01-01-2022, 01:20 PM
#অন্য_রূপকথা
এই তো গত শুক্কুরবারের ঘটনা। চব্বিশে ডিসেম্বরের রাত।
সেদিন আবার আমার মায়ের জন্মদিন ছিল। সেই উপলক্ষ্যেই সারাদিন কয়েকজন বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে রাত্তিরবেলা বেনারস যাবার ট্রেনে চেপে বসেছিলাম। খুব ক্লান্ত ও ছিলাম। তারমধ্যে আমাদের দুই বন্ধুর সিট ছিল দুই জায়গায়। তাই হাল্কা একটা অস্বস্তি নিয়েই ঘুমোতে গেছিলাম।
বেশ ঠান্ডা ছিল কামরাটা। সোয়েটার, মোজা পরে,কম্বল গায়ে দিয়েও কিছুতেই যেন বশ মানছিল না ঠান্ডাটা। আর তারমধ্যে তো লোকজনের ওঠা-নামা লেগেই আছে! এদিকে আমার আপার বার্থ ছিল, সেটা 'ম্যানেজ' করে লোয়ার নিয়েছিলাম এমন একজনের কাছ থেকে চেয়ে, যিনি গয়া স্টেশানে নেমে যাবেন ভোর রাতে। তাই ঘুমোনোর দরকার ও ছিল।
সেই আধা ঘুমের মধ্যেও বেশ অনেক লাগেজ আর কথার আওয়াজ শুনে চটকাটা ভেঙে গেছিল। দেখি, রাত আড়াইটে বাজে, ধানবাদ স্টেশানে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। একটু বিরক্ত ও লাগছিল, আলো চোখে পড়ায়... কাঁচা ঘুমটা...ধ্যাত ভাল লাগে নাকি?
আমার পাশের লোয়ার বার্থের লোক ছিলেন ওঁরা। সিটের তলায় মালপত্র ঢোকানো হলো। আমি উল্টোদিকে ফিরে শুয়ে থাকলেও বুঝতে পারছিলাম মা আর মেয়ে উঠেছেন ট্রেনে। দুজনের ভাষাই দেহাতি হিন্দি।
শুয়ে শুয়েই শুনছিলাম মেয়ে মায়ের জন্য বিছানা পেতে দিল। তারপর নিজের বিছানাও পাতছিল উপরের বার্থে। আর মা " ইয়ে ইধার রাখ, গির জায়েগা সামান, হুয়া তেরা, লাইট বন্ধ কঁরু?" এইসব বলছিলেন।
যাই হোক, আমার বিরক্তি আর না বাড়িয়ে লাইট বন্ধ হল। আমিও স্বস্তি পেলাম।
কিন্তু খানিকক্ষণ পরেই আবার মায়ের গলা। গজগজ করতে করতে সেই হিন্দিতে মেয়েকে বলছেন "কী ঠান্ডা এখানে! এর চেয়ে স্লিপারে গেলেই ভাল হতো, শুধু শুধু এইটুকু সময়ের জন্য এত পয়সা খরচ! শুনতি হী নেহি হ্যায় তু!"
একটু পরেই শান্ত গলায় জবাব এলো মেয়ের "মাঈ, অনেক কষ্ট করে পড়িয়েছ আমাকে, চাকরি পেয়েছি এবার, তাই এসি ট্রেন। মনে আছে, তুমি বলেছিলে বাড়িতে যেমন এসি লাগানো থাকে, তেমনি ট্রেনেও কি এসি লাগানো থাকে? তাই এবার এই টিকিট কাটলাম। দেখনা, ইস বার গরমি মেঁ ঘর মেঁ ভি এসি লাগা লেঙ্গে... আভি শো যা মাঈ, কাল বহোৎ কাম হ্যায়!"
একবারও ফিরে তাকাই নি, তবু বুকের ভেতরটা যেন টালুমালু ভালো লাগায় ভরে গেল একেবারে!
মা আর মেয়ে - জীবনে প্রথমবার এসি কামরায় উঠেছে। বহুদিনের প্রতীক্ষার পরে। বুঝতেই পারছিলাম, সেই প্রতীক্ষার মধ্যেও অনেক রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম লুকিয়ে ছিল। আর সবকিছুর পরে মেয়েটি চাকরি পেয়েছে... হয়ত অন্য শহরে। সেখানেই যাচ্ছে মাকে নিয়ে... তাই এত লাগেজ! আর... আত্মপ্রত্যয়ী মেয়ে সংকল্প করেছে মা কে ভালো রাখবে... গ্রীষ্মের দাবদাহ স্পর্শ করতে দেবে না মা কে...
আহা রে মেয়ে!
উধাল পাতাল মন আর ভেসে যাওয়া দু'চোখ নিয়ে একটাই কথা ভাবছিলাম - "মেয়েটার স্বপ্ন সত্যি হোক। মা ভাল থাকুন। আমাদের দেশের প্রতিটা মা... ভাল থাকুন..."।
ভোর হয়ে আসছিল।
পঁচিশে ডিসেম্বরের ভোর।
আর সেই অলীক ভোররাত্তিরে যেন স্বয়ং সান্টা ক্লজ আমাকে ভাল থাকার একটুকরো চাবিকাঠি দিয়ে গেলেন...
এই তো গত শুক্কুরবারের ঘটনা। চব্বিশে ডিসেম্বরের রাত।
সেদিন আবার আমার মায়ের জন্মদিন ছিল। সেই উপলক্ষ্যেই সারাদিন কয়েকজন বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে রাত্তিরবেলা বেনারস যাবার ট্রেনে চেপে বসেছিলাম। খুব ক্লান্ত ও ছিলাম। তারমধ্যে আমাদের দুই বন্ধুর সিট ছিল দুই জায়গায়। তাই হাল্কা একটা অস্বস্তি নিয়েই ঘুমোতে গেছিলাম।
বেশ ঠান্ডা ছিল কামরাটা। সোয়েটার, মোজা পরে,কম্বল গায়ে দিয়েও কিছুতেই যেন বশ মানছিল না ঠান্ডাটা। আর তারমধ্যে তো লোকজনের ওঠা-নামা লেগেই আছে! এদিকে আমার আপার বার্থ ছিল, সেটা 'ম্যানেজ' করে লোয়ার নিয়েছিলাম এমন একজনের কাছ থেকে চেয়ে, যিনি গয়া স্টেশানে নেমে যাবেন ভোর রাতে। তাই ঘুমোনোর দরকার ও ছিল।
সেই আধা ঘুমের মধ্যেও বেশ অনেক লাগেজ আর কথার আওয়াজ শুনে চটকাটা ভেঙে গেছিল। দেখি, রাত আড়াইটে বাজে, ধানবাদ স্টেশানে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। একটু বিরক্ত ও লাগছিল, আলো চোখে পড়ায়... কাঁচা ঘুমটা...ধ্যাত ভাল লাগে নাকি?
আমার পাশের লোয়ার বার্থের লোক ছিলেন ওঁরা। সিটের তলায় মালপত্র ঢোকানো হলো। আমি উল্টোদিকে ফিরে শুয়ে থাকলেও বুঝতে পারছিলাম মা আর মেয়ে উঠেছেন ট্রেনে। দুজনের ভাষাই দেহাতি হিন্দি।
শুয়ে শুয়েই শুনছিলাম মেয়ে মায়ের জন্য বিছানা পেতে দিল। তারপর নিজের বিছানাও পাতছিল উপরের বার্থে। আর মা " ইয়ে ইধার রাখ, গির জায়েগা সামান, হুয়া তেরা, লাইট বন্ধ কঁরু?" এইসব বলছিলেন।
যাই হোক, আমার বিরক্তি আর না বাড়িয়ে লাইট বন্ধ হল। আমিও স্বস্তি পেলাম।
কিন্তু খানিকক্ষণ পরেই আবার মায়ের গলা। গজগজ করতে করতে সেই হিন্দিতে মেয়েকে বলছেন "কী ঠান্ডা এখানে! এর চেয়ে স্লিপারে গেলেই ভাল হতো, শুধু শুধু এইটুকু সময়ের জন্য এত পয়সা খরচ! শুনতি হী নেহি হ্যায় তু!"
একটু পরেই শান্ত গলায় জবাব এলো মেয়ের "মাঈ, অনেক কষ্ট করে পড়িয়েছ আমাকে, চাকরি পেয়েছি এবার, তাই এসি ট্রেন। মনে আছে, তুমি বলেছিলে বাড়িতে যেমন এসি লাগানো থাকে, তেমনি ট্রেনেও কি এসি লাগানো থাকে? তাই এবার এই টিকিট কাটলাম। দেখনা, ইস বার গরমি মেঁ ঘর মেঁ ভি এসি লাগা লেঙ্গে... আভি শো যা মাঈ, কাল বহোৎ কাম হ্যায়!"
একবারও ফিরে তাকাই নি, তবু বুকের ভেতরটা যেন টালুমালু ভালো লাগায় ভরে গেল একেবারে!
মা আর মেয়ে - জীবনে প্রথমবার এসি কামরায় উঠেছে। বহুদিনের প্রতীক্ষার পরে। বুঝতেই পারছিলাম, সেই প্রতীক্ষার মধ্যেও অনেক রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম লুকিয়ে ছিল। আর সবকিছুর পরে মেয়েটি চাকরি পেয়েছে... হয়ত অন্য শহরে। সেখানেই যাচ্ছে মাকে নিয়ে... তাই এত লাগেজ! আর... আত্মপ্রত্যয়ী মেয়ে সংকল্প করেছে মা কে ভালো রাখবে... গ্রীষ্মের দাবদাহ স্পর্শ করতে দেবে না মা কে...
আহা রে মেয়ে!
উধাল পাতাল মন আর ভেসে যাওয়া দু'চোখ নিয়ে একটাই কথা ভাবছিলাম - "মেয়েটার স্বপ্ন সত্যি হোক। মা ভাল থাকুন। আমাদের দেশের প্রতিটা মা... ভাল থাকুন..."।
ভোর হয়ে আসছিল।
পঁচিশে ডিসেম্বরের ভোর।
আর সেই অলীক ভোররাত্তিরে যেন স্বয়ং সান্টা ক্লজ আমাকে ভাল থাকার একটুকরো চাবিকাঠি দিয়ে গেলেন...