Thread Rating:
  • 36 Vote(s) - 3.03 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance আধুরা ইন্সান !
জীবনের অনেকটা পথ একা চলে এসেছে অভি ! প্রতিপদে নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে দিতে চেয়েছে ! কিন্তু পারেনি ! একে একে মা পাপা ওর জীবন থেকেই শুধু নয় পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে ! দিয়া......... ওর কথা মনে পরলে এখনও বুকের মাঝে একটা চিড়চিড়ে যন্ত্রণা হয় ! রাগে দুক্ষে র পেগ গলায় ঢেলে নেয় অভি ! গলা থেকে বুক জ্বালাতে জ্বালাতে নীচে নামতে থাকে হুইস্কি ...... আর কতদিন এই ভাবে জীবন কাটাবে ?
- কি গো খাবে না? নিলঞ্জনার গলার আওয়াজে মুখ তুলে তাকায়  অভি ! নিলঞ্জনা অভির এই মুখের ভাষা জানে ! তাই কোনও কথা না বলে চুপচাপ সেখান থেকে সরে যায় ! 
জার্মানির ড্রুপাতে নিজের ফ্ল্যাটে বসে প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যে হলেই একই রকম নিঃসঙ্গতায় ডুবে যায় ! এই সময় একমাত্র ব্রুনি ছারা তার কাছে কেউ যেতে পারে না ! কোনও এক সময় দিল্লির রাস্তা থেকে কুরিয়ে আনা মাত্র দশদিনের কুকুরের প্রতি মায়া ভালবাসা অভিকে এখনও বাঁচিয়ে রাখে ! অভির মালের মাত্রা যেদিন বেশি হতে যায় সেদিন ব্রুনি ভউ ভউ করে ওকে বকে দেয় ! মাল ছেড়ে অভি ওকে কোলে তুলে নেয় ! 

পুনে থেকেই নিলঞ্জনা ওর সাথে আছে ! অভি ওকে প্রথম দিনই বলে দিয়েছিল যে ও ওকে কোনোদিন বিয়ে করতে পারবে না আর বউ এর মর্যাদাও দিতে পারবে না ! যদি ও ওর সাথে থাকতে চায় তাহলে থাকতে পারে কিন্তু কোনোদিন গৃহিণীর মর্যাদা দিতে পারবে না অভি ! 

বাবা হাসপাতাল থেকে ছারা পাবার পর ত্রিদিবেশ বাবু অনিমেশকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন ! কিন্তু অনিমেশ বাবু যেতে রাজি হননি ! একটা সাইড প্যারালাইজড হয়ে গেছিলো ! তবুও টাকার গরমে তিনি কারুর সাহায্য নিতে চাননি ! অভিকে দেওয়া ফ্ল্যাটে ফিরে গেছিলেন ভরসা ছিল রঘু ( হেল্পিং হ্যান্ড কাম বাবুর্চি !) যতদিন তিনি সুস্থ ছিলেন ততদিন রঘু ভালই ছিল ! কিন্তু একটা প্যারালাইজিড মানুষকে সামলানো রঘুর দ্বারা সম্ভব হয়ে ওঠে না ! একদিন বিনা বলে পালিয়ে যায় ! 

যখন অনিমেশ বাবু হাসপাতালে আছেন তার  মাঝেই অভি ইমেইলে নিজের আপয়নেট লেটার পেয়ে যায় !  তাতে প্রথম শর্ত থাকে যে অভিকে প্রথমে পুনেতেই জয়েন করতে হবে তিন মাসের ভিতর জার্মানিতে ট্রেনিং এর জন্য যেতে হবে ৫ বছর জার্মানিতে থাকার পর ওর পোস্টিং কলকাতায় হবে ! আনন্দে পাপাকে সেই প্রথম জরিয়ে ধরেছিল অভি !  মোবাইল খুলে পাপাকে মেল পরিয়েছিল ! কাঁপা কাঁপা হাতে অভিকে আশীর্বাদ করতে করতে বলেছিলেন "পাঁচ বছর জার্মানিতে? ততদিন আমি বাঁচব তো ?" পাপাকে জরিয়ে ধরে অভি বলেছিল " পাপা, ঈশ্বরের আশীর্বাদে তোমার যা আছে আর বাবা যা রেখেছেন তাতে আমার চাকরি না করলেও চলে ! এখানেই যদি একটা ছোটখাটো ব্যাবসা শুরু করে দিই তাহলে তোমাদের ছেড়ে আমাকে কোথাও যেতে হবে না ! তুমিই শুধু  চাকরির জন্য জোর করছ ! 
- ওরে পাগলা ! ঘটির জল ঢেলে ঢেলে খেতে গিয়ে একদিন শেষ হয়ে যাবে ! তখন খাবি কি? ওটা তো তোর আছে ! আরও জল আর ঘটি বাড়া ! যাতে কোনোদিন জলের কষ্ট না হয় ! তুই চাকরিতে যা ! তোর দুই দিদি আছে ! এখন তো দেবীও আছে, ফাল্গুনিও এখন অনেক স্বাভাবিক ! আশা করি কোনও অসুবিধে হবে না ! 
মা কে যখন অভি ওর চাকরির কথা বলল তখন ওর জেঠিমা ওকে বুকে জরিয়ে ধরে বললেন "আগে তোর দুই দিদিকে ফোন করে সুখবরটা দিয়ে দে ! আর কালকে গিয়ে দিয়াকে নিয়ে আয় ! "
দিয়ার নাম শুনেই অভির সব রাগ অভিমান সব গলে জল হয়ে গেলো ! ইচ্ছা করছে এখনই গিয়ে দিয়াকে আদর করতে করতে সব বলে ! 
বড়দি শুনে বলল "উরিবাব্বা জার্মানি? তার মানে তুই আমাদের ভুলে যাবি ! "
- উফফ দিদি তুমিও না একটা যা তা ! আমি তো যেতে চাইছি না ! পাপা কিছুতেই শুনছে না ! ! পাপাকে একটু বুঝিয়ে বল না প্লিজ ! আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যেতে চাইনা ! 
- ধুর পাগল ! সবে তো জীবনের চলার শুরু হোল ! এখনই থেমে যাবি? চলার নামই জীবন ! তোর মনে আছে কিনা জানিনা নচিকেতার একটা গান "ছন্দ বিহিন পথ চলাই জীবন ! শুধু জীবনের কথা বলাই জীবন ! " এই ভাবেই জিবন চলবে ! বাবা মা ভাই বোন কেউ সাথে থাকেনা ! জীবনের নেশায় চলতে চলতে কখন যে শেষ হয়ে যাবে বুঝতেও পারবি না ! খুবই ভারি গলায় বড়দি বলে গেলো কথা গুলো ! 
মনামি শুনেই কান্নাকাটি করতে শুরু করলো ! " না তোকে কোথাও যেতে হবে না ! আমি তোর জামাইবাবুকে বলে এখানেই কোথাও তোর চাকরির ব্যবস্থা করে দেবো ! " শিতাভ্র দা মানে জামাই বাবু মনামির হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে অভিনন্দন জানালো অভিনন্দনকে ! নতুন জীবনের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা ! এগিয়ে যাও ! ...
পরের দিন সকালে অভি মোটরসাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো দিয়ার বাড়ির উদ্দেশ্যে ............।।
[+] 8 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: আধুরা ইন্সান ! - by dada_of_india - 21-12-2021, 08:10 PM



Users browsing this thread: 11 Guest(s)