Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
প্রথমে সনাতনবাবু কামিং ৬ মান্থের বাজেট কি হবে তা পরে শোনালেন। তাতে এ্যাডের বাজেট দেখে চম্পকবাবুর মুখ শুকিয়ে গেলো। পর পর সব ডিপার্টমেন্টের কি কি টাকা ঠিক করা হয়েছে, তা পরে শোনানো হলো। সবারই মুখ শুকিয়ে গেছে। মিত্রা প্রথমে মল বাবুকে বাজেটের ওপর বলতে বললেন। মলবাবু বললেন
-ম্যাডাম আমি ৫ ভাগ শেয়ার হোল্ড করে আছি। আমার কোন কথা নেই। আপনি বরং বলুন আমরা মেনে নেবো।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আপনার কিছু বলার আছে।
আমি শুরু করলাম।
-আমি পনেরো দিন হলো কোম্পানীর মালিক হয়েছি। তাতে হিসাবে অনেক গরমিল দেখলাম, আপনারা দুজনে কেউ তা জানেন
মল এবং মিত্রা দুজনেই অস্বীকার করলো।
এবার চম্পকবাবুর দিকে তাকালাম।
-চম্পকবাবু গত ৬ মাসে আমাদের এ্যাডের যা বাজেট ছিলো তার কত এসেছে।
-টার্গেট ৯০ ছিলো ৫০ এসেছে।
-কত কমিশন বাদ গেছে।
-১৩ কোটি।
-এনটারটেইনমেন্টের পেছনে কত খরচ হয়েছে।
-৬ কোটি। তুমি কি এই জন্য মিটিং ডেকেছো নাকি।
-আপনি এত উত্তেজিত হচ্ছেন কেনো।
-তুমি উত্তেজনার সৃষ্টি করছো।
-আপনার এ্যাড ডিপার্টমেন্ট গত ৬ মাসে ৬ কোটি টাকা এন্টারটেইনমেন্টের পেছনে খালি খরচ করেছে। আচ্ছা আগামী ৬ মাসের বাজেট ধরা হয়েছে ৩০০ কোটি। এ নিয়ে আপনি কি বলেন।
-এটা এ্যাবসার্ড।
-আপনার রেসিও অনুযায়ী এই এ্যাড যদি পাওয়া যায় তাহলে ১০০ কোটি কমিশন এবং এনটারটেইনমেন্টের পেছনে খরচ হবে। তাই তো।
চুপচাপ।
-চম্পকবাবু উত্তর দিন।
-এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। তোমরা আমাকে না জিজ্ঞেস করে বাজেট করেছো।
-আপনি বাজেট করে যা এনেছেন তা কি ঠিক।
-তুমি কি বলতে চাও?
-গত সপ্তাহে আপনি এনটারটেইনমেন্টের নামে, দেড়লাখ টাকার একটা বিল জমা দিয়েছিলেন। খ্যাপে খ্যাপে সেই টাকা আপনি নিয়ে নিয়েছেন। টাকাটা আপনি কোথায় খরচ করলেন।
-তোমাকে তার কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি।
-আমি আপনার চাকরিটা খেতে পারি, শুধু তাই নয়, এই ঘর থেকে আপনাকে শ্রীঘরে ঢোকাতে পারি। জামিন অযোগ্য মামলায় আপনাকে ফাঁসাতে পারি, কালকে কাগজে সুন্দর করে একটা আর্টিকেল লিখতে পারি, উইথ ফটোগ্রাফ। যাতে আপনার সাধের সংসার ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। আপনি কোন অপশন বেছে নেবেন।
 
সবাই দেখলাম একটু নরে চরে বসলেন, মল আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। সুনীতবাবুর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে, দাদা, মল্লিকদার মাথা নীচু।
-আমার হিসেব অনুযায়ী কোম্পানী আপনার কাছে ৬ কোটি টাকা পায়।
-এটা অন্যায় ভাবে আমার ওপর প্রেসার করা হচ্ছে।
-তারমানে আমি যা বলছি তার কিছুটা মেনে নিচ্ছেন। পুরোটা নয়।
চুপচাপ।
-তাহলে আর একটা কথা বলি।
-অনি থাক।
-কেনো। থাকবে কেনো। তুই বল, আমার শোনার দরকার আছে। অমিতাভদা বললেন।
-উনি আমাদের হাউসের এ্যাড অন্য জায়গায় দিতেন। সেখান থেকে বেশি কমিশন পেতেন।
-কি চম্পক অনি ঠিক কথা বলছে। অমিতাভদা বললেন।
চম্পকদা অমিতাভদার কাছে ছুটে এসে পায়ে ধরে ফেললেন
-আমায় ক্ষমা করুন দাদা, আপনার ওপর অনেক অন্যায় করেছি, আমি সত্যি বলছি, মল আর সুনীতের পাল্লায় পরে এসব করেছি, ওরাও সব ভাগ পেয়েছে দাদা আমি একা নিই নি, আপনি অনির হাত থেকে আমাকে বাঁচান, আমি জানি ওর কাছে সব ডকুমেন্টস আছে, আপনি এই হাউসের সবচেয়ে সিনিয়র পার্সন আপনার কথা অনি ফেলতে পারবে না।
-কি হে মল। চম্পক কি বলে।
-উনি প্রমাণ করতে পারবেন।
-তাই নাকি মলবাবু। আমি বললাম।
-আপনি কোনো কথা বলবেন না। আমি চম্পকের সঙ্গে কথা বলছি।
-আপনার বাড়িতো রাজস্থানে, চৌমহিনি, ট্যাঙ্করোড….আপনার ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট এতোক্ষণে সিল হয়ে যাবার কথা। একটা ফোন করুন তো আপনার ব্যাঙ্কে।
-এটা আপনি কি করছেন অনিবাবু।
-তাহলে সত্যি কথা বলুন।
-কিছু দিয়েছে, যতসামান্য।
-বাইপাসের প্রমোটিংয়ে কত ঢেলেছেন।
-ওটা আমার মাদার বিজনেস।
-হিমাংশু জেরক্সটা মলের হাতে দে। অরিজিন্যাল আমার কাছে।
-হিমাংশু জেরক্সটা এগিয়ে দিলো।
মল উঠে এসে আমার হাত জড়িয়ে ধরলো। পারলে আমার পায়ে পরে যায়।
-আপনি এতো বড় ক্ষতি আমার করবেন না। আমি একেবারে মরে যাবো। আমি বুঝে গেছি সব।
-ব্যবসায়ী মানুষ তাড়াতাড়ি আপনাকে বুঝতেই হবে।
অমিতাভদা, মল্লিকদা, মিত্রা সব মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে ব্যাপারটা কি হলো, মল এরি মধ্যে ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গেছে। ঘরের অন্য ডিপার্টমেন্টর সকলের মুখ থমথমে।
-আপনি যা বলবেন আমি করে দেবো। এটা শো হলে আমার ৩০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে যাবে।
-আমার দুটো জিনিস চাই, মির্জা গালিব স্ট্রীটের জায়গাটা, আর তোমার ৫ পার্সেন্ট শেয়ার।
সুনীতদা উঠে দাঁড়িয়ে ধপ করে বসে পরলেন, সবাই দেখলো ব্যাপারটা, কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।
আমি উঠে দাঁড়ালাম, হিমাংশু চল লালবাজার।
-না না এটা কোনো সমাধান হলো। আপনি জোর জবরদস্তি করছেন।
-কি সুনীতদা জোর জবরদস্তি না হকের জিনিষ। কোনটা। আমি বেশি সময় দিতে পারবো না। আমার কথা মানবেন না তিনজনকেই ভেতরে পুরবো।
অমিতাভদা উঠে দাঁড়ালেন
-তুই কি আরম্ভ করেছিস বলতো।
-আমি কি সেটার প্রমাণতো পাচ্ছ। আমি চাইলেও এরা এ ঘর থেকে আমাকে বেরতে দেবে না, ওই দরজায় লম্বা হয়ে শুয়ে থাকবে তিনজনে। ওদের প্রাণের পাখি আমার কাছে। তোমরা তো বলতেই দিলে না।
সুনীতদা এগিয়ে এলেন
-তুই যা বলবি তাই করবো। তুই বল কি করতে হবে।
-খালি সই করতে হবে।
-আজকেই করতে হবে।
-হ্যাঁ। ডিড তৈরি আছে, পরে নাও সই করো।
-হিমাংশু ডিড ওদের হাতে দিয়ে দাও।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 17-12-2021, 10:47 AM



Users browsing this thread: