Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
দুজনে মিলে নিচে এলাম। দেখলাম, রবীন গাড়ির ভেতর বসে বসে চা খাচ্ছে। আমায় দেখে বললো, দাদা তোমার জন্য আজকে ফুল রেস্ট পেলাম।
-ভাল করেছিস। চা খেয়ে নিয়ে একটা কাজ কর।
-বলো।
-বুড়োমাসীকে গিয়ে বলবি। মিত্রা সাতদিন এখানে থাকবে। ওর শরীরটা খারাপ। সকালে ডাক্তার এসেছিলো।
রবিন আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
-আমি সারা দিন এখানে থাকলাম কিছু জানতে পারলাম না।
-কেনো তোকে নিয়েই তো সকালে ইঞ্জেকসন কিনতে গেছিলাম।
-সেটা ম্যাডামের জন্য!
-তাহলে কার জন্য। গাধা।
রবিন মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
-আর শোন বুড়ীমাসি যদি আসতে চায়, কাল সকালে নিয়ে আসিস। গাড়ির দরকার হলে আমি ফোন করে দেবো। ঠিক ঠাক ভাবে থাকিস। বেচাল হলে আমি কিন্তু খবর পেয়ে যাবো।
-না দাদা আর হবে না।
রবিন চা খেয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। এসে দেখলাম মিত্রা পেয়ারা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে একটা ভাঙা বেঁকারি দিয়ে পেয়ারা পারার চেষ্টা করছে।
-কি করছিস তুই! আবার একটা বিপদ ডাকবি নাকি, এরা তাহলে আমাকে ফাঁসি কাঠে ঝোলাবে।
-আমাকে একটা পেয়ারা পেড়ে দে।
বাধ্য হয়ে গাছে উঠে গোটা সাতেক পেয়ারা পেড়ে দিলাম। কয়েকটা কাপরে জড়িয়ে রাখলো, একটা নিজে খেতে শুরু করলো।
-তুই একটা খা।
ওর হাত থেকে পেয়ারা নিয়ে কামড় দিলাম। অনেকক্ষণ বাগানের এপাশ থেকে ওপাশে ঘুরলাম, অনেক কথা বললাম, সন্ধ্যে হয়ে এলো। ফোনটা বেজে উঠলোটিনার ফোন।
-বলো টিনা।
-তুমি কোথায়।
-বাড়িতে।
-বাড়িতে এখন।
-তোমাদের মিত্রাদির শরীর খারাপ পাহারা দিচ্ছি।
-কি হয়েছে।
সংক্ষেপে বললাম। টিনা দাদার বাড়ির এ্যাড্রেস চাইলো। আমি দিলাম। লোকেশন বলতে বললো, বললাম। ও ফোনটা রেখে দিলো।
দুজনে ওপরে চলে এলাম, আসার সময় নিচে আওয়াজ দিয়ে এলাম, ওপরে যাচ্ছি। ছোটমা বড়মা দুজনে বসে গল্প করছিলেন, ঘোরা হলো। মিত্রা মুখটা দেখিয়ে একগাল হাসলো। আয়। মিত্রা ভেতরে গেলো। আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছি, কোঁচর থেকে পেয়ারা বার করে একটা ছোটমার হাতে দিলো, একটা বড়মার হাতে দিলো, আর দুটো বড়মাকে দিয়ে বললো, একটা দাদার জন্য একটা মল্লিকদার জন্য।
-ওই পাগলটা গাছে উঠেছিলো। ছোটমা বললেন।
-আমি উঠি নি, উঠতে বাধ্য হয়েছি।
-গাল ভরা কথা বলিস না। বড়মা বললেন। এখনো হনুমান হওয়ার শখ জাগে।
মিত্রা হাসলো, আমি আর দাঁড়ালাম না, এরপর আরো চোখা চোখা ডায়লগ বেরোতে পারে। আমি ওপরে চলে গেলাম, সারাদিন শুই নি, ঘুমও পায় নি। কিন্তু এখন কেমন কেমন যেন লাগছে। শরীরটা ঠিক বইছে না, ইজি চেয়ারে বসে শরীরটা ছেড়ে দিলাম, একথা ওকথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম, জানি না।
হঠাত হৈ হৈ শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। কইরে মর্কটটা। বললো তোকে পাহারা দিচ্ছে। ঘরের মধ্যে হুড়মুড় করে ওরা ঢুকে পরলো। দেবাশিষ, টিনা, অদিতি, মিলি, নির্মাল্য।
-শালা বসে বসে ঘুমোচ্ছে বলে কিনা পাহারা দিচ্ছে।
আমি আড়মোড়া ভাঙলাম, ওরা কেউ খাটে কেউ চেয়ার দখল করে বসলো।
-জানিস অনি আমার একটাই দুঃখ মিত্রা আমাকে চিন্তে পারলো না।
-শুধু তোকে না ওদের সবাইকে?
-সবাইকে, তবে যাই বল মিত্রাকে আগের থেকে অনেক সেক্সি লাগছে।
-কামড়ে খেয়ে নে।
-শালা।
মিত্রা মুখ টিপে হাসলো। দেখলাম ওরা ফুলের বুকে নিয়ে এসেছে, সঙ্গে ফল, মিষ্টি।
-এ গুলো কিরে।
-কিছুনা। টিনা বললো।
-এগুলো এঘরে ঢোকালে কেনো।
-কেনো।
-এ ঘরটা নোংরা।
-বেশতো পরিষ্কার দেখছি। দেবাশিষ বললো। দেবাশিষ চেয়ারটা এগিয়ে নিয়ে এলো। আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম
- তুই এদের চিন্তে পারিস নি।
-তুই বলনা সম্ভব, সেই দশ বছর আগে দেখেছি। তোর সঙ্গে এদের যোগাযোগ ছিলো তাই……
-দাঁড়া চিনিয়ে দিচ্ছি।
-অনিদা খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি। অদিতি চেঁচিয়ে উঠলো। মিত্রার চোখে বিস্ময়।
-কেনো।
-এমনিতেই দেবাশিষ তোমার গল্প বলে আমাদের ওয়ার্ল্ডে পপুলার হয়ে গেছে, সবাই তোমাকে দেখতে চাইছে।
-সে তো ভালো কথা। একদিন কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া যাবে। পার্টি দাও। কিন্তু মিত্রাকে মনে করাতে গেলে ওই ব্যাপারগুলো এসেন্সিয়াল।
-তুমি অদিতিরটা বলতে পারো আমারটা বলতে পারবে না। মিলি বললো।
-তোমরা এরকম করলে, মিত্রাকে চেনাব কি করে।
-তুই বলনা শুনি।
-এই দেখো মালকিন তার কর্মচারীকে হুকুম করছেন শোনাবার জন্য, আমি না বলে পারি কি করে।
-খুব খারাপ হয়ে যাবে বলছি। মিত্রা বললো।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, মনে পরে সেই সিঁড়ি দিয়ে একটা সুন্দরী মেয়ে উঠছে, পায়ে হিল তলা জুতো, ঠক ঠক আওয়াজ, একটা জিনসের প্যান্ট পরা, টাইট গেঞ্জি, আমি তোকে বললাম…..
-সেই পাছুতে হাত। মিত্রা খিল খিল করে উঠে বিছানায় গড়াগড়ি খায়।
-অনিদা প্লিজ, আর না, তুমি সব কেলো করে দেবে।
-তারপর সেই প্রেমপত্র, হেঁদুয়াতে….দেবাশিষের দিকে তাকিয়ে বললাম, তোকে তো দেখিয়েছিলাম, দেবাশিষ হ্যাঁ বললো।
এই সেই অদিতি, দেবাশিষের সহধর্মিনী।
-বাবা এত হাসা হাসি, নিচ থেকে শোনা যাচ্ছে। ছোটমা সবার জন্য লাইম জুসের গ্লাস নিয়ে ঢুকলেন।
মিত্রা হাসতে হাসতে বললো তুমি বসো গল্পগুলো শুনে যাও একবার। ও অদিতির ব্যাপারটা রিপিট করলো। ছোটমা হেসে খান খান।
-কি দুর্বুদ্ধি রে বাবা।
-নেক্সট বল। মিত্রা বললো।
দেখলাম বড়মা এসে হাজির হয়েছে, বাবা তোদের হাসির চোটে তো নিচে টেকা দায়।
ছোটমা গিয়ে বড়মাকে হির হির করে টেনে আনলো, শোনো তোমার ছেলের কলেজ লাইফের কীর্তি।
আমি বড়মাকে ইজি চেয়ার ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। বড়মা ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো।
এবার আমি দেবাশিষকে কি ভাবে মাথায় বুদ্ধি নেই পাছায় আছে তার গল্প বললাম।
বড়মা বললেন, তোর পেটে পেটে এত বুদ্ধি।
আমি চোখ পাকিয়ে বললাম পেটে নয়……..
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
এবার মিলির দিকে তাকালাম।
-প্লীজ অনিদা, বড়মা, ছোটমার সামনে আমার প্রেসটিজটা ডাউন করে দিও না।
-এই দেখ মিত্রাকে চেনাতে হবে তো। তবে কি জানো মিলি, সেদিন যদি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ দৌড়বিদ আমার সঙ্গে দৌড়তো আমি তাকে হারিয়ে দিয়ে সোনার মেডেল পেতাম। শ্রেফ পেঁদানি খাওয়ার ভয়ে। তারপর মিলিকে চুমু খাওয়ার ব্যাপারটা ডিটেলসে বললাম, এও বললাম, সেজন্য পারিশ্রমিক হিসাবে পেয়েছি একটা মোগলাই পরাটা, সাক্ষী, মিত্রা। কেনোনা ওর ওপরেই আমার মোগলাই পরাটা নির্ভর করছিলো। আবার সারা ঘরে হাসির রোল। বড়মার হাসতে হাসতে চোখে জল এনে ফেললো, বললো তুই থাম। আমার পেট ব্যাথা করছে।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, নে জল খা অনেক হেসেছিস।
অদিতি বললো, বাঃ এরকম সর্টিয়ালি করলে চলবে না, তুমি নির্মাল্যেরটা বলো।
-এটারও স্বাক্ষী মিত্রাদি। মিলি বললো।
-হ্যাঁ। তুমি যা বললে ঠিক বলেছো। নির্মাল্যের দিকে তাকালাম, কি রে।
নির্মাল্য মাথা নীচু করে ফিক ফিক করে হাসছে।
-ওরও কি সেম ব্যাপার। ছোটমা বললো।
-না ওরটা একটু অন্যরকম, দেবাশিষকে যেমন মাথা আর পাছু বুঝিয়েছিলাম, ওকে মুতে নাম লিখতে বলেছিলাম।
আবার হাসি, আমি ক্যারিকেচার করে দেখাচ্ছি আর ওরা হাসছে।
বড়মা হাসতে হাসতে বললেন, ও ছোটো, আমাকে ধরে তোল, হাসতে হাসতে আমার পেট ব্যাথা হয়ে গেলো।
-কি মালকিন এবার চিনতে পারলেন সবাইকে।
-তুই আবার মালকিন মালকিন করছিস। মিত্রা খেঁকিয়ে উঠলো।
-যা বাবা। ছোটমার দিকে তাকিয়ে বললাম, খিদে পেয়ে গেছে।
-সে কি রে এই তো খেলি দুঘন্টা হয় নি।
এতোটা হাসালাম যে, বড়মা তুমি বলো তোমার খিদে পেয়ে গেছে না।
-খিদে পায় নি, তবে অবেলায় খেয়ে উঠলাম, বদহজম হওয়ার সম্ভাবনা কমে গেলো।
সবাই হাসলো।
-টিনারটা বললি না। মিত্রা বললো।
-ওরটা তোকে পার্সোনালি বলবো।
হাসির হাট ভাঙলো। বড়মা ছোটমা বেরিয়ে গেলেন।
দেবাশিষ বললো, কি হয়েছে মিত্রার।

আমি এডিট করে সংক্ষেপে সমস্ত ব্যাপারটা বললাম।

দেবাশিষ বললো কি বলছিস তুই। ওদের চোখ কপালে উঠেছে। মিত্রা মাথা নীচু করে বসে আছে।

-আর বলিস না। এবার সাতদিন গ্যারেজ। এই ডাক্তারবাবু এলেন বলে।

-নাম কি।

-পাশেই থাকেন দাদার বন্ধু ডাক্তার সামন্ত।

-ডাক্তার সামন্ত! তুই চিনিস না।

-চিনব কি করে, পেসেন্ট হয়ে কখনো যাই নি তো।

-নিওরোর টপ। এশিয়ায় দশজনের মধ্যে একজন।

-বলিস কিরে, ভদ্রলোককে দেখে একেবারে বোঝা যায় না।

বলতে বলতেই ডাক্তারবাবুর গলা পেলাম। কই আমার পেসেন্ট কোথায়।

আমি দরজার সামনে এগিয়ে গেলাম।

-বাবা এতো বেশ বড় গল্পের আসর দেখছি। কই মা কেমন আছো।

-ভালো।

-তোমার চোখমুখতো ভালো বলছে না।

বড়মা ঘরে এসেছেন সামন্ত ডাক্তারের পেছন পেছন।

ডাক্তারবাবু দেখলেন। ওর পায়ে কিসব ঠোকাঠুকি করলেন।

-অনি বাবা একটা কাগজ কলম দেতো।

আমি টেবিলের ওপর থেকে কাগজ পেন এনে দিলাম। উনি ওষুধের নাম লিখলেন। নিচে নিজের ফোন নম্বরটা দিলেন।

-শোন এই ওষুধটা তোকে হয়তো দেবে না, তবে তুই ফোন করতে বলবি আমায়, কোথা থেকে নিবি।

-সকালে যে দোকান থেকে ইঞ্জেকশন নিয়ে এলাম সেই দোকান থেকে।

-কোথায় বলতো দোকান টা।

-ট্রাংগুলার পার্কের কাছে। এখুনি নিয়ে আসি।

-যা। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললেন, মা তোমার সাতদিন রেস্ট, এবাড়ি থেকে একেবারে বেরোনো যাবে না। খালি খাওয়া দাওয়া আর ঘুম।

মিত্রা মাথা নীচু করে বসে আছে।
আমি দেবাশিষকে বললাম চলতো দেবাশিষ।
[+] 6 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 01-01-2022, 01:07 AM



Users browsing this thread: