Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
চায়ের কাপটা হাতে করে, জানলার সামনে এসে দাঁড়ালাম। সেই আমগাছ, মাথায় ঝাঁকরা চুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, পাশেই পেয়ারা গাছ, দুটো টিয়া পাখি পাকা পেয়ারা খাচ্ছে, ঠোঁট দুটো অসম্ভব লাল। মাঝে মাঝে টেঁ টেঁ আওয়াজ করছে, সারারাত জাগলাম, একেবারে ঘুম পাচ্ছে না। শরীরটা বেশ সতেজ লাগছে। কোথাথেকে একটা কাক উড়ে এসে টিয়াটার সঙ্গে ঝগড়া করতে শুরু করলো, দুজনের সে কি ঝগড়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম, ভীষণ মজা লাগছে শেষে কাকটা উড়ে চলে গেলো, বোধ হয় দলবল ডাকতে গেলো, টিয়াটাও খাওয়া শেষ হতে উড়ে চলে গেলো। মাঝা মাঝে যখন সময় পাই আমি এই জানালাটার সামনে এসে দাঁড়াই, এই পক্ষীকুলের কাছে অনেক কিছু শেখার আছে। আমি দেখে দেখে শেখার চেষ্টা করি। লোকে এসব কথা শুনলে পাগল বলবে।

ঘুরে ফিরে সেই এক কথা বার বার মনে পরে যাচ্ছে। মিত্রা, মিঃ ব্যানার্জী, অদ্ভুত সাইকোলজি, ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে, তবু মিত্রা মাথায় ডগডগে সিঁদুর মেখে ঘুরে বেরায়, বুড়ীমাসি দারুণ কথা বলেছে গায়ে হলুদ মাখলে কুমীরে ধরার ভয় নেই, কথাটা রামকৃষ্ণ পরমহংসের, কথামৃতে পরেছিলাম। বিনোদিনী দাসীকে বলেছিলেন রামকৃষ্ণ, কিন্তু সে তো বিনোদিনী, গণিকার কন্যা ছিলেন, তাহলে কি মিত্রা। দূর, কি সব চিন্তা করছি, কথার পৃষ্ঠে কথা সাজিয়ে নিজেই নিজের জালে ফেঁসে যাচ্ছি।
-বুবুন।
-চমকে তাকালাম। মিত্রা।
-ওই নাম ধরে ডাকার অধিকার তোর নেই।
ঘরের দরজার সামনে মিত্রা দাঁড়িয়ে আছে। চোখটা যেন কাঠ কয়লার টুকরো, গনগন করছে। এত সকালে মিত্রা এ বাড়িতে! ধীর পায়ে এগিয়ে এলো আমার কাছে।
-কেনো গেছিলি?
নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না, একটা কিছু বলার দরকার আছে, কাল থেকে অনেক কিছু শুনেছি, এই সুবর্ণ সুযোগ ওকে আঘাত করার, আসল সত্য আমাকে জানতেই হবে, মুখ থেকে বেরিয়ে এলো
-নিজের কেপ্টের কাছে গেছিলাম, দেখলাম শরীর খারাপ ফিরে এলাম।
সপাটে আমার গালে একটা থাপ্পর মারলো মিত্রা। ঘরের গেটের মুখে তখন বড়মা ছোটমা, মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো, আমার পাঞ্জাবীটা মুঠো করে ধরেছে মিত্রা। বুকে মাথা ঘষছে, ওরা অবাক, এরকম ঘটনা কখনো ঘটতে পারে ওরা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে নি। আমি নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বড় হওয়ার পর জীবনে প্রথম কেউ আমার গালে থাপ্পর মারলো, তাও আবার যে সে কেউ নয় মিত্রা। যার জন্য আমি রাতকে দিন দিনকে রাত করেছি। গেটের মুখে ওরা চারজন স্থানুর মত দাঁড়িয়ে আছে ওরা ঠিক মেলাতে পারছে না ব্যাপারটা। সকলে স্তম্ভিত।
-মিত্রা।…..মিত্রা…..মিত্রা।
মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরে আস্তে আস্তে মাটিতে লুটিয়ে পরছে, আমি ওকে জাপ্টে ধরলাম, মিত্রার চোখ বন্ধ, চোখের কোলে জল, আমি ওকে জাপ্টে ধরে ওর গালে আস্তে আস্তে থাপ্পর মারলাম, না কোন সেন্স নেই। মাথাটা বুক থেকে হেলে পরল, মল্লিকদা বুঝতে পারলো ব্যাপারটা, ছুটে এসে ধরে ফেললো, মিত্রা আমার পাঞ্জাবীটা মুঠো করে ধরে আছে। কিছুতেই মুঠো খুলতে পারলাম না, চড় চড় করে পাঞ্জাবীটা ছিঁড়ে গেলো, আমি ওকে আঁকুড় করে ধরে এনে আমার বিছানায় শুইয়ে দিলাম, ছোটমাকে বললাম, তাড়াতাড়ি ফ্রিজ খুলে ঠান্ডা জল কিংবা বরফ নিয়ে এসো, মল্লিকদাকে বললাম, দেখোতো আমার টেবিলে কোনো চামচ আছে কিনা, ছোটমা ছুটে বেরিয়ে গেলেন, অমিতাভদার দিকে তাকিয়ে বললাম, দেখোতো একজন ডাক্তারকে পাও কিনা।

কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘরের মধ্যে যেনো হুরোহুরি পরে গেছে, বড়মা স্থানুর মতো একধারে দাঁড়িয়ে আছেন, কাপড়ের খুঁট দিয়ে চোখ মুছছেন, মল্লিকদা বাথরুম থেকে মগে করে জল আনলেন, আমি ওর চোখে মুখে ছিটিয়ে দিলাম, না কোন সেন্স নেই। মল্লিকদা চামচেটা এগিয়ে দিলেন, আমি মিত্রার গালটা টিপে ধরে, চামচটা ঢোকাবার চেষ্টা করলাম, দাঁতে দাঁত লেগে আছে, ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কাপড়টা কোমর থেকে ঢিলে করে ওর শায়ার দড়িটা খুলে দিলাম, বুকের কাপড়টা ঢেকে টপ টপ করে ব্লাউজের বোতাম গুলো খুলে দিলাম, আঁকুড় করে বুকের সঙ্গে ধরে, ওর ব্রার হুকটা আলগা করে দিলাম, মল্লিকদাকে বললাম, টাওয়েলটা একটু ভিজিয়ে এনে দাও তো, মল্লিকদা ছুটে টাওয়েলটা ভিজিয়ে এনে দিলো, আমি খুব সন্তর্পনে মিত্রার শারা শরীর ভালো করে মুছিয়ে দিলাম, ছোটমা ঠান্ডা জলের বোতল আর বরফ নিয়ে এসেছে, আমি আলনা থেকে আমার একটা গেঞ্জি টেনে নিয়ে ওর মধ্যে বরফের টুকরো দিয়ে ওর ঘাড়ের তলায় দিয়ে দিলাম, বাড়িতে কোনো এন্টাসিড আছে, থাকলে দাও তো, মল্লিকদা বললেন, তোর ছোটমা খায়, আমার কথা মুখ থেকে বেরলো না, ছোটমা ছুটে চলে গেলেন, কার্মোজাইনের বোতলটা নিয়ে এলেন, আমি মিত্রাকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরে, জোর করে চামচে ঢুকিয়ে ওর দাঁতের পাটি খুললাম, জিভটা টেনে বের করে, চামচে দিয়ে কার্মোজাইম খাওয়ালাম, ওরা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে সবাই দেখছে, আমি ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম, এক মিনিটের জন্য একটু বেরোও তো তোমরা, ওরা বেরিয়ে গেলো, আমি মিত্রার কাপড়ের ভেতর হাত ঢুকিয়ে প্যান্টিটা টেনে খুলে আমার আলনায় একটা জামার তলায় রাখলাম, ওদের বললাম এবার এসো। ওরা ঘরে এলো, মিত্রা চোখ বন্ধ করে মরার মতো পরে আছে, অমিতাভদা ডাক্তার নিয়ে এলেন, ভদ্রলোককে আগে দেখেছি, দাদারই বন্ধু, উনি ভালো করে দেখলেন, প্রেসার মাপলেন, প্রেসার হাই
-বাঃ ট্রিটমেন্টতো ভালই করেছো দেখছি, বরফটা খুব কাজ দিয়েছে বুঝলে অমিতাভ, নাহলে একটা অঘটন ঘটতো। ওরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখ চাওয়া চাওয়ি করছে।
-একটা কাগজ পেন দাও তো, দুটো ইঞ্জেকশন লিখে দিচ্ছি নিয়ে এসো এখুনি, দিয়ে যাই, খুব স্ট্রেইন পরেছে বুঝলে, নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি, তাই ফেন্ট হয়ে গেছে, বিশ্রাম দরকার, ডোন্ট মুভ। সাতদিন। তারপর কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, হাওয়া বদল চাই। উনি ইঞ্জেকশন লিখে দিলেন, আমি বেরিয়ে গেলাম কাগজটা নিয়ে, নিচে রবিন ছিলো ওকেই নিয়ে গেলাম, ইঞ্জেকশন নিয়ে এলাম, রবীন ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না ব্যাপারটা কি হলো, ম্যাডাম ওপরে গেলেন, একটা হৈ হৈ তারপর ডাক্তার এলো, বেচারা জিজ্ঞাসাও করতে পারছে না। ডাক্তারবাবু ইঞ্জেকশন দিলেন মিত্রার দুহাতে দুটো।
-এখন ঘুমুবে, ওর ঘুমের দরকার বুঝলে অমিতাভ, আর একজন সর্বক্ষণের পাহারাদার দরকার। আমি বৈকালে একবার আসবো।
বড়মা এগিয়ে এলেন, ও সামন্ত ঠিক বলছো, ভয়ের কিছু নেই।
-না সেরকম তো কিছু বুঝলাম না, স্ট্রেইনটা কেউ নিয়ে হজম করতে পারে কেউ পারে না, তখন উল্টো এ্যাকশন, সেন্সলেস। মেয়েটি কে?
অমিতাভদা বললেন, আর বলো কেনো আমার অফিসের মালকিন।
-বলো কি। ইন্টারেস্টিং। তোমার বাড়িতে এসে সাত সকালে অজ্ঞান।
এর মধ্যেও ছোটোমা ফিক করে হেসে ফেললো।
-হ্যাঁ। সে অনেক কথা, তোমায় পরে একদিন গল্প করবো।
-আগে তাও সময় পেতে এখন তো দেখি তুমি আমার থেকেও বিজি।
অমিতাভদা আমায় দেখিয়ে বললেন, যত নষ্টের গোড়া হচ্ছে এই অনি।
-না । এ বললে তো শুনবো না। গুড প্রিকোয়েশন নিয়েছে, না হলে এ সব কেস যখন তখন অঘটন ঘটাতে পারে।

আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। একেবারে এপাশে মল্লিকদার ঘরের সামনে। ওরা আমার ঘর দখল করে রাখলেন বেশ কিছুক্ষণ, বুঝতে পারছি আমি বেড়িয়ে আসার পর বেশ জমিয়ে গল্প হচ্ছে, হাসাহাসি হচ্ছে, ছোটমা একবার বেরোলেন, চায়ের সরঞ্জাম নিয়ে ঘরে ঢুকলেন, আমাকে এককাপ চা দিয়ে গেলেন, আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন, যাওয়ার সময় বলে গেলেন, তোলা থাকলো। বাগানে এখন রোদের ঝলকানি, রবীন গাড়ির একটা পাল্লা খুলে তেড়ে ঘুমোচ্ছে। কিই বা করবে কালকে শুতে শুতে রাত হয়েছে। আবার সাত সকালে মালকিনের তাড়ায় বেড়িয়ে এসেছে।

ওই কথাটা বলতে মিত্রা আমাকে তেড়ে একটা চড় মারলো, কথাটা ও সহ্য করতে পারে নি, তাহলে ম্যাসেজটা লিখতে গেলো কেনো। আমি মোবাইলটা খুলে কালকের ম্যাসেজটা দেখলাম, একবার, দুবার, তিনবার পরলাম, নিচের টাইমটা দেখলাম, এটা তো খেয়াল ছিলো না, যে টাইমে ম্যাসেজ করেছে মিত্রা সেই টাইমটা বলছে ও তখন মিঃ ব্যানার্জীর চেম্বার থেকে সবে বেরিয়েছে। ইস খুব ভুল করেছি, এই বোকামী করলাম কেনো। আমার আরো বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল, কালকে এমন কিছু ওখানে ঘটেছে যা মিত্রা মেনে নিতে পারে নি, আমাকেও বলতে পারছে না, তার জন্য কালকে ক্লাবে গিয়ে আকন্ঠ মদ গিলেছে।

মনটা ভারি হয়ে উঠলো একটা ছোট্ট ভুলে কি থেকে কি হয়ে গেলো। কেনো বলতে গেলাম ওই কথা, না বললে এ ঘটনা ঘটতই না। নিজেকে নিজে দোষী সাব্যস্ত করলাম, অনি আজ এই ঘটনার জন্য তুমি দায়ী। এর দায় তুমি অস্বীকার করতে পারো না। এর শাস্তি তোমাকে পেতে হবে।
-এই ছোকরা, শোনো এদিকে।
ফিরে তাকালাম।
ডাক্তারবাবু আমাকে ডাকছেন। আমি এগিয়ে এলাম।
-তোমার কথা সব শুনলাম অমিতাভের মুখে। গুড। তোমার বান্ধবীর এখন রেস্টের দরকার, আর ওকে সঙ্গ দিতে হবে। এটাতো এই বুড়ো-বুড়িরা পারবে না। এর দায়িত্ব তোমার।
ছোটমা মুচকি মুচকি হাসছে।
-ভালো হয়েছে। ও বলেছিলো আমার কাছে কয়েকদিন থাকবে। ওর দাদাটা ওকে খাটিয়ে মারলে। বড়মা বললেন।
-দেখলে, দেখলে ডাক্তার কি বলি বলোতো, সরষের মধ্যেই যদি ভূত থাকে।
-ওঃ তুমি এসব বুঝবে না। শোনো আমি বৈকালে একবার আসবো। আজ বিছানা ছেড়ে একেবারে উঠবে না। বুঝলে। আর একটা কথা, যখন সেন্স আসবে তখন একটা জার্ক হতে পারে, আমি পাশেই থাকি একবার খবর দেবে, আর যদি সে রকম না হয় তাহলে যেমন চলছে তেমন চলবে, আমি ডিউ টাইমে আসবো।
আমি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
-তুমি লেগে পরো, তোমার কাজে।
-জমাটা খোল। ছোটোমা হাসতে হাসতে বললেন।
আমি একবার ছোটমার মুখের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে মাথা দোলালাম। খুলছি।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 28-12-2021, 07:59 AM



Users browsing this thread: