03-12-2021, 11:27 AM
বাঁশ বাগানকে এখন বাঁশ বাগান বলে মনে হচ্ছে না, চারিদিকে আলোর রোশনাই, সঞ্জয় বাবু করেছেন, জেনারেটর চলছে, একদিকে রান্নার আয়োজন। চিকনা সব দেখা শোনা করছে, আমাকে দেখে এগিয়ে এলো, গুরু সব মনপসন্দ তো।
-এর থেকে ভালো হয় না।
-একটা সিগারেট।
-খালি আমি একা।
-ও শালারা হাড় হারামী, বলে কিনা সিগারেট যে যার নিজের ফান্ডে খাবে।
-আচ্ছা তোরা তো আমায় খরচ করতে দিলি না, সিগারেটটা আমি দিই।
-না ওটা আমি স্পনসর করছি।
-তাহলে ওদের দে।
-দেখলি কি ভাবে ঘুরিয়ে ঝারলো।
-নে খা।
-অনাদি, বাসু হাসছে।
-গুরু ওইটা দেখেছো।
-কোনটা।
-ওই যে দিবাকর কেস।
-না । মনেই ছিলো না।
-সত্যি তুই একটা মাকাল ফল। এই সব মাল কেউ ছাড়ে। দে তো তোর মোবাইলটা।
-ওটাতো রেখে এলাম। তুই নিয়ে আয়।
চিকনা একটা ছুট লাগালো। অনাদি বললো, পাগল একটা।
-জানিস অনাদি ওর মনটা এখনো বিষিয়ে যায় নি।
-হ্যাঁ আমাদের মধ্যে ও এখনো ঠিক আছে। তারপর পরিবেশ পরিস্থিতি মানুষকে অনেক পরিবর্তন করে দেয়।
-ঠিক বলেছিস।
চিকনা ফিরে এলো, হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, তুই এখুনি আমাকে কেস খাওয়াতিস।
-কেনো।
-আগে বলবি তো ওটা এখন ড্রেসিং রুম। ভাগ্যিস দরজা বন্ধ ছিলো।
-পেয়েছিস তো।
-হ্যাঁ। তোরা দেখবি।
বাসু হাসছে। তুই দেখ।
-হ্যাঁরে সেগো, তোরা তো সব সতী খানকি, হয়ে গেছে কিনা, যা তোদের দেখতে হবে না, আমি আর সঞ্জয় দেখি।
বাসু হাসছে। চিকনা চলে গেলো।
-হ্যাঁরে দিবাকর আসবে না।
-আসবে না মানে চলে এলো বলে।
-ওই মেয়েটা আসবে।
-আসবে হয়তো নীপার সঙ্গে ওর খুব ভাব।
-নীপার সঙ্গে কারুর ইন্টু মিন্টু আছে নাকি রে।
-এখনো পর্যন্ত যতদূর জানি নেই। ও খুব তেজি ঘোঁড়া ওকে পোষ মানানো খুব মুস্কিল। তাছাড়া, আমাদের গ্রামের সবচেয়ে ভাল রেজাল্ট করা মেয়ে। ওই দেমাকটাও আছে।
-এই দেমাক থাকা ভালো।
-দিবাকর একবার লাইন লাগিয়েছিল। তারপর থাপ্পর খেলো। সেই নিয়ে কত জল ঘোলা হলো। খালি স্যার বললো বলে। তারপর তো ওই মেয়েটা ফেসে গেলো।
-এখন কি ওকে বিয়ে করবে, না ফুর্তি করে ছেড়ে দেবে।
-না তা হয়তো পারবে না।
-তুই কি বলিস।
-আমি কি বলবো, ওদের ব্যাপার।
-না, যদি মেয়েটাকে বিয়ে করে তাহলে আমি মিত্রাকে বলে ওর একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারি। তবে কলকাতা নয়, এখানেই থাকতে হবে, ওকে ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেস করে দেবো। হাজার সাতেক টাকা মাইনে পাবে।
-তাহলেতো খুব ভালো হয়।
-তুই কথা বল।
-তুই চিকনার জন্য একটা ব্যবস্থা কর।
-ওর জন্য আমার মাথায় একটা চিন্তা আছে, শুক্রবারটা আমার খুব ভাইট্যাল, তুই রবিবার বাসু আর চিকনাকে নিয়ে আমার ফ্ল্যাটে চলে আয়। অসুবিধে হবে।
-না। কিন্তু ফিরে আসবো।
-হ্যাঁ, সকাল সকাল চলে আসিস, বিকেলের ট্রেনে ফিরে আসবি।
-সেটাই ভালো, বাসু বললো।
-কাকা আমায় ডেকেছিলো আমার জমি জমার ব্যাপার নিয়ে, সেটা নিয়েও আমার একটা পরিকল্পনা আছে, সেটাও আলোচনা করে নেওয়া যাবে।
-তুই কি পরিকল্পনা করেছিস।
-আয় না জানতে পারবি। হ্যাঁরে অন্নপূর্ণা পূজো এখনো হয়।
-সে কি রে, না হওয়ার কি আছে, গ্রামের পূজো বলে কথা।
-দশ বছর আসি নি। জানিনা কলকাতা গিয়ে আমার কপালে কি লেখা আছে, যদি সময় বার করতে পারি অবশ্যই আসবো এবার।
-আসবো মানে, তোকে আসতেই হবে, উইথ ম্যাডাম, জানিস আমরা এরি মধ্যে কতো পরিকল্পনা করে ফেলেছি।
-ঠিক আছে শোনা যাবে।
-নে তোর মোবাইল ধর। চিকনা এসে মোবাইলটা দিলো।
-দেখলি, অনাদি বললো।
চিকনা এমনভাবে তাকালো, অনাদি হেসে ফেললো।
-খাসা মাল, তুললো কি করে বলতো।
-যেমন ভাবে তোলে।
-শালা, শুয়োরের বাচ্চাটাকে দেখলে বোঝাই যায় না শালার ওরকম নেও বাই আছে।
চিকনা, আমি ইশারা করলাম। চিকনা পেছন ফিরে তাকালো, মিত্রা, নীপা আসছে। চিকনা কান নাক মুলছে, বড় জোর বেঁচে গেলাম, জেনারেটর চলছে বলে।
হেসে ফললাম।
-এখন থেকে মুখ সামলিয়ে। অনাদি বললো।
-সে আর বলতে।
মিত্রা নীপা দুজনেই আজ সালোয়ার কামিজ পরেছে, অনেকটা কাশ্মীরি স্টাইলের। দারুন সেক্সি লাগছে দুজনকে। আমার সামনে এসে বললো, বল কেমন দিয়েছি।
ওর বলার ধরনে বাসু মুচকি হাসলো।
-অনাদি আর সবাই কোথায় কাউকে দেখছি না তো।
-সবে তো সাড়ে ছটা সাতটা নাগাদ সবাই চলে আসবে।
-হ্যাঁরে অমলবাবু আসবেন না।
-অবশ্যই থাকবেন আজ রাতে, বাসুর বাড়ির একটা ঘর ফিট করেছি, ওখানে রাতে পুরে দেবো। কাল সকালে একটা মিটিং আছে বাজার কমিটিকে নিয়ে তারপর বিকেলের দিকে যাবেন।
মিত্রা বললো মেনু কি।
-ফ্রাইড রাইস, চিকেন, চাটনি, দই, মিষ্টি।
-হ্যাঁরে কাকা চিকেনের পারমিশন দিয়েছে।
-ভিটেতে উঠছে নাতো।
-কাকাদের জন্য।
-মাছের ব্যবস্থা করেছি, সুরমাসি রাঁধবেন।
-গন্ধটা দারুন বেরিয়েছে। আমরা একটি টেস্ট করবো না। মিত্রা বললো।
-একটু অপেক্ষা করুন ।
-দই কি মিষ্টি না টক।
-মিষ্টি দই।
-আমার জন্য একটু ওই দইয়ের ব্যাবস্থা কর না।
-তুই না সত্যি।
-খই মুড়ি দিয়ে পড়েয়া ঘরের সেই দই একনো মুখে লেগে আছে।
চিকনা বললো ঠিক আছে, তোর জন্য আর কেউ ব্যবস্থা করুক না করুক আমি করবো।
আমি হাসলাম।
-আমায় খাওয়াবিনা। মিত্রা বললো।
-ঠিক আছে হবে।
-আপনার জন্য। চিকনা নীপার দিকে তাকিয়ে বললো।
-আমি দুজনের থেকে ভাগ নিয়ে নেবো।
-দুঃখিত। অনির ভাঁড়টা আমার। আমার পেছনে সঞ্জয়।
-তাহলে মিত্রাদির টা।
-হতে পারে, যদি অবশিষ্ট থাকে।
-উঃ তুই ওর পেছনে এতো লাগিস না।
-কি করবো বল, এই গ্রামে ওর সঙ্গেই খালি কথা বলি। একমাত্র ওই আমায় ভাই ফোঁটা দেয়, আমারতো কোনো বোন নেই। চিকনার গলাটা কেমন ভারি হয়ে এলো।
-সঞ্জয় কোথায় বলতো, একেবারে দেখতে পাচ্ছি না।
-জেনারেটরের পেছনে কাঠি মারছে। তবে আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর সবাইকে পেয়ে যাবি।
সত্যি সত্যি আধ ঘন্টার মধ্যে সকলে চলে এলো, দিবাকর এসেছে, এসেই সেই এক কথা অনি আমাকে ক্ষমা কর, আমি আর জীবনে কোনো ভুল করবো না, তুই যা বলবি তাই শুনবো, আমি বললাম, ঠিক আছে,
-তোর বউকে নিয়ে আসিস নি।
-হলো কই কালকের পর আর আমার সঙ্গে কথা বলছে না। ও মোবাইল কেসটা জেনে ফেলেছে।
-তোর বিশ্বাস ছিল না, ওর প্রতি।
-ছিলো।
-তাহলে ওটা করতে গেলি কেনো।
-কি খেয়াল হলো।
-ঠিক আছে, অনাদির সঙ্গে কথা বলবি। আর আগামী রবিবারের পর, অনাদির সঙ্গে এসে দেখা করবি ও সব বলে দেবে।
-তোর হবু বউকে ডাক।
-ও তোর কাছে এসে মুখ দেখাতে পারবে না।
-ঠিক আছে নীপাকে বল আমার কাছে নিয়ে আসতে।
নীপা আর মিত্রা দুজনে আজ অতিথি সামলাচ্ছে, নীপা কিছুক্ষণ পর, শেলিকে নিয়ে এলো, শেলিকে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। আমি ওকে বোঝালাম, তুমি ওকে ক্ষমা করে দাও, আমি কলকাতা যাই ওর একটা ব্যবস্থা করে দেবো, আমি অনাদিকে কথা দিয়েছি।
-মেয়েটি সত্যি খুব ভালো, সবার সঙ্গে কথা বলছি, একে একে কাঞ্চন, ললিতা এসেছে। মিত্রা হাত ধরে দুজনকে আমার কাছে নিয়ে এলো, মিত্রা বললো দেখ, কি নিয়ে এসেছে।
-এ গুলো আবার কি, অনাদি আর বাসুর দিকে তাকিয়ে বললাম। ওরা বললো, তোকে তো কিছু দেওয়ার নেই, একটা পাজামা পাঞ্জাবী, আর ম্যাডামের জন্য শাড়ি।
-ভাল করেছিস।
-আজকের দিনে আমি কিছু ফিরিয়ে দেবো না।
কাকা কাকীমা সুরমাসি এসে একবার দেখে গেছে।
সবাই আমাকে মিত্রা ঘিরে, আমি নীপার দিকে তাকিয়ে বললাম, দেখ মিত্রা সবার একটা একটা আছে, খালি নীপার ভাগ্যে কিছু জুটলো না।
-কেনো আমার ভাগ্যে তুমি আছ।
মিত্রা সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো। ও তোর দাদা না।
ও সঙ্গে সঙ্গে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে বললো, সরি সরি আমার ভুল হয়ে গেছে।
চিকনা দৌড়তে দৌড়তে এলো, গুরু খেল জমে গেছে।
-কেনো রে।
-দেখো না এখুনি।
দেখলাম, সঞ্জয়ের পাশে নীপার মতো একটা মেয়ে, হেঁটে হেঁটে আসছে। সঞ্জয় কাছে এসে বললো, তোর জন্য অনেক ঝক্কি পোহাতে হলো, খালি তোর নাম বলতে ছেড়েছে, না হলে, আজ আমার কপালে শনি ছিলো।
মেয়েটা সত্যি দেখতে খুব মিষ্টি। কাপড় পরে এসেছে, সাধারণ সেজেছে, কিন্তু তার মধ্যেও দারুন লাগছে।
-তোর চয়েস আছে সঞ্জয়। মেয়েটি আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো, মিত্রাকেও প্রণাম করলো। অনাদি আমাকে বললো, চিন্তে পারলি না।
আমি অনাদির দিকে মাথা দুলিয়ে বললাম, না।
-আরে মিনু, উনা মাস্টারের মেয়ে।
আমি মেয়েটিকে কাছে টেনে নিলাম, ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম, ওর মুখটা হাতে তুলে ভাল করে দেখলাম, মিত্রাকে কাছে ডেকে নিয়ে বললাম, এই মেয়েটাকে কতো কোলে নিয়েছি জানিস, লাস্ট ওকে যখন দেখি তখন টেপ ফ্রক পরে ঘুরতো, আজ একেবারে লেডি।
সবাই হেসে ফেললো, মিনু লজ্জা পেয়ে গেলো। চিকনা বলে উঠলো, তুই বল অনি, শেষ পর্যন্ত সঞ্জয় কিনা…..সঞ্জয় পায়ের জুতো খুলে চিকনাকে তারা করলো। হাসতে হাসতে আমাদের প্রাণ যায়। সত্যি ওই সন্ধ্যেটা দারুন কাটলো।