27-12-2021, 09:33 AM
Update 6
সকালে একটু দেরিতেই ঘুম ভাঙলো সুচির বাবা। প্রায় আটটার দিকে ঘুম থেকে উঠে , বারবার হাই তুলতে তুলতে স্নান সেরে ফেললেন তিনি । রাতে ভালো ঘুম হয়নি তার। রাত তিনটে পর্যন্ত কথা বলার পর সবাই ঘুমিয়েছিল । শুধু তিনি কেন ! সুচি বাদে সবারই একই অবস্থা। সবাই আজ একটু দেরিতেই ঘুম থেকে উঠেছেন। আর আকাশ তো ঘুমালোই না। সুচির মা বাবা চলে যাওয়ার পর নিজের ল্যাপটপ খুলে সিনেমা দেখতে বসে গিয়েছিল সে।
স্নান সেরে স্নানঘর থেকে বেরিয়ে জামা কাপড় পড়তেই সুচির মা চা নিয়ে হাজির , “ খরচার কথা ভেবেছো ? „
সুচির বাবা এটাই ভাবছিলেন। চায়ের কাপে একবার চুমুক দিয়ে বললেন , “ যা জমানো আছে তা দিয়ে , আর একটু এদিক ওদিক করে স্বচ্ছন্দে বিয়েটা হয়ে যাবে । কিন্তু আমি যতদূর শুভো কে চিনি ও আমাকে কোন খরচা করতে দেবে না । „
সুচির মা শেষের কথাটা মানতে পারলেন না , “ তা বললে হয় নাকি ? আমি স্নেহার সাথে কথা বলবো তুমি ভেবো না। „
“ তাই করো। শুভো আমার কথা শুনবে বলে তো হয় না। „
“ কচুরি আর কড়াইশুটির আলুর দম করেছি। এসো । „ বলে স্বামীকে সকালের ব্রেকফাস্ট করাতে নিয়ে গেলেন সুচির মা ।
রাতে সুচিরও ভালো ঘুম হয়নি। আগের দিন পলাশের করা অপমান , দিদির দেওয়া হুমকি , বাড়ি বদলানোর সিদ্ধান্ত , এই সবকিছু যেন ভেতর দিয়ে ভেঙে দিয়েছে তাকে। শুধু বাড়ি বদলালে হবে না ! সাথে নতুন চাকরিও খুঁজতে হবে। এইসব ভাবতে ভাবতে চোখের পাতা কখন এক হয়ে এসেছিল সেটা সুচি বুঝতে পারে নি।
সকালে আগের দিনের মতোই জানালার গ্রিলে দুটো শালিকের কিচির মিচির শব্দে ঘুমটা ভাঙতে সে উঠে বসলো। মাথা ভর্তি অবিন্যস্ত চুল , মুখে প্রাণহীন জেল্লা , শুষ্ক ওষ্ঠ্য আর চোখে একরাশ ক্লান্তির ছায়া নিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ খাটের উপর বসে থেকে নিজের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আরো গভির ভাবে ভাবতে লাগলো সুচি । তখনই কিছু ভাসা-ভাসা কথা সে শুনতে পেলো।
সুচির মা বলছেন --- যাওয়ার সময় একবার রাধানাথদাকে রাতে আসতে বলে দিও। তারিখ ঠিক করতে হবে তো !
সুচির বাবা --- হ্যাঁ ঠিক বলেছো। যদি বাড়িতে না থাকে তাহলে বৌদিকে বলে আসবো । আর তুমি সুচির কুষ্ঠি খুঁজে রেখো। তখন আবার খুঁজতে বসো না যেন । বলে সুচির বাবা অফিস যাওয়ার জন্য বেরিয়ে গেলেন।
ওদিকে এই উড়ে আসা ভাসা-ভাসা কথা গুলো জুড়ে নিয়ে সুচি আর এক সিদ্ধান্তে এলো। সকালে ঘুম থেকে উঠে এমনিতেই মাথাটা হাল্কা ছিল। তাই এই কথাগুলো জুড়ে নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসতে বেশি সময় লাগলো না তার । এই কথাগুলো জুড়ে নিয়ে সুচি যে কথাটা বুঝলো সেটা হলো --- আমার কুষ্ঠি মানে , আমার বিয়ের তারিখ ! বিয়ে হবে মানে ? ছেলে কোথায় ? ছেলে নিশ্চয়ই সুমি জোগাড় করেছে। হ্যাঁ , ও তো হুমকি দিয়েছিল জামাইবাবু কে ছেলে দেখতে বলবে। তার মানে এর মধ্যেই ছেলেও দেখা হয়ে গেছে। আর পাত্র নিশ্চয়ই আজ রাতেই দেখতে আসবে।
আরও উল্টোপাল্টা কথা ভাবতে সুচির বিন্দুমাত্র সময় লাগলো না। কিন্তু যখন এই সিদ্ধান্তে এলো যে , ‘ তাকে দেখতে আজকে পাত্রপক্ষ আসবে আর রাধানাথ ঠাকুর আজকেই বিয়ের তারিখ ঘোষণা করবে । , তখন সুচি আর কাণ্ডজ্ঞান ঠিক রাখতে পারলো না। বুকটা ধড়াস করে উঠলো। পুরো পৃথিবীটা যেন তার চোখের সামনে ঘুরছে । খাটের উপর বসেই কেপে কেপে উঠতে লাগলো সুচি। মুখটা রক্তশূন্য হয়ে উঠলো। মুখে একটা ভয়ের চিহ্ন ফুটে উঠে উঠলো।
কিসের ভয় ? নিজের বিয়ের হয়ে যাওয়ার ভয় ! নাকি আকাশের থেকে চিরতরে দূরে চলে যাওয়ার ভয় ! নাকি আজীবন এই ভাবে কষ্ট পাবার ভয় ! অন্য কোন ছেলের সাথে সে সুখে থাকতে পারবে না এটা পলাশের সাথে ঘটা ঘটনাই প্রমাণ করে। তাহলে কিসের ভয় ? সেটা সুচি বুঝতে পারলো না।
দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে সে সোজা ছুটলো আকাশের ঘরের দিকে । দৌড়ে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে আকাশের ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়লো সুচি। কতদিন পর এই ফ্ল্যাটে ঢুকছে সেটা তার খেয়াল নেই। এদিক ওদিক দেখে নিল একবার। না কেউ নেই।
ফ্ল্যাট ফাকা দেখেই সোজা আকাশের ঘরে ঢুকে পড়লো সুচি। আকাশ তখন সবে একটা সিনেমা দেখা শেষ করে ল্যাপটপটা বন্ধ করেছে। ঘরে ঝড়ের বেগে সুচিকে ঢুকতে দেখেই সে খাট থেকে উঠে দাঁড়ালো। আকাশের কাঁধ ধরে মুখ দিয়ে প্রথম শব্দটা বার করতেই সুচি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো , “ আজকে আমাকে দেখতে আসছে ওরা। তুই বলেছিলি না আমাকে নিয়ে পালাবি। চল আমরা কোথাও পালাই...
এদিকে সুচি যে ঝড়ের বেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সেটা সুচির মায়ের চোখ এড়ালো না। এইভাবে দৌড়ে বার হয়ে যেতে সুচির মায়ের খুব চিন্তা হলো। তাই সুচি ফ্ল্যাট থেকে বার হতেই তিনি ওর পিছন নিয়ে এই ফ্ল্যাটে এলেন। এসে দেখলেন যে সুচি আকাশের ঘরে ঢুকে গেছে। সুচি আকাশের ঘরে ঢুকতেই আকাশের বাবা স্নান করে কোমড়ে শুধুমাত্র একটা তোয়ালে জড়িয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলেন। আকাশের বাবাকে ওইভাবে দেখে সুচির মা লজ্জা পেয়ে যেদিক থেকে এসছিলেন সেদিকেই আবার চলে গেলেন।
সুচি আকাশের ঘরে দৌড়ে ঢোকার সময় তার পিঠ দেখতে পেয়েছিলেন আকাশের মা। তিনি ঘর থেকে স্বামীর জন্য জামা প্যান্ট নিয়ে এসে সোফায় রাখছিলেন। তাই যখন তিনি দেখলেন যে সুচি দৌড়ে আকাশের ঘরে ঢুকে গেল তখন তিনি ভাবলেন , ‘ হয়তো সুচি ওর বিয়ের খবর পেয়ে খুশিতে আর থাকতে না পেরে আকাশের কাছে এসছে। , এটা ভাবতেই কেন জানি না আজকে আকাশের মায়ের ওদের কথা শুনতে খুব ইচ্ছা হলো। কাল রাতের ঘটনার পর থেকেই নিজেকে হাল্কা মনে হচ্ছে আকাশের মায়ের। একমাত্র ছেলের বিয়ে তে মনটা খুশিতে নেচে উঠছে তার। তার উপর এতদিন পর দুই পরিবারের মিল হয়ে যাওয়ার একটা খুশি তো আছেই।
লিভিংরুমের সোফায় বসে ওই ঘরের কথা শোনা যায় বটে তবে সেটা অস্পষ্ট আর খাপছাড়া। তাই আরও ভালো করে শোনার জন্য প্রায় আকাশের দরজার সামনে চলে এলেন তিনি । ঠিক সেই সময় তিনি দেখলেন যে তার স্বামী বাথরুম থেকে বার হলো আর সুচির মা ঘরে ঢুকতে গিয়েও তার স্বামীকে দেখে আর ঢুকলেন না।
এদিকে তার কানে সুচির কান্না ভেজা গলার আকুতি ভেসে এলো। সুচি বলছে , “ আমি পারছি না তোকে ছেড়ে থাকতে । তুই বলেছিলি তো আমি হ্যাঁ বললেই তুই আমাকে নিয়ে পালাবি। এখন আমি হ্যাঁ বলছি। চল পালাই।
এদিকে আকাশের বাবা বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখতে পেলেন যে তার স্ত্রী ছেলের ঘরে কান পেতে কিসব শুনছে। তিনিও কৌতুহল বশত এসে শুনলেন সুচির কান্না ভেজা গলায় আকুতি ।
সুচির এইভাবে বিনা কারণে বা বলা ভালো অহেতুক চোখের জল ফেলতে দেখে আকাশ হেসে ফেললো। এখন তো আর এইসবের কোন দরকার নেই। আকাশ যে সুচিকে থামাতে যাবে , তাকে বলবে যে , ‘ আর এইসবের দরকার নেই। , কিন্তু সুচি আকাশকে কিছু বলতেই দিচ্ছে না। এটা দেখে আকাশের একটু বেশি হাসি পেল।
আকাশকে হাসতে দেখে সুচির খুব রাগ হলো। আকাশের উপর না , নিজের উপর। এ কি ভুল করলো ! কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে কার কাছে কি বলতে চলে এলো সে ! আর কতো ভুল করবে ! নিজের এইসব ভুলের জন্যেই তো আজ ওর দশা। কেন সে নিজের অনুভূতি গুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না ? কেন ?
আকাশ এখন হাসছে। হসবেই তো। এখন তো সে সবার কাছে হাসির পাত্র। ভোগের পাত্র। এইসব ভাবতেই নিজের উপর রাগ আরও হাজার গুন বেড়ে গেল। আকাশকে মারার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা তার হলো না । বরং নিজের গালে চড় মারতে ইচ্ছা করছে। চোখের জল মুছে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য সে ঘুরে দাড়ালো।
এতক্ষণ পর আকাশ কিছু বলার সুযোগ পেল। কিন্তু সুচি তো চলে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ বেগে সুচির কোমড় ধরে তাকে ঘুরিয়ে নিজের কাছে টেনে নিল , “ কোথায় যাচ্ছিস ? আমাকে তো কিছুই বলতে দিলি না । „
সুচি রাগী গলায় বললো , “ ছাড় আমায় । „
“ তুই বললেও আমি আর তোকে ছাড়তে পারবো না। তুই বললি ‘ তোকে আজ ওরা দেখতে আসছে। , কারা আসছে দেখতে ? কে বললো তোকে এ কথা ? „
সুচি সেই রাগী গলায় বললো , “ ছাড় বলছি ... তোর সাথে আমার কথা বলতে ইচ্ছা করছে না । „
আকাশ সুচির কোমড় ধরে তাকে আরও কাছে টেনে নিয়ে বললো , “ প্রশ্নটার উত্তর দে। কে বললো তোকে ? „
এখন আকাশের মুখ আর তার মুখ পুরো সামনাসামনি। আকাশের নাকের গরম নিশ্বাস সুচির মুখে এসে পড়ছে। সুচি মুখটা ডানদিকে ঘুরিয়ে বললো , “ আমি শুনেছি । „
সুচির বাম গালের টোলের উপর চোখ রেখে আকাশ জিজ্ঞাসা করলো , “ কার মুখে ? „
এবার সুচি বুঝতে পারলো যে সে এই কথা শোনেই নি। কথাটা মাথাতে আসতেই সে শান্ত আর স্থির হয়ে গেল । একটু ভেবে নিয়ে সে যে কথাটা শুনেছে সেই কথাটাই বললো , “ আজকে পুরোহিত আসছে আমার কুষ্ঠি দেখতে আসছে। আর বিয়ের তারিখ ঠিক করবে তখন । „
নিজের ঠোঁটের এতো কাছে সুচির গাল। ওই গালে চুমু খেতে খুব ইচ্ছা করছে তার। কিন্তু নিজেকে সামলে সে বললো , “ ঠিক কথা। কিন্তু কার সাথে বিয়ে হবে সেটা শুনেছিস ? „
“ আমি জানি না। হয়তো দিদি জানে । „ ওইভাবে থাকে সুচির একদম ভালো লাগছে না। বুকটা উথাল পাথাল করতে শুরু করেছে , “ ছেড়ে দে বলছি। ভালো লাগছে না আর আমার । „
সুচিকে ছেড়ে দেওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা তার নেই , “ দেখবি ! কার সাথে তোর বিয়ের তারিখ ঠিক হচ্ছে ? „
সুচি এবার রেগে গেল , “ আমার দেখার ইচ্ছা নেই। প্লিজ তুই আমাকে ছাড়। „ বলে নিজেকে ছাড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টা করতে লাগলো।
“ এই দেখ । „ বলে সুচিকে টেনে আলমারির দরজায় লাগানো আয়নার সামনে নিয়ে এলো। তার আয়নার দিকে তাকে ঘুরিয়ে বললো , “ এই ছেলেটার সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে। „
সুচি বুঝতেই পারলো না যে আকাশ কি বলছে। বুঝতে না পারার জন্য তার ঠোঁটটা হাল্কা খুলে গেল। একবার আয়নায় আর একবার আকাশের দিকে তাকাতে লাগলো। আকাশ সুচির বিস্ময় দেখে সুচির ডান গালে নিজের বাম গাল ঠেকিয়ে , চোখ বন্ধ করে বললো , “ কালকে জেঠু এসছিল তোর আর আমার ব্যাপারে কথা বলতে। বাবা রাজি হয়ে গেছে। „
সুচি এখনও বুঝতে পারছে না যে কি হচ্ছে। হঠাৎ করে সবকিছু এতো বদলে গেলো কি করে ? এ যে অসম্ভব ! বাবা নিজেই তো চাইতো না যে এই ফ্যামিলির সাথে কোন সম্পর্ক হোক। হঠাৎ ! মানে ! কি ? কেন ? কি করে ? এইসব ভাবতে ভাবতে মাথার তালগোল পাকিয়ে গেল।
এই সব প্রশ্নের একটাও উত্তর না পেয়ে , কথাটা যে সত্যি সেটা বিশ্বাস হলো না তার। আকাশ মিথ্যা কথা বলছে ভেবে নিয়ে তার মুখে চরম বিরক্তি ফুটে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো , ‘ আকাশ ইয়ার্কি মারলেও যদি এটা সত্যি হতো তাহলে কি সুন্দর হতো জীবনটা । , কিন্তু একা একটা বাজে ইয়ার্কি। তাই সে মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললো , “ ছাড় আমায় । ইয়ার্কি মারিস না । „
আকাশ এবার আয়নার মধ্যে সুচির চোখে চোখ রেখে বললো , “ সত্যি বলছি। মায়ের দিব্যি। মা কালীর দিব্যি বলছি কালকে জেঠু এসছিল কথা বলতে। „
আকাশ কখনোই মায়ের নামে মিথ্যা দিব্যি কাটে না। এটা সুচির থেকে ভালো আর কেউ জানে না। তাই মনটা হঠাৎ খুশিতে নেচে উঠলো , “ কি করে ? মানে বাবা ! বাবা বললো আর কাকা রাজি হয়ে গেল ! „
আকাশ হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বললো , “ না । ব্যাপারটা ওরকম নয় । „
সুচি এবার ঘুরে গিয়ে আকাশের চোখ চোখ রেখ , ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো , “ তাহলে ? „
“ সে অনেক কথা , খুলে বলতে হবে। আপাতত এটা শোন যে আমাদের বিয়ে তে আমাদের মা বাবা সবাই রাজি । „
এতোটা শুনেই দেওয়ালের ওপারে কান পেতে থাকা স্নেহা দেবীর ঠোঁটের লাজুক হাসি আরও চওড়া হয়ে গেল। সেই হাসি দেখে আকাশের বাবা ইয়ার্কি মেরে বললেন , “ বুড়ি হয়ে গেছো। একটু তো লজ্জা করো। নিজের ছেলে মেয়ের গোপন কথা আড়ি পেতে শুনছো । „
আকাশের মা কপট রাগ দেখিয়ে বললেন , “ তুমিও তো শুনছিলে এতক্ষণ । „
যৌবনে তিনি প্রেম করেন নি। দেখাশোনা করেই তার বিয়ে হয়েছিল। তাই আজ নিজের ছেলে , মেয়ের এই কথা ধরনের কথা শুনে তার নিজের যৌবনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তিনি কথা এড়ানোর জন্য বললেন , “ খাবার দাও। অফিস যেতে দেরি হয়ে যাবে । „
আকাশের মায়ের হঠাৎ করে মনে পড়লো হরেনের কথা। হরেনকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার স্বামী। কালকে বিয়ে নিয়ে আলোচনার জন্য ভুলেই গেছিলেন কথাটা। এখন মনে পড়তে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন , “ হরেন কে ? „
হা হা করে হাসতে গিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে ফিক করে হেসে তিনি বললেন , “ হরেন না। ওর নাম ছিল হিরণ পান্ডা । আমার থেকে এক দুই বছরের বড়ো ছিল। আর সমুর থেকে ছোট। ওই সমু আর বড়োরাই ওকে রাগিয়ে হরেন বলে ডাকতো । „
“ আর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ? „
আবার একটু হেসে নিয়ে আকাশের বাবা বললেন , “ আমি ছোট ছিলাম বলে আমার উপর খুব চোটপাট করতো ও। ফাই ফরমাস তো ছিলোই। কিন্তু কখনো অন্যায় কিছু করে নি। তাই বড়ো দাদা মেনে নিয়ে সব করে দিতাম । তখন আমার বয়স ওই পনের কি ষোল। একদিন আমাকে একা পেয়ে ও বলেছিল , ‘ তুই যখন তোর বাবার কোম্পানির মালিক হবি। তখন আমাকে ম্যানেজার রাখবি । আমরা দুজন মিলে চালাবো কোম্পানি। দেখবি দেশে বিদেশে নাম হবে খুব। কোটিপতি হয়ে যাবো। , আমি ওর কথাটাকে ইয়ার্কি হিসাবে নিয়ে “ হ্যাঁ „ বলে দিয়েছিলাম। তারপর থেকে প্রতি বছরে চার পাঁচ বার করে ও কথাটা মনে করিয়ে দিত ।
“ তারপর ? „
“ তারপর আর কি ! ওই ধরনের কথা কেউ রাখে নাকি ! আমিও একদিন না বলে দিলাম। তখনও আমি কোম্পানির মালিক হইনি। তারপর রায়পুর না রাইপুর ওরকম একটা জায়গায় চাকরি পেয়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে ও বলেছিল ‘ তুই যদি কথা রাখতি তাহলে আমাকে কলকাতা ছেড়ে যেতে হতো না। , „ কথাটা বলে একটা গভীর নিশ্বাস ছাড়লেন। তারপর জামা প্যান্ট পড়ে খেতে বসে গেলেন।
ওদিকে সুচির বিস্ময়ের সীমা নেই। এখনও সে বিশ্বাস করতে পারছে না। আবার অবিশ্বাস করবে সেটাও পারছে না , “ আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ! হঠাৎ করে কি হলো ? „
আকাশ সুচির কোমড় ধরে রাখা নাচার মতো দুলতে দুলতে বললো , “ হঠাৎ করে না। আমাদের জন্মের আগে থেকে। আপাতত এটা শুনে রাখ যে আমাদের দুজনের জন্মানোর আগে জেঠু আর বাবার একটা ঝগড়া হয়েছিল। কাল রাতে সেটা মিটে গেছে। „
এতক্ষণ পর সুচি আকাশের কথা বিশ্বাস করতে করতে শুরু করলো। তার চোখ চকচক করছে। হঠাৎ একটা খুশির শান্তির মিঠে দমকা হাওয়া তার হৃদয় স্পর্শ করলো , “ কিসের ঝগড়া ? „
“ পুরোটা না বললে বুঝতে পারবি না। ওসব ছাড়। এটা ভাব যে আমাদের বিয়ের জন্য আজ পুরোহিত আসছে। „
সুচির হঠাৎ আকাশকে দেওয়া গোধূলির গোলাপের কথা মনে পড়ে গেল। মনে পড়তেই সে রেগে গেল। রাগী স্বরে বললো , “ ছাড় । „
আকাশ সুচির এহেন আচরণের অর্থ বুঝতে পারলো না , তাই অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো , “ কি হলো আবার ? „
সুচি নিজের গলার স্বরে রাগ বজায় রেখে বললো , “ কি হবে মানে ! তুই তো গোধূলির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস। ওর দেওয়া গোলাপ নিচ্ছিস। তাহলে আমার সাথে বিয়ে করছিস কেন ? „
কথাটা শুনে আকাশের বিস্ময়ের সীমা রইলো না , “ গোধূলির দেওয়া গোলাপ ! তুই ওখানে ছিলি ? মানে গোধূলি যখন গোলাপ দিয়েছিল তখন তুই ছিলি ওখানে ? আর তুই দেখছিলি সবকিছু ! „
চোয়াল শক্ত করে সুচি বললো , “ দেখেছি বলে ভুল করেছি মনে হচ্ছে ! „
“ তুই ভুল ভাবছিস । আমি সেটা বলতে চাইনি। „
“ এখন আমি ভুল ভাবছি। গোলাপ নিলি তুই আর ভুল ভাবছি আমি । „
“ শোন আমার কথা।পুরোটা শুনলে বুঝতে পারবি। ... „ গোধূলি যখন গোলাপ দিয়েছিল সেই সময় ঠিক কি হয়েছিল সেটা সে বলতে শুরু করলো .....
“ আমি তখন চেয়ারে বসে আছি। মাথায় শুধু ঘুরছে কি করা যায় ! ভেবেছিলাম নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে তোর ব্যাপারে মা বাবার সাথে কথা বলবো। কিন্তু বাবা আমার সব প্ল্যানে জল ঢেলে দিল। তাই ভাবছিলাম প্রথমে মাকে রাজি করাবো। তারপর মাকে নিজের দলে নিয়ে বাবাকে রাজি করাবো। তো এইসবই ভাবছিলাম তখন। হঠাৎ দেখি গোধূলি গোলাপ নিয়ে এসে আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো , ‘ হ্যাপি রোজ ডে । ,
“ আমি তো থতমত খেয়ে গেলাম। এদিকে অফিসের সবাই আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। কি করবো সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। অফিসের সবাই তখন আমাদেরকেই দেখছে। গোলাপ না নিলে অফিসের সবার সামনে গোধূলি কে অপমান করা হবে। অফিসের সবাই হাসাহাসি করার একটা বিষয় পেয়ে যাবে। আবার গোলাপটা নিলেও সমস্যা। তখনই মাথায় আইডিয়াটা এলো । আইডিয়াটা আসতেই গোলাপটা নিয়ে বললাম , ‘ থ্যাঙ্ক ইউ । , একটু থেমে সুচির উদ্দেশ্যে বললো , “ তুই হয়তো তখনই দেখেছিস। কিন্তু এরপর কি হয়েছিল সেটা তুই দেখিস নি ....
আকাশের কথার মাঝে সুচি বলে উঠলো , “ কখন ? „
“ বলছি , বলছি। উতলা হোস না .....
“ টিফিন ব্রেকে আমি আর গোধূলি একসাথেই খাই। যখন টিফিন ব্রেক হলো তখন আমি আমার টিফিন কৌটো নিয়ে গোধূলির অফিসে গেলাম। সঞ্জয় আঙ্কেল হাসি মুখে বললো , ‘ তোমরা বসে খাও আমি আসছি । ,
“ সঞ্জয় আঙ্কেল চলে যাওয়ায় আমার সুবিধাই হলো। কিন্তু কিভাবে শুরু করবো সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। আমি যে কিছু একটা বলতে ইতস্তত করছি সেটা গোধূলি আমার মুখ দেখে বুঝতে পারলো । তাই ও বললো , ‘ কিছু বলবে ? ‚
আমি সাহস করে বলেই ফেললাম , “ হ্যাঁ , মানে , ওই গোলাপ নিয়ে আর কি। „
“ গোধূলি হয়তো বুঝতে পেরেছিল যে আমি কি বলতে চাইছি । সেটা ওর মুখ দেখেই বুঝছিলাম , তাই যা বলার তা কোন সংকোচ না করে বললাম , “ খারাপ ভেবো না । তুমি খুব সুন্দর দেখতে। আমার থেকেও ভালো ছেলে তুমি পাবে। আমি তোমাকে ছোট করছি না। আসলে আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। সেও আমায় ভালোবাসে , কিন্তু এখন কথা বন্ধ আছে । খারাপ ভেবো না প্লিজ ! „
গোধূলির মুখ দেখে বুঝলাম যে সে ঠিক আন্দাজ করেছিল আর আমার কথায় তার কোন দুঃখ হলো না সেটাও বুঝলাম। ও বললো , ‘ এতে এতো সংকোচের কি আছে ! সেই মেয়ের নামটা জানতে পারি কি ! ,
“ হ্যাঁ নিশ্চয়ই । ওর নাম সুচিত্রা ....
আমার কথা শেষ করার আগেই ও বললো , ‘ সুচিত্রা তালুকদার ! আমাদের অফিসের ? ,
“ হ্যাঁ , ওই । „
‘ আসলে আমারও তোমাকে কিছু বলার ছিল। ‚ বিনা সংকোচে ও বললো , ‘ আসলে তোমার প্রতি আমার এখনও কোন ফিলিংস জন্মায়নি। হয়তো ভবিষ্যতে জন্মাতো কারন তোমাকে ভালো লাগতে শুরু করেছিলাম। আর ভালো লাগা কখন ভালোবাসায় বদলে যায় সেটা বোঝা যায় না। ,
আমি না জিজ্ঞাসা করে থাকতে পারলাম না , “ তাহলে গোলাপ ? „
“ আমি আমার বাপির কথাতে তোমায় গোলাপ দিয়েছি । বাপি চায় আমি তোমার সাথে রিলেশনে যাই ....