Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
বুড়ী মাসি পোর্টিকোর দিকে এগিয়ে গেলো। গাড়ি এসে দাঁড়ালো। মুখ বাড়িয়ে দেখলাম, পেছনের সিটে মিত্রা হেলে পরে আছে, নিঃসার দেহ। রবীন দরজা খুলে দিলো
-এসো ধরে নিয়ে যেতে হবে তো।
-আজকে তো দেখি একেবারে ঘুমিয়ে পরেছে।
-তুমি এসো তো।
-তুই ঠেলা মারিস কেনোরে মুখপোড়া।
বুড়িমাসি, ঘরের দিকে আসছে, আসতে আসতেই বললো ও অনি আয় তো বাবা একটু ধর।
আমি উঠে দাঁড়ালাম, রবীন আমাকে দেখে চমকে গেলো। ও বুঝতে পারে নি আমি এই সময় এখানে থাকতে পারি। আমি বুড়ীমাসিকে বললাম, তুমি ওপরে গিয়ে মিত্রার ঘরের দরজাটা খোলো। আমি নিয়ে যাচ্ছি, কারুর দরকার পরবে না। হয়তো আমার কন্ঠস্বরে এমন কিছু ছিলো বুড়ীমাসি আমার দিকে একবার তাকালো, তারপর শুর শুর করে ওপরে উঠে গেলো।
আমি আসতে রবীন সরে দাঁড়ালো, ওর মুখ থম থমে। মাথা নীচু করে আছে। রবীনকে বললাম, তুই ওপাশের দরজাটা খোল। রবীন খুলে দাঁড়ালো, আমি মিত্রার বগলের তলা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে টেনে বারকরে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলাম, আমার বুকের কাছে ওর মুখ ভক ভক করে গন্ধ বেরোচ্ছে, ওকে আঁকুড় করে ধরে ওপরে নিয়ে এসে বিছানায় শোয়ালাম, পায়ের জুতো খুললাম, বুকের কাপড় ঠিক ঠাক করে বুড়ীমাসির দিকে তাকালাম
-একটা কাজ করতে পারবে।
-বল।
-তেঁতুল আছে।
-আছে, সেতো অনেক পুরোনো। কি করবি।
-নিয়ে এসো, একটা চামচে নিয়ে আসবে একটু বড় দেখে আর একটা বাটি।
বুড়ীমাসি চলে গেলো। আমি বাথরুমে গেলাম, বালতি, মগ, আর টাওয়েল নিয়ে এলাম, ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা জল বার করলাম। মিত্রার হাতে চিমটি কাটলাম, না কোন সাড়া নেই, ওর গালে আস্তে আস্তে থাপ্পর মারলাম, মরার মতো পরে আছে। হাতদুটো দু পাশে ছড়ানো। কাপড়টা হাঁটুর ওপর উঠে গেছিলো, আমি টেনে নামালাম, বুড়ীমাসি ঘরে ঢুকলো। আমি বাটিতে তেঁতুল রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে ভাল করে চটকে নিলাম, জলটা বাটিতে রেখে, তেঁতুলটা বুড়ীমাসির হাতে দিয়ে বললাম ধরো, আমাকে চামচটা দাও, বুড়ীমাসি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চামচটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো।
 
আমি বালতিটা এগিয়ে নিলাম, মগটা বালতি থেকে নামিয়ে রাখলাম, মিত্রার মাথার শিয়রে বসে ওর মাথাকে আল গোছে কোলে তুলে নিলাম, গালে চাপ দিতেই মিত্রা হাঁ করলো, আমি বুড়ীমাসির দিকে তাকিয়ে বললাম, বাটিটা এগিয়ে দাও, বুড়ীমাসি আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। বাটিটা এগিয়ে দিলো, আমি চামচে করে জিভটা টেনে ধরে ওকে তেঁতুল জল খাওয়ালাম, মিনিট খানেকের মধ্যে রি-এ্যাকশন শুরু হলো, হর হর করে বমি করতে শুরু করলো, বুড়ীমাসি নাকে কাপড় চাপা দিয়েছে, আমি বালতিটা ওর মুখের কাছে ধরে আছি, কিছুক্ষণ পর বমি বন্ধ হলো, আমার প্যান্টেও ছিটকে পরেছে ওর বমি মাটিতেও ছিটকে পরলো, আবার একটু তেঁতুল জল গুললাম, আবার বমি, তারপর বাথরুমে গিয়ে বালতি পরিষ্কার করে, ঠান্ডা গরম জল মিশিয়ে নিয়ে এলাম, বুড়ীমাসিকে বললাম
-ওর কাপড় খুলে একটু গাটা মুছিয়ে দেবে, আমি বাইরে দাঁড়াচ্ছি। বুড়ীমাসি আমার দিকে অবাক চোখে তাকালো
-তুমি দাও, তুমি রুগীর সেবা করছো, এতে পাপ হয় না।
-আমাকে ওর রাতের পোষাকটা এনে দাও।
বুড়ীমাসি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি যতটা সম্ভব ঢাকা ঢুকি দিয়ে ওর সারা শরীর স্পঞ্জ করে দিলাম, কাপড় খুলিয়ে ওকে নাইট গাউন পরিয়ে দিলাম, ঠিকভাবে শুইয়ে দিয়ে গায়ে একটা পাতলা চাদর টেনে দিলাম, ঘরটা ভালো করে মুছে, বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ঘরে এলাম, বুড়ীমাসি মিত্রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
-আমি যাই মাসি।
-এত রাতে কোথায় যাবি।
-কাজ আছে।
-না তোকে যেতে হবে না।
-না মাসি। যেতে হবে, তুমি এক কাজ করো, ঘন্টা খানেক বাদে ও উঠে পরবে, কিছু খেতে চাইলে গরম দুধ দিও কয়েকটা বিস্কুট, আর কিছু দিও না।
-চলে যাবি।
-হ্যাঁ।
-নিচে নেমে এলাম, রবিন বসে আছে। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো। আমাকে একটা ট্যাক্সি ডেকে দিতে পারবি।
-এত রাতে কোথায় যাবে দাদা।
-দেখি।
-চলো আমি তোমায় ছেড়ে দিয়ে আসি।
-অনেক রাত হলো, তোকে শুতে হবে তো।
-এরকম রাত অনেক হয় দাদা।
-চল তাহলে। বুড়ীমাসিকে বলে আয়।
-দরকার লাগবে না।
আমি গাড়িতে এসে বসলাম। দারোয়ানের মনে হয় নাইট ডিউটি থাকে, ও দরজা খুলে দিলো। রাস্তা ঘাট শুনশান, কেউ কোথাও নেই।
-কোথায় যাবো দাদা।
-অফিসে চল।
-এখন।
-হ্যাঁ।
রবিন কোনো কথা বললো না। মিনিট পনেরোর মধ্যে অফিসে চলে এলাম, আমি ওকে ভেতরে ঢুকতে বারণ করলাম, বললাম আমায় রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যা। ও আমার কথা মতো তাই করলো। হাঁটতে হাঁটতে গেটে এলাম, আমাকে দেখে সিকিউরিটি গার্ডের ছেলেটা এগিয়ে এলো।
-কোথায় যাবেন?
খুব ক্লান্তি লাগছে, মনটা ভীষণ ভারি ভারি লাগছে। ওর সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগছিলো না। বাধ্য হয়ে প্রেস কার্ডটা বার করলাম।
ও দরজা খুলে দিলো। আমি সোজা প্রেস রুমে চলে এলাম। ছেলেটি আমায় বাধা দিচ্ছিলো, আমি বললাম তুমি সঙ্গে এসো। কি বুঝলো জানি না, ও আমার পেছন পেছন এলো। লাস্ট নাইট এডিসন বেরোচ্ছে। সকালে মিটিংয়ে দেখা সার্কুলেসনের সেই ছেলেটি দেখেই ছুটে এলো। স্যার।
সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছে, সিকিউরিটি গার্ডের ছেলেটি মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আজ কতো সার্কুলেশন হয়েছে। ওরা বললো। এখন কি লেট নাইট এডিসন চলছে। হ্যাঁ। একটা কাগজ টেনে নিয়ে দেখলাম, অমিতাভদা আমার একটা পুরনো ফিচার ছেপেছে।
-ট্রেনের কাগজ চলে গেছে
-হ্যাঁ, কলকাতারও কিছু বিটের কাগজ গেছে।
অতীশবাবু এগিয়ে এলেন, বললাম সব ঠিক চলছে তো। অতীশবাবু একেবারে গদো গদো, হ্যাঁ ছোটবাবু, আজ থেকে মনে হয় আমি অনি থেকে ছোটবাবু হয়ে গেছি। এদের রকম সকম দেখে তাই মনে হচ্ছে। সব ঠিক আছে দেখবেন আর কোনো সমস্যা হবে না।
আমি ওপরে উঠে চলে এলাম। নিউজরুমে তিন-চারজন ইতি উতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে গল্প করছে, টেলেক্স মেশিনটা গঢ় গঢ় করে চলছে। আমাকে দেখে ছেলেগুলো কেমন নড়ে চড়ে বসলো, আমি আমার টেবিলে গেলাম, এই ছেলেগুলোকে আমি ঠিক চিনি না। তবে এরা আমায় চেনে, আমার সারকিটটা এই হাউসে খুব কম। একজনকে ডেকে বললাম, লাইটটা একটু জ্বেলে দেবে। হ্যাঁ অনিদা বলে ছুটে চলে গিয়ে লাইটটা জেলে দিলো, আমি ড্রয়ার থেকে নিউজপ্রিন্টের প্যাডটা নিয়ে বললাম
-হ্যাঁরে ক্যান্টিন খোলা আছে।
-আছে।
-আশেপাশে তো কাউকে দেখছি না।
-বলো না কি আনতে হবে এনে দিচ্ছি।
-ডিম টোস্ট পাওয়া যাবে এত রাতে। আর একটু চা।
একটি ছেলে, জলের বোতল এগিয়ে দিলো, আমি ছিপিটা খুলে ঘট ঘট করে জল খেলাম। ওরা চা নিয়ে এলো ডিম টোস্ট বানিয়ে নিয়ে এলো। একজনকে বললাম
-দেখতো আর্ট ডিপার্টমেন্টে কেউ আছে কিনা। আমার কথা শেষ হোলো না, একজন ছুটে বেরিয়ে গেলো। ফিরে এসে বললো, দ্বীপায়নদা আছে। আমি ডিম টোস্ট খেতে খেতে বললাম
-এই যা, দেখ আমি একলা খাচ্ছি, তোদের জন্য নিয়ে আয়।
-না না তুমি খাও আমরা তো খেয়েছি।
-তা হয় না, তখন একজন দৌড়ে গিয়ে ক্যান্টিনে বলে এলো, কিছুক্ষণ পর ক্যান্টিন থেকে একটা ছেলে এসে খাবার দিয়ে গেলো। আমি পয়সা মিটিয়ে দিলাম, দ্বীপায়ন এসে হাজির। আমায় দেখ একগাল হেসে বললো
-কনগ্রাচুলেশন, অনিদা।
-কেনো দ্বীপায়ন।
-তুমি আমাদের বস হলে।
-আমায় দেখে কি তাই মনে হচ্ছে।
-তোমায় দেখে কারুরি কোনো দিন সেরকম মনে হবে না।
-তাহলে।
-তবু।
-জীবনে অব্যয়গুলো বাদ দাও। যদি, তবে, কিন্তু, বটে এসব কথা বলবে না। বোল্ড হও, সবার শেষ কথা কাজ। তোমাকে কেউ মনে রাখবে না, তোমার কাজটাকে সবাই মনে রাখবে। কাজের মধ্যে দিয়ে তুমি।
দ্বীপায়ন মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
-শোনো, আমার মোবাইলে কতকগুলো ছবি আছে। একটু প্রিন্ট করে দিতে পারবে।
-অবশ্যই।
-চলো তোমার ঘরে যাচ্ছি।
-ঠিক আছে তুমি এসো।
দ্বীপায়ন চলে গেলো।
আমি উঠে বাথরুমে গেলাম। ফিরে এসে ট্যাক্সিডার্মির আর্টিকেলটা লিখলাম, ছেলেগুলোকে বললাম, তোরা পরতো কোথাও কোনো সমস্যা আছে কিনা, দ্বীপায়নের ঘরে গেলাম। ছবিগুলো প্রিন্ট করালাম, দ্বীপায়ন অবাক, ছবিগুলো দেখে
-দাদা তুমি তো প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারকে হার মানাবে।
-না রে আমার গুণ নয়, এই মোবাইলটার গুণ।
-তুমি যাও আমি ছবিগুলো কারেকসন করে প্রিন্ট নিয়ে যাচ্ছি।
-আচ্ছা।
আমি আবার নিউজ রুমে চলে এলাম। ছেলেগুলো আমায় দেখেই বললো, অনিদা সুপার্ব হয়েছে। তুমি এরকম ভাবে লেখ কি করে বলোতো, একটা নিরস সাবজেক্ট তুমি কি সুন্দর গল্প লিখেছো।
হাসলাম। ওদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলাম।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 25-12-2021, 07:13 PM



Users browsing this thread: