর কথা শুনবি না।
-আর।
-তোর প্রচুর শত্রু। কিন্তু সবাই তোর কাছে মাথা নোয়াবে।
-তাহলে আমি রাজা লোক বল।
-তুই কিছুতেই সিরিয়াস নস, দেখ তুই কি ভাবে কথা বলছিস।
-তোর মাই দুটো কি ভারিরে, বুক ফেটে যাচ্ছে।
-দেখ দেখ তুই কি রকম।
-আচ্ছা নিজেরটা গুছিয়ে তোকে ছেড়ে কবে পালিয়ে যাব বল।
-তুই আমাকে ছেড়ে কোনোদিন পালাতে পারবি না।
-কেনো।
আমাকে আলাদা ডেকে জিজ্ঞাসা করেছিলো, আমার সঙ্গে তোর ফিজিক্যাল রিলেসন হয়েছে কিনা।
-তুই বোকার মতো সত্যি কথা বললি।
-যা হয়েছে তাই বলেছি, বোকার মতো কেনো।
-তুই বলতে পারতিস হয় নি। তাহলে দেখতিস অন্য কথা বলছে। সব বুজরুকি।
-ঠিক আছে বুজরুকি, তোর ভূত ভবিষ্যত বললো কি করে।
-সেটা কি রকম।
-তোর মা বাবা নেই, তুই পড়াশুনায় দারুণ।
-বলে নি আমি গ্রেট মাগীবাজ।
-সত্যি কথা বলবো।
-বল।
-আমাকে সে কথাও বলেছে। তোর বহু নারীসঙ্গ আছে, আমি যদি তোর সঙ্গে থাকতে চাই তাহলে আমাকে মেনে নিতে হবে।
বুকটা ধড়াস করে উঠলো, মিত্রা আমাকে বুঝতে চাইছে, নাকি জ্যোতিষের গল্প ফেঁদে……।
-নারীসঙ্গ হয়েছে না হবে।
-তা বলতে পারলো না। তবে তোর নারীসঙ্গ আছে।
-এই তো তোর সঙ্গে করছি।
মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
-দিনরাত যখনই সুযোগ পাই তোর মাই টিপি পুশিতে হাত দিই, নুনু খাঁড়া হলে তোর পুশিতে ঢোকাই।
-দেখেছিস তুই। এই সম্বন্ধেও বলেছে।
-কি বলেছে।
-তোকে বোঝা খুব মুস্কিল। কিন্তু তুই যাকে একবার ভালোবাসবি, তার জন্য তুই জীবন দিবি।
-তোর জন্য অবশ্যই এ কাজ করবো না।
-সেই জন্য দুরাত জেগেছিস, রবীনের পেট থেকে কথা বার করে, আমার পৌঁছবার আগে বাড়িতে পৌঁছেছিলি, আমাকে তেঁতুল খাইয়ে বমি করিয়েছিলি, বুড়ীমাসিকে দাঁড় করিয়ে বমি পরিষ্কার করেছিলি, সকালে আমার হাতে একটা ঠেসে থাপ্পর খেয়েছিলি, নিজে কেঁদেছিস, আমাকে কাঁদিয়েছিস, জ্বর হয়েছে রাত জেগেছিস, সারারাত জেগে জেগে মাথায় জলপট্টি দিয়েছিস, আমাকে সুস্থ করে তোলার জন্য নীচ থেকে তেল গরম করে এনে আমার সারা শরীর মালিশ করেছিস।
আমি মিত্রার মাথাটা ধরে বুকে চেপে ধরলাম
-ছাড় আমাকে, বলতে দে, আমারও কিছু বলার থাকতে পারে, আমারও কিছু চাওয়ার থাকতে পারে তোর কাছে, সেটা কোনোদিন বোঝার চেষ্টা করেছিস।
কিছুক্ষণ চুপচাপ
-এরপর কাঁদলে, বলবি কাঁদবি না আমি কান্নাকে ঘেন্না করি। কান্না ছাড়া একটা মেয়ের বলবার কি আছে বলতো। বড়মাকে দেখেছিস, ছোটোমাকে দেখেছিস, তারা তোর সামনে কাঁদে না, তোর আড়ালে তারা বালিশ ভেঁজায়, তোর চোখ আছে সেগুলো দেখার। কেন! কেন! কেন! তারা কাঁদবে তোর জন্য। তুই কে!
আমি মিত্রার মুখটা বুকে চেপে ধরে আছি, বুঝতে পারছি মিত্রার চোখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা জল পরছে, কিছু বললাম না, ভাবলাম একটাই কথা, আমি কি আমার অজান্তে এদের কোথাও আঘাত করে ফেলেছি, যর জন্য ওদের রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসাবে মিত্রা এসব কথা বলছে। খেয়াল করতে পারছি না। এদিকটা এত দিন ভাবি নি, আমি দাদা মল্লিকদার সেফটির কথা ভেবেছি, ওদের আশ্রয় পাকা করেছি, আমি থাকতে ওদের কোনো অসুবিধে হবে না। মিত্রাকে এই মুহূর্তে একটা জায়গায় নিয়ে এসে দাঁড় করিয়েছি, আরো অনেক কাজ বাকি, ওপর তলার কিছু লোককে ছাঁটতে হবে। এই মুহূর্তে নয়, আমাকে আরো ছমাস অপেক্ষা করতে হবে। তার আগে ওখানে দুটো উইং বার করে নিতে হবে। অনাদি চিকনা সেটা পারবে বলে মনে হচ্ছে, প্রত্যেক মানুষের একটা স্বপ্ন থাকে, অনাদির রাজনৈতিক কেরিয়ারের স্বপ্ন আছে, আমাকে সেটা কাজে লাগাতে হবে।