Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
আজ ফিরছি ট্রেনে, আচমকাই একটা কন্ঠস্বর আর কিছু কথা এসে কানে পৌঁছালো। শুধু পৌঁছালো আর বেরিয়ে গেল এমন নয়। রীতিমত মনের গভীরে প্রবেশ করলো।

একজন বছর আটচল্লিশ-পঞ্চাশের ভদ্রলোক বেশ জোর গলাতেই বললেন, আরে সৌভিক তুমি এত ম্রিয়মাণ হয়ে রয়েছে কেন? সৌভিক নামের বছর চল্লিশের ভদ্রলোক বললেন, আসলে নীলাদ্রিদা মা চলে যাবার পর থেকে বাড়িটা এত ফাঁকা লাগে যে অফিস থেকে ফিরতেই ইচ্ছে করে না। সুস্মিতা আর রনিও বুঝতে পারে আমার মনখারাপটা। ওই বাড়ি ফিরলেই, মায়ের প্রথম কথাই ছিল- টিফিন খেয়েছিলি? সেই প্রাইমারি থেকে আজ পর্যন্ত মা একই কথা জিজ্ঞাসা করতো বাড়ি ফিরলেই। ওটা খুব মিস করছি।
নীলাদ্রি নামের ভদ্রলোক বললেন, তাতে এত ভেঙে পড়ল চলে? মা কি কারোর চিরটা কাল থাকে? না,না এভাবে মনখারাপ করো না। মাসখানেক ধরেই দেখছি তুমি বড্ড চুপচাপ।
সৌভিক বললেন, আরেকটু আগে যদি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারতাম তাহলে হয়তো বেঁচে যেত মা। আসলে বমি হচ্ছে দেখে ভাবছিলাম, গ্যাস-অম্বল হয়েছে। ওটা যে স্ট্রোক বুঝতে পারিনি দাদা।
সৌভিক নামের ভদ্রলোক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
নীলাদ্রি বললেন, ওসব ছাড়ো, বড়দিনে কী করলে বলো? আরে ডাক্তারের হাতেই কি সব ক্ষমতা নাকি? পরমায়ু শেষ হলে কি কেউ বাঁচে?
আমার একটু বিরক্তই লাগছিলো। একজন সদ্য মাতৃহারাকে সান্ত্বনা দেবেন কোথায়, তা নয় কাঠ কাঠ জ্ঞানের কথা। কিছু মানুষ এত অতিরিক্ত জ্ঞান ফলায় সবেতে যে বিরক্ত লাগে। আসলে যার জীবনে এমন শোক আসেনি সে বোধহয় এমনই বলতে পারে। ঠিক এরকম ভাবনা থেকেই ছিটকে পড়লাম মুহূর্তে। কত কম জেনে আমরা একটা মানুষ সম্পর্কে ধারণা করে ফেলি ভেবেই লজ্জা পেলাম।
নীলাদ্রি নিরুত্তাপ গলায় বললেন, আমার ছেলে নীলাভ যখন চলে গেল তখন ওর বয়েস ষোলো। মাধ্যমিকের টেস্টটাও দিতে পারলো না। একমাত্র তখনই আমি বুঝেছিলাম, আমরা ডাক্তারদের ঈশ্বর ভাবলেও ওনারাও আসলে মানুষ। ওনাদের ক্ষমতাও সীমিত। বিশ্বাস করো সৌভিক, নীলাভর যিনি ট্রিটমেন্ট করছিলেন, সেই ডাক্তারও আমার সঙ্গে কেঁদেছিলেন। বলেছিলেন, রেয়ার ম্যালিগন্যান্ট, বাঁচাতে পারলাম না। সেই ডাক্তার বলেছিলেন, উনি নাকি ওনার মাকেও বাঁচাতে পারেননি। খাবার টেবিলে আচমকা অ্যাট্যাক, আর মুহূর্তে শেষ।
গায়ে কাঁটা দিচ্ছিলো, ভদ্রলোকের অমন নিরুত্তাপ গলা শুনে। সন্তানের মৃত্যু মেনে নেওয়ার পরে বোধহয় আর কোনো শোকই ওনাকে স্পর্শ করে না।
তাই এমন নিরুত্তাপ গলায় বলতে পারছেন, মা কি চিরকাল কারোর থাকে?
সৌভিক বললেন, হ্যাঁ, আপনার ছেলের কেসটা শুনেছিলাম অভিষেক বলেছিল। সত্যিই খুব স্যাড।
নীলাদ্রি বললেন, আসলে চেষ্টা করতে পারি আমরা, কিন্তু ফিরিয়ে দেবেন কিনা সেটা তাঁর ইচ্ছে।
অন্ধকারে খেয়াল করিনি কোন স্টেশন ঢুকলো, ভদ্রলোক দেখলাম হাত জোড় করে প্রণাম করলেন কোনো দেবতার উদ্দেশ্যে।
না উনি ডাক্তারের ওপর থেকে ভরসা হারিয়েছেন, না ঈশ্বরের ওপর থেকে। অদ্ভুত কঠিন মেরুদন্ড হয় বাবাদের। সংসারের কর্তার শিরদাঁড়াটা ভাগ্যিস এতটা কঠিন হয়, তাই অনেকের মাথায় ছাদ সরে যায় না। ভাগ্যিস তাঁদের দুঃখগুলো বরফ কঠিন হয়, তাই তো শুকনো চোখে দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
একটুতেই নিজের ভাগ্যকে বা ঈশ্বরকে দোষারোপ করা আমি স্তম্ভিত হয়ে ভাবলাম, এর নামই বোধহয় মানসিক শক্তি।
© এক চিলতে রোদ্দুর- কলমে-অর্পিতা সরকা
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by dada_of_india - 30-12-2021, 08:28 PM



Users browsing this thread: 22 Guest(s)