Thread Rating:
  • 21 Vote(s) - 3.48 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
ক্ষমতার জোরের সামনে অসহায় শবনম ফারিয়া (সম্পূর্ণ)
#5
~ক্ষমতার জোরের সামনে অসহায় শবনম ফারিয়া ০৫

সবাই বলে কালাম মিয়ার হাতে জাদু আছে। তার দোকানের এক কাপ চা স্রেফ চা-পাতা, পানি আর চিনি সহযোগে প্রস্তুতকৃত কাপ ভর্তি এক ধরণের বিশেষ তরল নয়। এ যেন অমৃত, এক কাপ খেলেই শরীর-মন নিমেষে চাঙ্গা হয়ে যায়। শফিক এই দোকানে চা খায় গত পনেরো বছর ধরে। একসময় টাকার অভাবে বাকি খেতো। এখন সে চাইলে এমন ১০০টা চায়ের দোকান সে কিনে নিতে পারে। কিন্তু অভ্যাস হয়ে গেছে কালাম মিয়ার হাতের চায়ের। শত ব্যস্ততায়ও এখানেই চা খেতে আসে সে। এখন সকাল ৭টা, মান্নান মিয়ার চার দোকান সবসময় জমজমাট থাকে। সাকুল্যে দুটা বেঞ্চ দোকানে। দুটোই খদ্দেরে ভর্তি থাকে। চা-খোররা ভিড় জমায়। চা খায়, বিস্কুট খায়, সিগারেট ফুকে, আলাপ জমায়। শফিকের পাশে এক তরুণ বসে আছে। তার গেঞ্জিতে লেখা “দুধ চা খেয়ে তোকে গুলি করে দেবো।“ শফিক ভেবে পায় না এই বয়সি ছেলেদের মাথায় এইসব উদ্ভট চিন্তা কোথা থেকে আসে। সে এই বয়সে থাকতে শুধু ভাতের কথা ভাবতো। আজকাল ছেলে মেয়েরা কি ভাবে সে বুঝেই উঠতে পারে না। তার যে কাজ সেখানে সবসময়ই মানুষকে ডিল করতে হয়। তাই মানুষরে বুঝতে পারা তার জন্য খুব জরুরি। শফিক ইদানীং লক্ষ করছে তার চেহারা-আচরণে অমানবিক ভাবটা কমে গেছে। যে শফিক একসময় ভাবতো বুকে-মুখে লাথি না দিলে মানুষ তার কথা মতো চলবে না, সেই শফিকের এখন কাউকে মারতে গেলে হাত কাপে। তার পাশবিক বোধ কেনো কমে গেলো এসব ভাবনায় ছেদ পড়লো মোবাইলের ভাইব্রেশনে। ফোন ধরেই বললো,

-      জ্বী স্যার


-      মোহাম্মাদপুরের ঝামেলাটা মিটিয়েছো?


-      জ্বী স্যার


-      আর তোমাকে যে চট্টগ্রামের বলদ মেয়রটারে টাইট দিতে বলছিলাম সেটার কি হলো?


-      ওটাও হয়ে যাবে স্যার। কাজে লাগিয়ে দিয়েছি পোলাপাইনরে।


-      গুড। তুমি আছো বলে বড্ড স্বস্তিতে থাকি শফিক


-      আপনে আমাদের পাশে না থাকলে একদম খড়কুটোর মতো ভাইসা যাইতাম স্যার।


-      হয়েছে! অতীতের কাসুন্দি টেনোনা।


-      জ্বী স্যার


-      তোমার ভাতিজার খবর জানো?


-      ভাতিজার নিরাপত্তার জন্য সব খবরই রাখতে হয় স্যার।


-      অবস্থাতো বেশি ঘুলা হয়ে যাচ্ছে শফিক। তোমার ভাতিজাকে আটকাও। আমার মানসম্মান তো রাস্তায় নিয়ে আসবে,


-      কি করবো স্যার! এইবয়সের ছেলেতো এইগুলা একটু করবেই। সমস্যা হলে সামলে নিবো স্যার। আপনি ভাব্বেন না।


-      ভাবতে হয় শফিক। ও একমাত্র ছেলে আমার। রাস্তার মাগীদের মতো ওইসব অভিনেত্রীর প্রেমে পড়ে সারা শহর দাপিয়ে বেরাচ্ছে। কাল দেখবো এই বেশ্যারে বিয়ে করতে চাইবে। এভাবে চলতে দেয়া যায় না। ব্যাপারটা আটকাও।


-      কি করতে বলেন স্যার?


-      তুমি জানোনা এই অবস্থায় কি করতে হয়?


-      তা বুঝতে পারছি। কিন্তু স্যার, ইফতি বাবাজি বড্ড রাগ করবে।


-      সেটা সামলে নিবো।


-      স্যার, আমি কাজটা করতে চাচ্ছি না।


-      তোমার দলের কাউরে দিয়ে করাও


-      স্যার, ইফতি বাবাজি জানলে ওই ছেলেরে মেরে ফেলবে।


-      তাও ঠিক। ছেলের আমার দারুণ রাগ। অন্য কেউ হলে তাকে মারতেও আটকাবে না ওর। যা বুঝতেছি কাজটা আমাকেই করতে হবে। আমি তোমাকে তারিখ বলে দেবো। তুমি গাজীপুরের বাংলোটায় সব ব্যবস্থা কর।


-      স্যার, আর কয়েকদিন সময় নেন, আরেকবার ভেবে দেখেন। আর এরমধ্যে আমি দেখছি কিছু করা যায় কিনা।         


-      দেখো কিছু করতে পারো কি না। না হলে হার্ডলাইনেই যেতে হবে।


ফোন রেখে জামিল চৌধুরী চা পানে মনোযোগ দিলেন। সাধারণত সকালের চা বাপ-ছেলে একসাথে খান। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে এী রুটিনের ব্যতিক্রম হচ্ছে। তার ছেলে গভীর রাত অব্দি ওই মাগিটার সাথে ফোনে কথা বলে, যে কারণে সকালে দেরিতে উঠে। আর আগে উঠলেও খাবার টেবিলেও ওই মাগিটার সাথে ফোনে চ্যাট করতে থাকে থাকে। জামিল চৌধুরী অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিচ্ছেন। ছেলের এমন পরিবর্তন তার সহ্য হচ্ছে না। চৌধুরী পরিবারের ছেলেরা এসব মডেলদের চুদবে সেটা ঠিক আছে। তাই বলে ওসব বেশ্যাদের সাথে প্রেম করবে! বিয়ে করবে! এ-কিছুতেই মেনে নেইয়া যায় না। খুব দ্রুতই এই সমস্যা থাকে সমূলে উপড়ে ফেলতে হবে।


৫।


শফিক আহমেদের ফোন পেয়ে কিছুটা অবাক হয়েছিলো ফারিয়া। শফিক যখন বললো, জরুরী প্রয়োজন আছে আম্মাজান। দেখা করতেই হবে। তখন আর, না করতে পারে নি ফারিয়া। সে বসে আছে একটা ক্যাফেতে। সন্ধ্যার সময়। শফিক এসে তার মুখোমুখি চেয়ারে বসে সালাম দিলো। ফারিয়া লক্ষ্য করেছে ইফতির সাথে তার সম্পর্কের পর থেকেই শফিকের আচরণ একদম বদলে গেছে। শফিক তাকে এখন আম্মাজান বলে সম্বোধন করে। খুব সম্মান আর শ্রদ্ধার চোখে তাকায় তার দিকে, তার গলার স্বরে একধরণের বিনয় থাকে। একদম শুরুতে বিরক্ত হলেও লোকটাকে এখন ফারিয়ার বেশ লাগে। আর তাছাড়া ইফতিও লোকটাকে খুব পছন্দ করে। লোকটা দারুণ কাজের, কেমনে কেমনে জানি সব সামলে নিতে পারে। এইতো গেলো মাসে এক নতুন প্রযোজক তাকে নোংরা ইংগতি করেছিলো। সেটা শফিককে জানতেই কি করেছে খোদা জানে! পরদিন ওই প্রযোজক এসে তার পা ধরে মাফ চেয়ে গেছে।


-      আম্মাজানের শরীর ভালো?


-      চলে যাচ্ছে শফিক চাচা।


-      ইফতি বাবাজীর কি খবর?


-      আপনার ভাতিজার খবর তো আপনার ভালো জানার কথা।


এটাসেটা বলে শফিক পরিবেষ স্বাভাবিক করে নিতে পারলেও কিছুতেই মূল কথাটা বলতে পারছে না সে। সে মানুষ হিসেবে জানোয়ার শ্রেনির কিন্তু ইফতি আর ফারিয়াকে একসাথে দেখতে তার ভালো লাগে। মনে হয় এরা সত্যি একে অপরের পরিপূরক। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে কথাটা বললো শফিক,


-      আম্মাজান, আপনার আর ইফতি বাবাজীর সম্পর্কটারে মন্ত্রীসাহেব ভালো চোখে দেখছেন না।


-      মানে?


-      মানেতো অনেক কিছু। সহজ করে বললে, আপনারে ইফতি বাবাজীর সাথে সম্পর্কটা শেষ করতে হবে। এই নিয়ে আর কিছু হোক স্যার সেটা চান না।


-      সমস্যা কি আপনাদের! কি পেয়েছেন আমাকে? রোবট? একদিন মাঝরাতে গাড়ি আঁটকে বললেন, যাও ওই ছেলে সাথে শুয়ে রাত কাটাও। এখন বলছেন, ওই ছেলেকে ছেড়ে চলে যাও। আমরা অভিনেতারা কি মানুষ না?


-      তা বলি নি আম্মাজান!


-      তো কি বলছেন? নিজের জীবনে একটু শান্তিতে আছি এতবছর পরে। ইফতিকে আমি সত্যি ভালবাসি। এরমধ্যে কোন স্বার্থ নেই। আর ইফতিতো আমাকে নিয়ে সুখেই আছে। তাহলে সমস্যাটা কি!


-      সমস্যা তো স্যারের হচ্ছে। স্যার মনে করছে এইটা তার মান ইজ্জতের প্রশ্ন। 


-      আমি পারবো না এসব করতে। আপনি নইলে আপনার স্যার গিয়ে ইফতিরে বলেন আমাকে ছেড়ে দিতে। ও নিজে থেকে আমাকে ভুলে গেলে আমিও নিজেকে সামলে নেবো। কিন্তু আমি নিজে থেকে ওকে ধোঁকা দিবো না।


আরো অনেকক্ষণ শফিক আহমদ ফারিয়াকে বুঝানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না। শেষের দিকে ফারিয়া রেগে গিয়ে চেঁচামেচি শুরু করলো। শফিক তাকে অনেক কষ্টে সামলে নিলো। শফিক বুঝতে পারছে ব্যাপারটা ভালো দিকে যাচ্ছে না। এরপর যা ঘটবে তার আরও ভয়াবহ। কিন্তু এছাড়া আর উপায় কি! ইফতিকে জামিল চৌধুরী কখনোই বলবে না ফারিয়াকে ছেড়ে দিতে। বাবা হিসেবে তার ভার কমে যাবে তাতে। জামিল চৌধুরী ছেলের কাছে দেবতা হয়েই থাকতে চাইবে। যা নোংরামি ঘটবে সব হবে ফারিয়ার সাথে। শফিকের প্রচন্ড হতাশ লাগছে। এসব কাজ ছেড়েছুড়ে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে তার।


এইভাবে আরো দিন পনেরো যাওয়ার পর জামিল চৌধুরী বলল,


-      পারলে না তো শফিক!


-      স্যরি স্যার। এদের সামাল দিতে পারছি না।


-      তাহলে প্ল্যাব বি একটিভ করো । আগামীকাল রাতে আমি গাজীপুরে যাচ্ছি। বাকিটা তুমি সামলাও।


-      আচ্ছা স্যার।


 

শফিক এখন বসে আছে ফারিয়ার পাশে। ফারিয়া তার পাশে অজ্ঞান হয়ে শুয়ে আছে। গাড়ি ছুটে চলছে গাজীপুরের বাংলোর দিকে। এই কাজটা করতে শফিকের খারাপ লাগছে কিন্তু স্যারের কথার উপর কথা নাই। জামিল চৌধুরী ফারিয়ার এমন অবস্থা করবে যে ফারিয়া কখনো আর ইফতির সামনে দাড়াতে পারবে না। শফিকের নিজেকে অমানুশ মনে হচ্ছে। কিন্তু নিজের অসহায়ত্বর সামনে কিইবা করার আছে তার।

Like Reply


Messages In This Thread
RE: ক্ষমতার জোরের সামনে অসহায় শবনম ফারিয়া (সম্পূর্ণ) - by Orbachin - 08-01-2022, 03:32 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)