15-12-2021, 07:52 PM
(This post was last modified: 15-12-2021, 07:54 PM by ddey333. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
শখ !
সংগৃহীত !
"ছোটো পেঁয়াজটা কাট তো ,আমি ভাতটা বের আনি মিটসেলফ থেকে ।"- মালতি রান্নাঘর থেকে বাসনগুলো কলপাড়ে নিয়ে যেতে যেতে শুনলো বাড়ির বড়বৌ বলছে বাড়ির ছোটোবৌকে।
এতো বাড়িতে কাজ করে মালতি কিন্তু জায়েদের মধ্যে এতো মিল আগে কোথাও দেখেনি।এবাড়িতে রান্নাঘর আর কলপাড়ের মাঝে বিশাল হলঘর। সেই হলঘর অন্যদিন ফাঁকা ফাঁকা থাকলেও রবিবার বেশ জমজমাট। বার ভুলে গেলেও এই ঘরটা দেখে যে কেউ সহজে বার টা বলে দিতে পারবে আজকের ।
বাসন নিয়ে যাওয়ার সময় মালতি দেখলো হলঘরে একেকজন একেক দিকে ছড়িয়ে বসে আছে।বাড়ির ছেলেরা, বাচ্চারা, শশুর শাশুড়ি সবাই। আর সবার সামনে প্লেট।
ইচ্ছে করলেও মালতি তাকালো না। কিন্তু গন্ধে টের পাচ্ছে গরম গরম ফুলকো লুচি আছে সবার পাতে।
পা চালিয়ে হলঘর টুকু হেটে গেল মালতি । ঐটুকু যেতে গিয়ে লুচির গন্ধে খিদে পেয়ে গেল ওর।আজ এমনি বেরোনোর আগে কিচ্ছুটি মুখে দেয় নি। কি করে খাবে ছেলেটাও যে না খেয়ে বেরিয়ে গেল আজ,এরকমই একটা বড়োলোক বাড়িতে গাড়ি চালায় মালতির ছেলে, রবিবারও যেতে হয়!
প্রায় কুড়ি মিনিট লাগলো মালতির বাসন গুলো ধুতে। নেহাত মানুষ গুলো ভালো আর টাকাটাও অনেকখানি দেয়, নাহলে সত্যি এই বাড়ির এতগুলো লোকের কাজের খাটনি কম না।
মাজা বাসন গুলো নিয়ে হলঘরে ঢুকতেই দেখলো ঘর অনেকটা ফাঁকা।বোঝা গেল রবিবারের সকালে এই জমায়েত শুধু সকালের খাবারের জন্য। আবার দুপুরে হয়তো এক হবে সবাই।সেটাও খাবারের জন্যই । ঘর ফাঁকা বলেই হয়তো পুরো ঘর জুড়ে এখনো লুচির গন্ধ খেলে বেড়াচ্ছে। নাকটা একটু টেনে নিলো মালতি। কিছু কিছু জিনিস আছে যেগুলো নিজের কাছে করলে নিজের লজ্জা লাগে না, বরং আত্মতৃপ্তি হয়!
রান্নাঘরে ঢুকতেই মালতি অবাক হয়ে গেল বাড়ির দুই বৌকে দেখে। ওরা রান্নাঘরে লুকিয়ে বাসনে মুখ ঢুকিয়ে কি যেন খাচ্ছে।ওদের লুকিয়ে খাওয়া দেখে মালতি নিজেই যেন একটু অপ্রস্তুতে পড়লো। কি এমন খাচ্ছে যে এভাবে লুকিয়ে খেতে হবে! মনে মনে ভেবেই মাজা বাসনের ঝুড়িটা নামিয়ে রেখে মালতি বললো "তোমরা খেয়ে নাও তারপর রান্নাঘর মুছবো, আমি বাইরে দাঁড়াচ্ছি!"
ছোট বউ চোখ নাচিয়ে বললো "কিরে খাবি ?" মালতি খুব অবাক হয়ে বললো "কি এমন খাচ্ছ এতো খুশি দুজন?" মালতির কথা শুনে দুজনেই হেসে লুটিয়ে পড়ছে প্রায় ।বোঝা গেল ভীষণ পছন্দের কিছু খাচ্ছে।
বড়বৌ আসতে করে বললো "পান্তাভাত "
বলেই দলা করে তুলে নিয়ে মুখে দিল জলা ভাতগুলো ।
মালতি অবাক হয়ে বললো "পান্তাভাত?"
ছোটবৌ বললো "হমম রে পান্তা ভাত,পেঁয়াজ আলুসেদ্ধ আর শুকনো লঙ্কা দিয়ে খেয়ে দেখ ! আহা রে কতদিনের শখ !এবাড়িতে কেউ পছন্দ করেনা এসব।তুই আবার বাইরে কাউকে বলিস না!"
মালতি নিজের কান চোখ কোনোটাকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। এ আবার কেমন শখ!
বড়বৌ বললো "কাল রাতে বাড়ির ছেলেরা কেউ খায়নি, ব্যবসার জায়গায় কিসব খাওয়াদাওয়া ছিলো। তখনই ছোটো কে বললাম জল ঢেলে রাখতে। লুচি পরোটা খেয়ে খেয়ে অরুচি ধরে গেছে!"
মালতির মনে পড়লো ছেলের কথা "মা রোজ সকালে পান্তাভাত আর ভালো লাগে না, দুটো রুটি তো করতে পারো !"মালতি মুখ ঝামটা দিয়ে বললো "আটা কত করে কেজি জানিস?"সকালে কাজে যাওয়ার আগে খেতে বসেও খেলো না, এতো অরুচি এই পান্তাভাতে !"
তাই মালতিও না খেয়ে চলে এলো, ভাতগুলো দুপুরে আরও পান্তা হবে।
হায় ভগবান একটা ছবির দুটো পিঠে কত আলাদা আলাদা রঙ, কত আলাদা আলাদা শখ।
ভাগ্গিস এদের রোজ পান্তা খেতে হয় না।মনে মনে বললো মালতি। দেখলো একমনে খেয়ে যাচ্ছে দুই বউ। কি সস্তার শখ। বড়লোকদের চাপে পড়ে পান্তাভাতও আজ কত দামী!
সংগৃহীত !
"ছোটো পেঁয়াজটা কাট তো ,আমি ভাতটা বের আনি মিটসেলফ থেকে ।"- মালতি রান্নাঘর থেকে বাসনগুলো কলপাড়ে নিয়ে যেতে যেতে শুনলো বাড়ির বড়বৌ বলছে বাড়ির ছোটোবৌকে।
এতো বাড়িতে কাজ করে মালতি কিন্তু জায়েদের মধ্যে এতো মিল আগে কোথাও দেখেনি।এবাড়িতে রান্নাঘর আর কলপাড়ের মাঝে বিশাল হলঘর। সেই হলঘর অন্যদিন ফাঁকা ফাঁকা থাকলেও রবিবার বেশ জমজমাট। বার ভুলে গেলেও এই ঘরটা দেখে যে কেউ সহজে বার টা বলে দিতে পারবে আজকের ।
বাসন নিয়ে যাওয়ার সময় মালতি দেখলো হলঘরে একেকজন একেক দিকে ছড়িয়ে বসে আছে।বাড়ির ছেলেরা, বাচ্চারা, শশুর শাশুড়ি সবাই। আর সবার সামনে প্লেট।
ইচ্ছে করলেও মালতি তাকালো না। কিন্তু গন্ধে টের পাচ্ছে গরম গরম ফুলকো লুচি আছে সবার পাতে।
পা চালিয়ে হলঘর টুকু হেটে গেল মালতি । ঐটুকু যেতে গিয়ে লুচির গন্ধে খিদে পেয়ে গেল ওর।আজ এমনি বেরোনোর আগে কিচ্ছুটি মুখে দেয় নি। কি করে খাবে ছেলেটাও যে না খেয়ে বেরিয়ে গেল আজ,এরকমই একটা বড়োলোক বাড়িতে গাড়ি চালায় মালতির ছেলে, রবিবারও যেতে হয়!
প্রায় কুড়ি মিনিট লাগলো মালতির বাসন গুলো ধুতে। নেহাত মানুষ গুলো ভালো আর টাকাটাও অনেকখানি দেয়, নাহলে সত্যি এই বাড়ির এতগুলো লোকের কাজের খাটনি কম না।
মাজা বাসন গুলো নিয়ে হলঘরে ঢুকতেই দেখলো ঘর অনেকটা ফাঁকা।বোঝা গেল রবিবারের সকালে এই জমায়েত শুধু সকালের খাবারের জন্য। আবার দুপুরে হয়তো এক হবে সবাই।সেটাও খাবারের জন্যই । ঘর ফাঁকা বলেই হয়তো পুরো ঘর জুড়ে এখনো লুচির গন্ধ খেলে বেড়াচ্ছে। নাকটা একটু টেনে নিলো মালতি। কিছু কিছু জিনিস আছে যেগুলো নিজের কাছে করলে নিজের লজ্জা লাগে না, বরং আত্মতৃপ্তি হয়!
রান্নাঘরে ঢুকতেই মালতি অবাক হয়ে গেল বাড়ির দুই বৌকে দেখে। ওরা রান্নাঘরে লুকিয়ে বাসনে মুখ ঢুকিয়ে কি যেন খাচ্ছে।ওদের লুকিয়ে খাওয়া দেখে মালতি নিজেই যেন একটু অপ্রস্তুতে পড়লো। কি এমন খাচ্ছে যে এভাবে লুকিয়ে খেতে হবে! মনে মনে ভেবেই মাজা বাসনের ঝুড়িটা নামিয়ে রেখে মালতি বললো "তোমরা খেয়ে নাও তারপর রান্নাঘর মুছবো, আমি বাইরে দাঁড়াচ্ছি!"
ছোট বউ চোখ নাচিয়ে বললো "কিরে খাবি ?" মালতি খুব অবাক হয়ে বললো "কি এমন খাচ্ছ এতো খুশি দুজন?" মালতির কথা শুনে দুজনেই হেসে লুটিয়ে পড়ছে প্রায় ।বোঝা গেল ভীষণ পছন্দের কিছু খাচ্ছে।
বড়বৌ আসতে করে বললো "পান্তাভাত "
বলেই দলা করে তুলে নিয়ে মুখে দিল জলা ভাতগুলো ।
মালতি অবাক হয়ে বললো "পান্তাভাত?"
ছোটবৌ বললো "হমম রে পান্তা ভাত,পেঁয়াজ আলুসেদ্ধ আর শুকনো লঙ্কা দিয়ে খেয়ে দেখ ! আহা রে কতদিনের শখ !এবাড়িতে কেউ পছন্দ করেনা এসব।তুই আবার বাইরে কাউকে বলিস না!"
মালতি নিজের কান চোখ কোনোটাকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। এ আবার কেমন শখ!
বড়বৌ বললো "কাল রাতে বাড়ির ছেলেরা কেউ খায়নি, ব্যবসার জায়গায় কিসব খাওয়াদাওয়া ছিলো। তখনই ছোটো কে বললাম জল ঢেলে রাখতে। লুচি পরোটা খেয়ে খেয়ে অরুচি ধরে গেছে!"
মালতির মনে পড়লো ছেলের কথা "মা রোজ সকালে পান্তাভাত আর ভালো লাগে না, দুটো রুটি তো করতে পারো !"মালতি মুখ ঝামটা দিয়ে বললো "আটা কত করে কেজি জানিস?"সকালে কাজে যাওয়ার আগে খেতে বসেও খেলো না, এতো অরুচি এই পান্তাভাতে !"
তাই মালতিও না খেয়ে চলে এলো, ভাতগুলো দুপুরে আরও পান্তা হবে।
হায় ভগবান একটা ছবির দুটো পিঠে কত আলাদা আলাদা রঙ, কত আলাদা আলাদা শখ।
ভাগ্গিস এদের রোজ পান্তা খেতে হয় না।মনে মনে বললো মালতি। দেখলো একমনে খেয়ে যাচ্ছে দুই বউ। কি সস্তার শখ। বড়লোকদের চাপে পড়ে পান্তাভাতও আজ কত দামী!