25-12-2021, 08:49 PM
ভাল দিন
ঘুমিয়ে পড়েছিল পিকলু বাবু। হঠাৎ কচর মচর আওয়াজ শুনে ঘুমটা ভেঙে গেল ওর।
ঘরে কে যেন হাঁটছে। চোর এলো নাকি?
অন্যসময় এলে পিকলু বাবু চিৎকার করে কেঁদে উঠত, তবে ও কিনা এখন সেভেন প্লাস, আর নিজে জেদ করে একা একা শোবে বলে বায়না করে কিডসরুমে শুয়েছে, মাম্মাম বারণ করা সত্ত্বেও, তাই আর চেঁচাতে পারল না।
তবে, কি করবে ভাবছে, এমন সময় দেখে চোর ওর খাটের কাছেই এগিয়ে এসেছে। চোরের কাঁধে একটা ইয়াব্বড় থলি...মাথায় টুপি...আর...আর...
"সান্টা ক্লজ!"
চিৎকার করে বলে ওঠে পিকলু বাবু । শুনে সান্টা ক্লজ চমকে ওঠেন, তারপর ঠোঁটের ওপর হাত রেখে 'শ শ শ' করে একটা ইশারা করেন।
কিন্তু হাতের কাছে সান্টা কে দেখেও চুপ করে থাকা যায়? তাই পিকলু বাব্জ জিজ্ঞেস করে "সান্টা? তুমি সত্যিই সান্টা দাদু? আমার জন্য গিফট এনেছ?"
"হ্যাঁ পিকলু বাবু। ইউ হ্যাভ বিন আ গুড বয়! তাই তো। বলো তোমার কি চাই!"
কি চাই!
শুনে একটু ঘাবড়ে গেল পিকলু বাবু। ওর তো সব ই আছে। বই-খাতা-ড্রয়িং বুক-কালার পেন্সিল-রেসিং কার সব। তাহলে কি চাইবে ও?
ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ে গেল সন্ধ্যেবেলার কথা। মাম্মামের বকার কথা। পিকলু বাবু একটু পিৎজা খেতে চেয়ে বায়না করেছিম বলে মাম্মাম বকা দিয়েছেন, বলেছেন "এত ছোট বেলায় এত বায়না কিসের? যা দিয়েছি খেয়ে নেবে। ওসব খাবার বড় হয়ে খেও।" শুনে খুব মন খারাপ হয়ে গেছে ওর। ধ্যাত! মাম্মাম না, খুব বাজে! রাগের চোটে রাতে ভাত খায় নি ও ঠিক ভাবে। চিকেন ও না।
আচ্ছা, মাম্মাম বলেছিলেন না "বড় হয়ে"? সত্যিই যদি বড় হয়ে যাওয়া যায়?
মনস্থির করে নেয় পিকলু বাবু। তারপর বলে "আমি বড় হয়ে যেতে চাই সান্টা দাদু। প্লিজ আমাকে বড় করে দাও। "
শুনে, চোখ বড় বড় হয়ে যায় সান্টা দাদুর। তারপর বলে ওঠেন "এটা তো আমি পারব না পিকলু বাবু..."
"কিন্তু তুমি তো আমাকে গিফট দিতে এসেছিলে সান্টা.."
"হুম...আচ্ছা, আমি তোমাকে একটা মেশিন দিচ্ছি, আগে দেখে নাও তুমি বড় হয়ে কোন বছর টা দেখতে চাও...তারপরে আমরা ভাবব, কেমন?" বলতে বলতে ওর হাতে একটা ঘড়ির মতো যন্ত্র পরিয়ে দিলেন সান্টা দাদু। অনেক গুলো কাঁটা তাতে।
"আমি বাপির মতো বড় হতে চাই দাদু। আমার বাপি এখন থার্টি এইট ইয়ার্স ওল্ড। " তড়বড় করে বলে পিকলু বাবু।
সান্টা দাদু কি যেন একটা বোতাম টিপলেন আর সোঁওও করে একটা আওয়াজ হলো। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল পিকলু বাবু।
এটা কোথায়? চোখ খুলেই অবাক হয়ে গেল ও। থার্টি ইয়ার্স পরের কলকাতা এটা। কিন্তু কেমন একটা ধোঁয়া ধোঁয়া...সবাই গোমড়া মুখে হেঁটে যাচ্ছে চারিদিকে।
ধন্দে পড়ে গেল পিকলু বাবু। শোনে একজন কাঁদতে কাঁদতে বলছেন "আজও খেতে পাই নি, জানিস? আগেকার দিনে লোকেরা কত ভালো ভালো খাবার খেতেন। নিজেরা খেতেন আবার নষ্টও করতেন। আর আজ দেখ...আমাদের জন্য কিচ্ছু নেই!"
শুনে পাশের আরেকজন বলে উঠল "আমি তো আজ জল ও পাইনি। সব জল শেষ। এখন আরও সাতদিন জল আসবে না আমাদের এখানে..."
খাবার নেই, জল ও নেই?
হঠাৎ কাশতে কাশতে একজন বলে উঠল.."আজ তিনদিন হলো হাওয়া নেই এখানে। কৃত্রিম অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে আছি। সব আগের লোকেদের জন্য!"
হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ!
বলে ওঠে ওরা তিনজন। তারপর ওর দিকে নজর যাওয়ায় বলে ওঠে "এইইইও তুমি কে? তুমি তো আমাদের চেনা কেউ না? এখানে কিভাবে এসেছ?"
ভয়ে ভয়ে পিকলু বাবু বলে ওঠে.."আ আমি পিকলু...আমি থার্টি ইয়ার্স পরে দেখতে এসেছি, পছন্দ হলে এখানে থেকে যাব..."
"থার্টি ইয়ার্স আগের লোক? এই তো, তোমাদের জন্যই আমাদের এই অবস্থা। এই কে আছিস? এই যে, আগের মানুষ এসেছে...একে পুলিশের কাছে দিয়ে দে..." বলে ওঠে তিনজন একসাথে।
পুলিশ? ওরে বাবা!
সেদিন ই মাম্মাম -বাপি একটা ওয়েব সিরিজ দেখছিলেন, তাতে পুলিশ একজনকে মারছিল, দেখেছে পিকলু বাবু।
ওকেও মারবে পুলিশ?
খুব ব্যথা লাগবে তাহলে?
"মাম্মাম...বাপিইইইইই" বলে কেঁদে ওঠে পিকলু বাবু।
"এই তো...এই তো সোনা..." মাম্মানের গলার আওয়াজে চমকে ওঠে ও। দেখে মাম্মাম ওকে জড়িয়ে ধরেছেন। পাশেই বাপিও। দুজনেই খুব চিন্তিত হয়ে দেখছেন ওকে।
আর... ও তো ঘরেই আছে। যেখানে ছিল।
হঠাৎ ওই তিনজনের কথা মনে হতে আবার চোখে জল এলো পিকলু বাবুর।
তবে এবার ভয়ে না, কষ্টে।
আহা রে! খাবার নেই...জল নেই...অক্সিজেন নেই...। কত কষ্ট পাচ্ছে ওরা।
আর, তখনই মনে পড়ে গেল রাতের কথা। রাগ করে খাবার নষ্ট করে ও... কল খুলে দিয়ে বন্ধ করতে ভুলে যায়... বাবা সেদিন বাড়ির সামনের কয়েকটা বড় বড় গাছ কেটে দিলেন...
এইজন্যই তো ওরা... তিরিশ বছর পরে ওরা...কষ্ট পাবে...
চোখে জল নিয়ে বাপি আর মাম্মামের দিকে তাকায় পিকলু বাবু। তারপর বলে "আমার সান্টা দাদুর গিফট চাই না। তোমরা আমাকে প্রমিজ করো, খাবার, জল আর কোনো কিছু নষ্ট করবে না? কেউ নষ্ট করলে বারণ করবে? নইলে আর কয়েকবছর পরে বাকিদের কি হবে? আমিও নষ্ট করব না। আমার সব বন্ধুদের বলব। করো প্রমিজ? "
ওর কথা শুনে হকচকিয়ে তাকায় দুজন। বাপি বলে ওঠেন "প্রমিজ করছি বেটা!"
আর মাম্মাম আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন ওকে। কপালে একটা চুমো দেন।
আহা, ওঁর পিকলু যে সত্যিই 'পিকলু বাবু' হয়ে গেল আজ!
আজ তাই বড়দিন... বড় ভাল দিন।
ঘুমিয়ে পড়েছিল পিকলু বাবু। হঠাৎ কচর মচর আওয়াজ শুনে ঘুমটা ভেঙে গেল ওর।
ঘরে কে যেন হাঁটছে। চোর এলো নাকি?
অন্যসময় এলে পিকলু বাবু চিৎকার করে কেঁদে উঠত, তবে ও কিনা এখন সেভেন প্লাস, আর নিজে জেদ করে একা একা শোবে বলে বায়না করে কিডসরুমে শুয়েছে, মাম্মাম বারণ করা সত্ত্বেও, তাই আর চেঁচাতে পারল না।
তবে, কি করবে ভাবছে, এমন সময় দেখে চোর ওর খাটের কাছেই এগিয়ে এসেছে। চোরের কাঁধে একটা ইয়াব্বড় থলি...মাথায় টুপি...আর...আর...
"সান্টা ক্লজ!"
চিৎকার করে বলে ওঠে পিকলু বাবু । শুনে সান্টা ক্লজ চমকে ওঠেন, তারপর ঠোঁটের ওপর হাত রেখে 'শ শ শ' করে একটা ইশারা করেন।
কিন্তু হাতের কাছে সান্টা কে দেখেও চুপ করে থাকা যায়? তাই পিকলু বাব্জ জিজ্ঞেস করে "সান্টা? তুমি সত্যিই সান্টা দাদু? আমার জন্য গিফট এনেছ?"
"হ্যাঁ পিকলু বাবু। ইউ হ্যাভ বিন আ গুড বয়! তাই তো। বলো তোমার কি চাই!"
কি চাই!
শুনে একটু ঘাবড়ে গেল পিকলু বাবু। ওর তো সব ই আছে। বই-খাতা-ড্রয়িং বুক-কালার পেন্সিল-রেসিং কার সব। তাহলে কি চাইবে ও?
ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ে গেল সন্ধ্যেবেলার কথা। মাম্মামের বকার কথা। পিকলু বাবু একটু পিৎজা খেতে চেয়ে বায়না করেছিম বলে মাম্মাম বকা দিয়েছেন, বলেছেন "এত ছোট বেলায় এত বায়না কিসের? যা দিয়েছি খেয়ে নেবে। ওসব খাবার বড় হয়ে খেও।" শুনে খুব মন খারাপ হয়ে গেছে ওর। ধ্যাত! মাম্মাম না, খুব বাজে! রাগের চোটে রাতে ভাত খায় নি ও ঠিক ভাবে। চিকেন ও না।
আচ্ছা, মাম্মাম বলেছিলেন না "বড় হয়ে"? সত্যিই যদি বড় হয়ে যাওয়া যায়?
মনস্থির করে নেয় পিকলু বাবু। তারপর বলে "আমি বড় হয়ে যেতে চাই সান্টা দাদু। প্লিজ আমাকে বড় করে দাও। "
শুনে, চোখ বড় বড় হয়ে যায় সান্টা দাদুর। তারপর বলে ওঠেন "এটা তো আমি পারব না পিকলু বাবু..."
"কিন্তু তুমি তো আমাকে গিফট দিতে এসেছিলে সান্টা.."
"হুম...আচ্ছা, আমি তোমাকে একটা মেশিন দিচ্ছি, আগে দেখে নাও তুমি বড় হয়ে কোন বছর টা দেখতে চাও...তারপরে আমরা ভাবব, কেমন?" বলতে বলতে ওর হাতে একটা ঘড়ির মতো যন্ত্র পরিয়ে দিলেন সান্টা দাদু। অনেক গুলো কাঁটা তাতে।
"আমি বাপির মতো বড় হতে চাই দাদু। আমার বাপি এখন থার্টি এইট ইয়ার্স ওল্ড। " তড়বড় করে বলে পিকলু বাবু।
সান্টা দাদু কি যেন একটা বোতাম টিপলেন আর সোঁওও করে একটা আওয়াজ হলো। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল পিকলু বাবু।
এটা কোথায়? চোখ খুলেই অবাক হয়ে গেল ও। থার্টি ইয়ার্স পরের কলকাতা এটা। কিন্তু কেমন একটা ধোঁয়া ধোঁয়া...সবাই গোমড়া মুখে হেঁটে যাচ্ছে চারিদিকে।
ধন্দে পড়ে গেল পিকলু বাবু। শোনে একজন কাঁদতে কাঁদতে বলছেন "আজও খেতে পাই নি, জানিস? আগেকার দিনে লোকেরা কত ভালো ভালো খাবার খেতেন। নিজেরা খেতেন আবার নষ্টও করতেন। আর আজ দেখ...আমাদের জন্য কিচ্ছু নেই!"
শুনে পাশের আরেকজন বলে উঠল "আমি তো আজ জল ও পাইনি। সব জল শেষ। এখন আরও সাতদিন জল আসবে না আমাদের এখানে..."
খাবার নেই, জল ও নেই?
হঠাৎ কাশতে কাশতে একজন বলে উঠল.."আজ তিনদিন হলো হাওয়া নেই এখানে। কৃত্রিম অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে আছি। সব আগের লোকেদের জন্য!"
হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ!
বলে ওঠে ওরা তিনজন। তারপর ওর দিকে নজর যাওয়ায় বলে ওঠে "এইইইও তুমি কে? তুমি তো আমাদের চেনা কেউ না? এখানে কিভাবে এসেছ?"
ভয়ে ভয়ে পিকলু বাবু বলে ওঠে.."আ আমি পিকলু...আমি থার্টি ইয়ার্স পরে দেখতে এসেছি, পছন্দ হলে এখানে থেকে যাব..."
"থার্টি ইয়ার্স আগের লোক? এই তো, তোমাদের জন্যই আমাদের এই অবস্থা। এই কে আছিস? এই যে, আগের মানুষ এসেছে...একে পুলিশের কাছে দিয়ে দে..." বলে ওঠে তিনজন একসাথে।
পুলিশ? ওরে বাবা!
সেদিন ই মাম্মাম -বাপি একটা ওয়েব সিরিজ দেখছিলেন, তাতে পুলিশ একজনকে মারছিল, দেখেছে পিকলু বাবু।
ওকেও মারবে পুলিশ?
খুব ব্যথা লাগবে তাহলে?
"মাম্মাম...বাপিইইইইই" বলে কেঁদে ওঠে পিকলু বাবু।
"এই তো...এই তো সোনা..." মাম্মানের গলার আওয়াজে চমকে ওঠে ও। দেখে মাম্মাম ওকে জড়িয়ে ধরেছেন। পাশেই বাপিও। দুজনেই খুব চিন্তিত হয়ে দেখছেন ওকে।
আর... ও তো ঘরেই আছে। যেখানে ছিল।
হঠাৎ ওই তিনজনের কথা মনে হতে আবার চোখে জল এলো পিকলু বাবুর।
তবে এবার ভয়ে না, কষ্টে।
আহা রে! খাবার নেই...জল নেই...অক্সিজেন নেই...। কত কষ্ট পাচ্ছে ওরা।
আর, তখনই মনে পড়ে গেল রাতের কথা। রাগ করে খাবার নষ্ট করে ও... কল খুলে দিয়ে বন্ধ করতে ভুলে যায়... বাবা সেদিন বাড়ির সামনের কয়েকটা বড় বড় গাছ কেটে দিলেন...
এইজন্যই তো ওরা... তিরিশ বছর পরে ওরা...কষ্ট পাবে...
চোখে জল নিয়ে বাপি আর মাম্মামের দিকে তাকায় পিকলু বাবু। তারপর বলে "আমার সান্টা দাদুর গিফট চাই না। তোমরা আমাকে প্রমিজ করো, খাবার, জল আর কোনো কিছু নষ্ট করবে না? কেউ নষ্ট করলে বারণ করবে? নইলে আর কয়েকবছর পরে বাকিদের কি হবে? আমিও নষ্ট করব না। আমার সব বন্ধুদের বলব। করো প্রমিজ? "
ওর কথা শুনে হকচকিয়ে তাকায় দুজন। বাপি বলে ওঠেন "প্রমিজ করছি বেটা!"
আর মাম্মাম আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন ওকে। কপালে একটা চুমো দেন।
আহা, ওঁর পিকলু যে সত্যিই 'পিকলু বাবু' হয়ে গেল আজ!
আজ তাই বড়দিন... বড় ভাল দিন।