Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
সকালে অনেক বেলায় উঠলাম, জানিনা আজ কেউ ডেকে ছিলো কিনা, তবে উঠতে উঠতে বেলা দশটা বাজলো। দুজনে রেডি হয়ে, এ বাড়িতে এলাম। নীপা রান্না ঘরে কাকীমার সঙ্গে ছিলো, আমাদের দেখে মুচকি হেসে বললো,
-আজ কিন্তু কোনো ডিস্টার্ব করিনি।
মিত্রা হাসলো।
-তোমরা পুকুর ঘাটে যাও আমি যাচ্ছি।
আমি মিত্রাকে বললাম, পেস্ট নিয়ে এসেছিস।
-দূর, নিম ডাল ভাঙ।
আমি নিম ডাল ভেঙে দাঁতন করলাম, মিত্রা আমি দুজনে পুকুর ঘাটে পা ছড়িয়ে বসে দাঁত মাজলাম।
-হ্যাঁরে বুবুন এই পুকুরটায় মাছ নেই।
-আছে।
-ধরা যায় না।
-যায়, তবে জাল ফেলতে হবে।
-ছিপ দিয়ে।
-ছোট ছোট বাটা মাছ পাবি।
-ধরবি।
-নীপাকে বলিস, ও বড়শির ব্যবস্থা করে দেবে তখন ধরিস।
আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললো, একবার শ্মশানে যাবি। এখন তো রাত নয়।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
-কাউকে বলিস না, চা খেয়ে পালাবো।
নীপা এলো, কি ফিস ফিস করে কথা হচ্ছে শুনি।
আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, বড়দের কথায় কান দিতে নেই।
মুখ ধুয়ে চলে এলাম, মিত্রা, নীপা ঘাটে বসে কথা বলছে, আমি ঘরে ঢুকে জামা প্যান্ট পরে নিলাম। মিত্রা, নীপা দুজনে একসঙ্গে ঢুকলো, দেখলাম ট্রেতে ঘি, নারকেল কোড়া দিয়ে মুড়ি মাখা, আর চা। খিদে খিদে পাচ্ছিল, আমি আর দেবার অপেক্ষা রাখলাম না, নিজে নিয়ে খেতে আরম্ভ করলাম।
-বুবুন একটা কথা বলবো।
-নিশ্চই, কোনো…….
-না সেরকম কিছু না। নীপা যেতে চাইছিলো আমাদের সঙ্গে।
নীপা মুখ নীচু করে দাঁড়ালো। একবার মুখটা তুলে, আবার নামিয়ে নিলো। মিটি মিটি হাসছে।
-বাঃ চালটা ভালোই চেলেছো, মালকিন বললে কমর্চারী না করতে পারবে না।
-ঠিক আছে, যাবো না যাও।
-উরি বাবা এটুকু শরীরে রাগ দেখেছিস।
মিত্রা হাসছে।
-কেউ যেন জানতে না পারে।
-আচ্ছা।
-তুই আয় জামা কাপড় পরে। আমি রেডি হয়ে নিই।
নীপা লাফাতে লাফাতে চলে গেলো।
-মোটামুটি ঘন্টা দুয়েক ধরে ওদের গ্রাম ঘোরালাম, রথ শহর, কাশী ঘরের ডাঙা, শ্মশান, বুড়ো শিবের মন্দির, আমার কলেজ, শেষে এলাম পীর সাহেবের থানে।
-মিত্রা বললো কোথায় তোর পীর সাহেব।
আমাদের কলেজ থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে পীর সাহেবের থান। আমি বললাম
-ওই যে অশ্বথ গাছটা দেখা যাচ্ছে, ওটা পীর সাহেবের থান।
-অশ্বত্থ গাছটা দেখতে পাচ্ছি, পীর সাহেবকে কই দেখতে পাচ্ছি না তো।
-তুই দেখতে পাবি না। সাদা চোখে দেখা যায় না।
-তোর যতো সব আজগুবি কথা।
-নারে, আমার বাবা দেখেছিলেন।
কাকার মুখ থেকে শুনেছিলাম
তখন অনেক রাত বাবা কিসের মিটিং করে ফিরছিলেন। বাবাও এই কলেজের মাস্টার ছিলেন। রাস্তা দিয়ে আস্তে আস্তে বাবার চোখটা হঠাৎ ওই দিকে চলে যায়, তখন দেখেন একজন বৃদ্ধ থুরথুরে ভদ্রলোক ওই গাছের তলায় বসে, তার পক্ককেশ দাড়িতে হাত বোলাচ্ছেন, বাবা প্রথমে বিশ্বাস করেন নি (দেখলাম নীপা আমার একটা হাত চেপে ধরেছে, মিত্রাও আমার আর একটা হাত চেপে ধরেছে)। বাবার খুব সাহস ছিলো, বাবা দাঁড়িয়ে পরে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলেন, কিন্তু কিছুতেই সেই ভদ্রলোক বাবার দিকে তাকান না। বাবা দু তিনবার ডাকলেন, কোন সাড়াশব্দ নেই, শেষ পযর্ন্ত বাবা হাতের টর্চলাইটটা জেলে ওই অশ্বত্থ গাছের তলায় আলো ফেললেন, দেখলেন কেউ বসে নেই। বাবা আবার লাইট অফ করলেন, দেখলেন সেই বৃদ্ধ দাড়িতে হাত বুলোচ্ছেন, অসম্ভব সুন্দর দেখতে, বাবা আবার ডাকলেন, কোন সারা শব্দ নেই, আর কিছু করেন নি, এইখানে প্রণাম করে বাবা বাড়ি চলে আসেন। কাকাকে সমস্ত ব্যাপারটা বলেন, কাকা বলেছিলেন, অধীপ তোর ভাগ্যটা ভালো, ওই মানুষের বড় একটা দেখা পাওয়া যায় না, আমাদের সামন্ত কাকা, ঠিক ওই জায়গাতেই ওনাকে দেখেছিলেন। উনি পীরবাবা, বাবা সেই থেকে এই পথে কলেজ যাওয়ার সময় এই পুকুর ঘাটের ধারে প্রণাম করে কলেজে যেতেন, আমিও কোন একদিন বাবার হাত ধরে কলেজ যাওয়ার পথে প্রণাম করেছিলাম, সেই থেকে আমিও প্রণাম করতে থাকি, বলতে পারিস একটা ট্রাডিশন।
-কোনোদিন দেখেছিস।
-অনেক বার চেষ্টা করেছি, দেখতে পাই নি।
মিত্রা নীপা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, রাত্রি বেলা এখানে এসে দেখার চেষ্টা করেছিস।
-হ্যাঁ।
-দিনের বেলা এরকম শুনশান রাতের বেলা…..
মিত্রাদি তুমি আর কিছু বোলোনা প্লিজ, রাতের বেলা আমি আর পুকুর ঘাটে আসতে পারবো না।
মিত্রা হাসলো। আমরা নমস্কার করবো।
-সেটা তোদের ব্যাপার।
মিত্রা নীপা আমার কথা শেষ হবার পরেই জুতো খুলে প্রণাম করলো। আমিও প্রণাম করলাম।
প্রণাম করে উঠে বললো, তুমি কতো কি জানো অনিদা, দেখ আমি কতদিন হয়ে গেলো এখানে এসেছি, বিন্দু বিসর্গ কিছু জানতে পারি নি, আরো কত কি সেদিন ওদের বলেছিলাম, ঠিক মনে করতে পারছি না, নীপা আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে গল্প গুলো শুনছিলো, আর অবাক চোখে তাকিয়েছিলো।
-তুমি এগুলো কি করে জানলে।
-এর মুখ থেকে তার মুখ থেকে শুনে শুনে।
-মশাই জানে।
-জানে কিছু কিছু, তবে সামন্ত ঘরের ফনি বুড়ো, ও হচ্ছে এই বের ভেতরের সবচেয়ে পুরোনো মানুষ, আমি প্রায়ই দাদুর সঙ্গে গল্প করতাম, দাদুই গল্পগুলো বলতো।
-বের ভেতর কি রে বুবুন।
-বের ভেতর হচ্ছে গ্রাম্য কথা, মানে এই তল্লাট।
-তুই এগুলো লিখে ফেল বুবুন, দারুন হবে।
-ভাবছি লিখবো।
-সব গল্পের মধ্যে পীর সাহেবের থানের গল্পটা ওদের দারুন লেগেছিলো।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীর সাহেবের থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 05-12-2021, 07:11 PM



Users browsing this thread: