Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
ট্যাক্সিতে উঠে প্রথমে বড়মাকে ফোনে ধরলাম, ফোন ধরেই বড়মা বললেন
-কিরে অনি কি হয়েছে।
-কি করছো।
-খেতে বসবো।
-এতো বেলায়।
-আমায় কে বেড়ে দেবে বল। নিজেরটা নিজে বেড়ে নিতে হয়।
-তোমার আমার একি অবস্থা।
-তুই খেয়েছিস।
-না এখনো জোটে নি।
-চলে আয় একসঙ্গে খাবো।
-তুমি অনিকে এত ভালোবাসো কেনো বলোতো।
-অনি যে আমার পেটের ছেলে নয়।
-জানো অনেক দিন পর আজ নিজেকে অনেক হাল্কা বোধ হচ্ছে।
-জানি, তোর দাদা ফোন করে সব বললো।
-কি বললো।
-শুনতে ইচ্ছে করছে।
-হুঁ।
-চলে আয়।
-এখন না রাতে যাবো।
-তুই এখন কোথায়।
-ট্যাক্সিতে, একটা কাজে যাচ্ছি।
-খালি কাজ কাজ কাজ, তোর আর তোর দাদার কাজ একটা ম্যানিয়া।
-মিত্রা ফোন করেছিলো।
-হ্যাঁ।
চুপচাপ।
-কথা বলছনা কেনো।
-তুই ওকে বাঁচিয়ে দিলি।
-শুধু ওকে নয়, সমস্ত কাগজের স্টাফকে। এইবার বলো, এই সাতদিন তোমার সঙ্গে ঠিক মতো কথা বলিনি বলে তুমি এখন কষ্ট পাচ্ছ।
-একবারে না।
-তাহলে সাতখুন মাপ।
-ওরে শয়তান, তুই ঘুরিয়ে কথা আদায় করছিস।
-তোমার কাছ থেকে করবো নাতো কার কাছ থেকে করবো।
-চলে আয় না।
-না, অনেক ঋণ করেছি এক একে শোধ করতে হবে। রাতে যাবো।
-তখন তুই তোর দাদার সঙ্গে কথা বলিস নি।
-ভালো লাগছিলো না। বিশ্বাস করো, কারুর সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগছিলো না।
-তোর দাদা কষ্ট পেয়েছে।
-রাতে গিয়ে সব ঠিক করে দেবো।
-রাতে কি খাবি।
-তোমায় কিছু করতে হবে না। আমি কিনে নিয়ে যাবো।
-না কেনা কিনির দরকার নেই, আমি রান্না করবো।
-ছোট কোথায়।
-ব্যাঙ্কে গেছে।
-আচ্ছা।
ফোনটা কেটে দিলাম, হিমাংশুকে একটা ফোন করলাম, ও বললো সব ঠিক আছে। মল তোর ওপর একটা রিভেঞ্জ নিতে পারে।
হাসতে হাসতে বললাম, ওর আর একটা ডকুমেন্টস আমার কাছে আছে, সেটা যদি শো করাই ওকে ভারতের পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যেতে হবে। খবরটা ওর কানে পৌঁছে দিস।
-কি বলছিস।
-আমার দয়া মায়া একটু কম। ছোট থেকে একা একা বড় হয়েছি, যাক শোন তুই এবার এ্যাকাউন্টসে হাত দে।
-কাজগুলো গুছিয়ে নিই, আগামী সপ্তাহ থেকে হাত দেবো।
-আচ্ছা।
সন্দীপকে ফোন করলাম।
-গুরু এত স্মুথ কাজ অনেক দিন পর দেখছি।
-কেনো।
-কি বলবো বস, সবাই অমিতাভদার পারমিশন ছাড়া কোনো কাজই করছে না।
-তাই নাকি।
-তুই বুড়োটাকে মেরে দিবি।
-কেনো।
-এখনো দেখছি, চম্পকদা, সুনীতদা, ম্যানেজমেন্টের সব ঘিরে বসে আছে।
-গম্ভীর সব?
-না রে হাসাহাসি করছে। সেই আগের অবস্থা।
-এনজয় কর।
সন্দীপ হো হো করো হেসে উঠলো। তুই কোথায়।
-সোনাগাছিতে।
-ভ্যাট।
-একটু খোঁজ খবর নে জানতে পারবি।
-ঠিক আছে, কিন্তু আমার এই বুদ্ধিতে কুলোবে না।
হাসলাম।
-তোর চাকরি পাকা।
-হ্যাঁ গুরু তোমার দয়ায় টেনশন মুক্ত হলাম।
-ঠিক আছে। রাখছি।
মিত্রাকে একটা ছোট্ট ম্যাসেজ করলাম, আমি রাত ৮টার মধ্যে অমিতাভদার বাড়ি ঢুকছি, অবশ্যই চলে আসবি।
টিনার হাউসিং এর সামনে এসে, ট্যাক্সিটাকে ছেড়ে দিলাম। ধীর পায়ে লিফ্ট বক্সের সামনে এলাম। লিফ্ট নিচেই ছিলো আমি যথাস্থানে বোতাম টিপলাম। হুস করে ওপরে চলে এলাম। শরীরটা কেমন যেন ছেড়ে দিয়েছে। এই সাতটা দিন আমার ওপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গেছে। ঝড়ে ডালপালা অক্ষত থাকলেও, তার একটা রেশ সারা শরীরে। এটা আমি বুঝতে পারছি।
 
টিনা দরজা খুলে আমার সামনে দাঁড়ালো। একঝলক মুক্ত বাতাস আমার চোখে মুখে ছড়িয়ে পরলো। টিনাকে আজ কালো লাগছে না। বরং ওর চোখে মুখে রং ছড়িয়ে পরেছে। আমাকে দেখে ও একটু অবাক হলো। ওর চোখ তাই বলে। ভেতরে এসো।
আমি ভেতরে গেলাম। সোফার ওপর নিজেকে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম।
-তোমার কি শরীর খারাপ অনিদা।
-না।
-তাহলে এরকম দেখতে লাগছে তোমায়। অফিসের কোনো সমস্যা।
-ছিলো, মিটিয়ে দিয়েছি।
-দাঁড়াও বলেই টিনা ভেতরের ঘরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর একগ্লাস এ্যাপেল জুস নিয়ে এলো।
-আগে এটা খাও।
আমি দ্বিধা করলাম না। ঘট ঘট করে সব খেয়ে নিলাম। আমার খাওয়া দেখে টিনা আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো। খাওয়া শেষ হতে টিনা গ্লাসটা আমার হাত থেকে নিয়ে, সেন্টার টেবিলে রেখে, আমার মুখোমুখি সোফায় বসলো।
-কি হয়েছে অনিদা, আমায় বলো।
-না কিছু হয় নি।
-তোমার চোখ মুখ বলছে, তুমি বহুরাত ঘুমোও নি।
-তা বলতে পারো। একটা বড় কাজ ছিলো, জীবনে প্রথম মালিক হলাম কিনা।
-হেঁয়ালি রাখো।
হাসলাম। তোমার বাথরুমটা ব্যাবহার করতে পারবো
-অবশ্যই।
-আমি স্নান করবো।
-ঠিক আছে আমি সমস্ত ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
টিনা বাথরুমে গিয়ে সমস্ত ব্যবস্থা করে এলো।
-কি খাবে বলো।
-হাল্কা কিছু খাবো।
-লাইট করে নুডলস তৈরি করে দিই।
-দাও।
আমি বাথরুমে গেলাম। গেঞ্জি প্যান্ট খুলে নেংটো হয়ে ভাল করে স্নান করলাম। টিনার বাথরুমটা বেশ গোছানো, ছোট, কিন্তু দারুন, চারিদিক সাদা, একটু দাগ পরলেই চোখে পরে যাবে। একটু শীত শীত করছে। বুঝলাম ভেতরটার রসদ কমে এসেছে।
দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম।
-এ কি এটা পরলে কেনো।
-কেন?।
-তোমার জন্য একটা কাপড় বার করে রেখেছি।
-থাক।
-মেয়েদের বলে পরবে না।
কাপড়টা দেখলাম -কোথায়?
-ভেতরের ঘরে।
-চিরুনিটা দাও, অনেক দিন দেওয়া হয় নি। মনে হয় চুলগুলো জট পরে যাবে।
-কত দিন কাটো নি।
-প্রায় মাস ছয়েক।
-কেটো না।
-কেনো।
-তোমাকে এই অবস্থায় বেশ ভালো লাগছে। কাটলে মুখটা ছোটো ছোটো লাগবে।
-ভাবছি পনিটেল করবো।
-এ মা, না না। একেবারে না। টিনা মুখ ভেটকালো। খাবার নিয়ে আসি।
নিয়ে এসো।
টিনা প্লেটে করে সাজিয়ে নিয়ে এলো, আমি অবাক হলাম, নুডুলসের সঙ্গে ডিম ভেজেছে, ছোট ছোট পাঁপড় ভেজেছে।
-এতো খাবো না। তুমি একটা প্লেট নিয়ে এসো।
-না তোমাকে খেতেই হবে।
-একটা প্লেট নিয়ে এসো না। আমার কথার মধ্যে মনে হয় ওজন ছিলো, টিনা রান্নাঘর থেকে প্লেট নিয়ে এলো।
দুটো ভাগ করো, সমান মাপে, যদি কম বেশি হয় কমটা আমি খাবো।
-উঃ তুমি পারোও বটে।
টিনা আমার অপজিট সোফায় বসে, খাবার ভাগ করলো, দুজনে একসঙ্গে খেলাম।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 20-12-2021, 06:02 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)