08-01-2022, 03:37 AM
~ ক্ষমতার জোরের সামনে অসহায় শবনম ফারিয়া ০৭
ফারিয়া আজ কাজে যায় নি। সে বারান্দার বেতের চেয়ারে বসে ব্যস্ত রাস্তার যানবাহন দেখছে। হাতে চায়ের কাপ। চা খেতে গিয়ে ফারিয়ার চোখে পানি এসে গেল। তার কত পরিকল্পনা ছিলো ইফটি আর তার ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে। অল্প বয়েসী, লম্বা পাতলা সুন্দর এই ছেলেটারে সে বিয়ে করবে। তার সঙ্গে সে নানান ধরেনের আহ্লাদী করবে। আহ্লাদী করতে তার খুব ভালো লাগে। অথচ সব ধ্বংস করে দিলো জানোয়ার লোকটা। এই মুখ নিয়ে সে দাঁড়াবে কি করে ইফতির সামনে! যে শরীর তার বাবার কামনার শিকার হয়েছে সে শরীরকে কি করে আর গ্রহন করবে ইফতি। আজ চতুর্থ দিন হতে চলল, ফারিয়া ঘটনাটার কথা ইফতিকে এখনো জানায় নি। এই কয়েকদিন শুটিং, ব্যস্ততার অজুহাত দিয়ে সে ইফতিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। সে বুঝতে পারছে না সে কি করবে! সে কিছুতেই জামিল চৌধুরীকে ক্ষমা করবে না। কঠিন প্রতিশোধ নিবে! কিন্তু কি করে? লোকটার ক্ষমতার সামনে সে দুধশিশু এখনো। ফারিয়া গত কয়েকদিন ধরে শুধু এটাই ভাবছে, কি করে লোকটার বুকে ছুরি বসানো যায়। একটি চৈনিক প্ৰবাদ আছে—“তুমি কাউকে ধাক্কা দিয়ে খাদে ফেলে দিতে চেষ্টা করো যেন সে খাদ থেকে উঠতে না পারে।” এই প্রবাদের ব্যাখ্যা হল। খাদ থেকে উঠতে পারলে সে প্রতিশোধ নেবে। তাকে সেই সুযোগ না দেয়া। ফারিয়া খাদ থেকে উঠে গেছে, সে প্রতিশোধ নিবেই। সে বুঝতে পারছে জামিল চৌধুরীর প্রাণভ্রমরা হচ্ছে তার ছেলে ইফতি। সেই ইফতিকে দিয়েই আঘাতটা করাতে হবে। আঘাতের ব্যাথা সেরে যেতে পারে কিন্তু নিজের ছেলের আঘাতের কথা যাতে জামিল চৌধুরী কিছুতেই ভুলতে না পারে। এই ব্যবস্থাই তাকে করতে হবে।
৮।
নিজের ছেলের নিরাপত্তার জন্য জামিল চৌধুরী ছায়াসঙ্গীর মতো একটা লোককে ইফটির পিছনে লাগিয়ে রেখেছেন অনেক আগে থেকেই। কিন্তু কখনোই ছেলের ফোন চ্যাক করেন নি, ফোন ট্যাপ করেন নি ছেলের প্রাইভেসির কথা ভেবে। কিন্তু গতকয়েক দিন ধরে করছেন। এবং তার ভালো লাগছে এটা দেখে যে, তার ওষুধ কাজ করেছে। ফারিয়া মাগিটা গত চার-পাচ দিনে মাত্র দুবার যোগাযোগ করেছে। তাও খুব অল্প সময়ের জন্য। জামীল চৌধুরী এটাই চাচ্ছিলেন। এই সুযোগটাই জামীল চৌধুরী কাজে লাগিয়েছেন। খুব দ্রুত ইফতির জীবনে অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে এসেছেন। এতে ফারিয়ার দিক থেকে মনোযোগ সরাতে এটাই তার একমাত্র অপশন। কোন ক্লাসমেটের প্রতি দুর্বলতা আছে কি না এটা জানার জন্য তিনি ইফতির ক্লোজ ফ্রেন্ড দুজনের সাথে কথা বলেছেন। এবং জানতে পেরেছেন তানিয়া নামের একটা মেয়ের কথা। মেয়েটার সাথে যোগাযোগ করে অনুরোধ করেছেন ইফতির সাথে সখ্যতা বাড়াতে, ইফতিকে সময় দিতে। হাবিজাবি অনেক মিথ্যা বলেছেন ইফতির ডিপ্রেশন, লোনলিনেস নিয়ে। মেয়েটাও বেশ ভালো, সহজেই রাজী হয়ে গেছে। জামিল চৌধুরী ভেবেছিলেন আপাতত এই ঝামেলাটা এড়ানো গেলো। কিন্তু তার ভুল ভেংগে গেলো একদিন সকাল বেলার নাস্তার সময়ে। ইদানীং বাপ-ছেলে একসাথেই সকালের নাস্তা সারেন। এটাসেটা বলার পর ইফতি সরাসরি বললো,
- বাবা, আমি আর ফারিয়া চাচ্ছিলাম একসাথে থাকবো।
- মানে?
- বিয়ে করার কোন পরিকল্পনাতো আপাতত আমার নেই। আমরা লিভিং করবো ভাবছি।
জামিল চৌধুরী অনেক কষ্টে তার রাগ নিয়ন্ত্রণ করলেন। তিনি বুঝতে পারছেন, তার ছেলে ওই মাগীর প্রেমে মগ্ন। এসবই ওই মাগীটার প্ল্যান। মাগীটা তার সাথে ব্রেইন গেইম খেলছে। ভিতরে ক্রোধে ফেটে গেলেও মুখে হাসি রেখে বললেন,
- এসবে তোর পরালেখার ক্ষতি হবেতো। আর তাছাড়া আজকালের মানুষেরা যেকোনো কিছুকেই স্ক্যান্ডাল বানাতে উস্তাদ। আপাতত বোধহয় এসবে না গেলেই ভালো হয়।
- আমার পড়ালেখায় কোন কম্প্রমাইজ হলে আমি নিজেই থেকে এসব থেকে সরে যাবো বাবা। চিন্তা করো না। আর মানুষের কথা বলছো! মানুষতো চিরকালই অন্যকে খুচিয়ে মজা পায়।
জামিল চৌধুরী বুঝতে পারছেন তার ছেলে পুরোপুরি গেছে! একে বুঝিয়ে লাভ নেই। ওই মাগীকেই শায়েস্তা করতে হবে। পুলিশ দিয়ে কিছু করালে তার ছেলের বুঝতে বাকি থাকবে না, এসবের পিছনে তিনিই আছেন। অন্য পদ্ধতিতে যেতে হবে। আজকাল শফিকের মতিগতি তার ভালো লাগছে না। একাজ শফিককে দিবেন না। এরজন্য তার অন্য লোক আছে। এ শফিকের থেকেও হিংস্র, শফিকের থেকেও ধূর্ত।
৯।
শবনম ফারিয়া নতুন একটা নাটকের কাজে কক্সবাজার এসেছে। ঈদ উপলক্ষ্যে ছয়পর্বের ধারাবাহিক একটা নাটকের কাজে তারা কক্সবাজার এসেছে। উঠেছে সায়মন বিচ রিসোর্টে। এই শুটিং ইউনিটের কাউকেই সে ভালো করে চিনে না। নাটকের জন্য যে সম্মানি সে পায় তার চেয়ে অনেক বেশি টাকা অফার করেই এরা তাকে শর্ট নোটিসে কক্সবাজারে ডেকে এনেছে। শুরুতে একটু ভয়, ইতস্তত ভাব থাকলেও রিসোর্টের নিরাপত্তা আর শুটিং ইউনিটের সবার আন্তরিকতায় ফারিয়া বেশ মুগ্ধ। এখন বাজে রাত ১২টা ২১। আজকে প্রায় সারা বিকেল, সন্ধ্যা শুটিং হয়েছে। ক্লান্ত ফারিয়া শুতেই যাচ্ছিলো এই সময় রুমের কলিংবেল বাজাতে একটু অবাক হয়ে দরজার ফুটো দিয়ে থাকিয়ে দেখে পরিচালক জয় দাঁড়িয়ে আছে।
- এতো রাতে জয় ভাই? কোন সমস্যা?
- না, না সমস্যা নেই। কালকের দিন আমরা পুরোপুরি বিরতি নিবো ভাবছি। এছাড়া নাটকের কিছু জায়গায় পরিব্ররতন করবো। এটা নিয়েই সেভেন ফ্লোরে ৭০৭ নাম্বার রুমে একটা মিটিং করবো এখন। তোমাকেও থাকতে হবে।
- আপনারাই মিটিং করুন না। আমাকে কাল সকালে শুধু পরিবর্তিত স্ক্রিপ্টটা দিয়ে দিয়েন, এতেই হবে।
- স্যরি। তোমাকে থাকতে হবে। আমাদের প্রযোজককে তো দেখছোই। উনি পানির মতো টাকা খরচ করছেন। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে খুব সিরিয়াস উনি। আমি বুঝতে পারছি তুমি ক্লান্ত। তাও থাকতে হবে মিটিং-এ
- আচ্ছা আপনি যান। রুম নাম্বার ৭০৭ তো? আঈ আসছি।
- ওকে
একটু পরে ফারিয়া সেভেন ফ্লোরে গিয়ে উপস্থিত হলো। এই ফ্লোরটা একটু অদ্ভুত। মনে হয় যেনো সাউন্ড প্রুফ। আর পুরো ফ্লোরে একটাও মানুষ নেই! একমাত্র ৭০৭ নাম্বার রুমেই আলো জ্বলছে। হেঁটে হেঁটে গিয়ে রুমে ঢুকতেই ফারিয়ার পিলে চমকে গেলো। প্রায় ৫-৬ জন পুরুষ সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় রুমের সোফা, চেয়র, বিছানায় বসে আছে। ফারিয়া দেখেই বুঝতে পারছিলো কি হতে যাচ্ছে। দৌড়ে পালাতে গেলো সে। কিন্তু পারলো না। একজন ছুটে এসে তাকে ধরে ফেলে টেনে রুমের মধ্যে নিয়ে গেলো।