Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
Thumbs Down 
মিত্রা এখন বেশ ভালো, আমি রেগুলার কিছুক্ষণের জন্য অফিসে যাই, ডাক্তারবাবু, সাতদিন সাতদিন করে প্রায় একমাস কাটিয়ে দিয়েছেন, মিত্রা বেশির ভাগ সময়টা এ বাড়িতেই আছে, মাঝে মাঝে বড়মা ছোটমাকে নিয়ে নিজের বাড়িতে কাটিয়ে আসছে, ওদের অবর্তমানে আমি দাদা মল্লিকদা রান্না করে খাচ্ছি। রান্না আমিই করেছি। দামিনী মাসীর ছেলে ভজুকে নিয়ে এসেছি এবাড়িতে কাজের জন্য। বড়মা ছোটমার অনেক কাজ ভজু করে দেয়, তবে ভজুর একটা বায়না, সে বাইরে শোবে না, তাই তাকে ওপরের বারান্দায় আমার ঘরের সামনে ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। মিত্রা অফিসের কাজ এখন বুঝে ওঠার চেষ্টা করছে, আমার কাছে মাঝে মাঝে ক্লাস করছে। অনাদি চিকনার ব্যাপারে ফোন করেছিল, চিকনা মহাখুশী, সে কাজ শুরু করে দিয়েছে, বাড়িতে বাথরুম বানানো হয়েছে।

অফিসের অবস্থা এখন স্থিতিশীল, আমি সবসময় সবাইকে একটা চাপের মধ্যে রেখেছি। সবার সঙ্গে যেভাবে যোগাযোগ রাখার দরকার তা রেখেছি। এই একমাসে অফিসের আয় কিছুটা হলেও আমি বাড়িয়ে দিয়েছি। আপাতত অনি নামক বস্তুকে সবাই সমীহ কিংবা ভয় করতে শুরু করেছে।
 
আমার দেশের বাড়িতে যাওয়ার ডেট ফিক্সড হয়েছে, আগামীকাল। মিত্রা, ছোটমা, বড়মা বেশ কয়েকদিন হলো নিজের বাড়িতে গেছে। গুছিয়ে গাছিয়ে আজ রাতে ফিরবে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমি ভজুকে সঙ্গে নিয়ে রান্নার কাজ শেষ করে ফেললাম, তারপর নিজেরা খেয়ে নিলাম বড়মা তিনবার ফোন করে ফেলেছে, কিরে কতদূর, তুইতো সবেতেই এক্সপার্ট।

আমি বড়মাকে বললাম, কেউ যখন ছিলনা তখন সব নিজে হাতে করতাম, বছরখানেক হলো সব ভুলে গেছিলাম, তোমাদের আর্শীবাদে আবার রপ্ত হলাম।
মিত্রার গলা পেলাম, বড়মা বলনা, শয়তান একা একা বেশ ভালো মন্দ খাচ্ছে, আমাদের জন্য রাতে যেন থাকে।
বড়মা আমাকে বললো, শুনতে পাচ্ছিস।
আমি বললাম এখন ছাড়, ভাতের হাঁড়ি উল্টেছি, কথা বলতে গেলে হাত পোড়াবো।
বড়মা বললো, ঠিক আছে ঠিক আছে রাখছি।
দাদা মল্লিকদা আগে আগে বেরিয়ে গেলো, আমি স্নান সেরে ভজুকে নিয়ে খেতে বসলাম, ভজুকে বললাম, দুপুরে খিদে পেলে, ফ্রিজ থেকে বার করে গরম করে নিয়ে খাবি।
ভজু এই কদিনে তৈরি হয়ে গেছে। কিন্তু ব্যাটা নিজের মনে নিজে থাকে। ওর কথাও ঠিক পরিষ্কার নয়। হাঁটা চলায় একটা এ্যাবনর্মালিটি আছে।
-কিরে ভজু আমরা না থাকলে দাদাদের চা তৈরি করে দিতে পারবি তো।
-আমি সব পারবো অনিদা, তুমি কিচ্ছু চিন্তা করো না।
আমি হাসলাম, ভজুও হাসলো।
এখন বাড়ির দায়িত্ব গেটে ছগনলাল, আর ভজু। তবে দুজনেই খুব সজাগ। মাছি গলতে পারে না।
আমি ওপরে এসে জামা-কাপড় পরলাম। রেডি হয়ে বেরোতে যাব, ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম অদিতির নামটা ভেসে উঠেছে।
-হ্যালো।
-বলো অদিতি।
-কেমন আছ।
-ভালো।
-মিত্রাদি।
-ভালো আছে, তবে এখানে নেই।
-কোথায়।
-নিজের বাড়িতে।
-তাই। বড়মা ছোটমা।
-সবাইকে পাঠিয়ে দিয়েছি।
-তাহলে খাওয়া দাওয়া।
-রান্না করছি।
-তুমি।
-হ্যাঁ।
-তোমার এই গুণটাও আছে।
-ছিলো, মাঝে কিছুদিন বন্ধ ছিলো, এখন আবার একটু ঝালিয়ে নিচ্ছি।
-সত্যি অনিদা তুমি পারও বটে।
-তারপর তোমাদের খবর কি।
-ভালো। আজ তোমার প্রোগ্রাম কি।
-সেই ভাবে কিছু নেই। একবার অফিসে যাবো। তারপর এদিক ওদিক।
-দুপুরে একটু সময় দিতে পারবে।
-কখন বলো।
-আমি তোমায় তুলে নেবো।
-কোথায় দাঁড়াতে হবে।
-পার্ক স্ট্রীট।
-ঠিক আছে।
-আমি এশিয়াটিক সোসাইটির তলায় থাকবো। কটায় বলো।
-২ টে।
-আচ্ছা।
আমি অফিসে এলাম, নিউজরুমে ঢুকতেই, মল্লিকদা ডাকলেন। গিয়ে চেয়ারে বসলাম।
-ছোটো ফোন করেছিলো।
-কেনো।
-তোকে একবার ফোন করতে বলেছে।
-কেনো।
-কি করে জানবো।
-দেখো পিঁয়াজি করো না। ছোটো ফোন করলো আর তুমি জানবে না। এটা হয়।
-এই তো শুরু করে দিলি, তুই এখন মালিক, এসব কথা বললে লোকে কি ভাববে।
উঠে চলে এলাম। নিজের টেবিলে বসে, মিত্রাকে ফোন করলাম।
-বল।
-ছোটোমাকে দে।
-ওপরে।
-তুই কোথায়, পাতালে।
-এক থাপ্পর।
-আর মারিসনা সেদিন বড্ড লেগেছিলো।
মিত্রা খিল খিল করে হেসে উঠলো। ছোটোমা বলে চিল্লালো, শুনতে পাচ্ছি।
-তুই কি অফিসে।
-হ্যাঁ।
-কি করছিস।
-এখনো কিছু করছি না, আসতেই মল্লিকদা বললো, ছোটোমা ফোন করতে বলেছে তাই ফোন করছি।
-তোর আজকে হবে।
-কেনো রে আবার কি করলাম।
-কি করলি, দেখ না।
-তুই একটু হিন্টস দে।
-ধর।
-হ্যাঁরে তুই কোথায় রে। ছোটমার গলা।
-অফিসে।
-এরি মধ্যে ঢুকে পরেছিস।
-হ্যাঁ।
-কখন ফিরবি।
-বলতে পারবো না।
-তার মানে।
-আসি আমার ইচ্ছেয়, যাবো কাজের ইচ্ছেয়, কাজ শেষ হলেই যাবো।
-মাছের ঝোল কে রান্না করেছিলো।
-আমি।
-আমাদের জন্য রেখেছিস।
-পাঁচ-ছ পিস পরে আছে। ভজুকে বলেছি, খেয়ে নিস।
-তার মানে।
-দেখো ও রান্না তোমাদের মুখে রুচবে না, আমরা পুরুষরা চালিয়ে নেবো। তোমরা পারবে না। আসল কথা বলোতো। এর জন্য তুমি ফোন করতে বলো নি।
-তুই একবার আসবি।
-অবশ্যই না।
-কেনো।
-কাজ আছে। দুটো থেকে একজায়গায় মিটিং। কখন শেষ হবে জানি না।
-তাহলে তোকে বলা যাবে না।
-রাতে কথা হবে। বড়মা ঠিক আছে।
-ঠিক আছে কই রে মাথা খারাপ করে দিচ্ছে।
-কেনো।
-তার গতরে নাকি শুঁয়োপোকা পরে যাচ্ছে।
হো হো করে হেসে ফেললাম।
-রাখছি।
অমিতাভদার ঘরে গেলাম, দেখলাম চম্পকদা আর সুনীতদা বসে আছে। আমাকে দেখেই বললেন, আসুন ছোটো সাহেব।
আমি একটা চেয়ার নিয়ে বসলাম।
দাদাকে বললাম আমার কোনো কাজ আছে। ওরা দুজনে হেসে ফেললো।
-সত্যি অনি তোকে দেখে বোঝা মুস্কিল তোর রোলটা এই হাউসে কি। চম্পকদা বললেন।
-কেনো আমি যা আছি তাই, তোমরা একটা বাড়তি দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছো বইছি, যেদিন পারবো না, বলে দেবো এবার খান্ত দাও।
-সে সময় আসবে।
-কেনো আসবে না।
-বাই দা বাই, শোন মন্ত্রী মহাশয় অর্ধেক টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে।
-আমার কমিশন।
-তোর জিনিষ তুই পুরোটাই নে না, কে বারণ করতে যাচ্ছে।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-তোমার টার্গেট কতদূর।
-মনে হচ্ছে ফুলফিল করতে পারবো। তুই এরকম ভাবে হেল্প করলেই হবে।
-আমি যতটা পারবো করবো, বাকিটা তুমি তোমার টিম।
[+] 5 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 13-01-2022, 02:51 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)