Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
গাড়ি পার্কিং প্লেসে রেখে দুজনে হাঁটতে হাঁটতে আসছিলাম। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে টিনা আলাপ করিয়ে দিলো, তাদের হাব ভাবে বুঝলাম তারা গদ গদ। লিফ্ট বক্সের সামনে এসে টিনা বোতামে হাত রাখলো। আমরা লিফটে উঠলাম। টিনা ৭ নম্বরটা টিপলো। বুঝলাম আটতলা। বাবাঃ অনেক উঁচু। টিনা লক খুলে আলো জ্বাললো।
-এসো আমার স্যুইট হোমে।
ভেতরে এলাম। ছোট্ট কিন্তু ভীষণ সাজানো গোছানো। মেঝেতে নারকেল দড়ির কার্পেট, দেয়ালে পুরুলিয়ার ছৌনাচের মুখোশ, টিনার রুচি আছে। আমার ফ্ল্যাটের মতো। একটা বসার ঘর আর শোওয়ার ঘর। আমি বাইরে রাখা সোফায় গা এলিয়ে দিলাম, যাও তুমি চেঞ্জ করে নাও।
-কি খাবে।
-কিচ্ছু না।
-প্রথম দিন এসেছো তোমায় কিছু না খাইয়ে ছাড়ছি না।
-আচ্ছা গরম চা খাওয়াও।
-ওটা তো আছেই, আর।
-ভালো লাগছে না।
টিনা ভেতরের ঘরে চলে গেলো। আমি বসে বসে সেন্টার টেবিলে রাখা ভোগ ম্যাগাজিনটা তুলে নিলাম, ব্যাক কভারে টিনাদের এ্যাড চোখে পরলো। একটা আর্টিকেল পড়ছিলাম, সিটি অফ ক্যালকাটা বাই রঘু রাই। রঘু রাই-এর ছবির ওপর আর্টিকেলটা, পড়া শেষ হতে দেখলাম, নিচে লেখা আছে অনুলিখন টিনা মজুমদার। দারুন টান টান লেখা।
-বাবাঃ তোমার চোখ আছে
-কেনো।
-ঠিক ওই আর্টিকেলটা বেছে নিয়েছো না।
হাসলাম।
-এবার বলো, তুমি কবে থেকে এতো ভালো লিখতে জানলে।
টিনা আমার দিকে তাকিয়ে চোরা চাহনি হানলো
-তোমার থেকেও ভাল লিখি
হাসলাম। অবশ্যই। ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ওর ভেতরটা দেখার চেষ্টা করলাম।
-তোমরতো সব পর পর সাজানো থাকে কথা। কি দেখছো।
-তোমায়।
টিনা টেবিলের বইগুলো একটা হাত দিয়ে সরিয়ে, প্লেটটা রাখলো। অনেক মিষ্টি।
-এতো খাবো না টিনা।
-একটুও বেশি না খেয়ে নাও। সেই দুপুরে আমাদের সঙ্গে খেয়েছো, তাই তো।
-আমি একটা নিয়ি নিচ্ছি, তুমি চা খাওয়াও।
-না তোমাকে সব খেতে হবে।
-খাওয়া কি পালিয়ে যাচ্ছে, আমি তো আসবো বললাম।
একটা মিষ্টি নিয়ে মুখে দিলাম, ভীষণ ঠান্ডা, বুঝলাম ফ্রিজ থেকে বার করা।
-কি হলো খাও নি।
টিনা চায়ের কাপ হাতে হাজির। টেবিলে রেখে আমার অপরজিট সোফায় বোসলো। কিছুক্ষণ আগে দেখা টিনার সঙ্গে এখন দেখা টিনার অনেক পার্থক্য। একটা ঢলঢলে ঘাঘরা রাজস্থানী স্টাইলের পরেছে, বেশ জমকালো, কালার কম্বিনেশন এতো ভালো ওর কালো রংকে আরো উজ্জ্বল করেছে, টিনা, নীপা-মিত্রা ওদের থেকে একটু ভারী, কিন্তু দেখলে বোঝা যায় না। দেবাশীষের কথাটা বারে বারে মনে পরে যাচ্ছে।
-আর একটা খাও প্লিজ।
-না। মিষ্টি বেশি খাই না। তুমিও তো কিছু খাও নি। তুমি বরং একটা খাও।
-আমি ফিরে এসে কিছু খাই না একটু কমপ্লান বা হরলিকস খাই শুধু, এমনিতেই যা মোটা। আবার মিষ্টি খেতে বলছো।
-কোথায় তুমি মোটা।
-তুমিই প্রথম বললে আমি মোটা নয়।
চায়ের কাপটা তুলে ঠোঁটে ছোঁয়ালাম।
টিনা আমার দিকে তাকালো। মিষ্টি ঠিক আছে
-বুঝি না।
তার মানে।
-ওই আর কি, আমি মনে করি গরম জল খাচ্ছি।
-তুমি কি গো।
-আমি আমার মতো।
-তুমি জিজ্ঞেস করলে নাতো তোমায় কেনো ডেকেছি।
-কি করে জানবো, তুমি ডাকলে দেখলাম আমার সময় আছে, চলে এলাম।
-দেবাশিস তোমায় পয়সার কথা বলেছে।
-কেনো।
-বলো না।
-তোমাদের এই প্রফেসনে ব্যাপারটা রয়েছে।
-অস্বীকার করছি না।
-তাহলে। অন্যভাবে নিও না, তুমি কোনো ইতসতঃ করবে না।
-এ কি বলছো অনিদা। তুমি ভুল বুঝো না।
-কেনো ভুল বুঝবো। তোমাদের যেটা প্রফেসন সেটাকে মানতে হবে।
-আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা।
-কি রকম। সঙ্কোচ করার কিছু নেই।
-আমার ওপরের যে বস আছে, তিনি টাকাও চান আবার এনটারটেনমেন্ট চান।
-অসুবিধে নেই। কিন্তু কি রকম এনটারটেনমেন্ট, সঙ্কোচ না করেই বলো।
-আমি মেয়ে কিন্তু কি করবো, চাকরি করি, কালো ধুমসি বলে বেঁচে গেছি।
হেসে ফেললাম।
-তুমি হেসো না। এরা এই রকম, কলকাতায় আমার বস একজন ছেলে। আমি তোমার ফাইলটা আজই পাঠিয়েছি, ২৪ কোটির বাজেট দিয়ে, কামিং তিন মাসে। তোমার খরচ পরবে, লাখ তিরিশেক।
-এটা আমাকে ফেস করতে হবে না তোমাকে।
-তোমাকে ফেস করতে হবে। সেই জন্যই তোমায় বোম্বে যেতে বলছিলাম।
-বিপদে ফেললে, এ কাজ কোনো দিন করিনি।
-ঠিক আছে আমি দেখছি কি করা যায়।
-না তোমায় টেনসন নিতে হবে না, আমার একটা নতুন জগত দেখা হবে।
-না না আমি ব্যবস্থা করবো।
-তুমি আমার জন্য আর কতো করবে।
-আমার বসকে বোলবো। দেখি না কি করে।
-তোমার বন্ধুরা জানে।
-না জানার কি আছে। দেবাশিস ধোয়া তুলসী পাতা নাকি।
-অদিতি, মিলি, নির্মাল্য?
-সব এক গোয়ালের গরু, আপার লেবেলে শরীরটা কিছু নয়, সেখানে টাকাটাই সব।
-তার মানে আমাকেও সেই হতে হবে নাকি।
-তোমার মধ্যে সেই প্রটেনসিয়ালিটি আছে, কিন্তু তুমি তা নও।
-কি করে জানলে।
-তোমার মুখের মধ্যে তার একটা ছাপ থাকতো।
-তুমি এতো বোঝো।
-বুঝতে হয়েছে।
-তুমি এগিয়ে যাও, আমি ঠিক সামলে দেবো।
-পারবে?
-দেখি না সামলাতে পারি কিনা। তুমি কবে খবর দেবে।
-কামিং উইকে।
-আমার নেট শেখার ব্যাপারটা।
-তুমি এলেই হয়ে যাবে।
-তোমায় ফোন করবো। রবিবার ফাঁকা আছো।
-আছি।
-দেখি বিকেলের পর আসবো। অসুবিধে নেই।
-না। একটা ফোন করে নিও।
-ঠিক আছে।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 09-12-2021, 09:13 PM



Users browsing this thread: