Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
টিনার বাড়ি থেকে যে মন নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম, সেই মনে কিছুটা হলেও কালি লাগলো। মল্লিকদাকে ফোনে ধরলাম।
-কি বাপ কোথায় হাওয়া খাচ্ছ।
-বাইপাসে আছি, বাড়ির দিকে যাচ্ছি।
-বলো কি অভিপ্রায়।
-একটা সঠিক খবর দিতে পারবে।
-বলো।
-মিত্রা কোথায় জানো।
-ফোন করো পেয়ে যাবে।
-এর জন্য তোমায় ফোন করার দরকার আছে।
-ঠিক। এতটা তলিয়ে দেখিনি। দাঁড়াও দাদাকে জিজ্ঞাসা করি।
-আমি ফোন করে জানতে চাইছি, এটা বলার দরকার নেই, সেটা কি বলে দিতে হবে।
-একেবারেই না।
-কিছুক্ষণ ফোন ধরে রইলাম।
-শোন, তুই বেরিয়ে যাবার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বেরিয়ে গেছে, দাদাকে বলে গেছে, আজ রাতে আমাদের বাড়িতে যাবে না। কোথায় গেছে দাদা জিজ্ঞাসা করে নি।
-কার গাড়ি নিয়ে গেছে। ইসমাইল না রবীন।
-ইসমাইল তো অফিসে রয়েছে, রবীনকে নিয়ে গেছে।
-আচ্ছা।
মিত্রাকে ফোনে ধরার চেষ্টা করলাম, দেখলাম স্যুইচ অফ।
বড়মাকে ফোন করলাম।
-বলুন ছোটো সাহেব। বুঝলাম ছোটোমা ধরেছে।
-এই সম্বোধনে কবে থেকে ভূষিত হলাম।
-কেনো মিত্রা বললো।
-কখন।
-তা তিনটে সাড়ে তিনটে হবে।
-কি বললো।
-সে ওর কাছ থেকে জেনে নাও। তুই কখন আসছিস।
-ও কি আজ রাতে আসার কথা কিছু বলেছে।
-আজ ওর অনেক কাজ পরে গেছে আসতে পারবে না।
-বুঝেছি।
-কি।
-তুমি বুঝতে পারবে না। বড়মাকে একবার দাও।
-ধর।
-কি রে অনি।
-শোনো চেঁচামিচি করবে না। আমার অনেক জ্বালা। বুঝেছো।
-আবার কি হলো।
-সে অনেক কথা। কাল সকালে তোমায় গিয়ে বলবো।
-আসবি না।
-সুযোগ পাচ্ছি কোথায়।
-কি হয়েছে বল।
ব-ললাম তো কাল সকালে গিয়ে বলবো।
-সে কি রে আমি যে গাদা খানেক রান্না করছি।
-করো না, কাল সকালে ঠিক পৌঁছে যাবো।
-ওঃ তোকে নিয়ে মহা মুস্কিল।
-তোমরা নিজেরাই তো আমায় মুস্কিলে ফেললে।
-কেনো।
-আমাকে এ সবের মধ্যে জড়ালে কেনো।
চুপচাপ।
-খাচ্ছিল তাঁতী তাঁত বুনে কাল হলো তার হেলে গরু কিনে।
-হেলে গরু কে।
-তুমি জিজ্ঞাসা করছো।
-তুই উপমা দিলি আমি জিজ্ঞাসা করলেই দোষ।
-মিত্রা।
-তার আবার কি হলো।
-সে অনেক কথা।
-আমি তোদের ব্যাপার স্যাপার বুঝিনা বাপু।
-কাল বুঝবে। ট্রেনটার অনেক বগি, বুঝলে, ডি রেইলড হয়ে গেছে। লাইনে তুলতে একটু সময় লাগবে।
-তোর হেঁয়ালি আমি বুঝি না।
-ঠিক আছে কাল সকালে গিয়ে বোঝাবো।
-ঠিক আছে তাই হবে।
রবীনের ফোন নম্বর আমার কাছে নেই খুঁজে দেখলাম, ইসমাইলের ফোন নম্বরও নেই। মল্লিকদাকে আবার ফোন করলাম।
-দেখতো ধারে কাছে ইসমাইল আছে কিনা, থাকলে আমার ফোন নম্বরে ওকে একবার ফোন করতে বলো।
-আচ্ছা।
কিছুক্ষণের মধ্যে ইসমাইল ফোন করলো, বললাম তুমি রবীনের ফোন নম্বর জানো।
-হ্যাঁ দাদা জানি।
-দাও।
ও রবীনের ফোন নম্বর দিলো। আমি বললাম ঠিক আছে।
রবীনকে ফোনে ধরলাম। প্রথমে ও চিনতে পারে নি তারপর বলতেই বললো হ্যাঁ দাদা কি বলো।
-তুই কোথায়?
-পাক র্স্ট্রীটে।
-ম্যাডাম কোথায়?
-ক্লাবের ভেতরে।
-কখন এসেছিস?
-এই তো ঘন্টা খানেক আগে।
-দুপুরে বেরিয়ে কোথায় গিয়েছিলি?
চুপচাপ।
-কথা বলছিস না কেনো?
-ম্যাডাম বারণ করেছে।
-ঠিক আছে।
-না না বলছি।
-বল।
-প্রথমে গেলাম, নিউ মার্কেট, ওখান থেকে পেয়ারলেস ইন, তারপর এখানে।
-সত্যি কথা বলছিস?
-হ্যাঁ, অনিদা।
-ভেবে বল?
-মাঝে সাহেবের কাছে গেছিলাম।
-কে সাহেব?
-ম্যাডামের হাসবেন্ড।
-ও।
-পেয়ারলেস ইনে কে কে ছিলো?
-ম্যাডাম আর সাহেব ছিলো।
-সাহেব কি কোলকাতায়?
-তাহলে উনি কোথায় থাকবেন। উনি তো কলকাতাতেই থাকেন।
-কোথায় থাকে?
-কেনো আপনি জানেন না!
-আমি তোর মতোই। গ্রামের ছেলে, এতো খবর রেখে কাজ কি বলতো।
-না অনিদা আপনি গ্রামের হলে কি হবে, গিয়ে দেখলাম তো।
-কোথায় থাকে বললি না তো।
-সিঁথির ওখানে।
-তুই চিনিস?
-অনেকদিন আগে একবার গেছিলাম।
-কোথায় বলতো?
-গোপাল লাল ঠাকুর রোডে একটা মন্দিরের পাশে।
-সাহেবের এখানের চেম্বারটা কোথায়?
-রক্সি সিনেমার পাশে।
-ও। আর নার্সিং হোমটা?
-ওটা সাহেবের না।
-তাহলে!
-ওটা ম্যাডামের সঙ্গে, আর একজন আছেন, চিনি না।
-আজ কি সাহেব ম্যাডামের বাড়িতে যাবেন?
-না, না।
-কেন?
-ম্যাডামের সঙ্গে তো সাহেবের ডিভোর্স হয়ে গেছে।
-কবে!
-সে তো অনেক দিন।
-তাহলে যে ম্যাডাম গেছিলেন!
-তা বলতে পারবো না।
-আজ ম্যাডাম অনেকদিন পর ক্লাবে এলেন না?
-হ্যাঁ, প্রায় দেড় মাস।
-কি করে রে ক্লাবে।
-কি আর বলবো অনিদা তুমি তো সব জানো।
-এই দেখো, আমি জানলে তোকে জিজ্ঞাসা করবো
-তুমি ম্যাডামকে একটু বাঁচাও।
-আমি বাঁচাবার কে। আমি তোর ম্যাডামের কাছে কাজ করি, এই যা।
তু-মি ম্যাডামের সঙ্গে কলেজে পড়েছো।
-সে তো বহুদিন হয়ে গেছে। একটু দাঁড়া।
ট্যাক্সিটাকে রুবির কাছে ছেড়ে দিলাম।
-হ্যাঁ, বল।
-ম্যাডাম আজ বেহুঁস হয়ে ফিরবে।
-কেনো?
-তুমি জানো না এখানে আসে কেন মানুষ।
-খালি মদ খেতে!
-তা নয়তো কি। আজ আমার কপালে দুঃখ আছে।
-কেনো?
-ম্যাডাম বেহুঁস হয়ে ফিরবে।
-তুই কি করবি?
-আমি মাসিকে বলেছি থাকার জন্য।
-কেনো মাসি কি রাতে থাকে না?
-না ওরা সব রাতে চলে যায়।
-ম্যাডাম একা থাকে?
-হ্যাঁ।
-অতো বড় বাড়িতে একা!
-হ্যাঁ। তুমি জানতে না।
না।
-আমিতো বাইরে বাগানের ওই মালিদের কোয়ার্টারে থাকি।
-রাতে আর কে থাকে?
-দুজন মালি, দারোয়ান আর আমি।
-এইভাবে কতদিন আছিস?
-যেদিন থেকে আমি এলাম সেদিন থেকে
-তুই কত বছর আছিস?
-ছ’বছর।
-তোর ম্যাডামকে গাড়িতে কে তুলবে?
-এখানে বারের মেয়েরা আছে ওরা তুলে দেবে ধরে ধরে, বাড়িতে মাসি।
-ও।
-আজকে অফিসে কোনো গন্ডগোল হয়েছে?
-কি মিটিং ছিলো। সে তো তুমি ছিলে।
-দূর ওই মিটিংয়ে থাকে নাকি কেউ। আমি রাগ করে চলে এসেছি।
-সেই জন্যই ম্যাডাম তোমায় খুঁজছিলেন। আমাকেও বললেন তুই দেখেছিস। তুমি কোথায় অনিদা?
-আমি বাইপাসে বাস ধরবো বলে দাঁড়িয়ে আছি।
-তোমায় ম্যাডাম খুব ভালোবাসে।
-এটা আবার তোকে কে বললে।
-আমি জানি। না হলে তোমার কথায় আমাদের গ্রামে যায়।
-ঠিক আছে সাবধানে ম্যাডামকে বাড়ি নিয়ে যাস।
-আচ্ছা।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 23-12-2021, 07:36 PM



Users browsing this thread: