24-12-2021, 08:54 PM
পর্ব ১০: আহলাদে আটখানা
ভোকাল টনিক খাইয়ে তার আত্মবিশ্বাসকে উচ্চতার চরম শিখরে তুলে দিয়ে বব রমাকে নিয়ে গোগাবাবুর অফিসে পৌঁছে গেলেন। অফিসটা শহরের দক্ষিণ সীমান্তে এক নির্জন এলাকায় অবস্থিত। একটা গোটা দো-তলা বাড়িকে গোগাবাবু অফিস বানিয়েছেন। নিচতলায় দুটো বড় বড় ঘর, একটা বড় বারান্দা, একটা স্নানঘর আর একটা রান্নাঘর আছে আর গোটা ওপরতলা নিয়ে বিশাল একটা হলঘর মতো করা হয়েছে। আর একদম উপরে লোহার গ্রিল দিয়ে ঘেরা ছাদ। রমারা যখন পৌঁছালো তখন ঘড়িতে আটটা বেজে গেছে। তারা সত্যিই খানিকটা দেরি করে ফেলেছে। সবার শেষে গিয়ে হাজিরা দিয়েছে। নিচতলায় প্রথম ঘরে কেউ নেই। দ্বিতীয় ঘরের তিন দেয়াল জুড়ে তিনটে গদি দেওয়া বড়সড় কাঠের সোফা পাতা রয়েছে আর সেগুলি ভাগাভাগি করে নয়জন ভদ্রলোক বসে আছেন। সুরাপান চলছে। সবার হাতে মদের গ্লাস। মাঝের সোফাটার সামনে একটা গোল কাঁচের বড় টেবিলের উপর তিনটে খোলা ভদকার বোতল রাখা রয়েছে। দুটো খালি কাঁচের গ্লাসও রাখা আছে। বোঝাই যাচ্ছে এই সান্ধ্য আসরে আরো দুজনের এসে যোগদান করার কথা রয়েছে। টেবিলের উপর একটা ছোট্ট মিউসিক সিস্টেম রাখা রয়েছে। হালকা করে হিন্দি গান বাজছে। গান শুনতে শুনতে সবাই মদ্যপান করছে।
আগমনকারীদের মধ্যে কেবল একজনকেই রমা চিনতে পারলো। অফিসের মালিক প্রবীণ পরিচালক গোগাবাবু, যিনি তাদেরকে এই সন্ধ্যায় তাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সে ববের দিকে তাকিয়ে দেখলো যে বাকিদের চেনেন কিনা। চোখাচোখি হতেই তিনি মাথা নাড়লেন। তিনি নিজেও খানিকটা ধন্দে পরে গেছেন। সামান্য একটা লুক টেস্টের জন্য এতজন লোক জড়ো হওয়ার মানে হয় না। নিশ্চয়ই অন্য কোনো মতলব আছে। বব সম্পূর্ণরূপে সজাগ হয়ে গেলেন। হাসিমুখে বৃদ্ধ পরিচালককে প্রশ্ন করলেন, "কি ব্যাপার গোগাবাবু? এ তো দেখছি চাঁদের হাট বসিয়ে দিয়েছেন। আপনি তো বলেছিলেন লুক টেস্ট নেবেন। তাতে তো এতজন লাগে না। আপনি কি আজকেই শুটিং চালু করে দেবেন নাকি?"
ধূর্ত পরিচালক উঠে এসে রমাদের হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানালেন, "আরে স্বাগতম! সুস্বাগতম! তোমাদের জন্যই ওয়েট করছিলাম। একটু লেট করে ফেলেছো। কোই বাত নেহি, দেড় আয়ে দুরুস্ত আয়ে। রমা, তোমাকে আজ দারুণ সেক্সী লাগছে। এরপরে আর কি টেস্ট নেবো? শুধু এই অসাধারণ ড্রেসটা পরে আসার জন্যই লেটার মার্ক্স দিয়ে দিলাম। তোমাকে আমরা সোজা সাইন করিয়ে নেবো। আর তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ বব, এক হট লেডিকে আমাদের সামনে এনে হাজির করার জন্য। তুমি ঠিকই বলেছো সাধারণ একটা লুক টেস্টে তেমন লোকজন লাগে না। সেজন্য এনারা এখানে আসেননি। আসলে কি জানো, আজ সাতসকালে একটা মর্মান্তিক খবর এসে পরায় আমাদের পুরো প্ল্যান পাল্টাতে হলো। যোগীসাহেবের স্ত্রী হঠাৎ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। উনি বউকে সোজা বিদেশে চিকিৎসা করতে নিয়ে যাচ্ছেন। আজ রাতেই ফ্লাইটে উঠবেন। কবে যে ফিরবেন, কোনো ঠিক নেই। আর তুমি তো জানো বব আমাদের লাইনে প্রোডিউসাররাই হর্তা-কর্তা-বিধাতা। ওনাদের ছাড়া আমরা কানা। তাই আমাদের ফিল্মের জন্য সেই সকাল থেকে একটা ভালো প্রোডিউসার খুঁজে বেড়িয়েছি। আর তুমি তো ভালো করেই জানো যে আজকাল ভালো প্রোডিউসার পাওয়া কত কঠিন। যাকেই বলছি একটা নতুন নায়িকাকে দিয়ে কাজ করতে চাই, অমনি মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। দোরে দোরে ঘুরে মরে যখন একদম হত্যদম হয়ে গেছি, ঠিক তখনি মেঘরাজবাবু সাক্ষাৎ দেবদূতের মতো আমার সামনে আবির্ভুত হলেন। ওনার বেকারির বিজনেস। এই শহরে ওনাদের দশ-বারোটা কেক শপ আছে। স্টুডিওতে কেক লাগলে ওনাদের কাছ থেকেই আমরা আনাই। আজ একটা সিনিয়র অভিনেতার জন্মদিন ছিল। অর্ডার ওনারাই তুলেছিলেন। কেক ওনার বড় ছেলে আর্চি নিয়ে গিয়েছিলো। খুবই করিৎকর্মা ছেলে। আমার সাথে আগেই আলাপ ছিল। আমাকে দেখে বললো যে ওর বাবা নাকি একটা ফিল্ম বানাতে চান। বারবার স্টুডিওতে ডেলিভারি দিতে এসে মেঘরাজবাবুর মেজ ছেলে আয়ুষের সিনেমায় নামার শখ হয়েছে। তার জন্য অ্যাক্টিংয়ের তালিমও নিয়েছে। হিরোর রোল করতে চায়। মেঘরাজবাবু স্নেহশীল বাবা। ছেলেকে ফিল্মে লঞ্চ করবেন বলে ঠিক করেছেন। আর্চি তখুনি আমাকে তার বাবার কাছে নিয়ে গেলো। তুমি ঠিকই ধরেছো হে বব, আমিই পরিচালনার গুরুদায়িত্বটা পেয়েছি। কাস্টিংয়ের দায়িত্বটাও আমার ঘাড়েই বর্তিয়েছে। শুধু একটাই শর্ত। সেটা আবার আয়ুষেরই বায়না। হিরোইন নাকি তার ঘ্যামা চাই। যাকে দেখলেই হলে দর্শক সিটি মারবে। আমিও অমনি রমার প্রসঙ্গ তুললাম। বললাম যে এমন একটা রেডিমেড চিজ আমার হাতেই আছে। একবার চান্স দিলেই পর্দায় আগুন ধরিয়ে দেবে। গ্যারেন্টি দিলাম যে রমার মতো একটা এক্সোটিক বিউটিকে ফিল্মে নিলে, শো হাউসফুল হতে বাধ্য। কিছু গরমাগরম সিন গুঁজে দিলেই, ওর হট বডিটা দেখতে লোকে হল ভরাবে। মেঘরাজবাবু দিলদরিয়া মানুষ। আমার এক কথায় রমাকে ওনার ফিল্মে হিরোইন করতে রাজি হয়ে গেলেন। তবে ফ্রেশ মুখ তো, তাই একবার নিজের চোখে ওর ট্যালেন্টটা দেখে নিতে চান। রমাকে মনে ধরলে যেমন চাও তেমনই কন্ট্রাক্ট হবে। বুঝলে বব, মেঘরাজবাবুর কাছে টাকা হাতের ময়লা। কথা দিয়েছেন ওনাকে ঠিকমতো স্যাটিসফাই করতে পারলে, কোনোরকম কার্পণ্য করবেন না। আর দেখতেই তো পারছো, উনি একা আসেননি। মেঘরাজবাবু বিচক্ষণ মানুষ। এই লাইনে ওনার তেমন অভিজ্ঞতা নেই বলে ফুল টিম নিয়ে এসেছেন। টাকা ঢালবার আগে সবাইকে দিয়ে যাচাই করে দেখে নিতে চান, ওনার পয়সাটা পুরো উসুল হবে কিনা। আমি সিওর রমা ওনাদের ফুল স্যাটিসফ্যাক্সন দিতে পারবে। কি রমা, ওনাদের সামনে তোমার ট্যালেন্ট শোকেস করতে কোনো অসুবিধে নেই তো?"
রমার বদলে ববই উপযাচক হয়ে আগ্রহভরে উত্তর দিলেন, "আরে না না! আপত্তি থাকবে কেন? অসুবিধা থাকার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। এই লাইনে যারাই নামে তারা সবাই ভালো করেই জানে যে ট্যালেন্ট না শো করে মুফতে এখানে রোজগার করা যায় না। রমা শুধু সুন্দরীই নয়, অত্যন্ত সাহসীও। নিশ্চিন্তে থাকুন, ও সবকিছু করতে রাজি আছে। অল দ্য টাইম, ওর কাছ থেকে আপনারা একটা দুর্দান্ত শো আশা করতে পারেন। রমা সবসময় স্টেজে আগুন লাগানোর জন্য তৈরী আছে। আপনারা যা কিছু দেখতে চাইবেন, সব দেখাবে। আজ রাতেও কোনো অন্যথা হবে না। কি বলছো রমা, পারবে না এনাদের তুষ্ট করতে?"
মওকা পেয়ে রমাও অমনি উৎসাহ দেখিয়ে জবাব দিলো, "হ্যাঁ, হ্যাঁ, অবশ্যই! আমাকে যখন এনারা সুযোগ দিতে চাইছেন, তখন তো আমারও কর্তব্য এনাদের ইচ্ছেগুলো ভালো করে পূরণ করা। এনারা যা চান, সবকিছু দেওয়ার আপ্রাণ আমি চেষ্টা করবো। আশা করি এনাদের আমি ঠিকঠাক খুশি করতে পারবো।"
রমার আত্মবিশ্বাসের বহর দেখে ঝানু পরিচালক আনন্দে লাফিয়ে উঠলেন। অত্যন্ত উৎসাহের সাথে বললেন, "বাঃ বাঃ! এই তো সাহসী মেয়ের মতো কথা। আমি আপনাকে কি বলেছিলাম মেঘরাজবাবু? শুনলেন তো রমার কথা? ওকে চান্স দিয়ে আপনি এতটুকুও ঠকবেন না। দেখছেন তো কি বোল্ড অ্যাটিটুড। মরিয়া না হলে কি আর সিনেমার নায়িকা হওয়া যায়। আমি বেট ফেলে বলতে পারি আমরা সবাই রমার কাছ থেকে একটা সাংঘাতিক হট শো উপহার পেতে চলেছি। আশা করছি আজ রাতের খাতিরদারিতে ও কোনো কসুর রাখবে না। আপনারা সবাই ফুল এন্টারটেনমেন্টের জন্য তৈরী হয়ে যান। আমি নিশ্চিত রমা সবাইকে খুশি করতে সক্ষম হবে।"
গোগাবাবুর মতো আগুন্তুকেরাও সবাই রমার দুঃসাহসিক উত্তরটা শুনেছেন। অমন উদ্দীপক জবাবে সবার চোখগুলো কামলিপ্সায় জ্বলজ্বল করে উঠলো। প্রত্যেকেই লম্বা-চওড়া শক্তপোক্ত চেহারার অধিকারী। দেখতে-শুনতে মন্দ না হলেও, চরিত্র মোটেই সুবিধের নয়। সবথেকে বয়স্ক মেঘরাজ অধিকারী পঞ্চাশোর্ধ হলেও, বয়স ওনার মজবুত চেহারায় বিন্দুমাত্র ছাপ ফেলতে পারেনি। সবার মধ্যে কার্যত ওনাকেই সবথেকে সুদর্শন দেখতে। উনি আজ সন্ধ্যার কারবারে ওনার আইনি উপদেষ্টা পরশ নাগকে সাথে করে এনেছেন। পরশবাবু ওনার বাল্যবন্ধু এবং বিপত্নীক। মেঘরাজবাবুর থেকে মাত্র বছর তিনেকের ছোট এবং সমানরূপে সুপুরুষ। বড় ছেলে অর্চিবান অধিকারী ওরফে আর্চি তার বাবার মতোই লম্বা ও সুদর্শন। তবে তার চেহারাটা একটু পালোয়ান গোছের, অনেক বেশি পেশিবহুল। সে সদ্য তিরিশে পা দিয়েছে। মেজ ছেলে আয়ুষ্মান অধিকারী অরফে আয়ুষ দাদার বিলকুল ফটোকপি। শরীরের সাথে মুখের মিলও অত্যন্ত বেশি। সে দাদার থেকে মাত্র দেড় বছরের ছোট। বাবার মতো সেও সাথে করে তার সমবয়সী বেস্ট ফ্রেন্ড কালিয়া নাগকে নিয়ে এসেছে। কালিয়া পরশবাবুর একমাত্র পুত্রসন্তান। সে মেঘরাজবাবুর সবচেয়ে বড় বেকারিতে ম্যানেজারি করে। প্রথম দুই ভাই যদি পালোয়ান হয়, তবে কালিয়া একটা ছোটখাটো দৈত্য। গায়ের রঙ কুচকুচে কালো এবং গড়নটা খুবই লম্বা ও কদাকার। চোখে-মুখে একটা নিষ্ঠুরতার ছাপ আছে। রোজ টানা তিন-চার ঘন্টা জিমে কাটায়। জিম করে করে শরীরটাকে একেবারে পেশিশক্তির মন্দিরে পরিবর্তন করে ফেলেছে। মোটের উপর রীতিমতো ভয়াবহ চেহারা। তবে পিতৃতুল্য মেঘরাজবাবুকে ভগবানের মতো পূজো করে আর প্রিয় বন্ধুর জন্য আপন প্রাণটাও হাসতে হাসতে দিয়ে দিতে পারে। ছোট ছেলে অনির্বাণ অরফে অনি কলেজে পড়ছে। সদ্য আঠেরো পেরিয়েছে। বাবা-দাদাদের মতোই রূপবান, তবে তাদের থেকে সামান্য বেঁটে। তার বাড়বার বয়স অবশ্য পেরোয়নি। সে বরাবরই লেটলতিফ। সবকিছুই তার একটু দেরিতে হয়। সে অন্যান্যদের মতো অত বলিষ্ঠও নয়। অবশ্য মেজদার জিগরি দোস্ত কালিয়ার কথা শুনে জিমে যাওয়া আরম্ভ করার পর তার গায়ে খানিকটা মাংস লেগেছে। জেমস আবার সাথে দুজনকে নিয়ে এসেছে, জিমি ও জনি। দুজনেই তার সাথে একই কলেজে পড়ে। তাকে খুব তোয়াজ করে চলে। বন্ধুর মতো তারাও একই ছাঁচে গড়া, দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে অনুরূপ। দুজনেই নেশাভান করার মাস্টার। সাথে মাগীর দোষও আছে। এদের সঙ্গদোষে অনিও ধীরে ধীরে গোল্লায় যাচ্ছে। মেঘরাজবাবু ছোট ছেলের সব খবরই রাখেন। কিন্তু তাকে কোনোকিছু করতেই কোনো বাধা দেন না। উল্টে লাই দেন। দুনিয়াদারীটা উনি অনেকের চেয়ে অনেক ভালো বোঝেন। এমনি এমনি তো আর ওনার চুলে পাক ধরেনি। খুব ভালো করে জানেন উঠতি বয়সের ছেলেপুলেরা একটু বেশি ওড়ে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিজেরাই মাটিতে নেবে পরবে। উনি নিজেও কচি বয়সে অনেক কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এখনো সময় সুযোগ পেলেই দু-একটা খেপ খেলে ফেলেন। এসব সময়ে বাল্যবন্ধু পরশবাবুকে অবশ্যই সাথে রাখেন। পরশবাবু ওনার কাছে বিলকুল পরশপাথর। যা ছুঁয়ে ফেলেন, তাই সোনা হয়ে যায়। পরশবাবু না থাকলে ওনার আবার আসর জমে না।
মেঘরাজবাবু দলবল নিয়ে সন্ধ্যে সাতটার একটু পরেই গোগাবাবুর অফিসে এসে হাজির হয়েছেন। সকালে প্রবীণ পরিচালকের মুখে নতুন নায়িকার এত প্রশংসাবাণী শুনে ওনারা খুবই উতলা হয়ে উঠেছিলেন। বিশেষত ওনার তিন পুত্র ও তাদের বন্ধুদের তো এমন গরমাগরম মালের লুফৎ ওঠানোর জন্য আর তর সইছিলো না। সেয়ানা পরিচালক মশাই মালদার পার্টির জন্য আসর সাজিয়েই রেখেছিলেন। তিন বোতল ভদকা আর গানের সুব্যবস্থা করাই ছিল। শিকার এসে পরলেই হলো, সবাই হামলে পরার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। কিন্তু বিধি বাম। রমারা এসে পৌঁছালো প্রায় এক ঘন্টা দেরিতে। ততক্ষণে বোতলের ছিপি খুলে গেছে। তিন বয়স্ক ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে, বাকি সবাই দু-তিন পেগ মদ গলাদ্ধকরণ করে ফেলেছে। এমন অবস্থায় দালালের হাত ধরে রমা উৎশৃঙ্খল যৌবন আর ডবকা গতর নিয়ে একটা ছোটোখাটো আঁটসাঁট আধুনিক পোশাক পরে বেপরোয়া অর্ধনগ্নভাবে আপসকারী অবস্থায় পাক্কা বারোভাতারী বেশ্যার মতো দরজায় এসে দাঁড়ালো আর ধড়িবাজ পরিচালক মশাইয়ের ফাঁদে পা গলিয়ে উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে ফেলে তাকে লুটেপুটে খাওয়ার জন্য বন্য পশুগুলোকে খোলা আহ্বান জানিয়ে বসলো। মদ্যপান করে সবাই কমবেশি গরম হয়ে ছিল। রমা এসে আগুনে যেন ঘি ঢেলে দিলো।
বজ্জাত পরিচালক মশাই যা প্রত্যাশা করেছিলেন, ঠিক তাই হলো। রমা ঘরে ঢুকতেই সবাই কান খাড়া করে তাদের কথোপকথন শুনছিলেন। তার বেদবাক্য যেই না তাদের কানে গেলো অনি আর তার দুই বন্ধু জিমি ও জনি অমনি সোফা ছেড়ে লাফিয়ে উঠলো। নিমেষে গানের ভলিউম বাড়িয়ে দিয়ে ওরা রমার সামনে এসে কোমর দোলাতে লাগলো। ওদের কান্ড দেখে খিলখিল করে হেসে উঠে সেও অমনি অনিদের সাথে ঢিমে তালে নাচতে শুরু করে দিলো। একপাল অচেনা লোকের সামনে আচমকা তাকে বেসরমের মতো অমন ভারী বুক-পাছা দোলাতে দেখে বব কিছুটা হতচকিত হয়ে গেলেন। কোনো প্ররোচনা ছাড়াই এত সহজে যে রমা এতটা বেলেল্লাপনা দেখাতে শুরু করে দেবে, সেটা তিনি মোটেও আশা করেননি। অবশ্য তিনি পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিলেন। ব্যাপারস্যাপার লক্ষ্য করে তিনি সহজেই বুঝে গেলেন যে তাকে কোনো কড়া দাওয়াই না দিলে এতগুলো মুশকো লোককে এমন ভীষণ উত্তেজিত অবস্থায় একার হাতে সামলানো তার পক্ষে খুবই কষ্টকর হয়ে উঠবে। তিনি দেরি না করে সোজা গিয়ে টেবিল থেকে একটা ভদকার বোতল তুলে নিয়ে একটা খালি গ্লাসে মদ ঢেলে ভর্তি করে দিলেন। তারপর সবার অলক্ষ্যে পকেট থেকে ওনার ব্রহ্মাস্ত্র বের করে মদে চার ফোঁটা এক্সট্যাসি মিশিয়ে দিলেন। ইচ্ছাকৃত দাওয়াইটা একটু বেশি কড়া করে দিলেন। তাতে অবশ্য কোনো ক্ষতি নেই। আজ সন্ধ্যায় যা সব তাগড়াই লোকজন তাকে চেখে দেখতে এসেছে, তিনি নিশ্চিত যে তাদেরকে ঠিকমতো সন্তুষ্ট করতে গেলে রমার একটু এক্সট্রা ডোজই দরকার।
ভোকাল টনিক খাইয়ে তার আত্মবিশ্বাসকে উচ্চতার চরম শিখরে তুলে দিয়ে বব রমাকে নিয়ে গোগাবাবুর অফিসে পৌঁছে গেলেন। অফিসটা শহরের দক্ষিণ সীমান্তে এক নির্জন এলাকায় অবস্থিত। একটা গোটা দো-তলা বাড়িকে গোগাবাবু অফিস বানিয়েছেন। নিচতলায় দুটো বড় বড় ঘর, একটা বড় বারান্দা, একটা স্নানঘর আর একটা রান্নাঘর আছে আর গোটা ওপরতলা নিয়ে বিশাল একটা হলঘর মতো করা হয়েছে। আর একদম উপরে লোহার গ্রিল দিয়ে ঘেরা ছাদ। রমারা যখন পৌঁছালো তখন ঘড়িতে আটটা বেজে গেছে। তারা সত্যিই খানিকটা দেরি করে ফেলেছে। সবার শেষে গিয়ে হাজিরা দিয়েছে। নিচতলায় প্রথম ঘরে কেউ নেই। দ্বিতীয় ঘরের তিন দেয়াল জুড়ে তিনটে গদি দেওয়া বড়সড় কাঠের সোফা পাতা রয়েছে আর সেগুলি ভাগাভাগি করে নয়জন ভদ্রলোক বসে আছেন। সুরাপান চলছে। সবার হাতে মদের গ্লাস। মাঝের সোফাটার সামনে একটা গোল কাঁচের বড় টেবিলের উপর তিনটে খোলা ভদকার বোতল রাখা রয়েছে। দুটো খালি কাঁচের গ্লাসও রাখা আছে। বোঝাই যাচ্ছে এই সান্ধ্য আসরে আরো দুজনের এসে যোগদান করার কথা রয়েছে। টেবিলের উপর একটা ছোট্ট মিউসিক সিস্টেম রাখা রয়েছে। হালকা করে হিন্দি গান বাজছে। গান শুনতে শুনতে সবাই মদ্যপান করছে।
আগমনকারীদের মধ্যে কেবল একজনকেই রমা চিনতে পারলো। অফিসের মালিক প্রবীণ পরিচালক গোগাবাবু, যিনি তাদেরকে এই সন্ধ্যায় তাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সে ববের দিকে তাকিয়ে দেখলো যে বাকিদের চেনেন কিনা। চোখাচোখি হতেই তিনি মাথা নাড়লেন। তিনি নিজেও খানিকটা ধন্দে পরে গেছেন। সামান্য একটা লুক টেস্টের জন্য এতজন লোক জড়ো হওয়ার মানে হয় না। নিশ্চয়ই অন্য কোনো মতলব আছে। বব সম্পূর্ণরূপে সজাগ হয়ে গেলেন। হাসিমুখে বৃদ্ধ পরিচালককে প্রশ্ন করলেন, "কি ব্যাপার গোগাবাবু? এ তো দেখছি চাঁদের হাট বসিয়ে দিয়েছেন। আপনি তো বলেছিলেন লুক টেস্ট নেবেন। তাতে তো এতজন লাগে না। আপনি কি আজকেই শুটিং চালু করে দেবেন নাকি?"
ধূর্ত পরিচালক উঠে এসে রমাদের হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানালেন, "আরে স্বাগতম! সুস্বাগতম! তোমাদের জন্যই ওয়েট করছিলাম। একটু লেট করে ফেলেছো। কোই বাত নেহি, দেড় আয়ে দুরুস্ত আয়ে। রমা, তোমাকে আজ দারুণ সেক্সী লাগছে। এরপরে আর কি টেস্ট নেবো? শুধু এই অসাধারণ ড্রেসটা পরে আসার জন্যই লেটার মার্ক্স দিয়ে দিলাম। তোমাকে আমরা সোজা সাইন করিয়ে নেবো। আর তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ বব, এক হট লেডিকে আমাদের সামনে এনে হাজির করার জন্য। তুমি ঠিকই বলেছো সাধারণ একটা লুক টেস্টে তেমন লোকজন লাগে না। সেজন্য এনারা এখানে আসেননি। আসলে কি জানো, আজ সাতসকালে একটা মর্মান্তিক খবর এসে পরায় আমাদের পুরো প্ল্যান পাল্টাতে হলো। যোগীসাহেবের স্ত্রী হঠাৎ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। উনি বউকে সোজা বিদেশে চিকিৎসা করতে নিয়ে যাচ্ছেন। আজ রাতেই ফ্লাইটে উঠবেন। কবে যে ফিরবেন, কোনো ঠিক নেই। আর তুমি তো জানো বব আমাদের লাইনে প্রোডিউসাররাই হর্তা-কর্তা-বিধাতা। ওনাদের ছাড়া আমরা কানা। তাই আমাদের ফিল্মের জন্য সেই সকাল থেকে একটা ভালো প্রোডিউসার খুঁজে বেড়িয়েছি। আর তুমি তো ভালো করেই জানো যে আজকাল ভালো প্রোডিউসার পাওয়া কত কঠিন। যাকেই বলছি একটা নতুন নায়িকাকে দিয়ে কাজ করতে চাই, অমনি মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। দোরে দোরে ঘুরে মরে যখন একদম হত্যদম হয়ে গেছি, ঠিক তখনি মেঘরাজবাবু সাক্ষাৎ দেবদূতের মতো আমার সামনে আবির্ভুত হলেন। ওনার বেকারির বিজনেস। এই শহরে ওনাদের দশ-বারোটা কেক শপ আছে। স্টুডিওতে কেক লাগলে ওনাদের কাছ থেকেই আমরা আনাই। আজ একটা সিনিয়র অভিনেতার জন্মদিন ছিল। অর্ডার ওনারাই তুলেছিলেন। কেক ওনার বড় ছেলে আর্চি নিয়ে গিয়েছিলো। খুবই করিৎকর্মা ছেলে। আমার সাথে আগেই আলাপ ছিল। আমাকে দেখে বললো যে ওর বাবা নাকি একটা ফিল্ম বানাতে চান। বারবার স্টুডিওতে ডেলিভারি দিতে এসে মেঘরাজবাবুর মেজ ছেলে আয়ুষের সিনেমায় নামার শখ হয়েছে। তার জন্য অ্যাক্টিংয়ের তালিমও নিয়েছে। হিরোর রোল করতে চায়। মেঘরাজবাবু স্নেহশীল বাবা। ছেলেকে ফিল্মে লঞ্চ করবেন বলে ঠিক করেছেন। আর্চি তখুনি আমাকে তার বাবার কাছে নিয়ে গেলো। তুমি ঠিকই ধরেছো হে বব, আমিই পরিচালনার গুরুদায়িত্বটা পেয়েছি। কাস্টিংয়ের দায়িত্বটাও আমার ঘাড়েই বর্তিয়েছে। শুধু একটাই শর্ত। সেটা আবার আয়ুষেরই বায়না। হিরোইন নাকি তার ঘ্যামা চাই। যাকে দেখলেই হলে দর্শক সিটি মারবে। আমিও অমনি রমার প্রসঙ্গ তুললাম। বললাম যে এমন একটা রেডিমেড চিজ আমার হাতেই আছে। একবার চান্স দিলেই পর্দায় আগুন ধরিয়ে দেবে। গ্যারেন্টি দিলাম যে রমার মতো একটা এক্সোটিক বিউটিকে ফিল্মে নিলে, শো হাউসফুল হতে বাধ্য। কিছু গরমাগরম সিন গুঁজে দিলেই, ওর হট বডিটা দেখতে লোকে হল ভরাবে। মেঘরাজবাবু দিলদরিয়া মানুষ। আমার এক কথায় রমাকে ওনার ফিল্মে হিরোইন করতে রাজি হয়ে গেলেন। তবে ফ্রেশ মুখ তো, তাই একবার নিজের চোখে ওর ট্যালেন্টটা দেখে নিতে চান। রমাকে মনে ধরলে যেমন চাও তেমনই কন্ট্রাক্ট হবে। বুঝলে বব, মেঘরাজবাবুর কাছে টাকা হাতের ময়লা। কথা দিয়েছেন ওনাকে ঠিকমতো স্যাটিসফাই করতে পারলে, কোনোরকম কার্পণ্য করবেন না। আর দেখতেই তো পারছো, উনি একা আসেননি। মেঘরাজবাবু বিচক্ষণ মানুষ। এই লাইনে ওনার তেমন অভিজ্ঞতা নেই বলে ফুল টিম নিয়ে এসেছেন। টাকা ঢালবার আগে সবাইকে দিয়ে যাচাই করে দেখে নিতে চান, ওনার পয়সাটা পুরো উসুল হবে কিনা। আমি সিওর রমা ওনাদের ফুল স্যাটিসফ্যাক্সন দিতে পারবে। কি রমা, ওনাদের সামনে তোমার ট্যালেন্ট শোকেস করতে কোনো অসুবিধে নেই তো?"
রমার বদলে ববই উপযাচক হয়ে আগ্রহভরে উত্তর দিলেন, "আরে না না! আপত্তি থাকবে কেন? অসুবিধা থাকার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। এই লাইনে যারাই নামে তারা সবাই ভালো করেই জানে যে ট্যালেন্ট না শো করে মুফতে এখানে রোজগার করা যায় না। রমা শুধু সুন্দরীই নয়, অত্যন্ত সাহসীও। নিশ্চিন্তে থাকুন, ও সবকিছু করতে রাজি আছে। অল দ্য টাইম, ওর কাছ থেকে আপনারা একটা দুর্দান্ত শো আশা করতে পারেন। রমা সবসময় স্টেজে আগুন লাগানোর জন্য তৈরী আছে। আপনারা যা কিছু দেখতে চাইবেন, সব দেখাবে। আজ রাতেও কোনো অন্যথা হবে না। কি বলছো রমা, পারবে না এনাদের তুষ্ট করতে?"
মওকা পেয়ে রমাও অমনি উৎসাহ দেখিয়ে জবাব দিলো, "হ্যাঁ, হ্যাঁ, অবশ্যই! আমাকে যখন এনারা সুযোগ দিতে চাইছেন, তখন তো আমারও কর্তব্য এনাদের ইচ্ছেগুলো ভালো করে পূরণ করা। এনারা যা চান, সবকিছু দেওয়ার আপ্রাণ আমি চেষ্টা করবো। আশা করি এনাদের আমি ঠিকঠাক খুশি করতে পারবো।"
রমার আত্মবিশ্বাসের বহর দেখে ঝানু পরিচালক আনন্দে লাফিয়ে উঠলেন। অত্যন্ত উৎসাহের সাথে বললেন, "বাঃ বাঃ! এই তো সাহসী মেয়ের মতো কথা। আমি আপনাকে কি বলেছিলাম মেঘরাজবাবু? শুনলেন তো রমার কথা? ওকে চান্স দিয়ে আপনি এতটুকুও ঠকবেন না। দেখছেন তো কি বোল্ড অ্যাটিটুড। মরিয়া না হলে কি আর সিনেমার নায়িকা হওয়া যায়। আমি বেট ফেলে বলতে পারি আমরা সবাই রমার কাছ থেকে একটা সাংঘাতিক হট শো উপহার পেতে চলেছি। আশা করছি আজ রাতের খাতিরদারিতে ও কোনো কসুর রাখবে না। আপনারা সবাই ফুল এন্টারটেনমেন্টের জন্য তৈরী হয়ে যান। আমি নিশ্চিত রমা সবাইকে খুশি করতে সক্ষম হবে।"
গোগাবাবুর মতো আগুন্তুকেরাও সবাই রমার দুঃসাহসিক উত্তরটা শুনেছেন। অমন উদ্দীপক জবাবে সবার চোখগুলো কামলিপ্সায় জ্বলজ্বল করে উঠলো। প্রত্যেকেই লম্বা-চওড়া শক্তপোক্ত চেহারার অধিকারী। দেখতে-শুনতে মন্দ না হলেও, চরিত্র মোটেই সুবিধের নয়। সবথেকে বয়স্ক মেঘরাজ অধিকারী পঞ্চাশোর্ধ হলেও, বয়স ওনার মজবুত চেহারায় বিন্দুমাত্র ছাপ ফেলতে পারেনি। সবার মধ্যে কার্যত ওনাকেই সবথেকে সুদর্শন দেখতে। উনি আজ সন্ধ্যার কারবারে ওনার আইনি উপদেষ্টা পরশ নাগকে সাথে করে এনেছেন। পরশবাবু ওনার বাল্যবন্ধু এবং বিপত্নীক। মেঘরাজবাবুর থেকে মাত্র বছর তিনেকের ছোট এবং সমানরূপে সুপুরুষ। বড় ছেলে অর্চিবান অধিকারী ওরফে আর্চি তার বাবার মতোই লম্বা ও সুদর্শন। তবে তার চেহারাটা একটু পালোয়ান গোছের, অনেক বেশি পেশিবহুল। সে সদ্য তিরিশে পা দিয়েছে। মেজ ছেলে আয়ুষ্মান অধিকারী অরফে আয়ুষ দাদার বিলকুল ফটোকপি। শরীরের সাথে মুখের মিলও অত্যন্ত বেশি। সে দাদার থেকে মাত্র দেড় বছরের ছোট। বাবার মতো সেও সাথে করে তার সমবয়সী বেস্ট ফ্রেন্ড কালিয়া নাগকে নিয়ে এসেছে। কালিয়া পরশবাবুর একমাত্র পুত্রসন্তান। সে মেঘরাজবাবুর সবচেয়ে বড় বেকারিতে ম্যানেজারি করে। প্রথম দুই ভাই যদি পালোয়ান হয়, তবে কালিয়া একটা ছোটখাটো দৈত্য। গায়ের রঙ কুচকুচে কালো এবং গড়নটা খুবই লম্বা ও কদাকার। চোখে-মুখে একটা নিষ্ঠুরতার ছাপ আছে। রোজ টানা তিন-চার ঘন্টা জিমে কাটায়। জিম করে করে শরীরটাকে একেবারে পেশিশক্তির মন্দিরে পরিবর্তন করে ফেলেছে। মোটের উপর রীতিমতো ভয়াবহ চেহারা। তবে পিতৃতুল্য মেঘরাজবাবুকে ভগবানের মতো পূজো করে আর প্রিয় বন্ধুর জন্য আপন প্রাণটাও হাসতে হাসতে দিয়ে দিতে পারে। ছোট ছেলে অনির্বাণ অরফে অনি কলেজে পড়ছে। সদ্য আঠেরো পেরিয়েছে। বাবা-দাদাদের মতোই রূপবান, তবে তাদের থেকে সামান্য বেঁটে। তার বাড়বার বয়স অবশ্য পেরোয়নি। সে বরাবরই লেটলতিফ। সবকিছুই তার একটু দেরিতে হয়। সে অন্যান্যদের মতো অত বলিষ্ঠও নয়। অবশ্য মেজদার জিগরি দোস্ত কালিয়ার কথা শুনে জিমে যাওয়া আরম্ভ করার পর তার গায়ে খানিকটা মাংস লেগেছে। জেমস আবার সাথে দুজনকে নিয়ে এসেছে, জিমি ও জনি। দুজনেই তার সাথে একই কলেজে পড়ে। তাকে খুব তোয়াজ করে চলে। বন্ধুর মতো তারাও একই ছাঁচে গড়া, দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে অনুরূপ। দুজনেই নেশাভান করার মাস্টার। সাথে মাগীর দোষও আছে। এদের সঙ্গদোষে অনিও ধীরে ধীরে গোল্লায় যাচ্ছে। মেঘরাজবাবু ছোট ছেলের সব খবরই রাখেন। কিন্তু তাকে কোনোকিছু করতেই কোনো বাধা দেন না। উল্টে লাই দেন। দুনিয়াদারীটা উনি অনেকের চেয়ে অনেক ভালো বোঝেন। এমনি এমনি তো আর ওনার চুলে পাক ধরেনি। খুব ভালো করে জানেন উঠতি বয়সের ছেলেপুলেরা একটু বেশি ওড়ে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিজেরাই মাটিতে নেবে পরবে। উনি নিজেও কচি বয়সে অনেক কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এখনো সময় সুযোগ পেলেই দু-একটা খেপ খেলে ফেলেন। এসব সময়ে বাল্যবন্ধু পরশবাবুকে অবশ্যই সাথে রাখেন। পরশবাবু ওনার কাছে বিলকুল পরশপাথর। যা ছুঁয়ে ফেলেন, তাই সোনা হয়ে যায়। পরশবাবু না থাকলে ওনার আবার আসর জমে না।
মেঘরাজবাবু দলবল নিয়ে সন্ধ্যে সাতটার একটু পরেই গোগাবাবুর অফিসে এসে হাজির হয়েছেন। সকালে প্রবীণ পরিচালকের মুখে নতুন নায়িকার এত প্রশংসাবাণী শুনে ওনারা খুবই উতলা হয়ে উঠেছিলেন। বিশেষত ওনার তিন পুত্র ও তাদের বন্ধুদের তো এমন গরমাগরম মালের লুফৎ ওঠানোর জন্য আর তর সইছিলো না। সেয়ানা পরিচালক মশাই মালদার পার্টির জন্য আসর সাজিয়েই রেখেছিলেন। তিন বোতল ভদকা আর গানের সুব্যবস্থা করাই ছিল। শিকার এসে পরলেই হলো, সবাই হামলে পরার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। কিন্তু বিধি বাম। রমারা এসে পৌঁছালো প্রায় এক ঘন্টা দেরিতে। ততক্ষণে বোতলের ছিপি খুলে গেছে। তিন বয়স্ক ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে, বাকি সবাই দু-তিন পেগ মদ গলাদ্ধকরণ করে ফেলেছে। এমন অবস্থায় দালালের হাত ধরে রমা উৎশৃঙ্খল যৌবন আর ডবকা গতর নিয়ে একটা ছোটোখাটো আঁটসাঁট আধুনিক পোশাক পরে বেপরোয়া অর্ধনগ্নভাবে আপসকারী অবস্থায় পাক্কা বারোভাতারী বেশ্যার মতো দরজায় এসে দাঁড়ালো আর ধড়িবাজ পরিচালক মশাইয়ের ফাঁদে পা গলিয়ে উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে ফেলে তাকে লুটেপুটে খাওয়ার জন্য বন্য পশুগুলোকে খোলা আহ্বান জানিয়ে বসলো। মদ্যপান করে সবাই কমবেশি গরম হয়ে ছিল। রমা এসে আগুনে যেন ঘি ঢেলে দিলো।
বজ্জাত পরিচালক মশাই যা প্রত্যাশা করেছিলেন, ঠিক তাই হলো। রমা ঘরে ঢুকতেই সবাই কান খাড়া করে তাদের কথোপকথন শুনছিলেন। তার বেদবাক্য যেই না তাদের কানে গেলো অনি আর তার দুই বন্ধু জিমি ও জনি অমনি সোফা ছেড়ে লাফিয়ে উঠলো। নিমেষে গানের ভলিউম বাড়িয়ে দিয়ে ওরা রমার সামনে এসে কোমর দোলাতে লাগলো। ওদের কান্ড দেখে খিলখিল করে হেসে উঠে সেও অমনি অনিদের সাথে ঢিমে তালে নাচতে শুরু করে দিলো। একপাল অচেনা লোকের সামনে আচমকা তাকে বেসরমের মতো অমন ভারী বুক-পাছা দোলাতে দেখে বব কিছুটা হতচকিত হয়ে গেলেন। কোনো প্ররোচনা ছাড়াই এত সহজে যে রমা এতটা বেলেল্লাপনা দেখাতে শুরু করে দেবে, সেটা তিনি মোটেও আশা করেননি। অবশ্য তিনি পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিলেন। ব্যাপারস্যাপার লক্ষ্য করে তিনি সহজেই বুঝে গেলেন যে তাকে কোনো কড়া দাওয়াই না দিলে এতগুলো মুশকো লোককে এমন ভীষণ উত্তেজিত অবস্থায় একার হাতে সামলানো তার পক্ষে খুবই কষ্টকর হয়ে উঠবে। তিনি দেরি না করে সোজা গিয়ে টেবিল থেকে একটা ভদকার বোতল তুলে নিয়ে একটা খালি গ্লাসে মদ ঢেলে ভর্তি করে দিলেন। তারপর সবার অলক্ষ্যে পকেট থেকে ওনার ব্রহ্মাস্ত্র বের করে মদে চার ফোঁটা এক্সট্যাসি মিশিয়ে দিলেন। ইচ্ছাকৃত দাওয়াইটা একটু বেশি কড়া করে দিলেন। তাতে অবশ্য কোনো ক্ষতি নেই। আজ সন্ধ্যায় যা সব তাগড়াই লোকজন তাকে চেখে দেখতে এসেছে, তিনি নিশ্চিত যে তাদেরকে ঠিকমতো সন্তুষ্ট করতে গেলে রমার একটু এক্সট্রা ডোজই দরকার।