Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
সুশোভন স্যার ! 

জাঁদরেল লেডি Lawyer মিস্ গাঙ্গুলি বললেন – “Your Honour! এবার আমি আমার Client মিস্ প্রকৃতি মজুমদার কে Witness Box এ ডাকতে চাই।*

*কোর্টের এজলাসে তখন থিক থিক করছে মানুষ – সবাই কয়েক মূহুর্ত চুপ। সবারই চোখ আটকে আছে সামনের দিকের চেয়ারে বসা জিন্স আর কুর্তি পরা তন্বী মেয়েটির দিকে। একটু যেন বেশীই সময় নিয়ে উঠে দাঁড়ালো মেয়েটি। কোর্টের ওই তিনদিক ঘেরা কাঠের বাক্সটার দিকে যেতে যেতে কত কথা মনে পরতে লাগল ওর। আজ সকালেই পাশের বাড়ির ছাদ থেকে মিলিদি বলছিল – “অ্যাই পিকু, তোদের তো কেস উঠেছে কোর্টে। আজ নাকি তোকে ডেকেছে, আর তোর ওই মাষ্টারকেও তো আজই তুলবে কোর্টে। একদম ছাড়বি না এই সব লোককে। মনের মধ্যে যা আছে আচ্ছা করে শুনিয়ে দিবি”।*
*মিলিদির কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ওই কাঠের বাক্সটায় উঠে দাঁড়ালো মেয়েটি।*
*বিচারক শান্ত নরম গলায় জিজ্ঞেস  করলেন- “মিস প্রকৃতি, আপনি আসামি সুশোভন মিত্রকে চেনেন?”*
*“না”- দৃঢ় আর সংক্ষেপ জবাব প্রকৃতির।*
*সভায় মৃদু গুঞ্জন – উঠে এলেন প্রকৃতির solicitor শ্রীমতী গাঙ্গুলি।*

*“মিস্ প্রকৃতি – ভাল করে তাকিয়ে দেখুন আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা ওই লোকটিকে আপনি চেনেন কি না”*
*উল্টো দিকে দাঁড়ানো খোঁচা খোঁচা দাড়ি ভর্তি, অপমানে, লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে প্রকৃতি বলল – “ওই লোকটিকে আমি নিশ্চয় চিনি। ওনার নাম শ্রী সুশোভন মিত্র। আমাদের সুশোভন স্যর্। তবে ‘আসামি সুশোভন’ বলে আমি কাউকে চিনি না”।*
*-“ব্যাপার একই” – বললেন Lawyer গাঙ্গুলি, “তার মানে আপনি ওনাকে চেনেন।*

*এবার আমি আপনাকে যা যা প্রশ্ন করব, তার সঠিক উত্তর দেবেন। আমার প্রথম প্রশ্ন ----*
*হাত তুলে ইশারায় তার Lawyer কে থামতে বলল প্রকৃতি। বিচারকের দিকে ফিরে প্রশ্ন করল – “Your Honour! সকাল থেকে অনেক প্রশ্ন করেছেন আপনারা সবাইকে। আমার মা, প্রতিবেশী, কলেজের বিভিন্ন কর্মী – অনেককে। আমি কি আমার মতো করে নিজের কথা বলতে পারি? তারপর না হয় আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেবো”।*
*বিচারক বললেন – “অবশ্যই! আমরা তো তোমার কথাই শুনতে চাই” – আপনি থেকে তুমি তে এসে পরিবেশকে আরও সহজ করে তুলতে চাইলেন বিচারক মশাই।  “শুধু একটা কথা বল – সুশোভন বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ যে – উনি তোমাকে খারাপ ভাবে স্পর্শ করেছেন এবং শারীরিক ভাবে হেনস্থা করেছেন – যাকে আমরা “Bad Touch” বলে জানি – কথাটা সত্যি?”*
*প্রকৃতি - Touch তো উনি অবশ্যই করেছেন, (থামল প্রকৃতি। সভায় গুঞ্জন বাড়ল। সুশোভন মাষ্টার একবার প্রকৃতির দিকে তাকিয়েই আবার মাথাটা আরও নিচু করে দাঁড়ালেন) আবার বলল প্রকৃতি – Touch করেছেন উনি, আর করেছেন আমাকে। তাহলে সেটা Good না Bad সেটা আমার থেকেও ভাল করে এতগুলো মানুষ বুঝে ফেলল কি করে?*
*শ্রীমতী গাঙ্গুলি case-এর হাল ধরবেন বলে উঠে আসছিলেন চেয়ার ছেড়ে। বিচারক তাঁকে ইঙ্গিতে বসতে বলে নিজেই প্রশ্ন শুরু করলেন। - “তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে মাষ্টার মশায়ের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তুমি মানতে চাইছ না”।*
*প্রকৃতি - অভিযোগ তো আমি করিনি, করেছেন আমার মা, মাকে সাহায্য করেছেন পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন আর দু-তিনটে  TV Channel.*
*- কি ঘটেছিল সেটা বরং তুমিই খুলে বল। (বিচারক জিজ্ঞেস করলেন) মাষ্টার মশায় কে তুমি কি ভাবে চেন? কেমন ধারণা তোমার এই মানুষটির সম্বন্ধে?*
*-“প্রথম দিকে অতি সাধারণ বলে মনে হত। আমাদের ক্লাস নিতেন না, দেখতেও আহামরি কিছু নয়, তাই নজর দেওয়ার প্রয়োজনই পড়েনি। শুধু উঁচু ক্লাসের দাদা দিদিদের মুখে ওনার কথা খুব শুনতাম। ক্লাস নাইন-এ যখন উঠলাম, রেজাল্ট খারাপ করাতে একদিন ডেকে আমায় বললেন– “শোন! তোমার এই প্রকৃতি নামের গুরুত্ব বোঝো তো? সৃষ্টি আর ধ্বংস দুটোর ক্ষমতাই তোমার আছে। যদি ঝড় তুলতে চাও তবে এটাই সেরা সময়। একবার শুধু দাঁতে দাঁত চেপে ঝাঁপিয়ে পড়, দেখবে কোন বাধাই তোমার সামনে দাঁড়াতে পারবে না” – সেদিন নতুন করে চিনেছিলাম মানুষটাকে। সেদিন অন্যভাবে চিনেছিলাম নিজেকে। আত্মবিশ্বাসী লাগছিল অনেক। এতদিন তো শুধুই শুনতাম সব জায়গায় – “তোর দ্বারা কিস্যু হবে না”। বলতে বলতে গলা ধরে আসে প্রকৃতির।*
*বিচারক - যে ঘটনার কারণে এত তোলপাড়, সে ব্যাপারে সত্যিটা শুনতে চাই তোমার মুখ থেকে।*
*প্রকৃতি - সত্যিটা খুব ছোট্ট আর অতি সাধারণ। এবার Inter-House Drama Competition এ আমাদের House চ্যাম্পিয়ন হয়। উনি ছিলেন আমাদের Trainer , যা হয়, জয়ের উল্লাসে ছুটে গেছিলাম ওনার কাছে। প্রণাম করলাম। উনি আশীর্বাদ করলেন। গাল টিপে দিলেন। তারপর আনন্দে সবার মতোই আমাকেও বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। পরিচ্ছন্ন পিতৃ সুলভ আলিঙ্গন। এক ফোঁটা দুরভিসন্ধি বা খারাপ চিন্তা ছিল না সেই ছোঁয়ায়। অথচ যারা এই ঘটনাটা দেখলেন তাদের চোখ বোধহয় অন্য কিছু অনুভব করেছিল। খানিক পর থেকেই গুঞ্জন শুনলাম – Back Stage-এ Bad Touch. সেই গুঞ্জন আলোড়নে পরিণত হয়ে আজ এই Court room এ এসে হাজির।*
*বিচারক - প্রকৃতি, তোমার কথাই আমরা সত্যি বলে মেনে নেব, কারণ, প্রথমত – অভিযোগ মূলতঃ তোমাকে ঘিরে আর দ্বিতীয়ত – যে জায়গায় ঘটনাটা ঘটে সেখানে কোন C-C-T-V ক্যামেরা ছিল না।*
*প্রকৃতি - ঠিক কথা,স্যার, এই CC-TV Camera ই আজকাল সব থেকে বড় গোয়েন্দা, সব থেকে বড় বিচারক। জানেন স্যার, আমাদের বাড়ির ছাদের চিলেকোঠার ঘরটাতেও কোন C-C-T-V Camera নেই, আর তাইজন্যই তো কোনও শাস্তি হল না বিল্টু মামার। আমার নিজের মামা স্যার। ক্লাস সেভেনে যখন পড়ি তখন একবার বিল্টু মামা এসে চিলেকোঠার ঘরে পড়া বোঝাবার নাম করে বেশ করে বুঝিয়ে দিয়েছিল – পুরুষের লোভী স্পর্শ কেমন হয় আর এখনকার ভাষায় কাকে বলে Bad Touch. মাকে জানালাম। সাথে সাথে ধমক খেলাম – “তোমার সবেতেই বাড়াবাড়ি। তোমার মামা বিদেশে পড়াশুনো করে। Adjust করতে না পারলে Avoid কর, কিন্তু এই নিয়ে আর কোনও কথা যেন উচ্চারণ করতে না শুনি”। ভেবে দেখুন স্যর্ , একজন নারী তার কন্যাসন্তানের অসম্মান উপেক্ষা করছেন কেন? না যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে তার নিজের ভাই, সে আমেরিকা থেকে এসেছে, তার বিরুদ্ধে কি কিছু বলা যায়? না উচিৎ? স্যর্ , আজ আমি ক্লাস ইলেভ্নে। এই চার বছরেও কিন্তু আমাদের বাড়িতে C-C-T-V Camera বসেনি। আজও কিন্তু বিল্টু মামা নিয়ম করে বছরে দুবার আমাদের বাড়ি বেড়াতে আসেন। প্রচুর আমোদ-আহ্লাদ হয়। কিন্তু ওই যে দাঁড়িয়ে আছে লোকটা (সুশোভন মাস্টারের দিকে আঙ্গুল দেখায়), বিচারের রায় যেমনই হোক, তার কিন্তু কলেজে আসা চিরকালের মতো ঘুচে গেল।*
*স্যর্! আমার বাবার অফিসের করিডরেও কোনো C-C-T-V Camera নেই। তাই বাবার অফিসের Boss পরেশ কাকু যখন তাদের Annual Programme এ  আমার নাচের প্রশংসা করতে করতে আমার সারা গায়ে হাত বোলাচ্ছিলেন, তখন পাশে দাঁড়িয়ে বাবা অন্যদিকে তাকিয়েছিলেন। আহা! বড়বাবু বলে কথা। পরেশ কাকু কিন্তু প্রায় রোববারই আমাদের বাড়ি আসেন। লুচি-তরকারি খান। অথচ সুশোভন মাষ্টারকে কলেজ কিন্তু আর রাখবে না।*

*স্যর্! আজকাল কলেজে ক্লাসে ক্লাসে যখন Good Touch/Bad Touch কি তা বোঝানো হয়, তখন মেয়েরা মুখে হাত রেখে হাসি চাপার চেষ্টা করে। আচ্ছা বলুন তো, এই বিল্টু মামা, পরেশ কাকুদের স্পর্শ বুঝতে আমাদের বই থেকে কায়দা শিখতে হবে? এটা হাস্যকর নয় আমাদের মেয়েদের কাছে?*
*বিচারক - বেশ, আমরা তাহলে তোমার বক্তব্যকেই বিশ্লেষণ করে তোমাকে শেষ প্রশ্ন করছি – খুব সংক্ষেপে বল – তোমার বিচারে সুশোভন মাষ্টার কি অপরাধী?*
*প্রকৃতি - বাবা মায়ের ভালবাসা আর সময়ের অভাবে আমরা যখন দিশেহারা, তখন ছাত্রছাত্রীদের বন্ধু হয়ে ওঠা যদি অপরাধ হয় তবে উনি অপরাধী, আর বিল্টু মামা, পরেশ কাকুদের মতো, বিলেত ফেরত বা অফিসের Boss না হয়ে সাধারণ নিরীহ শিক্ষক হওয়াটা যদি অপরাধ হয়, তাহলেও উনি অপরাধী। Teacher হয়ে উনি যখন উনি জন্মেছেন তখন অপরাধী হওয়ার একচেটিয়া অধিকার তো ওনারই।*
*পরীক্ষায় প্রশ্ন Common না এলে Teacher অপরাধী, Result খারাপ হলে Teacher অপরাধী, ক্লাসে মারামারি হলে Teacher অপরাধি। মিডিয়া প্রচার করে – কলেজে দুষ্টু লোকেরা থাকে। বাবা মায়েদের দাবির জোরে আমাদের কলেজে 75 টা C-C-T-V Camera. এবার খেলার মাঠে গাছের ডালেও Camera বসানো হবে। আচরণ দেখলেই মনে হয় – যেন কলেজের বাইরেটা পবিত্রতায় ভরা আর ভেতরেই যত দুষ্টু লোকদের আনাগোনা। বাড়িতে শেখানো হয় শিক্ষকরা বাবা-মায়ের মতো। অথচ ওই লোকটাকে দেখুন কেমন হাত পা বাঁধা। বাবার মতো শাসন করতে গেলেও মুশকিল, বাবার মতো ভালবাসতে গেলেও বদনাম।*
*স্যর্, আপনি আপনার ছাত্রজীবনে কতজন শিক্ষককে আসামীর কাঠগড়ায় উঠতে দেখেছেন বা শুনেছেন স্যর? তাঁরা কি রাতারাতি সবাই বদলে যাচ্ছেন? সবাই “দুষ্টু লোক” হয়ে পড়ছেন? সারা বছর ধরে আমাদের বাবা-মায়েরা হোম-ওয়ার্ক কপি থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে টিচার এর ভুল ধরেন, আর 4Th September আমাদের Gift কিনে দেন পরের দিন Teachers’ Day বলে। আসলে আমরা পিছিয়ে পড়ছি স্যর্। রাজা রামমোহন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারীদের যে উচ্চতায় তুলে এনেছিলেন, আমরা আইনের অপব্যবহার করে করে নিজেদেরকে সেই সম্মানের আসন থেকে নামিয়ে আনছি দিনে দিনে। অবাক হবেন না স্যর্ – যদি আজ থেকে কয়েক বছর পর আপনি এই এজলাসেই আবারও কোন “সতীদাহ”র মামলা পেয়ে যান। সেই দিন আবার ফিরে আসতে খুব বেশি দেরি নেই হয়ত।*
*বিচারক এতক্ষন অপলক দৃষ্টিতে প্রকৃতির কথা শুনছিলেন। কয়েকটা নিয়মমাফিক কাজকর্মের পর তিনি রায় ঘোষণা করলেন। নির্দোষ প্রমাণ হলেন সুশোভন মাস্টার। তাঁর বুক হাল্কা করে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। রুমাল দিয়ে চোখ মুছলেন তিনি। বিজয়িনীর গর্বে প্রকৃতি এগিয়ে গেল তাঁর দিকে। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন সুশোভন বাবু।*
*“আশীর্বাদ করলেন না স্যর্!” – প্রশ্ন করল প্রকৃতি।*
*আরও জড়সড় হয়ে খালি হাতটা যেন কোথাও লুকিয়ে ফেলতে চাইছেন মাস্টার-মশাই। তারপর কাঁপা কাঁপা ধরা গলায় বললেন – “ভয় করে রে মা! সবই তো বুঝিস, আবার যদি Bad Touch হয়ে যায়!”*
*.....সংগৃহীত।..
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by dada_of_india - 27-12-2021, 07:32 PM



Users browsing this thread: 21 Guest(s)