13-12-2021, 05:45 PM
আমি অনেকক্ষণ জানলার ধারে দাঁড়িয়েছিলাম, ঘুম এলো না। সকাল হতে বেরিয়ে এলাম, আমাকে একমাত্র দোতলার বারান্দা থেকে মিত্রা দেখল, বুঝতে পারছি মিত্রা খুব কষ্ট পাচ্ছে, তবু আমি পেছন ফিরে তাকালাম না, সোজা গেট পেরিয়ে চলে এলাম। বড়মাকে দেখতে পেলাম না।
এই কদিন অফিসের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ রইলো না। সাতদিনে সাত ঘন্টা গিয়েছি কিনা সন্দেহ। রবিবার অনাদিরা এসেছিলো, ওদের সঙ্গে বসতে পারি নি, মিত্রার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি, মিত্রা ওদের সঙ্গ দিয়েছে। আমার সঙ্গে ফোনে একবার কথা হয়েছে। সনাতন বাবু খ্যাপে খ্যাপে সমস্ত কাগজপত্র দিয়েছেন, একবারে দিতে পারেন নি। হিমাংশুকে কাগজ দিয়ে বলেছি এই বছরের পরিস্থিতি জানা, ও কাগজপত্র দেখে অবাক হয়ে গেছে, বলেছে অনি আমার পক্ষে একে রিকভার করা সম্ভব নয়, তবে চেষ্টা করবো, অমিতাভদার বাড়িতে যাই নি বললেই চলে, আমি এ কদিন ইসলাম ভাই-এর সঙ্গে থেকে সমস্ত ডকুমেন্টস জোগাড় করলাম, রাতে আমার ফ্ল্যাটে থেকেছি।
ইসলাম ভাইকে একদিন অভিমান করে বলেছিলাম, তুমি সব জানা সত্বেও এই কাজ করলে কেনো, ইসলাম ভাই হাসতে হাসতে বলেছিলো, তোর মালিক হওয়ার আগেই কাজগুলো সাল্টেছি। তুই মালিক হওয়ার পর একটাও অন্যায় কাজ করিনি। জানি তুই আমার কাছে, আসবি জিজ্ঞাসা করবি। আমি তোর চরিত্রটা জানি। তবে তোকে কথা দিচ্ছি, ওরা এগুলো কোনোদিন পাবে না। সব অরিজিন্যাল আমার কাছে, এখনো আমার টাকা বাকি, দিলে পাবে, তুই যা ভাল বুঝবি এবার কর, আমি তোর মতে মত দেবো। আমি তাজ্জব বনে গেলাম সুনীত-চম্পকবাবুর কান্ডে। মাঝে একদিন দামিনী মাসির কাছে গেছিলাম। আমার পৌঁছোবার আগেই ইসলাম ভাই গিয়ে দামিনী মাসীকে সব বলে এসেছে। দামিনী মাসী বলেছে, ও যদি তোর কাজ না করে আমাকে বলবি, আমি ঝাঁটা মেরে ওকে কলকাতা থেকে বিদায় করবো, ওর মতো কত ইসলামকে আমি দেখলাম। আমি মাসির কথায় হেসেছি। টিনা, অদিতি, দেবাশিস, নির্মাল্য, মিলি আমায় কামিং তিন মাসের জন্য ১২০ কোটির টাকার এ্যাড প্যাকেজ জোগাড় করে দিলো, ওদের বললাম, তোরা আমাকে অন্যান্য এ্যাড হাউসের ব্যাপারে সাহায্য কর। ওরা কথা দিয়েছে। যত দিন এগিয়েছে, আমাকে দেখে মিত্রার মুখ শুকিয়ে গেছে, আমার কান্ড-কারখানা দেখে শেষে ও ভয় পেয়ে গিয়ে, আমাকে জড়িয়ে ধরে, একদিন রাতে প্রচন্ড কাঁদলো। আমি চলে এলাম।
মিত্রা আমার কথামতো এই কদিন কাজ করেছে, এই কয়দিনে ও যেন পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছে। মিত্রার কাছে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, সুনীতদা এবং চম্পকবাবু ইররেগুলার। আমি ওকে চুপচাপ থাকতে বলেছি। শুক্রবার আমি মিটিং আরম্ভ হওয়ার এক ঘন্টা আগে অফিসে ঢুকলাম, বুঝতে পারলাম অফিসে একটা চাপা উত্তেজনা, চারিদিকে ফুস ফুস গুজ গুজ। নিউজরুমে গেলাম, মল্লিকদা কাছে এলো, কিরে সব ঠিক আছে তো। মল্লিকদার দিকে তাকালাম। ওরা মলদের (মলরা আমাদের হাউসের ৫ পার্সেন্ট শেয়ার হোল্ডার) হাত করেছে। হাসলাম।
-তুই হাসছিস কেনো।
-তুমি হাসির কথা বললে তাই।
-ওরাও তো শেয়ার হোল্ডার।
-তো।
-আমার মাথায় কিছু আসছে না।
-সব আসবে এতদিন বহাল তবিয়েতে ছিলে। তাই কিছু বোঝার দরকার পরে নি।
-তুই ঠিক থাকলেই সব ঠিক।
-আমি বেঠিক কোথায়।
-কি সব করেছিস, তোর ওপর সবাই খেপচুয়াস।
-একচুয়েলি মৌচাকে ঢিল পরেছে। একটু আধটু হুল ফুটবেই, তাই বলে কি মধু খাবো না।
-হেঁয়ালি রাখ। দাদার প্রেসার বেরে গেছে, কাল ভীষণ শরীর খারাপ হয়েছিল।
-আমাকে খবর দাওনি কেনো।
-দাদা বারণ করলো।
-তাহলে বলছো কেনো।
-তোর বড়মা, ছোটমা কাঁদছে আর ঠাকুর ঘরে বসে আছে।
-আজকের পর আর বসতে হবে না।
ফোনটা বেজে উঠলো, দেখলাম মিত্রার ফোন।
-কি হলো।
-তুই কি অফিসে এসেছিস।
-হ্যাঁ।
-একবার আসবি।
-এখন না, ১১টার সময়।
-আমার কিছু কথা ছিলো তোর সঙ্গে।
-কি বিষয়ে।
-আজকের মিটিং-এর বিষয়ে।
-নিজে নিজে ঠিক কর সব।
মিত্রা চুপ করে গেলো।
ফোনটা কেটে দিলাম। নিজের কয়েকটা কাজ করে নিলাম, সন্দীপ আমার ধারে কাছে এলো না। অন্যান্য ছেলেগুলোরও কোনো বালাই নেই। তারা জানে কাজ করছি, মাসে মাসে মাইনে পেলেই হলো।
হিমাংশুর ফোন।
-তোদের অফিসে ঢুকছি।
-মিত্রার ঘরে গিয়ে বোস।
-তুই কখন আসছিস।
-জাস্ট দশ মিনিট পর।
-সব রেডি।
-হ্যাঁ।
ঠিক এগারোটায় আমি মিত্রার ঘরের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম, দেখলাম, আমার জায়গাটা মিত্রার ঠিক পাশেই। আমার একদিকে মল্লিকদা, আর এক দিকে অমিতাভদা। আমার ঠিক অপরজিটে মলরা, চম্পকদা, সুনীতদা আর সবাই এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে।