Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
জিজ্ঞেস করলাম, নেমে পড়লে? বাড়িতে কিছু বলল না? টাকাই বা পেলে কোথায়?
সতুদার কাটলেট শেষের দিকে। নিজের জন্য কফির অর্ডার করে আর একটা সিগারেট ধরাল সে, আমার বাবা ছিলেন কর্পোরেশনের কেরানি। খরচ থেকে বাঁচিয়েই কিছু জমিয়েছিলেন, টুকটাক জমিজমাও কিনেছিলেন, তবে ওয়ান পাইস ফাদার-মাদার। তবু দিনের লাভ দিনেই ফেরত আসবে শুনে রাজি হলেন। বলব কী দীপ্র, এলও তাই। খাটনি ছিল। রাতভর কাজকারবার, প্রথম বিশ হাজার দুরাতেই পঁচিশ হয়ে ফেরত এল। সাহস গেল বেড়ে। অংশু পাত্র তার মেদিনীপুরের শ্যালক পটলের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল। ইনভেস্টমেন্ট বাড়তে লাগল। বাবার থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে পটলের সঙ্গে দিঘা এলাম। ভোরের দিকে ট্রলার আসবে দিঘার মোহনায়। ভোরের হাটে বেচাকেনা। ইলিশ, ট্যাংরা, লটে, যা চলে কলকাতায়। অকশনে মাছ কিনে বরফ প্যাকিং করিয়ে ট্রান্সপোর্টে তুলে তবে শান্তি। রাতে উঠেছিলাম এক কমদামি হোটেলে। ঘরে পটলের দুই শাগরেদের সঙ্গে দারু নিয়ে বসলাম। কিন্তু কয়েক পেগের পরেই আমি অচেতন। পরদিন হোটেলের বেয়ারা যখন দরজা ধাক্কা দিয়ে তুলল, তখন বুঝতে পারলাম পটল আর তার চ্যালারা সব মালকড়ি ঝেঁপে হাপিশ। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরলাম। জলে গেল টাকা। অংশু পাত্রও চোখ উল্টোল। গণেশ উল্টোনোর দায়ে বাবা ত্যাজ্য না করলেও ওই টাকার শোকে মুহ্যমান হয়ে রইলেন। আর চাইতে সাহস হল না। সামনে রইল নিঃসীম বেকারত্ব। আর ইভা। থেকেও নেই। প্রেমে আছে, স্বপ্নে আছে। ভবিষ্যতের কথা মেয়েরা বড্ড ভাবে, তাদের ছোটবেলা থেকেই ভাবানো হয়। আমার অন্ধকার ভবিষ্যতের সঙ্গে তার ভবিষ্যৎ কেমন করে জুড়বে বাড়ির অনুমতি ছাড়া, তা নিয়ে সে ম্লান হয়ে থাকত। তার সে কষ্ট ক্রমে ক্রমে আমাকে হীনম্মন্যতার তলানিতে ঠেলে দিচ্ছিল।
একটু জল খেয়ে কাটলেটের শেষাংশ চিবোতে চিবোতে অতীতে ডুবে গেল সতুদা
তার পর বুঝলে, বিনা পুঁজির ব্যবসা খুঁজতে লাগলাম। এক জন বললে, আছে তো, ধরবে আর সাপ্লাই দেবে। কী? আরে যত ধরবে, তত তোমার আয়। তার পর ধোঁয়াশা ছেড়ে সে খোলসা করল। আরশোলা আর ব্যাঙ ধরতে পারবে? বিনা পুঁজিতে। ধরবে আর কলেজের ল্যাবরেটরিতে সাপ্লাই দেবে। সে- সাহায্য করল। নিয়ে গেল, রেশন দোকানের গোডাউনে। ভায়া হে, আরশোলা নেহাত নিরীহ জীব নয়, প্রথম দিন ধরতে গিয়ে হাতে তাদের কাঁটা রোঁয়া লেগে হাত ছুলে একাকার। তবু ইভার মুখ মনে পড়ল। কিছু করে দেখাতেই হবে। এর পর দিব্যি ধরার কায়দা জেনে গেলাম। কাঁড়ি কাঁড়ি আরশোলা ধরেছি। শিখে গেলাম ব্যাঙ ধরতেও। মাঠে দাঁড়িয়েছি রেচন ক্রিয়ার তাগিদে, চতুর্দিকে কুনোব্যাঙের ডাক। হিসি করা মাথায় উঠল, টপাটপ ব্যাঙ ধরতে লাগলাম, ষাট সত্তরটা মিলে গেল মাঠ থেকেই। কিন্তু রোজ রোজ কত ধরব? এক দিন ছাদের ওপর এক বিরাট জারে অজস্র ব্যাঙ দেখে কলের মিস্ত্রি ইকবাল বলল, সে বস্তা বস্তা ব্যাঙ এনে দিতে পারবে। ইকবালের থেকে এক টাকায় কেনা কুনো ব্যাঙ পাঁচ টাকা করে সাপ্লাই দিতাম ল্যাবে। একদিন ছাদে পেলাম আধমরা একটা বাদুড়। তাই নিয়ে চলে গেলাম মানিকতলায় বিশ্বাসদার কাছে। বিশ্বাসদা ওয়েট স্পেসিমেন সাপ্লাই করতেন। বিশ্বাসদার থেকে নিয়ে জারে-ভরা ফণা-তোলা মরা-গোখরোও সাপ্লাই করেছি। আধমরা বাদুড়টা দরাদরির পর তিনশো টাকায় কিনতে রাজি হল সে। উনিই আমাকে বাদুড়-ঝোলা কিছু পুরনো বাড়ির ঠিকানা দিলেন। ইঁদুর-বাদুড়-সাপ-ব্যাঙ-আরশোলা এক দিকে, অন্য দিকে ইভা।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 03-01-2022, 09:55 PM



Users browsing this thread: 25 Guest(s)