10-01-2022, 06:08 PM
সাত
সেদিন আমি রাতে নীচে যাইনি। মন টা ভালো হয়ে গেছিল আরো। পড়াশোনা করছিলাম। পরিবেশন করার ইচ্ছে ছিল না। মনে হচ্ছিল, আমি গেলেই ঝামেলা হবে। যাও বা সব চুপচাপ আছে, গেলেই মেজদি কাঁদবে, বড়দি কাঁদবে। বাবা রেগে যাবে। আমিও রেগে যাব। কি দরকার? আমি বেশ ভাল আছি। আর কোনকালেই তেমন ভাবে তো আমি পরিবারের সাথে মিলে মিশে থাকিনি। কিন্তু অবাক করে দিয়ে শুনলাম বড়দি বলছে ভাই কে,
- ভাই যা তো ছোড়দি কে ডেকে নিয়ে আয়। খাবার গুলো দিয়ে দিক সবাই কে।
ভাবলাম বাবাহ। এতো সুখ ও কপালে ছিল। আমাকে ডাকতে হল না। আমি নিজেই গেলাম। আমি অর্জুন আর ভাই মিলে সবাই কে খাবার দিলাম। আমার মা কে দেখলাম বেশ খুশী। কাকিও। কই বাবা তো চুপচাপ খেয়ে নিল। বড়দি মেজদি সবাই চুপচাপ খেয়ে নিল। নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। কিন্তু আমাকে নিয়ে কোন আলোচনা নেই। ভাবলাম যাক তাহলে নালিশ হয় নি। কিন্তু সেদিন থেকে বড়দি একটু বদলে গেল। আমাকে ডেকে ডেকে কথা বলত। ভাল কিছু হলে, আমি শুনতে পেতাম মা কে বলতে,
- ছোটর জন্য তুলে রেখে দাও। ওর তো ঠিক নেই কখন খাবে। মন মর্জি খাওয়া ওর।
বা বলত
- মা বলতে পারো না ওকে ন্যাড়া হয়ে না থেকে, একটু চুল টা বাড়াতে। কি সুন্দরী ও।
মা ও বলত,
- তুই বল, আমাকে বলতে বলছিস কেন? আমি আর তোর কাকি ওকে সারা দিন বলি। ও শোনে নাকি কারোর কথা?
জানি হয়ত বলতে পারে না আমাকে। আসলে কোন দিন ই তো সুসম্পর্ক ছিল না। আজকে বুঝতে পেরেছে, সেদিনে আমি ওর ছেলেকে বাঁচিয়েছিলাম পুকুর থেকে। তাই একটু মায়া দয়া হয় আমার উপরে। আমি ওসব ভাবি না। আমি সেদিনেও কিছু স্পেশাল করিনি, আজকেও কিছু করিনি। আমার যা মনে হয়েছে আমি করেছি। আর সেটা করব ও।
যেদিন ঠাকুর বিসর্জন হলো, সেদিন দিদি আমাকে আলাদা করে অর্জুন কে দেখতে বলল। বলল যেন ও পুকুর ধারে না যায়। আমার খারাপ লাগে নি সেটা। সবাই কে ছেড়ে দিয়ে আমাকে ওর দেখাশোনার যোগ্য মনে করেছে, এই অনেক। অর্জুন আমার সাথেই ছিল সারাক্ষণ বিজয়ার সময়ে। বাজী ফাটাল খুব। আনন্দ করল খুব। এই ফাঁকে আমার ভাই টাও আমার কাছা কাছি চলে এল। শুধু আমার ছোড়দি টাই নেই। বাকি সব আছে। ইশ একবার দেখা হলে বলতাম
– দিদি এসে দেখ, সবাই কত বদলে গেছে।
হুশ ফিরতেই দেখলাম, ছেলে স্কেট নিয়ে খেলছে। আমার সামনে ওর বই খোলা। পড়ার থেকে খেলায় বেশী মন। আমার মেয়ে কিন্তু নির্লিপ্ত ভাবে পড়ে চলেছে। উফ এই ছেলেকে নিয়ে আমি আর পারি না। আর বাপ হয়েছে দেখ, সারা দিন কাজ। বুঝবে, ছেলে মেয়ে গরু হয়ে থাকবে সারা জীবন। আমার আর কি? মনে মনে গজ গজ করতে করতে ছেলেকে চেঁচিয়ে বললাম,
- কি রে মানু পড়বি না?
আমার ছেলে মুখের উপরে বলে দিল, ও পড়বে না। আমি সামনে হাত জোর করে বললাম
- হে মহারাজ, এই এ থেকে জেড অব্দি পড়ে আমাকে ধন্য করুন।
ব্যস মহারাজ খুশী। বাপ কা বেটা। অনুরোধে কাজ হয়। জোর করলে মার খাবে তবু করবে না সেই কাজ। স্কেট রেখে দিয়ে, আমার কোলে বসে, খানিক চেঁচিয়ে পড়ে নিয়ে, এ থেকে জেড অব্দি ঝড় ঝড় করে মুখস্ত বলে দিয়ে, খাট থেকে নেমে হাওয়া। পরক্ষনেই দেখলাম, স্কেট সাইকেল টা নিয়ে এঘর ওঘর করতে শুরু করল। আর আমি মেয়ে কে নিয়ে শুরু করলাম। ওর এখন ক্লাস থ্রী। মেয়েকে পড়া দেখিয়ে দিয়ে, ওদের বাপ কে ফোন করলাম।
- কি গো কখন আসবে?
- কেন। একটু ব্যস্ত আছি।
- দুটো কে পেটে ভরে দিয়ে এখন উনি ব্যস্ত। আচ্ছা বাপ হয়েছ বাপু।
- ওই দেখ। আচ্ছা আসছি। নীচেই তো আছি। গুণ্ডা টা কে পাঠিয়ে দাও এখানে।
- গুড বয়। পাঠাচ্ছি। খবরদার ওকে যেন লনে ছেড়ে দেবে না বলে দিলাম।
- আরে না রে বাবা আমার কাছে থাকবে।
রাতে আমাকে বেশ করে চিবিয়ে খাবার পরে, আমার বুকের উপড়ে শুয়ে শুয়ে বর বলল
- কি ব্যাপার বলত, গত কয়েক দিন , তোমাকে অন্যমনস্ক দেখেছি একটু
- হুম
- কেন?
- কত পুরোন কথা মনে পড়ছে আমার।
- এতো দিন বাদে?
- হুম। আচ্ছা মা তোমাকে ফোন করে নি এ কদিনে?
- হ্যাঁ রোজ ই করে? তোমার কথা জিজ্ঞাসা করে। পুঁচকে দুটর কথা জিজ্ঞাসা করে।
- উম্মম্মম্ম। জানো আমার না খুব যেতে ইচ্ছে করে বাড়ি। কিন্তু…
- কিন্তু কি, তুমি যেতেই পার।
- আর তুমি?
- না আমি যাব না।
- তবে আমিও না
- এটা তোমার বাড়াবাড়ি।
- হোক। তবুও না। তুমি তোমার বাড়ি যাও না কেন?
- কারন ওখানে তোমাকে অপমান করবে তাই।
- ঠিক, সেই রকম যেখানে তুমি যাবে না সেখানে আমিও যাব না। আমি বলে, স্বর্গেও যাব না তোমাকে ছাড়া। এই একী একী, কি করছ, ছেলে মেয়ে ঘুমোচ্ছে কিন্তু বলে দিলাম। ওদের ঘুম যদি ভেঙ্গেছে না!!!!!
জানি না আমি ওকে উত্তেজিত করার মতন কি বললাম। উফ এই ভাবে আমাকে ঠেসে ধরার কি মানে? এই রে মনে হচ্ছে আজকে রাতে আমাকে আরেকবার সব ধুতে হবে। আমার শাড়ি ব্লাউজ সব টেনে খুলে দিয়ে আমাকে বুকের নিচে পেষা শুরু করতে বেশি সময় নিল না আমার বর।
কলেজ থেকে বের হলাম টপার হয়েই। সেই বছরেই ভর্তি হয়ে গেলাম আমি এম এস সি তে। কমপ্লিটের পরে পি এইচ ডি র জন্য খড়গপুর চলে গেলাম। মাঝের তিন বছর না বাড়ি না কারর সাথে আমি যোগাযোগ রাখিনি। শুধু জানতাম আমার ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে বাংলার সব থেকে ভালো কলেজ থেকে। বাস এই টুকুই। খুব বেশী মনেও নেই এই সময় টা আমার। শুধু মনে পরে, টপার হবার সৌজন্যে, আমি গোল্ড মেডেল নিতে ডায়াসে উঠছি। সামান্য কিছু স্পিচ। ব্যস আর কিছু মনে পরে না আমার।
বেশিদিন লাগত না আমার পি এইচ ডি করতে। আমার এম এস সি র সময়েই আমি পেপার বানিয়ে রেখেছিলাম। পিরিওডিক টেবল এর উপরে কিছু রিসার্চ আমার করাই ছিল। এলিমেন্ট দের আরো কত টা এলিগ্যান্টলি পিরিয়ডাইজড করা যায় যায় নিয়েই কিছু রিসার্চ। বিশেষ করে গ্রুপ ডি এলিমেন্ট দের নিয়ে। ভেবেছিলাম সেইটা সাবমিট করে দেব। আমি যখন এম এস সি পড়ি তখন কার কাজ ছিল এটা আমার। কিন্তু খড়গপুরে যাওয়া টা আমার জীবনের যে সব থেকে বড় টার্নিং পয়েন্ট হবে আমি সেটা ভাবিনি কোন দিন। রিসার্চ করা আমার শুধু প্রয়োজন ই ছিল না স্বপ্ন ও ছিল। আর সেটা করতে গিয়েই আমারি জীবন আমার সাথেই পাল্লা দিয়ে আমার জীবন নিয়ে রিসার্চ করল।
আমার স্বপ্ন ছিল খড়গপুর থেকে রিসার্চ করব আর খুব জান প্রাণ লড়িয়ে দেব, যাতে ওখানে কোন জব অফার আসে। অবশ্যই টিচিং জব। হয়েও গেছিল আমার। ওই দুই বছরে, দুটো ফান্ডামেন্টাল থিয়োরি আমার পেপারের সাথে জূড়ে গেছিল। আরো একটা ছিল, কিন্তু সেটা আমি রেখে দিয়েছিলাম, ভবিষ্যতে কোন ছাত্র/ছাত্রী চাইলে সেটার উপরে গবেষণা করতে বলব। সেখানেও তো আমার নাম থাকবে।
কিন্তু ভাবি এক আর হয় এক। সমস্যা বলব না, বলতে পারি, জীবনের মহার্ঘ্য দুটো বছর আমি কাটিয়েছিলাম ওখানে। কিন্তু সেই দুটো বছর আমার জীবনের সর্বস্ব কেড়ে নিল বড় আদর করে।
আমি ল্যাব থেকে ফিরছিলাম আমার রুম এ। দেরী হয়ে গেছিল অনেক। প্রায় দশ টা বাজবে তখন রাত। ইন্সটিটিউটের ঠিক বাইরেই ছিল আমার ফ্ল্যাট। আমি তখন রিসার্চের জন্য রোজগার ভালই করি। ভালো স্টাইপেন্ড পাই। অর্থের কোন সমস্যা ছিল না। তাছাড়া অনেকের সাথে থাকা আমার কোন কালেই পোষায় নি। তাই নিজেই থাকতাম আলাদা ভাবে।
ইন্সটিটিউটের গেটের বাইরেই একটা বিড়ি সিগারেট, দরকারি, অদরকারী সমস্ত রকম জিনিস পাওয়া যায় এমন একটা দোকান ছিল। দোকান টা সারা রাতই খোলা থাকত। গেটের বাইরে, দুপাশে দুটো আলো জ্বলছিল। গাছ আছে কিছু। স্বাভাবিক গাছের তলা গুলো অন্ধকার থাকবে। আর সেই অন্ধকারে অনেক সময়ে ছেলেরা সিগারেট ছাড়াও অনেক কিছু খায়। মেয়েরাও থাকে ওই দলে। আমি রোজ ই দোকানের সামনে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকি। মনে করি কিছু নিয়ে আবার দরকার আছে কিনা। মনে পরলে কিনে নিই। সেদিনেও দাঁড়িয়েছিলাম গেটের বাইরে কিছুক্ষন।
সেদিনে না দাঁড়ালে, কি জানি, হয়তো জীবন টা অন্য দিকে মোড় নিত। কিম্বা নিত না। কিন্তু সেদিনের দাঁড়ানো টা যে আমার জীবনের মোক্ষম একটা পয়েন্ট এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই আমার।
সেদিন আমি রাতে নীচে যাইনি। মন টা ভালো হয়ে গেছিল আরো। পড়াশোনা করছিলাম। পরিবেশন করার ইচ্ছে ছিল না। মনে হচ্ছিল, আমি গেলেই ঝামেলা হবে। যাও বা সব চুপচাপ আছে, গেলেই মেজদি কাঁদবে, বড়দি কাঁদবে। বাবা রেগে যাবে। আমিও রেগে যাব। কি দরকার? আমি বেশ ভাল আছি। আর কোনকালেই তেমন ভাবে তো আমি পরিবারের সাথে মিলে মিশে থাকিনি। কিন্তু অবাক করে দিয়ে শুনলাম বড়দি বলছে ভাই কে,
- ভাই যা তো ছোড়দি কে ডেকে নিয়ে আয়। খাবার গুলো দিয়ে দিক সবাই কে।
ভাবলাম বাবাহ। এতো সুখ ও কপালে ছিল। আমাকে ডাকতে হল না। আমি নিজেই গেলাম। আমি অর্জুন আর ভাই মিলে সবাই কে খাবার দিলাম। আমার মা কে দেখলাম বেশ খুশী। কাকিও। কই বাবা তো চুপচাপ খেয়ে নিল। বড়দি মেজদি সবাই চুপচাপ খেয়ে নিল। নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। কিন্তু আমাকে নিয়ে কোন আলোচনা নেই। ভাবলাম যাক তাহলে নালিশ হয় নি। কিন্তু সেদিন থেকে বড়দি একটু বদলে গেল। আমাকে ডেকে ডেকে কথা বলত। ভাল কিছু হলে, আমি শুনতে পেতাম মা কে বলতে,
- ছোটর জন্য তুলে রেখে দাও। ওর তো ঠিক নেই কখন খাবে। মন মর্জি খাওয়া ওর।
বা বলত
- মা বলতে পারো না ওকে ন্যাড়া হয়ে না থেকে, একটু চুল টা বাড়াতে। কি সুন্দরী ও।
মা ও বলত,
- তুই বল, আমাকে বলতে বলছিস কেন? আমি আর তোর কাকি ওকে সারা দিন বলি। ও শোনে নাকি কারোর কথা?
জানি হয়ত বলতে পারে না আমাকে। আসলে কোন দিন ই তো সুসম্পর্ক ছিল না। আজকে বুঝতে পেরেছে, সেদিনে আমি ওর ছেলেকে বাঁচিয়েছিলাম পুকুর থেকে। তাই একটু মায়া দয়া হয় আমার উপরে। আমি ওসব ভাবি না। আমি সেদিনেও কিছু স্পেশাল করিনি, আজকেও কিছু করিনি। আমার যা মনে হয়েছে আমি করেছি। আর সেটা করব ও।
যেদিন ঠাকুর বিসর্জন হলো, সেদিন দিদি আমাকে আলাদা করে অর্জুন কে দেখতে বলল। বলল যেন ও পুকুর ধারে না যায়। আমার খারাপ লাগে নি সেটা। সবাই কে ছেড়ে দিয়ে আমাকে ওর দেখাশোনার যোগ্য মনে করেছে, এই অনেক। অর্জুন আমার সাথেই ছিল সারাক্ষণ বিজয়ার সময়ে। বাজী ফাটাল খুব। আনন্দ করল খুব। এই ফাঁকে আমার ভাই টাও আমার কাছা কাছি চলে এল। শুধু আমার ছোড়দি টাই নেই। বাকি সব আছে। ইশ একবার দেখা হলে বলতাম
– দিদি এসে দেখ, সবাই কত বদলে গেছে।
হুশ ফিরতেই দেখলাম, ছেলে স্কেট নিয়ে খেলছে। আমার সামনে ওর বই খোলা। পড়ার থেকে খেলায় বেশী মন। আমার মেয়ে কিন্তু নির্লিপ্ত ভাবে পড়ে চলেছে। উফ এই ছেলেকে নিয়ে আমি আর পারি না। আর বাপ হয়েছে দেখ, সারা দিন কাজ। বুঝবে, ছেলে মেয়ে গরু হয়ে থাকবে সারা জীবন। আমার আর কি? মনে মনে গজ গজ করতে করতে ছেলেকে চেঁচিয়ে বললাম,
- কি রে মানু পড়বি না?
আমার ছেলে মুখের উপরে বলে দিল, ও পড়বে না। আমি সামনে হাত জোর করে বললাম
- হে মহারাজ, এই এ থেকে জেড অব্দি পড়ে আমাকে ধন্য করুন।
ব্যস মহারাজ খুশী। বাপ কা বেটা। অনুরোধে কাজ হয়। জোর করলে মার খাবে তবু করবে না সেই কাজ। স্কেট রেখে দিয়ে, আমার কোলে বসে, খানিক চেঁচিয়ে পড়ে নিয়ে, এ থেকে জেড অব্দি ঝড় ঝড় করে মুখস্ত বলে দিয়ে, খাট থেকে নেমে হাওয়া। পরক্ষনেই দেখলাম, স্কেট সাইকেল টা নিয়ে এঘর ওঘর করতে শুরু করল। আর আমি মেয়ে কে নিয়ে শুরু করলাম। ওর এখন ক্লাস থ্রী। মেয়েকে পড়া দেখিয়ে দিয়ে, ওদের বাপ কে ফোন করলাম।
- কি গো কখন আসবে?
- কেন। একটু ব্যস্ত আছি।
- দুটো কে পেটে ভরে দিয়ে এখন উনি ব্যস্ত। আচ্ছা বাপ হয়েছ বাপু।
- ওই দেখ। আচ্ছা আসছি। নীচেই তো আছি। গুণ্ডা টা কে পাঠিয়ে দাও এখানে।
- গুড বয়। পাঠাচ্ছি। খবরদার ওকে যেন লনে ছেড়ে দেবে না বলে দিলাম।
- আরে না রে বাবা আমার কাছে থাকবে।
রাতে আমাকে বেশ করে চিবিয়ে খাবার পরে, আমার বুকের উপড়ে শুয়ে শুয়ে বর বলল
- কি ব্যাপার বলত, গত কয়েক দিন , তোমাকে অন্যমনস্ক দেখেছি একটু
- হুম
- কেন?
- কত পুরোন কথা মনে পড়ছে আমার।
- এতো দিন বাদে?
- হুম। আচ্ছা মা তোমাকে ফোন করে নি এ কদিনে?
- হ্যাঁ রোজ ই করে? তোমার কথা জিজ্ঞাসা করে। পুঁচকে দুটর কথা জিজ্ঞাসা করে।
- উম্মম্মম্ম। জানো আমার না খুব যেতে ইচ্ছে করে বাড়ি। কিন্তু…
- কিন্তু কি, তুমি যেতেই পার।
- আর তুমি?
- না আমি যাব না।
- তবে আমিও না
- এটা তোমার বাড়াবাড়ি।
- হোক। তবুও না। তুমি তোমার বাড়ি যাও না কেন?
- কারন ওখানে তোমাকে অপমান করবে তাই।
- ঠিক, সেই রকম যেখানে তুমি যাবে না সেখানে আমিও যাব না। আমি বলে, স্বর্গেও যাব না তোমাকে ছাড়া। এই একী একী, কি করছ, ছেলে মেয়ে ঘুমোচ্ছে কিন্তু বলে দিলাম। ওদের ঘুম যদি ভেঙ্গেছে না!!!!!
জানি না আমি ওকে উত্তেজিত করার মতন কি বললাম। উফ এই ভাবে আমাকে ঠেসে ধরার কি মানে? এই রে মনে হচ্ছে আজকে রাতে আমাকে আরেকবার সব ধুতে হবে। আমার শাড়ি ব্লাউজ সব টেনে খুলে দিয়ে আমাকে বুকের নিচে পেষা শুরু করতে বেশি সময় নিল না আমার বর।
কলেজ থেকে বের হলাম টপার হয়েই। সেই বছরেই ভর্তি হয়ে গেলাম আমি এম এস সি তে। কমপ্লিটের পরে পি এইচ ডি র জন্য খড়গপুর চলে গেলাম। মাঝের তিন বছর না বাড়ি না কারর সাথে আমি যোগাযোগ রাখিনি। শুধু জানতাম আমার ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে বাংলার সব থেকে ভালো কলেজ থেকে। বাস এই টুকুই। খুব বেশী মনেও নেই এই সময় টা আমার। শুধু মনে পরে, টপার হবার সৌজন্যে, আমি গোল্ড মেডেল নিতে ডায়াসে উঠছি। সামান্য কিছু স্পিচ। ব্যস আর কিছু মনে পরে না আমার।
বেশিদিন লাগত না আমার পি এইচ ডি করতে। আমার এম এস সি র সময়েই আমি পেপার বানিয়ে রেখেছিলাম। পিরিওডিক টেবল এর উপরে কিছু রিসার্চ আমার করাই ছিল। এলিমেন্ট দের আরো কত টা এলিগ্যান্টলি পিরিয়ডাইজড করা যায় যায় নিয়েই কিছু রিসার্চ। বিশেষ করে গ্রুপ ডি এলিমেন্ট দের নিয়ে। ভেবেছিলাম সেইটা সাবমিট করে দেব। আমি যখন এম এস সি পড়ি তখন কার কাজ ছিল এটা আমার। কিন্তু খড়গপুরে যাওয়া টা আমার জীবনের যে সব থেকে বড় টার্নিং পয়েন্ট হবে আমি সেটা ভাবিনি কোন দিন। রিসার্চ করা আমার শুধু প্রয়োজন ই ছিল না স্বপ্ন ও ছিল। আর সেটা করতে গিয়েই আমারি জীবন আমার সাথেই পাল্লা দিয়ে আমার জীবন নিয়ে রিসার্চ করল।
আমার স্বপ্ন ছিল খড়গপুর থেকে রিসার্চ করব আর খুব জান প্রাণ লড়িয়ে দেব, যাতে ওখানে কোন জব অফার আসে। অবশ্যই টিচিং জব। হয়েও গেছিল আমার। ওই দুই বছরে, দুটো ফান্ডামেন্টাল থিয়োরি আমার পেপারের সাথে জূড়ে গেছিল। আরো একটা ছিল, কিন্তু সেটা আমি রেখে দিয়েছিলাম, ভবিষ্যতে কোন ছাত্র/ছাত্রী চাইলে সেটার উপরে গবেষণা করতে বলব। সেখানেও তো আমার নাম থাকবে।
কিন্তু ভাবি এক আর হয় এক। সমস্যা বলব না, বলতে পারি, জীবনের মহার্ঘ্য দুটো বছর আমি কাটিয়েছিলাম ওখানে। কিন্তু সেই দুটো বছর আমার জীবনের সর্বস্ব কেড়ে নিল বড় আদর করে।
আমি ল্যাব থেকে ফিরছিলাম আমার রুম এ। দেরী হয়ে গেছিল অনেক। প্রায় দশ টা বাজবে তখন রাত। ইন্সটিটিউটের ঠিক বাইরেই ছিল আমার ফ্ল্যাট। আমি তখন রিসার্চের জন্য রোজগার ভালই করি। ভালো স্টাইপেন্ড পাই। অর্থের কোন সমস্যা ছিল না। তাছাড়া অনেকের সাথে থাকা আমার কোন কালেই পোষায় নি। তাই নিজেই থাকতাম আলাদা ভাবে।
ইন্সটিটিউটের গেটের বাইরেই একটা বিড়ি সিগারেট, দরকারি, অদরকারী সমস্ত রকম জিনিস পাওয়া যায় এমন একটা দোকান ছিল। দোকান টা সারা রাতই খোলা থাকত। গেটের বাইরে, দুপাশে দুটো আলো জ্বলছিল। গাছ আছে কিছু। স্বাভাবিক গাছের তলা গুলো অন্ধকার থাকবে। আর সেই অন্ধকারে অনেক সময়ে ছেলেরা সিগারেট ছাড়াও অনেক কিছু খায়। মেয়েরাও থাকে ওই দলে। আমি রোজ ই দোকানের সামনে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকি। মনে করি কিছু নিয়ে আবার দরকার আছে কিনা। মনে পরলে কিনে নিই। সেদিনেও দাঁড়িয়েছিলাম গেটের বাইরে কিছুক্ষন।
সেদিনে না দাঁড়ালে, কি জানি, হয়তো জীবন টা অন্য দিকে মোড় নিত। কিম্বা নিত না। কিন্তু সেদিনের দাঁড়ানো টা যে আমার জীবনের মোক্ষম একটা পয়েন্ট এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই আমার।