08-01-2022, 02:23 AM
(This post was last modified: 08-01-2022, 02:27 AM by nandanadasnandana. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
তিন
যাই হোক রাতে দিদির পাশে শুয়ে দিদিকে বলেই দিলাম, দিদির কথার উত্তর টা।
- দ্যাখ দিদি, এখানে হয়ত তুই খেতে পাবি, এটা নিশ্চিত, কিন্তু সারা জীবন মরে বাঁচবি। আমি তুই কেউ জানিনা, ললিত দা কত টা তোকে পড়াবে। কিন্তু এটা জানি, বাবার দেখা পাত্রে বিয়ে করলে , তুই আর কোন দিন ও পড়তে পারবি না। কি অহংকার লোক টার।
দিদি আমার দিয়ে চেয়ে রইল। জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠল। আমিও দিদি কে জড়িয়ে ধরলাম। বলা ভাল আঁকড়ে ধরলাম। বুঝে গেলাম দিদি খুব অসহায়। বুঝে গেলাম আমাকেই যা করার করতে হবে।
বেল বাজতেই, দরজা খুললাম। ঝড়ের আগে এঁটো পাতের মতন মেয়ে আর ছেলে এসে হাজির। ওদের বাপ আসছে। তখন তিনজনে কম্পিটিশন হয় কে আগে দরজায় পৌঁছবে। ছেলেটা আরো সাংঘাতিক। এই বয়সেই, সব রকম গাড়ীর আওয়াজ ওর জানা। ও ঠিক বুঝে যায় যে ওর বাপের গাড়ি এল।
কাজেই আমি আর মেয়ে আসার অনেক আগে ও দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে আর তিড়িং বিরিং করে লাফায় বাপ আসার আনন্দে। বলা বাহুল্য, আমি সবার লেট এর পৌঁছাই। কেউ উপরের ছিটকিনি নাগাল পায় না বলে আমার জন্য অপেক্ষা করে। না হলে হয়ত দেখতাম, ওর বাপ ঘরে ঢুকে পড়েছে আমি জানতে পারার আগেই।
ছেলে বাপ আর মেয়ে তে আদর হয়ে গেল। মা সবার পরে। ছেলে আর মেয়ে একটু দূরে যেতেই ও আমাকে টেনে ধরে চুমু খেল। আমি বড্ড ভালবাসি এটা। মুখে বলি বটে,
- মেয়েটা বড় হচ্ছে না? কি যে কর না তুমি?
- মানু???????
মানু কথা টা ও ছেলে মেয়ে দুজনাকেই বলে। অতএব মানু শুনে দুজনাই তাকাল এদিকে। আবার আমার কোমর ধরে আমাকে টেনে আবার চুমু খেল। চুমু খেয়েই পালাল ভিতরে। আমি কিল টা ছুড়লাম, কিন্তু আগেই ও পালাল।
আমি হাসি মুখে রান্না ঘরে গিয়ে গ্লাসে জল নিয়ে গেলাম ওর কাছে। দেখলাম জুতো খুলে পোশাক টা খুলছে। আমার হাত থেকে জল টা নিয়ে খেল। বললাম
- চা খাবে শুধু, নাকি কিছু খাবে আরো?
- আজকে রাতে কি রান্না?
- রুটি, সব দিয়ে সব্জি, আর ডিম ভাজা।
- তবে দুটি মুড়ি দাও।
ওই রকম ই ও। রাতের খাবার যুত না পেলে, সন্ধ্যে তে কিছু একটা খাবে। তারপরে সারা সন্ধ্যে টাই ছেলে মেয়ে কে খেলাধুলো চলল ওর।
রাতে তিনজনের কেউ ই আমার ছাড়া শোবে না। মানুষ তো আমি একটা। কি করে তিনভাগ হই। সেই জন্য যখন দুটো কে ঘুম পাড়াই, আমি শুই মাঝে। এক দিকে ছেলে আর এক দিকে মেয়ে। ছেলে টা এখনো বুকের দুধ ছাড়ে নি। বর তখন কাজ করে। ফোনে অনেক কথা চলে। মাঝে মাঝে লেট নাইট মিটিং এও ঢুকে পরে। আমাদের বাংলোর মধ্যেই ওর অফিস আছে। সেখানে অনেকে অপেক্ষা করে অনেক রাত অব্দি। ছেলে মেয়ে ঘুমিয়ে গেলে, মেয়েকে ছেলের ওদিকে দিয়ে দি। আর বর এসে আমার পাশে শুয়ে পরে। ওকে ছাড়া আমার ও ঘুম হয় না।
অনেক দিন ছেলে মেয়েকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে, আমিও ঘুমিয়ে যাই। ঘুম ভেঙ্গে দেখি ও পাশে নেই। কারন ও চলে আসলে আমাকে তুলে দেয় ঘুম থেকে। দশ বছর বিয়ে হয়েছে আমাদের। এই দশ বছরে, প্রথম মাস ছয়েক বাদ দিলে, আমার পিরিয়ডের দিন ছাড়া, আর হয় তো কেউ নেই বাড়িতে, সেই রকম দিন ছাড়া, এমন কোন দিন নেই যেদিনে ও আমাকে সেক্স করে না। এটা আমাদের নিয়মিত। সেটাই ভাবি, যে মেয়ে একদিন, এই পুরুষ দের কেই ঘৃনা করত।
সে আজকে নিজের বর কে ছাড়া শুতেই পারে না। সেটাও দুই বাচ্ছার মা হবার পরে। এক ললিত দা আমাকে বুঝতে শিখিয়েছিল, সব পুরুষ, আমার বাবা নয়। সব পুরুষ আমার জামাইবাবু দের মতন না। কিছু মানুষ ললিত দা র মতন ও আছে।
আজকে ঘুম এলো না। আমার বর আমাদের তিনজনা কে চুমু খেয়ে নীচে গেল কাজ করতে। আহা কতই বা বয়েস, এই বয়সেই এত বড় দায়িত্ব ওর কাঁধে। আমি আবার ভাবতে লাগলাম। মেয়েটার মাথায় হাত দিয়ে আছি আর ছেলে টা তো বোঁটা মুখে নিয়ে পড়ে আছে। চোষে না। বা একটা মুখে অন্য টা হাতে। এই হলেই মহারাজ ঘুমিয়ে যাবেন।
আমি তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম, ললিতদা র সাথে দিদি কে ভাগিয়ে দেব। যেদিন প্ল্যান টা হয়েছিল, তার আগে ললিত দা গ্যারাজ বিক্রি করে, মা কে নিয়ে কলকাতায় একটা বাসা ঠিক করে রেখে এসেছিল। দিদি না থাকলে আমি যে একেবারে একা হয়ে যাব এই নিয়ে কোন সন্দেহই ছিল না আমার। কিন্তু আমি জানতাম, আমার মতন মানসিক জোর দিদির নেই। আমি এদের মধ্যে থেকেও অনেক কিছু আদায় করে নিতে পারব। যেটা দিদি পারবে না।
আর আমাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া অতো সহজ না। দিদিকে দেওয়া সহজ। দিদি সুখী মেয়ে। দিদির ব্যাপার টা খুব সরল। নিজে ভুল করবেও না আর ঝক্কিও নেবে না। তাই ও অতো চাপ নিতে পারবে না বলেই আমার বিশ্বাস ছিল। সেই বিশ্বাস যে অমূলক ছিল না তার পরিচয় আমি বহুবার পেয়েছি। কিন্তু আমার জীবনের মোক্ষম সময়ে দিদি আমার সাথে ছিল শেষ অব্দি।
সেদিন রাতে সবাই ঘুমলে আমি আর দিদি পিছনের পুকুরের পাড় দিয়ে মেন রোডে এলাম। তখন দেখি, ললিত দা দাঁড়িয়ে আছে, একটা বন্ধুর সাইকেল নিয়ে। এতো রাতে তো বাস পাওয়া যাবে না। তাই সাইকেল এ করে প্রায় কুড়ি কিমি দূরে, সীমানাপুর । সেখান থেকে ট্রেন ধরবে, রাতের। শিয়ালদা পৌছবে ভোর নাগাদ। দিদি সাইকেল এ চড়ে বসতেই , যেন আমার জীবন টা খালি হয়ে গেল মনে হলো। মনে হলো, আমার জীবন থেকে হাসি খুশী সব সাইকেল এ চড়ে বিদায় নিচ্ছে। মন কে শক্ত করলাম। এই সমাজ, আমার বাবা, আমার দিদিদের অত্যাচার সবার বিরুদ্ধে, এক সাথে আমার মন এমন বিদ্রোহ ঘোষণা করল যে আমি এক ফোঁটা কান্না কথা ভাবলাম ও না। বরং, গলার হার আর কানের দুটো নিয়ে এসেছিলাম সাথে করে, দিদির হাতে ধরিয়ে দিলাম। ললিত দা কে বললাম
- যে গুল দিলাম দিদির হাতে, বিক্রি করতে পিছুপা হয়ো না।তোমাদের প্রয়োজনে লাগবে। আমার দিদিকে পড়াশোনা করিও। আর খুব ভালো রেখ। যদি বেঁচে থাকি একদিন না একদিন দেখা হবেই।
ললিত দাও কেঁদে ফেলেছিল। বলেছিল
- কথা দিলাম বোন। তোর দিদি কে নিজের প্রাণের থেকেও বেশী ভালোবাসব আমি। আর ও যতদুর পড়তে চায় আমি পড়াব।
দাঁড়িয়েছিলাম আমি, যতক্ষন ওদের সাইকেল দেখা যায়। দাঁড়িয়ে ছিলাম, যতক্ষন সাইকেলের আওয়াজ শোনা যায়। বাড়িতে এসে দেখলাম মহাশূন্যতা। ঘরে ঢুকে দেখলাম, দুজনে শুতাম , একটা ছোট ঘর, কিন্তু যেন মনে হচ্ছে, কি বিশাল। সেদিন বুঝেছিলাম, একাকীত্বের মানে। বুঝেছিলাম, আনন্দের মানে। এতো শূন্যতা, এতো অন্ধকার?
রাতে ঘুম তো হয় নি। ভোরের দিকে ঘুমিয়ে গেছিলাম হয়ত। আমার ঘরে সহসা অনেক লোকের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখি বাবা, কাকা, ঠাকুমা, দাদু মা বড়দি মেজদি দাঁড়িয়ে। সেদিনে বড় জামাইবাবু ও এসেছিল। পছন্দ করতাম না লোক টা কে। মনে হতো, বড়দির গোলাম একেবারে। বাবার রাগ দেখে বুঝে গেছিলাম যে বাবা জেনে গেছে।
তারপরে চড়, থাপ্পড়, লাথি কিছুই বাদ গেলো না আমার। ভাগ্যিস ছোটো করে কাটা, ছেলেদের মতন চুল ছিল আমার। না হলে চুল মনে হয় সব উপড়ে ফেলত বাবা। পাড়া প্রতীবেশি জড়ো হয়ে গেল। উঠোনে আমার বিচার সভা চলল। আর আমার মা আর কাকি। কাকি তো তাও বাবার পায়ে ধরে- দাদা আর মারবেন না মেয়ে টা কে বলে কাঁদছিল। আর আমার মা ডুকরে ডুকরে কাঁদছিল আর জল ভরা চোখে দেখছিল আমার মার খাওয়া। আর কাকা। কোন কালেই বাবার মুখের উপড়ে কথা বলার সাধ্যি হয় নি কাকার। হয়ত নীরবে চোখের জল ফেলেছিল।
এ কী চাট্টিখানি কথা? বাবার মুখ ছোট হলো না? বাবার ঠিক করা পাত্রের বাড়িতে বাবার কত খানি নাম বদনাম হলো। বাংলাদেশ থেকে ভিখারীর মতন আসা আমার বাবা, আজকে যে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, আমি আর দিদি, সেই প্রতিষ্ঠার উপড়ে কলঙ্ক লেপে দিই নি? কিন্তু আমাকে টলাতে পারে কার সাধ্যি। মুখ তো খুলিনি, বরং মেজদির মুখের উপড়ে এক দলা থুতু ছিটিয়ে দিয়েছিলাম। কারন, মেজদি ই বাবাকে বলে দিয়েছিল পুরো টা। কি করে জানতে পারল কে জানে? থুতু ছিটিয়ে দেবার পরে আমি আর দেখিনি কে কে আমাকে মেরেছে। শুধু বুঝছিলাম, আমার পিঠে বেল্ট পড়ছে নির্মম ভাবে। প্রথম মনে হয় আমি কাঁদলাম। বড্ড কস্ট হচ্ছিল আমার। অনেক গুলো বেল্টের মার পড়ার পরে, মনে হচ্ছিল অজ্ঞান হয়ে যাব। - মা গো!!!!! বলে চীৎকার করতেই আমার মা ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল।
মাঝে মাঝেই জ্ঞান ফিরছিল আমার। মুখ ফুলে গেছিল, অনবরত থাপ্পড় খেয়ে। পিঠ কেটে ফালা ফালা হয়ে গেছিল। ভাগ্যিস মিলিয়ে গেছে সেই সব আজকের দিনে। না হলে আমার বর টাই হয়তো আমার বাবাকে খুন করে ফেলত। জ্ঞান ফিরছিল আর যন্ত্রণায় আমি অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলাম। চোখে ভাসছিল, আমার ছোড়দি অনেক বড় হয়েছে। অনেক বড় প্রোফেসর হয়েছে। আর যন্ত্রণা টা কমে যাচ্ছিল আমার। কাকির কোলে মাথা রেখে ছিলাম। ওঠে নি কাকি আমাকে ছেড়ে। সন্ধ্যে বেলায় বড়ই ঠান্ডা হাত পড়ল আমার গায়ে। মনে হলো আমার মা। ইচ্ছে করছিল মা কে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু এতো ব্যাথা যে আমার কথা বলার ক্ষমতা নেই তো উঠে জড়িয়ে ধরব।
পরে শুনেছিলাম, মা আর কাকিমা মিলে সেদিন রান্না ঘর ধর্মঘট করে দিয়েছিল। বাড়িতে জামাই, আর রান্না চাপবে না তাই হয় নাকি? তাই বাবা বাধ্য হয়ে ডাক্তার ডেকে আনিয়েছিল। অনেক ওষুধ পালা দিয়েছিল সেটাই স্বাভাবিক। দুটি খাবার ক্ষমতাও ছিল না আমার। অনেক রাত মনে হয় তখন। বা জানিনা কত রাত। বা রাত ও কিনা জানি না। চোখ তো খুলতেই পারছিলাম না। একটা কচি হাত আমার গালে, পিঠে ঘুরে বেরাচ্ছিল। আর ফোঁস ফোঁস করে কান্নার আওয়াজ আসছিল। এতো যন্ত্রণা শরীরে আমার। তাও ভালো লেগেছিল। যাক, পাঁকে পদ্মফুল ও ফোটে তবে? ওটা অর্জুন বাবু। সবার নজর এড়িয়ে আমাকে দেখতে এসেছে। কি জানি কিছু তো ছিল, অর্জুনের সেই কান্নায়, সেই স্পর্শে। মন টা ভালো হয়ে গেছিল আমার। ওকে ঘুরে দেখার সাধ্যি ছিল না আমার। কিন্তু ওর স্পর্শ বড্ড ভালো লাগছিল। মনে হচ্ছিল সব ব্যাথা, সব বেদনা আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
যাই হোক রাতে দিদির পাশে শুয়ে দিদিকে বলেই দিলাম, দিদির কথার উত্তর টা।
- দ্যাখ দিদি, এখানে হয়ত তুই খেতে পাবি, এটা নিশ্চিত, কিন্তু সারা জীবন মরে বাঁচবি। আমি তুই কেউ জানিনা, ললিত দা কত টা তোকে পড়াবে। কিন্তু এটা জানি, বাবার দেখা পাত্রে বিয়ে করলে , তুই আর কোন দিন ও পড়তে পারবি না। কি অহংকার লোক টার।
দিদি আমার দিয়ে চেয়ে রইল। জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠল। আমিও দিদি কে জড়িয়ে ধরলাম। বলা ভাল আঁকড়ে ধরলাম। বুঝে গেলাম দিদি খুব অসহায়। বুঝে গেলাম আমাকেই যা করার করতে হবে।
বেল বাজতেই, দরজা খুললাম। ঝড়ের আগে এঁটো পাতের মতন মেয়ে আর ছেলে এসে হাজির। ওদের বাপ আসছে। তখন তিনজনে কম্পিটিশন হয় কে আগে দরজায় পৌঁছবে। ছেলেটা আরো সাংঘাতিক। এই বয়সেই, সব রকম গাড়ীর আওয়াজ ওর জানা। ও ঠিক বুঝে যায় যে ওর বাপের গাড়ি এল।
কাজেই আমি আর মেয়ে আসার অনেক আগে ও দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে আর তিড়িং বিরিং করে লাফায় বাপ আসার আনন্দে। বলা বাহুল্য, আমি সবার লেট এর পৌঁছাই। কেউ উপরের ছিটকিনি নাগাল পায় না বলে আমার জন্য অপেক্ষা করে। না হলে হয়ত দেখতাম, ওর বাপ ঘরে ঢুকে পড়েছে আমি জানতে পারার আগেই।
ছেলে বাপ আর মেয়ে তে আদর হয়ে গেল। মা সবার পরে। ছেলে আর মেয়ে একটু দূরে যেতেই ও আমাকে টেনে ধরে চুমু খেল। আমি বড্ড ভালবাসি এটা। মুখে বলি বটে,
- মেয়েটা বড় হচ্ছে না? কি যে কর না তুমি?
- মানু???????
মানু কথা টা ও ছেলে মেয়ে দুজনাকেই বলে। অতএব মানু শুনে দুজনাই তাকাল এদিকে। আবার আমার কোমর ধরে আমাকে টেনে আবার চুমু খেল। চুমু খেয়েই পালাল ভিতরে। আমি কিল টা ছুড়লাম, কিন্তু আগেই ও পালাল।
আমি হাসি মুখে রান্না ঘরে গিয়ে গ্লাসে জল নিয়ে গেলাম ওর কাছে। দেখলাম জুতো খুলে পোশাক টা খুলছে। আমার হাত থেকে জল টা নিয়ে খেল। বললাম
- চা খাবে শুধু, নাকি কিছু খাবে আরো?
- আজকে রাতে কি রান্না?
- রুটি, সব দিয়ে সব্জি, আর ডিম ভাজা।
- তবে দুটি মুড়ি দাও।
ওই রকম ই ও। রাতের খাবার যুত না পেলে, সন্ধ্যে তে কিছু একটা খাবে। তারপরে সারা সন্ধ্যে টাই ছেলে মেয়ে কে খেলাধুলো চলল ওর।
রাতে তিনজনের কেউ ই আমার ছাড়া শোবে না। মানুষ তো আমি একটা। কি করে তিনভাগ হই। সেই জন্য যখন দুটো কে ঘুম পাড়াই, আমি শুই মাঝে। এক দিকে ছেলে আর এক দিকে মেয়ে। ছেলে টা এখনো বুকের দুধ ছাড়ে নি। বর তখন কাজ করে। ফোনে অনেক কথা চলে। মাঝে মাঝে লেট নাইট মিটিং এও ঢুকে পরে। আমাদের বাংলোর মধ্যেই ওর অফিস আছে। সেখানে অনেকে অপেক্ষা করে অনেক রাত অব্দি। ছেলে মেয়ে ঘুমিয়ে গেলে, মেয়েকে ছেলের ওদিকে দিয়ে দি। আর বর এসে আমার পাশে শুয়ে পরে। ওকে ছাড়া আমার ও ঘুম হয় না।
অনেক দিন ছেলে মেয়েকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে, আমিও ঘুমিয়ে যাই। ঘুম ভেঙ্গে দেখি ও পাশে নেই। কারন ও চলে আসলে আমাকে তুলে দেয় ঘুম থেকে। দশ বছর বিয়ে হয়েছে আমাদের। এই দশ বছরে, প্রথম মাস ছয়েক বাদ দিলে, আমার পিরিয়ডের দিন ছাড়া, আর হয় তো কেউ নেই বাড়িতে, সেই রকম দিন ছাড়া, এমন কোন দিন নেই যেদিনে ও আমাকে সেক্স করে না। এটা আমাদের নিয়মিত। সেটাই ভাবি, যে মেয়ে একদিন, এই পুরুষ দের কেই ঘৃনা করত।
সে আজকে নিজের বর কে ছাড়া শুতেই পারে না। সেটাও দুই বাচ্ছার মা হবার পরে। এক ললিত দা আমাকে বুঝতে শিখিয়েছিল, সব পুরুষ, আমার বাবা নয়। সব পুরুষ আমার জামাইবাবু দের মতন না। কিছু মানুষ ললিত দা র মতন ও আছে।
আজকে ঘুম এলো না। আমার বর আমাদের তিনজনা কে চুমু খেয়ে নীচে গেল কাজ করতে। আহা কতই বা বয়েস, এই বয়সেই এত বড় দায়িত্ব ওর কাঁধে। আমি আবার ভাবতে লাগলাম। মেয়েটার মাথায় হাত দিয়ে আছি আর ছেলে টা তো বোঁটা মুখে নিয়ে পড়ে আছে। চোষে না। বা একটা মুখে অন্য টা হাতে। এই হলেই মহারাজ ঘুমিয়ে যাবেন।
আমি তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম, ললিতদা র সাথে দিদি কে ভাগিয়ে দেব। যেদিন প্ল্যান টা হয়েছিল, তার আগে ললিত দা গ্যারাজ বিক্রি করে, মা কে নিয়ে কলকাতায় একটা বাসা ঠিক করে রেখে এসেছিল। দিদি না থাকলে আমি যে একেবারে একা হয়ে যাব এই নিয়ে কোন সন্দেহই ছিল না আমার। কিন্তু আমি জানতাম, আমার মতন মানসিক জোর দিদির নেই। আমি এদের মধ্যে থেকেও অনেক কিছু আদায় করে নিতে পারব। যেটা দিদি পারবে না।
আর আমাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া অতো সহজ না। দিদিকে দেওয়া সহজ। দিদি সুখী মেয়ে। দিদির ব্যাপার টা খুব সরল। নিজে ভুল করবেও না আর ঝক্কিও নেবে না। তাই ও অতো চাপ নিতে পারবে না বলেই আমার বিশ্বাস ছিল। সেই বিশ্বাস যে অমূলক ছিল না তার পরিচয় আমি বহুবার পেয়েছি। কিন্তু আমার জীবনের মোক্ষম সময়ে দিদি আমার সাথে ছিল শেষ অব্দি।
সেদিন রাতে সবাই ঘুমলে আমি আর দিদি পিছনের পুকুরের পাড় দিয়ে মেন রোডে এলাম। তখন দেখি, ললিত দা দাঁড়িয়ে আছে, একটা বন্ধুর সাইকেল নিয়ে। এতো রাতে তো বাস পাওয়া যাবে না। তাই সাইকেল এ করে প্রায় কুড়ি কিমি দূরে, সীমানাপুর । সেখান থেকে ট্রেন ধরবে, রাতের। শিয়ালদা পৌছবে ভোর নাগাদ। দিদি সাইকেল এ চড়ে বসতেই , যেন আমার জীবন টা খালি হয়ে গেল মনে হলো। মনে হলো, আমার জীবন থেকে হাসি খুশী সব সাইকেল এ চড়ে বিদায় নিচ্ছে। মন কে শক্ত করলাম। এই সমাজ, আমার বাবা, আমার দিদিদের অত্যাচার সবার বিরুদ্ধে, এক সাথে আমার মন এমন বিদ্রোহ ঘোষণা করল যে আমি এক ফোঁটা কান্না কথা ভাবলাম ও না। বরং, গলার হার আর কানের দুটো নিয়ে এসেছিলাম সাথে করে, দিদির হাতে ধরিয়ে দিলাম। ললিত দা কে বললাম
- যে গুল দিলাম দিদির হাতে, বিক্রি করতে পিছুপা হয়ো না।তোমাদের প্রয়োজনে লাগবে। আমার দিদিকে পড়াশোনা করিও। আর খুব ভালো রেখ। যদি বেঁচে থাকি একদিন না একদিন দেখা হবেই।
ললিত দাও কেঁদে ফেলেছিল। বলেছিল
- কথা দিলাম বোন। তোর দিদি কে নিজের প্রাণের থেকেও বেশী ভালোবাসব আমি। আর ও যতদুর পড়তে চায় আমি পড়াব।
দাঁড়িয়েছিলাম আমি, যতক্ষন ওদের সাইকেল দেখা যায়। দাঁড়িয়ে ছিলাম, যতক্ষন সাইকেলের আওয়াজ শোনা যায়। বাড়িতে এসে দেখলাম মহাশূন্যতা। ঘরে ঢুকে দেখলাম, দুজনে শুতাম , একটা ছোট ঘর, কিন্তু যেন মনে হচ্ছে, কি বিশাল। সেদিন বুঝেছিলাম, একাকীত্বের মানে। বুঝেছিলাম, আনন্দের মানে। এতো শূন্যতা, এতো অন্ধকার?
রাতে ঘুম তো হয় নি। ভোরের দিকে ঘুমিয়ে গেছিলাম হয়ত। আমার ঘরে সহসা অনেক লোকের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখি বাবা, কাকা, ঠাকুমা, দাদু মা বড়দি মেজদি দাঁড়িয়ে। সেদিনে বড় জামাইবাবু ও এসেছিল। পছন্দ করতাম না লোক টা কে। মনে হতো, বড়দির গোলাম একেবারে। বাবার রাগ দেখে বুঝে গেছিলাম যে বাবা জেনে গেছে।
তারপরে চড়, থাপ্পড়, লাথি কিছুই বাদ গেলো না আমার। ভাগ্যিস ছোটো করে কাটা, ছেলেদের মতন চুল ছিল আমার। না হলে চুল মনে হয় সব উপড়ে ফেলত বাবা। পাড়া প্রতীবেশি জড়ো হয়ে গেল। উঠোনে আমার বিচার সভা চলল। আর আমার মা আর কাকি। কাকি তো তাও বাবার পায়ে ধরে- দাদা আর মারবেন না মেয়ে টা কে বলে কাঁদছিল। আর আমার মা ডুকরে ডুকরে কাঁদছিল আর জল ভরা চোখে দেখছিল আমার মার খাওয়া। আর কাকা। কোন কালেই বাবার মুখের উপড়ে কথা বলার সাধ্যি হয় নি কাকার। হয়ত নীরবে চোখের জল ফেলেছিল।
এ কী চাট্টিখানি কথা? বাবার মুখ ছোট হলো না? বাবার ঠিক করা পাত্রের বাড়িতে বাবার কত খানি নাম বদনাম হলো। বাংলাদেশ থেকে ভিখারীর মতন আসা আমার বাবা, আজকে যে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, আমি আর দিদি, সেই প্রতিষ্ঠার উপড়ে কলঙ্ক লেপে দিই নি? কিন্তু আমাকে টলাতে পারে কার সাধ্যি। মুখ তো খুলিনি, বরং মেজদির মুখের উপড়ে এক দলা থুতু ছিটিয়ে দিয়েছিলাম। কারন, মেজদি ই বাবাকে বলে দিয়েছিল পুরো টা। কি করে জানতে পারল কে জানে? থুতু ছিটিয়ে দেবার পরে আমি আর দেখিনি কে কে আমাকে মেরেছে। শুধু বুঝছিলাম, আমার পিঠে বেল্ট পড়ছে নির্মম ভাবে। প্রথম মনে হয় আমি কাঁদলাম। বড্ড কস্ট হচ্ছিল আমার। অনেক গুলো বেল্টের মার পড়ার পরে, মনে হচ্ছিল অজ্ঞান হয়ে যাব। - মা গো!!!!! বলে চীৎকার করতেই আমার মা ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল।
মাঝে মাঝেই জ্ঞান ফিরছিল আমার। মুখ ফুলে গেছিল, অনবরত থাপ্পড় খেয়ে। পিঠ কেটে ফালা ফালা হয়ে গেছিল। ভাগ্যিস মিলিয়ে গেছে সেই সব আজকের দিনে। না হলে আমার বর টাই হয়তো আমার বাবাকে খুন করে ফেলত। জ্ঞান ফিরছিল আর যন্ত্রণায় আমি অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলাম। চোখে ভাসছিল, আমার ছোড়দি অনেক বড় হয়েছে। অনেক বড় প্রোফেসর হয়েছে। আর যন্ত্রণা টা কমে যাচ্ছিল আমার। কাকির কোলে মাথা রেখে ছিলাম। ওঠে নি কাকি আমাকে ছেড়ে। সন্ধ্যে বেলায় বড়ই ঠান্ডা হাত পড়ল আমার গায়ে। মনে হলো আমার মা। ইচ্ছে করছিল মা কে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু এতো ব্যাথা যে আমার কথা বলার ক্ষমতা নেই তো উঠে জড়িয়ে ধরব।
পরে শুনেছিলাম, মা আর কাকিমা মিলে সেদিন রান্না ঘর ধর্মঘট করে দিয়েছিল। বাড়িতে জামাই, আর রান্না চাপবে না তাই হয় নাকি? তাই বাবা বাধ্য হয়ে ডাক্তার ডেকে আনিয়েছিল। অনেক ওষুধ পালা দিয়েছিল সেটাই স্বাভাবিক। দুটি খাবার ক্ষমতাও ছিল না আমার। অনেক রাত মনে হয় তখন। বা জানিনা কত রাত। বা রাত ও কিনা জানি না। চোখ তো খুলতেই পারছিলাম না। একটা কচি হাত আমার গালে, পিঠে ঘুরে বেরাচ্ছিল। আর ফোঁস ফোঁস করে কান্নার আওয়াজ আসছিল। এতো যন্ত্রণা শরীরে আমার। তাও ভালো লেগেছিল। যাক, পাঁকে পদ্মফুল ও ফোটে তবে? ওটা অর্জুন বাবু। সবার নজর এড়িয়ে আমাকে দেখতে এসেছে। কি জানি কিছু তো ছিল, অর্জুনের সেই কান্নায়, সেই স্পর্শে। মন টা ভালো হয়ে গেছিল আমার। ওকে ঘুরে দেখার সাধ্যি ছিল না আমার। কিন্তু ওর স্পর্শ বড্ড ভালো লাগছিল। মনে হচ্ছিল সব ব্যাথা, সব বেদনা আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।