Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
টোটকা

 
নতুন পাড়ায় আসার পর থেকেই মনটা বড্ড খারাপ শ্রীরূপার। আগের বাড়িটা বেশ অন্ধকার অন্ধকার ছিল। দিনের বেলাতেও জানলা খুলে রাখতে হতো। একতলাতে ঘর হওয়ায় মশাও ছিল খুব। বিশেষ করে এই শীতকালে বড্ড কষ্ট হতো। সারাদিন বাড়ি স্যাঁতসেঁতে হয়ে থাকত...
সে তুলনায় এই বাড়িতে অনেক ভাল আছে ওরা। ওয়ান বি এইচ কে ফ্ল্যাট হলেও একটা সুন্দর ব্যালকনি আছে, সেখানে হুটোপুটি করে রোদ্দুর আসে। 'টা গাছ লাগিয়েছে শ্রীরূপা ওই একচিলতে বারান্দাতে। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর একটা মোড়া নিয়ে ওখানে বসে খবরের কাগজ বা ম্যাগাজিন পড়তে ভাল লাগে।
কিন্তু, ওই কয়েক মুহূর্তই।
তারপর কেমন ফাঁকা লাগে সবকিছু! এই মেরেকেটে সাড়ে চারশো স্কোয়ারফিটের বাড়িটাকেই মনে হয় কত্ত বড়! আর কত বেশি সাজানো গোছানো! বড্ড বেশি সাজানো গোছানো!
বছর দুয়েক ধরেই ফ্ল্যাট খুঁজছিল অনীক। ওর মনে হচ্ছিল আগের বাড়িতে থেকেই যেন শ্রীরূপা আরও বেশি একা, শীতল আর সাদাটে হয়ে যাচ্ছে! কিন্তু তারমধ্যেই অতিমারি শুরু হলো আর কথা ওইখানেই চাপা পড়ে গেল। তবে অনীক হাল ছাড়েনি। এইবছর পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হবার পরেই ফ্ল্যাট দেখা শুরু করেছিল। তবে পছন্দ হচ্ছিল না কিছু সেভাবে। শেষ পর্যন্ত ওর এক ছোটবেলার বন্ধু, যে কিনা কাছাকাছিই থাকে, সে সন্ধান দিয়েছিল এই ফ্ল্যাটটির। দেখেই পছন্দ হয়ে গেছিল ওদের দুজনেরই।
শ্রীরূপা ভেবেছিল এখানে ভাল থাকবে। কিন্তু এখানে এসে আরও একা মনে হচ্ছে নিজেকে। যেন কেউ খোঁজ নেবার নেই! সারাটাদিন একা একা! দুজনের সংসারে আর কতই বা কাজ থাকে! মাসখানেক ধরে ঘর সাজিয়েছে প্রাণভরে।মানে যতটা সম্ভব আর কি! মাসে মাসে লোন কাটে অনীকের... খুব বেশি তো খরচাও করা যায় না!
এমন ফ্ল্যাট - বেশিরভাগ মানুষই কিনে রেখে দিয়েছেন, বাড়ি তালাবন্ধ থাকে। ওরা ছাড়া মাত্র কয়েকটি পরিবার এখানে থাকে, যাদের মধ্যে খুব বেশি যাতায়াত নেই। তাই, এখানে এসে নিঃসঙ্গ লাগে খুব। অনীককে ওর সেই ছোটবেলার বন্ধুর কথা জিজ্ঞেস করেছিল ও। বলেছিল একদিন ফ্যামিলি নিয়ে নিমন্ত্রণ করতে। কিন্তু অনীক হেসে বলেছিল "আরে পাগলা খুব ব্যস্ত। একটা বিজ্ঞান ক্লাবের সাথে যুক্ত। সোম থেকে শনি অফিস, রবিবার রবিবার বিজ্ঞান নিয়ে সচেতনামূলক শো করে বেড়ায়..."
চুপ করে গেছিল শ্রীরূপা।
আগের পাড়ার কাকিমা-জ্যেঠিমারা "বৌমা তোমার যে কবে একটা ছেলেপুলে হবে" বলে বলে কানের পোকা খেয়ে নিলেও... এখন তাঁদের কথা মনে পড়ে খুব। ওনারা তো ভালোই চাইতেন। এই যে নিজেরাই গরজ করে অমুক বাবা, তমুক বাবার কাছে নিয়ে যাওয়া, তাবিজ-কবজ... সব করেছেন। শ্রীরূপাও তো মেনেছে সব। ডাক্তার -বদ্যি... জ্যোতিষ... টোটকা... কি হলো?
অনীক দত্তক নেবার কথা বলেছে... শোনেনি। শুনতে ইচ্ছে করেনি।
মনে পড়লেই দীর্ঘশ্বাস আসে!
যখন 'সে' এসেছিল, মাত্র কয়েকমাস হল বিয়ে হয়েছে। ভেবেছিল "এখন নয়, 'দিন পরে আসুক... খুব যত্ন করবে তখন" কিন্তু সেই 'পরে'টা আর এলোই না! আর ধীরে ধীরে কেমন স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেল শ্রীরূপাও।
স্যাঁতসেঁতে। অচেনা। প্রাণহীন।
আজকাল আবার খুব মরে যাবার ইচ্ছে হয়। সেই আগের মতো। একবার উল্টোপাল্টা ওষুধ খেয়েও ফেলেছিল পাড়ার একজনের একটা অপলকা কথায়। তারপর থেকেই তো অনীক মরিয়া হয়ে পাড়া ছাড়তে চেয়েছিল।
এবারও খুব ইচ্ছে করছে।
তবে ওষুধ না... অন্যকিছু যদি উপায় থাকত...
ফ্যান? পুকুর? আগুন?
না না... আগুন না...
কিন্তু কিছু একটা তো বটেই...
ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ। চমকে উঠল শ্রীরূপা। এই দুপ্পুরবেলা... কে আবার?
"মা, কিছু সাহায্য হবে?" গেট খুলতেই শুনল রূপা। দড়ি পাকানো চেহারার একজন মানুষ। গেরুয়া পোষাক পরা। বয়স বেশি না - চল্লিশ টল্লিশ হবে। মুখ ভর্তি দাড়ি। জটা। একনজরে যেন 'মছলীবাবা' মতো লাগে।
"না" বলতে সাহস হল না শ্রীরূপার।
কোনোরকমে ফ্রিজের মাথায় রাখা টাকা থেকে দুটো দশটাকার নোট নিয়ে দিল ওনাকে।
"মা, একটা কথা বলি? সন্তান পেটে নয়, মনে ধারণ করতে হয়। মাদার টেরেসাও তো নিঃসন্তান ছিলেন। তাও কি উনি অনেকের মা নন? আর মা সারদা? উনিও কি 'মা' নন? ভেবে দেখো মা। ভেবে দেখো..."
কথা 'টি বলেই চলে গেলেন উনি।
স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল শ্রীরূপা।
কি বললেন উনি! কিভাবে জানলেন ওর মনের কথা? মনের ব্যথা?
উনি কে?
দৌড়ে বারান্দার কাছে চলে এলো ও। যদি আরেকটিবার দেখা যায় ওনাকে! তাহলে প্রণাম করবে। বলবে, "আপনি ঠিক বলেছেন... মনে ধারণ করতে হয়..."
কিন্তু, কোত্থাও দেখতে পায়না ওনাকে।
পায়ে পায়ে ঘরে ঢোকে শ্রীরূপা।
অনীককে ফোন করতে হবে। একজন সায়কিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিল অনীক। যায় নি। অশান্তি করেছে। ঝগড়াঝাঁটি করেছে। আহত হয়েছে, আঘাত করেছে।
কিন্তু আজ হঠাৎ করেই মনে হচ্ছে পারবে... পারবেই... ভাল থাকতে...
মনে ধারণ করতে হবে...
মনে...
মনে এখন ঝকঝকে রোদ্দুর শ্রীরূপার।
ঘরে চলে এসেছিল ... বারান্দায় থাকলে দেখতে পেত হাতের বড় ঝোলায় নকল জটা আর গোঁফদাড়ি ঢোকাতে ঢোকাতে ফোন করছেন কেউ, তাঁর বন্ধুকে - এটা বলার জন্য যে "ভাই, আজ একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়... বৌদির বোধহয় মনখারাপ! ওই ইস্যু নিয়েই হয়ত, যেটা তুই বলেছিলি। আমি একটা টোটকা দিয়ে এসেছি, এখন তোর সাপোর্ট লাগবে..."।।
 

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 13-12-2021, 02:00 PM



Users browsing this thread: 18 Guest(s)