01-05-2019, 11:42 AM
দ্বিতীয় ভাগ
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমেছে অথচ রম্ভা বিষন্ন মনে জানালার ধারে একা চুপটি করে বসে আছে, তার কিছুই ভাল লাগছে না, মনটা তার আজ বড়ই অশান্ত। মেয়ে
দুটোর কথা তার বারবার মনে পড়ছে। স্বামী মারা যাবার সাত দিন পরে তার বাবা মা এসে সেই যে মেয়ে দুটোকে নিয়ে গেছে তারপর থেকে মেয়ে দুটোর সঙ্গে তার
যোগাযোগ প্রায় ছিন্ন। মাঝে কয়েক বার বাপের বাড়ি গিয়ে রম্ভা দেখে এসেছে মেয়ে দুটোকে, তাতে কি মায়ের মন মানে। বিশেষ করে সাবিত্রীটার বয়স মাত্র দু বছর,
একরকম দুধের শিশু, তার জন্যই মায়ের মন বেশি কাঁদে। রম্ভার বাবা ঝানু পলিটিশিয়ান, ভিশন বাস্তববাদী লোক। স্বামীর মৃত্যুর পরে তার বাবা এসে যা যা বলেছিল
রম্ভার সব একে একে মনে পড়ে।
বাবা- মা রম্ভা, মঙ্গলা (রম্ভার স্বামী) তো সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল। এখন তোকেই তো এই দুধের শিশু দুটোকে মানুষ করতে হবে। মনকে শক্ত করতে হবে, কারণ
তুই ছাড়া আর ওদের কেউ নেই। আমি আর তোর মা কতদিন, আমাদেরও তো বয়স হচ্ছে। আমরা যতদিন আছি তোর আর তোর মেয়ের চিন্তা নেই কিন্তু তারপরে।
যাকগে তোর দেবর মানে বগলার সাথে কথা বললাম। কিছু কনে করিস না মা তোর দেবরটা খুব একটা সুবিধার নয়। বগলাকে তোদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে তোর স্বামীর
ভাগের কথাটা জিজ্ঞেস করলাম। বগলা প্রথম দিকে খুব একটা আমার কথাকে পাত্তা দিচ্ছিল না, আমি জোরাজুরি করাতে যা বলল তা খুব একটা আশাব্যন্জক কথা নয়।
বগলার বক্তব্য যে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তির পরিমান নাকি খুবই কম এবং সম্পত্তি যা কিছু বেড়েছে সবই সে ব্যবসা করে বাড়িয়েছে। এখন যে যত সামান্য পৈত্রিক
সম্পত্তি আছে সেটা ভাগ করলে তোর আর তোর মেয়েদের নাকি খাওয়া জুটবে না। তোর দেবরের বক্তব্য যে সম্পত্তি ভাগ বাঁটোরার কোন দরকার নেই সেই তোর আর তোর
মেয়েদের ভরন পোষণ করবে। তোর দেবরের কথাটা খুব একটা সুবিধার লাগছে না।
রম্ভা- বাবা তুমি তাহলে আমাকে কি করতে বল?
বাবা- দেখ মা তোর স্বামীর মত ভাল মানুষ তো আর হয় না। তোর এখানে ঘোরাঘুরি করে একটা খবর শুনলাম, যেটা শুনে মনে হয় তোর স্বামী শুধু ফাঁকি দিয়েই চলে
যায়নি সেই সাথে তোর আর তোর মেয়েদের ভবিষ্যতও অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়ে গেছে। তোর বিয়ের আগে বগলা ব্যবসা করার জন্য ব্যান্ক লোন পেতে সুবিধে হবে
বলে তোর স্বামীকে দিয়ে বেশ কিছু জমি নিজের নামে করিয়ে নিয়েছে। এখন সেই জমির পরিমান কতটা, সেটা নিয়েও কেউ কিছু বলতে পারল না। বগলাকে এটা নিয়ে
জিজ্ঞেস করেছিলাম কিন্তু সে উড়িয়ে দিল আমার কথাটা। তোর স্বামী তোকে বলেনি এই সম্পর্কে কিছু?
রম্ভা- না বাবা ও আমাকে এই সম্পর্কে কিছু বলেনি, এই প্রথম তোমার মুখেই শুনলাম। শুধু একবারই আমি ওকে সম্পত্তির দলিলের কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম, তাতে ও
আমাকে মুখ ঝামটা দিয়ে বলেছিল, তোমার এইসবে কি দরকার, ঐসব দলিল দস্তাবেজ সব আমার ভাইয়ের কাছে ভাল ভাবে রাখা আছে। তারপরে আমি আমার
স্বামীকে এই নিয়ে আর কোনদিন কিছু জিজ্ঞেস করিনি। তাছাড়া আমার ধারনাও ছিল না যে ও এত তারাতারি আমাদের ছেড়ে চলে যাবে।
বাবা- সে তো ঠিকই মা, বিপদ কি আর বলে আসে হঠাত করেই আসে। এখন যা অবস্থা তাতে আমাদের খুব মাথা ঠান্ডা রেখে ভাবনা চিন্তা করে পা ফেলতে হবে। তোর
সামনে এখন বড় পরীক্ষা বলতে পারিস অগ্নিপরীক্ষা, তোর মনকে শক্ত করতে হবে, মায়ের স্নেহ মায়া মমতাকে দুরে সরিয়ে বুকে পাথর চাপা দিতে হবে। তোর দুই মেয়ে
সতী ও সাবিত্রী দুজনকেই আমাদের সঙ্গে নিয়ে যাব, ওরা আমাদের কাছেই মানুষ হবে। তুই কিন্তু এখানেই থাকবি।
রম্ভা- কি বলছ বাবা, আমি মেয়েদের ছাড়া কি করে থাকব? ওরা ছাড়া আমার যে কেউ নেই। বিশেষ করে সাবিত্রীর তো দু বছর মাত্র বয়স, ও আমাকে ছাড়া কি করে
থাকবে? অসম্ভব কথা বলছ বাবা।
বাবা- আমি তোর মেয়েদেরকে আমাদের সাথে কেন নিয়ে যেতে চাচ্ছি সেটা তোকে খুলে বলছি, তাহলেই তুই বুঝতে পারবি। আমার কথা শোনার পরে তুই সিদ্ধান্ত
নিবি, তুই যা চাইবি সেটাই হবে, ঠিক আছে।
রম্ভা- ঠিক আছে বল।
বাবা- দেখ মা আমি প্রাইমারি কলেজের টিচার। যত্সামান্য মাইনের টাকাতেই তোকে পড়াশুনা শিখিয়ে মানুষ করেছি। আমার কোন বদ নেশা নেই, শুধু নেশা বলতে
পলিটিক্স করা। এই পলিটিক্স করে আমি নিজের জন্য কিছু করিনি। নিজের আখের গোছানোর জন্য আমি পলিটিক্স করিনি, যদি কিছু লোকের উপকারে আসতে পারি
এই উদ্দেশ্য নিয়েই আমার পলিটিক্স করা। সেটা তোর থেকে ভাল কেউ জানেনা। যাই হোক যে কারণে এইসব বলা, দেখ মা আমাদের যা কিছু আছে তার সবই তুই আর
তোর মেয়েরা পাবি। কিন্তু সেটা খুবই যত্সামান্য, তাতে দিয়ে তোদের খাওয়া পরা চলবে, কিন্তু পড়াশুনার খরচ, চিকিত্সার খরচ, তোর মেয়েদের বিয়ের খরচ এসব তো
হবে না। অথচ তোর স্বামীর যা আছে তাতে তোদের হেসে খেলে চলে যাওয়ার কথা। আর ঠিক এইখানেই আমার বক্তব্য তোর বা তোর মেয়েদের হকের পাওনা কেন তুই
ছাড়বি।
রম্ভা- বাবা আমি তো ছাড়ব বলিনি।
বাবা- ঠিক, আমি সেটা জানি। কিন্তু তুই তো জানিস আমি অনেকদিন পলিটিক্স করছি, ভাল খারাপ অনেক লোকের সংস্পর্শে এসেছি তাই লোকের মুখ দেখে, কথা শুনে
বলে দিতে পারি লোকটা কেমন। বগলার তো এমনিতেই মার্কেটে বদনাম আছে আর এই কদিনে আমি কথা বলে যা বুঝেছি তোর দেবরটি মোটেই সুবিধের লোক নয়
এবং তোকে তোর স্বামীর ভাগের কানাকড়িও ঠেকাবে না। যাতে তুই তোর স্বামীর ভাগ পেতে পারিস, তোর মেয়েদের হকের পাওনা আদায় করতে পারিস তার জন্যে আমি
একটা প্লান ঠাউরেছি। আমি বাপ হয়ে তোকে যে এই কথা আমাকে কোনদিন বলতে হবে তা আমি কোনদিন কল্পনাও করিনি। এতে আমার বুকটা ফেটে গেলেও আমার
কিছু করার নেই আমাকে তোকে বলতেই হবে যাতে তুই এই অবস্থার থেকে উদ্ধার পাস।
রম্ভা- বাবা অত কিন্তু কিন্তু করছ কেন, যা বলতে চাও পরিস্কার করে বল।
বাবা- হ্যা মা তুই তো এখন বড় হয়ে গেছিস, মেয়ের মা হয়েছিস কাজেই আমার পক্ষে যতটা সম্ভব বলছি তার মধ্যে থেকেই তোকে বুঝে নিতে হবে। তোর লড়াই করার
সুবিধার জায়গা একটাই সেটা বগলা এখনো বিয়ে করেনি। বগলা যদি বিয়ে করে ফেলত আর যদি কোন ছেলেপুলে হয়ে যেত তাহলে কথাই নেই, তোর পক্ষে লড়াইটা
অসম্ভব কঠিন হয়ে দাঁড়াত। এখন বগলা অবিবাহিত থাকতে থাকতে তোকে তোর দেবরকে নিজের বশে করে ফেলতে হবে। তোর রম্ভা নামটা আমিই রেখেছিলাম। তোর
নামের স্বার্থকতা যে এইভাবে ঘটবে তা আমি কোনদিন ভাবিওনি। স্বর্গের অপ্সরা রম্ভা যেভাবে মুনি ঋষিদের ধ্যান ভঙ্গ করত তোকেও ঠিক সেভাবে তোর দেবরকে নিজের
মুঠোয় এনে নিজের হকের পাওনা গন্ডা বুঝে নিতে হবে। বাপ হয়ে এর থেকে বেশি আর কি করে বলব। তোর মেয়েদের উপস্থিতি তোর এই কাজের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে
পারে তাই আমি তোর দুই মেয়েকে আমাদের কাছে নিয়ে রাখতে চাই। তোর যদি মেয়ে দুটো না থাকত তাহলে তোকে আমি এই কাজ করতে বলতাম না। আমাদের যা
আছে তাতে তোর একার চলে যেত কিন্তু তোর মেয়ে দুটো, তারা কি দোষ করল, তাই বাধ্য হয়েই তোকে এই কাজ করতে বলতে হচ্ছে আমাকে। এবারে তুই ঠিক কর
তোর মেয়ে দুটোর ভবিষ্যত কি করবি। তুই যা চাইবি সেটাই হবে। এখানের পাট চুকিয়ে তুই তোর মেয়েদেরকে নিয়ে আমাদের কাছে ফিরে আসতে চাইলে তাই হবে।
জানিস মা তোকে এই পঙ্কিল পথে ঠেলে দিতে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে, বুকটা জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। বাপের মন কি কখনো চায় রে। জানিস মা, যে আমি
জীবনে কখনো মাথা নিচু করিনি, সেই আমি আজ নিজের কাছেই ভিশন ছোট হয়ে গেছি, আমার নাতনি দুটোর ভার নিতে না পেরে নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করছে।
রম্ভা- বাবা তুমি এরকম করে বলছ কেন, সত পথে থেকে তুমি তোমার মেয়েকে যথেষ্ট ভাল ভাবে মানুষ করেছ, তার বিয়ে দিয়েছ, আর কি করবে, বাবা হিসাবে তোমার
দায়িত্ব ঠিক ভাবেই পালন করেছ। বাবা আমার স্বামী ভাল মানুষ ছিল কিন্তু একটুও বাস্তববাদী ছিল না তাই আমাকে ও আমার মেয়েদেরকে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে
হয়েছে, এতে তোমার বা আমার কি দোষ। তুমি যা বলেছ বাবা আমি খুব ভালভাবে বুঝেছি। আমার মেয়ে দুটোকে তোমাদের সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে তোমাদের কাছে
রাখ আর আমি এখানে থেকে আমার মেয়েদের হকের পাওনা বুঝে নিচ্ছি। আর একটা কথা বাবা আমি মোটেই একা নই তুমি মা আমার সাথে আছ না। তুমি একদম
দুশ্চিন্তা করোনা বাবা, তুমিই আমাকে শিখিয়েছ প্রতিকুল অবস্থায় কি ভাবে লড়তে হয় তাই আমি জিতবই জিতব। কি বাবা পারব না?
বাবা- হ্যা মা, নিশ্চয় পারবি, আশির্বাদ করি, জয়তু ভব।
রম্ভার বাবা মা তাদের দুই নাতনিকে নিয়ে ফিরে যাবার তোড়জোড় শুরু করে। বিধবা বৌদি তার দুই শিশুকন্যাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে নিজে রয়ে যাবে অবিবাহিত
দেবরের কাছে এটা গ্রামের লোকেদের কাছে মস্ত বড় খোরাকের বিষয় হবে এটা রম্ভার বাবা ভাল মতই জানে। ঠিক সেই সময় রম্ভার ছোট মেয়েটার সর্দি জ্বর দেখা দেয়,
এটাকেই সুন্দর ভাবে রম্ভার বাবা কাজে লাগায়। বগলা ও গ্রামের কয়েকজন মুরুব্বির কাছে রম্ভার বাবা কথাটা এইভাবে পাড়ে, বাবা বগলা, জান তো আমার ছোট
নাতনিটার সর্দি জ্বর হয়েছে আবার বড়টাও নাক টানছে দেখলাম, আমাদের ওখানে খুব ভাল চাইল্ড স্পেশালিস্ট আছে, তাই ভাবছি নাতনিদুটোকে আমার ওখানে নিয়ে
গিয়ে রেখে ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ করি। তা তুমি কি বল বাবা? এই কথা শুনে বগলার মন খারাপ হয়ে যায় বৌদি চলে যাবে ভেবে, আবার ভাইঝি দুটোর শরীরের কথা
ভেবে সেরকম ভাবে আপত্তিও করতে পারে না, শুধু বলে, দেখুন, দাদা সদ্য মারা গেছে, দাদার স্ত্রী হিসাবে বৌদির অনেক আচার অনুষ্ঠান আছে, কিন্তু বাচ্চা দুটোর
শরীরের কথাও ভাবতে হবে, এখন যেটা আপনারা ভাল বুঝবেন করুন আমার কোনটাতেই আপত্তি নেই। রম্ভার বাবা বগলার কাছ থেকে এই কথা শুনে মুরুব্বিদের দিকে
তাকিয়ে বলে, বুঝলেন বগলার সঙ্গে আমি একমত, আমার মেয়ের স্ত্রী হিসাবে কিছু দায়িত্ব আছে আর সেটা তার অতি অবশ্যই পালন করা উচিত। গত তিন ধরে আমার
স্ত্রীই তো বাচ্চা দুটোকে সামলাচ্ছে কারন তাদের মায়ের তো স্বামিশোকে কোন হুশ নেই। দিদিমার কাছে বাচ্চা দুটো যখন ভাল আছে তখন বাচ্চা দুটোকে আমাদের
ওখানে নিয়ে গিয়ে কিছুদিন রেখে ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ করি তারপরে না হয় ভাবা যাবে আমার মেয়ে ও নাতনিরা এখানে থাকবে না আমার ওখানে থাকবে। কি বলেন
আপনারা? এই শুনে একজন মাতব্বর গোছের বয়স্ক লোক বলে, না না আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন। এই শোকের মহল থেকে ওই দুগ্ধ পোষ্য শিশুদের যত দুরে
রাখবেন তত ভাল। বৌমা এখানে থেকে তার স্বামীর বাকি কাজ সম্পন্ন করুক আর আপনি বাচ্চা দুটোকে আপনার কাছে নিয়ে যান। কি বল বগলা? বৌদি থাকবে শুনে
বগলার মন নেচে ওঠে কিন্তু মুখে বলে, যেটা আপনারা ভাল মনে করবেন সেটাই করুন। আমি তো বললাম আমার কিছুতেই আপত্তি নেই। মুরুব্বিরা সব একসাথে বলে
ওঠে, তাহলে তো হয়েই গেল, বগলার যখন আপত্তি নেই তখন আপনি তাই করুন। বগলা ও মাতব্বরগুলোর কাছ থেকে তার নাতনি দুটোকে তার ওখানে নিয়ে যাবার
পারমিশনের প্রথম চালটা সুন্দর ভাবে উত্তীর্ণ হয়ে যেতে দেখে রম্ভার বাবা উত্সাহিত হয়ে দ্বিতীয় চালটা দেয়। রম্ভার বাবা বলে, দেখুন বগলা ও আপনাদের মত বয়স্ক ও
অভিজ্ঞ লোকেদের পরামর্শ মত আমার নাতনিদুটোকে আমার ওখানে নিয়ে যাচ্ছি। আমি আপনাদের ভরসাতেই আমার একমাত্র মেয়েটাকে এখানে রেখে যাচ্ছি।
আপনারাই আমার মেয়ের এখন গার্জেন, আপনারাই তাকে দেখেশুনে রাখবেন, আমার সেই ভরসা আপনাদের ওপর আছে। আমি তো আমার মেয়েকে বলি যে ভাগ্য করে
সে যেমন ভাল শ্বশুর বাড়ি পেয়েছে তেমনি ভাল শ্বশুরবাড়ির গ্রামের লোকেদের পেয়েছে। বার খাওয়া কথা শুনে গ্রামের মাতব্বরগুলো বিগলিত হয়ে যায়। বার খেয়ে
ক্ষুদিরাম হয়ে মাতব্বরগুলো সব একসাথে বলে, না না আপনি একদম চিন্তা করবেন না। আপনার মেয়ে আমাদের সবার কাছে মেয়ের মত, তার সমস্ত কিছু দেখভালের
দায়িত্ব আমাদের, এই নিয়ে আপনি কিছু চিন্তা করবেন না। আমরা সবাই আছি তো। এই শুনে নিশ্চিন্ত হবার ভান করে রম্ভার বাবা সেখান থেকে উঠে পরে। এর পরের
দিনই রম্ভার বাবা মা তাদের দুই নাতনিকে নিয়ে নিজেদের বাড়ি ফিরে যায়।
রম্ভার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে। সে তার বাবাকে কথা দিয়েছে যে যতদিননা কার্যসিদ্ধি হচ্ছে ততদিন সে দু মাসে একবার করে গিয়ে তার মেয়েদুটোকে দেখে আসবে,
তার বেশি নয়। আগের সাক্ষাত এক মাস আগে ঘটেছে এখনো তাকে আরো এক মাস অপেক্ষা করতে হবে তার মেয়েদের সঙ্গে দেখা করার জন্য।
[ রম্ভার মন আরও একটা কারণে ভিশন খারাপ, তার শৃঙ্গগারকদা (Sringgarok) তাকে ভুল বুঝেছে, শৃঙ্গগারকদার ধারণা সে তার মেয়েদের উপস্থিতিতেই তার
দেবরের সঙ্গে ঐসব কেচ্ছা করে বেরিয়েছে কিন্তু সেটা তার সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। আর তার এই ভুল ধারণা হবার পেছনে দায়ী ওই বেটা কথক। ওই বেটা কথক চটি লিখে
লিখে আমার চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে দিল, আমার চরিত্র, আমার কেচ্ছা, আমার শরীর নিয়ে কিছু লিখতে বাকি রাখল না আর এইটা লিখতে ভুলে গেল যে আমার মেয়ে
দুটো এখানে তখন উপস্থিত নেই, তারা দুজনেই দাদু দিদিমার কাছে তখন। অবশ্য গতকাল রাতে আমার সঙ্গে কথকের জোর এক চোট হয়েছে। কথক ইনিয়ে বিনিয়ে
অনেক অজুহাত খাড়া করার চেষ্টা করছিল বটে, কিন্তু তার কোনটাই ধোপে টেকেনি। একদম সব শেষে কথক সত্যি কথাটা স্বীকার করে। কথকের বক্তব্য, দেখ রম্ভা
তোমাকে সত্যি কথাটাই বলছি, বিশ্বাস করলে কর নইলে আমার কিছু করার নেই। তোমার সঙ্গে তোমার দেবরের মাখোমাখো সম্পর্কটা নিয়ে যখন লিখছি তখন মনে মনে
ঠিকই করে রেখেছিলাম যে তোমার মেয়েদের অবস্থানের পজিশনটা নিয়ে তিন থেকে চার লাইন খরচা করব। কিন্তু সেটা মাথা থেকে আউট হয়ে যায়। তবে কি লিখব
ভেবেছিলাম সেটাও বলছি।
“রম্ভার বাবা মা এসে রম্ভা ও তাদের দুই নাতনিকে তাদের সাথে নিয়ে যেতে চায়, কিন্তু রম্ভা তার স্বামীর স্মৃতিবিজরিত বাড়ি ছেড়ে এক পাও নড়তে রাজি হয় না। এই
নিয়ে রম্ভার সাথে তার বাবা মায়ের তুমুল ঝগড়া হয়। রম্ভার সাথে তার দেবরের অবৈধ সম্পর্কের কিছুটা আঁচ পায় তার বাবা। রম্ভার বাবা স্থির করে তার দুই নাতনিকে এই
নরককুন্ডে ফেলে রেখে যাবে না, তাহলে তার নাতনিদুটো আর মানুষ হবে না। রম্ভার বাবা মা শুধু নাতনিদুটোকে তাদের সঙ্গে নিয়ে যেতে চাইলে রম্ভা আর আপত্তি করে
না। তার ও তার দুই মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য তার স্বামীর সম্পত্তির ভাগটা বগলার কাছ থেকে বুঝে নেওয়াটা অনেক বেশি জরুরি রম্ভার কাছে। তার মেয়েদের উপস্থিতি তার
উদ্দেশ্যসাধনে ব্যঘাত ঘটাতে পারে তাই রম্ভা তার মেয়েদেরকে তার বাবা মায়ের সাথে পাঠাতে আপত্তি করে না।”
কথকের স্বীকারোক্তি, আমার ভুলের খেসারত হিসাবে আমার মত কুঁড়ের বাদশাকে ১৭৯১ টি ওয়ার্ড বাংলায় এক্সট্রা টাইপ করতে হয়েছে, এটা কি কম শাস্তি। এই কথা
শুনে রম্ভার মন কিছুটা নরম হয়। কিন্তু রম্ভার মন থেকে কথকের ওপর থেকে রাগটা যেতে গিয়েও যায় না, রম্ভা কথককে উদ্দেশ্য করে বলে, অপ্সরী রম্ভার কামকলার সাথে
দাসী মন্থরার কুটিলতা পান্চ করে আমার যে চরিত্রটা তুমি বানিয়েছ তার পেছনের কারনটা অন্তত তোমার ভুল সংশোধনের মাধ্যমে লোকের কাছে কিছুটা হলেও স্পস্ট
হবে। আর বিশেষ করে আমার শৃঙ্গগারকদার আমার প্রতি তার ভুল ধারণাটা তো ভাঙ্গবে। চিমটি কাটার সুযোগটা কথক হাতছাড়া করে না, বলে, তোমার শৃঙ্গগারকদার
কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নেব। রম্ভা বুঝেও না বোঝার ভান করে বলে, গুড। এই বলে রম্ভা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।]
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমেছে অথচ রম্ভা বিষন্ন মনে জানালার ধারে একা চুপটি করে বসে আছে, তার কিছুই ভাল লাগছে না, মনটা তার আজ বড়ই অশান্ত। মেয়ে
দুটোর কথা তার বারবার মনে পড়ছে। স্বামী মারা যাবার সাত দিন পরে তার বাবা মা এসে সেই যে মেয়ে দুটোকে নিয়ে গেছে তারপর থেকে মেয়ে দুটোর সঙ্গে তার
যোগাযোগ প্রায় ছিন্ন। মাঝে কয়েক বার বাপের বাড়ি গিয়ে রম্ভা দেখে এসেছে মেয়ে দুটোকে, তাতে কি মায়ের মন মানে। বিশেষ করে সাবিত্রীটার বয়স মাত্র দু বছর,
একরকম দুধের শিশু, তার জন্যই মায়ের মন বেশি কাঁদে। রম্ভার বাবা ঝানু পলিটিশিয়ান, ভিশন বাস্তববাদী লোক। স্বামীর মৃত্যুর পরে তার বাবা এসে যা যা বলেছিল
রম্ভার সব একে একে মনে পড়ে।
বাবা- মা রম্ভা, মঙ্গলা (রম্ভার স্বামী) তো সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল। এখন তোকেই তো এই দুধের শিশু দুটোকে মানুষ করতে হবে। মনকে শক্ত করতে হবে, কারণ
তুই ছাড়া আর ওদের কেউ নেই। আমি আর তোর মা কতদিন, আমাদেরও তো বয়স হচ্ছে। আমরা যতদিন আছি তোর আর তোর মেয়ের চিন্তা নেই কিন্তু তারপরে।
যাকগে তোর দেবর মানে বগলার সাথে কথা বললাম। কিছু কনে করিস না মা তোর দেবরটা খুব একটা সুবিধার নয়। বগলাকে তোদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে তোর স্বামীর
ভাগের কথাটা জিজ্ঞেস করলাম। বগলা প্রথম দিকে খুব একটা আমার কথাকে পাত্তা দিচ্ছিল না, আমি জোরাজুরি করাতে যা বলল তা খুব একটা আশাব্যন্জক কথা নয়।
বগলার বক্তব্য যে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তির পরিমান নাকি খুবই কম এবং সম্পত্তি যা কিছু বেড়েছে সবই সে ব্যবসা করে বাড়িয়েছে। এখন যে যত সামান্য পৈত্রিক
সম্পত্তি আছে সেটা ভাগ করলে তোর আর তোর মেয়েদের নাকি খাওয়া জুটবে না। তোর দেবরের বক্তব্য যে সম্পত্তি ভাগ বাঁটোরার কোন দরকার নেই সেই তোর আর তোর
মেয়েদের ভরন পোষণ করবে। তোর দেবরের কথাটা খুব একটা সুবিধার লাগছে না।
রম্ভা- বাবা তুমি তাহলে আমাকে কি করতে বল?
বাবা- দেখ মা তোর স্বামীর মত ভাল মানুষ তো আর হয় না। তোর এখানে ঘোরাঘুরি করে একটা খবর শুনলাম, যেটা শুনে মনে হয় তোর স্বামী শুধু ফাঁকি দিয়েই চলে
যায়নি সেই সাথে তোর আর তোর মেয়েদের ভবিষ্যতও অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়ে গেছে। তোর বিয়ের আগে বগলা ব্যবসা করার জন্য ব্যান্ক লোন পেতে সুবিধে হবে
বলে তোর স্বামীকে দিয়ে বেশ কিছু জমি নিজের নামে করিয়ে নিয়েছে। এখন সেই জমির পরিমান কতটা, সেটা নিয়েও কেউ কিছু বলতে পারল না। বগলাকে এটা নিয়ে
জিজ্ঞেস করেছিলাম কিন্তু সে উড়িয়ে দিল আমার কথাটা। তোর স্বামী তোকে বলেনি এই সম্পর্কে কিছু?
রম্ভা- না বাবা ও আমাকে এই সম্পর্কে কিছু বলেনি, এই প্রথম তোমার মুখেই শুনলাম। শুধু একবারই আমি ওকে সম্পত্তির দলিলের কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম, তাতে ও
আমাকে মুখ ঝামটা দিয়ে বলেছিল, তোমার এইসবে কি দরকার, ঐসব দলিল দস্তাবেজ সব আমার ভাইয়ের কাছে ভাল ভাবে রাখা আছে। তারপরে আমি আমার
স্বামীকে এই নিয়ে আর কোনদিন কিছু জিজ্ঞেস করিনি। তাছাড়া আমার ধারনাও ছিল না যে ও এত তারাতারি আমাদের ছেড়ে চলে যাবে।
বাবা- সে তো ঠিকই মা, বিপদ কি আর বলে আসে হঠাত করেই আসে। এখন যা অবস্থা তাতে আমাদের খুব মাথা ঠান্ডা রেখে ভাবনা চিন্তা করে পা ফেলতে হবে। তোর
সামনে এখন বড় পরীক্ষা বলতে পারিস অগ্নিপরীক্ষা, তোর মনকে শক্ত করতে হবে, মায়ের স্নেহ মায়া মমতাকে দুরে সরিয়ে বুকে পাথর চাপা দিতে হবে। তোর দুই মেয়ে
সতী ও সাবিত্রী দুজনকেই আমাদের সঙ্গে নিয়ে যাব, ওরা আমাদের কাছেই মানুষ হবে। তুই কিন্তু এখানেই থাকবি।
রম্ভা- কি বলছ বাবা, আমি মেয়েদের ছাড়া কি করে থাকব? ওরা ছাড়া আমার যে কেউ নেই। বিশেষ করে সাবিত্রীর তো দু বছর মাত্র বয়স, ও আমাকে ছাড়া কি করে
থাকবে? অসম্ভব কথা বলছ বাবা।
বাবা- আমি তোর মেয়েদেরকে আমাদের সাথে কেন নিয়ে যেতে চাচ্ছি সেটা তোকে খুলে বলছি, তাহলেই তুই বুঝতে পারবি। আমার কথা শোনার পরে তুই সিদ্ধান্ত
নিবি, তুই যা চাইবি সেটাই হবে, ঠিক আছে।
রম্ভা- ঠিক আছে বল।
বাবা- দেখ মা আমি প্রাইমারি কলেজের টিচার। যত্সামান্য মাইনের টাকাতেই তোকে পড়াশুনা শিখিয়ে মানুষ করেছি। আমার কোন বদ নেশা নেই, শুধু নেশা বলতে
পলিটিক্স করা। এই পলিটিক্স করে আমি নিজের জন্য কিছু করিনি। নিজের আখের গোছানোর জন্য আমি পলিটিক্স করিনি, যদি কিছু লোকের উপকারে আসতে পারি
এই উদ্দেশ্য নিয়েই আমার পলিটিক্স করা। সেটা তোর থেকে ভাল কেউ জানেনা। যাই হোক যে কারণে এইসব বলা, দেখ মা আমাদের যা কিছু আছে তার সবই তুই আর
তোর মেয়েরা পাবি। কিন্তু সেটা খুবই যত্সামান্য, তাতে দিয়ে তোদের খাওয়া পরা চলবে, কিন্তু পড়াশুনার খরচ, চিকিত্সার খরচ, তোর মেয়েদের বিয়ের খরচ এসব তো
হবে না। অথচ তোর স্বামীর যা আছে তাতে তোদের হেসে খেলে চলে যাওয়ার কথা। আর ঠিক এইখানেই আমার বক্তব্য তোর বা তোর মেয়েদের হকের পাওনা কেন তুই
ছাড়বি।
রম্ভা- বাবা আমি তো ছাড়ব বলিনি।
বাবা- ঠিক, আমি সেটা জানি। কিন্তু তুই তো জানিস আমি অনেকদিন পলিটিক্স করছি, ভাল খারাপ অনেক লোকের সংস্পর্শে এসেছি তাই লোকের মুখ দেখে, কথা শুনে
বলে দিতে পারি লোকটা কেমন। বগলার তো এমনিতেই মার্কেটে বদনাম আছে আর এই কদিনে আমি কথা বলে যা বুঝেছি তোর দেবরটি মোটেই সুবিধের লোক নয়
এবং তোকে তোর স্বামীর ভাগের কানাকড়িও ঠেকাবে না। যাতে তুই তোর স্বামীর ভাগ পেতে পারিস, তোর মেয়েদের হকের পাওনা আদায় করতে পারিস তার জন্যে আমি
একটা প্লান ঠাউরেছি। আমি বাপ হয়ে তোকে যে এই কথা আমাকে কোনদিন বলতে হবে তা আমি কোনদিন কল্পনাও করিনি। এতে আমার বুকটা ফেটে গেলেও আমার
কিছু করার নেই আমাকে তোকে বলতেই হবে যাতে তুই এই অবস্থার থেকে উদ্ধার পাস।
রম্ভা- বাবা অত কিন্তু কিন্তু করছ কেন, যা বলতে চাও পরিস্কার করে বল।
বাবা- হ্যা মা তুই তো এখন বড় হয়ে গেছিস, মেয়ের মা হয়েছিস কাজেই আমার পক্ষে যতটা সম্ভব বলছি তার মধ্যে থেকেই তোকে বুঝে নিতে হবে। তোর লড়াই করার
সুবিধার জায়গা একটাই সেটা বগলা এখনো বিয়ে করেনি। বগলা যদি বিয়ে করে ফেলত আর যদি কোন ছেলেপুলে হয়ে যেত তাহলে কথাই নেই, তোর পক্ষে লড়াইটা
অসম্ভব কঠিন হয়ে দাঁড়াত। এখন বগলা অবিবাহিত থাকতে থাকতে তোকে তোর দেবরকে নিজের বশে করে ফেলতে হবে। তোর রম্ভা নামটা আমিই রেখেছিলাম। তোর
নামের স্বার্থকতা যে এইভাবে ঘটবে তা আমি কোনদিন ভাবিওনি। স্বর্গের অপ্সরা রম্ভা যেভাবে মুনি ঋষিদের ধ্যান ভঙ্গ করত তোকেও ঠিক সেভাবে তোর দেবরকে নিজের
মুঠোয় এনে নিজের হকের পাওনা গন্ডা বুঝে নিতে হবে। বাপ হয়ে এর থেকে বেশি আর কি করে বলব। তোর মেয়েদের উপস্থিতি তোর এই কাজের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে
পারে তাই আমি তোর দুই মেয়েকে আমাদের কাছে নিয়ে রাখতে চাই। তোর যদি মেয়ে দুটো না থাকত তাহলে তোকে আমি এই কাজ করতে বলতাম না। আমাদের যা
আছে তাতে তোর একার চলে যেত কিন্তু তোর মেয়ে দুটো, তারা কি দোষ করল, তাই বাধ্য হয়েই তোকে এই কাজ করতে বলতে হচ্ছে আমাকে। এবারে তুই ঠিক কর
তোর মেয়ে দুটোর ভবিষ্যত কি করবি। তুই যা চাইবি সেটাই হবে। এখানের পাট চুকিয়ে তুই তোর মেয়েদেরকে নিয়ে আমাদের কাছে ফিরে আসতে চাইলে তাই হবে।
জানিস মা তোকে এই পঙ্কিল পথে ঠেলে দিতে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে, বুকটা জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। বাপের মন কি কখনো চায় রে। জানিস মা, যে আমি
জীবনে কখনো মাথা নিচু করিনি, সেই আমি আজ নিজের কাছেই ভিশন ছোট হয়ে গেছি, আমার নাতনি দুটোর ভার নিতে না পেরে নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করছে।
রম্ভা- বাবা তুমি এরকম করে বলছ কেন, সত পথে থেকে তুমি তোমার মেয়েকে যথেষ্ট ভাল ভাবে মানুষ করেছ, তার বিয়ে দিয়েছ, আর কি করবে, বাবা হিসাবে তোমার
দায়িত্ব ঠিক ভাবেই পালন করেছ। বাবা আমার স্বামী ভাল মানুষ ছিল কিন্তু একটুও বাস্তববাদী ছিল না তাই আমাকে ও আমার মেয়েদেরকে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে
হয়েছে, এতে তোমার বা আমার কি দোষ। তুমি যা বলেছ বাবা আমি খুব ভালভাবে বুঝেছি। আমার মেয়ে দুটোকে তোমাদের সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে তোমাদের কাছে
রাখ আর আমি এখানে থেকে আমার মেয়েদের হকের পাওনা বুঝে নিচ্ছি। আর একটা কথা বাবা আমি মোটেই একা নই তুমি মা আমার সাথে আছ না। তুমি একদম
দুশ্চিন্তা করোনা বাবা, তুমিই আমাকে শিখিয়েছ প্রতিকুল অবস্থায় কি ভাবে লড়তে হয় তাই আমি জিতবই জিতব। কি বাবা পারব না?
বাবা- হ্যা মা, নিশ্চয় পারবি, আশির্বাদ করি, জয়তু ভব।
রম্ভার বাবা মা তাদের দুই নাতনিকে নিয়ে ফিরে যাবার তোড়জোড় শুরু করে। বিধবা বৌদি তার দুই শিশুকন্যাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে নিজে রয়ে যাবে অবিবাহিত
দেবরের কাছে এটা গ্রামের লোকেদের কাছে মস্ত বড় খোরাকের বিষয় হবে এটা রম্ভার বাবা ভাল মতই জানে। ঠিক সেই সময় রম্ভার ছোট মেয়েটার সর্দি জ্বর দেখা দেয়,
এটাকেই সুন্দর ভাবে রম্ভার বাবা কাজে লাগায়। বগলা ও গ্রামের কয়েকজন মুরুব্বির কাছে রম্ভার বাবা কথাটা এইভাবে পাড়ে, বাবা বগলা, জান তো আমার ছোট
নাতনিটার সর্দি জ্বর হয়েছে আবার বড়টাও নাক টানছে দেখলাম, আমাদের ওখানে খুব ভাল চাইল্ড স্পেশালিস্ট আছে, তাই ভাবছি নাতনিদুটোকে আমার ওখানে নিয়ে
গিয়ে রেখে ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ করি। তা তুমি কি বল বাবা? এই কথা শুনে বগলার মন খারাপ হয়ে যায় বৌদি চলে যাবে ভেবে, আবার ভাইঝি দুটোর শরীরের কথা
ভেবে সেরকম ভাবে আপত্তিও করতে পারে না, শুধু বলে, দেখুন, দাদা সদ্য মারা গেছে, দাদার স্ত্রী হিসাবে বৌদির অনেক আচার অনুষ্ঠান আছে, কিন্তু বাচ্চা দুটোর
শরীরের কথাও ভাবতে হবে, এখন যেটা আপনারা ভাল বুঝবেন করুন আমার কোনটাতেই আপত্তি নেই। রম্ভার বাবা বগলার কাছ থেকে এই কথা শুনে মুরুব্বিদের দিকে
তাকিয়ে বলে, বুঝলেন বগলার সঙ্গে আমি একমত, আমার মেয়ের স্ত্রী হিসাবে কিছু দায়িত্ব আছে আর সেটা তার অতি অবশ্যই পালন করা উচিত। গত তিন ধরে আমার
স্ত্রীই তো বাচ্চা দুটোকে সামলাচ্ছে কারন তাদের মায়ের তো স্বামিশোকে কোন হুশ নেই। দিদিমার কাছে বাচ্চা দুটো যখন ভাল আছে তখন বাচ্চা দুটোকে আমাদের
ওখানে নিয়ে গিয়ে কিছুদিন রেখে ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ করি তারপরে না হয় ভাবা যাবে আমার মেয়ে ও নাতনিরা এখানে থাকবে না আমার ওখানে থাকবে। কি বলেন
আপনারা? এই শুনে একজন মাতব্বর গোছের বয়স্ক লোক বলে, না না আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন। এই শোকের মহল থেকে ওই দুগ্ধ পোষ্য শিশুদের যত দুরে
রাখবেন তত ভাল। বৌমা এখানে থেকে তার স্বামীর বাকি কাজ সম্পন্ন করুক আর আপনি বাচ্চা দুটোকে আপনার কাছে নিয়ে যান। কি বল বগলা? বৌদি থাকবে শুনে
বগলার মন নেচে ওঠে কিন্তু মুখে বলে, যেটা আপনারা ভাল মনে করবেন সেটাই করুন। আমি তো বললাম আমার কিছুতেই আপত্তি নেই। মুরুব্বিরা সব একসাথে বলে
ওঠে, তাহলে তো হয়েই গেল, বগলার যখন আপত্তি নেই তখন আপনি তাই করুন। বগলা ও মাতব্বরগুলোর কাছ থেকে তার নাতনি দুটোকে তার ওখানে নিয়ে যাবার
পারমিশনের প্রথম চালটা সুন্দর ভাবে উত্তীর্ণ হয়ে যেতে দেখে রম্ভার বাবা উত্সাহিত হয়ে দ্বিতীয় চালটা দেয়। রম্ভার বাবা বলে, দেখুন বগলা ও আপনাদের মত বয়স্ক ও
অভিজ্ঞ লোকেদের পরামর্শ মত আমার নাতনিদুটোকে আমার ওখানে নিয়ে যাচ্ছি। আমি আপনাদের ভরসাতেই আমার একমাত্র মেয়েটাকে এখানে রেখে যাচ্ছি।
আপনারাই আমার মেয়ের এখন গার্জেন, আপনারাই তাকে দেখেশুনে রাখবেন, আমার সেই ভরসা আপনাদের ওপর আছে। আমি তো আমার মেয়েকে বলি যে ভাগ্য করে
সে যেমন ভাল শ্বশুর বাড়ি পেয়েছে তেমনি ভাল শ্বশুরবাড়ির গ্রামের লোকেদের পেয়েছে। বার খাওয়া কথা শুনে গ্রামের মাতব্বরগুলো বিগলিত হয়ে যায়। বার খেয়ে
ক্ষুদিরাম হয়ে মাতব্বরগুলো সব একসাথে বলে, না না আপনি একদম চিন্তা করবেন না। আপনার মেয়ে আমাদের সবার কাছে মেয়ের মত, তার সমস্ত কিছু দেখভালের
দায়িত্ব আমাদের, এই নিয়ে আপনি কিছু চিন্তা করবেন না। আমরা সবাই আছি তো। এই শুনে নিশ্চিন্ত হবার ভান করে রম্ভার বাবা সেখান থেকে উঠে পরে। এর পরের
দিনই রম্ভার বাবা মা তাদের দুই নাতনিকে নিয়ে নিজেদের বাড়ি ফিরে যায়।
রম্ভার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে। সে তার বাবাকে কথা দিয়েছে যে যতদিননা কার্যসিদ্ধি হচ্ছে ততদিন সে দু মাসে একবার করে গিয়ে তার মেয়েদুটোকে দেখে আসবে,
তার বেশি নয়। আগের সাক্ষাত এক মাস আগে ঘটেছে এখনো তাকে আরো এক মাস অপেক্ষা করতে হবে তার মেয়েদের সঙ্গে দেখা করার জন্য।
[ রম্ভার মন আরও একটা কারণে ভিশন খারাপ, তার শৃঙ্গগারকদা (Sringgarok) তাকে ভুল বুঝেছে, শৃঙ্গগারকদার ধারণা সে তার মেয়েদের উপস্থিতিতেই তার
দেবরের সঙ্গে ঐসব কেচ্ছা করে বেরিয়েছে কিন্তু সেটা তার সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। আর তার এই ভুল ধারণা হবার পেছনে দায়ী ওই বেটা কথক। ওই বেটা কথক চটি লিখে
লিখে আমার চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে দিল, আমার চরিত্র, আমার কেচ্ছা, আমার শরীর নিয়ে কিছু লিখতে বাকি রাখল না আর এইটা লিখতে ভুলে গেল যে আমার মেয়ে
দুটো এখানে তখন উপস্থিত নেই, তারা দুজনেই দাদু দিদিমার কাছে তখন। অবশ্য গতকাল রাতে আমার সঙ্গে কথকের জোর এক চোট হয়েছে। কথক ইনিয়ে বিনিয়ে
অনেক অজুহাত খাড়া করার চেষ্টা করছিল বটে, কিন্তু তার কোনটাই ধোপে টেকেনি। একদম সব শেষে কথক সত্যি কথাটা স্বীকার করে। কথকের বক্তব্য, দেখ রম্ভা
তোমাকে সত্যি কথাটাই বলছি, বিশ্বাস করলে কর নইলে আমার কিছু করার নেই। তোমার সঙ্গে তোমার দেবরের মাখোমাখো সম্পর্কটা নিয়ে যখন লিখছি তখন মনে মনে
ঠিকই করে রেখেছিলাম যে তোমার মেয়েদের অবস্থানের পজিশনটা নিয়ে তিন থেকে চার লাইন খরচা করব। কিন্তু সেটা মাথা থেকে আউট হয়ে যায়। তবে কি লিখব
ভেবেছিলাম সেটাও বলছি।
“রম্ভার বাবা মা এসে রম্ভা ও তাদের দুই নাতনিকে তাদের সাথে নিয়ে যেতে চায়, কিন্তু রম্ভা তার স্বামীর স্মৃতিবিজরিত বাড়ি ছেড়ে এক পাও নড়তে রাজি হয় না। এই
নিয়ে রম্ভার সাথে তার বাবা মায়ের তুমুল ঝগড়া হয়। রম্ভার সাথে তার দেবরের অবৈধ সম্পর্কের কিছুটা আঁচ পায় তার বাবা। রম্ভার বাবা স্থির করে তার দুই নাতনিকে এই
নরককুন্ডে ফেলে রেখে যাবে না, তাহলে তার নাতনিদুটো আর মানুষ হবে না। রম্ভার বাবা মা শুধু নাতনিদুটোকে তাদের সঙ্গে নিয়ে যেতে চাইলে রম্ভা আর আপত্তি করে
না। তার ও তার দুই মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য তার স্বামীর সম্পত্তির ভাগটা বগলার কাছ থেকে বুঝে নেওয়াটা অনেক বেশি জরুরি রম্ভার কাছে। তার মেয়েদের উপস্থিতি তার
উদ্দেশ্যসাধনে ব্যঘাত ঘটাতে পারে তাই রম্ভা তার মেয়েদেরকে তার বাবা মায়ের সাথে পাঠাতে আপত্তি করে না।”
কথকের স্বীকারোক্তি, আমার ভুলের খেসারত হিসাবে আমার মত কুঁড়ের বাদশাকে ১৭৯১ টি ওয়ার্ড বাংলায় এক্সট্রা টাইপ করতে হয়েছে, এটা কি কম শাস্তি। এই কথা
শুনে রম্ভার মন কিছুটা নরম হয়। কিন্তু রম্ভার মন থেকে কথকের ওপর থেকে রাগটা যেতে গিয়েও যায় না, রম্ভা কথককে উদ্দেশ্য করে বলে, অপ্সরী রম্ভার কামকলার সাথে
দাসী মন্থরার কুটিলতা পান্চ করে আমার যে চরিত্রটা তুমি বানিয়েছ তার পেছনের কারনটা অন্তত তোমার ভুল সংশোধনের মাধ্যমে লোকের কাছে কিছুটা হলেও স্পস্ট
হবে। আর বিশেষ করে আমার শৃঙ্গগারকদার আমার প্রতি তার ভুল ধারণাটা তো ভাঙ্গবে। চিমটি কাটার সুযোগটা কথক হাতছাড়া করে না, বলে, তোমার শৃঙ্গগারকদার
কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নেব। রম্ভা বুঝেও না বোঝার ভান করে বলে, গুড। এই বলে রম্ভা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।]