03-01-2022, 09:55 PM
“ইভা এক দিন বলল, ‘তুমি কী করছ বলো তো, রেশন দোকানের গদাই বাবাকে বলেছে আরশোলা ধরতে তুমি ওদের দোকানে গেছিলে!’ আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, আমার প্রফেশনাল ব্যাপারে নাক গলাতে বারণ করো। তোমার বাবার ধনবান দৌলতদার পাত্র দরকার। কামালেই চলবে। কীভাবে কামাচ্ছি বড় কথা নয়। বাবাকে বলে দিও সতু এক্সপোর্টের ব্যবসা খুলেছে, চিনদেশে ব্যাঙ সাপ্লাই দিচ্ছে। ইভা বলল, ‘হুঁহ! এক্সপোর্ট যারা করে তারা বয়াম নিয়ে রেশন দোকানে আরশোলা ধরবে বলে ঘুরে বেড়ায় না।’
“খুবই ডিসহার্টেনড হলাম, বুঝলে ভায়া। কিন্তু শকুনির মুখ ভেসে উঠতেই চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল, কিছু একটা করতেই হবে...” এই বলে গরম কফিতে একটা জোর চুমুক দিয়ে ফেলল সতুদা। সিগারেটে দিল একটা রামটান। তার পর কপালে হাত দিয়ে বসে রইল মিনিট দুই। এ কীসের নীরবতা ঠাহর করতে না পেরে চুপ করে ওর দিকে চেয়ে বসে রইলাম। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সতুদা খেই ধরল, “রোজগারপাতি খারাপ হচ্ছিল না। কৃষ্ণনগর কলেজে বেশ কিছু বেঞ্চ বানিয়ে সাপ্লাই করলাম। প্যারাফিন ট্রে থেকে ফাইল, ফাইল থেকে সাইক্লো মেশিন— সাপ্লাইয়ের রেঞ্জ বাড়তে লাগল। কলেজ স্ট্রিটে একটা দোকানটোকান খোঁজ করছি, এমন সময় এক খোঁচড় বলল, ‘কঙ্কাল সাপ্লাই দেবেন? নরকঙ্কাল? উত্তরবঙ্গের এক কলেজে রিকোয়ারমেন্ট আছে। পার কঙ্কাল পঁচিশ হাজার। চারটে লাগবে ওদের।’ জোগাড় করব কোত্থেকে? নিয়েই বা যাব কেমন করে? সে ব্যাটা বলল, ‘টাকা দিলে হাসপাতালের মর্গ থেকেই কঙ্কাল বেরিয়ে যাবে আর কঙ্কালের পার্টস খুলে সুটকেসে ভরে নিয়ে যাবেন। লোক যাবে, সে টাকা নেবে আর কঙ্কালদের স্ক্রু দিয়ে আবার ফিট করে দিয়ে আসবে। কঙ্কালের দাম আর যাতায়াত রাহাখরচ মিলে হাজার পঁয়ত্রিশ যাবে আপনার।’
“বুঝলে, সে রাতে ঘুম এল না। তখন পরিবেশবাদীদের ঠ্যালায় ব্যাঙকাটা নিষিদ্ধ। সে সব সাপ্লাই শিকেয়। এরকম লাভের হাতছানি আর ইভার শকুনবাপের মুখ— দুই মনে হতেই রাজি হয়ে গেলাম। পার্টির সঙ্গে কথাবার্তা পাকা হওয়ার পর খোঁচড়ের কথামতোই সুটকেস-ভরা কঙ্কালের হাড়গোড় নিয়ে ট্রেনে। দুর্ভাগ্য, মধ্যপথে বামাল পাকড়াও হলাম। কেস, আদালত, হাজতবাস। মানসম্মান আর ইভা— সবই গেল আমার। ইভার বয়স পঁচিশ তখন, সময়মতো সবকিছু গুছিয়ে এনেও হেলায় হারালাম!
“এর পর পরই শকুন সক্রিয় হয়ে উঠল। ইভার বিয়ে হয়ে গেল। বেশ পয়সাওলা ঘরেই।”
এই অবধি শেষ করে সতুদা গুম হয়ে গেল। ধীরে ধীরে কফি খেতে লাগল। আমিও ওকে আর বিচলিত করতে চাইলাম না। আমার কফি, নিজের কফি আর কাটলেটের দাম দিয়ে উঠতে উঠতে বলল, “এখন সবই আছে ভায়া, যা আগে ছিল না। বাবা যাওয়ার পর, ইনসিওরেন্সের অগাধ টাকা, কৃপণ বাবার প্রচুর সেভিংস আর রমরম করে চলা আমার রেন্ট কারের বিজনেস। শুধু সময়টাই চলে গেছে। সামনের জানুয়ারিতে তেতাল্লিশে পড়ব।”
বললাম, “আজকালকার দিনে এ আর কী বয়স সতুদা! আবার নতুন করে জীবন শুরু করতেই পারো।”
ম্লান হাসল সতুদা।
তার পর আমরা রেস্তরাঁ ছেড়ে রাস্তায়। অটোর লাইনের দিকে যেতে যেতে সতুদা ফিসফিস করে বলল, “একটা কথা তোমায় বলি, কাউকে বোলো না। ইভার বাচ্চাকাচ্চা হয়নি, প্রচণ্ড অশান্তি স্বামীর সঙ্গে। সে কোথা থেকে আমার ফোন নম্বর জোগাড় করেছে আর ইদানীং থেকে থেকে ফোনও করে চলেছে আমায়। কী যে করি, বুঝে উঠতে পারছি না...”
আমি অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম সতুদার দিকে।
XXXX
“খুবই ডিসহার্টেনড হলাম, বুঝলে ভায়া। কিন্তু শকুনির মুখ ভেসে উঠতেই চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল, কিছু একটা করতেই হবে...” এই বলে গরম কফিতে একটা জোর চুমুক দিয়ে ফেলল সতুদা। সিগারেটে দিল একটা রামটান। তার পর কপালে হাত দিয়ে বসে রইল মিনিট দুই। এ কীসের নীরবতা ঠাহর করতে না পেরে চুপ করে ওর দিকে চেয়ে বসে রইলাম। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সতুদা খেই ধরল, “রোজগারপাতি খারাপ হচ্ছিল না। কৃষ্ণনগর কলেজে বেশ কিছু বেঞ্চ বানিয়ে সাপ্লাই করলাম। প্যারাফিন ট্রে থেকে ফাইল, ফাইল থেকে সাইক্লো মেশিন— সাপ্লাইয়ের রেঞ্জ বাড়তে লাগল। কলেজ স্ট্রিটে একটা দোকানটোকান খোঁজ করছি, এমন সময় এক খোঁচড় বলল, ‘কঙ্কাল সাপ্লাই দেবেন? নরকঙ্কাল? উত্তরবঙ্গের এক কলেজে রিকোয়ারমেন্ট আছে। পার কঙ্কাল পঁচিশ হাজার। চারটে লাগবে ওদের।’ জোগাড় করব কোত্থেকে? নিয়েই বা যাব কেমন করে? সে ব্যাটা বলল, ‘টাকা দিলে হাসপাতালের মর্গ থেকেই কঙ্কাল বেরিয়ে যাবে আর কঙ্কালের পার্টস খুলে সুটকেসে ভরে নিয়ে যাবেন। লোক যাবে, সে টাকা নেবে আর কঙ্কালদের স্ক্রু দিয়ে আবার ফিট করে দিয়ে আসবে। কঙ্কালের দাম আর যাতায়াত রাহাখরচ মিলে হাজার পঁয়ত্রিশ যাবে আপনার।’
“বুঝলে, সে রাতে ঘুম এল না। তখন পরিবেশবাদীদের ঠ্যালায় ব্যাঙকাটা নিষিদ্ধ। সে সব সাপ্লাই শিকেয়। এরকম লাভের হাতছানি আর ইভার শকুনবাপের মুখ— দুই মনে হতেই রাজি হয়ে গেলাম। পার্টির সঙ্গে কথাবার্তা পাকা হওয়ার পর খোঁচড়ের কথামতোই সুটকেস-ভরা কঙ্কালের হাড়গোড় নিয়ে ট্রেনে। দুর্ভাগ্য, মধ্যপথে বামাল পাকড়াও হলাম। কেস, আদালত, হাজতবাস। মানসম্মান আর ইভা— সবই গেল আমার। ইভার বয়স পঁচিশ তখন, সময়মতো সবকিছু গুছিয়ে এনেও হেলায় হারালাম!
“এর পর পরই শকুন সক্রিয় হয়ে উঠল। ইভার বিয়ে হয়ে গেল। বেশ পয়সাওলা ঘরেই।”
এই অবধি শেষ করে সতুদা গুম হয়ে গেল। ধীরে ধীরে কফি খেতে লাগল। আমিও ওকে আর বিচলিত করতে চাইলাম না। আমার কফি, নিজের কফি আর কাটলেটের দাম দিয়ে উঠতে উঠতে বলল, “এখন সবই আছে ভায়া, যা আগে ছিল না। বাবা যাওয়ার পর, ইনসিওরেন্সের অগাধ টাকা, কৃপণ বাবার প্রচুর সেভিংস আর রমরম করে চলা আমার রেন্ট কারের বিজনেস। শুধু সময়টাই চলে গেছে। সামনের জানুয়ারিতে তেতাল্লিশে পড়ব।”
বললাম, “আজকালকার দিনে এ আর কী বয়স সতুদা! আবার নতুন করে জীবন শুরু করতেই পারো।”
ম্লান হাসল সতুদা।
তার পর আমরা রেস্তরাঁ ছেড়ে রাস্তায়। অটোর লাইনের দিকে যেতে যেতে সতুদা ফিসফিস করে বলল, “একটা কথা তোমায় বলি, কাউকে বোলো না। ইভার বাচ্চাকাচ্চা হয়নি, প্রচণ্ড অশান্তি স্বামীর সঙ্গে। সে কোথা থেকে আমার ফোন নম্বর জোগাড় করেছে আর ইদানীং থেকে থেকে ফোনও করে চলেছে আমায়। কী যে করি, বুঝে উঠতে পারছি না...”
আমি অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম সতুদার দিকে।
XXXX