Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
ঘরে এসে দেখলাম, একটা হুলুস্থূলুস কান্ড চলছে। আমি হিমাংশুকে বললাম
-দে কোথায় সই করতে হবে।
হিমাংশু দেখিয়ে দিলো, সই করে দিলাম, রেজিস্টারার ম্যাডাম তার সাঙ্গপাঙ্গরা ঘরেই ছিলেন, সব কাজ ওখানেই হয়ে গেলো। সত্যি সব গল্পের মতোই মনে হচ্ছে আমার কাছে। নিজের জায়গায় বসলাম। মলের দিকে তাকিয়ে বললাম
-মনে কিছু করবেন না মল সাহেব। গত পাঁচ বছরে ব-কলমে অনেক কামিয়েছেন, আমি তাতে হাত দিলাম না। খুব সামান্যই নিলাম আপনার কাছ থেকে, আমার ভাগটা এখানে এসে বুঝিয়ে দেবেন, আমি আপনার কাছে কোনদিন যাবো না। যদি যাই কেড়ে কুরে নেবো। আপনি এখন আসুন, আজ থেকে আপনি আমাদের হাউসের বন্ধু।
-আমার কাগজপত্র।
-যেখান থেকে নিয়ে এসেছিলাম। সেখানেই রেখে দেবো।
মল আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
-আমারতো প্রচুর লস হলো।
-আমি কিন্তু লাস্ট ফাইভ ইয়ার্সের ক্লেইম করিনি।
-আমি বুঝতে পারছি আপনি এখন অনেক কিছু করতে পারেন।
-সবই যখন বোঝেন, তাহলে কাঁদুনি গেয়ে লাভ, আসুন আপনি বাকিটা সেরে ফেলি।
মল গট গট করে বেরিয়ে গেলো।
-সনাতনবাবু, কিংশুকবাবু, অরিন্দমবাবু আপনাদের টাকাটা।
-স্যার কিছু টাকা খরচ করে ফেলেছি, যেটা আছে সেটা কালকে দিয়ে দেবো।
-আপনারা সব ভালো ভালো ঘরের ছেলে এসব ঘোটালাতে জড়ালেন কেনো।
সবার মাথা নত।
-সনাতন বাবু আপনি বয়স্ক মানুষ এ কি করলেন।
সনাতন বাবু কিছু বললেন না। মাথা নীচু করে বসে আছেন।
-সুনীতদা।
-তুই আর কিছু বলিসনা অনি। এই কদিনে বাড়িতে, বাড়ির বাইরে, অফিসে, অনেক কিছু শুনেছি আর বলিস না।
-এইবার কাজটা কি ঠিক মতো হবে।
-কথা দিচ্ছি, আমার এখতিয়ারের বাইরে আমি কোনোদিন যাবো না।
-তোমার আর চম্পকবাবুর নতুন কাগজের তাহলে কি হবে।
সবাই চুপচাপ।
-বলো। বলতে হবে তোমাদের, এদের সকলের সামনে।
-তুইতো মলের কাছ থেকে সব লিখিয়ে নিলি।
-এই মেয়েটাকে ঠকাতে তোমাদের ইচ্ছে হলো।
চুপচাপ।
-কতো টাকা দেনা করেছো এই মেয়েটার? তুমি না ওর আত্মীয়!
-আমার ভুল হয়েছে।
-সাত খুন মাপ।
-চম্পকদা, কমিশনটা ২০ কিংবা ২৫ নয় ১৩ পার্সেন্ট এটা ঠিক।
-হ্যাঁ।
-আমার কিন্তু কামিং ৬ মাসে ৩০০ কোটি চাই। কোথা থেকে আসবে আমি জানি না।
-আমি পারবো না।
-না পরলে তোমার সম্পত্তিগুলো লিখে দিতে হবে।
চুপচাপ।
-আমি তোমাদের কামিং থ্রি মান্থের জন্য ১২০ কোটি টাকা দেবো। বাকি ১৮০ কোটি তোমরা জোগাড় করতে পারবে।
কেউ যেন চম্পকদার গালে চড় মারলো। মাথা তুললেন চম্পকদা। চেষ্টা করবো।
-এই নাও ১২০ কোটির ডিল। কাগজটা চম্পকদার দিকে ছুঁড়ে দিলাম।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে আছেসবাই কেমন ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছে। অমিতাভদা নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না, আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার কপালে চুমু খেলেন।
-এবার তোমরা আমায় শাস্তি দিতে পার, আমি এই সাতদিনে অনেক অপরাধ করেছি, আজ স্বীকার করছি এই সব কান্ড কারখানা করার জন্য, আমি এই হাউস থেকে দুটো জিনিষ চুরি করেছি। একটা প্যাড, আর একটা স্ট্যাম্প, বাকি একটা ডিরেক্টরের স্ট্যাম্প আমি বানিয়ে নিয়েছিলাম। অন্যায় করেছি।
ওরা সবাই চুপচাপ।
হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম
-কাগজগুলো গুছিয়ে নিয়ে দাদার বাড়িতে পৌঁছে দিবি, আমি রাতে ভালো করে একবার দেখে নেবো।
আমি উঠে বেরিয়ে চলে এলাম। দাদা, মিত্রা, মল্লিকদা তিনজনে একসঙ্গে অনি বলে ডেকে উঠলো। আমি পেছন ফিরে তাকালাম না।

অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা চলে এলাম দামিনী মাসির কাছে। ও পাড়ায় কম বেশি সবাই আমাকে চেনে, তাই কেউ বিরক্ত করে না, আমি ওপরের ঘরে আসতে দেখলাম দামিনী মাসির ঘরে তালা। পাশের ঘর থেকে একটা মেয়ে বেরিয়ে এলো, এপারার মেয়েদের যেমন দেখতে হয়, এই দুপুর বেলাতেও সেজেগুজে অপেক্ষা করছে, আমায় কাছে এসে বললো, দাদা তুমি চলো, আমার ঘরে, মাসি কাছাকাছি কোথাও গেছে, এখুনি চলে আসবে। একটু ইতস্ততঃ করছিলাম, তুমি চলো না, এখন কেউ আসবে না আমার কাছে, এলে ভাগিয়ে দেবো। ও আমার হাতটা ধরে টানা টানি করছিলো। ওর গলা শুনে পাশের ঘরগুলো থেকে আরো কয়েকটা মেয়ে বেরিয়ে এলো। আরে অনিদা তুমি এই সময়, কিছু একটা হয়েছে।
-নারে এমনি এসেছিলাম মাসির কাছে।
-লক্ষ্মী, মাসি না আসা পযর্ন্ত তোর ঘরে নিয়ে গিয়ে বসা অনিদাকে।
-কখন থেকে বলছি কিছুতেই যাবে না।
-ঠিক আছে চলো ।
ঘরটা আগের থেক অনেক বেশি ডেকোরেটেড, তার মানে লক্ষ্মীর খরিদ্দারদের মাল করি ভালই, দেখলাম এসিও লাগানো আছে, এই ঘরটা একসময় মেরিনা বলে একটা মেয়ে থাকতো, লক্ষ্ণৌ থেকে এসেছিলো, ইসলাম ভাই এই মেয়েটির ঘরে প্রতিদিন আসতো, সেখান থেকেই পরিচয়, তারপর মেয়েটি একদিন মার্ডার হয়ে গেলো, কি করে হলো কেনো হলো, তা জানি না। সেই কটা দিন ইসলাম ভাই পাগলের মতো হয়ে গেছিলো, মেয়েটি ইসলাম ভাইকে ভালোবেসে ফেলেছিলো, ইসলাম ভাইও মেয়েটিকে ভালোবেসে ফেলেছিলো আমি মদ এনে দিতাম, তখন আমি সবেমাত্র সাংবাদিকতায় ঢুকেছি। ইউনিভার্সিটিতে জার্নালিজম নিয়ে পরছি। হোস্টেল পাই নি। কলকাতার রাস্তাঘাট সেইরকম একটা চিনতাম না। ঘুরতে ঘুরতে এই পাড়ায় চলে এসেছিলাম। একটি মেয়ে আমাকে হাত ধরে ঘরে ঢুকিয়েছিলো, তারপর যা হয়, আমি ভয় পেয়ে চেঁচামিচি করতে দামিনী মাসি এসেছিলো, আমার মুখটা দেখে দামিনী মাসির কি মনে হয়েছিলো জানি না, আমাকে নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন, বললেন কেনো এসেছিলাম। আমি মাসিকে মিথ্যে কথা বলিনি। সব সত্যি বলেছিলাম, আমি পড়াশুনো করছি, হোস্টেল ছেড়ে দিতে হবে, মেয়েটিকে রাস্তায় দেখা হতে বললাম, আমায় একটা ঘর জোগাড় করে দিতে পারেন, ও নিয়ে এসে….. সেইদিন থেকে দামিনীমাসি নিজের ঘরের এক কোনে থাকার জায়গা করে দিয়েছিলেন, প্রথম কয় মাস সেখানে ছিলাম, তারপর ছাদের ঘরে। যখন রোজগার করতে পারলাম, তখন দামিনী মাসিকে ভাড়া দিতাম।

টিউশনি করে নিজের পেট চালিয়েছি, সেই সময় এই পাড়ার বহু মেয়ের ছেলে-মেয়েদের আমি পড়াতাম, একসময় মাস্টার মশাই উপাধিতেও ভূষিত হয়ে পরেছিলাম। তারপর একদিন অমিতাভদা নিয়ে গেলেন তাঁর বাড়িতে। না আমার কোনো অসুবিধে হয় নি, প্রথম প্রথম একটা সেকি ভাব ছিলো তারপর সব অভ্যাস হয়ে গেছিলো। সত্যি কথা বলতে কি এদের এখানে এলে আমার মধ্যে কোনোদিন সেক্স ভাবটাই জাগতো না, কেনো জাগতো না বলতে পারবো না, আমি এপাড়ার গুড বয় হিসাবেই ছিলাম।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 18-12-2021, 09:27 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)