08-05-2019, 05:01 PM
এরপর আমি নিকিতাকে ফোন করলাম। প্রথমত ওর সাথে অনেকদিন কথা হয় নি আর দ্বিতীয়ত ওর কাছে জানতে হবে এই রিয়া সেনটা কে। নিকিতা ওর ঘনিষ্ঠ ওর
জানা উচিত। বেশ কিছুক্ষণ ফোন বেজে গেল কিন্তু নিকিতা ফোন তুলল না। খুব সম্ভবত ব্যস্ত। আমি আর রিং করলাম না। যদি ওর ইচ্ছে হয় তো করবে। কিন্তু মনের
খুঁতখুঁতানিটা গেল না। অফিস থেকে বেরোবার একঘণ্টা আগে নিকিতার ফোন এলো।
নিকিতা বলল, ‘হ্যালো দোস্ত, সকালে ফোন করেছিলে। কিন্তু আজ একটু কেনাকাটায় ব্যস্ত ছিলাম তাই ফোন তুলতে পারি নি। তারপর এবার তো অনেকদিন পরে
ফোন করলে। কি হয়েছিলো না নিকিতাকে ভুলতে বসেছ। তুমি ভুললেও আমি ভুলতে দেবো না। তোমার জিভ…।‘ নিকিতা হা হা করে হেসে উঠলো।
আমি একটু আদুরে গলায় বললাম, ‘আরে তোমাকে কি ভোলা যায় নিকি। আমার জীবনে অনেক কিছুর যোগ ঘটিয়েছ তুমি। মিতা ছিল না অফিসে একটু চাপ ছিল
তাই করে উঠতে পারি নি। তাছাড়া তোমাকে তো হড়বড় করে ফোন করা যায়না। তুমিও ব্যস্ত থাকো।‘
নিকিতা জিজ্ঞেস করলো, ‘মিতা বৌদি ছিল না, কোথায় গেছিল?’
আমি বললাম, ‘কোথায় আবার ট্যুরে? এবারে গোয়া গিয়েছিল।‘
নিকিতা- তাই নাকি? বাহ বৌদিতো খুব ঘুরছে। যে বন্ধুটা ঠিক করে দিয়েছিলাম তার সাথে?
আমি- কি করে বলব বল। আমাকে তো আর বলে নি। তাছাড়া তুমি বারন করেছো তাই আমিও জিজ্ঞেস করি নি।
নিকিতা- গুড বয়। তা ফোন কেন করেছিলে আমায়?
আমি- বিদিশাকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছি। অফিসের কাজে। বেশ কয়েকদিন লাগবে। তাই ভাবলাম যাই ওকে নিয়ে। ওরও মন ভালো হবে আর আমারও একটা সাথী হবে।
নিকিতা- ও তাই? খুব ভালো।
আমি- নিকি, বিদিশা একজনকে নিয়ে যাচ্ছে নাম রিয়া সেন। তুমি জানো ওকে? না বিদিশা আগে বলেছিল না তুমি বলেছ কোনদিন। হঠাৎ শুনলাম এই বন্ধুটার নাম।
নিকিতা- আগে বোলো ও যাচ্ছে বলে তোমার কোন অসুবিধে আছে কিনা।
আমি- অসুবিধে? এ আবার কি প্রশ্ন করলে তুমি? আমার অসুবিধে নেই, কিন্তু আমার সাথে চেনা জানা নেই তাই জিজ্ঞেস করছি।
নিকিতা- আমি জানি ওকে। বিদিশার খুব ঘনিষ্ঠ। মাঝে মাঝে বাড়িতে আসতো দিদির হাদসাটা হওয়ার পর। খুব ভালো মেয়েটা। অবশ্য এটা আমার বলা। তুমি কি
জানবে ওর সম্বন্ধে সেটা তোমার ব্যাপার।
আমি- না আমার একটু আশ্চর্য লাগছে যে বিদিশা সব কথাই আমাকে বলেছে। এর কথা কোনদিন বলে নি। তাই ভাবছিলাম। তবে এবারে ও একটা কথা বলেছিল যে
আমি আবার ট্যুরে ওকে নিয়ে গেলে ও একটা সারপ্রাইস দেবে আমাকে। এটাই বোধহয়।
নিকিতা- আরে তোমার এতো চিন্তা কেন? তুমি তো দুটো পাচ্ছ তোমার তো আনন্দ হওয়া উচিত। দুজনেরটায় মুখ দিতে পারবে।
নিকিতা আবার খিলখিল করে হেসে উঠলো। ওর এই হাসিটা আমার খুব ভালো লাগে।
আমি- সবার সাথে দেখা হোল। রিয়া অজানা কে মেয়ে তার সাথেও দেখা হবে। কিন্তু বন্ধু তোমার সাথে কবে দেখা হবে? তুমি কেন দেখা করছ না?
নিকিতা (আবার হাসল)- বুড়ো বন্ধু সবুরে মেওয়া ফলে। ওয়েট কর। ইন্তেজার কি ঘড়ি জলদহি সমাপ্ত হনেওয়ালি। হবে দেখা হবে। সেদিন তোমার খুব ভালো লাগবে
দেখ।
আমি (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)- জানি না সেদিন কবে আসবে। যাক ভালো থেকো।
নিকিতা- তুমিও ভালো থেকো আমার প্রিয় বন্ধু। তোমাদের যাত্রা শুভ হোক।
খুব বেশি কিছু জানা গেল না নিকিতার থেকে। খুঁতখুঁতানিটা বারতেই থাকলো। তবে মাত্র তো আর কয়েকঘন্টা। তারপরে তো দেখবই। আর যদি ওকে নিয়ে কোন প্রব্লেম
হতো তাহলে বিদিশা নিশ্চই ওকে আমার সাথে নিয়ে যেত না।
বাড়ি ফিরে এলাম। ব্যাগ সব গুছিয়ে রাখলাম। ব্যাগটা একটু ভারী হোল কারন জানি না কবে আসবো তাই কাপরজামার হিসেব করতে পারলাম না। অনেকগুলো নিতে
হোল। ব্যাগটা হাতে তুলে দেখলাম। ভারী কিন্তু নিচে চাকা থাকায় অসুবিধে হবে না। মিতা ওর দিদির বাড়ি থেকে ফিরে দেখল আমাকে গুছোতে। জিজ্ঞেস করলো,
‘সব নিয়েছ তো?’
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ মোটামুটি সব নেওয়া। একটু বেশিই নেওয়া কারন জানতে পারছি না কবে ফিরব। দশ দিনের মতো নিয়ে নিয়েছি।‘
মিতা বলল, ‘ভালো করেছো। পরে কম পড়ার চাইতে বেশি থাকা ভালো। আমার দ্যাখো না এবারে আমার ব্রা আর প্যান্টি কম পরে গেছিল তাই বাইরে কিনতে হোল।‘
আগে মিতা কিনলে আমাকে দেখাত এখন দেখায় না। জানি না ওই প্রভকেটিভ জামাগুলো ও এখানে রেখেছে কিনা। অবশ্য না রাখলে রাখবে কোথায়। নিশ্চয় অনির্বাণকে
দেবে না যে তুমি রেখে দাও পরে আবার নিয়ে আসবে।
তারপরের দিন আর অফিস যাই নি। ঘর থেকেই বেরিয়ে যাবো ঠিক করেছি। অফিসে সেটা বলেও দিয়েছি। আবার একবার কাগজপত্র দেখে নিলাম ঠিক আছে কিনা।
বলা যায় না হুড়োহুড়িতে কোনটা নিয়েছি কোনটা নিই নি। হ্যাঁ সব ঠিক আছে। টাকাপয়সা সব দেখে নিলাম।
মিতা একবার মনে করিয়ে দিলো, ‘টাকা, ল্যাপটপ, মোবাইল সব সাবধানে রেখো। আবার হারিয়ে এসো না।‘
এই হচ্ছে মিতার আবার অন্য রুপ। কে জানে ভগবান একি অঙ্গে কতো রুপ দিয়েছে মেয়েদের। কখনো মা, কখনো মেয়ে, কখনো বা বন্ধু আবার কখনো অঙ্কশায়িনী।
ধন্য ভগবান।
আমি জবাব দিলাম, ‘হ্যাঁ সব ঠিক করে নেওয়া। তুমি চিন্তা করো না।‘
মিতা বলল, ‘আমার আর চিন্তা কি। আমি তো জানি তোমাকে। একবার তো ট্যাক্সিতে মোবাইল রেখে চলে এলে। ল্যাপটপ অফিসে রেখে হন্যে হয়ে খুঁজে বেরালে। এসব
তো আমার সামনেই হয়েছে। তাই মনে করিয়ে দেওয়া। নাহলে তোমারি জিনিস তুমিই মনে রাখবে।‘
ঘটনাগুলো ঘটেছিল বটে। সুতরাং মিতা যদি মনে করিয়ে দ্যায় তাহলে ভুল কিছু করে না। আমি একটা ন্যালাক্ষেপা। মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যায় বৈকি।
মিতা আবার বলল, ‘ফোন করতে একদম ভুলবে না। যখন ফ্রি থাকবে ফোনটা করো। আবার বোলো না কাজে এতো ব্যস্ত ছিলাম হয়ে ওঠে নি ফোন করা।‘
আমি এবার একটু বিরক্ত হলাম। যদি কেউ ভুলগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দ্যায় তাহলে রাগ হয় ঠিক, সেটা নিজের উপর। কিন্তু নিজের উপর তো আর রাগ দেখাতে
পারি না তাই রাগটা গিয়ে পরে যে বলছে তার উপর। আমি বললাম, ‘হ্যাঁরে বাবা হ্যাঁ। যেন আমি করি না তোমায় ফোন। বারবার বোলো কেন বলতো?’
মিতা বলল, ‘এই তোমার প্রব্লেম। নিজের দোষ কিছুতেই স্বীকার করতে চাও না। আরে আমি তো তোমার স্ত্রী। তোমার ভালোর জন্যই বলা। খারাপ লাগলে আমার কিছু
করার নেই। সাতপাকে বেঁধে এনেছ আমায়, পাক যতদিন না খুলবে ততদিন যত্নটা তো করতেই হবে। তোমার বোলো আমার বোলো।‘
আমি বললাম, ‘মরলেই সব সম্পর্ক শেষ তাই না মিতা?’
মিতা ভাবুক হয়ে বলল, ‘তাই তো বটে। তারপরে ছবি হয়ে দেওয়ালের একটা কোনে টাঙানো থাকবো বা থাকবে। বছরে একটা মালা আর সকাল সন্ধ্যে একটু করে
ধুপের ধোঁয়া। এছাড়া আর কি।‘
সত্যি বটে মরার পর জানাও যায় না যাকে ছেড়ে এলাম তার কতোটা ভালোবাসা থেকে গেল, কতোটা দুঃখ হোল। সব অজানা থেকে যায়।
আমি বললাম, ‘সত্যি, শুধু দুদিন তারপর ঘুরিছে সংসার চক্র। কে কার জন্য ছিল কেউ জানবে না।‘
মিতা বলল, ‘তুমি ঘুরে এসো। দুজনে মিলে একটা কিছু আবিষ্কার করতে হবে আমাদের যে কেউ আগে চলে গেলে কি করা উচিত যাতে আমরা যে চলে গেল তাকে
ভুলে না যাই।‘
আমি মিতার মুখে হাত দিয়ে ওকে থামিয়ে বললাম, ‘আজ এই কথাগুলো কেন মিতা? আমরা এখনো অনেকদিন বাঁচবো। এই পৃথিবী থেকে অনেক কিছু পাওয়ার আছে
এখনো। তোমার আমার। দুজনের সম্পর্ক পুরনো হোলেও অনেক নতুন কিছু লুকিয়ে আছে যেগুলো একা একা খুজতে হয়। তুমিও খোঁজো আমিও খুঁজি। তাহলে হয়তো
বেঁচে থাকার ইচ্ছে জিইয়ে রাখা যাবে।‘
মিতা বলল, ‘নাও তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি যাওয়া ভাল। টেনশন থাকবে না।‘
আমি ব্যাগ তুলে মিতাকে বললাম, ‘হ্যাঁ ঠিক বলেছ। যাই বেরিয়ে পড়ি। তুমি ভালো থেকো। মাঝে মাঝে দিদিকে নিয়ে এসে রেখো। মন খারাপ হলে ফোন করো।‘
মিতা বলল, ‘আমার কথা ভেব না। আমার এখানে সবাই আছে। নিজেকে দেখে রেখো। আর হ্যাঁ মদ বেশি না। শুধু দু পেগ কেমন?’
আমি মাথা নাড়ালাম। মিতার মাথায় হাত দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম অফিসের কাজে আর মিতার সাথে আরও একবার বিশ্বাসঘাত করতে।
পিছন ফিরে দেখলাম মিতা দাঁড়িয়ে আছে। ও দাঁড়িয়ে থাকবে যতক্ষণ না আমি হারিয়ে যাই ওর চোখের থেকে। হাত তুলে দেখালাম ওকে। ও হাত তুলে দেখাল। মিতার
জন্য মনটা কেমন খারাপ লাগছে। মিতারও খারাপ লাগছে নিশ্চয়ই।
মোড়ের থেকে একটা ট্যাক্সি ধরে নিলাম। কিছুটা পথ চলার পর মনের বিষাদ কাটতে থাকলো, ভাসতে থাকলো এক অপরিচিতর সাথে দেখার ইচ্ছে। আমি একটা
সিগারেট ধরালাম। ড্রেসটা ইম্প্রেসিভ পরেছি। একটা ক্যসুয়াল আর সাথে একটা স্ট্রাইপ টি শার্ট। আমাকে খুব একটা খারাপ দেখতে না মিতা বলে সেটা। ড্রেস ম্রেস একটু
ভালো করলে স্মার্ট দেখায় আমাকে আমি জানি সেটা। এগুলো সব পড়া বিদিশার রিয়া সেনের জন্য। হাসি পেল মনে মনে। শেষ কবে নিজেকে স্মার্ট দেখাতে ড্রেস
করেছিলাম মনে পরে না। আজ করেছি। মনের সুখে সিগারেটে টান দিলাম। হাওড়া যত কাছে আসতে লাগলো উত্তেজনা বাড়তে থাকলো। ঘড়িতে দেখলাম ৮/২৫। আর
৫ মিনিটে স্টেশনে পৌঁছে যাবো। বুকটা যেন ধকধক করছে। আমার নিজের একটু অবাক লাগছে। বিদিশার সাথে দেখা করার সময় এমন হয় নি। তবে কেন এখন?
নিজেকে স্মার্ট লাগছে, ভাল ড্রেস করেছি তবে কেন এই ভাব, জানি না।
মাঝে ট্যাক্সি থামিয়ে আমি একটা ভদকা কিনে নিলাম আমার জন্য। ট্রেনে খাব বলে। জানি না খেতে পারবো কিনা। তবু কিনে রাখলাম। স্টেশন এসে গেছে। ট্যাক্সি থেমে
গেছে। পকেট থেকে মানিব্যাগ বার করে ভাড়া মিটিয়ে দিলাম। ব্যাগ রোল করতে করতে স্টেশনে ঢুকলাম। চলে এলাম ফুড প্লাজায়। কেউ নেই। মানে দুটো মেয়ে একটা
ছোট ছেলে তারা নেই। বাকিরা আছে। মনে হোল এটাই ঠিক। ওরা এসে অপেক্ষা করার চাইতে আমি অপেক্ষা করবো এটাই ভালো। দুরের থেকে দেখে সাহসটা আনতে
পারবো মনে। এলিডিতে লেখা ট্রেনের ইনফরমেশন দেখতে লাগলাম। হঠাৎ পাশের থেকে ‘হাই’ আওয়াজ।
চমকে উঠলাম। গাটা শিরশির করে উঠলো। ঘুরে দেখলাম বিদিশাকে। তারপর দেখলাম চিত্তকে। দুজন। আরেকজন? সে কোথায়? চোখ ঘুরে গেল চারপাশে। পেলাম না
দেখা।
বিদিশাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কখন এসেছ তোমরা?’
বিদিশাকে দারুন লাগছে। টাইট লেগিসের উপর একটা ছোট শর্ট টপ পড়েছে। টপটা জাস্ট পাছার উপর শেষ হয়েছে। পাছার গোলাকার চেহারা দেখা যাচ্ছে। এককথায়
দারুন।
বিদিশা জবাব দিলো, ‘প্রায় ১৫ মিনিট আগে।‘
আমি ঘড়ি দেখলাম। আমার থেকে আগে এসেছে। বললাম, ‘তার মানে আমার অনেক আগে এসেছ। কোথায় ছিলে?’
বিদিশা প্লাজার দিকে ইশারা করে বলল, ‘এইতো প্লাজায়। কফি খাচ্ছিলাম।‘
নজর গেল চিত্তর দিকে। ওহ হো, কেয়া লাগ রাহা। দারুন দেখতে হয়েছে। একে তো সুন্দর ছিল আরও সুন্দর হয়েছে। দেখলেই বোঝা যায় বিদিশার কাছে খুব যত্নে
থাকে। আর ড্রেস? দেখার মতো। দেখে কে বলবে ছেলেটা বাড়িতে কাজ করে। সুন্দর টি শার্ট আর একটা দারুন দামি প্যান্ট। চিত্তকে বললাম, ‘কিরে ব্যাটা, হেভি লাগছে
তো দেখতে। বৌদির আদর খেয়ে খুব গোলমাটোল হয়েছিস। বাহ খুব ভাল লাগলো তোকে দেখে। আর হ্যাঁ বিদিশা ইউ লুক ডাশিং। আমি ফিকে পরে গেছি।‘
বিদিশা হেসে বলল, ‘থ্যাংকস ফর দা কমপ্লিমেন্ট। বাট হ্যাঁ, ইউ লুক লাইফ টাইম স্মার্ট। প্রেমে পরে যেতে ইচ্ছে করছে। সো ইওং, সো এনারজেটিক মনে হচ্ছে। কিছু
নিচ্ছ নাকি মেডিসিন?’
আমার চোখ ঘুরে বেড়াচ্ছে চারিদিকে। সে কই? এরা কি শুধু দুজন? কি করে বলব এই স্মার্টনেস, এই সুন্দর ড্রেস সব নতুন অতিথির জন্য, ওকে ইমপ্রেস করার জন্য।
বিদিশাকে লোকাবার উপায় নেই। ও আমাকে দেখে বলল, ‘কাউকে খুজছ?’
লুকিয়ে লাভ নেই বিদিশার কাছে। ও বুঝতে পেরে গেছে আমি কাউকে খুঁজছি। বললাম, ‘তোমার সেই রিয়া সেন কই? দেখছি না তো কোথাও।‘
বিদিশা চিত্তকে বলল, ‘কি বলেছিলাম চিত্ত। তোর দাদা দেখবি ওকেই খুঁজবে।‘
চিত্ত হেসে উঠলো, বলল, ‘দাদা ধরা পরে গেলে তো।‘
আমি চোখ পাকিয়ে চিত্তকে বললাম, ‘খবরদার চিত্ত পাকামো না। আমি কাউকে খুঁজছি না।‘
বিদিশা বলল, ‘খুঁজছ নাতো চোখ গোল করে চারিদিক ঘোরাচ্ছ কেন বাবা। আসছে ও কফির দাম দিচ্ছে। দাঁড়াও এতো তো দেরি হবার কথা নয়, দেখি।‘
বিদিশা প্লাজার দিকে এগিয়ে যেতেই চিত্ত আমার হাত টেনে বলল, ‘দেখলে তোমার মাথা ঘুরে যাবে।‘
আমি ওকে চিমটি কেটে বললাম, ‘আবার পাকামো।‘
বিদিশা একটা মেয়ের সাথে আসছে। বয়স ২৯/৩০ হবে মনে হয়। এই তাহলে রিয়া। বাট ইয়েস শি ইস রাভিশিং। যেমন সুন্দর তেমনি গোলগাল। সবকিছু যেন ঠিক
মতো। একটা জিন্স আর টি শার্ট পড়া। একদম টাইট। স্তনগুলো ফেটে বেরোচ্ছে যেন। থাইয়ের সাইজ জিন্সের উপর দিয়ে একদম মন হু হু করা। পাছা দেখতে পাচ্ছি না।
হাঁটার তালে তালে স্তনগুলো নাচছে। কাঁধ পর্যন্ত চুল। রিয়া সেন যদি এটা হয় তাহলে আমার হয়ে গেছে। আমি একটা বোকা গাধা হয়ে যাবো।
বিদিশা ওকে জিজ্ঞেস করছে, ‘এতো দেরি হোল তোর?’
মেয়েটা বলল, ‘আরে কি করবো। চেঞ্জ নেই ওদের কাছে। ওটার জন্য দেরি।‘ আমাদের কাছে এসে আমাকে দেখে বলল, ‘হাই গৌতম। মিট মি, অ্যাই আম রিয়া।‘
ম্যায় তো গায়া। আমি কোনরকমে বললাম, ‘হ্যালো, নাইস টু মিট ইউ।‘
বিদিশা আমাকে বলল, ‘বলেছিলাম না এই আমার সারপ্রাইস তোমাকে।‘
আমার গলাটা খুব যেন চেনা মনে হোল। খুব পরিচিত। অনেক অনেকবার শুনেছি লাগছে। কিন্তু কোথায়? বোকা মনে হোল নিজেকে, মেয়েটাকে চিনি না ওকে শুনব কি
করে?
বিদিশা জিজ্ঞেস করলো, ‘গৌতম কটায় ট্রেন?’
আমি রিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, রিয়া অন্যদিকে। আমি বিদিশার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ওই তো ৯/২৫।‘
বিদিশাটা একটা যাতা, বলে বসল, ‘আরে রিয়া আমাদের সাথেই যাচ্ছে। দেখবে আরও ভালো করে। এখন ওইভাবে দুবে যেও না। আমি আছি এখানে।‘
আমার যেন মুখ দেখাবার জায়গা রইল না। ওইরকমভাবে বলে নাকি কেউ, তাও জাস্ট যার সাথে পরিচয় হয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি বললাম, ‘কি বলছ কি তুমি? আমি
বলতেই যাচ্ছিলাম চলো যাওয়া যাক। ট্রেন লেগে গেছে।‘
সবাই এগিয়ে চললাম। বিদিশা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো ঠোঁটে মুচকি একটা হাসি রেখে। আমার হাসা ছাড়া আর কোন কিছু করার নেই তাই আমি চললাম
ওদের সাথে। ওরা সামনে আমি পিছনে। এবার আমি আরও পরিস্কার বিদিশা আর রিয়ার পাছার অবয়ব দেখতে পেলাম। রিয়ার পাছা জিন্সের উপর দিয়ে একদম
গোলাকার, দেহ থেকে ঠেলে বেরিয়ে আছে। টাইট জিন্স যেন ফেটে যাবে। আর বিদিশার পাছা টপের নিচ দিয়ে যতটা দেখা যাচ্ছে তাতে হৃদয়ে তরঙ্গ তুলছে। চিত্ত আমার
সাথে হাঁটছে।
একসময় আমরা ট্রেনের কাছে চলে এলাম। ১ম এসি বগিতে ঢুকলাম। আটেন্ডান্ট দাঁড়িয়ে ছিল। জিজ্ঞেস করাতে বলে দিলো আমাদের কোন কুপে পড়েছে। সি কুপে
ঢুকলাম। চিত্ত বলে উঠলো, ‘অ্যাই লা, কি ঠাণ্ডা গো এইখানটা।‘
রিয়া বলল, ‘এসি চলছে না। তাই।‘
আমি আমার ব্যাগ, ওদের ব্যাগ সব জায়গায় রেখে দিলাম। ওরা দাঁড়িয়ে রইল যতক্ষণ না আমার ঠিকভাবে রাখা হয়। উবু হতে গিয়ে কারো সাথে আমার পাছা ঠেকল,
আমি পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখি রিয়া সরে যাচ্ছে, ওর সাথেই লেগেছে। আমি ‘সরি’ বলে আবার ব্যাগগুলো রাখতে লাগলাম। সব রাখা হয়ে গেলে সোজা হয়ে
বললাম, ‘নাও এবার বস।‘
বিদিশা একটা জানলার ধারে বসতে চিত্ত গিয়ে টুক করে বিদিশার পাশে বসে পড়লো। আমি সেটা দেখে বললাম, ‘এখানেও তোর বৌদির সাথে চিপকে থাকবি নাকি?’
চিত্ত জানলা দিয়ে তাকাতে তাকাতে বলল, ‘কেন তুমি বসতে নাকি?’
বিদিশা হেসে বলল, ‘উহু বাবা ও কথাতেও খুব চালাক হয়েছে। ভেবে শুনে কথা বোলো।‘
আমি বললাম, ‘হবে না কেন তোমারি তো চেলা।‘ আমি সরে গিয়ে রিয়াকে আরেকটা জানলা দিয়ে আমি ওর পাশে বসলাম। রিয়া বসে আমাকে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’
জানালো।
আমার দিকে তাকাতে আমি জানার জন্য জিজ্ঞেস করলাম, ‘তো রিয়া আপনি চাকরি করেন?’
রিয়া কিছু বলার আগে বিদিশা বলে উঠলো, ‘আপনি কিগো, তুমি বোলো। ও আমার থেকে ছোট আর তোমার থেকে তো অনেক।‘
আমি বোকা হেসে বললাম, ‘আরে প্রথম আলাপে তুমি বলা যায় নাকি?’
রিয়া বলল, ‘গৌতম প্লিস নো ফর্মালিটি। আমরা বন্ধু। তুমিটাই চলে ভালো বন্ধুদের সাথে।‘ বলে রিয়া আমার থাইয়ে হাত রাখল।
মেয়েগুলো যেন আমাকে অপ্রস্তুতে ফেলার জন্য লেগে রয়েছে। আমি বিদিশাকে বললাম, ‘হ্যাঁ তুমি তখন বললে যে রিয়া তোমার সারপ্রাইস। রিয়া আসাই কি এক
সারপ্রাইস?’
বিদিশা কিছু বলল না জাস্ট হাসল। কিন্তু মনে হোল ওই হাসির আড়ালে কোন রহস্য আছে। কি সেটা, কখন জানা যাবে। অপেক্ষা তো করতেই হবে।
রিয়া বলল, ‘আমি দিদির কাছে তোমার সব কথা শুনেছি। তুমি ওর খুব ভাল বন্ধু, ওর জন্য তুমি অনেক খেয়াল করো। তোমার নিজের বউ আছে। বউদিও এখন বন্ধু
যোগার করে নিয়েছে।‘
আমি হেসে বললাম, ‘বাবা, আমাকে তো একদম খুলে দিয়েছ রিয়ার কাছে বিদিশা। আর বেশি কিছু বলোনি তো।‘
রিয়া আর বিদিশা দুজনেই হো হো করে হেসে উঠলো। আমি আর চিত্ত ওদের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। আমার হঠাৎ মনে হোল খাবার আনা হয়নি। আমি বিদিশাকে বললাম, এইরে খুব ভুল হয়ে গেল একটা যে।‘
বিদিশা জিজ্ঞেস করলো, ‘কি হোল? কিছু ভুলে গেছ নাকি?’
আমি জবাব দিলাম, ‘হ্যাঁ, খাবারের কথা মনে নেই। খাবার যে আনা হয় নি।‘
রিয়া বলল, ‘আরে ও নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমরা মেয়েরা আছি। প্লাজা থেকে কিনে নিয়েছি। খাবার জল সব।‘
যাক বাবা নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। ইতিমধ্যে চেকার এসে আমাদের টিকিট চেক করে গেল। যাবার সময় রিয়ার দিকে খুব গভীর নজর দিয়ে গেল খাস করে ওর বুকের দিকে।
বলে গেল, ‘আপনারা প্লিস দরজা দিয়ে রাখবেন। যদি কিছু দরকার হয় তাহলে বেল টিপবেন।‘
আমি বললাম, ‘চোখ দিয়ে যেন গিলছিল। কি নজর ব্যাটার।‘
রিয়া হেসে উঠলো, বলল, ‘আরে আমি এই ড্রেস পরে আছি ও একটু দেখবে না। ওতেই তো ওর আনন্দ। ভাবতে থাকবে মেয়েটার বুক সত্যি দেখার মতো।‘
বাপরে ভীষণ খোলা কথাবার্তা তো মেয়েটার। খুশি হলাম ট্যুরটা ভালই হবে।
বিদিশা প্রশ্ন করলো, ‘গৌতম কখন আমরা পৌঁছবো?’
আমি উত্তর দিলাম, ‘এটা পৌঁছাবার টাইম সকাল ৭/৩০। কিন্তু এটা পৌঁছতে প্রায় সকাল ১০, ১০/৩০ করে দেয়। কোনদিন ঠিক সময়ে যায় নি এই ট্রেন। কারন আছে
ওড়িশায় ঢুকে এটা সিঙ্গেল লাইন হয়ে যায় তাই।‘
রিয়া বলে উঠলো, ‘বাপরে ১০ ১০/৩০ হলে এইগুলো পরে বসে থাকার কোন মানে হয় না। দিদি কি বোলো ড্রেসগুলো ছেড়ে নিলেই তো হয়।‘
বিদিশা বলল, ‘হ্যাঁ আমিও তাই বলতে যাচ্ছিলাম। ড্রেসগুলো ছেড়ে নিই কি বোলো গৌতম?’
আমি জবাব দিলাম, ‘তোমরা যদি আনকমফরট ফিল করো তাহলে তাই করো।‘
রিয়া বলল, ‘দিদি তুই বার করবি না আমি?’
বিদিশা বলল, ‘আমিই করি। তুই পারবি না। কোথায় কি রেখেছি তুই জানবি না। গৌতম ওই নীল ব্যাগটা একটু বার করে দাও না।‘
আমি ঝুঁকে দেখলাম ব্যাগটা রিয়ার পা যেখানে আছে সেখানে রাখা। আমি টানতে গিয়ে দেখলাম রিয়ার পায়ে লাগবে। আমি রিয়ার পা একহাতে তুলে ধরলাম। রিয়া কিছু
বলল না, আমি টেনে ব্যাগটা বার করে আবার পাটা যথাস্থানে নামিয়ে রাখলাম। পায়ে হাত দিয়ে মনে হোল পাটা সুডৌল। নখে খুব সুন্দর করে নেলপালিশ লাগানো। সরু
ফিতের চটি। রঙটা ফর্সা। কালো স্ট্রাপের চটিতে পাটা খুব সুন্দর মানিয়েছে।
বিদিশা চেন টেনে খুলে ফেলল ব্যাগটা। তারপর ভিতরে হাত গলিয়ে রিয়াকে জিজ্ঞেস করলো, ‘কি পরবি?’
রিয়া ওর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘দে যেটা ইচ্ছে। তুইও তো পরবি। তুই যেটা পরবি তাই দে।‘
বিদিশা বলল, ‘আমি তো শর্ট পরব।তুইও কি তাই?’
রিয়া বলল, ‘দে তাই।‘
কিছুক্ষণ ঘাঁটাঘাঁটি করার পর বিদিশা দুটো শর্ট প্যান্ট বার করলো আর একটা গোলাপি এবং একটা নীল রঙের টপ বার করলো। টপগুলো গেঞ্জি কাপরের, দেখেই খুব
পাতলা মনে হোল। বিদিশা বার করে চিত্তকে দিয়ে বলল, ‘ধর এগুলো।‘ তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি কি এই পরে থাকবে না চেঞ্জ করবে?’
আমি উত্তর দিলাম, ‘তোমরা যখন করছ আমি করে নিই। এই যাত্রায় পৃথক ফল কেন হবে আবার।‘
বিদিশা বলল, ‘দাও তোমার ব্যাগ, বার করে দিই।‘
যদি বলি আমি বার করে নেবো বিদিশা শুনবে না। তাই ব্যাগটা টেনে বার করে দিলাম।
বিদিশা জিজ্ঞেস করলো, ‘উপরেই রাখা তো?’
আমি উত্তর দিলাম, ‘হ্যাঁ উপরেই রাখা।‘
বিদিশা খুঁজে একটা ঢিলে শর্ট বার করে দিলো আরেকটা লুস গলাবন্ধ গেঞ্জি।
চিত্তর ড্রেস বার করলো বিদিশা। চিত্তর হাতে দিয়ে বলল, ‘নে চেঞ্জ করে নে।‘
চিত্ত ড্রেস হাতে নিয়ে বলল, ‘এখানেই চেঞ্জ করবো?’
বিদিশা বলল, ‘বাবা বাবুর কি লজ্জা। হ্যাঁ এখানেই চেঞ্জ কর।‘
চিত্ত প্যান্টে হাত দিয়ে বলল, ‘তোমরা অন্যদিকে তাকাও। আমি প্যান্ট খুলবো।‘
আমরা হেসে অন্যদিকে তাকালাম। কিছুক্ষণ পরে চিত্ত বলল, ‘আমার হয়ে গেছে।‘
মুখ ঘুরিয়ে চিত্তকে দেখলাম ও শর্ট আর গেঞ্জি পরে দাঁড়িয়ে আছে। পড়া জামাগুলো গোছাতে যেতে বিদিশা বলল, ‘রাখ ওগুলো। আমি গুছিয়ে দেবো।‘
চিত্ত বসে পড়লো সিটে। মেয়েরা আমার দিকে তাকাতে বুঝলাম এবার আমার পালা।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। ঠিক করে নিলাম ওরা দেখুক আর নাই দেখুক আমি কিছু না বলেই ড্রেস ছাড়বো। কিছু বললেই কেস খেয়ে যাবো বিদিশার কাছে। আমি একটু
সরে গিয়ে প্যান্টটা খুলে নিলাম। উপরের টি শার্ট। আমি শুধু খালি গায়ে জাঙ্গিয়া পরে দাঁড়িয়ে। প্রথমে গেঞ্জিটা পরে নিলাম। তারপর জাঙ্গিয়াটা টেনে খুলে নিলাম। শর্ট
প্যান্টটা পায়ে গলিয়ে নিলাম। কিন্তু কপালে দুঃখ থাকলে সব কিছু হয়। প্যান্টের ফোল্ডে গেল পা আটকে। কিছুতেই টেনে তুলতে পারলাম না প্যান্টটা উপরে, না পারলাম
নিজের ব্যাল্যান্স ঠিক রাখতে। একপায়ে নাচতে নাচতে ঠোকা খেলাম বাঙ্কে। ওরা সব ঘুরে আমার দিকে তাকাল আর যা দেখবার দেখে নিলো।
বিদিশা বলল, ‘আরে ওরকমভাবে নাচছ কেন? কি হোল?’
আমি অপ্রস্তুতের মতো বললাম, আরে পা আটকে গেছে ফোল্ডে।‘
আর সবাই ঠিক আছে কিন্তু সামনে রিয়া। রিয়াকে বলতে শুনলাম, ‘ইম্প্রেসিভ।‘
চিত্ত খুব হাসছে। আমি ওই অবস্থায় বললাম, ‘এই চিত্ত একদম হাসবি না।‘
চিত্ত তবু হাসতে থাকলো মুখে হাত দিয়ে। বিদিশা উঠে এলো, সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘নাও আমাকে ধরে ব্যাল্যান্স ঠিক করো।‘
আমি বিদিশার কাঁধে হাত দিয়ে ব্যাল্যান্স ঠিক করলাম। বিদিশা হাত দিয়ে ফোল্ড থেকে পাটা ছাড়িয়ে দিয়ে তারপর প্যান্টটা তুলে দিলো উপরে। বলল, ‘বয়স হয়েছে
জানা উচিত। বেশ কিছুক্ষণ ফোন বেজে গেল কিন্তু নিকিতা ফোন তুলল না। খুব সম্ভবত ব্যস্ত। আমি আর রিং করলাম না। যদি ওর ইচ্ছে হয় তো করবে। কিন্তু মনের
খুঁতখুঁতানিটা গেল না। অফিস থেকে বেরোবার একঘণ্টা আগে নিকিতার ফোন এলো।
নিকিতা বলল, ‘হ্যালো দোস্ত, সকালে ফোন করেছিলে। কিন্তু আজ একটু কেনাকাটায় ব্যস্ত ছিলাম তাই ফোন তুলতে পারি নি। তারপর এবার তো অনেকদিন পরে
ফোন করলে। কি হয়েছিলো না নিকিতাকে ভুলতে বসেছ। তুমি ভুললেও আমি ভুলতে দেবো না। তোমার জিভ…।‘ নিকিতা হা হা করে হেসে উঠলো।
আমি একটু আদুরে গলায় বললাম, ‘আরে তোমাকে কি ভোলা যায় নিকি। আমার জীবনে অনেক কিছুর যোগ ঘটিয়েছ তুমি। মিতা ছিল না অফিসে একটু চাপ ছিল
তাই করে উঠতে পারি নি। তাছাড়া তোমাকে তো হড়বড় করে ফোন করা যায়না। তুমিও ব্যস্ত থাকো।‘
নিকিতা জিজ্ঞেস করলো, ‘মিতা বৌদি ছিল না, কোথায় গেছিল?’
আমি বললাম, ‘কোথায় আবার ট্যুরে? এবারে গোয়া গিয়েছিল।‘
নিকিতা- তাই নাকি? বাহ বৌদিতো খুব ঘুরছে। যে বন্ধুটা ঠিক করে দিয়েছিলাম তার সাথে?
আমি- কি করে বলব বল। আমাকে তো আর বলে নি। তাছাড়া তুমি বারন করেছো তাই আমিও জিজ্ঞেস করি নি।
নিকিতা- গুড বয়। তা ফোন কেন করেছিলে আমায়?
আমি- বিদিশাকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছি। অফিসের কাজে। বেশ কয়েকদিন লাগবে। তাই ভাবলাম যাই ওকে নিয়ে। ওরও মন ভালো হবে আর আমারও একটা সাথী হবে।
নিকিতা- ও তাই? খুব ভালো।
আমি- নিকি, বিদিশা একজনকে নিয়ে যাচ্ছে নাম রিয়া সেন। তুমি জানো ওকে? না বিদিশা আগে বলেছিল না তুমি বলেছ কোনদিন। হঠাৎ শুনলাম এই বন্ধুটার নাম।
নিকিতা- আগে বোলো ও যাচ্ছে বলে তোমার কোন অসুবিধে আছে কিনা।
আমি- অসুবিধে? এ আবার কি প্রশ্ন করলে তুমি? আমার অসুবিধে নেই, কিন্তু আমার সাথে চেনা জানা নেই তাই জিজ্ঞেস করছি।
নিকিতা- আমি জানি ওকে। বিদিশার খুব ঘনিষ্ঠ। মাঝে মাঝে বাড়িতে আসতো দিদির হাদসাটা হওয়ার পর। খুব ভালো মেয়েটা। অবশ্য এটা আমার বলা। তুমি কি
জানবে ওর সম্বন্ধে সেটা তোমার ব্যাপার।
আমি- না আমার একটু আশ্চর্য লাগছে যে বিদিশা সব কথাই আমাকে বলেছে। এর কথা কোনদিন বলে নি। তাই ভাবছিলাম। তবে এবারে ও একটা কথা বলেছিল যে
আমি আবার ট্যুরে ওকে নিয়ে গেলে ও একটা সারপ্রাইস দেবে আমাকে। এটাই বোধহয়।
নিকিতা- আরে তোমার এতো চিন্তা কেন? তুমি তো দুটো পাচ্ছ তোমার তো আনন্দ হওয়া উচিত। দুজনেরটায় মুখ দিতে পারবে।
নিকিতা আবার খিলখিল করে হেসে উঠলো। ওর এই হাসিটা আমার খুব ভালো লাগে।
আমি- সবার সাথে দেখা হোল। রিয়া অজানা কে মেয়ে তার সাথেও দেখা হবে। কিন্তু বন্ধু তোমার সাথে কবে দেখা হবে? তুমি কেন দেখা করছ না?
নিকিতা (আবার হাসল)- বুড়ো বন্ধু সবুরে মেওয়া ফলে। ওয়েট কর। ইন্তেজার কি ঘড়ি জলদহি সমাপ্ত হনেওয়ালি। হবে দেখা হবে। সেদিন তোমার খুব ভালো লাগবে
দেখ।
আমি (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)- জানি না সেদিন কবে আসবে। যাক ভালো থেকো।
নিকিতা- তুমিও ভালো থেকো আমার প্রিয় বন্ধু। তোমাদের যাত্রা শুভ হোক।
খুব বেশি কিছু জানা গেল না নিকিতার থেকে। খুঁতখুঁতানিটা বারতেই থাকলো। তবে মাত্র তো আর কয়েকঘন্টা। তারপরে তো দেখবই। আর যদি ওকে নিয়ে কোন প্রব্লেম
হতো তাহলে বিদিশা নিশ্চই ওকে আমার সাথে নিয়ে যেত না।
বাড়ি ফিরে এলাম। ব্যাগ সব গুছিয়ে রাখলাম। ব্যাগটা একটু ভারী হোল কারন জানি না কবে আসবো তাই কাপরজামার হিসেব করতে পারলাম না। অনেকগুলো নিতে
হোল। ব্যাগটা হাতে তুলে দেখলাম। ভারী কিন্তু নিচে চাকা থাকায় অসুবিধে হবে না। মিতা ওর দিদির বাড়ি থেকে ফিরে দেখল আমাকে গুছোতে। জিজ্ঞেস করলো,
‘সব নিয়েছ তো?’
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ মোটামুটি সব নেওয়া। একটু বেশিই নেওয়া কারন জানতে পারছি না কবে ফিরব। দশ দিনের মতো নিয়ে নিয়েছি।‘
মিতা বলল, ‘ভালো করেছো। পরে কম পড়ার চাইতে বেশি থাকা ভালো। আমার দ্যাখো না এবারে আমার ব্রা আর প্যান্টি কম পরে গেছিল তাই বাইরে কিনতে হোল।‘
আগে মিতা কিনলে আমাকে দেখাত এখন দেখায় না। জানি না ওই প্রভকেটিভ জামাগুলো ও এখানে রেখেছে কিনা। অবশ্য না রাখলে রাখবে কোথায়। নিশ্চয় অনির্বাণকে
দেবে না যে তুমি রেখে দাও পরে আবার নিয়ে আসবে।
তারপরের দিন আর অফিস যাই নি। ঘর থেকেই বেরিয়ে যাবো ঠিক করেছি। অফিসে সেটা বলেও দিয়েছি। আবার একবার কাগজপত্র দেখে নিলাম ঠিক আছে কিনা।
বলা যায় না হুড়োহুড়িতে কোনটা নিয়েছি কোনটা নিই নি। হ্যাঁ সব ঠিক আছে। টাকাপয়সা সব দেখে নিলাম।
মিতা একবার মনে করিয়ে দিলো, ‘টাকা, ল্যাপটপ, মোবাইল সব সাবধানে রেখো। আবার হারিয়ে এসো না।‘
এই হচ্ছে মিতার আবার অন্য রুপ। কে জানে ভগবান একি অঙ্গে কতো রুপ দিয়েছে মেয়েদের। কখনো মা, কখনো মেয়ে, কখনো বা বন্ধু আবার কখনো অঙ্কশায়িনী।
ধন্য ভগবান।
আমি জবাব দিলাম, ‘হ্যাঁ সব ঠিক করে নেওয়া। তুমি চিন্তা করো না।‘
মিতা বলল, ‘আমার আর চিন্তা কি। আমি তো জানি তোমাকে। একবার তো ট্যাক্সিতে মোবাইল রেখে চলে এলে। ল্যাপটপ অফিসে রেখে হন্যে হয়ে খুঁজে বেরালে। এসব
তো আমার সামনেই হয়েছে। তাই মনে করিয়ে দেওয়া। নাহলে তোমারি জিনিস তুমিই মনে রাখবে।‘
ঘটনাগুলো ঘটেছিল বটে। সুতরাং মিতা যদি মনে করিয়ে দ্যায় তাহলে ভুল কিছু করে না। আমি একটা ন্যালাক্ষেপা। মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যায় বৈকি।
মিতা আবার বলল, ‘ফোন করতে একদম ভুলবে না। যখন ফ্রি থাকবে ফোনটা করো। আবার বোলো না কাজে এতো ব্যস্ত ছিলাম হয়ে ওঠে নি ফোন করা।‘
আমি এবার একটু বিরক্ত হলাম। যদি কেউ ভুলগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দ্যায় তাহলে রাগ হয় ঠিক, সেটা নিজের উপর। কিন্তু নিজের উপর তো আর রাগ দেখাতে
পারি না তাই রাগটা গিয়ে পরে যে বলছে তার উপর। আমি বললাম, ‘হ্যাঁরে বাবা হ্যাঁ। যেন আমি করি না তোমায় ফোন। বারবার বোলো কেন বলতো?’
মিতা বলল, ‘এই তোমার প্রব্লেম। নিজের দোষ কিছুতেই স্বীকার করতে চাও না। আরে আমি তো তোমার স্ত্রী। তোমার ভালোর জন্যই বলা। খারাপ লাগলে আমার কিছু
করার নেই। সাতপাকে বেঁধে এনেছ আমায়, পাক যতদিন না খুলবে ততদিন যত্নটা তো করতেই হবে। তোমার বোলো আমার বোলো।‘
আমি বললাম, ‘মরলেই সব সম্পর্ক শেষ তাই না মিতা?’
মিতা ভাবুক হয়ে বলল, ‘তাই তো বটে। তারপরে ছবি হয়ে দেওয়ালের একটা কোনে টাঙানো থাকবো বা থাকবে। বছরে একটা মালা আর সকাল সন্ধ্যে একটু করে
ধুপের ধোঁয়া। এছাড়া আর কি।‘
সত্যি বটে মরার পর জানাও যায় না যাকে ছেড়ে এলাম তার কতোটা ভালোবাসা থেকে গেল, কতোটা দুঃখ হোল। সব অজানা থেকে যায়।
আমি বললাম, ‘সত্যি, শুধু দুদিন তারপর ঘুরিছে সংসার চক্র। কে কার জন্য ছিল কেউ জানবে না।‘
মিতা বলল, ‘তুমি ঘুরে এসো। দুজনে মিলে একটা কিছু আবিষ্কার করতে হবে আমাদের যে কেউ আগে চলে গেলে কি করা উচিত যাতে আমরা যে চলে গেল তাকে
ভুলে না যাই।‘
আমি মিতার মুখে হাত দিয়ে ওকে থামিয়ে বললাম, ‘আজ এই কথাগুলো কেন মিতা? আমরা এখনো অনেকদিন বাঁচবো। এই পৃথিবী থেকে অনেক কিছু পাওয়ার আছে
এখনো। তোমার আমার। দুজনের সম্পর্ক পুরনো হোলেও অনেক নতুন কিছু লুকিয়ে আছে যেগুলো একা একা খুজতে হয়। তুমিও খোঁজো আমিও খুঁজি। তাহলে হয়তো
বেঁচে থাকার ইচ্ছে জিইয়ে রাখা যাবে।‘
মিতা বলল, ‘নাও তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি যাওয়া ভাল। টেনশন থাকবে না।‘
আমি ব্যাগ তুলে মিতাকে বললাম, ‘হ্যাঁ ঠিক বলেছ। যাই বেরিয়ে পড়ি। তুমি ভালো থেকো। মাঝে মাঝে দিদিকে নিয়ে এসে রেখো। মন খারাপ হলে ফোন করো।‘
মিতা বলল, ‘আমার কথা ভেব না। আমার এখানে সবাই আছে। নিজেকে দেখে রেখো। আর হ্যাঁ মদ বেশি না। শুধু দু পেগ কেমন?’
আমি মাথা নাড়ালাম। মিতার মাথায় হাত দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম অফিসের কাজে আর মিতার সাথে আরও একবার বিশ্বাসঘাত করতে।
পিছন ফিরে দেখলাম মিতা দাঁড়িয়ে আছে। ও দাঁড়িয়ে থাকবে যতক্ষণ না আমি হারিয়ে যাই ওর চোখের থেকে। হাত তুলে দেখালাম ওকে। ও হাত তুলে দেখাল। মিতার
জন্য মনটা কেমন খারাপ লাগছে। মিতারও খারাপ লাগছে নিশ্চয়ই।
মোড়ের থেকে একটা ট্যাক্সি ধরে নিলাম। কিছুটা পথ চলার পর মনের বিষাদ কাটতে থাকলো, ভাসতে থাকলো এক অপরিচিতর সাথে দেখার ইচ্ছে। আমি একটা
সিগারেট ধরালাম। ড্রেসটা ইম্প্রেসিভ পরেছি। একটা ক্যসুয়াল আর সাথে একটা স্ট্রাইপ টি শার্ট। আমাকে খুব একটা খারাপ দেখতে না মিতা বলে সেটা। ড্রেস ম্রেস একটু
ভালো করলে স্মার্ট দেখায় আমাকে আমি জানি সেটা। এগুলো সব পড়া বিদিশার রিয়া সেনের জন্য। হাসি পেল মনে মনে। শেষ কবে নিজেকে স্মার্ট দেখাতে ড্রেস
করেছিলাম মনে পরে না। আজ করেছি। মনের সুখে সিগারেটে টান দিলাম। হাওড়া যত কাছে আসতে লাগলো উত্তেজনা বাড়তে থাকলো। ঘড়িতে দেখলাম ৮/২৫। আর
৫ মিনিটে স্টেশনে পৌঁছে যাবো। বুকটা যেন ধকধক করছে। আমার নিজের একটু অবাক লাগছে। বিদিশার সাথে দেখা করার সময় এমন হয় নি। তবে কেন এখন?
নিজেকে স্মার্ট লাগছে, ভাল ড্রেস করেছি তবে কেন এই ভাব, জানি না।
মাঝে ট্যাক্সি থামিয়ে আমি একটা ভদকা কিনে নিলাম আমার জন্য। ট্রেনে খাব বলে। জানি না খেতে পারবো কিনা। তবু কিনে রাখলাম। স্টেশন এসে গেছে। ট্যাক্সি থেমে
গেছে। পকেট থেকে মানিব্যাগ বার করে ভাড়া মিটিয়ে দিলাম। ব্যাগ রোল করতে করতে স্টেশনে ঢুকলাম। চলে এলাম ফুড প্লাজায়। কেউ নেই। মানে দুটো মেয়ে একটা
ছোট ছেলে তারা নেই। বাকিরা আছে। মনে হোল এটাই ঠিক। ওরা এসে অপেক্ষা করার চাইতে আমি অপেক্ষা করবো এটাই ভালো। দুরের থেকে দেখে সাহসটা আনতে
পারবো মনে। এলিডিতে লেখা ট্রেনের ইনফরমেশন দেখতে লাগলাম। হঠাৎ পাশের থেকে ‘হাই’ আওয়াজ।
চমকে উঠলাম। গাটা শিরশির করে উঠলো। ঘুরে দেখলাম বিদিশাকে। তারপর দেখলাম চিত্তকে। দুজন। আরেকজন? সে কোথায়? চোখ ঘুরে গেল চারপাশে। পেলাম না
দেখা।
বিদিশাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কখন এসেছ তোমরা?’
বিদিশাকে দারুন লাগছে। টাইট লেগিসের উপর একটা ছোট শর্ট টপ পড়েছে। টপটা জাস্ট পাছার উপর শেষ হয়েছে। পাছার গোলাকার চেহারা দেখা যাচ্ছে। এককথায়
দারুন।
বিদিশা জবাব দিলো, ‘প্রায় ১৫ মিনিট আগে।‘
আমি ঘড়ি দেখলাম। আমার থেকে আগে এসেছে। বললাম, ‘তার মানে আমার অনেক আগে এসেছ। কোথায় ছিলে?’
বিদিশা প্লাজার দিকে ইশারা করে বলল, ‘এইতো প্লাজায়। কফি খাচ্ছিলাম।‘
নজর গেল চিত্তর দিকে। ওহ হো, কেয়া লাগ রাহা। দারুন দেখতে হয়েছে। একে তো সুন্দর ছিল আরও সুন্দর হয়েছে। দেখলেই বোঝা যায় বিদিশার কাছে খুব যত্নে
থাকে। আর ড্রেস? দেখার মতো। দেখে কে বলবে ছেলেটা বাড়িতে কাজ করে। সুন্দর টি শার্ট আর একটা দারুন দামি প্যান্ট। চিত্তকে বললাম, ‘কিরে ব্যাটা, হেভি লাগছে
তো দেখতে। বৌদির আদর খেয়ে খুব গোলমাটোল হয়েছিস। বাহ খুব ভাল লাগলো তোকে দেখে। আর হ্যাঁ বিদিশা ইউ লুক ডাশিং। আমি ফিকে পরে গেছি।‘
বিদিশা হেসে বলল, ‘থ্যাংকস ফর দা কমপ্লিমেন্ট। বাট হ্যাঁ, ইউ লুক লাইফ টাইম স্মার্ট। প্রেমে পরে যেতে ইচ্ছে করছে। সো ইওং, সো এনারজেটিক মনে হচ্ছে। কিছু
নিচ্ছ নাকি মেডিসিন?’
আমার চোখ ঘুরে বেড়াচ্ছে চারিদিকে। সে কই? এরা কি শুধু দুজন? কি করে বলব এই স্মার্টনেস, এই সুন্দর ড্রেস সব নতুন অতিথির জন্য, ওকে ইমপ্রেস করার জন্য।
বিদিশাকে লোকাবার উপায় নেই। ও আমাকে দেখে বলল, ‘কাউকে খুজছ?’
লুকিয়ে লাভ নেই বিদিশার কাছে। ও বুঝতে পেরে গেছে আমি কাউকে খুঁজছি। বললাম, ‘তোমার সেই রিয়া সেন কই? দেখছি না তো কোথাও।‘
বিদিশা চিত্তকে বলল, ‘কি বলেছিলাম চিত্ত। তোর দাদা দেখবি ওকেই খুঁজবে।‘
চিত্ত হেসে উঠলো, বলল, ‘দাদা ধরা পরে গেলে তো।‘
আমি চোখ পাকিয়ে চিত্তকে বললাম, ‘খবরদার চিত্ত পাকামো না। আমি কাউকে খুঁজছি না।‘
বিদিশা বলল, ‘খুঁজছ নাতো চোখ গোল করে চারিদিক ঘোরাচ্ছ কেন বাবা। আসছে ও কফির দাম দিচ্ছে। দাঁড়াও এতো তো দেরি হবার কথা নয়, দেখি।‘
বিদিশা প্লাজার দিকে এগিয়ে যেতেই চিত্ত আমার হাত টেনে বলল, ‘দেখলে তোমার মাথা ঘুরে যাবে।‘
আমি ওকে চিমটি কেটে বললাম, ‘আবার পাকামো।‘
বিদিশা একটা মেয়ের সাথে আসছে। বয়স ২৯/৩০ হবে মনে হয়। এই তাহলে রিয়া। বাট ইয়েস শি ইস রাভিশিং। যেমন সুন্দর তেমনি গোলগাল। সবকিছু যেন ঠিক
মতো। একটা জিন্স আর টি শার্ট পড়া। একদম টাইট। স্তনগুলো ফেটে বেরোচ্ছে যেন। থাইয়ের সাইজ জিন্সের উপর দিয়ে একদম মন হু হু করা। পাছা দেখতে পাচ্ছি না।
হাঁটার তালে তালে স্তনগুলো নাচছে। কাঁধ পর্যন্ত চুল। রিয়া সেন যদি এটা হয় তাহলে আমার হয়ে গেছে। আমি একটা বোকা গাধা হয়ে যাবো।
বিদিশা ওকে জিজ্ঞেস করছে, ‘এতো দেরি হোল তোর?’
মেয়েটা বলল, ‘আরে কি করবো। চেঞ্জ নেই ওদের কাছে। ওটার জন্য দেরি।‘ আমাদের কাছে এসে আমাকে দেখে বলল, ‘হাই গৌতম। মিট মি, অ্যাই আম রিয়া।‘
ম্যায় তো গায়া। আমি কোনরকমে বললাম, ‘হ্যালো, নাইস টু মিট ইউ।‘
বিদিশা আমাকে বলল, ‘বলেছিলাম না এই আমার সারপ্রাইস তোমাকে।‘
আমার গলাটা খুব যেন চেনা মনে হোল। খুব পরিচিত। অনেক অনেকবার শুনেছি লাগছে। কিন্তু কোথায়? বোকা মনে হোল নিজেকে, মেয়েটাকে চিনি না ওকে শুনব কি
করে?
বিদিশা জিজ্ঞেস করলো, ‘গৌতম কটায় ট্রেন?’
আমি রিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, রিয়া অন্যদিকে। আমি বিদিশার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ওই তো ৯/২৫।‘
বিদিশাটা একটা যাতা, বলে বসল, ‘আরে রিয়া আমাদের সাথেই যাচ্ছে। দেখবে আরও ভালো করে। এখন ওইভাবে দুবে যেও না। আমি আছি এখানে।‘
আমার যেন মুখ দেখাবার জায়গা রইল না। ওইরকমভাবে বলে নাকি কেউ, তাও জাস্ট যার সাথে পরিচয় হয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি বললাম, ‘কি বলছ কি তুমি? আমি
বলতেই যাচ্ছিলাম চলো যাওয়া যাক। ট্রেন লেগে গেছে।‘
সবাই এগিয়ে চললাম। বিদিশা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো ঠোঁটে মুচকি একটা হাসি রেখে। আমার হাসা ছাড়া আর কোন কিছু করার নেই তাই আমি চললাম
ওদের সাথে। ওরা সামনে আমি পিছনে। এবার আমি আরও পরিস্কার বিদিশা আর রিয়ার পাছার অবয়ব দেখতে পেলাম। রিয়ার পাছা জিন্সের উপর দিয়ে একদম
গোলাকার, দেহ থেকে ঠেলে বেরিয়ে আছে। টাইট জিন্স যেন ফেটে যাবে। আর বিদিশার পাছা টপের নিচ দিয়ে যতটা দেখা যাচ্ছে তাতে হৃদয়ে তরঙ্গ তুলছে। চিত্ত আমার
সাথে হাঁটছে।
একসময় আমরা ট্রেনের কাছে চলে এলাম। ১ম এসি বগিতে ঢুকলাম। আটেন্ডান্ট দাঁড়িয়ে ছিল। জিজ্ঞেস করাতে বলে দিলো আমাদের কোন কুপে পড়েছে। সি কুপে
ঢুকলাম। চিত্ত বলে উঠলো, ‘অ্যাই লা, কি ঠাণ্ডা গো এইখানটা।‘
রিয়া বলল, ‘এসি চলছে না। তাই।‘
আমি আমার ব্যাগ, ওদের ব্যাগ সব জায়গায় রেখে দিলাম। ওরা দাঁড়িয়ে রইল যতক্ষণ না আমার ঠিকভাবে রাখা হয়। উবু হতে গিয়ে কারো সাথে আমার পাছা ঠেকল,
আমি পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখি রিয়া সরে যাচ্ছে, ওর সাথেই লেগেছে। আমি ‘সরি’ বলে আবার ব্যাগগুলো রাখতে লাগলাম। সব রাখা হয়ে গেলে সোজা হয়ে
বললাম, ‘নাও এবার বস।‘
বিদিশা একটা জানলার ধারে বসতে চিত্ত গিয়ে টুক করে বিদিশার পাশে বসে পড়লো। আমি সেটা দেখে বললাম, ‘এখানেও তোর বৌদির সাথে চিপকে থাকবি নাকি?’
চিত্ত জানলা দিয়ে তাকাতে তাকাতে বলল, ‘কেন তুমি বসতে নাকি?’
বিদিশা হেসে বলল, ‘উহু বাবা ও কথাতেও খুব চালাক হয়েছে। ভেবে শুনে কথা বোলো।‘
আমি বললাম, ‘হবে না কেন তোমারি তো চেলা।‘ আমি সরে গিয়ে রিয়াকে আরেকটা জানলা দিয়ে আমি ওর পাশে বসলাম। রিয়া বসে আমাকে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’
জানালো।
আমার দিকে তাকাতে আমি জানার জন্য জিজ্ঞেস করলাম, ‘তো রিয়া আপনি চাকরি করেন?’
রিয়া কিছু বলার আগে বিদিশা বলে উঠলো, ‘আপনি কিগো, তুমি বোলো। ও আমার থেকে ছোট আর তোমার থেকে তো অনেক।‘
আমি বোকা হেসে বললাম, ‘আরে প্রথম আলাপে তুমি বলা যায় নাকি?’
রিয়া বলল, ‘গৌতম প্লিস নো ফর্মালিটি। আমরা বন্ধু। তুমিটাই চলে ভালো বন্ধুদের সাথে।‘ বলে রিয়া আমার থাইয়ে হাত রাখল।
মেয়েগুলো যেন আমাকে অপ্রস্তুতে ফেলার জন্য লেগে রয়েছে। আমি বিদিশাকে বললাম, ‘হ্যাঁ তুমি তখন বললে যে রিয়া তোমার সারপ্রাইস। রিয়া আসাই কি এক
সারপ্রাইস?’
বিদিশা কিছু বলল না জাস্ট হাসল। কিন্তু মনে হোল ওই হাসির আড়ালে কোন রহস্য আছে। কি সেটা, কখন জানা যাবে। অপেক্ষা তো করতেই হবে।
রিয়া বলল, ‘আমি দিদির কাছে তোমার সব কথা শুনেছি। তুমি ওর খুব ভাল বন্ধু, ওর জন্য তুমি অনেক খেয়াল করো। তোমার নিজের বউ আছে। বউদিও এখন বন্ধু
যোগার করে নিয়েছে।‘
আমি হেসে বললাম, ‘বাবা, আমাকে তো একদম খুলে দিয়েছ রিয়ার কাছে বিদিশা। আর বেশি কিছু বলোনি তো।‘
রিয়া আর বিদিশা দুজনেই হো হো করে হেসে উঠলো। আমি আর চিত্ত ওদের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। আমার হঠাৎ মনে হোল খাবার আনা হয়নি। আমি বিদিশাকে বললাম, এইরে খুব ভুল হয়ে গেল একটা যে।‘
বিদিশা জিজ্ঞেস করলো, ‘কি হোল? কিছু ভুলে গেছ নাকি?’
আমি জবাব দিলাম, ‘হ্যাঁ, খাবারের কথা মনে নেই। খাবার যে আনা হয় নি।‘
রিয়া বলল, ‘আরে ও নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমরা মেয়েরা আছি। প্লাজা থেকে কিনে নিয়েছি। খাবার জল সব।‘
যাক বাবা নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। ইতিমধ্যে চেকার এসে আমাদের টিকিট চেক করে গেল। যাবার সময় রিয়ার দিকে খুব গভীর নজর দিয়ে গেল খাস করে ওর বুকের দিকে।
বলে গেল, ‘আপনারা প্লিস দরজা দিয়ে রাখবেন। যদি কিছু দরকার হয় তাহলে বেল টিপবেন।‘
আমি বললাম, ‘চোখ দিয়ে যেন গিলছিল। কি নজর ব্যাটার।‘
রিয়া হেসে উঠলো, বলল, ‘আরে আমি এই ড্রেস পরে আছি ও একটু দেখবে না। ওতেই তো ওর আনন্দ। ভাবতে থাকবে মেয়েটার বুক সত্যি দেখার মতো।‘
বাপরে ভীষণ খোলা কথাবার্তা তো মেয়েটার। খুশি হলাম ট্যুরটা ভালই হবে।
বিদিশা প্রশ্ন করলো, ‘গৌতম কখন আমরা পৌঁছবো?’
আমি উত্তর দিলাম, ‘এটা পৌঁছাবার টাইম সকাল ৭/৩০। কিন্তু এটা পৌঁছতে প্রায় সকাল ১০, ১০/৩০ করে দেয়। কোনদিন ঠিক সময়ে যায় নি এই ট্রেন। কারন আছে
ওড়িশায় ঢুকে এটা সিঙ্গেল লাইন হয়ে যায় তাই।‘
রিয়া বলে উঠলো, ‘বাপরে ১০ ১০/৩০ হলে এইগুলো পরে বসে থাকার কোন মানে হয় না। দিদি কি বোলো ড্রেসগুলো ছেড়ে নিলেই তো হয়।‘
বিদিশা বলল, ‘হ্যাঁ আমিও তাই বলতে যাচ্ছিলাম। ড্রেসগুলো ছেড়ে নিই কি বোলো গৌতম?’
আমি জবাব দিলাম, ‘তোমরা যদি আনকমফরট ফিল করো তাহলে তাই করো।‘
রিয়া বলল, ‘দিদি তুই বার করবি না আমি?’
বিদিশা বলল, ‘আমিই করি। তুই পারবি না। কোথায় কি রেখেছি তুই জানবি না। গৌতম ওই নীল ব্যাগটা একটু বার করে দাও না।‘
আমি ঝুঁকে দেখলাম ব্যাগটা রিয়ার পা যেখানে আছে সেখানে রাখা। আমি টানতে গিয়ে দেখলাম রিয়ার পায়ে লাগবে। আমি রিয়ার পা একহাতে তুলে ধরলাম। রিয়া কিছু
বলল না, আমি টেনে ব্যাগটা বার করে আবার পাটা যথাস্থানে নামিয়ে রাখলাম। পায়ে হাত দিয়ে মনে হোল পাটা সুডৌল। নখে খুব সুন্দর করে নেলপালিশ লাগানো। সরু
ফিতের চটি। রঙটা ফর্সা। কালো স্ট্রাপের চটিতে পাটা খুব সুন্দর মানিয়েছে।
বিদিশা চেন টেনে খুলে ফেলল ব্যাগটা। তারপর ভিতরে হাত গলিয়ে রিয়াকে জিজ্ঞেস করলো, ‘কি পরবি?’
রিয়া ওর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘দে যেটা ইচ্ছে। তুইও তো পরবি। তুই যেটা পরবি তাই দে।‘
বিদিশা বলল, ‘আমি তো শর্ট পরব।তুইও কি তাই?’
রিয়া বলল, ‘দে তাই।‘
কিছুক্ষণ ঘাঁটাঘাঁটি করার পর বিদিশা দুটো শর্ট প্যান্ট বার করলো আর একটা গোলাপি এবং একটা নীল রঙের টপ বার করলো। টপগুলো গেঞ্জি কাপরের, দেখেই খুব
পাতলা মনে হোল। বিদিশা বার করে চিত্তকে দিয়ে বলল, ‘ধর এগুলো।‘ তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি কি এই পরে থাকবে না চেঞ্জ করবে?’
আমি উত্তর দিলাম, ‘তোমরা যখন করছ আমি করে নিই। এই যাত্রায় পৃথক ফল কেন হবে আবার।‘
বিদিশা বলল, ‘দাও তোমার ব্যাগ, বার করে দিই।‘
যদি বলি আমি বার করে নেবো বিদিশা শুনবে না। তাই ব্যাগটা টেনে বার করে দিলাম।
বিদিশা জিজ্ঞেস করলো, ‘উপরেই রাখা তো?’
আমি উত্তর দিলাম, ‘হ্যাঁ উপরেই রাখা।‘
বিদিশা খুঁজে একটা ঢিলে শর্ট বার করে দিলো আরেকটা লুস গলাবন্ধ গেঞ্জি।
চিত্তর ড্রেস বার করলো বিদিশা। চিত্তর হাতে দিয়ে বলল, ‘নে চেঞ্জ করে নে।‘
চিত্ত ড্রেস হাতে নিয়ে বলল, ‘এখানেই চেঞ্জ করবো?’
বিদিশা বলল, ‘বাবা বাবুর কি লজ্জা। হ্যাঁ এখানেই চেঞ্জ কর।‘
চিত্ত প্যান্টে হাত দিয়ে বলল, ‘তোমরা অন্যদিকে তাকাও। আমি প্যান্ট খুলবো।‘
আমরা হেসে অন্যদিকে তাকালাম। কিছুক্ষণ পরে চিত্ত বলল, ‘আমার হয়ে গেছে।‘
মুখ ঘুরিয়ে চিত্তকে দেখলাম ও শর্ট আর গেঞ্জি পরে দাঁড়িয়ে আছে। পড়া জামাগুলো গোছাতে যেতে বিদিশা বলল, ‘রাখ ওগুলো। আমি গুছিয়ে দেবো।‘
চিত্ত বসে পড়লো সিটে। মেয়েরা আমার দিকে তাকাতে বুঝলাম এবার আমার পালা।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। ঠিক করে নিলাম ওরা দেখুক আর নাই দেখুক আমি কিছু না বলেই ড্রেস ছাড়বো। কিছু বললেই কেস খেয়ে যাবো বিদিশার কাছে। আমি একটু
সরে গিয়ে প্যান্টটা খুলে নিলাম। উপরের টি শার্ট। আমি শুধু খালি গায়ে জাঙ্গিয়া পরে দাঁড়িয়ে। প্রথমে গেঞ্জিটা পরে নিলাম। তারপর জাঙ্গিয়াটা টেনে খুলে নিলাম। শর্ট
প্যান্টটা পায়ে গলিয়ে নিলাম। কিন্তু কপালে দুঃখ থাকলে সব কিছু হয়। প্যান্টের ফোল্ডে গেল পা আটকে। কিছুতেই টেনে তুলতে পারলাম না প্যান্টটা উপরে, না পারলাম
নিজের ব্যাল্যান্স ঠিক রাখতে। একপায়ে নাচতে নাচতে ঠোকা খেলাম বাঙ্কে। ওরা সব ঘুরে আমার দিকে তাকাল আর যা দেখবার দেখে নিলো।
বিদিশা বলল, ‘আরে ওরকমভাবে নাচছ কেন? কি হোল?’
আমি অপ্রস্তুতের মতো বললাম, আরে পা আটকে গেছে ফোল্ডে।‘
আর সবাই ঠিক আছে কিন্তু সামনে রিয়া। রিয়াকে বলতে শুনলাম, ‘ইম্প্রেসিভ।‘
চিত্ত খুব হাসছে। আমি ওই অবস্থায় বললাম, ‘এই চিত্ত একদম হাসবি না।‘
চিত্ত তবু হাসতে থাকলো মুখে হাত দিয়ে। বিদিশা উঠে এলো, সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘নাও আমাকে ধরে ব্যাল্যান্স ঠিক করো।‘
আমি বিদিশার কাঁধে হাত দিয়ে ব্যাল্যান্স ঠিক করলাম। বিদিশা হাত দিয়ে ফোল্ড থেকে পাটা ছাড়িয়ে দিয়ে তারপর প্যান্টটা তুলে দিলো উপরে। বলল, ‘বয়স হয়েছে