13-01-2022, 11:34 AM
তেরো
অকাতরে ঘুমোচ্ছে অর্জুন। সারা রাতেই বার বার ওকে দেখছি আমি দরজা খুলে। আর ভেবে চলেছি আমি। ভেবে দেখলাম মরে যাওয়াই ঠিক। দিদি এতো মেরেছে আমাকে গায়ে বেশ ব্যাথা। মাথায় যন্ত্রণা করছে, গালে এত থাপ্পড় মেরেছে দিদি। দরজা খুলে দেখলাম অর্জুন ঘুমোচ্ছে শিশুর মতন। নাহ ভেবে কিছুই পেলাম না আমি। মরন ছাড়া গতি নেই আমার। ভোরের দিকে মনস্থির করে নিলাম মরেই যাব। ঠিক সেই সময়ে দিদির ফোন এলো একটা। ধরলাম না।
আমি পাশের ঘরে গেলাম একটা চেয়ার নিয়ে। এখন শাড়ি পড়ি খুব, শাড়ি নিলাম একটা সিল্কের। ভাবছি, বাস দু মিনিটের খেলা। একবার দেখে নিয়ে ওকে মরে যাব। দরজা খুলে, অর্জুনের পাশে বসলাম। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। আমার হাতের ছোঁয়ায় আরো মুখ টা হাসি হাসি করে আমার দিকেই পাশ ফিরে শুলো। আমি কপালে চুমু খেয়ে বেড়িয়ে এলাম। কলিং বেলের আওয়াজ টা তখনি হলো। জানি দিদি এলো। ফোন না পেয়ে ছুটে এসেছে। হায় রে। এরা বাঁচতেও দেবে না মরতেও দেবে না। খুললাম দরজা।
ঘরে সাজানো মরনের সরঞ্জাম দেখে বলল
- ও মরতে যাচ্ছিলি?
উত্তর দিলাম না আমি। দিদি সেই সব সরঞ্জাম সরিয়ে দিল চোখে সামনে থেকে। সরিয়ে দেওয়া দেখে মনে মনে বললাম, নাহ আজকে মরব না। আগে অর্জুন কি চায় সেটা দেখি। মরে যাওয়া দু মিনিট। কিন্তু সত্যি বলতে কি আমার কাউকে সহ্য হচ্ছে না এখন। দিদিকেও না। ওকে বললাম
- তুই যা। মরব না আজকে। কালকে ওকে বাড়ি পাঠিয়ে তবে ভাবব মরার কথা। আমি জানিনা এখনো ও কি বলতে আমার কাছে এসেছিল। জানতে হবে আমাকে।
- তোরা পালা
দিদির কথায় আমি চমকে উঠে দিদিকে দেখলাম
- হ্যাঁ তোরা পালা। অর্জুনের সাথে তুই বিদেশে পালিয়ে যা।
হাসলাম আমি। মনে মনে ভাবলাম সে সুযোগ আমার ছিল অনেক আগেই। কিন্তু আমি তো চাইনি সেটা। আমি চেয়েছি ও সুস্থ ভাবে বাঁচুক। সমাজে নাম করুক। দশ জনার এক জন হোক। দিদিকে বললাম
- দিদি সে আমি অনেক দিন আগেই করতে পারতাম। করিনি। ওকে বাঁচিয়ে এসেছি গত চার বছর। বললাম না তুই যা এখন। আমাকে ওর সাথে কথা বলতে হবে।
দিদি চলে গেল বিহ্বল চোখ নিয়ে। আহা বেচারী, না পারছে আমাকে ফেলতে। আর সমাজের ব্যাপার টা তো ওকে চিরকাল ই ভাবায়। বেচারী ভয়ে পুরো কাঁপছে।
এগারো টা বাজে সকাল। আমি কলেজে ফোন করে দিয়েছি। আজকে আর যাব না কলেজ। সকালে উঠে স্নান করে রান্না করে রেখেছি। ছেলেটা উঠে হয়ত দুটী খাবে। মরনের সরঞ্জাম সরিয়ে রেখে দিয়েছে দিদি আপাতত। এর মধ্যে দিদি তিনবার এসেছে। নিজেও যায় নি আজকে ইউনিভারসিটি। ভয় ধরে গেছে, প্রাণের থেকেও প্রিয় বোন হয়ত মরবে। একটা ভালো শাড়ি পড়েছি। জানিনা কেন পড়তে ইচ্ছে হলো আজকে খুব। ভাবলাম দেখি সে কি বলে। মরা তো দুমিনিটের ব্যাপার। তাই রেডী হয়েই রইলাম। ওকে বোঝাতে পারলে ভালো, না এই উনত্রিশ বছরের দৌড় ঝাঁপ, পড়াশোনা, জ্ঞান সব আজকে শেষ হয়ে যাবে। ঘরে ঢুকে দেখলাম, ও উঠেছে।
হাসি মুখ করে বললাম
- কি রে ঘুম হলো।
হাসি মুখে বলল।
- খুব ঘুমিয়েছি।
আহা এই হাসি টাই আমার সব। সহসা আমার মুখের দিকে চেয়ে বলল
- একী এ কি অবস্থা তোমার মুখের। দেখি!!!!!!!
- না কিছু না। কি খাবি চা? নাকি স্নান করে নিবি একেবারে ভাত খাবি?
এক লাফে উঠে এসে আমার মুখ টা ধরে দেখে বলল
- এতো মারের দাগ। কে মেরেছে তোমাকে???????????
বাপরে, এতো বজ্রনাদ? আমি চমকে উঠলাম। মুখে রাগ নেই, কিন্তু চোখে এতো মারাত্মক রাগ যে আমি তাকাতে পারছি না ওর দিকে। মনে হচ্ছে সেই রাগে আমি পুড়ে যাব। কাপছে রাগে থর থর করে।
- শোন আমার কথা।
কে শোনে কার কথা। পাগলের মতন চেঁচাচ্ছে তখন ও।
- তুমি শুনতে পাচ্ছ না কি বলছি আমি? কে মেরেছে তোমাকে???????????
- আমার কথা শোন সোনা। কেউ মারে নি। এগুলো আমার পাপ। তুই একটু শান্ত হ। আচ্ছা তোরা সবাই মিলে আমাকে এমনি করলে আমি কি করব বল তো? একটু স্থির হয়ে বসে আমার কথা শোন। তুই এমনি করলে আমার মরা ছাড়া কোন গতি নেই।
আমি আবার সামলাতে পারলাম না নিজেকে। কথা গুলো বলতে বলতে, কেঁদে ফেললাম অর্জুনের সামনেই। কেঁদে ফেললাম, নিজের অসহায়তায়। ওদিকে দিদি বুঝছে না। আর এদিকে অর্জুন, নিজের অধিকারে চেঁচাচ্ছে আমার উপরে। সেও বুঝছে না। ও ভাবছে খুব সাধারন ব্যাপার ওর আমার কাছে এসে থাকা টা। আমার কান্নার দমকে অর্জুন যেন থমকে গেল। আমাকে দুম করে টেনে নিল নিজের বুকে। আমার ও যেন ঐটার ই দরকার ছিল। অর্জুনের চওরা বুকে নিজের যত কান্না ছিল সব কেঁদে ফেললাম। মনে বহু অব্যক্ত কথা বলে ফেললাম হয়ত কান্না দিয়ে। থামেই না যেন। গত বেশ কয়েক বছরের জমানো , নিজের উপরে , ওর উপরে থাকা অভিমান, কস্ট সব কিছু বেড়িয়ে এল কান্না দিয়ে আমার।
অনেকক্ষন বাদে শান্ত হলাম আমি। অর্জুনের দিকে চেয়ে দেখলাম। রেগে নেই আর ও। বরং ওর চোখ ছলছল করছে। আমাকে কাঁদতে দেখেনি তো আগে। ও উঠে গেল। এদিক সেদিক খুঁজে, নিজের সুট কেস থেকে একটু স্যাভলন জাতীয় কিছু এনে আমার মুখে লাগিয়ে দিল। আমি ওকে দেখছিলাম তখন। সব হয়ে গেলে বললাম
- এবারে বলতো বাবা, কি ব্যাপার তোর।
- ব্যাপারের কিছু নেই। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না। আর আমাকে বাবা বাছা করছ কেন? আমি কি তোমার ছেলের বয়সী নাকি? আমাকে ওই রকম বাবা বাছা করবে না একদম বলেদিলাম ।
কথা টা বলতে বলতে রেগে একেবারে অগ্নিশর্মা অর্জুন। আমি থ হয়ে গেলাম শুনে। মনে মনে ভাবলাম এই টা শোনার ই বাকী ছিল আমার। আস্তে করে বললাম
- তবে আর কি, হয়েই গেল।
- কেন? কি হয়ে গেল?
- তুই বুঝিস না এই সম্পর্ক টা নিষিদ্ধ।
- হুম জানি।
- তবে? আমি জানি তুই জড়াবি তাই চলে এলাম খড়গপুর থেকে। ওখানেই আমাকে অফার দিয়েছিল জবের।
- আমি জানি। আমি এটাও জানি, তুমি আমাকে দেখতে হাঁ করে যখন আমি শুয়ে থাকতাম। আমি এটাও জানি, আমাকে কেন বকাবকি করতে আর বলতে অন্য মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব না করতে। তুমি যেমন আমাকে বাঁচাতে চলে এসেছিলে ওখান থেকে, এটা যেমন সত্যি, তেমনি আমার উপরে তোমার ভালোবাসা, এটাও তো সত্যি। কিন্তু তাতে কি হল? আমি তো তখন থেকে না। সে কোন ছোট থেকে তোমাকে ভালবাসি।
একটু থেমে আবার ও বলতে শুরু করল,
- যে যার নিজের দিক টা ভাবলে তোমরা। তুমি ভাবলে তোমার লজ্জা, কাকে কি জবাব দেবে। সে জবাব নেই বলে আমায় ছেড়ে চলে এলে। মনি ভাবছে সমাজের কথা। আমার মা ও হয়ত ভাববে, যে আমার ছেলেকে বশ করেছে। আমি কি ভাবছি, আমি কি চাই সেটা তোমাদের প্রক্সিমিটি তেই নেই। তুমি তো আমাকে প্রলুব্ধ করনি কোনদিন। একজন মাসীর যা কর্তব্য তাই করেছিলে। দোষ তো তোমার ছিল না। তুমি নিজে জড়িয়ে পড়ছ ভেবে চলে এলে। এক বার জিজ্ঞাসা ও করনি আমাকে, যে আমি কি ভাবছি।
আমি হাঁ হয়ে গেলাম ওর কথাগুলো শুনে। ও জানত ওকে আমি দেখতাম? এটাও বুঝেছিল কেন ওকে আমি মেয়েদের সাথে মিশতে মানা করেছিলাম। লজ্জায় মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল আমার। কিন্তু ছোট থেকে ভালোবাসি মানে কি? আর ও কি ভাবছে সেটা আমি কি করে জিজ্ঞাসা করতাম? সেটা কি সম্ভব ছিল? বললাম
- মানে? ছোট থেকে মানে? আর তুই কি ভাববি? ওই বয়সে তোর ভাবনার মধ্যে থাকতই বা কি?
- মানে অনেক ছোট থেকে। যখন তুমি এতো সুন্দরী ছিলে না। হ্যাঁ বলতে পারো বুঝতে পেরেছি সেটা তুমি খড়গপুর থেকে চলে আসার পরে। কিছুতেই মন লাগত না। প্রায় ই গেট থেকে তোমার ফ্ল্যাট টা হাঁ করে চেয়ে আমি দেখতাম। তুমি তো ছেড়ে চলে এলে আমাকে। আর আমার কস্ট টা একবার ও ভেবেছিলে? কি চলছিল আমার ভিতরে? কত খানি ফাঁকা হয়ে গেছিলাম আমি? তোমার কি মনে হতো আমি কেন যেতাম তোমার ডিপার্ট্মেন্ট এ তোমাকে আনতে? আমার ভালো লাগত না ওই ফ্ল্যাট এ তুমি ছাড়া। আর যেদিন তুমি খড়গপুর থেকে চলে এলে, সেদিনে আমার অবস্থা কি হয়েছিল ভাবতে পার? ভেবেছিলাম ইউ এস এ গিয়ে সামলে নেব। পারিনি। উদ্ভ্রান্তের মতন হয়ে গেছিলাম। তুমি যেমন চেস্টা করেছ আমাকে ভুলতে কিন্তু পারনি, আমিও চেস্টা করেছি তোমাকে ভুলতে কিন্তু পারিনি। আমি বুঝেছি কেন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছিলে। আমার ভালোর জন্য। পরিবারের লজ্জার জন্য। তাই আমি কলেজ কমপ্লিট করেছি। না হলে ইচ্ছে করেছিল, চুলোয় যাক পড়াশোনা। তাই আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি। আমাকে ফেলে আসার জন্যেও ক্ষমা করেছি। আর কিন্তু করব না। এটাই লাস্ট। আর এখন আমার উপায় ছিল না। তোমাকে দেখতে না পেলে আমার জানিনা কি হতো। তোমার সাথে কথা বলতে না পারলে আমি হয়ত বার্স্ট হয়ে যেতাম।
ও বলেই চলে...
আর না ভাবার কি আছে? কেন সেই বয়সে আমার কিছু ভাবনা ছিল না? না কি ওই বয়সে ভাবনা থাকে না? আমিও তো আর দশ টা ছেলের মতন তোমাকে চেয়েছিলাম। হ্যাঁ বলতে পার আমি তোমার বুনপো হবার ফায়দা নিয়েছি। না হলে পাত্তাও তো দিতে না।
হাঁ হয়ে গেলাম আমি। অনেক প্রশ্নের উত্তর ও আমাকে দিয়ে দিল। কি বলি আমি? বলতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্চে এই ভাবেই আঁকড়ে ধরে থাকি ওকে। ও নিজেই পড়ে নিক আমার অব্যক্ত কথা গুল। চুপ করে রইলাম দুজনে অনেকক্ষণ। আমি কি বলব খুঁজে পাচ্ছিলাম না। শুধু চোখে জল বার বার ছাপিয়ে আসছে। ইশ এতো কস্ট পেয়েছে ছেলেটা। নিজের কস্ট আমি ভুলেই গেলাম। মনে হলো ভালবাসা টা দুই দিক থেকেই ছিল মারাত্মক রকমের।, তাই কেউ কাউকে ভুলতে পারিনি, দুজনাই কেঁদেছি আড়ালে। কিন্তু ওকে এই ভুল থেকে সরাতেই হবে। ওকে বোঝাতেই হবে আমাদের এক হওয়া সম্ভব না। দরকারে ভয় দেখিয়ে সরাতে হবে। মন কে শক্ত করলাম আমি আবার। মনে হলো দরকারে ওকে বোঝাতে হবে আমি ওকে ছাড়াও বাঁচতে পারব। তাতে যদি ওর একটু মেল ইগো জাগে ।
আমি বললাম ওকে
- তবে তো আমাকে মরতে হয়।
তাতে ওর প্রমট উত্তর এলো
- তাতে কি লাভ হবে? আমাকে বাঁচাতেই তো তুমি মরবে। কিন্তু কথা দিচ্ছি, তাতে লাভ কিছু হবে না। আমি হয়ত মরেই যেতাম কিন্তু এখানে চলে এলাম তোমাকে দেখে দুটো দিন বেশী বাঁচব বলে। আর যদি আমাকে বাঁচানো নয়, লজ্জার জন্য মরবে, তবে আমি বলতে পারি, লজ্জা নিয়ে বাঁচতে আমি প্রস্তুত।
কি যে বলছে ছেলে টা। পাগল হয়ে গেছে ও। ও বুঝতে পারছে না কত বড় লজ্জা এটা। ও কোথাও যেতে পারবে না, মিশতে পারবে না। কোন আত্মীয় বাড়িতে কোন অনুষ্ঠানে একেবারে অছ্যুত হয়ে পড়ব আমরা। কেউ মেনে নেবে না আমাদের। এ কি বিপদে পড়লাম আমি। আমিও যে ওকে ছেড়ে বাঁচব এমন না। কিন্তু ও ওর মতন থাকুক। আর আমি আমার মতন। ও বিয়ে করে সুখী হয়ে ঘর কন্না করুক আর আমি আমার মতন। আমি প্রায় চেঁচিয়ে উঠলাম,
- এরকম কথা বলিস না। দয়া কর। তোর জন্যে আমি সব ছাড়তে পারি। আমি এখান থেকে চলে যাব। তুই কাউকে বিয়ে কর। সুখে সংসার কর। দয়া কর আমাকে।
- তাহলে কি ঠিক হলো তুমি মরবে না তাই তো? কারন তুমি মরলে আমিও মরে যাব কথা দিলাম।
আমি ওর মুখ টা হাত দিয়ে চাপা দিলাম। কি যে সব বলছে কে জানে? ভয় লেগে গেল প্রচন্ড। মরে যাবে আবার কি কথা। ভয়ে ময়ে বলে দিলাম ওকে
- নানা মরব না আমি। কোথাও যাব ও না । আমি তোর আশে পাশেই থাকব। কোন দিন বিয়ে করব না। কিন্তু তুই সংসারী হবি বল কাউকে বিয়ে করে।
- না সেটা হবে না। আচ্ছা একটা কথা বলো, তুমি, বিয়ে করতে পারবে না কেন?
চুপ করে রইলাম আমি। কেন বিয়ে করতে পারব না, এই উত্তর টা ওকে দিলে ওর ভালোবাসা অনেক বেশী শক্তি পেয়ে যাবে। সেটা এখন করতে দিলে হবে না। চুপ করে রইলাম আমি। ও বলল
- আমি বলছি, তুমি আমাকে ছাড়া কাউকে ভাবতেও পারো না। তাই তুমি অন্য কাউকে মেনেও নিতে পারবে না। আর যদি জোর দিয়ে বল, যে তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করবে কালকেই তবে আমিও কথা দিলাম আমিও বিয়ে করব তার পরের দিন ই। কিন্তু ভেবে দেখ, এতে কি তুমি আরো দুটো জীবন নষ্ট করবে না? তার থেকে বেটার অপশন একটা ডিল হোক
ভাবছি এতো কথা ও বলতে পারে বলে আমার জানা ছিল না। বুঝলাম, কেন প্রতি মুহুর্তে আমি ওর প্রেমে পরি। তাও হারলাম না আমি । ওকে বললাম
- কে বলল আমি বিয়ে করতে পারব না। কত ছেলেকে আমার ভালো লাগে তার ঠিক আছে? তুই না হয় মিমি কে জানিস একটা ভালো মেয়ে হিসাবে। কিন্তু তোর জানা টাই তো সব না।
- মানে? হাও মেনি ইউ হ্যাভ স্লেপ্ট উইথ?
সহসা এমন প্রশ্ন শুনে দুম করে মাথা গরম হয়ে গেল । নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখে এই কথা শুনে মেজাজ ঠিক থাকতে পারলাম না আমি। আজকে মনে হয়, সেদিনে এই নিয়ে কথা বার্তা আর একটু চালাতে পারলে লাভ হত। কিন্ত আমি ছিলাম বোকা। তাই সপাটে থাপ্পড় লাগিয়ে দিলাম অর্জুনের গালে। চেঁচিয়ে উঠলাম
- লজ্জা করে না তোর এই কথাটা আমাকে বলতে
অর্জুন গালে সামান্য হাত ও দিল না। আমার দিকে কঠিন ভাবে চেয়ে বলল
- আমার উত্তর আমি পেয়ে গেছি। শোন তোমার কি ইচ্ছে জানার আমার কোন সখ নেই। আমার সিদ্ধান্তই ফাইনাল। দুজনাই বিয়ে করছি না। আমার বেশি চাওয়াও ছিল না। তোমাকে দিনের মাথায় একবার দেখব ব্যস। কাজেই আমি তোমাকে কলেজে দেখে আসব দিনে একবার করে। বা তুমি যেখানে বলবে।
আমি আর কি বলব। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে একেবারে। আর একলা তো আমার জীবন না। আমার একটা স্টেপ ওর জীবন কেই এফেক্ট করবে। কিন্তু বুঝলাম আপাতত ওকে আটকানোর এটাই রাস্তা। না মানলে জানিনা আর কি করে বসবে। পুরুষ মানুষ যখন অধিকার বুঝে যায়, তখন কোন কিছুর তোয়াক্কা করে না। ও বুনপো না হলে আজকেই ফয়সালা করে নিতাম । বয়সে ছোট তো কি হয়েছে। কিন্তু সে তো আর হবার নয়। মেনে নিলাম ওর যুক্তি
- আচ্ছা ডান।আমি রাজী। কিন্তু তোর কাউকে পছন্দ হলে বিয়ে করবি তো?
- তুমি করবে তো কাউকে পছন্দ হলে? বললাম তো, তুমি বিয়ে করলে পরের দিনেই করব।
- আমার কথা আনছিস কেন তুই। তুই পুরুষ মানুষ। মায়ের একমাত্র ছেলে। তোর কিছু হলে যে সর্বনাশ হয়ে যাবে সোনা। আমার কি আছে বল। আমার কথা ভাবিস না অতো। তুই এখন বাড়ি যা। মায়ের কাছে যা।
- প্রথমত এটা জেনে নাও, হ্যাঁ আমরা হয়ত এক হতে পারব না, কিন্তু ভগবান সাক্ষী, তুমি কিন্তু আমার। তুমি ভেব না আমি সেদিনে এমনি এমনি তোমাকে ওখান থেকে আসতে দিয়েছিলাম। আমার ও মনে হয়েছিল, আমার মতই তুমিও জ্বলছ আমাকে না পাবার কস্টে। কিন্তু তোমাকে মার খাবার জন্য আমি ছেড়ে রাখতে পারি না। কাজেই এর পরে থেকে মার খাবে না কিন্তু কারোর কাছে।আমি জানি কে তোমাকে মেরেছে। এই শেষ বারের মতন তাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। আর কিন্তু করব না। তাতে সে আমার মা হলেও না। আজকের পরে , পরে পরে মার কিন্তু তুমি খাবে না। আর আমার সামনে তোমার গায়ে হাত তোলে এমন লোক কে আমি বাঁচিয়ে রাখব না। আর শোণ, এত কথা বলতে আমার ভালো লাগে না। আর কোন দিন ও হয়ত বলব ও না। কিন্তু আমি আশা করব তুমি এর প্রতি টা কথা মেনে চলবে।
হেসে ফেললাম বীর পুঙ্গবের কথা শুনে। বাবাহ আমাকে নাকি ওনার কথা মেনে চলতে হবে। কি একেবারে পুরুষ মানুষ এলেন। অতো কষ্টের মাঝেও জ্বালাতে ইচ্ছে হলো ওকে । দুজন প্রেমী, সর্বক্ষন একে অপর কে পরীক্ষা করে, কে বেশি ভালোবাসে। তাতে নিজের হারে ও দুজনাই খুশী হয়। বললাম
- আর যদি তুই কোন দিন আমার গায়ে হাত তুলিস?
- নিজেকে মেরে ফেলব। কথা দিলাম।
- পাগলা। এই সব কথা বলতে নেই।
- কেন?
- ধর আমি খুব বদমাশ হয়ে গেলাম আর তোর দরকার পড়ল আমাকে মার ধোর করার।
আবার ওর চোখে পুরোন ব্যাপার টা ফিরে এলো। আগের অর্জুনের মতন ভাব ভঙ্গী। লজ্জা পেয়ে বলল
- ধ্যাত। তোমার গায়ে হাত তোলার কথা আমি ভাবতেও পারি না।
- হ্যাঁ রে, ধর আমি অন্য কোন পুরুষের সাথে আমাকে অসভ্যতা করতে দেখলি। তখন
ধরে ছিল ও আমার হাত টা ও । সজোরে টিপে ধরল সেখান টা রাগে। আমি ককিয়ে উঠলাম
- আউ? লাগে না? দেখ কি করলি। আবার নাকি নিজেকে শেষ করে ফেলবে আমাকে মারলে?
- এটা কেমন কথা হলো? আমি কেমন করে সহ্য করি তোমাকে অন্য কারোর সাথে? তুমি এমন করবেই বা কেন? কই আমি তো করতে চাই ও না।
- আচ্ছা আচ্ছা বাবা এবারে ছাড় আমার হাত টা। বড্ড গায়ে জোর বেড়েছে তোর।
ও ছেড়ে দিল। মুখ টা ব্যথিত। বলল
- সরি আর হবে না এমন ভুল।
- ধুর পাগল। আমি কিছু মনে করিনি। ওই সময়ে তুই আমাকে না বকলে আমারি কস্ট হতো।
- তাহলে বল তুমি আমাকে ভালবাস।
- এর পরেও বলে দিতে হবে?
- হ্যাঁ
- আচ্ছা বাসি । খুব ভাল বাসি। এত ভাল আমি আগে কখন কোনদিন কাউকে বাসিনি।
- হুম। আমার কোন শারীরিক লোভ নেই তোমার উপরে। ব্যস এটা বুঝি তুমি ছাড়া আমার জীবনে কোন ভাল জিনিস হতে পারে না
- পাগল। এবারে দুটো খা। খেয়ে মায়ের কাছে যা।
- আচ্ছা।
পাগল টা আনন্দে নাচতে নাচতে বাড়ি চলে গেল। আর আমাকে ফেলে দিয়ে গেল একটা গাড্ডায়। কি যে বলি? বাস আমি ওর, এটা মেনে নিলেই ওর শান্তি। কত সরল। মনের মধ্যে লক্ষ প্রশ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি দরজার সামনে।
অকাতরে ঘুমোচ্ছে অর্জুন। সারা রাতেই বার বার ওকে দেখছি আমি দরজা খুলে। আর ভেবে চলেছি আমি। ভেবে দেখলাম মরে যাওয়াই ঠিক। দিদি এতো মেরেছে আমাকে গায়ে বেশ ব্যাথা। মাথায় যন্ত্রণা করছে, গালে এত থাপ্পড় মেরেছে দিদি। দরজা খুলে দেখলাম অর্জুন ঘুমোচ্ছে শিশুর মতন। নাহ ভেবে কিছুই পেলাম না আমি। মরন ছাড়া গতি নেই আমার। ভোরের দিকে মনস্থির করে নিলাম মরেই যাব। ঠিক সেই সময়ে দিদির ফোন এলো একটা। ধরলাম না।
আমি পাশের ঘরে গেলাম একটা চেয়ার নিয়ে। এখন শাড়ি পড়ি খুব, শাড়ি নিলাম একটা সিল্কের। ভাবছি, বাস দু মিনিটের খেলা। একবার দেখে নিয়ে ওকে মরে যাব। দরজা খুলে, অর্জুনের পাশে বসলাম। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। আমার হাতের ছোঁয়ায় আরো মুখ টা হাসি হাসি করে আমার দিকেই পাশ ফিরে শুলো। আমি কপালে চুমু খেয়ে বেড়িয়ে এলাম। কলিং বেলের আওয়াজ টা তখনি হলো। জানি দিদি এলো। ফোন না পেয়ে ছুটে এসেছে। হায় রে। এরা বাঁচতেও দেবে না মরতেও দেবে না। খুললাম দরজা।
ঘরে সাজানো মরনের সরঞ্জাম দেখে বলল
- ও মরতে যাচ্ছিলি?
উত্তর দিলাম না আমি। দিদি সেই সব সরঞ্জাম সরিয়ে দিল চোখে সামনে থেকে। সরিয়ে দেওয়া দেখে মনে মনে বললাম, নাহ আজকে মরব না। আগে অর্জুন কি চায় সেটা দেখি। মরে যাওয়া দু মিনিট। কিন্তু সত্যি বলতে কি আমার কাউকে সহ্য হচ্ছে না এখন। দিদিকেও না। ওকে বললাম
- তুই যা। মরব না আজকে। কালকে ওকে বাড়ি পাঠিয়ে তবে ভাবব মরার কথা। আমি জানিনা এখনো ও কি বলতে আমার কাছে এসেছিল। জানতে হবে আমাকে।
- তোরা পালা
দিদির কথায় আমি চমকে উঠে দিদিকে দেখলাম
- হ্যাঁ তোরা পালা। অর্জুনের সাথে তুই বিদেশে পালিয়ে যা।
হাসলাম আমি। মনে মনে ভাবলাম সে সুযোগ আমার ছিল অনেক আগেই। কিন্তু আমি তো চাইনি সেটা। আমি চেয়েছি ও সুস্থ ভাবে বাঁচুক। সমাজে নাম করুক। দশ জনার এক জন হোক। দিদিকে বললাম
- দিদি সে আমি অনেক দিন আগেই করতে পারতাম। করিনি। ওকে বাঁচিয়ে এসেছি গত চার বছর। বললাম না তুই যা এখন। আমাকে ওর সাথে কথা বলতে হবে।
দিদি চলে গেল বিহ্বল চোখ নিয়ে। আহা বেচারী, না পারছে আমাকে ফেলতে। আর সমাজের ব্যাপার টা তো ওকে চিরকাল ই ভাবায়। বেচারী ভয়ে পুরো কাঁপছে।
এগারো টা বাজে সকাল। আমি কলেজে ফোন করে দিয়েছি। আজকে আর যাব না কলেজ। সকালে উঠে স্নান করে রান্না করে রেখেছি। ছেলেটা উঠে হয়ত দুটী খাবে। মরনের সরঞ্জাম সরিয়ে রেখে দিয়েছে দিদি আপাতত। এর মধ্যে দিদি তিনবার এসেছে। নিজেও যায় নি আজকে ইউনিভারসিটি। ভয় ধরে গেছে, প্রাণের থেকেও প্রিয় বোন হয়ত মরবে। একটা ভালো শাড়ি পড়েছি। জানিনা কেন পড়তে ইচ্ছে হলো আজকে খুব। ভাবলাম দেখি সে কি বলে। মরা তো দুমিনিটের ব্যাপার। তাই রেডী হয়েই রইলাম। ওকে বোঝাতে পারলে ভালো, না এই উনত্রিশ বছরের দৌড় ঝাঁপ, পড়াশোনা, জ্ঞান সব আজকে শেষ হয়ে যাবে। ঘরে ঢুকে দেখলাম, ও উঠেছে।
হাসি মুখ করে বললাম
- কি রে ঘুম হলো।
হাসি মুখে বলল।
- খুব ঘুমিয়েছি।
আহা এই হাসি টাই আমার সব। সহসা আমার মুখের দিকে চেয়ে বলল
- একী এ কি অবস্থা তোমার মুখের। দেখি!!!!!!!
- না কিছু না। কি খাবি চা? নাকি স্নান করে নিবি একেবারে ভাত খাবি?
এক লাফে উঠে এসে আমার মুখ টা ধরে দেখে বলল
- এতো মারের দাগ। কে মেরেছে তোমাকে???????????
বাপরে, এতো বজ্রনাদ? আমি চমকে উঠলাম। মুখে রাগ নেই, কিন্তু চোখে এতো মারাত্মক রাগ যে আমি তাকাতে পারছি না ওর দিকে। মনে হচ্ছে সেই রাগে আমি পুড়ে যাব। কাপছে রাগে থর থর করে।
- শোন আমার কথা।
কে শোনে কার কথা। পাগলের মতন চেঁচাচ্ছে তখন ও।
- তুমি শুনতে পাচ্ছ না কি বলছি আমি? কে মেরেছে তোমাকে???????????
- আমার কথা শোন সোনা। কেউ মারে নি। এগুলো আমার পাপ। তুই একটু শান্ত হ। আচ্ছা তোরা সবাই মিলে আমাকে এমনি করলে আমি কি করব বল তো? একটু স্থির হয়ে বসে আমার কথা শোন। তুই এমনি করলে আমার মরা ছাড়া কোন গতি নেই।
আমি আবার সামলাতে পারলাম না নিজেকে। কথা গুলো বলতে বলতে, কেঁদে ফেললাম অর্জুনের সামনেই। কেঁদে ফেললাম, নিজের অসহায়তায়। ওদিকে দিদি বুঝছে না। আর এদিকে অর্জুন, নিজের অধিকারে চেঁচাচ্ছে আমার উপরে। সেও বুঝছে না। ও ভাবছে খুব সাধারন ব্যাপার ওর আমার কাছে এসে থাকা টা। আমার কান্নার দমকে অর্জুন যেন থমকে গেল। আমাকে দুম করে টেনে নিল নিজের বুকে। আমার ও যেন ঐটার ই দরকার ছিল। অর্জুনের চওরা বুকে নিজের যত কান্না ছিল সব কেঁদে ফেললাম। মনে বহু অব্যক্ত কথা বলে ফেললাম হয়ত কান্না দিয়ে। থামেই না যেন। গত বেশ কয়েক বছরের জমানো , নিজের উপরে , ওর উপরে থাকা অভিমান, কস্ট সব কিছু বেড়িয়ে এল কান্না দিয়ে আমার।
অনেকক্ষন বাদে শান্ত হলাম আমি। অর্জুনের দিকে চেয়ে দেখলাম। রেগে নেই আর ও। বরং ওর চোখ ছলছল করছে। আমাকে কাঁদতে দেখেনি তো আগে। ও উঠে গেল। এদিক সেদিক খুঁজে, নিজের সুট কেস থেকে একটু স্যাভলন জাতীয় কিছু এনে আমার মুখে লাগিয়ে দিল। আমি ওকে দেখছিলাম তখন। সব হয়ে গেলে বললাম
- এবারে বলতো বাবা, কি ব্যাপার তোর।
- ব্যাপারের কিছু নেই। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না। আর আমাকে বাবা বাছা করছ কেন? আমি কি তোমার ছেলের বয়সী নাকি? আমাকে ওই রকম বাবা বাছা করবে না একদম বলেদিলাম ।
কথা টা বলতে বলতে রেগে একেবারে অগ্নিশর্মা অর্জুন। আমি থ হয়ে গেলাম শুনে। মনে মনে ভাবলাম এই টা শোনার ই বাকী ছিল আমার। আস্তে করে বললাম
- তবে আর কি, হয়েই গেল।
- কেন? কি হয়ে গেল?
- তুই বুঝিস না এই সম্পর্ক টা নিষিদ্ধ।
- হুম জানি।
- তবে? আমি জানি তুই জড়াবি তাই চলে এলাম খড়গপুর থেকে। ওখানেই আমাকে অফার দিয়েছিল জবের।
- আমি জানি। আমি এটাও জানি, তুমি আমাকে দেখতে হাঁ করে যখন আমি শুয়ে থাকতাম। আমি এটাও জানি, আমাকে কেন বকাবকি করতে আর বলতে অন্য মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব না করতে। তুমি যেমন আমাকে বাঁচাতে চলে এসেছিলে ওখান থেকে, এটা যেমন সত্যি, তেমনি আমার উপরে তোমার ভালোবাসা, এটাও তো সত্যি। কিন্তু তাতে কি হল? আমি তো তখন থেকে না। সে কোন ছোট থেকে তোমাকে ভালবাসি।
একটু থেমে আবার ও বলতে শুরু করল,
- যে যার নিজের দিক টা ভাবলে তোমরা। তুমি ভাবলে তোমার লজ্জা, কাকে কি জবাব দেবে। সে জবাব নেই বলে আমায় ছেড়ে চলে এলে। মনি ভাবছে সমাজের কথা। আমার মা ও হয়ত ভাববে, যে আমার ছেলেকে বশ করেছে। আমি কি ভাবছি, আমি কি চাই সেটা তোমাদের প্রক্সিমিটি তেই নেই। তুমি তো আমাকে প্রলুব্ধ করনি কোনদিন। একজন মাসীর যা কর্তব্য তাই করেছিলে। দোষ তো তোমার ছিল না। তুমি নিজে জড়িয়ে পড়ছ ভেবে চলে এলে। এক বার জিজ্ঞাসা ও করনি আমাকে, যে আমি কি ভাবছি।
আমি হাঁ হয়ে গেলাম ওর কথাগুলো শুনে। ও জানত ওকে আমি দেখতাম? এটাও বুঝেছিল কেন ওকে আমি মেয়েদের সাথে মিশতে মানা করেছিলাম। লজ্জায় মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল আমার। কিন্তু ছোট থেকে ভালোবাসি মানে কি? আর ও কি ভাবছে সেটা আমি কি করে জিজ্ঞাসা করতাম? সেটা কি সম্ভব ছিল? বললাম
- মানে? ছোট থেকে মানে? আর তুই কি ভাববি? ওই বয়সে তোর ভাবনার মধ্যে থাকতই বা কি?
- মানে অনেক ছোট থেকে। যখন তুমি এতো সুন্দরী ছিলে না। হ্যাঁ বলতে পারো বুঝতে পেরেছি সেটা তুমি খড়গপুর থেকে চলে আসার পরে। কিছুতেই মন লাগত না। প্রায় ই গেট থেকে তোমার ফ্ল্যাট টা হাঁ করে চেয়ে আমি দেখতাম। তুমি তো ছেড়ে চলে এলে আমাকে। আর আমার কস্ট টা একবার ও ভেবেছিলে? কি চলছিল আমার ভিতরে? কত খানি ফাঁকা হয়ে গেছিলাম আমি? তোমার কি মনে হতো আমি কেন যেতাম তোমার ডিপার্ট্মেন্ট এ তোমাকে আনতে? আমার ভালো লাগত না ওই ফ্ল্যাট এ তুমি ছাড়া। আর যেদিন তুমি খড়গপুর থেকে চলে এলে, সেদিনে আমার অবস্থা কি হয়েছিল ভাবতে পার? ভেবেছিলাম ইউ এস এ গিয়ে সামলে নেব। পারিনি। উদ্ভ্রান্তের মতন হয়ে গেছিলাম। তুমি যেমন চেস্টা করেছ আমাকে ভুলতে কিন্তু পারনি, আমিও চেস্টা করেছি তোমাকে ভুলতে কিন্তু পারিনি। আমি বুঝেছি কেন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছিলে। আমার ভালোর জন্য। পরিবারের লজ্জার জন্য। তাই আমি কলেজ কমপ্লিট করেছি। না হলে ইচ্ছে করেছিল, চুলোয় যাক পড়াশোনা। তাই আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি। আমাকে ফেলে আসার জন্যেও ক্ষমা করেছি। আর কিন্তু করব না। এটাই লাস্ট। আর এখন আমার উপায় ছিল না। তোমাকে দেখতে না পেলে আমার জানিনা কি হতো। তোমার সাথে কথা বলতে না পারলে আমি হয়ত বার্স্ট হয়ে যেতাম।
ও বলেই চলে...
আর না ভাবার কি আছে? কেন সেই বয়সে আমার কিছু ভাবনা ছিল না? না কি ওই বয়সে ভাবনা থাকে না? আমিও তো আর দশ টা ছেলের মতন তোমাকে চেয়েছিলাম। হ্যাঁ বলতে পার আমি তোমার বুনপো হবার ফায়দা নিয়েছি। না হলে পাত্তাও তো দিতে না।
হাঁ হয়ে গেলাম আমি। অনেক প্রশ্নের উত্তর ও আমাকে দিয়ে দিল। কি বলি আমি? বলতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্চে এই ভাবেই আঁকড়ে ধরে থাকি ওকে। ও নিজেই পড়ে নিক আমার অব্যক্ত কথা গুল। চুপ করে রইলাম দুজনে অনেকক্ষণ। আমি কি বলব খুঁজে পাচ্ছিলাম না। শুধু চোখে জল বার বার ছাপিয়ে আসছে। ইশ এতো কস্ট পেয়েছে ছেলেটা। নিজের কস্ট আমি ভুলেই গেলাম। মনে হলো ভালবাসা টা দুই দিক থেকেই ছিল মারাত্মক রকমের।, তাই কেউ কাউকে ভুলতে পারিনি, দুজনাই কেঁদেছি আড়ালে। কিন্তু ওকে এই ভুল থেকে সরাতেই হবে। ওকে বোঝাতেই হবে আমাদের এক হওয়া সম্ভব না। দরকারে ভয় দেখিয়ে সরাতে হবে। মন কে শক্ত করলাম আমি আবার। মনে হলো দরকারে ওকে বোঝাতে হবে আমি ওকে ছাড়াও বাঁচতে পারব। তাতে যদি ওর একটু মেল ইগো জাগে ।
আমি বললাম ওকে
- তবে তো আমাকে মরতে হয়।
তাতে ওর প্রমট উত্তর এলো
- তাতে কি লাভ হবে? আমাকে বাঁচাতেই তো তুমি মরবে। কিন্তু কথা দিচ্ছি, তাতে লাভ কিছু হবে না। আমি হয়ত মরেই যেতাম কিন্তু এখানে চলে এলাম তোমাকে দেখে দুটো দিন বেশী বাঁচব বলে। আর যদি আমাকে বাঁচানো নয়, লজ্জার জন্য মরবে, তবে আমি বলতে পারি, লজ্জা নিয়ে বাঁচতে আমি প্রস্তুত।
কি যে বলছে ছেলে টা। পাগল হয়ে গেছে ও। ও বুঝতে পারছে না কত বড় লজ্জা এটা। ও কোথাও যেতে পারবে না, মিশতে পারবে না। কোন আত্মীয় বাড়িতে কোন অনুষ্ঠানে একেবারে অছ্যুত হয়ে পড়ব আমরা। কেউ মেনে নেবে না আমাদের। এ কি বিপদে পড়লাম আমি। আমিও যে ওকে ছেড়ে বাঁচব এমন না। কিন্তু ও ওর মতন থাকুক। আর আমি আমার মতন। ও বিয়ে করে সুখী হয়ে ঘর কন্না করুক আর আমি আমার মতন। আমি প্রায় চেঁচিয়ে উঠলাম,
- এরকম কথা বলিস না। দয়া কর। তোর জন্যে আমি সব ছাড়তে পারি। আমি এখান থেকে চলে যাব। তুই কাউকে বিয়ে কর। সুখে সংসার কর। দয়া কর আমাকে।
- তাহলে কি ঠিক হলো তুমি মরবে না তাই তো? কারন তুমি মরলে আমিও মরে যাব কথা দিলাম।
আমি ওর মুখ টা হাত দিয়ে চাপা দিলাম। কি যে সব বলছে কে জানে? ভয় লেগে গেল প্রচন্ড। মরে যাবে আবার কি কথা। ভয়ে ময়ে বলে দিলাম ওকে
- নানা মরব না আমি। কোথাও যাব ও না । আমি তোর আশে পাশেই থাকব। কোন দিন বিয়ে করব না। কিন্তু তুই সংসারী হবি বল কাউকে বিয়ে করে।
- না সেটা হবে না। আচ্ছা একটা কথা বলো, তুমি, বিয়ে করতে পারবে না কেন?
চুপ করে রইলাম আমি। কেন বিয়ে করতে পারব না, এই উত্তর টা ওকে দিলে ওর ভালোবাসা অনেক বেশী শক্তি পেয়ে যাবে। সেটা এখন করতে দিলে হবে না। চুপ করে রইলাম আমি। ও বলল
- আমি বলছি, তুমি আমাকে ছাড়া কাউকে ভাবতেও পারো না। তাই তুমি অন্য কাউকে মেনেও নিতে পারবে না। আর যদি জোর দিয়ে বল, যে তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করবে কালকেই তবে আমিও কথা দিলাম আমিও বিয়ে করব তার পরের দিন ই। কিন্তু ভেবে দেখ, এতে কি তুমি আরো দুটো জীবন নষ্ট করবে না? তার থেকে বেটার অপশন একটা ডিল হোক
ভাবছি এতো কথা ও বলতে পারে বলে আমার জানা ছিল না। বুঝলাম, কেন প্রতি মুহুর্তে আমি ওর প্রেমে পরি। তাও হারলাম না আমি । ওকে বললাম
- কে বলল আমি বিয়ে করতে পারব না। কত ছেলেকে আমার ভালো লাগে তার ঠিক আছে? তুই না হয় মিমি কে জানিস একটা ভালো মেয়ে হিসাবে। কিন্তু তোর জানা টাই তো সব না।
- মানে? হাও মেনি ইউ হ্যাভ স্লেপ্ট উইথ?
সহসা এমন প্রশ্ন শুনে দুম করে মাথা গরম হয়ে গেল । নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখে এই কথা শুনে মেজাজ ঠিক থাকতে পারলাম না আমি। আজকে মনে হয়, সেদিনে এই নিয়ে কথা বার্তা আর একটু চালাতে পারলে লাভ হত। কিন্ত আমি ছিলাম বোকা। তাই সপাটে থাপ্পড় লাগিয়ে দিলাম অর্জুনের গালে। চেঁচিয়ে উঠলাম
- লজ্জা করে না তোর এই কথাটা আমাকে বলতে
অর্জুন গালে সামান্য হাত ও দিল না। আমার দিকে কঠিন ভাবে চেয়ে বলল
- আমার উত্তর আমি পেয়ে গেছি। শোন তোমার কি ইচ্ছে জানার আমার কোন সখ নেই। আমার সিদ্ধান্তই ফাইনাল। দুজনাই বিয়ে করছি না। আমার বেশি চাওয়াও ছিল না। তোমাকে দিনের মাথায় একবার দেখব ব্যস। কাজেই আমি তোমাকে কলেজে দেখে আসব দিনে একবার করে। বা তুমি যেখানে বলবে।
আমি আর কি বলব। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে একেবারে। আর একলা তো আমার জীবন না। আমার একটা স্টেপ ওর জীবন কেই এফেক্ট করবে। কিন্তু বুঝলাম আপাতত ওকে আটকানোর এটাই রাস্তা। না মানলে জানিনা আর কি করে বসবে। পুরুষ মানুষ যখন অধিকার বুঝে যায়, তখন কোন কিছুর তোয়াক্কা করে না। ও বুনপো না হলে আজকেই ফয়সালা করে নিতাম । বয়সে ছোট তো কি হয়েছে। কিন্তু সে তো আর হবার নয়। মেনে নিলাম ওর যুক্তি
- আচ্ছা ডান।আমি রাজী। কিন্তু তোর কাউকে পছন্দ হলে বিয়ে করবি তো?
- তুমি করবে তো কাউকে পছন্দ হলে? বললাম তো, তুমি বিয়ে করলে পরের দিনেই করব।
- আমার কথা আনছিস কেন তুই। তুই পুরুষ মানুষ। মায়ের একমাত্র ছেলে। তোর কিছু হলে যে সর্বনাশ হয়ে যাবে সোনা। আমার কি আছে বল। আমার কথা ভাবিস না অতো। তুই এখন বাড়ি যা। মায়ের কাছে যা।
- প্রথমত এটা জেনে নাও, হ্যাঁ আমরা হয়ত এক হতে পারব না, কিন্তু ভগবান সাক্ষী, তুমি কিন্তু আমার। তুমি ভেব না আমি সেদিনে এমনি এমনি তোমাকে ওখান থেকে আসতে দিয়েছিলাম। আমার ও মনে হয়েছিল, আমার মতই তুমিও জ্বলছ আমাকে না পাবার কস্টে। কিন্তু তোমাকে মার খাবার জন্য আমি ছেড়ে রাখতে পারি না। কাজেই এর পরে থেকে মার খাবে না কিন্তু কারোর কাছে।আমি জানি কে তোমাকে মেরেছে। এই শেষ বারের মতন তাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। আর কিন্তু করব না। তাতে সে আমার মা হলেও না। আজকের পরে , পরে পরে মার কিন্তু তুমি খাবে না। আর আমার সামনে তোমার গায়ে হাত তোলে এমন লোক কে আমি বাঁচিয়ে রাখব না। আর শোণ, এত কথা বলতে আমার ভালো লাগে না। আর কোন দিন ও হয়ত বলব ও না। কিন্তু আমি আশা করব তুমি এর প্রতি টা কথা মেনে চলবে।
হেসে ফেললাম বীর পুঙ্গবের কথা শুনে। বাবাহ আমাকে নাকি ওনার কথা মেনে চলতে হবে। কি একেবারে পুরুষ মানুষ এলেন। অতো কষ্টের মাঝেও জ্বালাতে ইচ্ছে হলো ওকে । দুজন প্রেমী, সর্বক্ষন একে অপর কে পরীক্ষা করে, কে বেশি ভালোবাসে। তাতে নিজের হারে ও দুজনাই খুশী হয়। বললাম
- আর যদি তুই কোন দিন আমার গায়ে হাত তুলিস?
- নিজেকে মেরে ফেলব। কথা দিলাম।
- পাগলা। এই সব কথা বলতে নেই।
- কেন?
- ধর আমি খুব বদমাশ হয়ে গেলাম আর তোর দরকার পড়ল আমাকে মার ধোর করার।
আবার ওর চোখে পুরোন ব্যাপার টা ফিরে এলো। আগের অর্জুনের মতন ভাব ভঙ্গী। লজ্জা পেয়ে বলল
- ধ্যাত। তোমার গায়ে হাত তোলার কথা আমি ভাবতেও পারি না।
- হ্যাঁ রে, ধর আমি অন্য কোন পুরুষের সাথে আমাকে অসভ্যতা করতে দেখলি। তখন
ধরে ছিল ও আমার হাত টা ও । সজোরে টিপে ধরল সেখান টা রাগে। আমি ককিয়ে উঠলাম
- আউ? লাগে না? দেখ কি করলি। আবার নাকি নিজেকে শেষ করে ফেলবে আমাকে মারলে?
- এটা কেমন কথা হলো? আমি কেমন করে সহ্য করি তোমাকে অন্য কারোর সাথে? তুমি এমন করবেই বা কেন? কই আমি তো করতে চাই ও না।
- আচ্ছা আচ্ছা বাবা এবারে ছাড় আমার হাত টা। বড্ড গায়ে জোর বেড়েছে তোর।
ও ছেড়ে দিল। মুখ টা ব্যথিত। বলল
- সরি আর হবে না এমন ভুল।
- ধুর পাগল। আমি কিছু মনে করিনি। ওই সময়ে তুই আমাকে না বকলে আমারি কস্ট হতো।
- তাহলে বল তুমি আমাকে ভালবাস।
- এর পরেও বলে দিতে হবে?
- হ্যাঁ
- আচ্ছা বাসি । খুব ভাল বাসি। এত ভাল আমি আগে কখন কোনদিন কাউকে বাসিনি।
- হুম। আমার কোন শারীরিক লোভ নেই তোমার উপরে। ব্যস এটা বুঝি তুমি ছাড়া আমার জীবনে কোন ভাল জিনিস হতে পারে না
- পাগল। এবারে দুটো খা। খেয়ে মায়ের কাছে যা।
- আচ্ছা।
পাগল টা আনন্দে নাচতে নাচতে বাড়ি চলে গেল। আর আমাকে ফেলে দিয়ে গেল একটা গাড্ডায়। কি যে বলি? বাস আমি ওর, এটা মেনে নিলেই ওর শান্তি। কত সরল। মনের মধ্যে লক্ষ প্রশ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি দরজার সামনে।