06-12-2021, 08:20 AM
ফিরে এসে, তাড়াতাড়ি স্নান করে খেয়ে দেয়ে বাজারে এলাম, সেদিন বিকেলটা দারুণ কাটলো, অনাদিরা সবাই এসেছিলো, রবীনও এসেছিলো, মিত্রা রবীনকে বলেদিলো কাল সকাল পাঁচটায় বেরোবে, ও যেন তার আগে গাড়ি চেক করে রেডি হয়ে নেয়। আগামীকাল সকাল ৯টার মধ্যে অফিসে পৌঁছতে হবে। রবীন বেশিক্ষণ থাকলো না, চলে গেলো। আমরা প্রায় আটটা পর্যন্ত বাজারে ছিলাম, তারপর চলে এলাম, ওরাও সবাই হাঁটতে হাঁটতে আমাদের সঙ্গে এলো, আমি অনাদিকে রবিবারের কথাটা মনে করিয়ে দিলাম, বাসুর বাড়িতেও গেছিলাম, এ গ্রমে বাসুরটাই দেখলাম, পাকা বাড়ি। মিত্রার এই গ্রামের হাটটা ভীষণ ভালো লাগলো, অনেক কিছু কিনে কিনে ওদের সব গিফ্ট দিলো, আমি বাসু আর সঞ্জয়ের বকেয়া টাকা মেটালাম, বললাম আমার অবর্তমানে, কাকাকে তোরা দেখবি। ওরা কথা দিলো।
রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পরলাম, মিত্রাকে বললাম
-করবি নাকি?
-থাক, কাল সকালে বেরোতে হবে, তারপর এতোটা জার্নি।
-হ্যাঁরে বড়মাকে একবার ফোন করেছিলি।
-করেছি।
দুজনে যাপ্টা যাপ্টি করে শুয়ে পরলাম, চারটে নাগাদ কাকা ডেকে দিলো, আমরা রেডি হয়ে গেলাম, কাকার মনটা খারাপ হয়ে গেলো, নীপার চোখ ছলছলে, কাকীমা মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে কিছুটা কাঁদলেন, কাকা বললেন তুই কবে আসছিস, আমি বললাম বলতে পারবো না, কলকাতা যাই, দেখি গিয়ে ওখানকার পরিস্থিতি তারপর। সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে এলাম, ওদের মনটা ভারি হয়ে গেলো, মিত্রার মনটাও কম ভারি হয় নি।
গাড়িতে আসতে আসতে ও আমার সাথে খুব কম কথাই বললো, সব সময়ই জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়েছিল। কলকাতার কাছাকাছি আসতে খালি বলেছিলো
-বুবুন কোথাও গিয়ে ফেরার সময় এতটা মন খারাপ লাগে নি কখনো, কেনো বলতো।
আমি মৃদু হেসে বলেছিলাম “ভালোবাসা”।
ও চুপ করে গেলো।
অফিসে ঢোকার কিছুক্ষণ আগে ওকে বললাম, কি রে মিটিং-এ কি নিয়ে আলোচনা করবি ভেবেছিস।
-কেনো তুই মিটিং অগার্নাইজ করবি, আমি তোর পাশে বসে থাকবো।
-না তা হবে না। তোকেও তোর বক্তব্য রাখতে হবে, আমরা কি চাই সেই ব্যাপারটাও ওদের বলতে হবে।
-তুই বল কি বোলবো।
-সেদিন ফোনে যে ব্যাপারগুলো তুই বলেছিলি মনে আছে।
-কিছুটা।
-সেইখান থেকে তোকে ধরতে হবে, মাথায় রাখবি সুনীত এবং চম্পক পালের গোদা, আমি সূত্রধরের কাজ করবো। তবে ওদের সঙ্গে আরও কিছু মাল আছে, অফিসে যাই, আজই কালেকসন হয়ে যাবে, যা খবর, মল্লিকদা বেশ যুতসই ভাবে নিউজরুমে বসেছে।
-তুই এত সব খবর রাখলি কি করে।
-এসে যায়, এতদিন দায়িত্বে ছিলাম না, কে মালিক, কে কি জানার দরকার ছিল না, খালি এডিটরকে চিনতাম, উনি স্টোরি করতে বলতেন, আমি লিখতাম, মাস গেলে মাইনেটা ঠিক মতো পাচ্ছি কিনা দেখতাম।
-আমার কথা তোর একেবারে মনে আসতো না।
-তোকে যেদিন প্রথম দেখলাম ক্লাবে, তারপর থেকে ভাষা ভাষা আমার চোখের সামনে তোর মুখটা ভেসে আসতো। ভুলে যাবার চেষ্টা করতাম।
-কেনো।
-যে জিনিষটা পাওয়ার নয় সেটাকে আঁকড়ে ধরে লাভ।
-তখন তুই জানতিস না, আমি এই পত্রিকার একজন শেয়ার হোল্ডার।
-না। তবে তুই যখন বললি আমি ফোন করে দিচ্ছি, তখন ভেবেছিলাম, অমিতাভদার সঙ্গে অনেকের আলাপ আছে, তোরও থাকতে পারে।
-সত্যি বলছি তোকে আমি কোনোদিন দেখিনি। দেখ এতকাছে ছিলাম কিন্তু কতো দূরে। আসা যাওয়ার পথেও তোর সঙ্গে কোনো দিন দেখা হয় নি।
-আমি বেশির ভাগ বাইরে থাকতাম, তারপর অফিসে ঢুকতাম রাতের বেলায়, ফিরতাম ভোর রাতে।
-প্রত্যেক দিন।
-হ্যাঁ। কে আমার খোঁজ নেবে বল।
-বড়মা, ছোটমা।
-সেতো বছর খানেক হলো। তোর অফিসে আমি বিগত চার বছর ধরে আসছি। প্রথমে ফ্রিল্যান্সার তরপর চাকরিটা জুটলো।
-তোকে এ্যাপয়েন্ট দিয়েছিলো।
-তা জানি না। অমিতাভদা একদিন বললেন তোর বায়োডাটাটা দিস। দিলাম তারপর নেক্সট যে দিন এলাম সেদিন বললেন কালকের থেকে অফিসে আসিস। সেই শুরু।
-তখন কোথায় থাকতিস।
-শুনে তোর লাভ।
-বলনা শুনতে ইচ্ছে করছে।
-সোনাগাছিতে একটা মাসির ঘরে।
-কি বলছিস। ইনটারেস্টিং।
হাসলাম।
-সত্যি ইনটারেস্টিং। সে কয়বছর আমার জীবনে একটা বিরাট অভিজ্ঞতা, ওই নিয়েই তো লিখেছিলাম, সোনাগাছির সোনামেয়ে। তোর কাগজে আমার প্রথম ব্রেক। আমার এখনো পযর্ন্ত সব লেখার মধ্যে ফেবারিট লেখা।
-লেখাটা পরেছিলাম, মনে পরছে। কিন্তু ওটা যে তুই লিখেছিস তা জানতাম না। তারপর।
-তারপর অমিতাভদা নিয়ে এলেন তার বাড়ি। সোনাগাছির তল্পি-তল্পা গোছালাম। এখনো আমি গর্ব করে বলতে পারি, আমার যা সোর্স আছে পুলিশেরও নেই, কাগজের লাইনের লোকের কথা বাদই দিলাম।
-ওখানে যাস।
-মাঝে মাঝে যাই। অনেক নতুন মুখ, তবে পুরোনা যারা আছে, ভীষণ ভালোবাসে, তবে প্রত্যেক বছর কাতির্ক পূজোর সময় আমায় যেতেই হয়।
-ফ্ল্যাটটা।
-ওটাতো অফিসের। কার জন্য মনে হয় নেওয়া হয়েছিলো, সে থাকলো না, আমায় দিলো।
-কোথায় রে ফ্ল্যাটটা।
-ট্রাংগুলার পার্কের পেছনে।
মিত্রা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো।
-তোর লাইফের জার্নিতে অনেক ভ্যারাইটি আছে।
-তা আছে।
-যাক আমি আর তুই এবার অনেকটা রিলিফ পাবো।
-ঘেচু।
-মিটিং-এর পর কি করবি।
-আমার কিছু কাজ আছে, তুই বাড়ি যাবি।
-আজ বাড়ি গিয়ে ভালো লাগবে না।
-তাহলে।
-তোর ঘরে শুতে দিবি।
-ছোটমা, বড়মার পারমিশন নিয়ে নে। আমার তো ফিরতে ফিরতে সেই রাত হবে।
-আমি তাহলে মিটিং সেরেই পালাবো।
-হ্যাঁ।
অফিসের গেটে গাড়ি এসে দাঁড়াতেই সবাই কেমন যেন তটস্থ ভাব। রবীন নেমে এসে গেট খুলে দিলো, আমি মিত্রা নামলাম। লিফ্টের সামনে বেশ লাইন ছিলো, সব অফিস স্টাফ, আমাদের দেখে, সবাই সরে দাঁড়ালো, কেউ কেউ মিত্রাকে মর্নিং ম্যাডাম বললো, আমাকে এই হাউসের নিউজের আর এ্যাডের লোক ছাড়া বেশির ভাগ কেউ চেনে না। লিফ্টে দুজনেই উঠলাম, এখনো অনেকে অফিসে আসে নি, মিত্রাকে বললাম তুই তোর ঘরে যা আমি নিউজরুমে যাচ্ছি একটু হালচালটা বুঝে নিই।
নিউজরুমে ঢুকতেই দেখলাম, মল্লিকদা তার জায়গা আলো করে বসে আছে, পনেরোদিন পর এই রুমে ঢুকলাম, পরিবর্তন বলতে খালি দুটো ঘর এক্সট্রা হয়েছে, আমাকে দেখেই মল্লিকদার গাল চওড়া হলো। পাশাপাশি অনেক পুরোনো নতুন লোক দেখতে পেলাম, নতুন যেগুলো আমাকে দেখে নি, তারা প্রথমে বুঝতে পারে নি। আমি কাছে গিয়ে প্রণাম করলাম, বাড়ির খবর কি। তুমি এত সকালে কেনো, দাদা কোথায়।
মল্লিকদা বললেন কোনটা আর্জেন্ট।
-সবকটা।
-একসঙ্গে উত্তর দেওয়া যাবে না।
আমি আমার টেবিলে চলে গেলাম, দেখলাম সব কিছু ঠিকঠাক আছে, কোনো পরিবর্তন হয় নি, দেখে মনে হচ্ছে, কেউ বসে কাজ করলেও, আমার জিনিষপত্র খুব বেশি একটা ঘাঁটা ঘাঁটি করে নি। রাশিকৃত চিঠি, জড়ো হয়ে আছে। মল্লিকদা কাছে এলেন, কথা বল।
-কে ।
-ছোট।
-আমি হেলো করতেই বললেন
-এসেছিস একটা খবর দিতে হয় জানিস না।
-সবেমাত্র এলাম একমিনিটও হয় নি। ফোনটা বেজে উঠলো। একটু ধরো, মিত্রা ফোন করেছে
-বল
-বড়মাকে ফোন করেছিলাম, তোকে ফোন করতে বললো।
-ছোটর সঙ্গে কথা বলছি, মল্লিকদার ফোনে ছোটোকে ধরে রেখেছি।
-আচ্ছা।
-শুনলে।
-শুনলাম।
-এবার বলো।
-একজন তো বললো দুপুর বেলা আসবে, আর একজন।
-রাতে যাওয়ার কথা আছে, যেতেও পারি নাও যেতে পারি।
-হুঁ। দিদির সঙ্গে কথা বল।
-এখন নয়, আচ্ছা আচ্ছা দাও।
-হ্যালো, হ্যাঁ বলো। শোনো আমি কাজ সেরে তোমাকে ফোন করছি, না না যাবো, দাদা বেরিয়েছে, ঠিক আছে।
-এবার বলোতো ফোনটা কে করলো।
-তুই বিশ্বাস কর আমি করেছিলাম, কিন্তু এনগেজ ছিলো, তারপর ও রিংব্যাক করলো।
-এরা কারা । ইশারায় বললাম।
-সব নয়া মাল, সুনীতের ফ্রিল্যান্সার।
-তোমার এখানে।
-তেল তেল। যদি কাজ হয়।
-নীচে ঢুকতে দেয় কে।
-আর বলিস না। সিকিউরিটির লোকগুলোকে পযর্ন্ত বিষিয়ে দিয়েছে।