04-01-2022, 09:25 PM
একটি বন মুরগির গল্প
সৌম্য একটা প্রাইভেট কোম্পানি তে কাজ করছে আজ ৮ বছর, কাজের ফাঁকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল, বিভিন্ন কম্পিটিটিভ পরিক্ষা দিয়ে যাচ্ছিল কারণ ওর ওই বাবুর বাড়ির চাকরি আর মানিয়ে নিতে পারছিলনা। সৌম্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এস সি পাশ করে বাবার এক জানাশোনা মানুষের মাধ্যমে একটি সাধারন চাকরি করতে ঢুকে পরে। সেখানে কিছু বছর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে একটি ওষুধ এর কোম্পানি তে জয়েন করে। ভালো মাইনে, সুযোগ সুবিধা, বাবা মায়ের মতে সোহিনী কে বিয়ে করে। তার পর একমাত্র ছেলে বাপ্পা জন্মায়।
সোহিনী সাধারন এক মধ্যবিত্ত পরিবারের এক মাত্র মেয়ে, বাবা কলেজের বড়বাবু পদে উন্নীত হয়েছেন। মা গৃহবধূ। সোহিনীর সাথে সৌম্যর সংসার বেশ সুখে কেটে যাচ্ছিল। সৌম্য রোজ রাত্রে বাড়ি ফিরে এসে পড়াশোনা করতে বসত। এটা ওর কাছে একটা চ্যলেঞ্জ এর মতো ছিল যার সাথে সোহিনীও মিশে একাত্ম হয়ে গিয়েছিল। রোজ সকালে অফিসে চলে যেত, সোহিনী বাচ্ছা কে সামলে সংসারের টুকটাক রান্না তে শাশুড়ি কে সাহায্য করে দিত। শ্বশুর বাপ্পা কে প্লে-কলেজে পৌঁছে দিয়ে বাজার করে ফিরত। টিফিন টা সোহিনী বানাত, ওটা করতে ওর বেশ একটা ভালো লাগত। ১২ টা নাগাদ স্নান করে ছেলে কে কলেজ থেকে এনে ওকে খাইয়ে নিজেরা খেয়ে নিত। তারপর দুপুরে হালকা একটা নিদ্রা। সন্ধ্যে বেলায় শাশুড়িকে রান্নায় সাহায্য করতে করতে সৌম্য এসে পরত, দুজনে গল্প করত কিছুক্ষণ, তারপর সৌম্য পড়তে বসত টেবিলে আর সোহিনী ছেলেকে নিয়ে বিছানায়।
ওদের যৌন জীবন আর পাঁচটা সাধারণ বাঙালি ছেলে মেয়েদের মতই। এর ফলে সোহিনীর কোন ক্ষেদ ছিলনা। ওর মনে অন্য কোন ভাবনাও ছিলনা। তাছাড়া ও এই ব্যাপারটা নিয়ে কারো সাথে আলোচনা করা পছন্দ করতনা। সেই দিক থেকে সৌম্য একই মানসিকতার হওয়ার ফলে বেশ চলে যাচ্ছিল ওদের জুটি।
সৌম্য ভেতরে ভেতরে প্রস্তুত হচ্ছিল ফরেস্ট সারভিস এর পরিক্ষা দেওার জন্য। ইউপিএসসি থেকে এই পরীক্ষা নেওয়া হয় প্রতি বছর এবং ও নিজে প্রকৃতি প্রেমী হওয়ার কারনে এই চাকরী পাওয়ার একটা আলাদা আকাঙ্খা ছিল ওর। সেই কারনে ও বটানি নিয়ে এম এস সি করেছিল। একটা দিল্লীর সংস্থার কাছে অনলাইনে পড়াশোনা করত সৌম্য। সিভিল সার্ভিস পরিক্ষার প্রিলি তে পাশ করার সাথে সাথে ওর মনের জোর অনেক গুন বেড়ে গেলো। এই সুযোগ ছাড়লে হবে না। তাছাড়া বয়েস হয়ে আসছে। উঠে পরে লাগল সৌম্য। সোহিনী ওকে সমানে সাথে লেগে থাকল, উৎসাহ দিয়ে চলল। অফিসেও সহ কর্মী রা ওকে যথেষ্ট সাহায্য করে। অচিরে ফল ফলল। সৌম্য ফরেস্ট সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হল সম্মানের সাথে।
সকলে ভীষণ খুশি, বাবা মা, সোহিনী, শ্বশুর শাশুড়ি সকলে। এর পরে চাকরী ছেড়ে দিয়ে ট্রেনিং এ গেল। সেখানে কিছুদিন কাটিয়ে প্রথম পোস্টিং হল গুজরাট। জুনাগড় এর গীর ন্যাসানাল পার্ক এর জিলা বন অধিকর্তা হিসাবে ওর চাকরী শুরু হল। রাজকোট থেকে নেমে যেতে হবে জুনাগড়। ওখানে ওদের বাংলো আছে। সোহিনী, আর বাপ্পা কে নিয়ে ও এসে পৌঁছল। জায়গা টা অচেনা তবে আসার আগে সব খবর নিয়ে এসেছিল। এখন ও আর সাধারণ চাকুরে নয়, তবুও এখনও সেই ভাবে তৈরি হয়ে উঠতে পারেনি। এসে নিজের বাংলো গুছিয়ে নিতে সোহিনীর খুব বেশি দেরি হল না। সোহিনী যেন একটা নিজের জীবন খুজে পেল যা ওর কাছে অনভিপ্রেত ছিল, ভাবনার অতীত।
দিন পনের পর সোহিনী সৌম্য কে বলল সপিং করতে যাবে। সৌম্যর সময় নেই তাই ওদের এক কর্মচারী, নাম রাকেশ কেশরী, কে কথাটা বলেছিল। সেদিন অফিসে বসে সৌম্য কাজ করছে এমন সময়, রাকেশ এক জন ভদ্রলোক কে ওর কাছে নিয়ে আসে। আলাপ করিয়ে দেয়, বিক্রম বারত। ভদ্রলোকের বয়েস চল্লিশ এর কাছাকাছি, ব্যাক ব্রাশ করা চুল, সুঠাম চেহারা, ডান হাতে একটা সোনার বালা, এক কানে দুল। সৌম্য সবে ৩৪ পার করেছে। সোহিনী ২৬। বিক্রম হিন্দি টানা বাংলায় আলাপ করলে। সৌম্য তো অবাক, এই দেশে বাংলা শুনতে পাবে তা ওর ভাবনার বাইরে ছিল। বিক্রম জানাল, ওর বাবা বেঙ্গল ক্যাডারের আই পি এস ছিলেন। ওর লেখাপড়া গ্রাজুয়েশন পর্যন্ত বাংলায়। সুতরাং ওদের আলাপ জমে গেল। কথায় কথায় জানল বিক্রম এর ব্যাবসা কাঠের। ওদের ফরেস্ট এর অক্সন এর কাঠ কেনে। সেই কাঠ বাজারে ওদের শ মিল আছে সেখানে চেরাই হয়। বিক্রম বললে সোহিনীর জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দেবে। ও ভাড়া দিতে চাইলেও পারলনা। বিক্রম বললে ও নিজে চালিয়ে সোহিনী কে মার্কেট এ নিয়ে যাবে, হাঁপ ছেড়ে বাঁচল সৌম্য।
বিকালে বিক্রম ওর কালো ক্রেটা গাড়িটা নিয়ে বাংলোতে উপস্থিত। আগে থেকে সৌম্য বলে দিয়েছিল সোহিনী কে, তাই ও প্রস্তুত হয়ে ছিল।