Thread Rating:
  • 11 Vote(s) - 2.45 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মধুরাত
#2
বিয়েবাড়ি মানে কি? অনেক হৈ চৈ, হট্টগোল, হাসি-মজা-আনন্দ, আর তার সাথে লেগে থাকা আলগা দুঃখ। একটু বিষণ্ণতা। নিজের প্রিয়জনকে পরের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার দুঃখ। সেই দুঃখ আজ কল্পক নিজেও বুঝতে পারছে। আজ ওর বোনের বিয়ে। বোন। সেই ছোট্ট বোন, যাকে ও প্রায় নিজের কোলেপিঠে মানুষ করেছে। ও বোনের থেকে খুব বেশী হলে ছয় বছরের বড়ো হবে। বোনের যখন দু মাস বয়স, তখন বাবা মারা যায়। কপালের সিঁদুর মুছে, হাতের শাঁখা-পলা ভেঙ্গে বিধবার বেশে মা ওদের দুই ভাইবোনকে নিয়ে উঠল বাপেরবাড়িতে। বাবা ছিল বেসরকারী অফিসের একজন সামান্য কেরানী। মাসমাইনেতে যখন সংসার চালানোই দায়, তখন সঞ্চয় নামক বস্তুটি বড় বালাই হয়ে দাঁড়ায় মধ্যবিত্তের কাছে। কল্পকের বাবার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছিল। সঞ্চয় বলতে ব্যাঙ্কে হাজার সাঁইত্রিশ টাকাআর অফিস থেকে বাবুদের ‘ভিক্ষাস্বরূপ’ আরোও হাজার কুড়ি। এই সম্বল করে মা দাদা-বৌদির মুখঝামটা শুনে বাপেরবাড়িতে ঠাঁইনাড়া হয়ে রইল। সেই ছয়বছর বয়সেই কল্পক হয়ে উঠেছিল ওর বোনের দাদা আর সেই সাথে বাবাও। ওর খেলার সাথী, পড়াশোনার সঙ্গী সবকিছুই। ভাইবোনের এমন মিল খুব কমই দেখা যায়। সময়ের সাইকেল নিজের গতিতে চলতেই থাকে। কল্পকের সেই দাঁহাবাজ মামা-মামী এই দুনিয়ার মায়া কাটিয়ে পরলোক গমণ করেছেন বেশ কয়েকবছর। কল্পক কলেজে পড়তে পড়তে কাজের সন্ধানে ঘুরে বেড়াত। কপালজোরে লেগেও গেল একটা। হোক না বেসরকারী। কাজ তো। মাইনে কম। তো কি? জীবনে লেগে থাকাটাই বড় কথা। আজ পাঁচ বছর কেটে গেছে চাকরীতে। মাইনেটাও একটা ভদ্রস্থ জায়গায় এসে পৌঁছেছে। মা আর বোনকে নিয়ে একটা মাথা গোঁজার ঠাঁইও নিয়েছে সে। বছর দুই ওরা এই পাড়ায় এসে উঠেছে। সবাই বেশ ভালো। এই দুবছরে সবাই ওদেরকে আপন করে নিয়েছে। যেমন ওদের পাশের বাড়ির তপতী বৌদি। অতনুদা নেভীতে চাকরী করে। বছরে একবার বাড়ি আসার সুযোগ পায়। বাড়িতে লোক বলতে অতনুদার বৃদ্ধ বাবা আর শয্যাশায়ী মা। সংসার আর ছেলেকে সামলানোর পরেও তপতী বৌদি নিজের মুখের হাসিটাকে কখনও মিলিয়ে যেতে দেয় না। প্রায়ই ও মাসিমা মানে কল্পকের মায়ের সাথে গল্প করতে আসে। এত খোলামেলা আর হাসিখুশী স্বভাবের মহিলা কল্পক জীবনে খুব কমই দেখেছে। বৌদি কল্পক আর অপর্ণা মানে ওর বোনের সাথে একপ্রকার বন্ধুর মত মেশে। হাসিঠাট্টা করে। ইয়ার্কি মারে। সেইসব ইয়ার্কি মাঝেমাঝে এত মাত্রাছাড়া হয়ে যায় যে, তখন বৌদির কথা শুনতে শুনতে কল্পকের কান হয়ে যায় লাল। কল্পক জানে বৌদি ওদের ভাইবোনকে নিজের ভাইবোনের মতই ভালোবাসে আর স্নেহ করে। কল্পকও বৌদিকে বৌদি কম, দিদিই বেশী মনে করে। ইদানিং বৌদির উপর একটা গুরুদায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে ওর মা। সেটা কল্পক ভালো করেই বুঝতে পারছে। কারণ কয়েকদিন ধরেই ও দেখতে পাচ্ছে বৌদির হাতে সুন্দরীদের ঝিলিক মারা ফটো শোভা পাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে যে মা আর বৌদির একটা মিলিত ষড়যন্ত্র গজিয়ে উঠছে, সেটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছেনা কল্পকের মতো একটা বুদ্ধিমান ছেলের। আর ওদের সাথে সমানে পাল্লা দিচ্ছে ওর পাকা ডেঁপো বোনটি। সদ্য কলেজে ঢুকে ওর যেন পাখনা গজিয়েছে। ফোনে বন্ধুদের নানান আদব কায়দায় তোলা ছবি মা আর বৌদিকে দেখাচ্ছে। কিন্তু ওকে কিছু করারও উপায় নেই। কিছু করতে গেলেই আবদারী মেয়ের মত ঠৌঁট ফুলিয়ে মায়ের কাছে নালিশ জানাবে, “দেখো না মা, দাদা কেমন করছে।” মা-ও অমনি বলবে, “কি রে তুই। এখনও বোনের সাথে অমন করছিস? তোর থেকে কত ছোট হয়?” কল্পক বলে, “আদরে আদরে মেয়েটাকে যে একটা বাঁদরী করে তুলছো, সে খেয়াল আছে? এই বয়সেই পেকে ঝুনো নারকেল হয়ে গেছে। বিয়ে দিলে পরের দিনই বর ফেরত দিয়ে যাবে।” অপর্ণা মায়ের পিছন থেকে ভেংচি কেটে বলে, “ইশ, দিয়ে গেলেই হল। আমি আসবোই না।”
 
মা আর বৌদি যতই চেষ্টা করুক, ও এখন বিয়ে করতে চায় না। বোনের বয়স এখন একুশ। আগে ওর বিয়ে ঠিক করবেতারপর নিজেরটা নিয়ে ভাববে। এই কথাটাই ও মা আর বৌদিকে বলে দিয়েছে। যদিও এটা একমাত্র কারণ নয়, ওর বিয়ে না করার। এটা ছাড়াও আরোও একটা কারণ আছে। যেটা ও আজ পর্যন্ত কাউকেই বলতে পারেনি। সেটা হল ও এখনও পর্যন্ত এমন কোনো মেয়ে দেখেনি যাকে দেখে ওর পছন্দ হয়েছে। মনে হয়েছে, হ্যাঁ, একে নিজের জীবনসঙ্গিনী করা যেতে পারে। পছন্দের ব্যাপারেও কল্পক বেশ খুঁতখুঁতে। কালো মেয়েকে ওর একদমই পছন্দ নয়। ও জানে একথাটা বললে সবাই ওকে অহংকারী ভাববে, বা ফেমিনিস্টরা ওকে সমাজের অযোগ্য বলেও ঘোযণা করতে পারে। কিন্তু তাতে ওর কিছু করার নেই। প্রত্যেক মানুষেরই একটা নিজস্ব পছন্দ থাকে। ওরও আছে। ও কালো মেয়েদের পছন্দ করেনা। অথচ ও অনেক ফর্সা, সুন্দরী, বুদ্ধিমতী মেয়ের সাথে মিশেছে, কথা বলেছে। কিন্তু তাদের কাউকেও ওর পছন্দ হয়নি। মনে মনে হয়েছে কোথাও যেন একটা কিছুর খামতি আছে। খামতি কি ওর মনে আছে? হতেও পারে। যাই হোক মা ওর জেদের কাছে হার মেনে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করল। তার বদলে উঠে পড়ে লাগল অপর্ণার বিয়ে দিতে। অবশেষে ভগবানের আশীর্বাদে অপর্ণার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। কল্পকের অফিসে কাজ করে, একটি ছেলের সাথেদেখতে শুনতে ভালো, পালটি ঘর। বাড়িঘরদুয়ারও ভালো। পাত্রপক্ষেরও ভালো লেগে গেল অপর্ণাকে। ঠিক হল ফাল্গুনেই অপর্ণার বিয়ে দেওয়া হবে। আজই সেই দিন। সকাল থেকে কল্পক বেজায় ব্যস্ত। আর ব্যস্ত তপতী বৌদি। মনে হচ্ছে যেন ওরই বোনের বিয়ে হচ্ছে। গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে নান্দীমুখ সবারই ব্যবস্থা করছে সে একাই। কল্পকের মা বিয়ের যাবতীয় দায়িত্ব তার এই প্রতিবেশিনীর হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে আছেন। একঘর কুটুম। কেবল কল্পকদেরই নয়, ওর মায়ের অনুরোধে তপতী বৌদিও নিজের বাড়ির বিশেষ বিশেষ কয়েকজনকে নিমন্ত্রণ করেছে অপর্ণার বিয়েতে। তারা সব ওর বাড়িতেই উঠেছে। দুবাড়িতে ঠাসা ভীড়। গত দুদিন কল্পক নিজের বাড়িতে শুতে পারেনি। ওকে আশ্রয় নিতে হয়েছে তপতী বৌদিদের তিনতলার একটি ঘরে। ওদের একতলা আর দোতলাটা আগে থেকেই বুক হয়ে আছে। তাই বাধ্য হয়েই ওকে তিনতলাতে আশ্রয় নিতে হয়েছে। এটা ওর পক্ষে ভালোই হয়েছে। কারণ তিনতলায় ও ছাড়া আর কেউই নেই। নিরিবিলি ছাড়া ঘুম ঠিক আসে না কল্পকের। তাই ও নিজেই এই তিনতলার কোণের ঘরটা বেছে নিয়েছে।
 
কল্পক ওদের বাড়ির সামনেটায় দাঁড়িয়ে প্যান্ডেল তৈরীর তদারকি করছিল, এমন সময় তপতী বৌদি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এল। এদিক ওদিক দেখে, কল্পককে সামনে দেখতে পেয়ে ওর কাছে এসে বলল, “ভাই, একবার আমাদের বাড়িতে যাও তো।” কল্পক জিজ্ঞাসা করল, “কি হয়েছে?” বৌদি বলল, “আরে আমাদের শোবার ঘরের দেরাজের উপর গায়ে হলুদের বরণডালাটা রেখে এসেছি, একবারটি গিয়ে নিয়ে এসো লক্ষ্মীটি। বামুনঠাকুর বসে রয়েছেন।”
“তুমি অন্য কাউকে বলো, আমি এখন কাজ করছি।”
“প্লিজ লক্ষ্মীটি, একবার যাও, কাউকে দেখতে পেলাম না। তাই তোমাকেই বলছি।”
“ঠিক আছে, এনে দিচ্ছি।” বলে কল্পক বৌদিদের বাড়ির দিকে হাঁটা দিল। বৌদিদের বাড়ির ওর বাড়ির ঠিক সামনেই। রাস্তার উলটো পিঠে। বৌদি পিছন থেকে চেঁচিয়ে বলল, “আমাদের শোবার ঘরের দেরাজের উপরে আছে।” কল্পক ঘাড় নেড়ে বৌদিকে আশ্বস্ত করল

ক্রমশ...
TOO LAZY TO POST NEW UPDATES
[+] 2 users Like Neelkantha's post
Like


Messages In This Thread
মধুরাত - by Neelkantha - 13-05-2019, 03:14 PM
RE: মধুরাত - by Neelkantha - 13-05-2019, 03:15 PM
RE: মধুরাত - by chndnds - 13-05-2019, 03:23 PM
RE: মধুরাত - by Neelkantha - 13-05-2019, 08:28 PM
RE: মধুরাত - by dirtysexlover - 13-05-2019, 03:24 PM
RE: মধুরাত - by Neelkantha - 13-05-2019, 08:31 PM
RE: মধুরাত - by Peace Bird - 13-05-2019, 09:56 PM
RE: মধুরাত - by Neelkantha - 14-05-2019, 11:30 AM
RE: মধুরাত - by bdbeach - 14-05-2019, 01:16 AM
RE: মধুরাত - by Neelkantha - 14-05-2019, 11:31 AM
RE: মধুরাত - by naag.champa - 14-05-2019, 03:13 AM
RE: মধুরাত - by Neelkantha - 14-05-2019, 11:32 AM
RE: মধুরাত - by Neelkantha - 14-05-2019, 11:27 AM
RE: মধুরাত - by sairaali111 - 14-05-2019, 11:39 AM
RE: মধুরাত - by Neelkantha - 14-05-2019, 01:52 PM
RE: মধুরাত - by buddy12 - 14-05-2019, 02:18 PM
RE: মধুরাত - by Neelkantha - 14-05-2019, 05:13 PM
RE: মধুরাত - by bdbeach - 15-05-2019, 12:56 AM
RE: মধুরাত - by Neelkantha - 16-05-2019, 11:01 AM
RE: মধুরাত - by Neelkantha - 20-05-2019, 11:34 AM
RE: মধুরাত - by Neelkantha - 21-05-2019, 10:41 AM
RE: মধুরাত - by ronylol - 21-05-2019, 02:39 PM
RE: মধুরাত - by Neelkantha - 02-06-2019, 05:39 PM
RE: মধুরাত - by buddy12 - 02-06-2019, 11:46 PM
RE: মধুরাত - by Mr Fantastic - 25-05-2020, 07:32 PM
RE: মধুরাত - by johny23609 - 25-05-2020, 10:05 PM
RE: মধুরাত - by bratapol - 26-05-2020, 12:47 AM
RE: মধুরাত - by Samal - 27-04-2023, 07:45 PM
RE: মধুরাত - by Samal - 28-04-2023, 01:06 PM



Users browsing this thread: