Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
একটা ওভেনে চিকেন বাটারফ্রাই করতে আরম্ভ করলাম, ভজুর ডাল বাটা শেষ হলে আর একদিকের ওভেনে পকোরা তৈরি করতে শুরু করলাম।
বাইরের গেটে গাড়ির আওয়াজ পেলাম। বুঝলাম সবাই এলেন। ভজু বাইরে বেরিয়ে গেছে।
আমি রান্নাঘরে ভাজা ভাজি করছি। মিত্রা এসে ঝড়ের মতো ঢুকলো।
-আরিব্বাশ কি করছিস রে, বলে একটা গরম পকোরা তুলে নিলো, গালে পুরেই চেঁচিয়ে উঠলো বুবুন বুবুন ফুঁ-দে ফুঁ-দে, আমি ওর দিকে তাকালাম, ও হাঁ করে রয়েছে, হেসে ফেললাম, লোভী। আমি ওর হাঁ করা মুখে ফুঁ-দিলাম, বড়মা এসে রান্না ঘরের গেটে দাঁড়ালেন।
-কি করছিস।
-ফুঁ-দিচ্ছি। গরম মুখে তুলেছে ছেঁকা লেগে গেছে।
মিত্রার চোখ জলে ভরে উঠেছে। বড়মা হাসতে হাসতে ডাকলেন ও ছোটো দেখবি আয়।
আমি তখনো মিত্রার মুখে ফুঁ-দিচ্ছি।
ছোটমা আমার আর ওর অবস্থা দেখে হেঁসে কুটি কুটি খাচ্ছে।
-হলো।
-এতো গরম রান্না করে কেউ।
-তোকে কে খেতে বলেছে।
-ছোটমা একটা খাও দেখো কি দারুণ বানিয়েছে।
মিত্রা একটা তুলে ছোটমার মুখে গুঁজে দিলো একটা বড়মার মুখে।
আমি চিকেন ফ্রাইটা একটু উল্টে পাল্টে দিচ্ছি।
-বুঝলি মিত্রা তুই একটা ফাউ পেলি। ছোটমা হাসতে হাসতে বললেন।
-তা বলতে, রান্নার হাত থেকে বাঁচলাম।
-তা বাবুর্চি সাহেব আজকের মেনু।
ছোটমাকে বললাম।
-করেছিস কি তুই। সব শেষ।
-হ্যাঁ শেষের পর্যায়।
-স্যার আমাদের একটু যদি চা দেন।
তাকিয়ে দেখলাম মল্লিকদা। দাদা সোফায় বসে আছেন।
-আরিব্বাস আজ দেখছি রাজযোটক, সবাই একসঙ্গে, মনে হচ্ছে কিছু একটা স্ক্যাম হয়েছে।
-তোর জেনে লাভ। তোকে দুপুরে ডেকেছিলাম, তুই যাস নি।
-একটা চিকেন দিবি। দারুন ভাজছিস। রংটাও হেভি লাগছে।
-খাওয়ার সময় একটা কম পাবি। সব গোনা গুনতি।
-তুই একটা কম খাস। যে রান্না করে সে খায় না, বড়মাকে দেখিস না।
-ভাগ এখান থেকে।
-ছোটমা যাওনা একটা নিয়ে এসো না।
-তুই যা।
-একবারে আসবি না দেবো গরম খুন্তির ছেঁকা দিয়ে।
-সে কি রে। নিজে যখন তুলে খাস।
-আমি পকোরা ভাজা শেষ হতে কড়া নামিয়ে গরম জল বসালাম।
-ওটা কি করবি।
-তোমরা চা খাবে বললে।
-বাবাঃ তোর এতো টনটনে জ্ঞান। ছোটমা বললো।
-যা এবার বেরো, আমি করে নিচ্ছি। বড়মা আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন, মিত্রা একটা ঠ্যাং তুলে নিয়ে খাচ্ছে। -বিউটিফুল।
-সেটা কিরে।
-ঠ্যাংটা।
-আমি ভাত বসাই নি। শেষে বসাবো ঠিক করেছিলাম।
-ঠিক আছে আমি দেখে নিচ্ছি। আমার গালে হাত দিয়ে বললো, তুই একেবারে ঘেমে গেছিস। যা যা জমা ছাড়।
-শুরু হলো।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
-তুই এতো ভালো রান্না কবে থেকে করতে শিখলি।
-তোর জেনে লাভ।
-তোকে দিয়ে মাঝে মাঝে রান্না করাবো। বড়মা আর একটা দেবে।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, রেওভাটের মতো খেয়ে চলেছে।
-কিরে। বড়মা বললেন
-আর একটা ঠ্যাং।
-নে ওখান থেকে।
-সর সর বড়মা পারমিশন দিয়েছে।
মিত্রা আমাকে ঠেলে এগিয়ে গেলো।
-আর খাবি না।
-তুই এত ভালো রান্না করেছিস কেনো। না করলে খেতাম না।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে না হেসে পারলাম না, এতো পরিতৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে, সমস্ত অভিব্যক্তি ওর চোখে মুখে ফুটে উঠেছে।
-রাতে আর খাবি নাতো।
-উঁ, বলেছে। সেই বিকেল থেকে কিছু খাই নি।
-হ্যাঁরে মিত্রা……
-ওঃ ওটা খাওয়া হলো নাকি, কয়েকটা কচুরী আর মিষ্টি। মল্লিকদাটা কিপ্টা, বললো অতো খেলে বাড়িতে গিয়ে আর খেতে পারবে না।
বড়মা ওর কথা শুনে হো হো করে হেসে ফেললেন।
আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ফ্রিজে কিছু আছে।
-সকালের একটু তড়কারি, আর মাছ আছে।
-বড়মা আমার জন্য দুপিস।
-কিসের দুপিস রে। ছোটমা বললেন। ছোটমা রেডি হয়ে চলে এসেছেন।
-সকালের মাছ, মল্লিকদা তখন বললো না। মিত্রা বললো।
-রেখেছিস। আমার দিকে তাকিয়ে।
-আমি রাখি নি। ভজুকে বলেছিলাম, ও খায় নি।
-তুই ওকে খেতে দিস নি।
-কেনো দেবো না, আমি ও একসঙ্গে খেয়েছি।
-ছেলেটাকে না খাইয়ে মারবি নাকি।
-মহা মুস্কিল।
ভজু পেছনে দাঁড়িয়ে হাসছে।
আমি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। সোফায় এসে বসলাম।
অমিতাভদা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কি রে চা কোথায় গেলো।
-আসছে।
-তাহলে তুই কি করছিলি।
আমি চুপ থাকলাম। মিত্রা প্লেটে করে পকোরা নিয়ে এলো, সেন্টার টেবিলে রাখলো, একটা তুলে নিয়ে বললো
-এটা তোর ভাগেরটা নিলাম। তুই একটা কম খাস।
মিত্রা আজ খোশ মেজাজে আছে, ওকে দেখেও ভালো লাগছে। অনেক বেশি ঝরঝরে। দাদা একটা পকোরা তুলে নিয়ে মুখে দিয়ে বললো, টেস্টটা ভালো এনেছিস তো, কি দিয়ে বানালি।
-স্রেফ ডাল বাটা।
মিত্রা কয়েকটা নিয়ে এসে ভজুর হাতে দিলো। ভজুর মহা আনন্দ।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো, দিদিমনি চিলি চিকেন যখন বানাচ্ছিল অনিদা দারুন গন্ধ বেরিয়েছিলো।
-তাই, দাঁড়া একটু খেয়ে দেখি, মেখে ছিলো কে।
-আমি।
মিত্রা রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।
ছোটমা চা নিয়ে এলো।
-হ্যাঁরে ডালে সম্বার দিস নি।
-না। ওই ভাবে খেয়ে দেখো না আজকে।
-তোর বড়মা তাই বললেন।
আমার মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললো, তুই সবেতেই এক্সপার্ট।
সবাইকে আজ খুশি খুশি দেখছি। ঢুকলো সবাই যখন একসাথে, তারমানে একসাথেই কোথাও গেছিলো সব। এদের দুজনের কথাবার্তায়ও মনে হচ্ছে বেশ খোশ মেজাজেই আছে
আমি চায়ে চুমুক দিয়ে দাদাকে বললাম, কাগজ দিয়েছে ওরা।
-হ্যাঁ হ্যাঁ, সনাতন সব দিয়ে গেছে, তোর ঝাড় খাওয়ার পর, ঠাকুর না কে এসেছিলো, যে গাড়ির ব্যাপারটা দেখে।
-কি বললো।
-সনাতন বললো, সে নাকি স্যারেন্ডার করেছে। ব্যাপারটা কি বলতো। তুই পটা পট বিজ্ঞদের মতো সব বলে গেলি, ওরাও মেনে নিলো।
আমি বললাম, প্রত্যেকটা গাড়ি পিছু, তেল কিলোমিটার মিলিয়ে প্রায় পাঁচশো টাকা কিংশুকের পকেটে আসে, আমাদের চারশো গাড়ি আছে, তাহলে বোঝো কত টাকা মাস গেলে ওর পকেটে আসছে। পেমেন্ট যেহেতু ওর হাত দিয়ে যাচ্ছে, অতএব টাকা ওর কাছেই আসবে।
-তুই ধরলি কি করে। আমি কাউকে বলবো না। বল। তোর কাছ থেকে এই গোয়ান্দাগিরিটা শিখতে হবে।
আমি ফিক করে হেসে ফেললাম, মিত্রা বড়মা এসে আমার দু পাশে বসলো, দুজনের হাতেই চায়ের গ্লাস।
-সর না দুকাঠা জায়গা নিয়ে বসে আছিস কেনো।
আমি একটু সরে বসলাম।
-হ্যাঁরে তুই পাকোরাতে কি দিয়েছিস রে।
-কেনো।
-একটা বেশ ভালো গন্ধ ছাড়ছে।
-তোমার ওখানে চাউমিনের মশলা ছিলো একটু দিয়ে দিয়েছি।
-এই বুদ্ধিটাতো কোনো দিন খাটাইনি।
-দিলে তো সব মাটি করে।
-আ মরন, কি হলো আবার।
-আমি অনির কাছ থেকে গোয়েন্দাগিরি শিখছিলাম।
-এই বুড়ো বয়সে। অনি একবারে বলবি না। ও যেমন আছে তেমন থাক। ছেলেটা আগুনের সামনে তেকে সবে উঠে এলো, ওমনি খোঁচানো শুরু হয়ে গেছে না।
-দেখলি অনি, তুই এবার বল কার দোষ।
-ছোটমা আর চা আছে।
ছোটমা রান্নাঘর থেকে বললো, কেনো রে।
-একটু নিয়ে এসো না। তিনজনের জন্য।
-দেখো দেখো কে কাকে দেখে। তুমি নিজে এক গ্লাস নিয়ে এসে বসে গেলে।
-কেনো তুমি খাও নি, তোমায় না দিয়ে গিলছি নাকি।
অমিতাভদা চুপ করে গেলেন।
-মাসে এক লাখ টাকা মানে বছরে বারো লাখ সরাতো। অমিতাভদা বললেন।
-এবার ওটা ব্যাঙ্কে যাবে ঋণ শোধ হবে।
বড়মা আমার দিকে তাকালেন।
-এই ভাবে তুমি যদি দেখো, তাহলে মাসে ড্রেনেজ মানি প্রায় ৫০ লাখ টাকা। বছরে কতো।
দাদা আমার দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে।
-৬ কোটি
-বলিস কি!
-এটাতো খুব সাধারণ ব্যাপার। এ্যাডের ব্যাপারটা যদি তোমায় বলি, তুমি হার্ট ফেল করে যাবে।
-কি রকম।
-আমি এই কদিনে কত কোটি টাকার এ্যাড কালেকসন করেছি।
-১২৫ কোটি।
-এর থার্টি পারসেন্ট আমার কমিশন। তাহলে কত কোটি হলো।
-যাঃ তুই গাঁজাখুরি গল্প বলছিস।
-না দাদা ও ঠিক বলেছে। আমি ওর ঋণ কোনোদিন শোধ করতে পারবো না। মিত্রা মাথা নীচু করে বললো।
চম্পকদা, সুনীতদা এই করে ওই জায়গাটা কিনেছিলো, বকলমে মলের সঙ্গে পার্টনারশিপ করে, নতুন কাগজ বার করবে। কতদিয়ে কিনেছিলো শুনবে।
-কতো।
-৭৫ কোটি টাকায়, তিনটে ফ্লোর ৩০০০০ স্কয়ার ফিট।
ছোটমা কখন এসে চেয়ার নিয়ে বসেছে, জানিনা, ওরা সবাই অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।
-এতো টাকা এরা পেলো কোথায়। বুঝে দেখো।
-কাগজ কে করবে।
-সুনীতদা এডিটর, চম্পকদা এ্যাড দেখবে। তোমার হাতের তৈরি ছেলেগুলোকে নিয়ে পালিয়ে যাবে, কাগজ তৈরি হয়ে যাবে।
-মিত্র আমাকে মালিক বানাবার আগে আমার কাছেই অফার ছিলো, যখন দেখলো আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না, তকন ফোটাবার ধান্দা করলো, কিন্তু মিত্রা যে আমার পূর্ব পরিচিত এটা ওরা ঠিক বুঝতে পারে নি। তাছাড়া তুমি বছরখানেক আগে একবার ওদের ক্লাবের একটা প্রোগ্রামে আমাকে পাঠিয়েছিলে, সেই দিন ওকে দেখলাম, ওর প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে আলাপ করালো ও। ওর বাড়িতে গেলাম। প্রায় ছবছর পর দেখা।
-ছয় না আট বছর। মিত্রা বললো।
-এরপর মিত্রা যে ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরে যেতে পারে ওরা তা ভাবে নি।
-আমার মালিক হওয়ার সংবাদ যখন পাকা হয়ে গেছে মিত্রার সৌজন্যে তখন ওরা তড়িঘড়ি ঘর গোছাতে গেলো, বেশ ফাঁদে পা দিলো, আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম। দেখলাম ওরা টোপ গিললো, ইসলাম ভাইকে সব বললাম। মেইন অপারেটর ও। আমি জানতাম ও বিগড়ালে ভজুর মা দামিনী মাসি আছে। কাজ আমি বার করে নেবই। তা ইসলাম ভাই আমাকে ভালবাসে, সে মযার্দাটুকু রেখেছে। ওকে একসময় আমি ভীষণ হেল্প করেছিলাম।
-মেরিনা মাসি যখন ছিলো তাই না অনিদা। ভজু বললো।
-তোর মনে আছে।
-হ্যাঁ।
ভজু আমার অনেকদিনের সঙ্গী।
ছোটমা উঠে গিয়ে ভজুর মাথায় হাত দিয়ে চুলগুলো নেড়ে দিলেন, ভজু ফিক ফিক করে হাসছে।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 24-01-2022, 07:56 PM



Users browsing this thread: