Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.06 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery গুণধর শ্বশুর by কথকদা
#52
দুদিন ধরে সি.এম ভিজিটের ব্যপারে ব্যস্ত থাকায় চৌবে সি.আই.ডি অফিসার রজতকে কোন সময় দিতে পারে না, আজ সময় পেতেই চৌবে রজতের অফিসে ফোন লাগায়,
-“স্যার, দুদিন ব্যস্ত থাকায় আপনাকে একদম সময় দিতে পারিনি। স্যার, এই দুদিনে কেসটার কোন ডেভেলপমেন্ট হয়েছে?”
-"হ্যাঁ, কিছুটা হয়েছে। যাইহোক, চৌবেজি, আমি ভাবছি দেরি না করে কাল সকালেই চম্পাদেবির মা বাবার সঙ্গে দেখা করব। আপনি কাল যেতে পারবেন তো?”
ওপারে চৌবের গলাটা একটু কেমন শোনাল, অন্যরকম,
-"সে ঠিক আছে, কী ব্যাপার বলুন তো স্যার। আপনার সঙ্গে তো পরশু ফোনে কথা হল, ঐ মন্দিরের মেয়েটির কথা নিয়ে। তারপরে আর কি কিছু হয়েছে? চম্পাদেবির মা বাবার সঙ্গে দেখা করাটা কি খুব জরুরী।"
-"আমি গতকাল মঙ্গলের সাথে একজন মিসেস কাপুরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আপনাকে বললাম না সেদিন চম্পার এক প্রতিবেশীর খোঁজ পেয়েছি যার সাথে চম্পার মার বন্ধুত্ব ছিল।"
-"হ্যাঁ বলেছিলেন বটে, তবে দুদিন খুব ব্যস্ত থাকায় বেশী গুরুত্ব দিতে পারি নি, সরি স্যার?"
-"আরে না, আমিও তো প্রথমে তেমন গুরুত্ব দিইনি, তাই সেভাবে বলিনি আপনাকে। মঙ্গল বলেছিল ভদ্রমহিলা থানায় গিয়েছিলেন, কিন্তু আপনার সেকেন্ড অফিসার ওঁকে পাত্তা দেননি, অথচ উনি এখানকার খুব শ্রদ্ধেয় একজন ব্যক্তিত্ব, প্রাক্তন কলেজটীচার। আমি ভেবেছিলাম চম্পার মা বাবার কাছ থেকে তো তেমন কিছু জানা জায়নি তাই এনার কাছেই ওদের বাড়ীর দিক সম্বন্ধে একটু খবর যদি পাই।"
-"তা উনি কী বললেন স্যার? নতুন কিছু, দরকারী খবর?"
-"ফোনে বলবনা চৌবেজী, বুঝিয়ে বলা যাবেনা সবকথা। আজ বিকালে আপনি আমার এখানে আসুন তারপর প্রোগ্রাম ঠিক করা যাবে। তবে একটা কথা, চম্পার বাবা মাকে কোনোরকম আগে থেকে খবর দেবেননা বা ফোন করবেন না, আমরা হঠাৎ করে গিয়ে পড়ব। হ্যাঁ, আর একটা কাজ আপনাকে করে দিতে হবে, চৌবেজি।”
-“কি কাজ, স্যার।”
-“আপনার থানায় আজ থেকে ঠিক আঠার বছর আগে সুলেখাদেবি নামে এক মহিলার মিসিং ডায়রি হয়েছিল, সেই ফাইলটা একটু খুঁজে নিয়ে আসতে হবে।”
-“আঠার বছর আগের ফাইল? দেখি পাই নাকি? কিন্তু এই সুলেখাদেবি কে স্যার?
-“এই মহিলাও নাকি একইভাবে মন্দিরের সামনে থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। ফাইলটা যেমন করেই হোক খুঁজে আনতে হবে চৌবেজি, ফাইলটা খুবই দরকারি। ঠিক আছে চৌবেজি বিকেলে দেখা হচ্ছে।”
রজত ফোন রেখে দিল, এদিকে চৌবে পুরো হতবাক। চৌবে মনে মনে রজত স্যারের কথাগুলোই ভাবতে লাগল। কিছু গুরুতর ব্যাপারের হদিশ পাওয়া গেছে, রজত স্যারের মত শান্ত চুপচাপ লোকও বেশ উত্তেজিত হয়েছেন তা উনি যতই গলায় স্থির ভাব ফোটানোর চেষ্টা করুন না কেন।

চৌবেজীর সঙ্গে ফোনে কথা বলার কিছুক্ষন পরে রজতের কাছে একটা ফোন আসে।
-"হ্যালো।"
-"হ্যাঁ, আমি কুমুদিনি রাইস মিলের মালিক জয়কৃষ্ণ বলছি।"
-“হ্যাঁ, অমি সি.আই.ডি অফিসার রজত বলছি। কী ব্যাপার, বলুন?”
-"আপনার একটু সাহায্য চাই।"
-“বলুন কীরকম সাহায্য, আমি চেষ্টা করব?”
জয়কৃষ্ণ প্রথমে চুপ থাকে, তারপর জিজ্ঞেস করে,
-“নিখোঁজ চম্পার সম্পর্কে কথা বলতে চাই। আপনার সাথে দেখা করা যাবে?”
রজত একটু ভাবে,
-“কখন? কোথায়?”
-“কাল সন্ধ্যায় দেখা করলে আপনার অসুবিধা হবে?”
-"ঠিক আছে, আপনি নাহয় কাল সন্ধ্যেয় আমার বাড়িতে চলে আসুন। মেট্রোতেও আসতে পারেন, স্টেশন থেকে রিক্সা করে মিনিট পাঁচেক লাগবে। অথবা সিটি ক্যাব নিয়ে চলে আসুন। আমি ঠিকানাটা বলে দিচ্ছি, লিখে নিন।"
ফোন রাখার পরে রজত মনে মনে জয়কৃষ্ণ নামটা আওড়াতে থাকে। হঠাৎ মিসেস কাপুরের মুখটা রজতের মনে ভেসে ওঠে। এটা ভেবে রজতের আফসোস হয় যে ফোনে জয়কৃষ্ণের আরও ডিটেলস নেওয়া উচিত ছিল তার। এখন কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

পরেরদিন সকালে রজত ও চৌবে গেট ঠেলে ঢুকতেই গ্যারাজের পাশের ঘরের জানালায় একজোড়া চোখ দেখা গেল। ওরা কিছু না বলে বাড়ির মেন গেটের দিকে হাঁটা দিল, ঘরের ভেতরের মানুষটি বাইরে বেরিয়ে এল।
-"কাকে চাই, কোথায় যাচ্ছেন?" বয়স্ক লোকটি এককালে বেশ লম্বাই ছিল, এখন বয়সের ভারে ইষৎ নুয়ে আছে তবে এমনিতে বেশ সবল, পরনে খাকি বারমুডা আর একটা ময়লা কুর্তা। লোকটির মুখ দেখে রজতের মনে হল এ উত্তর ভারতের লোক।
চৌবে পুলিশী চালে উত্তর দিল,
-"আমি থানা থেকে আসছি, মি: শিশিরের সাথে দরকার আছে।"
এই প্রথম রজত একজনকে দেখল, একটি সাধারণ লোক যে পুলিশের নামে ঘাবড়াল না, উল্টে বেশ ডাঁটেই বলল,
-"আপনি ফোন করে এসেছেন? আমাকে তো ওরা বলেনি কেউ আসবে বলে। আপনি কোথাকার পুলিশ?" শেষ কথাটা বেশ একটু তাচ্ছিল্যের সাথেই বলল রজতকে আপদমস্তক দেখতে দেখতে। চৌবে প্লেন ড্রেসে আছে, প্রশ্ন আসারই কথা কিন্তু সেটা এর মত কারুর কাছ থেকে আসবে রজত বা চৌবে কেউই আশা করেনি।
চৌবে অবশ্য জাত পুলিশ, কোনো কিছুতেই বিচলিত না হয়ে নিজের হাতে কনট্রোল তুলে নিতে ভালোই পারে। সোজা উত্তর না দিয়ে, গর্জন করে বলল,
-"তুই কে, এখানে কী করিস? বাড়িতে পুলিশ কেন আসে, বাড়ির মালকিন নিখোঁজ হলে পুলিশ আসবে না তো কী ব্যান্ড পার্টি আসবে, হাঁ? পুলিশকে খবর দিয়ে চিঠি লিখে আসতে হবে, তাই না? তা এখনি দিচ্ছি খবর, যা গিয়ে খবর দে বাবুকে। তারপরে তোদের সবার খবর নেব আমি।"
রজত তো চৌবের বুলি শুনে অবাক, লোকটার কিন্তু খুব কিছু হেলদোল নেই, সেও জবাবে সমান তেজে কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় বাড়ির মেন গেট খুলে একজন লোক এসে দাঁড়ায়,
-"কী হয়েছে বাবুরাম? কারা এসেছে?"
বাবুরামের দৃষ্টি অনুসরণ করে ভদ্রলোকের চোখ গেল চৌবের দিকে, গেট খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করে,
-"একী, আপনারা? কী ব্যাপার?"
চৌবে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,
-"আপনার সঙ্গে আর ম্যাডামের সঙ্গে একটু কথা ছিল, চলুন ভেতরে গিয়ে বলছি।"
রজত চৌবেকে অনুসরণ করতে করতে বাবুরামের দিকে তাকায়, সে তখন তার ঘরে ঢুকছে, বাবুরাম কী একাই থাকে? লোকটাকে বেশ জাঁদরেল মনে হল।
চম্পার বাবা শিশিরের মুখের ভাব বেশ অপ্রসন্ন, বোঝা গেল সে একেবারেই খুশী হয়নি ওদের দেখে, বসতেও বলল না। চৌবে অবশ্য নিজেই বসে পড়ল চেয়ারে, দেখাদেখি রজতও। শিশির চৌবের দিকে তাকিয়ে বেশ কড়াভাবে বলে,
-"আমার স্ত্রী খুবই আপসেট, বিছানা থেকে উঠছেনা। ওর সঙ্গে কথা বলা কি খুব দরকার? আমরা তো যা বলার আপনাদের বলেছি।"
চৌবেও জবাবে গলাটাকে মধুর কঠিন করে বলে,
-"দরকার না হলে কি আর এসময় এসে আপনাদের বিরক্ত করি সাব? আপনি যা বলেছেন তারপরেও কেসটার কিছু ডেভেলপমেন্ট হয়েছে সেসব নিয়ে আমরা কথা বলতে এসেছি। তা ম্যাডাম অসুস্থ হলে আপনার যদি আপত্তি না থাকে আমরা ঘরে গিয়ে কথা বলতে পারি ওনার সঙ্গে।"
টোটকায় কাজ হল, ওর কথা শুনে শিশিরের তেরিয়া ভাবটা কমল মনে হল, একটু বিভ্রান্ত হয়ে তাড়াতাড়ি ঘরের দিকে যেতে যেতে বলে,
-"দেখি জিজ্ঞেস করে, যদি উঠে আসতে পারে একবার।"



চৌবে রজতের দিকে তাকিয়ে হাসে। কয়েক সেকেন্ডেই ফিরে এসে শিশির জানায় ওর স্ত্রী শুভা আসছে তৈরী হয়ে। কেউ কোনো কথা বলে না, সবাই অপেক্ষায়। শুভা এসে ওদের দুজনকে নমস্কার করে একটা চেয়ার টেনে বসে। মুখটা ঈষৎ বিষন্ন দেখালেও এমনি চলাফেরা বা চেহারায় অসুস্থতা বা শোকের তেমন লক্ষণ নেই। চৌবে একবার রজতের দিকে তাকিয়ে যেন সম্মতি নিয়ে শুরু করল,
-"সরি, আপনি অসুস্থ তাও আপনাদের বিরক্ত করতে হচ্ছে। আসলে আমরা তদন্তের মাঝে জানতে পারি নিরুদ্দেশ হবার কিছুদিন আগে চম্পাদেবির সাথে ওনার এক কাজিনের যোগাযোগ হয়েছিল। এই কাজিনের সঙ্গে আমরা কথা বলতে চাই। ওর যোগাযোগের ঠিকানা ফোন নাম্বারটা চাই।"
শিশির ও শুভা দুজনেই পরস্পরের দিকে দেখে একবার বিস্ময়ে। তারপর শুভা বলে ওঠে,
-" কাজিন? চম্পার কোনো কাজিন নেই তো।" তারপরেই আবার কি ভেবে বলে ওঠে,-"অবশ্য আমার বড় ভাই থাকে বিদেশে, ওর স্ত্রী বিদেশী, ওদের এক মেয়ে আছে। কিন্তু তাদের সাথে চম্পার তেমন কোনো যোগাযোগ ছিলনা, আমারই যোগাযোগ খুব অল্প। ভাই আসে দেশে কাজেকম্মে, ওর বৌ মেয়ে তো আসেও না।"
রজত এবার শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
-"আপনার মেয়ের এই কাজিন একজন পুরুষ। কে হতে পারে বলে মনে হয় আপনার? আপনার ওদিকের কোনো আত্মীয়স্বজন?"
শিশির একবার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে নেয়, তারপর বলে,
-"সেরকম কোনো কাজিন নেই চম্পার। আমি এক ছেলে, আমার বাবাও এক ছেলে ছিলেন। আমার ওদিকে আত্মীয়স্বজন, আমার মায়ের তরফের কিছু আছে, তাদের মধ্যে কেউ চম্পার বয়সী বা কাছাকাছি বয়সের নেই, সবাই হয় অনেক বড় বা বেশ ছোট। চম্পাও ওদিকের সবাইকে সেরকম চেনেনা, ঘনিষ্ঠ হওয়া তো দুরের কথা। এরকম কোনো কাজিনের কথা আমরা জানিনা, আপনাদের কিছু ভুল হচ্ছে।"
শুভাও ঘাড় নেড়ে সায় দিল স্বামীর কথায়।
এবার রজত মুখ খোলে, ধীরে, শান্তভাবে, শিশিরের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে,
-"আপনার কেউ নেই, আপনার স্ত্রীরও কেউ ছিলনা, ঠিক জানেন আপনি?"
শিশির একটু বিরক্ত হয়ে বলে,
-"আগেই শুনলেন তো, শুভার তরফেও সেরকম কেউ নেই।"
-"তাতো শুনলাম, কিন্তু আমি যে আপনার প্রথম স্ত্রী অর্থাৎ চম্পার মায়ের তরফের কথা জিজ্ঞেস করছি মি: শিশির।"
শিশির আর শুভা দুজনেই এ কথা শুনে ভীষণ চমকে কেমন একটা হয়ে গেল, মুখ দেখে মনে হল যেন কোনো বিস্ফোরণ ঘটেছে বা মাথায় বাজ পড়েছে। রজত আর চৌবে চুপ করে একদৃষ্টে ওদের প্রতিক্রিয়া দেখতে থাকে। শুভাই প্রথম সামলে নিয়ে মুখ খোলে, চোখটোখ তুলে একখানা নাটকীয় ভঙ্গী করে,
-"না, আমিই চম্পার মা। চম্পা আমারই মেয়ে। আপনারা এসব কী আজেবাজে কথা বলছেন, কেন এসেছেন আপনারা, কী মতলবে?" বলে আঁচলে মুখ ঢেকে কান্নার ভাব করে বসে রইল।
শিশিরের মুখটা প্রথমে ছাইয়ের মত ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল, স্ত্রীর কথা শুনে সম্বিত ফিরে পেয়ে একেবারে বেগুনি হয়ে উঠল। চেয়ার থেকে উঠে শুভার পাশে গিয়ে তাকে সান্ত্বনা দিতে দিতে চৌবের দিকে চেয়ে চেঁচিয়ে বলে,
-"এসব কী আজেবাজে কথা বলছেন? চম্পা আমার আর শুভার মেয়ে। আপনারা খোঁজ নিন এখানে, সবাই সাক্ষী দেবে। এসব আজেবাজে কাহিনী বানিয়ে আপনারা আমাদের ফাঁসাতে এসেছেন?"
রজতও এবার নিজের মূর্তি ধরল। শিশিরের থেকেও জোর গলায় বলে,
-"আপনারা শান্ত হয়ে বসুন। পুলিশের সঙ্গে বেশী চালাকি করার চেষ্টা করবেন না, লাভ হবেনা। আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমরা সব খবর নিয়েই এসেছি।"
শুভার মুখের আঁচল সরে গেছে, চোখে জলের জায়গায় ভয়ের ছায়া। শিশির উত্তেজিত হয়ে আবার কী বলতে যাবে, রজত হাত তুলে থামিয়ে দেয়,
-"মি: শিশির, চম্পাদেবি আপনার প্রথমা স্ত্রীর মেয়ে, ইনি আপনার দ্বিতীয়া স্ত্রী, একথাটা আপনি আগে বলেননি কেন?”
শুভা চুপ করে আছে, শিশির এখনও তড়পাচ্ছে,
-"সেটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। চম্পাকে শুভা জন্ম না দিতে পারে কিন্তু ঐ চম্পার মা, ছোট থেকে ঐ ওকে এতবড় করেছে, আর আজ মেয়ের নিখোঁজে কিরকম আপসেট সেটা তো আপনারা দেখছেনই! আমার প্রথম স্ত্রী সুলেখা যখন মারা যায় তখন চম্পা দু বছরের, চম্পা শুভাকেই মা বলে জেনেছে চিরদিন। আমরা তাকেও কখনো কিছু বলিনি এ নিয়ে। কিন্তু তার সঙ্গে এ কেসের কী সম্বন্ধ?"

এবার রজত আর চুপ থাকতে পারেনা,
-"আপনার প্রথম স্ত্রী সুলেখাদেবি মারা গেছিলেন, আপনি শিওর? উনি নিখোঁজ হয়ে যাননি তো?"
শিশির হতবাক, রজতের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন কিছু বলতেও ভুলে যায়। রজত বলে,
-"আপনি তো সেইসময় সবাইকে বলেছিলেন আপনার স্ত্রী মন্দিরের থেকে হারিয়ে গিয়েছিল, আর ফেরেনি। ঠিক আপনার মেয়ে চম্পার মত। ব্যাপারটা কী হয়েছিল আসলে বলুন তো মি: শিশির?"
শিশির এবার হাল ছেড়ে দিয়ে মাথা নীচু করে বসে পড়ে, কিছুই বলেনা। শুভারও মাথা নীচু, এদের দিকে তাকায়ও না, জড়ভরতের মত বসে থাকে একভাবে, নিস্পন্দ। রজত আবার বলে,
-"আমরা অপেক্ষা করছি, আপনি আমাদের আপনার স্ত্রীর কথা সব বলুন। কবে হয়েছিল, কোথায়, সব কিছু। আপনি না বললে যেভাবে আপনার প্রথম স্ত্রীর কথা জেনেছি, বাকীটুকুও জেনে নেব কোনো না কোনো ভাবে, তাই কিছু না লুকিয়ে সব বলুন।"
শিশির খুব যেন কষ্ট হচ্ছে এভাবে মাথাটা তুলে বলে,
-"আমরা তখন রিটা অ্যাপার্টমেন্ট এ থাকতাম। চম্পার তখন দু বছর বয়স। তাকে বাড়িতে আয়ার কাছে রেখে আমার স্ত্রী সুলেখা মন্দিরে গিয়েছিল বিকেলে, একাই যেত। অনেকসময় মন্দির থেকে হেঁটেই বাড়ি চলে আসত, কখনো আমি অফিস থেকে ফেরার পথে গাড়িতে তুলে নিয়ে আসতাম। সেদিন আমি বাড়ি এসে শুনি ও মন্দির থেকে ফেরেনি। তখন আমি আবার বেরিয়ে মন্দিরে খুঁজলাম, চতুর্দিকে খুঁজলাম, কোথাও পেলাম না। পরদিন লোক্যাল থানায় খবর দিলাম, তারাও খুঁজল অনেক। পাওয়া গেলনা।"
-"তাহলে উনি মারা গেছেন এমন কোনো প্রমাণ আপনার কাছে নেই?"
শিশির রজতয়ের এ প্রশ্নে ঘাড় নাড়ল,
-"তা নেই, তবে আর কী হবে? বেঁচে থাকলে তো খবর পেতাম।"
-"কিন্তু কীভাবে? কতদিন খোঁজাখুঁজি করা হয়েছিল? পুলিশ কিছুই বার করতে পারেনি?"
-"না, আমি তখন বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। আত্মীয়স্বজন কেউ নেই কাছে। শুভার দাদা আমার বন্ধু ছিল, সেই সময় ও খুব সাহায্য করেছিল। কিছুদিন পরে চম্পাকে সামলানোর জন্যে শুভাকে আমি বিয়ে করি। পরে রিটা অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে শুভা আর আমি চম্পাকে নিয়ে আমাদের এই বাড়িতে চলে আসি। আজ এতদিন পরে আবার সব গোলমাল হয়ে গেল।"
-"চম্পা কিছুই জানত না এসব কথা?"
-"না, আমরা কেউ কিছু বলবনা ঠিক করেছিলাম, আমরা চাইনি ওর জীবনে এটা নিয়ে কোনো গোলযোগের সৃষ্টি হোক। এখানে নতুন জায়গা, সেখানে সবাই চম্পাকে শুভার কোলেই দেখেছে।"
রজত ভাবল সেই রিটা অ্যাপার্টমেন্টর মিসেস কাপুর সব জানত, চম্পার নিজের মা তার মেয়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবি ছিল। মিসেস কাপুরের কাছ থেকে জানা তথ্য সব মিলে যাচ্ছে।
চৌবে রজতের দিকে তাকালো, আর কী জিজ্ঞাস্য আছে। রজত শিশিরকেই জিজ্ঞেস করে,
-"তাহলে আপনার প্রথমা স্ত্রীর দিকেও চম্পার কোনো কাজিন নেই?"
-" সুলেখার এক ভাই ছিল বটে, কিন্তু তার ছেলেদের সঙ্গে আমাদের কোন যোগাযোগ ছিল না। আর চম্পা যখন সুলেখার কথাই জানত না তখন সেই কাজিনদের কথাই বা জানবে কী করে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগই বা হবে কোথায়!"
-"সুলেখাদেবির ভাই বাবা এরা খোঁজ করেনি, এখানে আসেনি?”
শিশির এবার একটু অসহিষ্ণু ভাব দেখায়,
-"এইসব পুরোনো কথা এখন উঠছে কেন? আমার মেয়ের নিখোঁজের কিনারা না করে আপনারা আঠার বছর আগে কী ঘটেছিল তা নিয়ে এত পড়ছেন কেন?"
এবার চৌবে বলে,
-"আমরা কী করছি না করছি সেটা তো আপনাকে বলা যাবেনা, আপনি শুধু আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিন ঠিকঠাক। আপনার প্রথমা স্ত্রীর বাবা ভাই এরা এসেছিলেন?"
-সুলেখার বিয়ের আগেই ওর মা মারা গিয়েছিল, আর বিয়ের কয়েক মাস পরেই ওর বাবা মারা যায়। ভাইয়ের সঙ্গে ওর ভাল সম্পর্ক ছিল না। শুধু এক ভাইপোর সাথে সুলেখার ভাল সম্পর্ক ছিল। সেই ভাইপোকেই চিঠি দিয়ে সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসিনী হয়ে যাবার কথা জানিয়ে ছিল। সেই ভাইপো এই চিঠি পাবার পরে একবার এসেছিল পিসির খোঁজ নিতে, সেখান থেকেই আমি জানতে পারি আমার স্ত্রির সন্ন্যাসিনী হয়ে যাবার কথা। এরপরে ওরাও কেউ আমার সাথে যোগাযোগ রাখেনি আর আমিও ওদের কারো সাথে যোগাযোগ রাখিনি।"
রজত জিজ্ঞেস করে,
-"ওদের বাড়ি কোথায় তা তো আপনার জানা আছে নিশ্চয়ই, তাদের ঠিকানাটা?"
শিশির বেশ অনিচ্ছার সাথে বলে,
-"সুলেখাদের পৈত্রিক বাড়িতে এখন কেউ নেই, সুলেখার ভাই বেশ কিছুদিন আগে মারা গেছেন বলে শুনেছি, সুলেখাদের পৈত্রিক বাড়ি বেচে দিয়ে সুলেখার ভাইপোরা এখন কোথায় আছে তা আমি জানি না।"
রজত একটু গল্পের সুরে শিশির আর শুভা দুজনের দিকেই বলে,
-"আচ্ছা চম্পার নিখোঁজের পেছনে কী কারন থাকতে পারে বলে মনে হয় আপনাদের?"
শিশির আবার উত্তেজিত,
-"কয়েক মিনিটে চম্পা হারিয়ে গেল, এ সম্ভবই নয়। আমরা ভর দুপুরে মন্দির থেকে কাউকে তুলে নিয়ে যেতে কোনোদিন শুনিনি। কারন জানিনা, সে আপনারা খুঁজে বার করুন।"
রজত ওর উত্তেজনা দেখে মৃদু হেসে শুভাকে বলে,
-"আচ্ছা, চম্পার নিজের মায়ের গয়নাগাঁটি তো সব আপনার কাছে, তাই না?"
এতক্ষনে শুভার কথা ফোটে, বেশ একটু তীব্র স্বরে বলে,
-"হ্যাঁ, ওর লকার নেওয়া হয়নি তাই আমার লকারেই সব আছে। মেয়েই রইলনা, তার গয়না নিয়ে আমরা কী করব!"
রজত পাত্তা দিলনা,-"আচ্ছা, চম্পার নামে কোনো সম্পত্তি ছিলনা?"
স্বামী স্ত্রীর মুখ আবার ছাই পানা। ওদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে চলতে চলতে রজত অজান্তেই বোধহয় কোনো ব্যথার জায়গায় হাত দিয়ে দিয়েছে। চৌবেও ওদের অবস্থা দেখে কৌতূহলী, রজত প্রশ্ন করে উন্মুখ ভাবে তাকিয়ে আছে। শিশির যেন বুঝে নেয় যে জবাব না দিলে রেহাই নেই, তাই আবার বেশ অনিচ্ছাপূর্বক বলে,
-"চম্পা আমাদের একমাত্র সন্তান, আমাদের যা কিছু তার সবই তো চম্পাই পাবে।”
চৌবে বলে,
-"আপনারা আমাদের না বলে এখান থেকে যাবেন না। আমরা আরও কিছু জানার হলে ভবিষ্যতেও আসতে পারি।"
ওদের পায়ের আওয়াজেই বোধহয় বাবুরাম বেরিয়ে আসে তার বারান্দায়। তার দৃষ্টি বেশ রুক্ষ, বিশেষ করে চৌবের দিকে তো একেবারে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে। চৌবে অবশ্য খেয়াল করে না, আগে আগে এগিয়ে যায়। রজত শিশিরকে জিজ্ঞেস করে,
-"এই বাবুরাম আপনাদের এখানে কতদিন আছে? ওর তো বেশ বয়স হয়েছে, ও পারে আপনাদের বাড়ির দেখাশোনা করতে?"
-"ও আসলে আমাদের অনেক পুরনো আমলের লোক। গ্রামে ওর বাড়ি, পরিবার আছে, কিন্তু ও এখানে একাই থাকে। বাবুরাম এখন আমাদের বাড়ির সদস্যের মতই।"
রজত যেতে যেতে বাবুরামের কথা ভাবে, পুলিশকে ওর এত অপছ্ন্দ কেন! পুলিশের সঙ্গে ওর দুশমনী কী, তাদের ভয়ই বা করেনা কেন ও?
Like Reply


Messages In This Thread
RE: গুণধর শ্বশুর by কথকদা - by ronylol - 04-05-2019, 12:57 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)