16-05-2019, 04:52 PM
(03-04-2019, 08:50 PM)saddam052 Wrote: এই গল্পটি আপনাদেরকে ১০০ বছর পিছনে গিয়ে পড়তে হবে। উনিশ শতকের প্রথম দিকের কথা বলছি, যখন এই পৃথিবীতে যোগাযোগ ব্যবস্থা আজকের মত এতো আধুনিক ছিলো না। ছেলে মেয়েরাও এতো আধুনিক ছিলো না। গল্পের নায়ক একজন ব্যবসায়ী, উনার নাম বাকের। উনার ঘরে একজন সুন্দরী স্ত্রী আছে যার নাম সাবিহা, আর ওদের একমাত্র ছেলে যার নাম আহসান। বাকের সাহেবের বয়স এখন ৫১ ছুই ছুই এবং তার স্ত্রী সাবিহার বয়স ৩২। বিয়ে করেছিলেন একটু দেরিতে, কিন্তু মেয়ে ছিলো অল্প বয়সী। বিয়ের সময় সাবিহার বয়স ছিলো ১৮ আর বাকেরের ৩৭, প্রায় দিগুন বয়স।
মা হতে দেরি হয়নি সাবিহার। বিয়ের বছর কয়েক পরেই আহসান চলে এলো ওর কোলে। বিয়ের পর থেকে বাকেরের জীবনের ভাগ্য লক্ষ্মী যেন দূরে সরে যেতে লাগলো একটু একটু করে। একের পর এক ব্যবসায় লস হতে হতে এক ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসা। আবার লস, আবারও ব্যবসা পরিবর্তন, এভাবেই চলছিলো বাকের আর সাবিহার জীবন। অসম্ভব রকম দৃঢ় মনোবলের মানুষ বাকের। শরীরেও অনেক শক্তি ধরে, মনের জোরও তুলনাহীন এবং সাথে জেদও তার ভীষণ। কোনদিন সাবিহাকে বকা বা গালাগালি দিতো না সে। ওর আচার আচরণে ভালবাসার প্রকাশ অতটা প্রকট না হলেও সাবিহা জানে যে, ওর কোন প্রকার অসুবিধা সইতে পারে না বাকের। একটা মুখে না বলা ভালোবাসার টান ওদের মধ্যে ঠিকই ছিলো।
সাবিহা ছিলো উচ্চ বংশের ভদ্র সচ্ছল ঘরের সন্তান। সুন্দরী, ভদ্র, অমায়িক আর আদরের সন্তান। জীবনে কোনদিন অভাব চোখে দেখেনি। বাকেরের সংসারে এসে ওকে হাড়-ভাঙ্গা খাটুনীর সাথে সাথে টাকা পয়সার টানাটানিও সয়ে নিতে হচ্ছে। শেষ ব্যবসায় ধরা খাবার পর বাকের স্থির করলো যে, এই দেশে ওর পক্ষে ব্যবসা করা সম্ভব না। ওকে এই দেশ ছেড়ে অন্য দেশে গিয়ে ব্যবসা করতে হবে, তাই সে অস্ট্রেলিয়া যাবার চিন্তা করলো। ওখানে কিছু লোক আছে যারা ওকে আশা দিলো যে, ওকে সেদেশে ব্যবসা দাঁড় করিয়ে দিতে সাহায্য করবে। কিন্তু সেই সময়ের এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি জমানো আজকের দিনের মত সহজ ছিলো না। সমুদ্র পথেই প্রায় ৪ মাসের পথ অস্ট্রেলিয়া। আর সমুদ্র যাত্রা ছিলো অনেক ভয়ঙ্কর। কখন যে কোন বিপদ চলে আসে সেটার কোন আন্দাজ করা সম্ভব নয়। পুরোটাই অনিশ্চিত যাত্রা, সমুদ্র পথে। সাবিহার পরিবার অনেক বুঝালো বাকেরকে। কিন্তু আগেই বলেছি, অসম্ভব রকম জেদি এই লোকটা। ওর নিজের কথা থেকে ওকে কেউ সরাতে পারবে না ও নিজে ছাড়া। বড় বড় ব্যবসায়ী আর সাহসি লোক ছাড়া কেউ এই রকম দূর সমুদ্রযাত্রা করতে পারতো না তখনকার সময়। বিপদ নানা দিক থেকে আসতে পারে। আর আজকের দিনের মত রেডিও যোগাযোগও সম্ভব ছিলো না তখন মাঝ সমুদ্রে। বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসগরে ঢুকে গেলে পুরো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। কখন ঝড় আসে, কখন সমুদ্র ফুলে উঠে আর কখন দিক বিভ্রান্ত হয়ে যায় তার কোন পুর্বাভাস পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
চোখের জলে আত্মীয়স্বজনদের বিদায় জানিয়ে সাবিহা ওর স্বামী আর ছেলেকে নিয়ে যেই জাহাজে উঠলো সেটা বেশ বড় জাহাজই ছিলো। প্রথম মাস খানেক ওদের ভালই কাটলো জাহাজে। পথে একবার ম্যানিলা থামলো, একবার ইন্দোনেশিয়াতে থামলো জাহাজ। ইন্দোনেশিয়া থেকে যেদিন ওরা প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দেবার জন্যে রওনা দিলো সেটাও বেশ রৌদ্রউজ্জ্বল দিন ছিলো। প্রশান্ত মহাসাগরে ঢুকার পরে আর একটি সপ্তাহ চলে গেলো কোনরকম অঘটন ছাড়াই। পরেরদিন রাতে ওরা এক বিশাল টাইফুন ঝড়ের মুখে পড়ে গেলো। বাকের, সাবিহা আর ওদের কিশোর ছেলে রাতের খাবার খেয়ে বিছানায় শোবার পোশাক পাল্টে বিছানায় উঠতে যাওয়ার পরই ঝড় শুরু হলো। এতো বড় জাহাজকে যেন খর-কুটোর মত আছড়ে আছড়ে ভেঙ্গে ফেলতে চেষ্টা করলো সেই ঝড়। ওরা সবাই যেন তুলোর মত উড়ে যেতে লাগলো এদিক সেদিক। যখন জাহাজ ডুবতে শুরু করলো তখন বাকের ওর স্ত্রীকে নিয়ে লাইফবোট খুঁজতে লাগলো আর ভাগ্য ভালো থাকার কারনে একটা পেয়েও গেলো।
ওরা তিনজনে লাইফ বোটে উঠতে না উঠতেই আরেকটা বড় ঢেউ এসে ওদেরকে জাহাজ থেকে অনেক দূরে নিয়ে গেলো। দূর থেকেই ওরা জাহাজকে ঝড়ের আঘাতে খণ্ড বিখণ্ড হয়ে যেতে দেখলো। এদিকে ঝড়ের মাত্রা তখন সবে মাত্র শুরু, ওদের ক্ষুদ্র লাইফবোটকে প্রশান্ত মহাসাগরের টাইফুনের ঢেউ একবার যেন আকাশে তুলে ফেলে আবার এক ধাক্কায় যেন পানির নিচে তলিয়ে দেয়। নিজেদের শরীরকে দড়ির সাহায্যে লাইফবোটের সাথে বেঁধে ফেলেছিলো ওরা সবাই, তাই লাইফবোটের যা হবে ওদেরও তাই হবে।
ওদের পড়নে কাপড় বলতে রাত্রে শোওয়ার পোশাক, যেটা ভিজে যাওয়ার কারনে শরীর ঢেকে রাখার কাজ না করে বরং আরও প্রকাশিত করে দিচ্ছে। সারারাত ঝড় চললো, আর সকালে যখন ঝড় থামলো তখন লাইফবোটের তলা কিছু অংশ খুলে গেছে। শুধু চার কিনারটা কোন রকমের ওদের শরীরকে আধা অংশ পানির নিচে আর আধা অংশ পানির উপরে ধরে রেখেছে। লাইফবোটের ভিতরে থাকা সামান্য কিছু জিনিষ এখনও আছে দেখে বাকের বোটের ভিতর থেকে পানি সেচে ফেলার কাজ শুরু করলো। কিন্তু সাবিহা ওকে বাধা দিলো, যেখানে বোটের তলা অর্ধেক খুলে গেছে, সেখানে পানি সেচে কি কমানো সম্ভব?
Fer.prog এর অন্যান্য গল্প গুলো কি পাওয়াযাবে ?