02-12-2021, 09:57 AM
বিষ-মুক্তি
অয়নের স্পর্শে ভেসে যাচ্ছে তুলি আজ।
গত দুটো উইকএন্ডে বাড়ি আসতে পারেনি তুলি। অনেকগুলো কাজ জমে ছিল। গতসপ্তাহে তো রবিবারও অফিস করেছে।
কিন্তু সত্যি বলতে কি... মন পড়ে ছিল বর্ধমানেই। একটু ফাঁক পেলেই মনে হতো... কতগুলো দিন হয়ে গেল... বাবার সাথে বসে চা খায়নি... মায়ের হাতের রান্না খায়নি...আর অয়নের সাথেও দেখা হয় নি!
কেমন টিনএজারের মতো লাগত! সেই ক্লাস টেন এ ইংলিশ স্যারের কোচিং এ একজনের প্রেমে পড়েছিল, তাকে না দেখলে মন আনচান করত...। একবার তো বিয়েবাড়িও মিস করেছিল স্যারের ক্লাস আছে বলে! আজকাল, অয়নের জন্য সেরকমই মনে হয় তুলির। সোমবার, বাড়ি থেকে সরাসরি অফিস জয়েন করার পর থেকেই ক্যালেন্ডার দেখতে থাকে... শুক্রবার আসতে আর কতদিন বাকি! সাধারণত শুক্রবারেই অফিসের পরে ধর্মতলা থেকে বাস ধরে নেয় ও। আর শনিবার গুলো যেন স্বপ্নের মতো কাটে! রবিবার এলেই যদিও অনিবার্যভাবেই মন খারাপ হয়ে যায়। আর এই দু' দুটো উইকএন্ড কেটে গেল অফিসের ল্যাপটপ, প্রেজেন্টেশান আর মেইলের কচকচি নিয়েই।
মাঝেমাঝে নিজেকেই বুঝিয়েছে তুলি... "এসব কি হচ্ছে শুনি! তুই তো আর বাচ্চা মেয়ে না! আগেও একজন ছিল তোর জীবনে। কিন্তু তখনও তো এমনি করিসনি কখনও!" নিজেকে করা প্রশ্নের কোনো উত্তর পায়নি। প্রবলভাবে ভেসে গেছে স্মৃতিতে ডুব দিয়েই!
আর তাই, আজ অয়নের সামান্য স্পর্শেই যেন মোম হয়ে যাচ্ছিল তুলি! অয়নের হাল্কা স্টাবল, এলোমেলো চুল আর... ভিজে ছোঁওয়া... আহ্!
"আই লাভ ইউ,অয়ন। খুউউউব মিস করেছি তোকে এই দু সপ্তাহ!" ভাঙা ভাঙা গলায় বলে তুলি।
থেমে যায় অয়ন। তারপর জিজ্ঞেস করে "সত্যি?"
"তিন সত্যি!"
"তাহলে আসিস নি কেন?"
"কাজ ছিল রে... একটা টেন্ডারের কোটেশান দেবার ছিল।"
"তোর অফিস তো শনি-রবি ছুটি থাকে?"
"অয়ন, তুই জানিস... আমার কাজটাই এমন, কোনো কোটেশান দেবার আগে অনেক কিছু ডিউ ডিলিজেন্স থাকে... খতিয়ে দেখার ব্যাপার থাকে। ভুলভাল হয়ে গেলে গোটা কোম্পানি ব্ল্যাকলিস্ট হয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে প্রাইসিং এর ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হয়। মিসকোট হয়ে গেলে মুশকিল হয়ে যায়। "
"বাব্বা! অনেক দায়িত্ব! তা তুই একাই ছিলি, না অন্যকেউ ও...?"
"অন্য কেউ মানে? দ্যাখ, আমি একা তো এতকিছু করি না, আলাদা আলাদা টিম আছে।" বলতে বলতেই সতর্ক হয়ে গেল তুলি।
অয়ন কি আবার সেই এক কচকচানি শুরু করবে? উফ! এতবার বলার পরেও!
"ও! তারমানে সেই লোকটাও ছিল... তোর ম্যানেজার!"
"অয়ন! উনি আমার ডিপার্টমেন্টাল হেড! উনি তো থাকবেন ই! তুই কি বলতে চাইছিস?" ভাল লাগছে না আর তুলির।
মাসদুয়েক আগে একটা টেন্ডার পাওয়ার পরে ওদের সবাইকে পার্টি দিয়েছিলেন ইন্দ্র স্যার। সবগুলো ছবি আপলোড করেছিল তুলি ফেসবুকে। আর সেই থেকেই অয়নের সন্দেহ ওর আর ইন্দ্র স্যারকে নিয়ে। কী না... স্যার কেন ওর কাঁধ ধরেছেন! আরে কর্পোরেট এটিকেট মেনেই কাঁধ ধরেছিলেন উনি, অত্যন্ত ডিসেন্ট ভাবে। তাতেও সমস্যা! এখন তো অয়ন ইন্দ্র স্যারকে রীতিমতো স্টক করে ফেসবুকে। আর ওকে কথা শোনায়। পোস্ট শেয়ার করবেন ইন্দ্র স্যার... মজার পোস্ট হলেও সেটা তুলির জন্য, গানের কলি হলেও সেটা তুলির জন্য! হাস্যকর!
"না... আসলে ভদ্রলোক খুব হ্যান্ডসাম!"
"আর তেমনি খিটখিটে... আমাদের খুব জ্বালায় কারণে অকারণে!"
"কিভাবে জ্বালায়? শুধুই কাজ দিয়ে, নাকি...?"
"অয়ন! হাউ ডেয়ার ইউ! কি বলতে চাইছিস তুই!"
"আজকাল আমার থেকে কাছে আসার টান তোর বেশি থাকে... সেখানে পনেরোদিন পরে এলি... তোর ওই ইন্দ্র স্যার কি প্রক্সি দিচ্ছিল নাকি?"
"অয়ন!" থরথর করে কাঁপছে তুলি!
এতদিন ওর গলায় হাল্কা ঈর্ষা থাকত। কিন্ত্য আজ...
ছিঃ!
"ও... উনি নন... তাহলে কে... আচ্ছা তুই আবার তোর এক্স হাজব্যান্ডের সাথেই... "
"গেট আউট, অয়ন। এক্ষুণি বেরিয়ে যা!" হাঁফাতে হাঁফাতে বলে তুলি।
"কেন? কি এমন অন্যায় কথা বলেছি তোকে?"
"সেটা বুঝতে পারছিস না? মানুষ তুই?"
"না না, আমি অমানুষ, আর তুই সতী! সাবিত্রী! তাই তো কলকাতায় একা একা কি যে করে বেড়াস..."
কানটা বন্ধ করে তুলি।
সেই এক প্রশ্ন! এক ভঙ্গিমা!
"অয়ন, আই নিড আ ব্রেক। তুই এখন যা। পরে কথা হবে।" চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় তুলি।
"আমি চলে গেলে কিন্তু আর ফিরব না। মনে রাখিস।"
"রাখব, এবার যা।"
"ও, তাতেও তোর কিছু যাবে আসবে না! তাই তো... সব ই তো ইন্দ্রস্যার..."
"অয়ন! তুই যাবি? না আমি মা বাবাকে ডাকব?"
"আমাকে চলে যেতে বলছিস... সেটা কাকু কাকিমা শুনলে কি ভাববেন? এমনিতেই ডিভোর্সি তুই। আমি তাও দয়া করে এসেছিলাম তোর কাছে। আর তুই আমাকেও হারালি!"
"বাবা মা কি ভাববে, সেটা আমি দেখব। তবে তোর মতো টক্সিক কারো সাথে আর একমুহূর্ত ও থাকব না আমি। আর আমি ডিভোর্সি, কি না, সেটা আমার ব্যাপার, তোর না। তোর মতো টক্সিক মানুষকে আমার জীবনে রাখব না আমি। মাই চয়েস! নে, এবার ফোট!" একটানা, কিন্তু দৃঢ় গলায় বলে তুলি।
একপলক তাকায় অয়ন ওর দিকে। তারপর বেরিয়ে যায়।
সম্পর্কটা এভাবে ভেঙে গেল! কেমন ভোঁতা একটা কষ্ট হচ্ছে তুলির। কিন্তু... তারচেয়েও বেশি শান্তি হচ্ছে একটা...
প্রতিবার সোশ্যাল মিডিয়াতে ছবি দেবার আগে ভয়... অয়ন কি বলবে!
ছবি দেবার পরে ভয়... কে কি রিয়্যাক্ট দেবে বা কমেন্ট করবে, সেই নিয়ে কথা শুনতে হবে...
এই দমচাপা ভাবে থাকতে গিয়ে যে বাঁচতেই ভুলে যাচ্ছিল ও!
বাবা-মা কে বোঝাবে ও। বাবা মা সবটাই জানতেন ওর আর অয়নের ব্যাপারে। ওনারা কষ্টও পাবেন খুব। তবু.... আর নিজেকে হারাবে না তুলি... কিছুতেই না...
অয়নের স্পর্শে ভেসে যাচ্ছে তুলি আজ।
গত দুটো উইকএন্ডে বাড়ি আসতে পারেনি তুলি। অনেকগুলো কাজ জমে ছিল। গতসপ্তাহে তো রবিবারও অফিস করেছে।
কিন্তু সত্যি বলতে কি... মন পড়ে ছিল বর্ধমানেই। একটু ফাঁক পেলেই মনে হতো... কতগুলো দিন হয়ে গেল... বাবার সাথে বসে চা খায়নি... মায়ের হাতের রান্না খায়নি...আর অয়নের সাথেও দেখা হয় নি!
কেমন টিনএজারের মতো লাগত! সেই ক্লাস টেন এ ইংলিশ স্যারের কোচিং এ একজনের প্রেমে পড়েছিল, তাকে না দেখলে মন আনচান করত...। একবার তো বিয়েবাড়িও মিস করেছিল স্যারের ক্লাস আছে বলে! আজকাল, অয়নের জন্য সেরকমই মনে হয় তুলির। সোমবার, বাড়ি থেকে সরাসরি অফিস জয়েন করার পর থেকেই ক্যালেন্ডার দেখতে থাকে... শুক্রবার আসতে আর কতদিন বাকি! সাধারণত শুক্রবারেই অফিসের পরে ধর্মতলা থেকে বাস ধরে নেয় ও। আর শনিবার গুলো যেন স্বপ্নের মতো কাটে! রবিবার এলেই যদিও অনিবার্যভাবেই মন খারাপ হয়ে যায়। আর এই দু' দুটো উইকএন্ড কেটে গেল অফিসের ল্যাপটপ, প্রেজেন্টেশান আর মেইলের কচকচি নিয়েই।
মাঝেমাঝে নিজেকেই বুঝিয়েছে তুলি... "এসব কি হচ্ছে শুনি! তুই তো আর বাচ্চা মেয়ে না! আগেও একজন ছিল তোর জীবনে। কিন্তু তখনও তো এমনি করিসনি কখনও!" নিজেকে করা প্রশ্নের কোনো উত্তর পায়নি। প্রবলভাবে ভেসে গেছে স্মৃতিতে ডুব দিয়েই!
আর তাই, আজ অয়নের সামান্য স্পর্শেই যেন মোম হয়ে যাচ্ছিল তুলি! অয়নের হাল্কা স্টাবল, এলোমেলো চুল আর... ভিজে ছোঁওয়া... আহ্!
"আই লাভ ইউ,অয়ন। খুউউউব মিস করেছি তোকে এই দু সপ্তাহ!" ভাঙা ভাঙা গলায় বলে তুলি।
থেমে যায় অয়ন। তারপর জিজ্ঞেস করে "সত্যি?"
"তিন সত্যি!"
"তাহলে আসিস নি কেন?"
"কাজ ছিল রে... একটা টেন্ডারের কোটেশান দেবার ছিল।"
"তোর অফিস তো শনি-রবি ছুটি থাকে?"
"অয়ন, তুই জানিস... আমার কাজটাই এমন, কোনো কোটেশান দেবার আগে অনেক কিছু ডিউ ডিলিজেন্স থাকে... খতিয়ে দেখার ব্যাপার থাকে। ভুলভাল হয়ে গেলে গোটা কোম্পানি ব্ল্যাকলিস্ট হয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে প্রাইসিং এর ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হয়। মিসকোট হয়ে গেলে মুশকিল হয়ে যায়। "
"বাব্বা! অনেক দায়িত্ব! তা তুই একাই ছিলি, না অন্যকেউ ও...?"
"অন্য কেউ মানে? দ্যাখ, আমি একা তো এতকিছু করি না, আলাদা আলাদা টিম আছে।" বলতে বলতেই সতর্ক হয়ে গেল তুলি।
অয়ন কি আবার সেই এক কচকচানি শুরু করবে? উফ! এতবার বলার পরেও!
"ও! তারমানে সেই লোকটাও ছিল... তোর ম্যানেজার!"
"অয়ন! উনি আমার ডিপার্টমেন্টাল হেড! উনি তো থাকবেন ই! তুই কি বলতে চাইছিস?" ভাল লাগছে না আর তুলির।
মাসদুয়েক আগে একটা টেন্ডার পাওয়ার পরে ওদের সবাইকে পার্টি দিয়েছিলেন ইন্দ্র স্যার। সবগুলো ছবি আপলোড করেছিল তুলি ফেসবুকে। আর সেই থেকেই অয়নের সন্দেহ ওর আর ইন্দ্র স্যারকে নিয়ে। কী না... স্যার কেন ওর কাঁধ ধরেছেন! আরে কর্পোরেট এটিকেট মেনেই কাঁধ ধরেছিলেন উনি, অত্যন্ত ডিসেন্ট ভাবে। তাতেও সমস্যা! এখন তো অয়ন ইন্দ্র স্যারকে রীতিমতো স্টক করে ফেসবুকে। আর ওকে কথা শোনায়। পোস্ট শেয়ার করবেন ইন্দ্র স্যার... মজার পোস্ট হলেও সেটা তুলির জন্য, গানের কলি হলেও সেটা তুলির জন্য! হাস্যকর!
"না... আসলে ভদ্রলোক খুব হ্যান্ডসাম!"
"আর তেমনি খিটখিটে... আমাদের খুব জ্বালায় কারণে অকারণে!"
"কিভাবে জ্বালায়? শুধুই কাজ দিয়ে, নাকি...?"
"অয়ন! হাউ ডেয়ার ইউ! কি বলতে চাইছিস তুই!"
"আজকাল আমার থেকে কাছে আসার টান তোর বেশি থাকে... সেখানে পনেরোদিন পরে এলি... তোর ওই ইন্দ্র স্যার কি প্রক্সি দিচ্ছিল নাকি?"
"অয়ন!" থরথর করে কাঁপছে তুলি!
এতদিন ওর গলায় হাল্কা ঈর্ষা থাকত। কিন্ত্য আজ...
ছিঃ!
"ও... উনি নন... তাহলে কে... আচ্ছা তুই আবার তোর এক্স হাজব্যান্ডের সাথেই... "
"গেট আউট, অয়ন। এক্ষুণি বেরিয়ে যা!" হাঁফাতে হাঁফাতে বলে তুলি।
"কেন? কি এমন অন্যায় কথা বলেছি তোকে?"
"সেটা বুঝতে পারছিস না? মানুষ তুই?"
"না না, আমি অমানুষ, আর তুই সতী! সাবিত্রী! তাই তো কলকাতায় একা একা কি যে করে বেড়াস..."
কানটা বন্ধ করে তুলি।
সেই এক প্রশ্ন! এক ভঙ্গিমা!
"অয়ন, আই নিড আ ব্রেক। তুই এখন যা। পরে কথা হবে।" চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় তুলি।
"আমি চলে গেলে কিন্তু আর ফিরব না। মনে রাখিস।"
"রাখব, এবার যা।"
"ও, তাতেও তোর কিছু যাবে আসবে না! তাই তো... সব ই তো ইন্দ্রস্যার..."
"অয়ন! তুই যাবি? না আমি মা বাবাকে ডাকব?"
"আমাকে চলে যেতে বলছিস... সেটা কাকু কাকিমা শুনলে কি ভাববেন? এমনিতেই ডিভোর্সি তুই। আমি তাও দয়া করে এসেছিলাম তোর কাছে। আর তুই আমাকেও হারালি!"
"বাবা মা কি ভাববে, সেটা আমি দেখব। তবে তোর মতো টক্সিক কারো সাথে আর একমুহূর্ত ও থাকব না আমি। আর আমি ডিভোর্সি, কি না, সেটা আমার ব্যাপার, তোর না। তোর মতো টক্সিক মানুষকে আমার জীবনে রাখব না আমি। মাই চয়েস! নে, এবার ফোট!" একটানা, কিন্তু দৃঢ় গলায় বলে তুলি।
একপলক তাকায় অয়ন ওর দিকে। তারপর বেরিয়ে যায়।
সম্পর্কটা এভাবে ভেঙে গেল! কেমন ভোঁতা একটা কষ্ট হচ্ছে তুলির। কিন্তু... তারচেয়েও বেশি শান্তি হচ্ছে একটা...
প্রতিবার সোশ্যাল মিডিয়াতে ছবি দেবার আগে ভয়... অয়ন কি বলবে!
ছবি দেবার পরে ভয়... কে কি রিয়্যাক্ট দেবে বা কমেন্ট করবে, সেই নিয়ে কথা শুনতে হবে...
এই দমচাপা ভাবে থাকতে গিয়ে যে বাঁচতেই ভুলে যাচ্ছিল ও!
বাবা-মা কে বোঝাবে ও। বাবা মা সবটাই জানতেন ওর আর অয়নের ব্যাপারে। ওনারা কষ্টও পাবেন খুব। তবু.... আর নিজেকে হারাবে না তুলি... কিছুতেই না...