07-01-2022, 08:49 PM
দুই
আমি যে যে কারোর থেকে অনেক বেটার এই বিশ্বাস টা আমাকে দিয়েছিল আমার ছোড়দি। মাঝে মাঝে আমাকে সাজিয়েও দিত। বলত কি সুন্দরী আমার বোন টা। আমি রেগে খুলে দিতাম সব কিছু।, আর দিদি হাসত। আমাকে নিয়ে পড়াতে বসত। ওখানে ছাড় দিত না। নিজে ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রী ছিল। আর আমাকেও বানিয়েছিল সেই ভাবেই। কিন্তু যেটা ছোড়দি পারত না সেটা আমি খুব ভালো করে পারতাম। সেটা হলো অন্যায় দেখলে ঝাঁপিয়ে পরা। তা সে বাড়িতেই হোক বা বাড়ির বাইরে।
কম ছেলে মার খায় নি ওই সময়ে আমার হাতে। বাড়িতে কমপ্লেন কম আস্ত না। মোটামুটি রোজ সন্ধ্যে বেলায় আমার বাবার হাতে মার খাওয়া বাঁধা ছিল। মার ধর খেয়ে পড়তে বসতাম। আমি যখন ক্লাস সেভেন এ পড়ি, তখন আমার ছোড়দির মাধ্যমিক এর রেজাল্ট বেরোয়। দিদি পুরো জেলায় প্রথম হয়েছিল। পুরো রাজ্যেও একটা র্যাঙ্ক এসেছিল, কিন্তু সেটা আমাদের কাছে তেমন কোন ইম্পর্ট্যান্ট ছিল না। কারন আমার বাবার তেমন উৎসাহ ছিল না। আমাদের বাড়িতে তেমন কেউ কোনদিন পড়াশোনা করে নি। কাজেই কেউ জানত ও না বুঝতো ও না। আমাদের বাড়ির মেয়েদের কাছে ঘরের কাজ শেখা টা বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিল, পড়াশোনা শেখার থেকেও। কিন্তু এর মধ্যে একটা ঘটনা ঘটল।
আমি এক সন্ধ্যে বেলায় ফিরছিলাম খেলে ধুলে। বাড়ির পিছন দিকে ঢুকতাম। কারন আমার খেলা টা বাবার পছন্দ ছিল না। বড়দি, মেজদি, বলে দিত বাবাকে। তাই পিছন দিয়ে ঢুকতাম আমি। পিছনে একটা বড় পুকুর ছিল আমাদের। পুকুরের পাশে, দুই দিকে কলাবন আর আম গাছের বড় বাগান ছিল। লোকে ভয় পেত সেখানে। কিন্তু আমার অতো ভয় ডর ছিল না। আমি পিছন দিক থেকেই আসতাম। একদিন সন্ধ্যে বেলায় ফিরছি। অন্ধকার অন্ধকার ভাব হয়ে গেছে। এমন অন্ধকার যে সামনে না এলে কাউকেই চেনা যাবে না। বাড়ি থেকে একটু দূরে মনে হলো কেউ একজন আছে। আমার হাতে আমি একটা ইটের টুকরো তুলে নিয়ে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম।
- কে কে ওখানে।
কথা শেষ না হতেই, হাতের ইট টা বাঁই করে ছুঁড়ে দিয়েছি। উফ একটুর জন্য ফস্কে গেল। সাথে সাথেই আরেক তা ইট তুলে নিয়েছি। আমাকে ইট তুলতে দেখেই সে প্রায় চীৎকার করে উঠল।
- আরে আরে মারিস না। নান্দু, মারিস না রে আমি ললিত দা। কথা ছিল
- অ্যাঁ? ললিত দা? মানে গ্যারেজ এর ললিত দা?
- হ্যাঁ রে। মারিস না বোন আমার।
- না না মারছি না
আমি ভেবে পেলাম না ললিত দা, কেন দাঁড়িয়ে আছে এখানে। আর আমার সাথেই বা কি দরকার? যতদুর জানি, ললিত দা ভালো ছেলে। নিজের কাজ করে। বাবা নেই। মা আছে বাড়িতে। সবাইকে সম্মান করে। অনেক ছেলেই আমার হাতে মার খেয়েছে। কিন্তু ললিত দা কে আমার পছন্দই হয়। এক দুবার তো ললিতদার সামনেই ললিত দার কাকার ছেলে কে মার ধোর করেছিলাম। আমি এগিয়ে যেতেই বলল ললিত দা
- আমি এখানে তোর দিদির জন্য দাঁড়িয়ে আছি?
- মানে?
- মানে হলো, দ্যাখ তোর ছোড়দি মানে সুবর্না কে আমি পছন্দ করি। শুনলাম ওর জন্য ছেলে দেখছে। ওকে নাকি পড়াবে না তারা আর।
- হুম। ঠিক ই শুনেছ। কিন্তু তোমাকে কে বলল? দিদি?
- হ্যাঁ রে।
মনে মনে ভাবলাম দিদি ললিত দা কে বলেছে, এই কথা গুলো? মানে দিদিও পছন্দ করে ললিত দা কে? সত্যি তো।দিদির মতন ভাল মেয়ে এই তল্লাটে আসে নি। এদিকে ললিত দা বলে চলেছে
- বল, ওর এতো ভাল কেরিয়ার। আমি ওকে পড়াব। যত দিন ও পড়তে চায়। ওকে বল আমাকে বিয়ে করতে।
- কি? তুমি বিয়ে করবে? তুমি ও তো খুব একটা তেমন কিছু নউ যে ওকে দেখতে পারবে।
- হয়ে যাবে রে। দিন রাত আমি খাটব। ওকে আর মা কে নিয়ে চলে যাব কলকাতায়। ও জীবনে প্রতিষ্ঠা পাবে না? এতো ভালো পড়াশোনায়? দ্যাখ তোর বাবা বিয়ের ঠিক না করলে ওকে আমি বলতাম ও না কথা গুল।
আমি ভাবতেও পারছি না। ভালোবাসা কি বুঝিনি তখনো। কিন্তু ললিতদার চোখে আমি জানিনা কি দেখেছিলাম সেদিন। কিন্তু একেবারে ফিদা হয়ে গেছিলাম। ললিত দা বলেই চলেছে। আমি এতো কথা জীবনে ললিত দা কে বলতে শুনিনি।
- ও বলছে, ওর যা হয় হোক। আমাকে নাকি ভাবতে হবে না। দ্যাখ আমি লেখা পড়া শিখিনি। আমি হয়ত তোর দিদির যোগ্য ও নই। কিন্তু এটা না করলে ওর জীবন টা যে নষ্ট হয়ে যাবে।
বাড়ি ঢুকলাম যখন তখন আমার মাথা ভোঁ ভোঁ করছে। যাই হোক আজকে বাবা আর মারে নি। হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বসেছি দিদির কাছে। দিদি কুল। নিজের বই টা পড়ছে। চোখে চশমা টাও নেই। হাসি পেল আমার। আমি বাবা দিদি কেউ ই চশমা ছাড়া বিশেষ দেখতে পেতাম না। দিদি যে পড়ছে না, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম। আমি জোরে জোরে পড়তে শুরু করলাম। দিদি অবাক হয়ে তাকালো। কারন আমি জীবনে জোরে জোরে পড়িনি। আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
- ক্ষেপলি নাকি? – পরা থামিয়ে দিলাম। আমি চাইছিলাম দিদি আমার দিকে তাকাক।
- আচ্ছা দি,
- হুম কি?
- বলছি ললিত দা ছেলে টা ভাল বল?
দিদি চমকে উঠল। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। মনে হচ্ছিল যেন ভিতর টা শুদ্দু পড়ছে দিদি আমার। আমার দিদি মারাত্মক বুদ্ধিমতী। মনে মনে ভাবছি ইশ, কিছু একটা বলে ফেললাম, যেটা বলার দরকার ছিল না। দিদি কি রেগে গেল? দি কোন দিন ও আমার উপরে রাগে নি। কিন্তু রাগলেও, এটা দিদির জীবনের ব্যাপার। বলতে আমাকে হবেই। একটু কঠিন হয়েই বলল আমাকে
- কেন? ললিত দা র কথা কীসের পড়াশোনার সময়ে?
- না বলছিলাম।
- কেন বলবি কেন?
- এমনি।
- হুম ভালো ছেলে।
দিদির কথা উত্তরে মনে হলো দিদিও চাইছে ব্যাপার টা বলতে আমাকে। মানুষ কত অসহায় হলে এই সব কথা ছোট বোনের সাথে আলোচনা করে। আমি বলেই দিলাম
- জানিস দি, আমার মনে হয়, ললিত দা মিথ্যে বলছে না। বিয়ে হলে তোর এটা তো নিশ্চিত, তোর জীবন টা আমার মায়ের মতন হয়ে যাবে। ছেলে না হলে বার বার তোকে বাচ্চা নিতে হবে। ততদিন অব্দি তোকে বাচ্চা নিতে হবে যতদিন না তুই বংশের প্রদীপ আনতে পারছিস। আর ওই লোক টা কে দেখেছি। অনেক বড় তোর থেকে। আর খুব অহংকার। নেহাত তুই সুন্দরী তাই। না হলে কি আর বিয়ে করত? আর ললিত দা কে দেখ, কি সুন্দর মার্জিত।
দিদি হাঁ হয়ে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। এই বয়সে আমার মধ্যে এতো খানি বিষ? দিদি কিছু বলতে যাচ্ছিল আমাকে রেগে মেগে। কিন্তু চুপ করে গেল। খুব মিনমিন করে বলল,
- তাতে কি? বাবা দেখেছে পাত্র, মানে তোর দিদির খাওয়া পড়ার কোন ভাবনা থাকবে না তাই না?
ততক্ষনে কাকি আসাতে, আমরা আলোচনা বন্ধ রাখলাম। ওদিকে বড়দি এসেছে। বড়দির পাশে মেজদিও এসেছে। বড়দির প্রায় নয় বছর তখন বিয়ে হয়ে গেছিল। অর্জুন তখন আট বছরের ছেলে। মেজদির ও বিয়ে হয়েছে গেছিল তিন বছর মতন। বাবার দুই প্রিয় মেয়ে আসার কারনে, বাড়িতে ভালো মন্দ রান্না ও হয়েছে। সে হোক আমাদের ডাক সেই শেষ কালে আসবে। ওরা আসলে আমাদের সাথে বিশেষ কথা বার্তা বলে না। আমিও পছন্দ করি না ওই দুটো রাক্ষসীর সাথে কথা বলতে। ছোড়দি কথা বলে, কারন ছোড়দির স্বভাব টাই মিস্টি।
আরেক জন কথা বলে ওই গ্রুপে আমার সাথে, সে হলো অর্জুন। এখন আট বছর। কিন্তু শুনেছি, ওর বুদ্ধি মামার বাড়ির মাসীদের মতন। পড়াশোনায় মারাত্মক তুখোর। কলকাতায় ইংরাজী কলেজ এ পরে এখন ক্লাস টু তে। রোজ ভোর বেলায় আমি জগিং এ বেরোই, আর দেখি ভদ্রলোক উঠে লাট্টু খেলছেন উঠোনে। আমাদের বাড়ী টা বিশাল। চারদিকে ঘর। তিনতলা বড় বাড়ী, আর মাঝে বিশাল উঠোন। কাজেই যে ঘর থেকেই বেরোন হয় , উঠোণ টা চোখে পরে।
কথা হয় রোজ ই। কিন্তু সেকথা থাক এখন। আসলে এতো স্মৃতি ভিড় করছে, কোন টা বলব আর কোণ টা বলব না বুঝতে পারছি না। সব একটার উপর একটা চেপে যাচ্ছে ঘাড়ে। যাই হোক রাতে খাসীর মাংশ হয়েছিল, দুই মেয়ের জন্য। আমরাও ভাগ পেলাম আরকি।
আমি মা কাকি আর দিদি মিলে যখন খেয়ে উঠলাম, তখন বেশ রাত। দিদি মা আর কাকি বাসন মাজছিল, আর আমি দাঁড়িয়েছিলাম। আমাকে কাকি আর দিদি কিছুতেই ওদের সাথে বাসন মাজতে দেয় না। তাই আমি পাশে দাঁড়িয়ে, কল টিপে দিতাম ওদের জলের জন্য। অনেক ছোট থেকেই এটা আমি করে আসছি। আগে থেকে গিয়ে বালতি তে জল ভরে রাখব বলে আজকে গিয়ে দেখছি, অর্জুন বাবু ওখানে দাঁড়িয়ে জল টিপছে। আমি দৌড়ে গেলাম। ওকে তুলে পাশে দাড় করিয়ে দিলাম। আর নিজে কল টিপতে শুরু করলাম
- কি অর্জুন বাবু? এতো রাত হলো ঘুমোন নি।
- হিহি আমাকে আপনি বলছ কেন মিমি।
- আমাকে মিমি বলতে তোকে কে শিখিয়েছে।
- মনি
- মনি টা আবার কে?
ততক্ষনে দেখলাম, মা কাকি আর ছোড়দি বাসন পত্র নিয়ে এদিকেই আসছে। অর্জুন ছোড়দির দিকে আঙ্গুল তুলতেই বুঝলাম, ছোড়দি শিখিয়েছে।
- ও তা ঘুমোন নি যে?
- ঘুম আসছিল না।
- ও , কেন
উত্তর দিচ্ছে অর্জুন একেবারে বড়দের মতন
- এমনি, মা কে বলেই এসেছি, দিদুন, কাম্মা আর তোমাদের কাছে থাকব বলে
- বাবা, তোর মা আমাদের সাথে থাকতে তোকে ছেড়ে দিল?
ছোড়দি আমার মাথায় একটা টোকা দিল। আমি ঘুরে গেলাম ছোড়দির দিকে। বলল
- ওর কি দোষ। ওকে বলছিস কেন? দেখছিস না এমন নিষ্পাপ মুখ ক জনের হয় বলত?
আমার মা ততক্ষণে, একটা কাপড় কোথা থেকে এনে অর্জুনের মাথায় চাপিয়ে দিল। হিম পরছে নাকি। মা পারেও। পুজো গেল না হিম পড়ছে?
আমি যে যে কারোর থেকে অনেক বেটার এই বিশ্বাস টা আমাকে দিয়েছিল আমার ছোড়দি। মাঝে মাঝে আমাকে সাজিয়েও দিত। বলত কি সুন্দরী আমার বোন টা। আমি রেগে খুলে দিতাম সব কিছু।, আর দিদি হাসত। আমাকে নিয়ে পড়াতে বসত। ওখানে ছাড় দিত না। নিজে ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রী ছিল। আর আমাকেও বানিয়েছিল সেই ভাবেই। কিন্তু যেটা ছোড়দি পারত না সেটা আমি খুব ভালো করে পারতাম। সেটা হলো অন্যায় দেখলে ঝাঁপিয়ে পরা। তা সে বাড়িতেই হোক বা বাড়ির বাইরে।
কম ছেলে মার খায় নি ওই সময়ে আমার হাতে। বাড়িতে কমপ্লেন কম আস্ত না। মোটামুটি রোজ সন্ধ্যে বেলায় আমার বাবার হাতে মার খাওয়া বাঁধা ছিল। মার ধর খেয়ে পড়তে বসতাম। আমি যখন ক্লাস সেভেন এ পড়ি, তখন আমার ছোড়দির মাধ্যমিক এর রেজাল্ট বেরোয়। দিদি পুরো জেলায় প্রথম হয়েছিল। পুরো রাজ্যেও একটা র্যাঙ্ক এসেছিল, কিন্তু সেটা আমাদের কাছে তেমন কোন ইম্পর্ট্যান্ট ছিল না। কারন আমার বাবার তেমন উৎসাহ ছিল না। আমাদের বাড়িতে তেমন কেউ কোনদিন পড়াশোনা করে নি। কাজেই কেউ জানত ও না বুঝতো ও না। আমাদের বাড়ির মেয়েদের কাছে ঘরের কাজ শেখা টা বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিল, পড়াশোনা শেখার থেকেও। কিন্তু এর মধ্যে একটা ঘটনা ঘটল।
আমি এক সন্ধ্যে বেলায় ফিরছিলাম খেলে ধুলে। বাড়ির পিছন দিকে ঢুকতাম। কারন আমার খেলা টা বাবার পছন্দ ছিল না। বড়দি, মেজদি, বলে দিত বাবাকে। তাই পিছন দিয়ে ঢুকতাম আমি। পিছনে একটা বড় পুকুর ছিল আমাদের। পুকুরের পাশে, দুই দিকে কলাবন আর আম গাছের বড় বাগান ছিল। লোকে ভয় পেত সেখানে। কিন্তু আমার অতো ভয় ডর ছিল না। আমি পিছন দিক থেকেই আসতাম। একদিন সন্ধ্যে বেলায় ফিরছি। অন্ধকার অন্ধকার ভাব হয়ে গেছে। এমন অন্ধকার যে সামনে না এলে কাউকেই চেনা যাবে না। বাড়ি থেকে একটু দূরে মনে হলো কেউ একজন আছে। আমার হাতে আমি একটা ইটের টুকরো তুলে নিয়ে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম।
- কে কে ওখানে।
কথা শেষ না হতেই, হাতের ইট টা বাঁই করে ছুঁড়ে দিয়েছি। উফ একটুর জন্য ফস্কে গেল। সাথে সাথেই আরেক তা ইট তুলে নিয়েছি। আমাকে ইট তুলতে দেখেই সে প্রায় চীৎকার করে উঠল।
- আরে আরে মারিস না। নান্দু, মারিস না রে আমি ললিত দা। কথা ছিল
- অ্যাঁ? ললিত দা? মানে গ্যারেজ এর ললিত দা?
- হ্যাঁ রে। মারিস না বোন আমার।
- না না মারছি না
আমি ভেবে পেলাম না ললিত দা, কেন দাঁড়িয়ে আছে এখানে। আর আমার সাথেই বা কি দরকার? যতদুর জানি, ললিত দা ভালো ছেলে। নিজের কাজ করে। বাবা নেই। মা আছে বাড়িতে। সবাইকে সম্মান করে। অনেক ছেলেই আমার হাতে মার খেয়েছে। কিন্তু ললিত দা কে আমার পছন্দই হয়। এক দুবার তো ললিতদার সামনেই ললিত দার কাকার ছেলে কে মার ধোর করেছিলাম। আমি এগিয়ে যেতেই বলল ললিত দা
- আমি এখানে তোর দিদির জন্য দাঁড়িয়ে আছি?
- মানে?
- মানে হলো, দ্যাখ তোর ছোড়দি মানে সুবর্না কে আমি পছন্দ করি। শুনলাম ওর জন্য ছেলে দেখছে। ওকে নাকি পড়াবে না তারা আর।
- হুম। ঠিক ই শুনেছ। কিন্তু তোমাকে কে বলল? দিদি?
- হ্যাঁ রে।
মনে মনে ভাবলাম দিদি ললিত দা কে বলেছে, এই কথা গুলো? মানে দিদিও পছন্দ করে ললিত দা কে? সত্যি তো।দিদির মতন ভাল মেয়ে এই তল্লাটে আসে নি। এদিকে ললিত দা বলে চলেছে
- বল, ওর এতো ভাল কেরিয়ার। আমি ওকে পড়াব। যত দিন ও পড়তে চায়। ওকে বল আমাকে বিয়ে করতে।
- কি? তুমি বিয়ে করবে? তুমি ও তো খুব একটা তেমন কিছু নউ যে ওকে দেখতে পারবে।
- হয়ে যাবে রে। দিন রাত আমি খাটব। ওকে আর মা কে নিয়ে চলে যাব কলকাতায়। ও জীবনে প্রতিষ্ঠা পাবে না? এতো ভালো পড়াশোনায়? দ্যাখ তোর বাবা বিয়ের ঠিক না করলে ওকে আমি বলতাম ও না কথা গুল।
আমি ভাবতেও পারছি না। ভালোবাসা কি বুঝিনি তখনো। কিন্তু ললিতদার চোখে আমি জানিনা কি দেখেছিলাম সেদিন। কিন্তু একেবারে ফিদা হয়ে গেছিলাম। ললিত দা বলেই চলেছে। আমি এতো কথা জীবনে ললিত দা কে বলতে শুনিনি।
- ও বলছে, ওর যা হয় হোক। আমাকে নাকি ভাবতে হবে না। দ্যাখ আমি লেখা পড়া শিখিনি। আমি হয়ত তোর দিদির যোগ্য ও নই। কিন্তু এটা না করলে ওর জীবন টা যে নষ্ট হয়ে যাবে।
বাড়ি ঢুকলাম যখন তখন আমার মাথা ভোঁ ভোঁ করছে। যাই হোক আজকে বাবা আর মারে নি। হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বসেছি দিদির কাছে। দিদি কুল। নিজের বই টা পড়ছে। চোখে চশমা টাও নেই। হাসি পেল আমার। আমি বাবা দিদি কেউ ই চশমা ছাড়া বিশেষ দেখতে পেতাম না। দিদি যে পড়ছে না, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম। আমি জোরে জোরে পড়তে শুরু করলাম। দিদি অবাক হয়ে তাকালো। কারন আমি জীবনে জোরে জোরে পড়িনি। আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
- ক্ষেপলি নাকি? – পরা থামিয়ে দিলাম। আমি চাইছিলাম দিদি আমার দিকে তাকাক।
- আচ্ছা দি,
- হুম কি?
- বলছি ললিত দা ছেলে টা ভাল বল?
দিদি চমকে উঠল। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। মনে হচ্ছিল যেন ভিতর টা শুদ্দু পড়ছে দিদি আমার। আমার দিদি মারাত্মক বুদ্ধিমতী। মনে মনে ভাবছি ইশ, কিছু একটা বলে ফেললাম, যেটা বলার দরকার ছিল না। দিদি কি রেগে গেল? দি কোন দিন ও আমার উপরে রাগে নি। কিন্তু রাগলেও, এটা দিদির জীবনের ব্যাপার। বলতে আমাকে হবেই। একটু কঠিন হয়েই বলল আমাকে
- কেন? ললিত দা র কথা কীসের পড়াশোনার সময়ে?
- না বলছিলাম।
- কেন বলবি কেন?
- এমনি।
- হুম ভালো ছেলে।
দিদির কথা উত্তরে মনে হলো দিদিও চাইছে ব্যাপার টা বলতে আমাকে। মানুষ কত অসহায় হলে এই সব কথা ছোট বোনের সাথে আলোচনা করে। আমি বলেই দিলাম
- জানিস দি, আমার মনে হয়, ললিত দা মিথ্যে বলছে না। বিয়ে হলে তোর এটা তো নিশ্চিত, তোর জীবন টা আমার মায়ের মতন হয়ে যাবে। ছেলে না হলে বার বার তোকে বাচ্চা নিতে হবে। ততদিন অব্দি তোকে বাচ্চা নিতে হবে যতদিন না তুই বংশের প্রদীপ আনতে পারছিস। আর ওই লোক টা কে দেখেছি। অনেক বড় তোর থেকে। আর খুব অহংকার। নেহাত তুই সুন্দরী তাই। না হলে কি আর বিয়ে করত? আর ললিত দা কে দেখ, কি সুন্দর মার্জিত।
দিদি হাঁ হয়ে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। এই বয়সে আমার মধ্যে এতো খানি বিষ? দিদি কিছু বলতে যাচ্ছিল আমাকে রেগে মেগে। কিন্তু চুপ করে গেল। খুব মিনমিন করে বলল,
- তাতে কি? বাবা দেখেছে পাত্র, মানে তোর দিদির খাওয়া পড়ার কোন ভাবনা থাকবে না তাই না?
ততক্ষনে কাকি আসাতে, আমরা আলোচনা বন্ধ রাখলাম। ওদিকে বড়দি এসেছে। বড়দির পাশে মেজদিও এসেছে। বড়দির প্রায় নয় বছর তখন বিয়ে হয়ে গেছিল। অর্জুন তখন আট বছরের ছেলে। মেজদির ও বিয়ে হয়েছে গেছিল তিন বছর মতন। বাবার দুই প্রিয় মেয়ে আসার কারনে, বাড়িতে ভালো মন্দ রান্না ও হয়েছে। সে হোক আমাদের ডাক সেই শেষ কালে আসবে। ওরা আসলে আমাদের সাথে বিশেষ কথা বার্তা বলে না। আমিও পছন্দ করি না ওই দুটো রাক্ষসীর সাথে কথা বলতে। ছোড়দি কথা বলে, কারন ছোড়দির স্বভাব টাই মিস্টি।
আরেক জন কথা বলে ওই গ্রুপে আমার সাথে, সে হলো অর্জুন। এখন আট বছর। কিন্তু শুনেছি, ওর বুদ্ধি মামার বাড়ির মাসীদের মতন। পড়াশোনায় মারাত্মক তুখোর। কলকাতায় ইংরাজী কলেজ এ পরে এখন ক্লাস টু তে। রোজ ভোর বেলায় আমি জগিং এ বেরোই, আর দেখি ভদ্রলোক উঠে লাট্টু খেলছেন উঠোনে। আমাদের বাড়ী টা বিশাল। চারদিকে ঘর। তিনতলা বড় বাড়ী, আর মাঝে বিশাল উঠোন। কাজেই যে ঘর থেকেই বেরোন হয় , উঠোণ টা চোখে পরে।
কথা হয় রোজ ই। কিন্তু সেকথা থাক এখন। আসলে এতো স্মৃতি ভিড় করছে, কোন টা বলব আর কোণ টা বলব না বুঝতে পারছি না। সব একটার উপর একটা চেপে যাচ্ছে ঘাড়ে। যাই হোক রাতে খাসীর মাংশ হয়েছিল, দুই মেয়ের জন্য। আমরাও ভাগ পেলাম আরকি।
আমি মা কাকি আর দিদি মিলে যখন খেয়ে উঠলাম, তখন বেশ রাত। দিদি মা আর কাকি বাসন মাজছিল, আর আমি দাঁড়িয়েছিলাম। আমাকে কাকি আর দিদি কিছুতেই ওদের সাথে বাসন মাজতে দেয় না। তাই আমি পাশে দাঁড়িয়ে, কল টিপে দিতাম ওদের জলের জন্য। অনেক ছোট থেকেই এটা আমি করে আসছি। আগে থেকে গিয়ে বালতি তে জল ভরে রাখব বলে আজকে গিয়ে দেখছি, অর্জুন বাবু ওখানে দাঁড়িয়ে জল টিপছে। আমি দৌড়ে গেলাম। ওকে তুলে পাশে দাড় করিয়ে দিলাম। আর নিজে কল টিপতে শুরু করলাম
- কি অর্জুন বাবু? এতো রাত হলো ঘুমোন নি।
- হিহি আমাকে আপনি বলছ কেন মিমি।
- আমাকে মিমি বলতে তোকে কে শিখিয়েছে।
- মনি
- মনি টা আবার কে?
ততক্ষনে দেখলাম, মা কাকি আর ছোড়দি বাসন পত্র নিয়ে এদিকেই আসছে। অর্জুন ছোড়দির দিকে আঙ্গুল তুলতেই বুঝলাম, ছোড়দি শিখিয়েছে।
- ও তা ঘুমোন নি যে?
- ঘুম আসছিল না।
- ও , কেন
উত্তর দিচ্ছে অর্জুন একেবারে বড়দের মতন
- এমনি, মা কে বলেই এসেছি, দিদুন, কাম্মা আর তোমাদের কাছে থাকব বলে
- বাবা, তোর মা আমাদের সাথে থাকতে তোকে ছেড়ে দিল?
ছোড়দি আমার মাথায় একটা টোকা দিল। আমি ঘুরে গেলাম ছোড়দির দিকে। বলল
- ওর কি দোষ। ওকে বলছিস কেন? দেখছিস না এমন নিষ্পাপ মুখ ক জনের হয় বলত?
আমার মা ততক্ষণে, একটা কাপড় কোথা থেকে এনে অর্জুনের মাথায় চাপিয়ে দিল। হিম পরছে নাকি। মা পারেও। পুজো গেল না হিম পড়ছে?